মাতোয়ারা পর্ব ২০ এবং শেষ

#মাতোয়ারা
#পর্ব_২০ (অন্তিম পর্ব)

পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমি ভাবলাম ইরিন মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়বে। কিন্তু না, সে একটুও ভাঙলো না। সে আগের মতই স্বাভাবিক। সকাল সকাল ভীষণ ব্যস্ত বেরোচ্ছে, টিউশন করছে, রাতে আমাকে পড়াতে বসছে, নিজে পড়ছে, গান গাইছে।
তাঁর এত বেশি স্বাভাবিকতাকে আমার কাছে ভীষণ অস্বাভাবিক মনে হতে লাগলো। সদ্য যার বাবা বিয়ে করে নিয়েছে, তাঁর জীবনের সব পুরাতন পর হয়ে গেছে, তাও এত কিভাবে সে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে পারছে? কিভাবে?
রাতে খাবার টেবিলে মা নিজে থেকে বললেন,
—ইরিন তুমি আর বাবু কোথাও থেকে বেরিয়ে আসো। তোমাদের তো বিয়ের পর কোথাও বেড়ানো হলো না।
ইরিন সাথে সাথেই বললো,
—বেড়াতে যাবো কেন? দুদিন আগেই তো আমি কক্সবাজার ঘুরে এলাম।
—তুমি ঘুরেছো। বাবু তো যায়নি। এবার বাবু’র সাথে যাও।
—হবেনা। আমার এক্সাম সামনে।
আমি সাহস করে বললাম,
—দুটে দিনে তো আর এক্সাম ভেসে যাবে না।
ইরিন অর্ধেক খাবার পাতেই পানি ঢেলে উঠে গেলো।
ঘরে এসে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
—কেন যাবে না? আমার সাথে বেড়াতে খুব খারাপ লাগবে বুঝি?
—সেজন্য নয়। আমার এক্সাম! সিলেবাস কমপ্লিট হয় নি
—আমরা খুব অল্পদিনের জন্য যাবো।
ইরিন অন্যদিকে মুখ করে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো,
—আপনি কি আমার কাছাকাছি আসতে চান?আমরা তো এই ঘরে একসাথেই থাকতে পারি! সেজন্য, দূরে যাবার কি দরকার?
ইরিনের প্রশ্নে আমি থমকে গেলাম। ইরিন বেড়াতে যাবার অন্য মানে করছে। আমি ইরিনকে আর জোর করলাম না। মনে মনে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন গুছিয়ে নিলাম। ইরিনের সাথে একেবারে সিরিয়াসলি আলোচনা করা দরকার। এই বিয়েটাকে সে কিভাবে নিচ্ছে? তাঁর আসলে কি চাই? সে কি আমাকে পছন্দ করে না? সে আমাকে কিভাবে দেখতে চায়?
প্রশ্নগুলো আমি বারবার করতে গিয়েও অজানা জড়তায় করতে পারলাম না।
অনেক দোটানা নিয়ে আমি একটা কাগজে লিখলাম,
—ইরিন তুমি আমার কাছে কি চাও?
ইরিন কাগজ হাতে নিয়েই চমকে উঠলো।
—আপনার কাছে কি চাইবো? কিছুই তো চাই না।
—না মানে এই যে তোমার আমার বিবাহিত জীবন! এটা কি ঠিক চলছে? ঠিক আছে তো?
—হ্যাঁ ঠিকই তো আছে।
—সত্যি?
—না মিথ্যে? এরকম আজগুবি প্রশ্ন কেন করছেন হঠাৎ করে? আমরা আলাদা বিছানায় ঘুমোচ্ছি বলে?
ওকে! আপনি আমার বিছানায় আসবেন না আমি আসবো?
আমি পাগল পাগল হয়ে ইরিনের দু-হাত ধরলাম।
চিৎকার করে বললাম,
—তোমার কি কোনো কিছুতেই কিছু আসে যায় না? কোনোকিছুতেই? সব কেন এত স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছো? কেন? জীবনের কাছে তোমার কোনো অভিযোগ নেই? কেন নেই?
ইরিন চুপচাপ আমার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে রইলো। এরপর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললো,
—আপনি সত্যি জানতে চান?
—সত্যি জানতে চাই। আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে। এখন না জানতে পারলে মরে যাবো আমি!
ইরিন নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো।
—একটা কাগজে লিখে বলি? মুখে গুছিয়ে বলতে পারবো না।
—তোমার যেভাবে খুশি বলো। যেভাবে খুশি।
ইরিন কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসলো।
আমি অস্থিরভাবে ঘরে পায়চারি করতে থাকলাম। মনে হতে লাগলো অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করছি আমি। এই সময় অনেকবার কেটে গিয়েও ফিরে এসেছে!
ইরিন কাগজ হাতে দিয়ে বললো,
—প্রমিস করুন, রাগ করবেন না। কিছু বলবেন না।
আমি দ্রুত কাগজটা নিয়ে পড়তে লাগলাম,
“এই বিয়ে আমার জীবনের সবথেকে ভারী সম্পর্ক। আমার সামনে পিছনের যত সম্পর্ক ছিলো, এই সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে আমি উপেক্ষা করতে পারছি। এই সম্পর্কের কাছ থেকে আমার শুধু একটাই চাওয়া, আমি আমার নিজের মত করে জীবনটা গুছাতে চাই। সহজ কথায় আমার জীবনের স্বাধীনতা চাই। আমি নিজে উপার্জন করতে চাই। নিজের মত করে বাঁচতে চাই। যখন আমার নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হবে তখন হয়তো আমি চাইবো,আমার জীবনে একটা কেউ আসুক। সেই জীবনে আসা মানুষটাকে আমি শুধু আমার নিজের বলতে চাই। আপনি বলবেন, মুক্তি নাও সম্পর্ক থেকে। চাইলেও কি সম্পর্কের মুক্তি মিলে বলুন? মুক্ত হওয়া কি এত সহজ?
ইরিনের উত্তর পড়ে আমি অবাক চোখে বললাম,
—ব্যস এইটুকু?
—মানে?
—তুমি হলে উঠতে চাইছিলে না। এখনি সব গুছাও। তুমি কালই হলে উঠবে।
ইরিন হতবিহ্বল চোখে আমার দিকে তাঁকিয়ে রইলো।
—দাঁড়াও আমি গুছিয়ে দিচ্ছি। আজ এই মুহূর্ত থেকে তোমার জীবনটা শুধু তোমার! শুধু তোমার।
—আপনি মজা করছেন না তো?
আমি ইরিনের ট্রলি ব্যাগ নিয়ে ও’র কাপড় গুছাতে লাগলাম।
ইরিন দৌঁড়ে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।।
—আমি আপনার সাথে বেড়াতে যাবো। বলুন কোথায় যেতে হবে? জলে ভেসে যাক আমার এক্সাম।

