মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৫৯ (শেষ পর্ব)

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫৯(শেষ)
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অভিদ রুহিকে নিয়ে পেছনে গিয়ে বসে আর আখিল গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
রায়হান বাড়িতে জানিয়ে দেয়। অভিদ রুহির হাত ঘষতে অস্থির গলায় বলে
” বাবুই পাখি আর একটু সহ্য করো আমরা এসে পরেছি।”
রুহি অভিদের শার্ট খামঁছে ধরে নিজেকে শক্ত করে রেখেছে আর অসহ্য ব্যাথায় জোড়ে কেঁদে যাচ্ছে। রুহি দাঁতেদাঁত চেপে কাঁদতে থাকে। রুহির কান্না দেখে অভিদের চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে কিন্তু অভিদ নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে।
হসপিটালে আসতে আসতে রুহি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অভিদ রুহিকে নিয়ে উপরে আসতেই ওয়ার্ডবয় সহ নিলয় দৌঁড়ে রুহির কাছে আসে। রুহিকে অপারেশন থ্রিয়েটারে নিয়ে যায়। অভিদ ধপ করে চেয়ারে বসে পরে। রায়হান আর আখিল এগিয়ে এসে অভিদের কাছে বসতেই অভিদ জড়ানো গলায় বলে উঠে
” কেনো সেখানে নিয়ে যেতে গেলাম ? সেখানে না গেলে তো এরকম কিছু হতো না।” রায়হান শান্তনা স্বরে বলে
” এভাবে বলছিস কেনো ? আজকে না হোক রুহির তো নয় মাস শেষ ডেলিভারির টাইম হয়ে এসেছিলো তখন তো এমন হতোই।”
অভিদ মাথা নেড়ে বলে
” নাহ এটা অন্য ব্যাপার আর আজকে যেটা হলো সেটা অন্য ব্যাপার। নিলয় আগে আমাকে বলেছিলো রুহির কিছু মনে করার চেষ্টা করতে কিন্তু আমি করিনি কারণ এমন কিছু করলে হয়তো ব্রেন স্ট্রোক হয়ে রুহি কোমা…”
অভিদ আর কিছু না বলে দুই হাতে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠে। আখিল অভিদকে বলে
” ভাইয়া কিছু হবে না ভাবির আমরা আছি তো ! আমিও যাচ্ছি ভেতরে আর নিলয়ও রয়েছে। আপনি এভাবে ভেঙ্গে পড়বেন না।” আখিল নিলয়কে ডেকে এনে তার সাথে সব কথাবার্তা বলে তৈরি হয়ে চলে গেলো।
এক ঘন্টা পেড়িয়ে যায় বাড়ির অনেকেই ইতিমধ্যে এসে পড়েছে। একটু আগেও সবাই কতো হাসি মজা করছিলো আর এখনই সবাইকে হসপিটালের করিডোরে দরজার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সবার মনে একটাই ভয় রুহির কিছু হবে নাতো ! অভিদের নাজেহাল অবস্থা বারবার এদিক থেকে ওদিক পাইচারি করছে। দরজা ভেঙ্গে ভেতরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু পারছে না।
কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে নার্স বের হয় অভিদ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে ছুটে কোথাও চলে যায়। তাকে এভাবে ছুটতে দেখে অভিদের মনে আরো ভয় ঢুকে যায়। অভিদ ঢোক গিলে দুই পা এগিয়ে আসতেই নিলয় আর অভিদ বেড়িয়ে আসে। অভিদ দুজনকে দেখে দেহে প্রাণ ফিরে পায়। অভিদ অস্থির হয়ে বলে উঠে
” রুহির কি অবস্থা নিলয় ? ও ঠিকাছে তো ?”
