মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৪৫+৪৬+৪৭

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৪৫
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

মিশু মিনমিন স্বরে বলে
” ডক্টর ডাকা হয়েছে তবে রুহি টিভির নিউজ দেখে তার উপর আপনাকে নিয়ে চিন্তা করে করে খাওয়া দাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে।”
অভিদ রাগি গলায় বলে
” আমাকে ফোন করে তো জানাতে পারতে তোমরা ! রায়হান ! দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ? জলদি ডক্টর ডাক।”
রায়হান দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে বলে
” নিলয়কে ফোন করেছি নিলয় বলেছে রুহিকে নিয়ে হসপিটালে যেতে। আমি গাড়ি বের করছি তুই আয়।” রায়হান দৌঁড়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখে গাড়ি পার্ক করছে। রায়হান সেখানে গিয়ে ড্রাইভারকে বলে
” গাড়ি বের করো আবার হসপিটালে যেতে হবে।”
ড্রাইভার আবার গাড়ি বের করতে থাকে।
অভিদ রুহিকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলেই কৌশিকা রায়জাদা চলে আসে। রুহিকে অভিদের কোলে দেখে অবাক হয়ে বলে
” কি হয়েছে রুহির ?”
অভিদ হতাশার সঙ্গে বলে
” ফুপি ওর দায়িত্ব একদিনের জন্যে তোমাদের কাছে দিয়ে গিয়েছিলাম। রুহি তো একদিনেই অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। ওকে জোড় করে খাওয়াতে পারলে না ?”
কৌশিকা রায়জাদা কিছুটা রেগে বলে
” তোর বউ কি কারো কথা শোনে ? তোর বকা খাওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। আমার একটা কথা যদি শোনে ! শুধু শুধু তোর চিন্তা করে করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তুই ছাড়া রুহিকে এখন আর কেউ খাওয়াতে পারবে না। আর নিলয়ের সাথে কথা বলেছিলাম আমি। নিলয় বলেছিলো রুহির কিছু চেকাপ করা প্রয়োজন।”
অভিদ মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা, যাচ্ছি আমি তোমরা চিন্তা করো না।” অভিদ রুহিকে নিয়ে বাইরে আসতেই দেখে গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে অভিদ রুহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠলে মিশুও উঠে বসে। রায়হান ড্রাইভারকে সরিয়ে নিজেই ড্রাইভিং সিটে বসে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
হসপিটালে আসতে নিলয় রুহিকে কেবিনে নিয়ে যায় কয়েক ঘন্টা পেড়িয়ে যায়।
মিশু গার্ডকে দিয়ে দুই কাপ কফি আনতে পাঠয়েছিলো। কফি নিয়ে আসতেই মিশু অভিদ আর রায়হানের কাছে যায়। রায়হানের চোখ জ্বলছিল কফি দেখে নিয়ে নিলো। মিশু মুচকি হেসে রায়হানের মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো এলোমেলো করে দিলো। রায়হান মুখ বাকিয়ে মিশুর দিকে কোণা চোখে তাকায়। মিশু পাত্তা না দিয়ে অভিদের কাছে গিয়ে বলে
” ভাইয়া ! কফিটা খান ভালো লাগবে। কালকে তহেকে তো মনে হয় না কাজের ঝামেলায় কিছু খেয়েছেন।”
অভিদ আঙ্গুল দিয়ে চোখ চেপে ধরে মাথা নেড়ে বলে
” নাহ এখন ইচ্ছে নেই পড়ে খাবো।”
মিশু জেদ ধরে বলে
” ভাইয়া প্লিজ ! এখন নিজেও অসুস্থ হওয়ার চিন্তা করছেন নাকি ? এটা খেয়ে একটু মাথা ঠান্ডা করুন আর রুহির একদম সুস্থ রয়েছে।”
অভিদ নিশ্বাস ফেলে কফি হাতে তুলে নেয়। মিশু রায়হানের পাশে গিয়ে বসে। রায়হান কফির কাপ ধরে মুচকি হেসে বলে
” আজ অনেক বছর পর নিজেকে হালকা লাগছে। আজ পরিবারের সব ঝামেলা শেষ হলো। এখন আমরাও নরমাল লাইফ লিড করতে পারবো।”
মিশু ভেংচি কেটে বলে
” তুমি আর ভাইয়া কখনোই নরমাল লাইফ লিড করতে পারবে না। তোমরা দুজন হলে মাফিয়া কিং নরমাল লাইফ লিড করলে তো মাফিয়ার পথ থেকে দূরে চলে আসতে হবে। পারবে তো দুজন ?”
