মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৪৮+৪৯+৫০

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৪৮
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

তবু কোনো কাজ হয় না আরো কিছুক্ষণ ছটফট করতে করতে রুহি ঘুমিয়ে পরে।
পরদিন সকালে রুহির ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় দেখতে পায়। রুহি শীতের উষ্ণ ছোঁয়ার পরশ থেকে বেড়িয়ে ঘুম ঘুম চোখে জানলার দিকে তাকিয়ে দেখে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। রুহি কিছুক্ষণ ব্ল্যাংকেটের নিচে শুয়ে থেকে হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। পাশে তাকিয়ে দেখে অভিদ উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে। রুহি মুচকি হেসে অভিদের পিঠে গাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। অভিদ চোখ বন্ধ করেই হাসলো। ঘুমঘুম কন্ঠে বলে উঠে
” এখন শরীর কেমন লাগছে বাবুই পাখি?”
রুহি চমকে অভিদের থেকে ছিটকে দূড়ে সরে আসে। অভিদ গড়িয়ে সোজা হয়ে এক হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে রুহির দিকে তাকায়। রুহি অবাক হয়ে বলে
” আপনি জেগে ছিলেন ?” অভিদ এক ভ্রু নাচিয়ে বলে
” কেনো ? জেগে না থাকলে কিছু করতে নাকি ?”
রুহি থতমত খেয়ে বলে
” আমি এসব বলেছি নাকি ? আপনি জেগে ছিলেন তাহলে এভাবে ঘুমানোর ভান ধরেছিলেন কেনো ?”
অভিদ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে
” আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে কিস টিস করবে আর আমি সেটা দেখবো কিন্তু তুমি এতো দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠলে তারপর কিস না করে আগে আমার পিঠে ঘুমিয়ে পড়লে। তাই আর অপেক্ষা করতে পারিনি আচ্ছা এবার কাছে এসো একটা মর্নিং কিস দেওয়া উচিত।”
রুহি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে
” আপনি দেখি অসভ্যদের মতো কথা বলছেন ! আগে তো এভাবে কথা বলতেন না !”
অভিদ উঠে রুহির সামনে এসে বলে
” আগে তো চিন্তায় রোমেন্টিক মুডে থাকতে পারতাম না। কিন্তু এখন তো সব সময় রোমেন্টিক মুডেই থাকবো।”
রুহি কিছু বলতে চেয়েও পারে না। অভিদ রুহির দিকে ঝুকে আসতে থাকে। ঝুঁকতে ঝুঁকতে অভিদ রুহির উপর আধশোয়া হয়ে যায়। রুহি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” দেখুন, ভালো হচ্ছে না কিন্তু ! সকাল সকাল কি শুরু করেছেন ?”
অভিদ রুহিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুই ওষ্ঠজোড়া এক করে দেয়। রুহি চোখ বড় বড় করে নেয়। ধীরেধীরে রুহি স্বাভাবিক হয়ে রেসপন্স করতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর দুজন দুজনের থেকে দূড়ে সরে আসে। অভিদ রুহির কোলে মাথা রেখে জোড়ে জোরে শ্বাস নিতে। অভিদ স্বাভাবিক হয়ে রুহির পেটে চুমু দিয়ে বলে
” বাবাই তোমার মাম্মাম খুব পচা ! তোমাকে নিয়ে আমি অনেক দূড়ে ঘুরতে চলে যাবো। আর তোমার মাম্মাকে এখানে একা রেখে যাবো। ”
রুহি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে
” কি ! আমি পচা ? এক মিনিটে আমি পচা হয়ে গেলাম ? ঠিকাছে দূড়ে জান আর আমার কাছে আসবেন না। এতোদিন ধরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছি। আমাকে নিয়ে যাবে যাবে বলে ঘুরাচ্ছে আর এখন আমি পচা ? হুহ ! ”
রুহি রেগে বিছানা থেকে নেমে যায়। অভিদ তব্দা খেয়ে বসে থাকে। মজার ছলে কথাটা বলেছিলো কিন্তু রুহি কথাটা সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছে। অভিদ রুহিকে একবার ডাকতেই রুহি উত্তর না দিয়ে রুম থেকেই বেরিয়ে যায়। অভিদ নিশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
অফিসের জন্য তৈরি হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসতেই দেখে রুহি টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। অভিদ দ্রুত পায়ে রুহির কাছে গিয়ে বসে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো স্বরে ডাকে
” রুহি ! খারাপ লাগছে তোমার ? চোখ, মুখ এমন লাগছে কেনো তোমার ?”
রুহি অভিদের হাতের ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুললেও কথা বললো না। কৌশিকা রায়জাদা কিচেন থেকে বের হতে হতে চিন্তিত গলায় বলে
” রুহি তো খাবারই খেতে পারছে না। কিছু খেলেই বমি হয়ে যাচ্ছে।”
অভিদ চিন্তিত হয়ে বলে
” আমি ডক্টর কে ফোন দেবো ?”