নিলয় মাথা নেড়ে বলে
” ঠিক বলা যাবে না এখনও। বেবির পজিশন চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে এখন আমাদের সি সেকশনে নিতে হবে রুহিকে আর রুহির অপারেশনও করতে হবে। রুহির জন্য ব্যাপারটা রিস্ক। অভিদের চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। রায়হান এসে অভিদের কাধে হাত রাখে। অভিদ শুকনো ঢোক গিলে জড়ানো গলায় বলে উঠে
” আমি রুহির কাছে যেতে পারি এখন ?” নিলয় মাথা নেড়ে আখিলকে নিয়ে চলে যায়।
মাথা ব্যাথা নিয়ে চোখ খুলে তাকায় রুহি। ঝাপসা চোখে সামনের দিকে তাকাতেই অভিদের রক্তিম মুখটা দেখতে পায়। চারপাশে মেডিসিনের তীব্র
গন্ধ নাকে ভাসতেই বুঝতে পারে রুহি কোথায় রয়েছে। রুহির মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ছিলো। রুহির স্বাভাবিক লাগায় সেটা খুলে ফেলে। অভিদ সেটা দেখে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। অভিদ অস্থির হয়ে বলে
” এটা খুললে কেনো তুমি? নিজেকে ভালো দেখে ভাল লাগছে না বুঝি ?” রুহি জোরপূর্বক হেসে বলে
” আমি ঠিকাছি এখন।” অভিদ জড়ানো গলায় বলে
” হ্যা ঠিকাছো দেখেই তো অপারেশন করতে হবে তাই না ?” রুহি হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। অভিদ ব্যাথার্ত গলায় বলে
” কি হয়েছে কাঁদছো কেনো ? ব্যাথা করতে তোমার ?” রুহি অভিদের হাত ধরে বলে
” আমার কিছু হয়ে গেলে এতো ভালোবাসবেন কাকে আপনি ?” অভিদ ধমক দিয়ে বলে
” রুহি ! বেশি কথা বলছো আর একটা কথা বললে এবার থাপ্পড় দিয়ে দেবো। আমি পরিস্থিতির কথা চিন্তা করবো না বলে দিলাম !”
রুহি কাঁদতে কাঁদতে বলে
” অপারেশনের সময় আমার পাশে থাকবেন আপনি ? প্লিজ !” অভিদ কোনো উত্তর দিলো না চোখ ভরতি পানি নিয়ে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকে রুহির দিকে। রুহির ব্যাথা আবারও বাড়তে থাকে। অভিদ চিৎকার করে নিলয় আর আখিলকে ডাকতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে দুজন ছুটে আসে। নিলয় রুহিকে দেখে বলে
” পেইন শুরু হয়েছে আমাদের এখন সি সেকশন এর জন্য নিয়ে যেতে হবে রুহিকে।” অভিদ কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” আমি থাকতে চাই রুহির কাছে।”
আখিল আর নিলয় একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলে
” ভাইয়া আপনি থাকতে পারবেন ? ভাবির ব্যাথা দেখেই তো আপ্পনার হাত পা কাঁপছে। তখন তো আরো ভয় পাবেন ভাবিকে নিয়ে।”
রুহি ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে অনুরোধের সাথে বলে উঠে
” ভাইয়া…অভিদকে থাকতে দাও প্লিজ !”
নিলয় সায় দিয়ে বলে
” ঠিকাছে অভির থাকবে।” রুহিকে নিয়ে সি সেকশনে যাওয়া হয়।
বাড়ির সবাই করিডোর জুড়ে পাইচারি করে যাচ্ছে। রুহির মা, মিশুর মা, কৌশিকা রায়জাদা বিরবির করে সূরা সহ সব কিছু পরে যাচ্ছে। পুরুষরা হসপিটালের মসজিদে চলে গিয়েছে। রুহির মায়ের বুক ধড়ফড় করছে। মেয়ে আর তার বাচ্চার চিন্তায় তিনি চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছে।
ভেতর থেকে শুধু রুহির চিৎকারই ভেসে আসছে।
কিছুক্ষণ পর….
বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতেই সবাই লাফিয়া উঠে দাঁড়ায়। রায়হান দৌঁড়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ দরজা খুলে হন্তদন্ত হয়ে অভিদ বেড়িয়ে আসে। রায়হান অভিদকে দেখে বুঝতে পারে কিছু হয়েছে। রায়হান অভিদকে সামলে বলে
” কি হয়েছে তোর ? তুই এমন করছিস কেনো ?”
