মান অভিমান পর্ব -০১

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আমার মামাত ভাই আর্দ্র দেশে ফিরছে আমরা সবাই বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে ওনার জন্য অপেক্ষা করছি, কিছুক্ষণের মধ্যে ওনার গাড়ি এসে পৌঁছালো আর্দ্র গাড়ি থেকে নামার পর ওনার সাথে আরেকজন ও নামলো যাকে দেখে আমার বুকের ভিতর ধক করে উঠল আমি কখনোই আর্দ্র ভাই এর সাথে ওনাকে আশা করেনি এতো গুলি বছর পর ওনাকে দেখবো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু ওনি হঠাৎ করে এতো বছর পর আবার এখানে কেনো আসলো খুব তো পাঁচ বছর আগে আমাকে কাঁদিয়ে চলে গিয়েছিলো তাহলে আবার ফিরে আসলো কেনো? ভালোই তো ছিলাম ওনার ফেলে যাওয়া সৃতি নিয়ে,, মাহির ভাবনার মাঝেই মেহরাব গাড়ি থেকে বেরিয়ে আর্দ্রর সাথে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো যাওয়ার আগে একবার মাহির দিকে তাকালো তারপর আবার ও চোখ ফিরিয়ে নিলো। কিরে পিচ্চি বুড়ি এভাবে এখানে হা করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো??

আর্দ্রর কথায় মাহির হুশ ফিরলো কোন রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,, আর্দ্র ভাইয়া আমি মোটেও আর পিচ্চি নই আমি এখন অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি ।

ওহ তাই বুঝি আমি আরো ভাবলাম তুই এখনো সেই পাঁচ বছর আগের পিচ্চি টাই আছিস।

আর্দ্র মাহির পিছনে না লেগে ভিতরে যা দাদু কিন্তু তোদের দুজনের উপর অনেক রেগে আছে সেই যে বাড়ি থেকে দুটো রাগ করে বেরিয়ে গেলি আর ফিরলি পাঁচ বছর পর অনেকটা সময় হ্যাঁরে তোদের কি আমার কথা একবার ও মনে পড়েনি? আর মেহরাব ছোট মাকে একবারে ভুলে গেলি?? আর্দ্রর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম শেষে কিনা তুইও??

ছোট মা তুমি প্লিজ রাগ করো না তোমার ওই বদ রাগী শশুর টা ওভাবে বকা না দিলে কি আমরা যেতাম বলো সব দোষ তোমার ওই বদ রাগী শশুর টার।

হুমম মেহরাব তুই ঠিক বলেছিস তা আম্মু তোমার ওই রাগী অবসর প্রাপ্ত কর্ণেল দ্যা গ্রেট আলতাফ চৌধুরী কোথায়?? আর্দ্র আর মেহরাব দুজন দুদিক থেকে সাহানা (আর্দ্রর মা) কে জড়িয়ে ধরে বলল।

ফাযিল ছেলে দাদুকে এমন বলতে হয়, যা গিয়ে দেখ ওনার রুমেই আছে অনেক রেগে আছে তোদের উপর।

আচ্ছা তুমি থাকো আমরা গেলাম,, আর্দ্র আগে আগে চলে গেলো মেহরাব যেতে গেলে দেখলো মাহি দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে মাহির দিকে এক পলক তাকিয়ে আর্দ্রর পিছু পিছু চলে গেলো।

