মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৫৪+৫৫

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ বোনাস
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রুহিকে দেখে মেয়েটা রুহির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। রুহি সৌজন্যে আলতো হাসি দিলো। মেয়েটা অভিদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। মেয়েটা যেতেই রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়
” কে ছিলো এই ধলা মেয়েটা ?” অভিদ হেসে ভ্রু কুঁচকে বলে
” ধলা মেয়ে মানে ?”
রুহি রেগে বলে
” এখন কিছু বুঝেন না, তাই না ? এই মেয়েটা কে ছিলো ? সকাল সকাল উঠেই এখানে এসে ওর সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছেন !” অভিদ ব্যস্ত হয়ে বলে
” আরে এই মেয়েটা তো…” অভিদের কথার মাঝে রায়হান এসে অভিদের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে
” মেয়েটা তো অভিদের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। জানো রুহি ! অভিদ যতোবার ফার্মহাউজে এসেছে ততোবার এই মেয়েটার সাথেই ঘুরতে বের হয়। মাঝে মাঝে তো লাঞ্চ বা ডিনার ও করে একসাথে।” রুহি কাঁদোকাঁদো হয়ে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ রেগে রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হান অভিদকে দেখে দাঁত কেলাচ্ছে। অভিদ তাক থেকে একটা বই হাতে নিয়ে রায়হানের দিকে ছুড়ে মারে। রায়হান বইটা কেচ ধরে নেয়। অভিদ রুহির কাছে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলে উঠে
” রুহি রায়হান মিথ্যা কথা বলছে ওর সাথে তেমন কোনো সম্পর্কই নেই আমার।”
রুহি কান্না আটকে রেখে বলে
” কোনো সম্পর্ক নেই তাই না ? তাহলে দুজন হাত ধরে ধরে কথা বলছিলেন কেনো ? এই মেয়ের সাথে দেখা করার জন্যই বুঝি আপনি আমাদের সবাইকে এখানে এসেছেন ! আপনি আর একদম আমার সাথে কথা বলবেন না !”
রুহি কান্না আটকে রাখায় চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। রুহি হনহনিয়ে বাইরে চলে যায়। অভিদ রায়হানের কাছে এসে রায়হানের পিঠে ঘুষি দিয়ে বলে
” শালা আর কিছু বলার জন্য খুঁজে পাচ্ছিলি না ? এই সবই বলতে হলো শেষ পর্যন্ত ?” রায়হান দাঁত কেলিয়ে বলে
” অনেক মজা লেগেছে রে ভাই ! বাড়ির বাইরে তো মাফিয়া গিরি করে বেড়াস এবার বউ এর সামনে একটু কিভাবে মাফিয়া গিরি করিস সেটা দেখতে চাই।” অভিদ চোখ রাঙ্গিয়ে বলে
” আমারও সময় আসবে দেখিস !” রায়হান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে
” দেখে নেবো !” অভিদ ছুটে বেড়িয়ে গেলো।
রুহি জোড়ে জোড়ে হাটতে থাকে কিছুদূর এগোতেই হঠাৎ ব্যাথায় পেট চেপে ধরে চোখ মুকজ কুঁচকে বসে পরে বাড়ির সামনে ঘাসের উপর। গার্ডরা রুহিকে দেখেই দৌঁড়ে চলে আসে।গার্ডরা এগিয়ে এসে বলে
” ম্যাম কি হয়েছে আপনার ? স্যারকে ডাকবো ম্যাম?”
রুহি মাথা নেড়ে বলে
” নাহ ঠিকাছি আমি আপনারা জেতে পারেন।” অভিদও দৌঁড়ে চলে আসে। রুহিকে দেখে রুহির সামনে হাটু গেড়ে বসে অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ? খারাপ লাগছে ?”
রুহি রাগ নিয়ে বলে
” আমি একদম ঠিকাছি। আপনাকে বলেছি না, আমার সাথে কথা বলবেন না ! আবার কথা বলছেন কেনো আপনি ?” অভিদ গার্ডদের বলতেই তারা চলে যায়। অভিদ রেগে রুহিকে ধমক দিয়ে বলে
” চুপ ! বেশি বেশি করছো তুমি ! এমনি শরীর খারাপ লাগছে আবার বড় বড় কথা বলছো কেনো ?” রুহি চোখ মুখ শক্ত করে বলে
” আপনি আবার বকছেন আমাকে ? আমি বলেছি না ঠিকাছি আমি ! আমি কিন্তু চলে যাবো এখন !”