অভিদ জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে থাকে। রায়হান কিছুই বুঝতে পারছে না কি হয়েছে। বাকিরাও অভিদের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।
গার্ড দ্রুত অভিদের জন্য পানি নিয়ে আসে। রায়হান অভিদকে কিছুটা পানি খাইয়ে চেয়ারে বসিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে
” এবার বল কি হয়েছে ?” অভিদ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” ছ…ছেলে হয়েছে কিন্তুহ…রুহি আবারও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। রায়হান রুহির আবার কি হয়েছে ?”
রায়হান শান্তনা দিয়ে বলে
” কিছু হয়নি রুহির অপারেশনের জন্য হয়তো অজ্ঞান করা হয়েছে।” অভিদ তাও মানতে নারাজ। কিছুক্ষণ পর নিলয় তার কোলে টাওয়াল পেচানো একটা বাচ্চা নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে। সবার মুখে হাসি ফোটে কিন্তু অভিদ কোনো ভাবেই শান্ত হচ্ছে না। নিলয় বাচ্চাকে নয়না বেগমের কোলে দিয়ে বলে
” এখন রুহির অপারেশন করা হবে তাই অভিদকে তাখা সম্ভব না। ওকে সামলান আপনারা।”
নিলয় চলে যেতে অভিদ আবারও ছটফট করতে থাকে। রায়হান আর তুষার কোনো রকমে অভিদকে সামলাতে থাকে।

ভারাক্রান্ত মাথা নিয়ে কিছুটা নড়েচড়ে উঠে রুহি। আরেকবার নড়ে ধীরেধীরে চোখ খুলে তাকায়। শরীর একদম নিস্তেজ হয়ে বেডের সাঘে লেপ্টে রয়েছে রুহি। ইচ্ছে করলেও একটু নড়লেও উঠে বসতে পারছে না। রুহি কোনো রকমে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকায়। পাশে তাকাতেই ছোট্ট দোলনায় ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে রুহির চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে। চোখের পানি গুলো কেউ যত্ন সহকারে মুছে দিতেই রুহি চমকে তার অন্যপাশে তাকায়। অভিদকে দেখে রুহির চোখ বিস্ময়ে ছেয়ে যায়। অভিদ মলিন হাসি দিয়ে রুহির চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে রুহির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। রুহি দুর্বল গলায় বলে উঠে
” আপনার এই অবস্থা কেনো ?” অভিদ ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়হান আর মিশু কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলে
” তোমার জন্যই তো বেচারা এই অবস্থা ! তুমি জানো তোমার পুরো ২৬ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরেছে ! এতোক্ষণে অভিদ সবাইকে আধপাগল বানিয়ে দিয়েছিলো। একটু পর পর জিজ্ঞেস করবে রুহি উঠছে না কেনো ? রুহি উঠছে না কেনো ? এই প্রশ্ন করে করে সবাইকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে আর খাওয়া দাওয়ার কথা তো ছেড়েই দিলাম। এখনো পর্যন্ত কিচ্ছু মুখে দেয়নি।” অভিদ কড়া গলায় বলে উঠে
” তুই চুপ করবি ? বেশি মথা বলছিস তুই। আর তোকে না বাড়িতে পাঠালাম ? তুই আবার এখানে কি করছিস ?”
মিশু আলতো হেসে বলে
” আপনার কি মনে হয় ভাইয়া আপনাকে একা রেখে আপনার ভাই এখান থেকে যাবে ? আপনি তো গার্ডদের বলে দিয়েছিলেন যেনো রায়হান খেয়ে দেয়ে ফ্রেশ হয়েই আসে আপনার ঝাড়ি না খাওয়ার জন্য ক্যান্টিন থেকে খেয়ে এসেছে আর কোথাও যাবে না বলে পন করেছে। রুহি শরীর কেমন এখন তোর ?”