রুহি গম্ভীর গলায় বলে
” নাহ কোনো ডক্টর লাগবে না আমার। ফুপি ! ভাইয়া বলেছিলো এসব বমি, মাথা ঘুরানো নরমাল ব্যাপার। এসব নিয়ে হাইপার হওয়ার কিছু নেই। আমি আবার পরে খেয়ে নেবো।”
কিচেন থেকে একজন সার্ভেন্ট এসে কৌশিকা রায়জাদার কাছে সুপ এগিয়ে দিতেই তিনি বলে
” কিছুটা সুপ খেয়ে দেখ ভালো লাগতে পারে।” রুহি কিছু না বলে একটু একটু করে সুপ খেতে থাকে।
রুহি এখনও রেখে আছে বুঝতে পেরে অভিদ আর কিছু বললো না। রায়হানের সাথে যাওয়ার আগে শুধু রুহিকে নিজের খেয়াল রাখতে বলে গেলো। আজকে মিশুর একটা মডেলিং শো এর পারফর্ম রয়েছে তাই মিশু তার ভার্সিটির ক্লাবে গিয়েছে আর অনি কলেজে গিয়েছে। তুষার বাড়িতেই রয়েছে। রুহি সুপ খেয়ে কিছু ভালো অনুভব করে তাই রুমে গিয়ে নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরে। অনলাইনে দুইটা ক্লাস করে রেখে দেয়।
সত্যি বলতে রুহির কিছুই ভালো লাগছে না। রুহি গায়ে চাদর জড়িয়ে ব্যালকনিতে দোলনায় গিয়ে বসে থাকে। ঝিরঝির বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া একদমই ঠান্ডা হয়ে আছে। রায়জাদা ম্যানশন এর আনাচে কানাচে ব্ল্যাক রেইন কোট পড়া শুধু গার্ডদেরই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রুহি দোলনা থেকে উঠে বারান্দার গ্লাস খুলে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। গার্ডেনে হরেক রকমের দেশি, বিদেশি জাতের ফুল রয়েছে। প্রায় অনেক গুলো ফুল একদম চেয়ে চেয়ে ফুটে রয়েছে। দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। রুহি অজান্তেই মুচকি মুচকি হাসতে তাকে। বৃষ্টির মাঝে ডুবে যায় রুহি।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ নিজের পেছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করে। রুহির কাধে তার নিশ্বাস গুলো উপচে পড়তে থাকে। রুহি ভয়ে ঢোক গিলে। অন্য সময় হলে বুঝতে পারতো এটা অভিদ কিন্তু অভিদ অফিসে চলে গিয়েছে তাই রুহির ভেতরটা ভয়ে কাঁপছে। রুহির ভাবনার মাঝেই রুহির কোমড়ে দুই হাত জোড়া বিচরণ করতে থাকে। রুহি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে দূড়ে ছিটকে যায় আর সাথে সাথে রেলিংএ বারি খেয়ে প্রচুর ব্যাথা পেয়ে কোমড় ধরে বসে পরে রুহি। রুহি কোমড় ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে বলে উঠে
” অভিদ ! কোথায় আপনি ?”
অভিদ রুহির দুই গালে হাত রেখে অস্থির গলায় বলে উঠে
” সরি বাবুই পাখি! আমি বুঝতে পারিনি তুমি এতো ভয় পাবে।” রুহি অভিদের গলা শুনে কান্নার মাঝেই ঝাপসা চোখে সামনে থাকায়। অভিদকে দেখে অবাক হয়ে যায় রুহি। রুহি মান্না জড়িত গলায় বলে
” আপনি এখানে কিভাবে ? আপনিই তাহলে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিলেন ?” অভিদ অপরাধীর মতো ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে
” আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি তুমি ভয় পাবে। very sorry please !” রুহি আবার কেঁদে দেয়। অভিদের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে
” একদম কাছে আসবেন না। খুব খারাপ আপনি।” অভিদ বুঝতে পারেনা কি করবে। রুহিকে খুশি করতে এসে রুহিকে ব্যায়হা দিয়ে ফেললো ভেবেই অভিদের নিজের প্রতিব রাগ হচ্ছে। কোমড়ের ব্যাথায় রুহি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে কাঁদতে থাকে। অভিদ রুহিকে টেনে কোলে তুলে নেয়। রুহি সরতে চেয়েও ব্যাথার কারণে পারলো না। রুহিকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে অভিদ সার্ভেন্টকে ডেকে হট ব্যাগ দিতে বলে। কিছুক্ষণ পর সেটা নিয়ে আসতেই অভিদ রুহির কোমড়ে দিতে থাকে। রুহি চুপচাপ কাঁদতে থাকে। অভিদ এক হাতে ব্যাগ ধরে অন্য হাতে রুহির চোখ মুছিয়ে দিয়ে ব্যাথা জড়িত গলায় বলে
” তুমি এতো ভয় পাবে আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি বাবুই পাখি। Please forgive me ! আমি ভেবেছিলাম তোমাকে একটু সারপ্রাইজ দিয়ে খুশি করবো কিন্তু সব উল্টো হলো।”
রুহি কিছু না বলে চুপ করে থাকে। অভিদ এগিয়ে এসে রুহির পুরো মুখে ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকে। রুহি নাক টেনে কান্না জড়িত গলায় বলে
” আমি তো খারাপ তাহলে এসেছেন কেনো আমার কাছে ? আমি খারাপ বলে ব্যাথাও দিয়ে দিলেন।” অভিদ অসহায় চাহনি দিয়ে বলে
” এভাবে বলো না বাবুই পাখি ! আমি বুঝতে পারিনি তো ! আচ্ছা তোমার মন ভালো করার জন্য কি চাই তোমার ?”