অভিদ রেগে ধমক দিয়ে বলে
” চুপ ! আর একটা কথা বললে এখন মাথায় তুলে আছাড় মারবো। না জেনে বেশি কথা বলছো তুমি।”
রুহি মুখ ফুলিয়ে উঠে পরে এখান থেকে। রুহিকে দেখে সাথে অভিদও উঠে পরে। রুহি গিয়ে ফার্মহাউজের সামনে থাকার গার্ডেনের টি টেবিলের চেয়ারে বসে পরে। অভিদ রুহির পাশে বসে রুহির হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে নেয়। রুহি গায়ের জোরে বারবার ছাড়াতে চাইলেও অভিদের সাথে পেড়ে উঠে না। অভিদ রুহির হাত দুটোর উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে বলে
” মেয়েটার নাম এলিজাবেথ। মা বাংলাদেশি আর বাবা লন্ডন এর। এলিজাবেথ এখানেই থাকে কয়েক বছর ধরে তাই এখানের সব কিছু ওর পরিচিত। আমি ওকে কখনো দেখে কিনা জানি না তবে এই প্রথমবার পরিচিত হয়েছি। এলিজাবেথ নাকি আমার খুব বড় ফ্যান তাই খুশি হয়ে হাত ধরেছিলো এর চেয়ে বেশি কিছুই নয়।”
রুহি আড়চোখে তাকিয়ে বলে
” আর আপনি কি বলছিলেন ওকে ?” অভিদ টেডি স্মাইল দিয়ে বলে
” আমি তো আগে এখানে আসলে তেমন ঘুরিনি তাই কিছু চিনি না। এলিজাবেথ কে বলছিলাম আমাদের সবাইকে নিয়ে এখানের সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখাতে।” রুহি ভেঙিয়ে বলে
” এহ আপনি বাচ্চা ছেলে নাকি? মাফিয়া হয়েও কিছু চেন না আপনি ?”
অভিদ নিশ্বাস ফেলে বলে
” বুঝতে পারছি না কথায় কথায় মাফিয়ার কথা তুলে আনো কেনো তোমরা ? আমাকে মাফিয়া বলে খোঁটা দিয়ে কি মজা পাও ?”
রুহি আমতা আমতা করে বলে
” খোঁটা কোথায় দিলাম ? আপনি একজন বিজনেসম্যান সাথে মাফিয়া সাথে আরো কতো কি ! এই সবের জন্যই তো আপনার এতো ফ্যান আপনার জন্য পাগল সেটাই বলছিলাম। তবে আজকে ঘুরতে বের হলে আপনি মাস্ক পরে বের হবেন যাতে কেউ চিনতে না পারে।”
অভিদ মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা করোনার পরিস্থিতি ভালো নয়।” রুহি মুখ বাকিয়ে বলে
” করোনার পরিস্থিতি খারাপ হোক আর ভালো হোক ! আপনার আর আপনার ফ্যান দের পরিস্থিতি আমি সব সময়ই খারাপ দেখি।”
অভিদ হেসে দেয় রুহির কথায়। অভিদ রুহিকে নিয়ে বাড়িতে এসে পরে। দুজন ব্রেকফাস্ট টেবিলের কাছে এসে দেখে সবাই সবার মতো গল্প করছে আর খাচ্ছে। অভিদ আর রুহি গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরে। নিলা দুজনকে দেখে বলে
” এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন ভাইয়া ?”
অভিদ রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমার গুনোধর ভাই আমার সংসারে আগুন লাগিয়েছিলো সেই আগুন নাভাতেই ব্যস্ত ছিলাম।” সবাই ফিকফিক করে হেসে দেয় অভিদের কথায়। সবাই গল্প করতে করতে ব্রেকফাস্ট শেষ করে নেয়। সবাই সবার রুমে চলে যায় তৈরি হওয়ার জন্য।
রুহি তৈরি হতে হতে হঠাৎ অনির কথা খেয়াল আসে ওর। রুহি এক চোখে আইলাইনার দিয়েই অভিদের কাছে চলে যায়। অভিদও তৈরি হচ্ছিলো রুহিকে দেখে ভ্রু জোড়া নাচিয়ে বলে
” কিছু চাই নাকি বাবুই পাখি?”
রুহি গলা ঝেড়ে বলে
” অনির ব্যাপারে কিছু বলার ছিলো আপনাকে।”
অভিদ মিররের দিকে তাকিয়ে নিজের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
” হুম ! বলতে থাকো কি বলতে চাও।”
রুহি আমতা আমতা করতে থাকে। কিভাবে বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। অভিদ আবারও বলে
” দ্রুত বলো কি বলবে ?”
রুহি নিশ্বাস নিয়ে বলে
” আসলে অনি আমি আর সেই ড. এর কথা বলতে চাইছি।”
অভিদ রুহির হাত থেকে আইলাইনার টা নিয়ে বলে
” কালকের ঘটনা আমি সবই জানি আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই।”
রুহি অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেলো। অভিদই তো সবার আগে জানবে সেটা অসম্ভব কিছুই নয়। রুহি মাথা নেড়ে বলে
” ঠিকাছে তবে কি ভেবেছেন অনিকে নিয়ে ?”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” কয়েকদিন পরই ওর বার্থডে। সেইদিনই জানতে পারবে। তবে এমন কিছু ডিসিশন নিইনি যাতে আমার বোন কষ্ট পাবে !” রুহি মাথা নেড়ে বলে
” হুম বুঝতে পেরেছি।”
অভিদ রুহির গালে স্লাইড করতে করতে বলে
” কি বুঝেছে আমার বাবুই পাখি?”
