মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৫১+৫২+৫৩

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫১
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

দুইটা ক্লাস করেই অনির মাঝে বিরক্ত এসে পরে তাই ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যায়। কলেজের থেকে বের হতেই অনির চোখ যায় পার্কিং লন এর দিকে। একটা ছেলে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনির দূড় থেকেই দেখে মনে হলো এটা আখিল এর গাড়ি আর আখিল গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনি কিছুক্ষণ ভেবে বিড়বিড় করে বলে
” উনি এখানে আসবেন কি করে ? আমার কলেজের এড্রেস তো কখনো দেওয়া হয়নি উনাকে। আমিই ভুলভাল দেখছি।” অনি নিশ্বাস ফেলে ফোন বের করে গার্ডদের ফোন করে বলে গাড়ি আনার জন্য সে এখন চলে যাবে। অনির গাড়ির অপেক্ষায় একটু ছায়ার নিচে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ অনির হাত চেপে ধরে কেউ। অনি চমকে নিজের হাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবার হাত ধরা ব্যক্তির দিকে তাকায়। আখিলকে দেখে অনির চোখ বড়বড় হয়ে যায়। অনি বিস্ময়ের সাথে বলে উঠে
” আপনি ?” আখিল গম্ভীর গলায় বলে
” তোমার সাথে কথা আছে আমার। চলো আমার সাথে।” অনি অবাক হয়ে কিছু বলার আগেই তার গার্ডরা এসে আখিলের হাত ছাড়িয়ে রেগে বলে
” কি চাই এখানে ? ম্যাম কে ডিস্টার্ব করছেন কেন ?”
অনি হাতের ইশারায় গার্ডকে থামতে বলে। তারা শান্ত হতেই অনি বলে
” আপনারা অপেক্ষা করুন আমি উনার সাথে কথা বলে আসছি।”
একজন মাথা নেড়ে বলে
” না ম্যাম অভিদ স্যার বলেছে আপনাকে কেউ ডিস্টার্ব করলে তাকে স্যারের কাছে নিয়ে যেতে। আপনাকে সব সময় প্রোটেক্ট করতে বলেছে।”
অনি শান্ত ভাবে বলে
” ভাইয়ার সাথে কথা বলবো আমি। উনি আমার কোনো ক্ষতি করবে না তাই টেনশন করবেন না। আপনারা অপেক্ষা করুন।” গার্ডরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। আখিল অনির সম্মতি পেয়ে অনিকে না বলেই অনির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। অনি হোচট খেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। আখিল অনিকে কলেজের ক্যান্টিনে এনে ছেড়ে দেয়। ক্লাস শুরু হওয়ায় হাতে গোণা কয়েকজন ছাড়া কেউ নেই এখানে। আখিল অনিকে ছেড়ে অন্যদিকে ঘুরে কোমড়ে হাত রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে রাগ কন্ট্রোল করছে। অনি দুই হাত গুঁজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আখিলকে দেখে যাচ্ছে। আখিল কিছুক্ষণ পর অনির কাছে এসে শান্ত গলায় বলে
” তোমার ফোন অফ কেনো ? দুইদিন ধরে কোনো কন্টাক্ট করতে পারছি না কেনো ?” অনি কিছু না বলে শুধু আখিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। আখিলের চোখ গুলো লাল হয়ে রয়েছে। গোছালো থাকার পরও অনির কাছে কিছুটা অগোছালো মনে হচ্ছে। আখিল এবার অনির কাধ ঝাঁকিয়ে হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠে
” কথা বলছো না কেনো ? তোমার ফোন অফ ছিলো কেনো ? জানো দুইদিনে কতো টেনশন হচ্ছিলো আমার !” অনি শান্ত ভাবে বলে
” কিসের জন্য টেনশন হচ্ছে আপনার ? আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই আমি ফোন অফ করে রেখেছি। আপনার তো এসব নিয়ে টেনশন করার কথা নয়।”
আখিল ভ্রু কুঁচকে বলে
” টেনশন করার কথা নয় মানে ? দুইদিন ধরে সব কিছু বন্ধ তোমার। না কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম আর না কোথাও তোমাকে পাচ্ছিলাম। দুই দিন কলেজে এসে ঘুরেও গিয়েছি কিন্তু এই দুইদিন তুমি আসোইনি কলেজে। দুইদিন ধরে তোমার জন্য ঘুম খাওয়া সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে আর তুমি বলছো আমার টেনশন করার কথা নয় !”
অনি অবাক হয়ে বলে
” আমার জন্য খাওয়া ঘুম সব বন্ধ ! কিন্তু কেনো ? আমি কি আপনাকে খেতে, ঘুমাতে না করেছিলাম ?”