রুহি মুখ ঘুরিয়ে বলে
” কিছু চাই না আমার।” অভিদ হট ব্যাগ রেখে রুহির পাশে বসে বলে
” আমাদের অফিসে কোনো কাজ ছিলো না। ফ্যামিলি ট্যুরে কোথায় যেতে পারি সেটা ঠিক করার জন্যই আজ আমি আর রায়হান বেড়িয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সব ঠিক করে তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো কিন্তু আমি সব নষ্ট করে দিলাম।”
রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” তাহলে এখন বলেছেন কেনো ?”
অভিদ ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
” তোমার রাগ কমারনোর জন্য। এবার রাগ কমেছে ?” রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” একটু।” অভিদ নিঃশব্দে হাসলো। রুহির কোমড়ে আবার হট ব্যাগ দিতে থাকে। কিছুক্ষন পর রুহি অভিদের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়।

বিকেলে অনি কলেজ থেকে ফিরতেই অভিদ অনিকে ডেকে পাঠায় স্টাডি রুমে। অনি কিছুটা অবাক হয় স্টাডি রুমে ডাকায়। এই প্রথম স্টাডি রুমে এসেছে তাই চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখিতে অনি। অনি সব ঘুরে ঘুরে দেখার মাঝেই অভিদ আর রায়হান স্টাডি রুমে ঢুকে। অনি অভিদের গম্ভীরতা পূর্ণ চেহারা দেখে কিছু বলার ইচ্ছে পোষণ করলো না। রায়হান অনিকে ইশারা করতেই অনি অভিদের সামনে গিয়ে বসে। অনি ঢোক গিলে বলে
” কিছু বলবে ভাইয়া ?” অভিদের মুখে কোনো উত্তর বা প্রশ্ন শোনা গেলো না।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৪৯
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

অনি ঢোক গিলে বলে
” কিছু বলবে ভাইয়া ?” অভিদের মুখে কোনো উত্তর বা প্রশ্ন শোনা গেলো না। রায়হান শান্তভাবে বলে উঠে
” আখিল রহমান কে ?” নাম শুনে অনি চমকে উঠে। রায়হান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হলো এভাবে বিদ্যুৎ এর মত চমকাচ্ছিস কেনো ? তোর কি মনে হয় আমরা কি আমাদের পরিবারের কারোর কোনো খোঁজ রাখি না ?”
অনি মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” ভাইয়া তেমন কিছু না।”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” কেমন কিছু না ? তোর কি আমাদের এখনও বোকা মনে হয় অনি ?”
অনি মাথা নিচু করে নেয়। অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” এখনও চুপ করে থাকবি নাকি ? ড. আখিল রহমানের সাথে তোর কিভাবে দেখা হয়েছে ?”
অনি বুঝতে পারে এদের থেকে কিছুই লুকানো সম্ভব হবে না কখনো। তাই অনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” আমার এক ফ্রেন্ড এক্সিডেন্ট করেছিলো তাকে হসপিটালে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন উনার সাথে দেখা হয়েছিলো। উনার সাথে টুকটাক কথা হয় তারপর নাম্বার নেওয়া হয়।”
রায়হান রাগি গলায় বলে
” আমাদের গার্ডরা কি ওখানে গিয়ে ঘোড়ার ঘাস কাটে ? ওরা কি তোদের দেখতে পায়নি ?”
অনি মাথা নেড়ে বলে
” সেইদিন ওদের নিইনি আমি।”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” সম্পর্ক কি খুব গভীর হয়ে গিয়েছে ? নাকি শুধুমাত্র তে রয়েছে ?” অনি কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অভিদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে অনির হাত টেনে এনে নিজের পাশে বসায়। অনি গুটিয়ে বসে পড়ে। অভিদ অনির হাত মুঠোয় নিয়ে বলে
” ছোট থেকে কাছে পাইনি তোকে তাই এখন তোকে পেলেও হারানোর ভয়টা বরাবরই বেশি থাকে। তোকে খুব ভালোবাসি কলিজা। আমি সব সময় তোর ভালোবাসার জিনিসটা তোর হাতে তুলে দিতে চাই কিন্তু এটা চাই না সেটার কারণে তুই কখনো কষ্ট পাস। আমাকে সব কিছু বল। আমি আখিলের সাথে বা আখিলে পরিবারের সাথে কথা বলবো।”
অনি অভিদ কে জড়িয়ে ধরে জড়ানো গলায় বলে
” ভাইয়া আমি উনাকে খুব ভালোবাসি।”
অভিদ অনির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” ভালোবাসিস সেটা তো আগেই বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আখিল তোকে ভালোবাসে ?”