রুহি ধীর গলায় বলে
” ভালো।” অভিদ এক দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে অন্য কোনো দিকেই তার মন নেই। মিশু মুচকি হেসে রায়হানকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলে
” আমরা আবার আসবো এখন নাহয় আপনারা দুজন একটু একজন আরেকজনকে ধরে কেঁদে কেটে নিন আমরা কাবাব মে হাড্ডি হবো না।” মিশুর কথা শুনে অভিদ আর রুহি একে অপরের দিকে তাকালো। রুহির নাক ইতিমধ্যে লাল হয়ে গিয়েছে। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। রুহি কান্না আটকে ভাঙ্গা গলায় বলে
” অভিদ ! আমার সব মনে পরে গিয়েছে।”
রুহির কথা অভিদের কর্ণপাত হতেই অভিদের হাতচলা থেমে যায়। অভিদের স্নায়ুতন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অভিদের মনে হলো ও ভুল শুনেছে তাই রুহিকে জিজ্ঞেস করে
” কিছু বলেছো তুমি ?” রুহি এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। পেটে ব্যাথা অনুভব হলেও সেটাকে পাত্তা দিলো না। অভিদ অবাক হয়ে যায় রুহির কান্না দেখে। অস্থির হয়ে বলে উঠে
” কি হয়েছে কাঁদছো কেনো বাবুই পাখি ? পেটে ব্যাথা করছে নাকি মাথায় ? কি হয়েছে বলো আমাকে।”
রুহি কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমার সব মনে পড়ে গিয়েছে। আপনি আমার উপর অভিমান করে থাকবেন এখনও ?” অভিদ অবাক হয়ে যায় রুহির কথায়। অভিদ হঠাৎ হেসে উঠে। খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠে। অভিদ জড়ানো গলায় বলে
” তোমার সত্যিই সব মনে পড়েছে ? বাবুই পাখি সত্যি বলছো তুমি ?” রুহি মাথা নেড়ে সায় দেয়। অভিদ খুশিতে আত্মহারা হয়ে রুহির চোখে মুখে চুমু খেতে থাকে। রুহি জড়ানো গলায় বলে
” আপনি কি আমার উপর অভিমান করে আছেন ?” অভিদ হেসে বলে
” তোমার উপর কিসের অভিমান আমার ? আজকে আমাকে এতোবড় দুটো উপহার দিলে খুব খুশি। আর কিসের অভিমানের কথা বলছো তুমি কি তেমন কিছু করেছো নাকি ?”
রুহি অভিদের হাতের উপর আলতো ভাবে হাত রেখে দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে বলে
” এক্সিডেন্ট এর আগেই আমি জানতে পেরেছিলাম আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু আমি আপনাকে জানাইনি কারণ কিছুদিন পর আপনার জন্মদিন ছিলো। আমি ভেবেছিলাম সেদিন এই খুশির খবর দেবো কিন্তু তার আগেই এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে। আপনাকে তখন না জানিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি।” অভিদ চুপচাপ বসে থাকে। মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেলাও ভুলে গিয়েছে। রুহি অভিদকে দেখে আবারও ফুঁপিয়ে উঠে। অভিদের হুশ আসতেই অভিদ মুচকি হেসে রুহির দিকে ঝুকে রুহির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে
” আজকে সেসব কথা বলে মন খারাপ করো না ! যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আজকে তুমিও সুস্থ আর আমাদের বাচ্চাও আমি এতেই খুশি। আর কিছু চাই না আমার।” রুহি কান্নার মাঝে হেসে অভিদের গলা জড়িয়ে ধরে।
দরজায় নক হতেই অভিদ দূরে সরে আসে। মিশু আর রায়হানক এসেছে আবারও। মিশু মিটমিট হেসে বলে
” শুধু নিজেরাই প্রেম করলে হবে ? এখন তো আরেকজনকে আপনাদের দুজনের ভালোবাসার ভাগ দিতে হবে ভাইয়া। আপনাদের ছেলে যে তাকিয়ে আছে সেটা দেখেছেন ?” রুহি আর অভিদ পাশে তাকিয়ে দেখে সত্যি সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মিশু বাচ্চাকে কোলে তুলে রুহির কাছে নিয়ে আসে। অভিদ রুহিকে ধীরেধীরে বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে দেয়।