আমি ইরিনের কথার জবাব দিলাম না। ইরিনের বইপত্র গুছাতে লাগলাম।
ইরিন ঘ্যাঁন ঘ্যাঁন করতে লাগলো।
—আপনি জিজ্ঞেস করলেন বলে আমি বললাম। মন ফ্রেশ করে বলেছি। তাও রাগ করলেন।
আমি মন সামলাচ্ছি তখন। নিজের ভেতরে যে লক্ষ লক্ষ ব্যাথার ভাঙচুর হচ্ছিলো তা সামলাচ্ছি।
যে আমার পেছনে এত এত মেয়ে মরে; সেখানে আমি জানতেই পারলাম না, ইরিন আমাকে চায় না। তাঁর চাওয়া অন্যকিছু। ইরিন আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। অবার অবিশ্বাসও করতে পারছিলো না। সারারাত জেগে থেকে আমার গোছগাছ করা দেখলো। অনবরত কথা বলতেই থাকলো।
ইরিনের সব অবিশ্বাসকে মিথ্যে করে দিয়ে আমি তাঁকে হলে উঠিয়ে দিয়ে এলাম। ইরিন আনন্দে কেঁদে ফেলার অবস্থা।
আসার সময় আমি ইরিনের হাতে একটি চিঠি লিখে দিয়ে এলাম।