রায়হান আমতা আমতা করে বলে
” মাফিয়ার পথ থেকে কিভাবে দূড়ে আসবো ? আমার আর অভিদের রক্তে মিশে গিয়েছে।”
মিশু ভেংচি কেটে বলে
” হুহ আসছে আবার নরমাল লাইফ লিড করতে !”
রায়হান জোড়পূর্বক হাসি দিলো। অভিদ কফি খেতে খেতে দেখে নিলয় আসছে। অভিদ কফি রেখে দৌঁড়ে নিলয়ের কাছে যায়। হঠাৎ দৌঁড়ে নিলয়ের সামনে আসায় নিলয় চমকে অভিদকে বলে
” আরে ভাইয়া মেরে ফেলবে নাকি আমাকে ?”
অভিদ বুঝতে না পেরে কপাল কুঁচকে বলে
” মানে ? তোমাকে কেনো মারতে যাবো ?”
নিলয় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে
” এভাবে দৌঁড়ে এলে আমি ভয় পেয়েছি না ?”
অভিদ আলতো হাসলো পরে চিন্তিত হয়ে বলে
” রুহি কেমন আছে ?”
নিলয় চোখের পলক ফেলে বলে
” এখম ঠিকাছে। আমার কেবিনে চলো কথা বলছি।”
অভিদ রায়হানকে বলে নিলয়ের সাথে কেবিনে চলে আসে। নিলয় চেয়ারে বসে অভিদকে বসতে বলে। অভিদ বসে চিন্তিত হয়ে বলে
” কি বলবে ? সত্যি কথা বলো রুহির কি কিছু হয়েছে ?” নিলয় শান্তনা দিয়ে বলে
” নাহ সিরিয়াস কিছু না। তুমি চিন্তা করো না। কিছু করহা বলবো শান্ত হয়ে জাস্ট শোনো। ”
অভিদ কিছুটা শান্ত হয়। নিলয় শান্ত ভাবে বলে
” আসলে রুহির শরীরের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। মানে রুহির এক্সিডেন্ট এর কারণে ওর শরীর আগে থেকেই কিছুটা দুর্বল। আর প্রেগন্যান্সির সময় তো খাওয়া দাওয়া বেড়ে যায় আবার কমেও যায়, মুড সুইং হয় আরো অনেক কিছুই হয়। রুহির খাওয়া দাওয়া কম সাথে কিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে থাকে। So, নরমাল প্রেগন্যান্সির থেকে রুহির অবস্থা মোটামুটি ক্রিটিকালই বলা যায়। রুহির প্রেগন্যান্সির তো তিন মাস শেষ এখন থেকে রুহির খাবার, মেডিসিন সব কিছুর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর রুহি বারবার ডিপ্রেশনে থাকলে সময় যতো বেশি হবে ততো ক্রিটিকাল হতে থাকবে। ওকে ডিপ্রেশন থেকে দূড়ে রাখতে হবে।”
অভিদ এর মুখটা মলিন হয়ে যায়। অভিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
” আমার মনে হচ্ছে রুহির ডিপ্রেশন থাকার কারণ টা হলো ওর স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে সেসব নিয়েই। রুহি বারবার সব কিছু মনে করতে চায় কিন্তু না পেরে কষ্ট পায়।”
নিলয় ঢোক গিলে বলে
” তুমি তো জানোই রুহি জোড় করে তার স্মৃতি ফিরে আনতে চাইলে রুহির ব্রেনস্ট্রোক বা কিছু একটা হয়ে যাবে। এটা আমি একা না তুমি তখন সিঙ্গাপুর, লন্ডন আরো বাইরে থেকে বড় বড় ডক্টর এনে পরীক্ষা করে দেখেছো। সবার একই কথা। আজ একটা কথা বলছি। মানে আমি বলছি তুমি চাইলে একবার…. একটা রিস্ক নিয়ে দেখতে পারো। তুমি এমন কোনোভাবে কিছু ঘটনা রুহির সামনে তুলে ধরো যাতে রুহির সত্যিই সব কিছু মনে পরে যায়। আমি জানি না এটার ফল পজেটিভ হবে নাকি নেগেটিভ হবে তবে রুহির জন্য, তোমার জন্য আর নিজেদের সন্তানের জন্য একটা বার ট্রায় করে দেখতে পারো।”