আখিল রেগে বলে
” হৃদিয়া এবার কিন্তু আমার রাগ উঠছে ! তুমি কি কিছু বুঝতে পারছো না ?” অনি ঢোক গিলে বলে
” কি বুঝবো আমি ?”
আখিল রেগে অনির হাত পিঠে চেপে ধরে বলে
” বুঝতে পারছো না কিছু ? এতোদিন ধরে কি আমি তোমার সাথে শুধু শুধু কথা বলছি ? মনের মাঝে এতো অনুভূতি জমিয়ে রেখেছি তোমার জন্য। তুমি এখনও বুঝতে পারোনি আমার মনের কথা ?” অনির মনে খুশির জোয়ার ভাটা লাগার মতো অবস্থা। অনি কোনো রকমে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ভ্রু কুঁচকে বলে
” কিসের অনুভূতির কথা বলছেন আপনি ? আমি তো জানতাম আপনি আমার সাথে জাস্ট একজন ফ্রেন্ড হিসেবে কথা বলতেন।”
আখিল মুখ কুঁচকে বলে
” কিহ ! আমি সারাদিন, রাত এতো সার্জারি, অপারেশন করে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে আগে তোমাকে ফোন করে কথা বলি জাস্ট ফ্রেন্ড ভেবে ? কারো সাথে ভীষণ রেগে গেলে আগে তোমার সাথে কথা বলি জাস্ট ফ্রেন্ড ভেবে ?দুইদিন তোমাকে কোথাও না পেয়ে পাগলের মতো ছটফট করছিলাম আর ভাবছিলাম একবার যদি কথা হয়ে যায় বা দেখা হয়ে যায় ! সেটাও কি ফ্রেন্ড হিসেবে ছিলো হৃদিয়া !” আখিলের কথায় কিছুটা অভিমান প্রকাশ পাচ্ছে। অনি আখিলের চোখের দিকে তাকিয়ে তাকে। আখিল চেয়ারে বসে পরে কপালে হাত রেখে। অনি আখিলের সামনের চেয়ারে বসে।দুজনের মাঝে অনেক্ষণ নিরবতা বিরাজ করে। শেষে আখিল বড় একটা নিশ্বাস নেয়। চোখ দুটো ছলছল করছে তার। অনি দুই ঠোঁট চেপে ধরে হাসি আটকে রাখার চেষ্টা করে আখিলকে দেখে। আখিলের মনের সব আশা ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনির কাছ থেকে আখিল একদমই এরকম কিছু কথা আশা করেনি। আখিলের এতোদিনের কুড়িয়ে নেওয়া অনুভূতি গুলো আগের মতো ভেঙ্গে টুকরো হয়ে পড়ে থাকবে ভাবতেই আখিলের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আখিল শেষ আশা নিয়ে অনির দিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি সত্যিই এতোদিন আমাকে ফ্রেন্ড ভেবেছিলে ? আমার প্রতি কি কোনো ফিলিংস কাজ হয়নি তোমার কখনো ?” অনি মাথা নেড়ে না করলো। আখিল নিজের ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বলে
” আচ্ছা দুইদিন ফোন রেখেছিলে কেনো ?….. যাই হোক এসবের জন্যই হয়তো আজকে পরিষ্কার ভাবে সত্যিটা জানতে পারলাম।”
আখিলের কথা শেষ হতেই অনি শব্দ করে হেসে উঠে। আখিল অবাক হয়ে অনির দিকে তাকায়। অনিও ইচ্ছে মতো হেসে ঝাচ্ছে। হাসতে হাসতে অনি শেষে কেঁদেই দিলো। আখিল অবাক হয়ে শধু দেখে যাচ্ছে অনিকে। অনি তার চেয়ার থেকে উঠে এসে সোজা আখিলের পাশে বসে আখিলকে জড়িয়ে ধরে কাধে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। আখিল অনির মাথায় হাত রেখে অবাক স্বরে বলে
” কি হয়েছে কাঁদছো কেনো তুমি ?” অনি কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমি আপনাকে সেই প্রথমদিন থেকে ভালো বাসি কিন্তু আপনার মনের কথা জানি না বলে কোনোদিন বলা হয়নি।”
আখিল হতবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। অনি কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে আখিলকে দেখে হেসে দেয়। হাসি শব্দ শুনে আখিলের হুশ আসে। আখিল অবিশ্বাস্য স্বরে বলে
” তুমি আমার সাথে মজা করছো ? একবার বলছো ফ্রেন্ড আবার বলছো আমাকে ভালোবাসো। আসলে কোনটা সত্যি ? আমার বুঝতে পারছি না।” অনি চোখ মুছে মাথা নিচু করে বলে