অনি মাথা নেড়ে বলে
” জানি না এখনও সেটা তাই তো তোমাকে এতোদিন কিছু বলা হয়নি।” অভিদ নিশ্বাস ফেলে বলে
” তাহলে কিভাবে হবে ?” অনি মাথা নিচু করে নেয়। রায়হান অনির পাশে বসে বলে
” অনি তুই তোর সব কিছু রুহি আর মিশুর সাথে শেয়ার কর। ওরাই হয়তো তোকে কোনো হেল্প করতে পারে আখিলের মনের কথা জানার জন্য।”
অনি অভিদের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে
” ভাইয়া তুমি রাগ করেছো আমার উপর ?”
অভিদ হেসে বলে
” না পাগলি। আমি তোর উপর রাগ করবো কেনো ? এসব নিয়ে আমার রাগ নেই। আমার কাছে তুই যা চাইবি আমার সাধ্যানুযায়ী সেটা এনে দিতে রাজি আমি। তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসলে আমি কখনো বাধা দেবো না।”
অনি খুশি হয়ে অভিদকে জড়িয়ে ধরে বলে
” থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আর সরি তোমাকে এসব কিছু না বলার জন্য।” অভিদ মুচকি হেসে অনিকে বলে
” আখিলের মনের কথা জেনে আমাকে জানাবি। আমি কিন্তু তোর কষ্ট সহ্য করবো না ! নিজেকে আগে শক্ত করে তারপর সব পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকবি যাতে কারো আঘাতে ভেঙ্গে পড়তে না হয়। আর তুই যেটাকে ভালোবাসা বলছিস সেটা যদি আবেগ বা শুধু ভালোলাগা হয়ে থাকে তাহলে সেটার থেকে নিজ দায়িত্বে সরে আসবি। মনে থাকবে ?” অনি মাথা নেড়ে হ্যা বলে বেড়িয়ে যায়।
রায়হান অনির যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বলে
” কি করবো এখন ?” অভিদ নিশ্বাস ফেলে বলে
” ড. আখিলের রহমানে উপর দূড় থেকে নজর রাখতে বল। উনি যাতে কিছু বুঝতে না পারে তেমন ভাবে। আর আমাদের তো অফিসের ডিল গুলো নিয়ে কথা বলে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে সব কিছু প্ল্যান করতে হবে। অনেক কাজ আমাদের।” রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা, ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলে ডিল নিয়ে কথা বলে নেই।” অভিদ মাথা নেড়ে সায় দেয়। দুজন স্টাডি রুমে বসেই কাজে লেগে পরে।
রুহির কোমড়ে ব্যাথার কারণে ভালো ভাবে হাটতে পারছে না তাই বিকেলে নিচে যেতে পারেনি। সন্ধ্যায় মিশু আর অনি চলে আসে রুহির কাছে। রুহি শুয়ে শুয়ে TV দেখছিলো দুজনকে দেখে অফ করে দেয়। মিশু আর অনি দুজন রুহির দুই পাশে গিয়ে বসে। রুহি মিশুর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে
” কখন ফিরেছিস তুই ?” মিশু মিটমিট হেসে বলে
” অনেক্ষণ আগেই এসেছি। তোদের দুজনকে আজ নিচে দেখলাম না কেনো ? রুমে বসে বসে রোমেন্স করছিলি নাকি ?” রুহি দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” হ্যা আমরা তো সারাদিনই রোমেন্স করি। দেখতে পাচ্ছিস না ? রোমেন্স করে কোমড় ভেঙ্গে বসিয়ে রেখে গিয়েছেন উনি।” মিশু অবাক হয়ে বলে
” এমা ! কি হয়েছে তোর কোমড়ে ?” রুহি রেগে বলে
” একটা কথা বল! বাড়িতে আছিস কি করতে তুই ? মানুষ প্রাণ হারিয়ে ফেললেও তিন পর এসে বলবি কিভাবে মারা গিয়েছে ?” মিশু মুখ লটকিয়ে বলে
” সরি। আমি জানতাম না।” রুহি কোণা চোখে মিশুর দিকে তাকিয়ে অনির দিকে তাকায়। হেসে বলে
” অনি ! নতুন কলেজে কেমন লাগছে ?”
অনি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে
” খুবই ভালো। আমি একটা কথা শেয়ার করতে এসেছি তোমাদের সাথে আর হেল্পও চাই।”
মিশু আগ্রহ নিয়ে বলে
” কি শেয়ার করতে এসেছো ? কাউকে পছন্দ হয়েছে নাকি ?” অনি লজ্জামাখা হাসি দিতেই দুজন চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকায়। রুহি হেলান দিয়ে উঠে বসে বলে
” কি হয়েছে বলো তো অনি!” অনি মাথা নিচু করে বলে
” কয়েকদিন আগে আমার এক ফ্রেন্ড একটা কারের সাথে এক্সিডেন্ট করে। পরদিন আমি জানতে পেরে তার সাথে দেখা করতে যাই। কিছুক্ষণ থাকার পর দেখি একটা ড. কেবিনে আসে আর আমার ফ্রেন্ড এর সাথে শরীরে অবস্থা কেমন সেসব জিজ্ঞেস করছিলো। আর আমি খেয়াল করেছিলাম আমার দিকে বারবার ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছিলো আমি প্রথমে পাত্তা দেইনি। আমি আরো কিছুক্ষণ থেকে সেই কেবিন থেকে বেড়িয়ে যাই। বের হয়ে লিফটে উঠতেই দেখি সেই ড. টাও রয়েছে। তিনি প্রথমে কিছু বললেননি কিন্তু পরে কথা শুরু করে। কথা বলতে বলতে আমরা নিচে এসে পরি। শেষে উনি আমার নাম্বার নেয় তারপর আমি চলে আসি। তারপর থেকে প্রতিদিন আমাদের কথা হতে থাকে। আমার পরিচয় জানতে পেরে প্রথমে অবাক হয়েছিলো পরে ঠিক হয়ে যায়। সত্যি বলতে উনাকে প্রথম দেখেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো আমার। আমি বুঝে গিয়েছিলাম আমি উনাকে ভালোবাসি।”
মিশু গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে রয়েছে। রুহি চাপা স্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” তোমরা কয়েকদিনে এতো দূড়ে চলে গিয়েছো ? তোমার ভাইয়ারা জানলে কি হবে জানো ?”