অভিদ আতকে বলে উঠে
” কি বলছো এসব ? নাহ আমি এসব করে রুহিকে হারাতে চাই না। আর একবার ট্রায় করলে মনে পড়ে যাবে এমন কি ঘটনা থাকে নাকি ? থাকলে অবশ্যই রুহির কিছু না কিছু মনে পরতো বা কোনো এফেক্ট পড়তো।”
নিলয় ভ্রু কুঁচকে বলে
” একবার ট্রায় করে দেখতে পারবে না ? এভাবে চলতে থাকলে ডেলিভারির সময় রুহির অবস্থা ক্রিটিকাল হয়ে যাবে।”
অভিদ মাথা ধরে বলে
” জানি না কিছু। সব দিক দিয়েই কোনো না কোনো শক্ত দেয়াল তৈরি হচ্ছে। আমি সব করতে পারবো তবে আমার একটাই ভয় শুধুমাত্র রুহি ! রুহির কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো।”
নিলয় দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে
” বুঝতে পারছি আমি। আমার নিজেরও ভয় করছে। রুহি আমার বোন হয় তবু সাহস নিয়ে বলছি আমি একবার ট্রায় করে দেখো।”
অভিদ কিছুক্ষণ বসে থেকে বলে
” রুহির জ্ঞান ফিরবে কখন ?”
নিলয় আলতো হেসে বলে
” জ্ঞান ফিরে এসেছে। তবে স্যালাইন চলছে আর কয়েকটা টেস্ট করিয়েছিলাম তাই এতো দেড়ি হয়েছিলো। তুমি নিশ্চিন্তে রুহির কাছে যাও।”
অভিদ হালকা হেসে বেড়িয়ে আসে। রুহির কেবিনের সামনে এসে দেখে রায়হান, মিশু কেউ নেই। চারপাশে তাকিয়ে গার্ডদের উদ্দেশ্যে বলে
” রায়হান আর মিশু কোথায় গিয়েছে ?”
” স্যার উনারা ভেতরে ম্যাম এর কাছে গিয়েছে।”
অভিদ ভেতরে ঢুকে দেখে রুহির দুই পাশে দুজন বসে বসে কথা বলছে। অভিদ নিজেকে গম্ভীর বানিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। রুহি অভিদকে দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ঢোক গেলে অভিদের গম্ভীর চেহারা দেখে।
অভিদ রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠে
” আমি কি মরে গিয়েছিলাম ? খাওয়া দাওয়া কেনো বন্ধ করেছিলে ? একদিনের জন্যে কাজে গিয়েছিলাম তোমার অবস্থা দেখে ইচ্ছে করছে তোমার গাল দুটো তে দুইটা ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেই। আমি তো দুইদিন পর পর ব্যাবসার কাজে বিডির বাইরে চলে যাই তখনও কি অবস্থা করবে নাকি ?”
রুহি আঙ্গুল খুঁটতে খুঁটতে মিনমিন গলায় বলে
” নাহ তখন তো আমি আপনার সাথে যাবো।”
অভিদ রেগে বলে
” এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো ! আবার কথা বলছো কোন সাহসে ? কিছু বলি না দেখে কি মাথায় চড়ে গিয়েছো ? নিজের অবস্থা দেখো ! আর একবার যদি এমন করেছো তাহলে তোমাকে আমি বনবাসে পাঠিয়ে দেবো তখন দেখবো তুমি আমাকে কিভাবে খুঁজে পাও।”
রুহি মুখ ফুলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। সবাই অবাক হয়ে তাকায়। রুহি কাঁদতে কাঁদতে রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বলে
” দেখেছো ভাইয়া ? আমি অসুস্থ তাও উনি আসার পর থেকে আমাকে বকে যাচ্ছে আমাকে একবারও জিজ্ঞেস করেনি কেমন আছি আমি। আর এই খারাপ লোকটার জন্য আমি না খেয়ে এই অবস্থা করেছি নিজের ?”