সত্যি মেহরাব ভাই আপনি কখনোই আমার ভালোবাসাটা বুঝলেন না, সব সময়ের মতো আবেগ ভেবেই উড়িয়ে দিলেন,, যদি কখনো বুঝতেন যে এটা খনিকের আবেগ নয় এটা অফুরন্ত ভালবাসা তাহলে হয়ত আমাকে এতোটা অবহেলা করতে পারতেন না, তবে আমি জানি আপনি একদিন বুঝবেন আমার ভালবাসা তবে তখন অনেক দেরি না হয়ে যায়,,, মনে মনে কথাগুলি বলে চোখের কোণে জমে থাকা পানিটা মুছে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো মাহি।
,,,,,,,
মেহরাব আর আর্দ্র মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে, বাড়ির সবাই এই একজন কে খুব ভয় পাই তবে ভালোও বাসে আর সম্মান ও করে, আর মেহরাব আর আর্দ্র তো আলতাফ চৌধুরী এর চোখের মণি দুজনকে অনেক ভালোবাসে ওনি তবে এখন ওনি খুব রেগে আছে ওদের দুজন এর উপর সামান্য তো একটু রাগই করেছিলো তাই বলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে তাও আবার এক দুইটা বছর না পুরো পাঁচ বছর পর ফিরে আসল।

দাদু তুমি আমাদের মারো কাটো যা ইচ্ছে শাস্তি দাও তবুও প্লিজ আমাদের সাথে কথা বলো, তুমি এভাবে কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।

হ্যাঁ দাদু আর তুমি জানো আমরা আর তোমার সেই বেকার নাতি নেই আমরা এখন অনেক বড় একটা রেস্টুরেন্ট এর মালিক আমাদের বিজনেস প্রায় সারা বাংলাদেশে,, তুমি আর আমাদের বেকার বলতে পারবে না, এখন তো আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি এবার তো কথা বলো প্লিজ দাদু।

পিছনে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা আলতাফ চৌধুরী এবার পিছন ঘুরে তাকিয়ে বলল,, তোরা আমাকে কি ভাবিস বলতো আমি পাথর? ওরে আমারও কষ্ট হয় আমিও তোদের ভালোবাসি হ্যাঁ প্রকাশ করতে পারি না এটাই আমার সম্যসা তাই বলে তোরা আমায় এভাবে ছেড়ে চলে যাবি?? আর মেহরাব তুই আমায় পর ভাবতে পারিস কিন্তু আমি নই তুই শুধু আমার বন্ধুর নাতি ছেলে নয় আর্দ্রর মতো তোকেও আমি আমার ছেলের সন্তানই মনে করি।হয়ত তোরা দুজনে আমায় পর ভাবতে পারিস তবে আমি নাহ,, কথাটা বলতেই মেহরাব আর আর্দ্র এসে আলতাফ চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরল,, কে বলেছে আমি তোমায় পর ভাবি তুমিও তো আমি দাদু আর আমরা তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি।

আলতাফ চৌধুরী এবার ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে আদর করে কান্না মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলল, যাক অবশেষে সবটা ঠিক হলো এবার শান্তিতে আর্দ্র আর মাহির বিয়েটা দেওয়া যাবে। আলতাফ চৌধুরীর কথা শুনে আর্দ্র আর মেহরাব এর হাসি মুখটা মহুর্তেই ফেকাসে হয়ে গেলো,, আচ্ছা তোরা অনেক দূর থেকে এসেছিস আগে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নে তারপর বসে এসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে ওকে।