” প্রথম দিন আপনাকে দেখেই মনের মাঝে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। এরপর বুঝতে পেরেছিলাম সেটা ভালোবাসা ছিলো। আমি ভেবেছিলাম আগে আমি আপনার মনের কথা জানবো। কিন্তু সেটা হয়ে উঠেনি আর আপনি কখনো এসব নিয়ে আমার সঙ্গে কথাই বলেননি তাই বুঝতেও পারতাম না আমার প্রতি আপনার কোনো ফিলংস আছে কিনা। তাই কিভাবে জানবো বুঝতে না পেরে ভাবিদের কথায় আমি আমার সব কিছু অফ করে দেই। ভাবিদের কথা শুনেই আজকে আমি আপনার ফিলিংস এর কথা জানতে পারলাম।”
আখিল হঠাৎ হেসে বলে উঠে
” তার মানে তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসো ?” অনি মাথা নেড়ে সম্মতি প্রদান করে। আখিল খুশিতে চেঁচিয়ে উঠে। অনি চোখ রাঙ্গিয়ে আখিলকে চুপ থাকতে বলে। আখিল চারপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আখিল চুপচাপ বসে পরে নিজের চেয়ারে। আখিল অনির হাত ধরে বলে
” দুইদিন তোমাকে কোথায় না পেয়ে জানো আমার হার্ডবিট থেমে যাচ্ছিলো। কিছু খেতে পারিনি রাতেও নির্ঘুমে কাটাতে হয়েছে। শুধু মাথার মধ্যে একটাই কথা ঘুরতো তোমার সাথে আবার কখন কথা হবে। এমনটা না করলেও পারতে।”
অনি আলতো হেসে বলে
” এইটুকু না করলে তো কিছুই জানতে পারতাম না। আচ্ছা আপনি কিন্তু এখনও আমাকে বলেননি আপনার মনে আমাকে নিয়ে কিসের ফিলিংস রয়েছে।” আখিল মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বলে
” সেটা তো বুঝে গিয়েছোই আবার বলতে হবে কেনো ?” অনি ভ্রু কুঁচকে বলে
” কিসের কথা বুঝেছি ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।” আখিল অবাক হয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। হেসে উঠে দাঁড়িয়ে অনির হাত ধরে দাড়ঁ করায়। এক হাটু গেড়ে অনির হাত ধরে বলে উঠে
” আমার মনের সুপ্ত অনুভূতি তুমি। আমার মনের সংমিশ্রণে শুধু তোমার নাম রয়েছে। দিনে বা রাতে সার্জারি করার পর ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে তোমার মুখের মিষ্টি হাসি দেখে ক্লান্তি রেশ কাটাতে চাই। তোমার কিছু রাগ, অভিমানের কারণ হতে চাই। তোমার রাগ ভাঙ্গানোর অধিকার চাই। খুব বেশি ভালোবাসি। যতোদিন বেঁচে থাকবো এই হৃদিয়াকেই ভালোবেসে যাবো। বউ হবে আমার ?”
অনি মুচকি হাসি দিয়ে আখিলকে দাড়ঁ করিয়ে জড়িয়ে ধরে। চারপাশ থেকে খুব বেশি করতালির আওয়াজ আসতে থাকে। অনি তাকিয়ে দেখে খালি ক্যান্টিনে এখন কলেজের অনেক স্টুডেন্ট রয়েছে। অনি প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয় এতোজনকে দেখে। আখিল অনিকে নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে যায়। গার্ডরা অনিকে দেখে এগিয়ে আসে। আখিল অনির এক গালে হাত রেখে বলে
” ফোন খোলা রাখবে আমি ফোন দেবো।”
অনি মুচকি হেসে বলে
” আপনিও খাওয়া দাওয়া করে সুস্থ হয়ে নিন। নাহলে কালকে ব্রেকিং নিউজে দেখা যাবে হৃদিয়া অনি রায়জাদার জন্য না খেয়ে থেকে ড. আখিল রহমান আইসিউতে ভর্তি।” আখিল হাসতে হাসতে চলে যায় তার গাড়ির কাছে। অনিও গাড়ি নিয়ে চলে যায়।#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫২
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

আখিল হাসতে হাসতে চলে যায় তার গাড়ির কাছে। অনিও গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
বাড়িতে ফিরে আনন্দিত মনে রুহির রুমে চলে যায়। রুহির রুমে ঢুকতেই দেখে রুহি লাগেজ গোছানোতে ব্যস্ত। অনি রুহির কাছে এসে বলে
” লাগেজ গোছাচ্ছো কেনো ভাবি ? কোথাও যাবে নাকি ?”