রুহি অভিদের আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দেয়। অভিদ ব্যাথায় কুকড়ে আঙ্গুল সরিয়ে নেয়। রুহি বাকা হেসে বলে
” আমার যা বোঝার তা অনেক কিছুই বুঝেছি। সেটা আপনাকে বলবো কেনো? ” অভিদ রুহির কোমড়ে হাত রেখে রুহিকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে
” বলতে হবে না। আমাকে আমার বাবুই পাখির ভালোবাসা দাও তাতেই হবে।”
অভিদ রুহির পুরো মুখে চুমু দিতে থাকে। ধীরে ধীরে দুই অধর জোড়া এক করে দেয়। রুহি অভিদের গলা জড়িয়ে ধরে।
কিছুক্ষণ পর অভিদ রুহিকে ছেড়ে দিয়ে রুহির চুল গুলো একপাশে নিয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। রুহি আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।
অভিদ ঘাড়ে চুমু দিয়ে রুহির থেকে দূড়ে সরে যায়। রুহির গাল দুটো আবারো লাল রক্তিম আকার ধারণ করে। অভিদ রুহির গালে চুমু দিয়ে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে। রুহিও তৈরি হতে থাকে।
এলিজাবেথ নামের মেয়েটা অভিদদের সাথে জয়েন করলেও সে শুধু রাইমার সাথে গল্প করতেই ব্যস্ত। সবাই গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে। রুহি অভিদকে বলে
” আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায় ?”
অভিদ রুহিকে চোখ মেরে বলে
” কক্সবাজার।”
রুহি ভেংচি কেটে বলে
” এসব মজা রাখুন ! আচ্ছা আমি না বাড়ির কিছু দূর সামনে সমুদ্র দেখেছিলাম। আমরা সেখানে না গিয়ে কোথায় যাচ্ছি ?”
অভিদ শব্দ করে হেসে দেয় রুহির কথায়। রুহি বোকার মতো তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে। হাসার মতো কি এমন বলেছে বুঝতে পারছে না।
অভিদ হাসতে হাসতে বলে
” আরে গাধী সেখানে ফটোশুট হয়, অনেক শর্টশুটিং ও হয়। তাই এসব নকল সমুদ্র সৈকত, পাহাড় সবই দেখতে পাবে। আমরা আসল জায়গায় যাচ্ছি।”
রুহি নিজের বোকামোর জন্য লজ্জা পায় কিছুটা। ভালো করে না দেখেই উল্টো পাল্টা কথা বলছে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫৪
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রুহি নিজের বোকামোর জন্য লজ্জা পায় কিছুটা। ভালো করে না দেখেই উল্টো পাল্টা কথা বলছে।
প্রায় এক ঘন্টা পর গাড়ি থামিয়ে একে একে সবাই নেমে পড়ে। রুহি গাড়ি থেকে নেমে দেখে একটা পাহাড়ি অঞ্চলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা। রুহি ঘুরে অভিদের কাছে গিয়ে বলে
” এটা কোথায় আমরা ?”
অভিদ মুচকি হেসে বলে
” তুমি কোন কোন জায়গায় এখনও যাওনি ?”
রুহি ভেবে ভেবে বলে
” অনেক জায়গায়ই তো যাইনি। কক্সবাজার, সাজেক, রাঙ্গামাটি এসব জায়গায় গিয়েছি আমি।”
অভিদ আলতো হেসে বলে
” আমরা চট্টগামে এসেছি। এটা চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির।” রুহি অবাক হয়ে বলে
“চট্টগ্রাম ? আপনি আমাকে আগে বলেননি কেনো ?” অভিদ হেসে বলে
” বললে তো সারপ্রাইজ দিতে পারতাম না। এখন চলো উপরে যেতে হবে তো !” সবাই জোড়ায় জোড়ায় উঠতে থাকে। প্রথমেই এলিজাবেথ রাইমাকে নিয়ে উপরে উঠছে এরপর সবাই আসছে। অভিদ রুহির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কেয়ারফুল ভাবে উঠছে। আর সাথে তো গার্ডরাও রয়েছে।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে ছোট একটি ঝর্ণা দেখাঁ যায়। এই ঝর্ণার কাছ থেকে পাহাড়ে উঠার পথ দুই দিকে চলে গেছে। ডান দিকের পথটির পুরোটাতেই পাহাড়ে উঠার জন্য সিঁড়ি তৈরি করা আর বাম পাশের পথটি সম্পূর্নই পাহাড়ি। সাধারণত পাহাড়ি পথ দিয়ে উপরে উঠা তুলনামুলক সহজ আর সিঁড়ির পথে নামাতে সহজ হয়। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫২ ফুট। সবাই হেঁটে উঠতে পারলেও রুহির বারবার পথের মাঝে থেমে থেমে উঠতে হচ্ছে। সবাই রুহি আর অভিদের জন্য ধীরে ধীরে উঠছে। প্রায় দুই ঘন্টা সময় পাহাড়ে উঠতেই লেগে যায়। অভিদ পাহাড়ারে উঠে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে
” এই জায়গায় আসার আগে ভাবার উচিত ছিলো। তোমাকে এই অবস্থায় এতোটা পথ হাটতে হচ্ছে।” রুহি হেসে বলে