আর্দ্র দাদুকে বিদায় জানিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,, দাদু আমিও যায় বলো বাসায় যেতে হবে আব্বু আম্মু চিন্তা করছে। মেহরাব ও বিদায় নিয়ে চিন্তিত মুখ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, মাহি এদিকেই আসতেছিলো তখনি মেহরাব এর সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে যাচ্ছিলো তখনি মেহরাব মাহিকে ধরে ফেললো, এক হাত মাহির কমরে আর অন্য হাত মাহির মাথায়, আর মাহি চোখ দুটো বন্ধ করে শক্ত হাতে মেহরাব এর শার্ট এর কলার ধরে আছে। মেহরাব অপলক দৃষ্টিতে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে যেনো কত বছরের পিপাসা মিটাচ্ছে চোখের পলক ফেলতেই ভুলে গেছে মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেললেই দেখা কম হয়ে যাবে,, মাহি আস্তে করে চোখ মিলে তাকালো দেখলো এক জোড়া চোখ মাতাল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেনো চোখের ভাষায় অনেক কিছু বলতে চাইছে,, মেহরাব এক হাত দিয়ে মাহির মুখের উপর আসা চুলগুলি আলতো করে সরিয়ে দিলো নিজের অজান্তেই ঠোঁট দুটি এগিয়ে নিয়ে গেলো মাহির কপাল এর দিকে মাহি নিজের রাগ অভিমান ভুলে আবেশে চোখ দুটি বন্ধ করে নিলো,, মেহরাব এর কিছু একটা মনে পরায় হুশ আসতেই ও মাহিকে ছেড়ে দিলো আবেগের বশে ও অনেক বড় ভুল করতে যাচ্ছিলো, অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও মেহরাব এর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মাহি চোখ মিলে তাকালো,,, কীভাবে হাঁটিস যে যখন তখন যেখানে সেখানে পড়ে যাস এতো বড় হয়েছিস এখনো ভালো করে হাঁটা শিখলি না, এর পর থেকে ভালো করে দেখেশুনে হাঁটবি নয়ত পরেরবার আর আমি ধরতে আসবো না যত্তসব ,, কথা গুলো বলে মেহরাব চলে গেলো আর মাহি টলমল চোখে মেহরাব এর য়াওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল।
,,,,,
এটা কোনো নিয়ম হলো আম্মু এই নিয়ম কে তৈরি করেছে বলো তো নিজের ফুপাত বোন কে বিয়ে করতে হবে এটা কোনো কথা।

হুমম তোর দাদুর ও আগে থেকে এই নিয়ম মেনে আসছে তোর দাদুও তার ফুপাত বোনকে বিয়ে করেছে আর তোর বাবাও তার ফুপাত বোনকে বিয়ে করেছে তাই সেই নিয়ম অনুযায়ী তোকেও মাহিকে বিয়ে করতে হবে,, হ্যাঁ তুই আসবি বলে মাহি এখানে এসেছে ও হয়ত কালকে চলে যাবে ওকে গিয়ে দিয়ে আসবি নয়ত দাদু রাগ করবে।

আমি মানি না এই অদ্ভুত নিয়ম আরে নিজের ও তো একটা পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে।

না পারে না তোকে যখন বলা হয়েছে মাহিকে বিয়ে করা লাগবে তো লাগবেই বাবা যা বলেছে তাই হবে আর কোনো কথা হবে না ওকে।

কিন্তু বাবা,, আর্দ্র কিছু বলার আগেই মেহরাব ওখানে চলে আসল,, আর্দ্র আমি বাসায় যাচ্ছি তুই যাবি নাকি আমি একাই চলে যাবো।

আরে নাহ দাঁড়া আমিও যাবো,, আর্দ্র মেহরাব সবার থেকে বিদায় নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো উদ্দেশ্য মেহরাবদের বাসায় যাওয়া আর্দ্র ড্রাইভ করছে আর মেহরাব বসে আছে,, ড্রাইভ করতে করতে আর্দ্র কিছুটা অন্য মনষ্ক হয়ে পড়েছিলো তখনি ওর গাড়ির সাথে কিছু একটা ধাক্কা লাগল,, ওহ শিট।

দেখে ড্রাইভ করবি তো দেখ কি হলো,, মেহরাব এর কথামতো আর্দ্র গাড়ি থেকে নেমে বাইয়ে বেরিয়ে আসল,, ইয়ানা স্কুটি নিয়ে একটু বেরিয়ে ছিলো বাজার করতে হবে সেই জন্য তখনি ওর সামনে ইয়া বড় একটা কার চলে আসল আর ও তাল সামলাতে না পেরে কার টার সাথে ধাক্কা লেগে গেলো। আর্দ্র বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল একটা মেয়ে স্কুটি নিয়ে ওর গাড়ির সামনে পড়ে গেছে তাই ও সাহায্য করার জন্য ইয়ানার কাছে যেতেই ইয়ানা বলে উঠল,, এই ফাযিল লোক নিজের বড় গাড়ি আছে বলেই কি ইচ্ছে মতো ড্রাইভ করবেন রাস্তাটা কি আপনার দাদার?? বদ লোক একটা যখন গাড়ি চালাতেই পারেন না তখন গাড়ি নিয়ে বার হন কেনো রাস্তায়।