মিশু আর রায়হান মুখ চেপে হাসত থাকে। অভিদ রাগি গলায় বলে
” তোমাকে ইচ্ছে করছে মাথায় তুলে আছাড় আমি। আমি যাওয়ার আগে কি তোমাকে বলে যাইনি ? ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে আর নিজের খেয়াল রাখবে ? তুমি আমার কথা শুনেছো ? আজ আমার কথা শুনলে দুইটা স্যালাইনের প্রয়োজন হতো না।”
রুহি কাঁদতে কাঁদতে নাক টেনে বলে
” কেনো সমস্যা কোথায় আপনার ? আপনার এতো কোটি কোটি টাকা আর আপনি এই দুটো স্যালাইনের জন্য আমাকে বকা ঝকা করছেন ? ছিঃ !”
রায়হান আর মিশু এবার জোড়ে জোড়ে হেসে উঠে। অভিদ রেগে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৪৬
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রায়হান আর মিশু এবার জোড়ে জোড়ে হেসে উঠে। অভিদ রেগে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে।
রুহি নিজের কান্না থামানোর চেষ্টা করে। অভিদ রাগি গলায় বলে
” চুপচাপ থাকো নাহলে এবার সত্যি তোমার গালে আমার হাত থাকবে।”
রুহি নাক টেনে কান্না থামাতে থাকে। রায়হান হাসি থামিয়ে বলে
” অভিদ স্যালাইনের চিন্তা করে না তোমার আর বাচ্চার চিন্তা করে তাই তোমাকে নিজের খেয়াল রাখতে বলেছিলো। তুমি বাচ্চার চিন্তা করলে না ? শুধু শুধু অভিদকে নিয়ে চিন্তা করছিলে কেনো ? অভিদের গায়ে একটা আঁচও লাগেনি।”
রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” ভাইয়া তুমিও এখন আমাকে বকবে ?”
রায়হান হেসে বলে
” না রে পাগলি ! আমি বকছি না তোমাকে একটু বুঝাচ্ছি। এরপর থেকে যাই হয়ে যাক না কেনো খাওয়া দাওয়া ঠিক রাখবে। ওকে ?”
রুহি মাথা নেড়ে হ্যা বলে। নিলয় কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলে
” আমাকে কি কারো মনে আছে নাকি সবাই ভুলে গিয়েছে আমাকে ?”
রুহি ভ্রু নাচিয়ে বলে
” আমার ভাবি কেমন আছে ? ভাবিকে কতোদিন হলো দেখি না আমি।”
নিলয় তার পা চলা থামিয়ে চোখ বড় বড় করে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিদরা মুখ টিপে হাসতে থাকে। নিলয় গলা ঝেড়ে বলে
” তুই আমার কথা জিজ্ঞেস না করে অন্যদের কথা জিজ্ঞেস করছিস ? This is Not fair Ruhi !”
রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” তোমাকে তো দেখতেই পাচ্ছি ঠিক আছো তাহলে আবার জিজ্ঞেস করবো কেনো ? আমার ভাবিকে তো দেখিনি জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছে।”
নিলয় বিরক্তকর স্বরে বলে
” এই তোর ভাবি কোথা থেকে এসেছে ? আমি কি এখনও বিয়ে করেছি নাকি আমার গার্লফ্রেন্ড আছে ?”