” এসেই যখন পড়েছেন এসব বলে আর লাভ কি ?” অভির মাথা নেড়ে ফুস করে নিশ্বাস ফেলে।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরেই চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। অভিদরা সবাই সেখানে যায়। এলিজাবেথ এখানকার সব কিছুই চেনে তাকে বলার আগেই সে ছুটে ছুটে চলে যাচ্ছে আর তার সাথে রাইমা থাকায় আরো বেশি ছুটাছুটি চলছে দুজনের। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে এবং চূড়ায় মন্দিরের কাছে ছোট টং দোকান আছে সেগুলিতে হালকা খাবার এবং পূজা দেয়ার উপকরণ পাওয়া যায়। অভিদ বাড়ি থেকেই সবার জন্য খাবার আনার ব্যবস্থা করেছিলো। তার মতে এসব খাবার খুবই unhygienic। তবে রুহি জোড় করে টং এর চা খেয়েছ সাথে সবাইকে খাইয়েছে। পুরো পাহাড়ের চূড়া ঘুরার পর সবাই এবার সিঁড়ি পথ দিয়ে পাহাড় থেকে নামতে থাকে। অভিদ হঠাৎ করে কোথাও চলে যায়। কিছুক্ষণ পর রুহি খেয়াল করে সেটা। আশেপাশে তাকিয়ে অভিদকে দেখতে না পেয়ে রায়হানকে ডাক দেয়। রায়হান আগেই হাটছিলো রুহির ডাক শুনে থেমে যায়। রুহি এগিয়ে এসে চিন্তিত হয়ে বলে
” ভাইয়া উনি কোথায় গিয়েছে ?”
রায়হান ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক দেখতে থাকে কিন্তু কোথাও দেখতে না পেয়ে বলে
” এখানে তো মনে হচ্ছে নেই। কোথায় গিয়েছে বলে যায়নি তোমাকে ?” রুহি বাচ্চাদের মতো মুখ কতে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। রায়হান রেগে বলে
” এই ছেলে যে হুটহাট কি করে না করে বুঝতেই পারি না। তোমাকে না বলেই একা রেখে চলে গেলো !” মিশু রুহির কাছে এসে বলে
” আচ্ছা ভাইয়াকে ফোন দিন।” রায়হান মোবাইল বের করে অভিদের ফোনে কল লাগায়। রিং হতে থাকে কিন্তু রিসিভ হয় না। অভিদের ফোনের রিংটন এর শব্দটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। রায়হান দুই সিরি উপরে এগোতেই দেখে অভিদ আর গার্ডরা আসছে। রায়হান ফোন কেটে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। অভিদ আসতেই রায়হান রেগে বলে
” তোর কি সেন্স নেই কোনো ? কোথাও যেতে হলে রুহিকে বলে যাবি তো নাকি? তোকে না পেয়ে মেয়েটা ভয় পাচ্ছিলো।” অভিদ অপরাধীর চাহনি দিয়ে বলে
” সরি ! আসলে একটা দরকারি জিনিস চোখে পড়লো তাই না বলেই আনতে গিয়েছিলাম।”
রায়হান বিরক্তকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মিশুর হাত ধরে যেতে যেতে বলে
” রুহি আবার এমন হলে আমাকে বলবে তোমার গুনোধর জামাইকে রেখেই আমরা চলে যাবো।”
রুহি অভিদের হাত জড়িয়ে ধরে হাটতে থাকে।
অভিদ রুহির হাতে কয়েকটা ফুল দিয়ে বলে
” বাবুই পাখি তোমার পছন্দের সব প্রিয় ফুল !”
রুহি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে দুইটা কালো, দুইটা লাল আর একটা সাদা গোলাপ ফুল। রুহির চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে উঠে। রুহি মুখে বড় একটা হাসি নিয়ে অবাক হয়ে বলে
” আপনি এগুলো কোথায় পেয়েছেন ?”
অভিদ এক হাতে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে
” এগুলো আনতেই গিয়েছিলাম।” রুহি মিষ্টি একটা হাসি দেয়।
আসার পথে সবাই রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে নেয়। বাড়িতে ফিরে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
সবাই সবার রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
রেস্ট নিয়ে সবাই আবারও ফুর্তিতে মেতে উঠে। বাড়ির সামনে গার্ডেনে আগুন ধরিয়ে চারপাশে গোল হয়ে বসে রাতের অন্ধকারের সবাই গল্প জুড়ে দেয়। গল্প করতে করতে রুহি অভিদের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে। অভিদ রুহিকে রুমে রেখে আবার বাইরে এসে গল্প করতে থাকে।
সারারাত সবাই মিলে গল্প করে ভোরের দিকে যার যার রুমের বিছানায় গিয়ে শরীর এলিয়ে ঘুম দেয়।
দেখতে দেখতে চট্টগ্রামের অভিদের ফার্মহাউজে সাত কেটে যায়। রুহিরা চট্টগ্রামের ওয়ার সিমেট্রি, ভাটিয়ারী লেক, ডিসি হিল, বাটালি হিল, বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার, বাঁশখালী চা বাগান, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। জায়গা গুলোতেই ভিজিট করেছে।
এই সাত দিন সবাই খুব ভালোভাবে এনজয় করেছে। এলিজাবেথের সাথেও সবার সম্পর্ক ভাল হয়ে গিয়েছে। আজকে অভিদরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে যার কারণে এলিজাবেথের মন সকাল থেকেই প্রচন্ড খারাপ।
সবাই তৈরি হয়ে নিচে নেমে আসে। গার্ডরা একে একে সবার লাগেজ গাড়িতে তুলে নিচ্ছে। এলিজাবেথ রাইমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। সবাই এগিয়ে আসে এলিজাবেথ কে কাঁদতে দেখে। রাইমার নিজেরও মন খারাপ হয়ে যায়। নিলা এলিজাবেথের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে
” আরে পাগলি কান্না করছো কেনো ?”