হেই মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ কি সব কথা বলছেন মানছি যে আমার গাড়ির সাথে ভুল করে আপনার স্কুটি ধাক্কা লেগে গেছে তাই বলে কি সব বাপ দাদা তুলে কথা বলছেন তা আমার নাহ হয় রাস্তাটা দাদার নয় তা এই রাস্তাটা কি আপনার বাবার??

নারে আপনার বাবার আর আপনার বাবা আমার আংকেল লাগে,, চোখ থাকতে অন্ধ কোথাকার।

ইয়ানার এহেন কথায় আর্দ্র পুরাই বোকা বনে গেছে, আবার এক দিক থেকে রাগে ফেঁটে যাচ্ছে , তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আমি না হয় চোখ থাকতে অন্ধ তা আপনার তো ইয়া বড় বড় গরুর মতো দুটো চোখ আছে তাহলে মরতে আমার গাড়ির সামনে আসলেন কেনো??

এখন আমি কি বলবো, না না হেরে গেলে চলবে না কিছু তো একটা বলে জিততেই হবে মেয়েরা কখনো ছেলেদের সাথে ঝগড়ার হেরে যায় নাহ, মনে মনে কথাগুলি বলে ইয়ানা বলল,, এই শুনুন মাঝ রাস্তায় পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করবেন না তো ঝগড়ুটে লোক একটা,, আমার আলু গুলো সব ফেঁটে চৌচির হয়ে গেলো রে।

কিহ??

এখন তো দেখছি আপনি শুধু অন্ধ নন সাথে কানে খাটো,, কেউ কারো থেকে কম নন রাস্তার মাঝে গাড়ি থামিয়ে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে। অনেক্ক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও আর্দ্র না আসায় মেহরাব গাড়ি থেকে নামলো দুপাশে তাকিয়ে দেখল দুপাশেই একদম জ্যাম হয়ে গেছে আর লোকজন রেগে এক নাগাড়ে হর্ন দিয়েই যাচ্ছে তবুও আর্দ্র ইয়ানার কোনো হুশ নেই দুজনে সমানে ঝগড়া করেই যাচ্ছে , মেহরাব যলদি করে আর্দ্রর কাছে গেলো। আপনার মতো মেয়ে যায় বউ হবে তার আর বেঁচে থাকতে হবে না মরার আগেই বেচারার জীবনটা নরক হয়ে যাবে।

এই শুনুন আপনাকে আমার বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে না, আমি জানি আমি কেমন আর যাই হোক আপনার মতো ঝগড়ুটে কোনো লোককে বিয়ে করবো না।

আর্দ্র কি হচ্ছে কি, কি বাচ্চাদের মতো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছিস ভালো করে চারপাশে তাকিয়ে দ্যাখ পুরা রাস্তা জ্যাম হয়ে গেছে চল এখান থেকে,, আর্দ্র কে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে যেতে যেতে বলল মেহরাব।

আপনাকে আমি দেখে নেবো মিস বকবক যেতে যেতে বলল আর্দ্র।

দেখুন না দেখুন ভালো করে দেখুন সামনেই তো আছি,, ঝগড়ুটে লোক একটা।

চলবে,,,,,,,??

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১_পর্ব

অনেক বড় একটা বিরতি নিয়ে আবার ফিরে আসলাম আপনাদের ভালোবাসার মাহি মেহরাব আর আর্দ্র ইয়ানার প্রেমের জুটি নিয়ে, আশা করি ভালো রেসপন্স পাবো 🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here