রুহি অনির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে
” ওমা তুমি এখনও জানো না ? কালকেই তো আমরা তোমার ভাইয়ার ফার্মহাউজে যাচ্ছি।”
অনি হেসে বলে
” সেটা তো আমি জানি কিন্তু তুমি এখন থেকেই এসব কিছু প্যাক করা শুরু করে দিয়েছো কেনো ? রাতে ভাইয়া এসে করবে বলেছিলো।” রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” তো কি করবো ? আমি আর কোনো কাজ পাচ্ছি না তাই এসব করছি। আমি সব করে রাখছি উনি এসে শুধু চেক করলেই হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি তো কলেজে গিয়েছিলে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে যে ? দুইদিন কলেজে যাওনি আজকে আবার এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছো দেখলে কিন্তু তোমার ভাইয়া বকা দেবে।”
অনি রুহির কাছে এসে হঠাৎ রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে
” ভাবি আজকে অনেক খুশি আমি । জানো কি হয়েছে আজ? কলেজে আজকে আখিল এসেছিলো।” রুহি চোখ বড় বড় করে ঘাড় কাত করে বলে
” উনি তোমার কলেজে চলে গিয়েছে ?”
অনি মুচকি হেসে বলে
” ভাবি উনিও আমাকে ভালোবাসে। আজকে নিজের মুখে বলেছে আমাকে।” রুহি অবাক হয়ে তাকায়। অনি রুহিকে সব কিছু খুলে বলে। সব শুনে রুহি হাসতে থাকে। অনি লজ্জা পেয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। রুহি মুচকি হেসে বলে
” তোমার ভাইয়াকে বলবো আমি। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আর ফোন অন করো নাহলে মিস্টার ড. আবারো টেনশন করবে।” অনি হেসে মাথা নেড়ে হ্যা বলে চলে যায়।
রুহি লাগেজ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আবারও। কিছুক্ষণ পর কৌশিকা রায়জাদার ফ্লাইট রয়েছে অভিদ, রায়হান, তুষার তাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে আসবে। রুহি লাগেজ গোছানো শেষ করে কৌশিকা রায়জাদার কাছে চলে যায়।
রুহি রুমে ঢুকে দেখে কৌশিকা রায়জাদা তৈরি হচ্ছে। রুহি কৌশিকা রায়জাদাকে এক পাশে জড়িয়ে ধরে মন খারাপ করে বলে
” তুমি চলে যাবে ফুঁপি ! না গেলে হয় না ? তুমি না থাকলে বাড়িটা খালি খালি লাগবে আবার ঘুরতে গিয়েও ভালো লাগবে না।” কৌশিকা রায়জাদা হেসে রুহির গালে হাত রেখে বলে
” আমি কি এমনি এমনি যাচ্ছি রে মা ? তোর আংকেল সুস্থ হয়ে গেলেই আবার চলে আসবো আমি। নিজের খেয়াল রাখবি আর প্লিজ ! দয়া করে ঠিক সময় খাবার খাবি। বাচ্চার দিকে তো খেয়াল রাখতে হবে নাকি ?” রুহি মাথা নেড়ে সায় দেয়। কৌশিকা রায়জাদা আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে রুহির হাতে দেয়। শাড়িটায় খুব নিখুঁত ভাবে কাজ করা রয়েছে দেখতেও খুব সুন্দর। রুহি শাড়িটায় হাত বুলিয়ে বলে
” এতো সুন্দর শাড়ি ! এটা কার ফুঁপি ?”
কৌশিকা রায়জাদা মুচকি হেসে বলে
” এটা ভাবির শাড়ি মানে তোর শাশুড়ির শাড়ি। শাড়িটা আমার খুব পছন্দের ছিলো তাই ভাবি আমাকে দিয়ে দিয়েছিলো। বাড়ির ঝামেলার মাঝে কোনোদিন এটা পড়া হয়নি। তারপর তো সব শেষই হয়ে গিয়েছিলো। ভাবির শেষ স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম অনি বড় হলে অনিকে দেবো কিন্তু অনি কাল বললো এই শাড়িটা তোর কাছেই যত্নে থাকবে। তাই আজকে থেকে এটা তোর। যখন ইচ্ছে হবে পড়বি।”
রুহি মুচকি হেসে শাড়িটা বুকে চেপে ধরে। কৌশিকা রায়জাদা লাগেজ নিয়ে রুহির সাথে নিচে চলে আসে। অনি, মিশু, তুষার নিচেই কৌশিকা রায়জাদার জন্য অপেক্ষা করছিলো। কৌশিকা রায়জাদাকে দেখে একে একে সবাই বিদায় নেয়। গার্ডরা এসে কৌশিকা রায়জাদার লাগেজ নিয়ে যায়। রুহি তুষারের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে
” ভাইয়া ! রায়হান ভাইয়া আর উনি কোথায় ?”