মিশু বাচ্চাটাকে এগিয়ে দিতেই রুহি তার ছেলেকে কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে নেয়। রুহির পুরো পৃথিবী কেমন যেন থমকে গিয়েছে মনে হলো। চোখ দুটো হয়ে ওঠেছে নিষ্প্রভ। সেই যে বড় বড় চোখ, ঘন আখিপল্লব, খাড়া নাক , পুরু ঠোঁট , গৌরবর্ণের গায়ের রঙ, ঠিক অভিদের কার্বন কপি। অপার নয়নে দুজন অভিদ আর রুহির ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বাচ্চার দিকে। রুহিএ মনের হলো এটাই তো মা হওয়ার সবচেয় বড় প্রাপ্তি। রুহির চোখে অশ্রু ভর করলো আনন্দে। রুহি খুশিতে তার নূরকে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে। রুহির অভিদের দিকে তাকিয়ে দেখে অভিদের চোখেও পানি। হয়তো বাবা হওয়ার আনন্দ। অভিদ কাঁপা কাঁপা ভাবে হাত এগিয়ে দিতেই রুহির হেসে বাচ্চাকে অভিদের কোলে তুলে দেয়। অভিদ বেসামাল ভাবে বাচ্চাকে কোলে দেয়। রায়হান হেসে বলে
” কিরে ভাই তুই বাচ্চাটাকেও ভালো করে কোলে নিতে পারছিস না?”
অভিদ বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলে
” কি ছোট মনে হচ্ছে এখনই পরে যাবে।” সবাই অভিদের কথা শুনে হেসে দেয়। রায়হান গিয়ে বাচ্চাকে ভালো করে কোলে নেয়। রুহি পেটে আবারও ব্যাথা অনুভব হতেই রুহি ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। অভিদ ব্যস্ত হয়ে পরে রুহিকে নিয়ে। কেবিনে নিলয় আর আখিল ঢোকে। দুজন এসেই বাচ্চাকে নিয়ে মেতে উঠে। রুহির ব্যাথা বাড়তেই রুহি আবার শুয়ে পরে। নিলয় রুহির অবস্থা দেখে বলে
” অভিদ ! রুহির খেয়াল রাখবে একটু বেশি। সি সেকশনে নেওয়ায় শরীর এখনও অনেকটা দুর্বল আর অপারেশন হয়েছে। So be careful.” অভিদ মাথা নেড়ে সায় দেয়।
________________________

সূর্যের আলোক রশ্মি চোখে মুখে উপচে পড়তেই রুহি চোখ মুখ কুঁচকে দেয় বিরক্তিতে। অভিদ তা দেখে রুহির ওড়না দিয়ে রুহির মুখ পর্যন্ত টেনে দেয়। রুহি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে
” আরে কি করছেন এগুলো ? এতো বড় ঘোমটা দিয়ে আমি কি অন্ধ হয়ে হাটবো নাকি ?”
অভিদ ঠোঁট উল্টে বলে
” এমা আমি কখন বললাম অন্ধ হয়ে হাটতে ? আলো হয়ে হাটো আমার কোনো সমস্যা নেই তবে তোমার সমস্যা থাকলে তো আমি আছিই তোমাকে কোলে নেওয়ার জন্য !” কথা শেষ করেই অভিদ রুহিকে কোলে তুলে নেয়। রুহি ভয় পেয়ে দুই হাতে অভিদের গলা জড়িয়ে ধরে। এবার না অভিদকে দেখতে পাচ্ছে আর না অন্যকাউকে। অভিদ মিটমিট হাসতে থাকে রুহিকে দেখে আর রুহি পা নাচিয়ে চেঁচাতে থাকে। তখন ছাঁদের অন্য পাশ থেকে তাদের একমাত্র ছেলে দৌঁড়ে আসে। অর্ণব রুহিকে এভাবে দেখে চিন্তে না পেরে অবুঝ গলায় বলে উঠে
” পাপা ! মাম্মা কুতায়(কোথায়) ? আমি ম্মামার কাতে(কাছে) যাবো।”
অভিদ রুহিকে নামিয়ে দিয়ে বলে
” এই তো বাবাই এটাই তোমার মাম্মা।” অর্ণব দৌঁড়ে রুহির কাছে এসে মাথা উঁচু করে রুহির ওড়নার নিচে উঁকি দিয়ে দেখতে থাকে এটা রুহির কিনা। রুহিকে দেখে অর্ণব জোড়ে জোড়ে হি হি করে হেসে দেয়। রুহি আর অভিদও হেসে দেয় ছেলের কাণ্ড দেখে। রুহি ওড়নাটা ছোট করে মাথায় দিয়ে রাখে। রুহি অর্ণবকে কোলে তুলে বলে
” আমার বাবাটার ছোট্ট পুতুলটা কোথায় ?”