এলিজাবেথ কাঁদতে কাঁদতে বলে
” তোমরা তো আর এখানে আসবে না। তোমাদের জন্য খারাপ লাগছে আমার। তোমরা খুব ভালো।”
মিশু হেসে বলে
” আমরা আসবো না কে বলেছে তোমাকে ? তোমার রুহি আপু সুস্থ হয়ে গেলে আবার আসবো আমরা। আর তোমার সাথে আমাদের যোগাযোগ সব সময়ই থাকবে।”
নিলয় ফোড়ন কেটে বলে
” আরে এলিজাবেথ চিন্তা করো না। আমরা তো আসবোই। না আসলে তোমার বিয়েতে গিয়ে তোমার হাজবেন্ডকে দেখতে হবে না ?”
নিলয়ের কথায় এলিজাবেথ লজ্জায় লাল আকার ধারণ করে। সবাই শব্দ করে হেসে দেয় এলিজাবেথ কে দেখে। এলিজাবেথ মাথা নিচু করে বলে
” আমার আগে তো আপনাদের বিয়ে হয়ে যাবে।”
রাইম মিটমিট হেসে বলে
” তাহলে আপুদের আর ভাইয়ার বিয়েতে তোমাকে স্পেশাল ভাবে ইনভাট করবো আর তোমার জন্য পাত্র খোজার দায়িত্ব আমাদের। আর তোমাকে দেখে তো এমনি সবার লাইন লেগে যাবে।”
এলিজাবেথ লজ্জা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে বলে
” একটু বেশি কথা বলছো তুমি!”
তুষার বলে উঠে
” তোমরা দুই বান্ধবীই তো বেশি কথা বলো ! যাকে বলে বাচাল। তবে তোমরা না থাকলে আমাদের ট্যুরের মজাটাই থাকতো না।”
রাইমা ভাব নিয়ে বলে
” দেখতে হবে না কারা আমরা ?” রায়হান হেসে বলে
” আমাদের একমাত্র ছোট শালিকা বলে কথা ! এরকম তো হবেই।”
রুহি মুখ বাকিয়ে বলে
” হ্যা মাফিয়াদের শালিকা তৃতীয় মাফিয়া।”
সবাই জোড়ে জোড়ে হেসে দেয়। অভিদ, রায়হান, রাইমা ছোট ছোট চোখ করে রুহির দিকে তাকায়। রুহি ঢোক গিলে অন্যদিকে ফিরে এলিজাবেথের সাথে কথা বলতে থাকে। তিন বাঘ একসাথে রয়েছে এসব নিয়ে কথা বললেই খেয়ে ফেলবে।
বাড়ির সবাই কে আর এলিজাবেথ কে বিদায় জানিয়ে অভদিরা সবাই গাড়িতে উঠে বসে।
গাড়িতে রুহি হঠাৎ বলে উঠে
” আচ্ছা এলিজাবেথকে নিলয় ভাইয়ার সাথে কেমন লাগবে ? ভাইয়া আর কতো বছর এভাবে থাকবে ? ডক্টর হয়ে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে তাও বিয়ের কথা বলে না।”
অভিদ ড্রাইভ করতে করতে বলে
” নিলয় এখন বিয়ের ধারে কাছেও যাবে না।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” যাবে না কেনো ? আমার বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে দুদিন পর মিশু আর নিলাপির বিয়ে যাবে আর ভাইয়াই এখনও বিয়ে করেনি।”
অভিদ নিশ্বাস ফেলে বলে
” নিলয়ের এসব পছন্দ নয়। নিলয় চায় ওর বোনদের বিয়ের পরই নিলয় বিয়ে করবে।”
রুহি আড়চোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” তাই বলে কি একটা মেয়ে পছন্দ করবে না ?”