তুষার মুখ টিপে হেসে বলে
” ভাবি তোমার উনি আর ভাইয়া অফিস থেকে এয়ারপোর্টে পৌঁছোবে।” রুহি লজ্জা পেয়ে চুপ করে যায়। তুষার আর কৌশিকা রায়জাদা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায়। সবার মন খারাপ হয়ে যায়। মিশু সবার মন খারাপ দেখে সার্ভেন্টকে পপকর্ন দিতে বলে মুভি দেখতে থাকে রুহি আর অনিকে নিয়ে।
অভিদ, রায়হান, তুষার রাতে বাড়িতে ফিরে। বাড়ির কলিং বেলে চাপ দিতেই দরজা খুলে যায়। তিনজন ভেতরে ঢুকতেই তাদের চোখ সোফার দিকে যায়। তিনজন রুহিদের কাছে এগিয়ে আসে। রুহি আর মিশু দুইজন দুজনের কাধে মাথা রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। অনি টিভি দেখছে আর ফোন স্ক্রল করছে। তুষার গিয়ে অনির মাথায় চাটি মেরে বলে
” গাধি সারাদিন ফোন চাপলেই হবে ? ওদের দেখেছিস তুই ? এখানেই তো দুজন ঘুমিয়ে আছে।”
অনি মাথায় হাত ঘষতে ঘষতে রুহি আর মিশুর দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলে
” এমা এরা ঘুমালো কখন ? আমরা তো একসাথে বসে গল্প করছিলাম আর টিভি দেখছিলাম।”
অভিদ বিরক্তকর স্বরে বলে
” ফোনের ভেতর ঢুকে থাকলে তোর আর অন্য কিছু খেয়াল থাকবে কি করে ?” অনি মুখ ফুলিয়ে রাখে। রায়হান মিশুকে কোলে তুলে উপরে নিয়ে যায়। অভিদ রুহিকে কোলে তুলে উপরে নিয়ে যেতে থাকে। তুষার অনিকে দেখে মজা করে ধমক দিয়ে বলে
” আবার এখানে বসে আছিস কেনো ? যা রুমে গিয়ে পড়তে বস নাহলে ভাইয়ার কাছে বিচার দেবো আমি।” অনি তুষারের চুল টেনে রেগে বলে
” শয়তান, খারাপ ! আমিও ভাইয়াকে বলে দেবো তুই নিলা আপুকে পছন্দ করিস।”
তুষার বিস্মিত হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায় অনির দিকে। অনি বাকা হাসি দিয়ে রুমে চলে যায়। তুষার ঢোক গিলে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়। কাউকে না দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুমে চলে যায়।
অভিদ রুহিকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে উঠে যেতেই আবার টান পরে। অভিদ তাকিয়ে দেখে রুহি অভিদের কোটের কলার চেপে ধরে রেখেছে। অভিদ রুহির হাত ছাড়িয়ে রুহির কপালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
শাওয়ার নিয়ে খাকি গায়ে বেড়িয়ে আসে। পড়নে শুধু একটা টাওজার আর টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বের হয় অভিদ। মিররের দিকে তাকাতে তাকাতে রুহির দিকে চোখ পরে অভিদের। রুহি ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থায় বসে হসে অভিদকে দেখছে। রুহিকে বিছানার একদম কিনারায় দেখে অভিদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে রুহিকে ধরে। অভিদ রুহিকে কিছুটা ধমক দিয়ে বলে
” এতোটা কেয়ারলেস কেনো তুমি ? এখনই তো পরে যেতে।” রুহি অভিদের বকা শুনেও কোনো পাত্তা দিলো না অভিদের হাত টেনে অভিদকে বসিয়ে দিলো। অভিদ রেগে বলে
” কি চাও এখন ?” রুহি অভিদের লোমহীন বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। অভিদ বাকা হেসে বলে
” রুহি ! আজকে আমাকে এভাবে দেখে তোমার লজ্জা করছে না ?”
রুহি ঘুম ঘুম চোখের মধ্যেই লজ্জা মাখা চেহারায় হেসে বলে
” হুম করছে। তবে এখানে না ঘুমালে এখন আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে। আমি আর সারারাত ঘুমাতে পারবো না।” অভিদ মুচকি হেসে রুহির মাথা আরো শক্ত করে ধরে। রুহি ধীরেধীরে আবার ঘুমিয়ে যায়।
আজকে সকাল থেকেই সবাই ব্যস্ত তৈরি হওয়ায়। রুহি আগে থেকেই সব তৈরি করে রেখেছে সব তাই এখন নিশ্চিন্তে বসে রয়েছে। অনি, মিশু বারবার দৌঁড়ো দৌঁড়ি করছে তাদের জিনিস খুঁজে বের করতে করতে। রাইমা, নিলা, নিলয়ও তাদের সাথে যাচ্ছে। তিনজনকে যাওয়ার পথে রিসিব করে নেওয়া হবে। অভিদ, রায়হান তাদের সব কাজ শেষ করে এখন নিরবকে বাড়িতে ডেকেই অফিসের কিছু ইম্পরট্যান্ট কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে।
সব কাজ কর্ম শেষ করে সবাই দুপুরের পর রওনা দেয় ফার্মহাউজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে নিলয়, নিলা, রাইমাকে রিসিভ করে নেয়। তুষার নিলার জন্যই অপেক্ষা করছিলো নিলাকে দেখে তুষারের মন শান্ত হয়।
অভিদের গাড়িতে অভিদই তার গাড়ি ড্রাইভ করছে আর রুহি গান ছেড়ে বসে আছে। মিশু আর রায়হান পেছনে বসে নিজেদের গল্পে ব্যস্ত। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” আচ্ছা আপনার ফার্মহাউজ কোথায় ?”