অর্ণব মন খারাপ করে মাথা নিচু করে বলে
” মামনি পুতুলকে নিয়ে গিয়েতে(গিয়েছে)।” অভিদ হেসে বলে
” তোমার পুতুলকে এখন খাওয়াবে বাবাই তাই নিয়ে গিয়েছে। তুমিও চলো এখন তোমার লাঞ্চ টাইম বাবাই।” রুহি আর অভিদ অর্ণবকে নিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে যায়। লিভিং রুমে এসে দেখে মিশু খাবার নিয়ে রিথির পেছনে হাটছে আর মাঝে মাঝে জোড় করে খাইয়ে দিচ্ছে। অর্ণব রিথিকে দেখে পুতুল পুতুল বলে দৌড়ে চলে যায় তার কাছে। মিশু হয়রান হয়ে বসে পরে মাটিতে।
রায়হান রুম থেকে বের হচ্ছিলো মিশুকে মাটিতে বসে পড়তে দেখে ছুটে এসে মিশুর কাছে বসে অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ? খারাপ লাগছে নাকি ? নাকি মাথা ঘুরাচ্ছে ?” মিশু ক্ষেপে বলে
” চুপ ! যখন কিছু হয় তখন তো খুঁজেও লাই না আপনাকে। এখন কিছু হয়নি আর এখন এসেছে
ঢং করতে।” অভিদ আর রুহি জোড়ে জোড়ে হেসে দেয়। রায়হান মুখ ফুলিয়ে অর্ণব আর রিথির কাছে চলে যায়। মিশু খাবার নিয়ে রুহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে
” ধর বোন ! আমি পারবো না আর। এক ঘন্টা হয়ে গিয়েছে এখনও খাবার শেষ করাতে পারলাম না।” রুহি হেসে বলে
” এভাবে হবে নারে। আচ্ছা তুই যা আমি দেখছি। আচ্ছা নিলাপি কোথায় ?”
মিশু কিচেনের দিকে যেতে যেতে বলে
” আপু তূর্ণকে ঘুম পারাতে গিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছে।”
রুহি মাথা নেড়ে রিথির কাছে চলে যায়। তাকে খাওয়াতে খাওয়াতে অভিদ আর রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আজকে আপনারা বাড়িতে কেনো বুঝতে পারছি না। তুষার ভাইয়াকেও দেখলাম অফিস থেকে দুপুরে চলে এসেছে। আপনাদের অফিস নেই আজকে ?”