অনি মাথা নিচু করে মিনমিন স্বরে বলে
” ভাইয়ারা জেনে গিয়েছে। ভাইয়াদের চোখে ফাকি দেওয়া এতো সহজ নয়। ভাইয়া বলেছে আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসলে ভাইয়া কোনো কিছুতে বাধা দেবে না। তবে আমি যেটাকে সত্যি ভালোবাসা বলছি সেটা যদি শুধু আবেগ বা ভালোলাগা হয় তাহলে সেটা থেকে দূড়ে সরে আসতে হবে আমাকে।”
রুহি অনিকে ইশারায় কাছে ডাকে। অনি রুহির একদম কাছে গিয়ে বসে। রুহি অনির গালে হাত রেখে বলে
” তোমার কি মনে হয় ? তুমি সত্যি ভালোবাসো ওই ড. কে ?” অনি কান্না করে বলে উঠে
” আমি সত্যি তাকে ভালোবাসি ভাবি। আমার তো এখন আবেগের বয়স না। আমি সত্যিই উনাকে ভালোবাসি।” রুহি অনির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে
” ধুর পাগলি এভাবে কেঁদো না। বুঝতে পেরেছি তুমি উনাকে ভালোবাসো। কিন্তু উনি তোমাকে কতোটা ভালোবাসে ?”
অনি চোখ মুছে বলে
” সেটা জানি না আমি।”
মিশু অবাক হয়ে বলে
” কি ! যাকে নিয়ে তোমার মনে এতো অনুভূতি তার মনের কথাই এখনও জানো না ?” অনি ছলছল নয়নে মিশুর দিকে তাকিয়ে বলে
” না।” মিশু হতাশার নিশ্বাস ফেলে। মিশু অনিকে বলে
” আচ্ছা ঠিকাছে কান্না কাটি বন্ধ করো আর আমি যা বলবো সেটা করো দুইদিনের জন্য। উনাত সাথে দুইদিনের জন্য কন্টাক্ট করা বন্ধ করে দাও। মানে সোশাল মিডিয়া থেকে বিদায় নাও শুধুমাত্র দুইদিনের জন্য। তোমার ফোন, ল্যাপটপ সব কিছু বন্ধ করে রাখো।”
অনি ঢোক গিলে মাথা নিচু করে বলে
” আমি তো কথা না বলে থাকতে পারি না।” মিশু নিশ্বাস ফেলে বলে
” দুইদিনের জন্য কি পারবে না ? যাকে ভালোবাসো তার প্রতি তোমার ফিলিংস সম্পর্কে জানতে তো তোমার এইটুকু করতেই হবে।”
অনি মাথা নেড়ে সায় দেয়।

অভিদ, রায়হান ঠিক করে নেক্সট সপ্তাহ সবাই অভিদদের ফার্ম হাউজে যাবে। রুহিকে এই অবস্থায় নিয়ে অভিদ দূড়ে কোথাও যেতে চায় না তাই এই ব্যবস্থা। অভিদ ডিনার টেবিলে সবার উদ্দেশ্যে বলে
” আমরা নেক্সট উইক আমাদের ফার্মহাউজে ঘুরতে যাচ্ছি।” কৌশিকা রায়জাদা অবাক হয়ে বলে
” মানে ? হঠাৎ ফার্মহাউজে ঘুরতে কেন ?”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” এতোদিন তো তোমরাই বলছিলে ঘুরতে যাবে কোথাও এখন বলছো হঠাৎ কেনো ?”
কৌশিকা রায়জাদা রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” হ্যা বলেছিলাম কিন্তু রুহি তো বাইরে কোথাও যেতে চেয়েছিলো।”
অভিদ খেতে খেতে বলে
” নাহ এই অবস্থায় বাইরে কোথাও জার্নি করা হচ্ছে না। তাই যেখানে বলেছি সেখানেই যেতে হবে।” রুহিসহ সবাই অভিদের কথায় রাজি হয়।
কৌশিকা রায়জাদা বলে
” অভিদ, রায়হান আমার একটা কথা বলার ছিলো তোমাদের। আমি যেতে পারবো না তোমাদের সাথে। তোদের আংকেল জানালো তিনি কিছুটা অসুস্থ। তাই আমি সেখানে যাচ্ছি কয়েকদিনের জন্য।”
সবাই খাওয়া বন্ধ করে ফুপির দিকে তাকায়। রায়হান অবাক হয়ে বলে
” মানে কি ? তুমি চলে যাবে আমাদের জানাওনি কেনো আগে ? তুমি চলে গেলে কিভাবে হবে ?”