অভিদ গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বলে
” তোমাকে এতো কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি নিজেই সবার খেয়াল রাখছি। নিলয় আর আমার সম্পর্কও খুব বন্ধুত্বসুলভ। নিলয় কি করবে না করবে সেটা আমি বুঝে গিয়েছি। এখন তুমি নিজের মাথাটা না খাটিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমাও কাজে দেবে।” রুহি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।
বাড়িতে ফেরার প্রায় চারদিনে পা দিয়েছে আজ।ট্যুরে থেকে ফিরে সবাই আবারও সবার নিত্যদিনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অভিদ, রায়হানও নিজেদের প্ল্যাটফর্মে ফিরে গিয়েছে। অভিদ, রায়হান বাড়ির বাইরে রাগি, গাম্ভীর্যপূর্ণ দুটো মানুষ। আগে বিজনেসম্যান হিসেবে জানলেও এখন বিজনেসম্যান+মাফিয়া হিসেবে জানে যার জন্য সবার মুখে এখন দুজনের নাম থাকলেও মনে ভয়ের আভাস থাকে। কখন কে কোন ভুল করে ফেলে সেটার ভয়েই থাকে সবাই। আর বাড়িতে ফিরে অভিদ রুহি আর অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আর রায়হান মিশু আর অফিসের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তুষারেরও ইউরোপ যাওয়ার দিন এগিয়ে এসেছে কয়েকদিনের মাঝেই চলে যাবে। আর অনি আখিল আর পড়াশোনাকে নিয়েই ব্যস্ত।
আজকে বাড়িকে ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। কেউই জানে না কেনো সাজানো হচ্ছে শুধু তাদের জানা কোনো স্পেশাল গেস্ট আসছে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫৫
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

আজকে বাড়িকে ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। কেউই জানে না কেনো সাজানো হচ্ছে শুধু তাদের জানা কোনো স্পেশাল গেস্ট আসছে।
রুহি বিছানায় শুয়ে ছিলো ফোনের শব্দে উঠে বসে। স্ক্রিনে অভিদের নাম দেখে চার্জ থেকে খুলে ফোন রিসিভ করে। রুহি কিছু বলার আগেই অভিদ গম্ভীর গলায় বলে উঠে
” তোমরা তৈরি হয়ে অনিকে ভালো করে তৈরি করে দেও রুহি ! গেস্টরা চিলে আসছে।”
রুহি অবাক হয়ে বলে
” গেস্ট আসবে তাই বলে অনিকে তৈরি করতে হবে কেনো ?”
অভিদ আগের মতোই গাম্ভীর্যপূর্ণ ভাবে বলে
” ড. আখিল আর উনার পরিবারের লোক আসছে। কাউকে বলবে না ! সবার জন্য সারপ্রাইজ এটা।” রুহি মন মরা হয়ে বলে
” সবার জন্য সারপ্রাইজ তো বুঝলাম কিন্তু আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো ? একটু সুন্দর করে কথা বলতে পারেন না ? বাড়ির বাইরে চলে গেলে একটুও ভালো করে কথা বলেন না।”
অভিদ বিরক্তকর গলায় বলে
” তুমি আবার এসব শুরু করেছো ? আমি তো একটু পরই চলে আসছি তখন নাহয় হাজারটা অভিযোগ করো ! এখন ফোন রাখো তাড়া আছে আমার। আর আখিলের কথা কাউকে বলবে না।”
রুহি রেগে কল কেটে দিলো। ফোন ঢিল মেরে ফেলে রুহি রাগে ফুসঁতে থাকে। ফোন ছুড়ে মারার পর কোনো শব্দ না পেয়ে রুহি ঘাড় ঘুরিয়ে ফোনের উদ্দেশ্যে তাকায়। তাকিয়েই মুখ ফুলিয়ে নেয়। ফোনটা ভাঙ্গেনি তুষার সময় মতো এসে ফোনটার প্রাণ বাঁচিয়ে নিয়েছে। তুষার রুহির মুখ দেখে মিটমিট করে হেসে বলে
” ভাবি ফোন ভাঙ্গতে না পেরে মন খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি ? তো ভাইয়ার রাগ কি ফোনের উপরে ঝাড়ার চেষ্টা করছিলে নাকি ?”
রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” তোমার ভাইয়া তো আস্ত খারাপ একটা লোক। আমার মতো নিষ্পাপ একটা মেয়েকে সব সময় বকাঝকা করে আর আমার সাথে গম্ভীর ভাবে কথা বলে।”
তুষার হেসে বলে
” তুমি না কয়েক কথায় কথায় বলতে ভাইয়া মাফিয়া ! সেটারই প্রতিশোধ নিচ্ছে বোধয়।”
রুহি রেগে বলে
” আমি আর উনার সাথে কথাই বলবো না। ভাইয়া আমার পাসপোর্টের ব্যবস্থা করো। তুমি ইউরোপ চলে যাওয়ার সময় আমাকেও নিয়ে যাবে। আমি এই খারাপ লোকটার কাছে থাকবো না।”
তুষার হাসতে হাসতে বলে
” ঠিকাছে।” অনির কথা হঠাৎ মাথায় আসতেই রুহি ব্যস্ততার সঙ্গে বলে উঠে
” আরে সেসব পরে হবে। এখন আমাদের সবাইকে রেডি হতে হবে। বাড়িতে গেস্ট আসছে। রায়জাদা বাড়ির মান-সম্মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে তো !” তুষার মুখ টিপে হেসে মাথা নাড়ায়। রুহি মিশু আর অনির কাছে চলে গেলো পেছন পেছন তুষারও যেতে থাকে
অনি আর মিশু শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপ ঘাঁটছিলো এরমাঝে রুহি এসে দুজনের সামনে থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে নেয়। দুজন চমকে রুহির দিকে তাকায়। মিশু চেঁচিয়ে বলে
” কিরে তুই ল্যাপটপ নিলি কেনো ?”