অভিদ ড্রাইভ করতে করতে কোণা চোখে তাকিয়ে বলে
” ফার্মহাউজ যেখানে, সেখানেই তো ফার্মহাউজ।”
রুহি রেগে দাঁত চেপে বলে
” মজা করছেন আমার সাথে আপনি ?” অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” তুমি কি আমার বেয়াইন লাগো নাকি যে তোমার সাথে মজা করবো ? তুমি তো আমার একমাত্র বাবুই পাখি, বউ পাখি। তোমাকে আদর করে আমার বুকের মাঝে ঢুকিয়ে রাখবো।”
রুহি চোখ রাঙ্গিয়ে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ বাকা হেসে রুহিকে ইশারায় কিস করে। রুহি চোখ বড় বড় করে পেছনে তাকায়। রায়হান আর মিশু রুহিদের দিকে তাকিয়েই মুখ টিপে হাসছিলো রুহি দুজনকে হাসতে দেখে লজ্জায় পড়ে যাহ। রুহি সোজা হয়ে সামনে বসে থাকে অভিদের দিকেও ঘুরে তাকায় না।
গাড়ি চলতে আছে তো আছেই থামার কোনো নামই নেই। একে তো অভিদকে আরো অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও অভিদ বলেনি কোথায় যাচ্ছে আর রায়হানকেও বলতে দেয়নি আবার রুহি রাস্তার আগা মাথা কিছুই চিনতে পারছে না তাই আরও রেগে রয়েছে। #মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫৩
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

একে তো অভিদকে আরো অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও অভিদ বলেনি কোথায় যাচ্ছে আর রায়হানকেও বলতে দেয়নি আবার রুহি রাস্তার আগা মাথা কিছুই চিনতে পারছে না তাই আরও রেগে রয়েছে। কয়েক ঘন্টা পর বলতে গেলে প্রায় সন্ধ্যা শেষে রাত হয়ে গিয়েছে। তখন সবগুলো গাড়ি একে একে একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে থামে। অভিদ সহ সবাই একে একে নেমে গেলো। অভিদ রুহিকে নামতে না দেখে গাড়ি খুলে বলে
” কি হলো বসে আছো কেনো ? না খেয়ে থাকার প্ল্যান করেছো নাকি ?” রুহি জেদ ধরে বলে
” কোথায় যাচ্ছেন সেটা না বললে খাবো না আমি।” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” কোলে উঠার শখ হয়েছে তোমার ? নাকি মার খাওয়ার শখ হয়েছে।” রুহি ঢোক গিলে আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। রুহির হাত ভেতরে যেতে থাকে। রেস্টুরেন্টে যেতেই একজন কোট পড়া লোক সহ দুজন এসে অভিদ, রায়হানকে স্পেশাল ভাবে ওয়েলকাম করে। বাকিদের সবার সাথে একটা করে ফুলে তোড়া দিয়ে ওয়েলকাম করে। কথা শুনে বুঝতে পারলো এদের মধ্যে একজন ম্যানেজার বাকিরা কর্মচারী। অভিদদের একটা সুন্দর একটা প্লেসে নিয়ে যাওয়া হয়। টেবিল যে আগে থেকেই বুক করা সেটাও বুঝতে পারলো রুহি। রেস্টুরেন্টের ছাঁদে সুইমিংপুল এর পাশেই একটা টেবিল সুন্দর করে ডেকোরেট করা। পাশে দোলনাও রয়েছে। জায়গাটা খুবই সুন্দর। তুষার, নিলা, রাইমা, মিশু, রায়হান সবাই জায়গাটা ঘুরতে থাকে। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” এখানে কি আপনি আগেও এসেছিলেন নাকি ? ম্যানেজারদের বিহেভিয়ার দেখে মনে হলো আগেও এসেছেন!”