রুহি মুখ কুঁচকে বলে
” ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! ভাইয়া তুমি এখনও একটা গার্লফ্রেন্ড খুঁজে বের করতে পারলে না ? আর তোমার ছোট বোনদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।”
নিলয় ভ্রু কুঁচকে বলে
” বোনদের কোথায় বিয়ে হয়েছে ? শুধু মাত্র তোরই বিয়ে হয়েছে আর কারোরই বিয়ে হয়নি।”
রুহি মিশুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে
” কিছুদিন পর তো নিলাপির বিয়ে হয়ে যাবে। তারপরের বউ তো তৈরিই হয়ে রয়েছে। শুধু বিয়ের কাজি আসলেই হয়ে যাবে।”
সবাই রুহির কথা বুঝতে পেরে মিশুর দিকে তাকায়। মিশু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখে।
রুহি মিটমিট করে হাসতে থাকে। নিলয় আলতো হেসে রুহির পাশে এসে দাঁড়ায়। রুহির চেকাপ করতে করতে নিলয় এক সময় বলে উঠে
“কাকা আর কাকির সাথে অভিমান করে তো কয়েক মাস হয়ে গেলো বাড়িতে যাচ্ছিস না। ওরা অসুস্থ জানিস তুই ?”
রুহি শান্ত চাহনি দিয়ে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
” জানি রাইমা আর মিশু বলেছিলো।”
নিলয় নিশ্বাস ফেলে বলে
” আজও রাগ করে থাকবি ? সব তো জানিসই এখন। তাহলে এখনও রেগে থাকার কোনো মানে আছে কি ? বাড়িতে গিয়ে কাকা, কাকির সাথে দেখা করে আসতে পারিস না ?”
রুহি চুপচাপ বসে থাকে নিলয়ের কথার কোনো উত্তর দিলো না। অভিদ রুহির দিকে একবার তাকিয়ে আনন্দিত গলায় বলে
” দুইদিন পর রুহি সহ আমার পুরো ফ্যামিলিকে নিয়ে আমার শশুড় বাড়ি যাবো। মা, বাবাকে জামাই আদরের জন্য তৈরি থাকতে বলো !”
নিলয় মুচকি হাসি দিয়ে রুহির দিকে তাকালো। রুহি এখনও কিছু বললো না। নিলয় মুখ শুকিয়ে বলে
” যার জন্য যাবে সেই তো কথা বলছে না তাহলে কাকা, কাকি কে গিয়ে কিভাবে বলবো ? যদি শেষ পর্যন্ত রুহিই না যায় !”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” রুহি না গেলেও ওর বাচ্চা যাবে। তোমরা তৈরি থেকো।”
নিলয় মুচকি হেসে বেড়িয়ে গেলো। রায়হান রুহিকে বলে
” আর কতোদিন অযথা রাগ করে থাকবে আংকেল, আন্টির উপর ?”
রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
” আমি অযথা রাগ করতে যাবো কেনো ? মা, বাবা চাইলে আমাকে আমার এক্সিডেন্টের কথা আমাকে বলতে পারতো। তাহলে আমি বিয়ের সময় এতো অস্বস্তি, অভিদের প্রতি ঘৃণা মনে জমিয়ে রাখতাম না। আমি স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ে করতে রাজি হতাম।”
কেউ আর কিছু বলার সাহস পেলো না। রুহি সবার দিকে একবার তাকিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে থাকে। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় অভিদ, রায়হান আর মিশুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।
ক্যান্টিনে ডিনার করে অভিদ রুহির কাছে এসে বসে। রুহির চোখে তখন ঘুমে ঢুলঢুল করছে। ঘুমঘুম চোখে অভিদকে দেখে রুহি বলে উঠে
” আমার পাশে এসে ঘুমান।”
অভিদ মুচকি হাসি দিয়ে রুহির পাশে এসে বসে। রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে অভিদ। রুহি ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে যায়। অভিদ গার্ডদের বলে দেয় নিলয় ছাড়া যাতে আর কেউ ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলে। কেবিনে থাকা সোফায় এসে অভিদ ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন দুপুরের দিকে রুহি, অভিদ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। রুহি বাড়িতে এসে সোফায় বসতেই কৌশিকা রায়জাদা রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। রুহি তাকে দেখে চুপসে গেলো কৌশিকা রায়জাদা রুহির কাছে এসে বকা ঝকা করতে থাকে। রুহি চুপচাপ শুনতে থাকে। কৌশিকা রায়জাদা কিছুক্ষণ বকাবকির পর অভিদকে বলে
” কিরে তুই কিছু বলছিস না কেনো ? এভাবে হেলা ফেলা করলে নিজে ঠিক থাকবে কি করে আর বাচ্চার খেয়াল রাখবে কি করে ?”