রুহি কোমড়ে হাত রেখে বলে
” বাড়িতে গেস্ট আসছে তাই এসব বাদ দিয়ে রেডি হয়েনে।”
অনি হাই তুলে বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে বলে
” গেস্ট তো ভাইয়াদের আমরা রেডি হয়ে কি করবো ? পড়ে দেখবে সব ছেলে গেস্ট এসেছে আর আমরা সেজেগুজে গেলেও ভাইয়ারা আমাদের সেখানে যেতে দেবে না। এরচেয়ে ভাল চিল করে নিই।”
তুষার ধমকের সঙ্গে বলে
” উঠ এখান থেকে ! সারাদিন, রাত বিছানায় শুয়ে থাকেও ম্যাডামের চিল করা শেষ হয় না ! বেশি চিল করতে চাইলে তোকে চিল পাখি বানিয়ে বেধে রাখবো।”
মিশু আর রুহি ফিকফিক করে হেসে দেয়। অনি রেগে বিছানার উপর থেকে কুশন নিয়ে তুষারের মুখ বরাবর ছুড়ে মারে কিন্তু তুষার দক্ষ হাতে সেটা কেচ ধরে ফের অনির মুখে ছুড়ে মারে। অনি বারি খেয়ে টান সামলাতে না পেরে পরে যায়।
মিশু হেসে অনিকে উঠায়। রুহি অনির আলমারি খুলে কাপড় খুঁজতে থাকে আর বলে
” তোমার ভাইয়াই বলেছে সবাইকে ভালো করে তৈরি হতে। আর তুমি বাড়ির একমাত্র মেয়ে তোমার সাথে তো এতো বছর কারোর পরিচয় হয়নি তাই উনি বলেছে তোমাকে ভালো করে তৈরি করে দিতে।”
অনি বিরক্তের সঙ্গে বলে
” উফফ কি জ্বালা ! আবার সাজতে হবে।”
তুষার খোঁটা দেওয়ার মতো বলে
” ঢং ! সারাদিন আগে মেকাপ নিয়ে বসে থাকতো আর এখন সাজের কথা শুনে জ্বালা বলছে ! তুই তো দেখছি কাজের সময় পুরোই অকর্মা আর আকাজের সময় ১ম এগিয়ে থাকিস।”
অনি রেগে কিছু বলার আগেই তুষার দ্রত পায়ে রুম থেকে প্রস্থান করে। রুহি আলমারি থেকে সুন্দর একটা শাড়ি বের করে নেয়। অনি শাড়ি দেখেই লাফিয়ে বেডের অন্যপাশে চলে যায়। আতংকিত গলায় বলে
” ভাবি ! এটা কি বের করেছো ? আমি এই শাড়ি, ফাড়ি পড়বো না। শাড়ি পড়ে আমি একদমই হাটতে পারি না।” রুহি অসহায় চেহারা বানিয়ে বলে
” এটা ছাড়া তো আর কোনো ভালো ড্রেস নেই।”
অনি আলমারিতে উঁকি দিয়ে দেখে কপাল চাপড়ে বলে
” আরে ভাবি এই পাশে তো সব পুরোনো ড্রেস রয়েছে এখানে পাবে কি করে ? অন্যপাশটাতে দেখো সেটাতেই সব রয়েছে।”
রুহি শাড়ি রেখে কাপবোর্ডের বা পাশ খুলতেই সব ড্রেস দেখতে পায়। রুহি তার মধ্যে থেকে কয়েকটা ড্রেস নামিয়ে নেয়। অনি এগিয়ে এসে বলে
” আচ্ছা তোমরা কি শুধু আমাকেই সাজিয়ে দেবে নাকি ? তোমরা সাজবে না ?” রুহি হেসে বলে
” আগে আমার ননদিনী সাজবে তারপর আমরা।”
অনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বসে পড়ে।
বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠতেই সার্ভেন্টরা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। অভিদ আর রায়হানের সাথেই ড. আখিল রহমান প্রবেশ করে। সাথে তার বাবা আনোয়ার রহমান আর মা লিমা রহমান। আখিলের মা, বাবা পুরো রায়জাদা প্যালেসে চোখ বুলিয়ে নেয়। অভিদ, রায়হান তিনজনকে সোফায় বসায়। উপর থেকে তুষার এসে তাদের সালাম দিয়ে কথা বলতে থাকে। অভিদ তুষারকে ইশারা করতেই তুষার উপরে চলে যায়। তুষার গিয়ে রুহি আর মিশুকে নিয়ে আসে। দুজন নিচে আসতেই অভিদ দুজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় তাদের। রুহি আখিলকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। বলতে গেলে সাধারণ ডক্টর থেকে একটু অন্যরকমই তবে নিলয়ের মতো। রুহির দেখা মতে ডক্টররা তাদের পড়াশোনা শেষ করতে করতেই অর্ধবয়স্ক হয়ে যায়। কিন্তু আখিলকে দেখে একদমই তেমন কিছু মনে হলো না। অভিদ, রায়হান, তুষারের মতো দেখতে অল্পবয়স্ক, সুদর্শন পুরুষ, লম্বায়ও তাদের মতোই। রুহি ভাবছে আখিলও নিলয়ের মতো ডক্টর হয়েও অল্প বয়স্ক দেখতে। রুহির ভাবনার মাঝেই লিনা রহমান রুহিকে নিজের পাশে বসিয়ে রুহির থুতনিতে হাত রেখে বলে
” এতো মিষ্টি একটা বউ পেয়েছো অভিদ ! তাকে কিনা তুমি বকাঝকা করো ! কি করে বকো তুমি? আমি হলে তো ওর মুখটা দেখেই গলে জেতাম।” সবাই কিছুটা চমকেই লিনা রহমানের দিকে তাকায়। তুষার অবাক হয়ে বলে
” ভাবিকে বকাঝকা করে আপনি কি করে জানেন আন্টি ?”