কৌশিকা রায়জাদা হালকা হেসে বলে
” কেনো এতোদিন তো তোমরা দুই ভাই সব সামলাতে এখন পারবে না ? তোমার আংকেল সুস্থ হয়ে গেলে চলে আসবো আমি। তোমরা ঘুরে এসো। আর আমার জন্য emergency টিকিট বুক করো।”
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫০
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

কৌশিকা রায়জাদা হালকা হেসে বলে
” কেনো এতোদিন তো তোমরা দুই ভাই সব সামলাতে এখন পারবে না ? তোমার আংকেল সুস্থ হয়ে গেলে চলে আসবো আমি। তোমরা ঘুরে এসো। আর আমার জন্য emergency টিকিট বুক করো।”
অভিদ নিশ্বাস ফেলে বলে
” ঠিকাছে সব ব্যবস্থা করছি।” সবাই ডিনার শেষ করে নিজেদের রুমে চলে যায়। অনি তার মোবাইল, ল্যাপটপ সব কিছু অফ করে দেয়।
রুহি রুমে এসেই অভিদের গলা জড়িয়ে ঝুলতে থাকে। অভিদ দুই হাতে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখে হেসে বলে
” কি ম্যাডাম ? খুশি খুশি লাগছে কেনো এতো ?”
রুহি বড় একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে
” আপনি আমার কথা শুনেছেন তার জন্য খুশি আমি। এবার ঘুরতে গিয়ে খুব আনন্দ করবো।”
অভিদ নাক দিয়ে রুহির গালে স্লাইড করতে করতে বলে
” এতো খুশি হওয়া কিন্তু ভালো না বাবুই পাখি! জানো তো আমাদের ফার্মহাউজের কাছাকাছি কোনো স্পেশাল জায়গা নেই যেখানে তুমি ঘুরতে পারবে। এখন কি করবে সেখানে গিয়ে ?”
রুহি অভিদকে ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে বলে
” মানে ? কোথাও যদি ঘুরতেই না পারি তাহলে গিয়ে লাভ কি আমার ? ধুর ! আমি যাবোই না কোথাও।”
রুহি মুখ ফুলিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পরে। অভিদ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে রুহির পাশে বসে রুহির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। রুহি রেগে বলে
” উঠুন আপনি ! খুব খারাপ লোক একটা ! একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে সেটা নিয়ে কি শুরু করেছে ! দূরে কোথাও নিয়ে গেলে কি এমন হবে ?”
অভিদ চোখ বন্ধ করে বলে
” দূড়ে গেলে অনেক রিস্ক রয়েছে তোমাকে নিয়ে। এই অবস্থায় দূড়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা বললে কিন্তু সব প্ল্যান ক্যান্সেল করে দেবো আমি!”
রুহি রেগে অভিদের চুল টানতে থাকে। অভিদ শব্দ করে হেসে বলে উঠে
” তোমার মতো বাচ্চা মানুষের ধারা কিছু হবে না। ব্যাথক দিতে চাইলে আরো জোড়ে জোড়ে চুল টানো। নাহলে ভালো করে চুল টেনে আমার মাসাজ করে দাও।”
রুহি রেগে ফুস করে বলে
” জান তো সরুন এখান থেকে ! আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে না আবার এখানে এসে কি করছে। আমি কালকে একা একাই মিশু, অনি আর তুষার ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরতে চলে যাবো।”
অভিদ উঠে গম্ভীর গলায় বলে
” এই মেয়ে ! একদম বেশি বেশি পাকনামি করতে যাবে না ! ঘুরতে যাওয়া সব ঠিক করে ফেলেছি আর এখন এসব বলছো ! একদম এসব বললে হবে না। এর আগে যদি আমাকে না বলে বাড়ির বাইরে এক পাও পরেছে তাহলে তোমার পা ভেঙ্গে রেখে দেবো। মনে থাকে যেন।”
রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” কি দেখছো এভাবে ?” রুহি পেছন থেকে কুশন নিয়ে অভিদের মুখের উপর ছুড়ে মেরে বলে
” আপনার মাথা কেটে রেখে দেবো সেটাই ভাবছি।” অভিদ বারি খেয়ে নাক ঘষতে থাকে। রুহি মুখ ফুলিয়ে ঘুমিয়ে পরে। অভিদ রুহির বরাবর শুয়ে রুহির ঠোঁট ছুঁয়ে বলে
” আজকে আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার কিছু গল্প বলবো শুনবে ?” রুহি বিস্মিত হয়ে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় আবারও জিজ্ঞেস করে রুহিকে। রুহি জোড়ে জোড়ে মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বলে। অভিদ মুচকি হেসে উঠে একটা চাদর নিয়ে নেয়। রুহিকে কোলে তুলে ব্যালকনির দোলনায় বসিয়ে দিয়ে দুজনের গায়ে চাদর জড়িয়ে নেয়। রুহি অনেকটা এক্সাইটেড হয়ে বসে রয়েছে। অভিদ রুহিকে দেখে মুচকি হাসে।
অতীত…..