ইরিন
আমাদের এই সম্পর্ক এখন থেকে তোমার ম্যানেজিং এ চলবে। তুমি যেভাবে চাইবে, সেভাবে সব হবে। ঠিক যতদিন পর তোমার মনে হবে তুমি এই সম্পর্কের জন্য তৈরি, তখনি আমরা শুরু করবো। যদি কখনো মনে হয় দরকার নেই, বাদ দেবো। সেজন্য যদি আজীবন অপেক্ষা করতে হয় আমি করবো। যদি এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে না হয় তাতেও আমি রাজি। তবে এই সম্পর্ক থেকে তুমি যেমন মুক্ত, আমিও কিন্তু। আজ থেকে আমি তোমার পেছনে ছুটলাম ইরিন। তোমায় মাতোয়ারা হবার দিন শুরু হলো আমার। তুমি কবে আমায় মাতোয়ারা হবে সেটাই দেখবো। এই সম্পর্ককে জড়িয়ে এক বিন্দু অসম্মান আমি তোমায় করবো না। সম্পর্কের পরিমিতিবোধ যে আমার আছে, এইটুকুর প্রমান তো তুমি পেয়েছো। এবার আমি তোমাকে আমার অন্যগুণের প্রমাণ দেবো।

ইরিনকে হোস্টেলে উঠিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া কষ্ট হতে লাগলো। যে কথাগুলো আজ এত সহজে লিখছি আমি, তা এত সহজ কথা নয় কিন্তু। যাকে ভালোবাসি, যার জন্য জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখেছি, তাঁকে দূরে রেখে, তাঁর কাছে পরীক্ষা দেওয়া আমার জন্য জীবন-মরণ যুদ্ধসম ছিলো।
আমি মনে মনে ভেবে ফেললাম, ইরিনকে এবার পূর্ণরূপে আমি জয় করবো। ইরিন আমার কাছে আসবে আমার জন্য মাতোয়ারা হয়ে।
ব্যস সেই থেকে আমার নিজের অন্যজীবনের শুরু। শুধু ইরিনের জন্যই আমি আমাকে তৈরি করতে লাগলাম। সৌভাগ্যক্রমে আমার রাজনৈতিক যাত্রা ভালো হতে লাগলো…