লিনা রহমান হেসে বলে
” অনি তো আখিল কে সবই বলে। অনির ভাইয়া তার মিষ্টি বউকে খাওয়া, দাওয়ার জন্য বকাঝকা করে। আখিলের কথা শুনে রুহিকে দেখার ইচ্ছে হয়েছিলো। আজকে তোমাকে দেখে খুব খুশি লাগছে।” রুহি মুচকি হাসি দেয় উত্তরে। সবাই আখিলের দিকে তাকানো তে আখিল কিছুটা লজ্জা পায়। আখিল মাথা নিচু করে বসে থাকে। সবাই কিছুক্ষণ গল্প করার পর অনিকে নিয়ে আসার জন্য বলে। মিশু আর রুহি আবারও উপরে চলে যায় অনিকে আনার উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষণ পর অনিকে নিচে নিয়ে আসে। অনি সাধারণ ভাবেই চলে আসে একা একা। অনি নিচে এসে সোজা অভিদের কাছে দাঁড়িয়ে
” ভাইয়া কে আসবে ? তুমি আমাদের তৈরি হতে বলেছিলে কেনো ?” অভিদ অনির কথায় মুচকি হাসি দিয়ে অনিকে নিয়ে তাদের সামনে বসিয়ে দেয়। অনি সামনে চোখ বুলাতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সাথে আখিলকে দেখে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আখিল মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। রুহি অনির কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে
” বসো অনি!” অনি হতবাক চাহনি দিয়ে আবারও বসে পড়ে। রুহি মিটমিট করে হেসে পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। লিমা রহমান অনিকে স্বাভাবিক করার জন্য তার পাশে এসে বসে। আনোয়ার রহমানও টুকটাক কথা বলতে থাকে অনির সাথে।
আখিলও অনি বাদে সবার সাথেই কথা বলা শুরু করে।
অনেক্ষণ পর অভিদ অনিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” অনি আখিলকে নিয়ে ছাঁদে নিয়ে ঘুরে এসো আমরা কথা বলি এখন !”
অনি মাথা নেড়ে একা একা উপরে চলে যেতে থাকে। আখিলও পেছন পেছন চলে যায়।
অনি উপরে উঠতেই ধুপধাপ পায়ে ছাঁদে যেতে থাকে। ছাঁদের দরজার ভেতরে পা রাখতেই আখিল অনির হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অনি অগ্নিচোখে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে
” ছাড়ুন আমাকে ! এটা কোন ধরণের অসভ্যতামি ?”
আখিল মুচকি হেসে বলে
” কি করে ছাড়ি বলো ! আমার একমাত্র দুষ্টু, মিষ্টি রানীটা রাগ করেছে। তার রাগ কমাতে হবে না ?”
অনি রেগে আখিলের বুকে ধাক্কা দিয়ে আখিলকে সরিয়ে দিয়ে বলে
” তোর রাগে চব্বিশটা বাজাবো আমি ! তুই আমাকে না বলেই আমাকে দেখতে চলে এসেছিস কেনো ? রাতেও তো কথা হলো কোথায় তখনও তো কিছু বলা হয়নি আমাকে।”
আখিল অনির কাছে গিয়ে বলে
” আরে আমি তো নিজেও এসবের কথা জানতাম না। আজকে মা আর বাবা হঠাৎ বললো মেয়ে দেখতে যাচ্ছে আমাকে নিয়ে। তারপর গাড়িতে জানতে পেরেছি মেয়েটা তুমিই। তোমার ভাইয়ারাই নাকি আমার মা, বাবার সাথে সব কথা বলেছে। আর আমার মা তো আগে থেকেই তোমার ভক্ত ছিলো তাই আর সময় নষ্ট করেনি। আমি সত্যিই বলছি সব কিছুই আমার অজানা ছিলো।”
আখিলের কথায় এখনও অনির রাগ পরেনি। আখিল অনিকে দেখে ঢোক গিলে বলে
” তুমি তো দেখছি তোমার ভাইদের ডুপ্লিকেট। তোমার ভাই আর তোমার শিরায় শিরায় রাগের বিরাজমান।” আখিলের কথায় অনি আরো রেগে আগুন হয়ে গেলো।

চলেবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here