অভিদ আলতো হেসে রুহির হাত ধরে বলে
” আমি অনেকবারই এসেছি। আর এই রেস্টুরেন্ট টাও আমারই।” রুহি চমকে বলে
” কি ! এটা আপনার রেস্টুরেন্ট ?” অভিদ হেসে মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা। এই রেস্টুরেন্ট আমার আর রায়হানের।”
রুহি হা করে তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে। অভিদ বিরক্ত হয়ে বলে
” কি হয়েছে এভাবে তাকাচ্ছো কেনো ? আমার এতোগুলো অফিস রয়েছে আর রেস্টুরেন্ট থাকতে পারে না ?” রুহি মাথা নেড়ে বলে
” নাহ সেটা না। আমি ভাবছিলাম আপনার এতো এতো টাকা থাকতেও আপনি কিনা আমাকে মাত্র দুইটা স্যালাইনের জন্য বকাঝকা করেন !”
অভিদ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রুহির দিকে। রুহি অবুঝ ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। অভিদ কোনো কথা না বলে গার্ডকে ইশারায় ডাকে। গার্ড কাছে আসতেই অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” গান টা দাও।” গার্ড অবাক হয়ে বলে
” কেনো স্যার ?” অভিদ চোয়াল শক্ত করে গার্ডের দিকে তাকাতেই গার্ড মাথা নিচু করে গান বের করে অভিদের হাতে দেয়। অভিদ গান বের করে রুহির দিকে তাকায়। রুহি ভ্রু কুঁচকে গানের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি করবেন এটা দিয়ে ?” অভিদ শান্ত গলায় বলে
” আজকে তোমাকে বোঝাবো আমি কেনো তোমাকে বকাঝকা করি।” রুহি কিছু বুঝতে না পেরে আবারও কিছু জিজ্ঞেস করতে নেয় কিন্তু তার আগেই অভিদ হঠাৎ নিজের হাতে শুট করে বসে। রুহি হতবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রায়হানরা সবাই শব্দ শুনে ভয় পেয়ে এগিয়ে আসে অভিদের কাছে। রায়হান অভিদের কাছে এসে দেখে অভিদের হাতের বাহু থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছে। রায়হান ভয় পেয়ে বলে উঠে
” এটা কিভাবে হয়েছে অভিদ ! কতো রক্ত পড়ছে তুই এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেনো ?”
রায়হান চেঁচিয়ে গার্ডকে বলে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে আসতে নিচ থেকে। রুহির চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। অভিদের ক্ষতস্থান দেখে রুহির মনে হচ্ছে বুকটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
রুহি ছুটে এসে অভিদের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” কি করেছেন আপনি এসব ? পাগল হয়ে গেছেন নাকি ?”
রুহি চেঁচাতে থাকে ফার্স্টএইড বক্স এনে দেওয়ার জন্য। গার্ডরা ফার্স্টএইড বক্স আনতেই রায়হান নেওয়ার আগেই রুহি কেড়ে নিয়ে নেয়। রায়হান রুহিকে বাধা দিয়ে বলে
” রুহি তুমি এসব পারবে না। আমার কাছে দাও তাড়াতাড়ি ব্লিডিং বন্ধ করতে হবে।”
রুহি চোখ মুছে বলে
” না আমি পারবো।” অভিদ রায়হানকে ইশারায় শান্ত থাকতে বলে। ব্লিডিং বন্ধ করে রুহি ধীরেধীরে ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে। অভিদ মুখে হাসি নিয়ে রুহিকে দেখে যাচ্ছে। নিজের হাতের ব্যাথার দিকে একদমই খেয়াল নেই। ব্যান্ডেজ শেষে রুহি ভেজাচোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে
” এটা কেমন পাগলামি ? আপনি নিজেই নিজেকে আঘাত করেছেন কেনো ?”