আজকে ভার্সিটির খুব বড় একটা প্রোগ্রামের জন্য অভিদ আর রায়হান সেখানে স্পেশাল চিফ গেস্ট হিসেবে ইনভাইটেট। অভিদ, রায়হানদের ভার্সিটির স্যার আর অনেক স্টুডেন্টরা খুব সুন্দর করে ওয়েলকাম করে। দুজন তাদের নির্ধারিত সিটে বসে পরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয় কিন্তু অভিদের কাছে সব কিছুই বিরক্তিকর লাগতে শুরু করে। কিছু কিছু স্টুডেন্ট স্টেজে ডিজে গানে পারফর্ম করছে যেটা কভিদের কাছে খুবই বিরক্তকর লাগতে থাকে। অভিদ রায়হানের কানে কানে ফিসফিস করে বলে
” আমার এসব ফালতু নাচ ভালো লাগছে না। আমি কিন্তু চলে যাবো এখান থেকে।”
রায়হান ভ্রু কুঁচকে বলে
” আর ইউ ক্রেজি ? এখন থেকে চলে গেলে কি হবে জানিস ? এখানে দেখতে পাচ্ছিস কতো শত শত মানুষ রয়েছে ! এভাবে চলে গেলে তো পাবলিক পাগলের রূপ ধরবে আর স্যার এতো রিকোয়েস্ট করে আমাদের আসতে বলেছে এখন দুই মিনিট থেকেই চলে গেলে স্যারেরও তো খারাপ লাগবে।” অভিদ হতাশা ভরা নিশ্বাস ফেলে বলে
” ঠিকাছে তাহলে একটু বাইরে যাচ্ছি এসে পড়বো আমি। এদিকটা ম্যানেজ করে নিস।”
রায়হান মাথা নাড়িয়ে ওকে বলে। অভিদ দুইজন গার্ড নিয়ে সেই ভির থেকে বেড়িয়ে আসে। অভিদ বাইরে এসে দুই মিনিট হাটাহাটি করতেই হঠাৎ ভবনের দিকে চোখ যেতেই সেখানে চোখ থমকে যায়। দুইজন শাড়ি পরিহিতা মেয়ে এক প্রকার দৌঁড়েই ছুটে আসছিলো। একজন ভালোভাবেই শাড়ি সামলাতে পারলেও পাশের জনকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে শাড়ি কোনোভাবেই সামলাতে পারছে না। অভিদের চোখ তার দিকেই আটকে থাকে। শাড়ি নিয়ে অগোছালো ভাবে কোনো রকমে ছুটে আসছে। কোমড় ছুই ছুই চুল গুলো দৌঁড়ে আসার কারণে বাতাসের তালে কিছুটা উড়ছে। অভিদ ঘোরের মাঝে সেখানেই স্টেচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর সেই মেয়ে দুজন অভিদের সামনে এসে দাঁড়ায়। অভিদ এখনও খেয়ালই করেনি তার সামনে কেউ এসেছে। অভিদ সানগ্লাস খুলে সেই অগোছালো ভাবে শাড়ি সামলানোর মেয়েটার দিকে তাকায়। মেয়েটার চোখ গুলো টানা টানা অসম্ভব মায়াময় চোখ জোড়া। এই চোখ দেখেই যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। চেহারায় অসম্ভব মায়া রয়েছে। নিষ্পাপ এক চাহনি দিয়ে অভিদের দিকে তাকিয়ে আছে। অভিদ শুধু তার দিকেই অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে।
” এই যে মিস্টার অভিদ রায়জাদা !”
পাশের মেয়ের ডাক শুনে অভিদ চমকে উঠে। অভিদ একবার দুজনের দিকে তাকিয়ে আবার সেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে
” ইয়েস মিস কিছু বলবেন নাকি ?”
মেয়েটা কোমড়ে হাত রেখে বলে
” ভাইয়া আপনি জানেন আপনাকে কতো কেউ খুঁজে যাচ্ছে ! আর আপনি এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন !” অভিদ জোড়পূর্বক হেসে বলে
” কারা খুঁজছে ?”