রায়হান হেসে বলে
” আজকে আমাদের সবারই সব কিছু অফ। দুইদিন আগে এতোবড় এওয়ার্ড পেয়েছি তাই দুইদিন অফিস বন্ধ আর কাল রাতে পার্টি আছে।” রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” পার্টি কোথায় ?” অভিদ আড়চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” পার্টি এবার বাড়িতে নয় আমাদের অফিসের ক্লাবে হবে।” রুহি কিছু না বলে রিথিকে খাওয়াতে থাকে।
সময়ের পাল্লা ভারি হয়েই ঘুরছে। সময় আজ চার বছরের কাছাকাছি কেটে গিয়েছে। অভিদ আর রায়হানের বাইরের জগৎ একদিকে আর পরিবার একদিকে। অভিদ আর রায়হান এখন ওয়ার্ল্ড মাফিয়া কিং। গত দুই দিন আগেও তারা এওয়ার্ড পেয়েছে। বর্তমানে O.R.R. group of industry এখন টপ ২ তে রানিং করছে। অভিদ আর রায়হান তাদের বিজনেস আজ ক্ষমতার জোড়ে না দক্ষতা, পরিশ্রম আর সফলতার কারণে এই জায়গায় পৌঁছেছে। তুষার বাংলাদেশের একটা বড় কোম্পানিতে জব করে মাঝে মাঝে অভিদের অফিসেরও দেখা শোনা করে।
অভিদ রায়জাদা আর রুহির একমাত্র ছেলে রিশান রায়জাদা অর্ণব। রায়হান আর মিশুর একমাত্র মেয়ে রিথি আক্তার মিশিকা রুহির পাঁচমাসের প্রেগ্নেন্সির সময় মিশু প্রেগন্যান্ট ছিলো। তুষার আর নিলার দেড় বছরের এক ছেলে তূর্ণ রায়জাদা নীর।
তিনবছর আগে রায়হান-মিশু আর তুষার-নিলার বিয়ে হয়েছে। আর একবছর আগে অনি আর আখিলের বিয়ে হয়েছে। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সাথে সুখি রয়েছে। কৌশিকা রায়জাদা আর সিদ্দিকুর রহমানও নাতি, নাতনিদের সাথে সময় কাটায়। নিলয় বিয়ে করতে চায় না তাই রুহি, মিশু, নিলা, নিলয়ের বিয়ে দিয়েছে এক প্রকার জোড় করেই।
বিকেল হয়ে আসতেই অনি আখিলকে নিয়ে চলে আসে এই বাড়িতে। অনিকে পেয়ে রুহি, মিশু, নিলা চারজন বিয়ের আমেজের মতো উৎসব শুরু করে দেয়।
সন্ধ্যা হতেই রুহি ব্যালকনির দোলনায় গিয়ে বসে থাকে গোধূলি বেলার দৃশ্য দেখার জন্য। রুহি প্রকৃতির দৃশ্যে মত্ত্ব হ্যে আছে তখন অভিদ এসে রুহির পাশে বসে রুহির ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। রুহির কোণা চোখে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ রুহিকে এভাবে তাকাতে দেখে রাগি গলায় বলে
” তোমাকে না আমি এভাবে তাকাতে না করেছি ? এভাবে দেখলে মনে হয় চোখ গুলো এখনই বাকা হয়ে যাবে।” রুহি ভেংচি কেটে বলে
” আপনার তো আরো কতো কিছুই মনে হয়!”
অভিদ মুচকি হেসে রুহির গালে গভীর ভানে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে
” বাবুই পাখি তোমাকে পেয়ে আমি আমার জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছি।” রুহি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে অভিদের হাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বলে
” আমিও আপনাকে পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছি। আমার #মাফিয়া_ক্রাশ_বর।”
অভিদ আলতো হেসে বলে
” এই নামে ডাকাটা আর বদলাবে না ?” রুহি ভেংচি কেটে বলে
” হুহ ! পারবো না। আমার যতো ইচ্ছে ডাকবো আপনার কি ?” দুজনের কথার মাঝে অর্ণব, রিথি আর তূর্ণ এসে দুজনের মাঝে বসে পরে। রুহি তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমরা কোথা থেকে আসলে বাবাই ?”
অর্ণব হেসে বলে
” ফুঁপিমনি বলেতে(বলেছে) তোমাদের নিয়ে যেতে।”
রুহি কপাল চাপড়ে বলে
” হ্যা আর তোমরা কোলে এসে বসে পরেছো !” অভিদ রুহির বিরক্তিমাখা মুখ দেখে হেসে দেয়। রুহি মুখ ফুলিয়ে রাখে।

——————— সমাপ্ত ———————–

[গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। আর গল্পটা কেমন লেগেছে মন্তব্য করে জানানোর অনুরোধ রইলো সবাইকে। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here