রায়হান অবাক হয়ে বলে
” তুই নিজেই নিজেকে শুট করেছিস ?” অভিদ চোখের পলক ফেলে রায়হানকে শান্ত থাকতে বলে আর সবাইকে ইশারায় চলে যেতে বলে রায়হানও বুঝতে পেরে চলে যায়। অভিদের কথায় সবাই একে একে দূড়ে চলে যায়। অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে ফিচলে হেসে বলে
” এখন বুঝতে পারছো তো তোমার একটা ছোট ক্ষত আমাকে কেমন পোড়ায় ? দুইটা স্যালাইনের জন্য আমি তোমাকে বকাঝকা করি না। তোমার ছোট ছোট আঘাত আমাকে অস্থির করে দেয়। তোমাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে আমার বুকে রক্তক্ষরণ হয়। আমি তোমাকে কখনোই ওই অবস্থায় দেখতে চাই না কিন্তু বারবার তোমার অবস্থান সেখানেই।”
রুহি ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে। অভিদ রুহির গালে হাত রাখতেই রুহি মাথা নিচু করে আবারও চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে
” সরি ! আমি বুঝতে পারিনি।” অভিদ আলতো হেসে রুহির চোখের পানি মুছিয়ে জড়িয়ে ধরে। রুহি অভিদের ব্যান্ডেজের উপর ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে জড়ানো গলায় বলে
” বেশি ব্যাথা করছে ?” অভিদ হেসে বলে
” তুমি থাকলে আমি যেকোনো ব্যাথাই সহ্য করতে পারবো।” রুহি কিছু না বলে শক্ত করে অভিদকে জড়িয়ে ধরে। রুহি অভিদকে চেয়ারে বসিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ পর ওয়েটার রা একে একে খাবার নিয়ে আসতে থাকে। রায়হানরা সবাই এসে বসে। অভিদ খাওয়া শুরু করতে গেলে রুহি হাত থেকে কেড়ে নিয়ে অভিদকে খাইয়ে দিতে থাকে। অভিদ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে রুহির দিকে। সবাই দুজনকে দেখে হাসতে থাকে।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই আবারও গাড়িতে উঠে তাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
অভিদের হাতের জন্য রায়হান তাজে ড্রাইভ করতে না দিয়ে পেছনে বসিয়ে দিয়েছে। রুহি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে গাড়িতে।
প্রায় দুই ঘন্টা পথ ড্রাইভ করে শেষ পর্যন্ত তারা তাদের ফার্মহাউজে এসে পৌঁছায়। রুহিকে কয়েকবার ডাকতেই রুহি জেগে যায়। অভিদ রুহিকে জাগতে দেখে বলে
” আমরা পৌঁছে গিয়েছি নামো।” অভিদ বেড়িয়ে যায় গাড়ি থেকে রুহি গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে তাকায়। সামনে খুব সুন্দর একটা বাড়ি আর চারপাশে গাছপালা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রুহি অভিদের সাথে সাথে যেতে থাকে। ফার্মহাউজের সামনে কয়েকজন লোক আর মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে তাদের সাথে গিয়ে কথা বলতে থাকে অভিদ। অভিদ সবার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। দুইজন বাড়ির কেয়ারটেকার আর বাকিরা সার্ভেন্ট। গার্ডরা এসে সবার লাগেজ গুলো ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে।
সবাইকে সবার রুমে পৌঁছে দেওয়া হয়। রাত হয়ে যাওয়ায় কেউ আর রুম থেকে বের হলো না। সবাই রেস্ট নিতে থাকে। রুহি রুমে এসেই অভিদকে মেডিসিন দিয়ে অভিদকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।

সকালে সূর্যের তীর্যক রশ্মি এসে চোখে মুখে আচড়ে পড়তে থাকে। চোখ মুখ ঢেকেও কোনো কাজ হচ্ছে না। শেষে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে অভিদ। হাই তুলে পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে রয়েছে। রুহিকে দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে যায় অভিদের। অভিদ রুহির কাছে গিয়ে রুহির কাধ ধরে হালকা ঝাকি দিতেই রুহি ধড়ফড়িয়ে উঠে যায়। অভিদকে সামনে দেখে বলে
” উঠে গিয়েছেন আপনি ?”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” তুমি এভাবে ঘুমিয়ে আছো কেনো ?” রুহি আমতা আমতা করে বলে
” এমনি আগে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো তাই বসে ছিলাম কিন্তু আবার কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি বুঝতে পারিনি।” অভিদ সন্দেহী বাজের মতো রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে। রুহি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে
” মাফিয়া হয়েছেন বলে কি এবার আমাকেও সন্দেহ করবেন ?” অভিদ থতমত খেয়ে বলে
” আমি এসব কখন বলেছি ?” রুহি কোনা চোখে তাকিয়ে বলে
” বলার প্রয়োজন নেই দেখেই বুঝতে পারছি।”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” এসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও, যাও !” রুহি মাথা নেড়ে চলে গেলো ওয়াসরুমে। অভিদ আরেকটা ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায়।
রুহি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়। ব্যালকনিতে যেতেই রুহির মুখ হা হয়ে যায়। ফার্মহাউজে থেকে প্রায় কিছুটা দূড়েই বিশাল এক সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। রুহি অবাক হয়ে যায় সমুদ্র দেখে। জায়গাটা কোথায় বুঝতে পারলো না রুহি। রুহি দ্রুত পায়ে চলে যায় অভিদের কাছে উদ্দেশ্যে। নিচে এসেই রুহির তার অয়া চালানো থামিয়ে দিলো। অভিদের পাশে থাকা অসম্ভব একজন সুন্দরী মেয়ের দিকে তীক্ষ্ম সৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা অভিদের হাত ধরে রেখে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটাকে দেখে একদমই বাঙালী মনে হলো না রুহির। রুহি নিঃশব্দে তাদের কাছে চলে যায়। রুহিকে দেখে মেয়েটা রুহির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। রুহি সৌজন্যে আলতো হাসি দিলো।

চলবে~ইনশাল্লাহ………

……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here