এরপরের গল্পটা একদম অন্যরকম। ইরিন নিজের মত পড়াশোনা করতে লাগলো। সে ভীষণ ভালো করতে লাগলো পড়াশোনায়। আর আমি পুরোদমে রাজনীতিতে ডুবে গেলাম। জীবনে অনেক সময় থাকে, যেখানে অনুভূতির জোড়জারি চলে না। চলে বাস্তবতার শাসন। আমার জীবনেও সেরকম চলছিলো। ইরিনবিহীন জীবন আমি দাঁত কামড়ে সহ্য করে যাচ্ছিলাম। আমার মা কিছুতেই আমার এই জীবনটা মেনে নিচ্ছিলেন না। বারবার বলছিলেন, একটা এসপারওসপার করে নে বাবু। এভাবে তো মানা যায় না।
আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে বলি,
—এটা আমার জীবনের রাতের বেলা মা, দিনের বেলা এখনো বাকি।
আমি শুধু এর শেষ দেখতে চাইছিলাম ।
ইউনিভার্সিটিতে আমি মাঝে মাঝে ইরিনের ডিপার্টমেন্টে যেতাম। ইরিন জানতো না। ও মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে আসতো। রান্না করতো, সারাদিন থাকতো, আমার ঘর গুছিয়ে দিতো। আমার সঙ্গে দেখা হবার সুযোগ আমি দিতাম না। ও এলেই আমি বেরিয়ে যেতাম।
তাও যদি কখনো দেখা হয়ে যেতো। ইরিন অপরাধী চোখেমুখে জিজ্ঞেস করতো,
—ভালো আছেন?
আমি উল্টো জিজ্ঞেস করতাম
—তুমি ভালো আছো?
তখন ইরিনের চোখেমুখের দিকে তাঁকালে মনে হত, তাঁকে এত কঠিন প্রশ্ন কেউ কখনো করেনি! সে কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলতো,
—আপনার পরীক্ষা কেমন হলো? পরীক্ষার পর কি করবেন কিছু ঠিক করেছেন?
আমি আবার প্রশ্ন করতাম,
—কি করলে ভালো হয় ইরিন। তুমি একটা পরামর্শ দাও তো!
ইরিন আবার দোটানায় পড়তো। আর আমি দুঃখে ব্যথায় ফালা ফালা হয়ে তাঁকিয়ে থাকতাম। ইরিন কবে আসবে আমার কাছে? কবে?
আমার অপেক্ষার সমাপ্তি কি আমার হাতে আছে? নাকি এই অপেক্ষাও আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে?
মাসখানেক পর একদিন বাড়ি ফিরে দেখি ইরিন আমার ঘরে বসে আছে।
আমাকে দেখেই যেনো প্রাণ ফিরে পেলো।
—কি ব্যাপার?
—বাবা এসেছিলেন আজ।
—তো?
—আমার নতুন মা কনসিভ করেছেন। খবরটা আপনাকে দিতে এলাম।
—ওহ্।
—আপনি কিছু মনে করেননি তো?
—আমি যে কিছু মনে করবো না। তুমি জানো। আর কিছু?
—রিয়া আপু এসেছিলেন।
—রিয়া?
—হু!
—কেন?
—উনি আপনাকে স্যরি বলতে চান!
—আমি কারোর স্যরি চাই না ইরিন।
—উনি মন থেকে কষ্ট পাচ্ছেন। একবার কথা বলে তো দেখুন। আপনাদের মাঝের দূরত্বটা কমবে!
আমি চিৎকার করে বললাম,
—আমি চাই দুরত্ব থাকুক। তুমি কি ভেবেছো? তুমি চলে যাবার জন্য আমায় রিয়াকে গছিয়ে দিয়ে মুক্ত হবে?
—কিন্তু আপনি তো রিয়াপুকে ভালোবাসতেন!
—ওটা ভালোবাসা ছিলো না। একটা খারাপ অসুখ ছিলো। এই অসুখ সেড়ে গেছে আমার। আমি শুধু এখন তোমাকে নিয়ে ভাবি। তোমাকে ঘিরে আমার সকল অসুখ ইরিন। আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই, থাকতে দেবো না আমি।
—আপনি কিন্তু আমায় মানসিক অশান্তিতে ফেলছেন! আপনার এমন পাগল পাগল মন হলে আমি দূরে থেকে সবসময় আত্মগ্লানিতে ভুগবো।
—ইরিন, আমি শুধু তোমার ভালো থাকবার জন্য অস্থির। তুমি আমার সাথে এসে থাকবে বলে নয় কিন্তু।
ইরিন চোখেমুখে কাঠিন্য এনে বললো,
—শুধু হলে তুলে দিয়ে রাজনীতি করে গেলেই সেটাকে ভালোবাসা বলে না।
—তো? আর কি করতে হবে? কি?
—আমি জানিনা সেটা কি? যে কারণে আপনার আমার জন্য অসুখ, আমারও আপনার জন্য অসুখ। ভয়ংকর অসুখ। কিন্তু আমি সেজন্য কোনোভাবেই আগে থেকে আপনার কাছে আসবো না। থাকুক আমার অসুখ।
আমি সেই প্রথম একজন গম্ভীর চেহারার ইরিনকে দেখলাম। আমার ইচ্ছে করলো, আমি ইরিনকে জড়িয়ে ধরে বলি, আমি তোমার জন্য সব করতে পারি। সব। কিন্তু কেন জানি বলতে ইচ্ছে করলো না। মনে হলো… বলার দরকার নেই। আমি এমন কিছু করবো, যেখানে আমার ভালোবাসা বিশেষ হবে। ইরিন প্রতি মুহূর্তে আনন্দে ব্যস্ত হয়ে থাকবে আমার ভালোবাসার জন্য।

পরিশিষ্ট

এরপর কয়েক বছর পরের কথা। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে আমার কাছে একটি মেইল এলো। মেইল করেছেন ওখানকার এক প্রফেসর। নাম লিনার্ড হুইপেস। তিনি লিখেছেন,