মেয়েটা ক্লাবের দিকে দেখিয়ে বলে
” ওই যে স্যাররা খুঁজছে আপনাকে।”
অভিদ হেসে বলে
” তোমার নাম কি ? তোমাদের তো আমি সেখানে দেখতে পাইনি।”
মেয়েটা মুচকি মুচকি হেসে বলে
” আমি মিশু। আমি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম তাই দেখা হয়নি আপনার সাথে। তবে জানেন ভাইয়া আপনার অনেক বড় ফ্যান আমি।”
অভিদ মুচকি হাসি দিলো উত্তরে। অভিদ মিশুর পাশের মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে অভিদের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। অভিদ তার দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমার নাম কি ?” মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে
” রুহি।” রুহির কথা বলার স্টাইল অভিদের কাছে খুবই ভালো লাগলো। অভিদ মিষ্টি একটা হাসি দেয়। রুহি চুপচাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মিশু অভিদকে বলে
” ভাইয়া স্যাররা আপনাকে ডাকছে আপনি চলুন !” অভিদ মাথা নেড়ে মিশু আর রুহির সাথে যেতে থাকে। অভিদকে সেখানে দিয়েই রুহি আর মিশু আবারও উধাও হয়ে যায়। অভিদ মনে মনে খুব রেগে যায়। কিছুক্ষণ স্যারদের সাথে কথা বলে আবার সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে। এবার ভবনের দিকে যেতে থাকে। ভবনে যাওয়ার পথেই ক্লাবের একটা রুমের দিকে চোখে যায়। রুমের দরজার বাইরে মিশুকে দেখতে পায় অভিদ। অভিদ মিশুর কাছে চলে যায়। মিশু দরজার বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আর গুনগুন করে গান গাইতে থাকে। অভিদ মিশুর সামনে গিয়ে বলে
” হ্যালো ! মিস মিশু।” মিশু অভিদকে দেখে গানি গাওয়া বন্ধ করে দিয়ে হেসে বলে
” আপনি ? কিন্তু আপনি আবার এখানে কেনো ? আপনাকে তো সবাই খুঁজবে আবারও।”
অভিদ মাথা নেড়ে বলে
” উঁহু ! স্যারদের বলে এসেছি আকি। একটা জরুরি ফোন এসেছিলো। তো তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ?”
মিশু আলতো হেসে বলে
” রুহি ভেতরে রয়েছে তাই আমি পাহারা দিচ্ছি।”
” তোমরা কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট ?”
মিশু মিটমিট করে হেসে বলে
” আমরা দুজন মডেলিং নিয়ে পরছি। আর রুহির বাবা মানে আমার কাকা তিনি ভার্সিটির প্রিন্সিপ্যাল স্যার।”
অভিদ আবারও কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রুহি দরজা খুলে বেড়িয়ে আসে। অভিদকে দেখে রুহি অবাক হয়ে যায়। অভিদ শুধু বিদায় নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। এরপর আর দেখা হয়নি তাদের।
বাড়িতে ফিরে অভিদের নির্ঘুনে দিন কাটে সারারাত রুহির মুখটা দেখতে পায় চোখের সামনে। পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে অভিদকে দেখে রায়হান বলে
” কিরে সারা রাত ঘুমাসনি তুই ?”
অভিদ খাওয়া বন্ধ করে শান্ত ভাবে বলে উঠে
” আমি রুহিকে ভালোবাসি। রুহির সব ডিটেইলস চাই আমার।” রায়হানের নাকে মুখে খাবার উঠে যায়। রায়হান অনবরত বিষম খেতে থাকে। অভিদ উঠে রায়হানের মাথায়, পিঠে ঘষতে থাকে। অনেক্ষণ পর রায়হান স্বাভাবিক হয়। রায়হান বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” কি বললি এটা তুই ? তোর কাউকে ভালো লেগেছে ?”
অভিদ মাথা নেড়ে বলে
” ভালো লেগেছে না আমি ভালোবেসে ফেলেছি।”
রায়হান কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” কি বলছিস এসব ? এই তুই উল্টা পাল্টা কিছু খাসনি তো ? এসব কি বলছিস তুই ?”
অভিদ রুহির সাথে দেখা হওয়া সব কিছু বললো। রায়হান সব শুনে অবাক হয়ে বলে
” এতো কিছু হয়ে গেলো আমাকে ছাড়া ?”
অভিদ রেগে বলে
” তুই আমার কথা না শুনে আবোলতাবোল কথা বলছিস কেনো ? সত্যি কথা বলছি আমি রুহিকে ভালোবাসি। রুহিকে চাই আমি।”
রায়হান রেগে বলে
” এই ভালোবাসি মানে কি ? দেখেই তুই ভালোবেসে ফেলেছিস?”
অভিদ রেগে বোম হয়ে কিছু বলার আগেই রায়হান বলে
” আচ্ছা আচ্ছা আমি দেখবো সব কিছু।” অভিদ রায়হানের কথায় শান্ত হয়।
বর্তমান…..
রুহি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে
” তারপর কি হলো?” অভিদ রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে
” তারপর রায়হান তোমার সব খোঁজ খবর খুঁজে বের করলো। সব কিছু দেখে বুঝতে পারলাম তুমি আমার জন্য সঠিক একজন মানুষ। তারপর তোমার বাবার কাছে বিয়ের প্রোপজাল পাঠালাম তারপর আমাদের বিয়ে হলো। আমাদের বিয়ের পরের প্রত্যেকটা মুহূর্ত খুব সুন্দর ছিলো। অনেক দিন পর যাওয়ার বুঝতে পেরেছিলাম তুমিও আমার প্রতি আশক্ত।” অভিদ রুহির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। রুহি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে অভিদের বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে রাখে। রুহি সেভাবেই অভিদের বুকে ঘুমিয়ে পরে আর অভিদ দোলনায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

দুইদিন পার হয়ে আজ তিনদিনের পা দিয়েছে আখিল আর অনির যোগাযোগ পুরোই বিচ্ছিন্ন। অনি একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছে দুইদিনেই। অভিদদের কথায় আজ ভার্সিটিতে এসেছে অনি। দুইটা ক্লাস করেই অনির মাঝে বিরক্ত এসে পরে তাই ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যায়।

চলবে~ইনশাল্লাহ………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here