প্রিয় শ্রেয়ান,
সব পুরুষ ভালোবাসতে পারে। সহজ ভালোবাসা। কামনার ভালোবাসা। কঠিন করে কোনো পুরুষ ভালোবাসতে পারে না। কারণ কঠিন ভালোবাসায় অপেক্ষা, ত্যাগ, সহ্য এই তিন প্রধান শর্ত। এই তিন শর্তের কাছে আমরা পুরুষেরা অসহায়। কিন্তু তোমার ভালোবাসার কাছে এই তিন শর্ত হার মেনেছে। ইরিনের জন্য তোমার অনুভূতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সে আমার কাছে বারবার কেঁদেছে। বারবার বলেছে , আমি তাঁর জন্য কিছু করতে চাই। দীর্ঘ চার বছরে আমার এই প্রিয় ছাত্রীটি যতবার তোমার কথা বলেছে ততবার হাউমাউ শব্দে কেঁদেছে।
সবসময় তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে তাঁকে ঘিরে রেখেছো। এবার সে তোমায় ভালোবাসায় ঘিরে ফেলার আয়োজন করেছে। আগামী সাত তারিখ সে বাংলাদেশে ফিরছে। তোমার নির্বাচনী প্রচরণায় সে তোমার সাথে অংশগ্রহণ করবে। তোমার রাজনৈতিক সফলতা এখন তাঁর একমাত্র কাম্য। এবার ইরিন সম্পর্কে আমি তোমায় একটি বিচিত্র তথ্য দিই; ইরিনের বাবা বলে যাকে তুমি চেনো, তিনি ইরিনের নিজের বাবা নয়। মিলি এখন উনার যেমন ধরনের সন্তান। তেমনি ইরিনের মা’কেও তিনি বিয়ে করেছিলেন। ইরিনের বয়স যখন ছয় বছর, তখন সে এই মানুষটিকে বাবা হিসেবে পায়। এই পৃথিবীতে ইরিনের নিজের মানুষ বলতে কেউ নেই। কিন্তু সে এই বিষয়টা কাউকে জানাতে চায় না। তাঁর ধারণা, এই বিষয়টা কাউকে জানানো ভীষণ লজ্জার। তাঁর খুশির জন্য সে একা একাই যথেষ্ট। এই যে শক্ত ইরিনকে তুমি চেনো, আমি চিনি সেটা তাঁর নিজের তৈরি করা খোলস। সেই খোলসে সে কাউকে বুঝতে দেয় নি যে সে ভেতরে ভেতরে কতটা ঝুরঝুরে হয়ে আছে। এই পৃথিবীর চমৎকার ধরনের স্নেহের বেশিরভাগ থেকে ইরিন বঞ্চিত। ইশ্বর সেজন্যই বোধহয় তোমাকে তাঁর ভালোবাসার ক্ষতিপূরণ স্বরূপ মিলিয়ে দিয়েছেন।
আমি তোমাকে মেইল পাঠাচ্ছি এর পেছনে আরো একটা কারণ আছে। ইরিন যে দেশে ফিরছে এটা সে কাউকে জানায়নি। আমার ধারণা সে তোমাকে চমকে দিতে চায়। কিন্তু আমি চাই, তুমি ওকে চমকে দাও। এই বিদেশে, এই অচেনা আমাদের মাঝে এই মেয়েটির প্রতিটি বিকেলের চোখের পানি ছিলে তুমি। এবার দেশে ফিরে সে তোমার হাতেই প্রথম নিজের চোখ মুছুক। ইশ্বর করুন,
ভালোবাসায় দুজনে আজীবন চোখ ভেজাও।
তোমাদের এই অসহ্য অপেক্ষার অবসান হোক ভালোবাসার ঝর্ণাধারায়!

বিঃদ্রঃ তোমাদের দুজনের একসাথে তোলা একটি ছবি আমাকে শীঘ্রই পাঠাবে। আমি সেই ছবিটি আমার ঘরে রাখতে চাই।
ভালো থেকো। ভালোবাসায় সিক্ত হও প্রতিমুহূর্তে।

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here