অভিদ হাই তুলে বলে
” তুমি আছো না ? এবার সব দায়িত্ব তোমার। যেভাবে পারবে সেভাবে খাওয়াবে নাহলে আমাকে বলবে মেরে খাওয়াবো।”
অনি মিটমিট করে হেসে বলে
” ভাবি ! তুমি বিয়ের পরও এমন করছো ? তোমাকে ভাইয়া সত্যি সত্যি মারবে !”
রুহি মুখ বাকিয়ে ফিসফিস করে বলে
” এহ আসছে ! আমাকে মারবে ? আমি উনার মাথা ফাটিয়ে রেখে দেবো, হুহ !”
অনি ফিকফিক করে হেসে দেয়। অভিদ অনির দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বলে
” এতো হাসি কিসের ? পড়ালেখা নেই ? এখানে বসে আছিস কেনো ?”
অনি মুখ কুঁচকে বলে
” এই দুপুরে কোন পাগলে পড়তে বসে ?”
অভিদ কড়া চোখে তাকিয়ে বলে
” এই দুপুরে বসে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলা যায় আর পড়াশোনা কএয়া যায় না ?”
অনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে
” আমি বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কখন কথা বললাম ?”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” আমি কি তোকে বলেছি ? অন্যদের কথা বলেছি। আচ্ছা আমি রুমে গেলাম রুহির রেস্ট করতে হবে।”
অভিদ রুহিকে নিয়ে উপরে চলে যায়। রুহি ফ্রেশ হয়ে এসে অভিদের ল্যাপটপ ঘাটতে থাকে। অভিদ ফ্রেশ হয়ে এসে রুহির পাশে ধুপ করে শুয়ে পরে। রুহির কোলে নিজের ল্যাপটপ দেখে বলে
” আমার ল্যাপটপ নিয়ে কি করছো ?”
রুহি রাগি গলায় বলে
” আমার যা ইচ্ছে করছি আপনার কি ?”
অভিদ অযথা রুহিকে রাগতে দেখে শান্ত হয়ে বলে
” রাগছো কেনো ? কিছু হয়েছে নাকি ?”
রুহি দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” রাগছি কোথায় ? আমি কি রাগ করতে পারি নাকি ?”
অভিদ উঠে রুহির গা ঘেঁষে বসলো। রুহি পাশে বসে রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে
” কি হয়েছে বাবুই পাখি ? রাগ করছো কেনো ?”
রুহি কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” আপনি বলেছিলেন এইসব ঝামেলা শেষ হলে আমাদের সাথে ফ্যামিলি ট্যুরে যাবেন।”
অভিদ চেহারার বারোটা বাজিয়ে বলে
” আসলে খেয়ালই ছিলো না আমার এসবের কথা। সরি, সরি কিন্তু তোমার মনে পড়লো কিভাবে ?”
রুহি ল্যাপটপ ঘুরিয়ে অভিদের সামনে দেয়। অভিদ কিছুক্ষণ দেখে রুহির দিকে তাকায়। রুহি এখনই কেঁদে দেবে এমন অবস্থা। অভিদের অফিস থেকে ই-মেইল এসেছে কিছুদিন পর একটা ডিল কনফ্রাম এর জন্য তাকে দেশের বাইরে যেতে হবে। অভিদ ল্যাপটপ সরিয়ে রুহিকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে আসে। রুহির ঠোঁট ছুঁয়ে বলে
” সব কিছু বাদ। আগে আমি আমার কথা রাখবো। আমি তোমাদের নিয়ে ট্যুরে যাবো তারপর সব কিছু। আমি ওদের সাথে কথা বলে নেবো।”
রুহি নাক টেনে মাথা নাড়ায়।

আজকে বাড়ির সবাই রুহির বাবার বাড়িতে যাচ্ছে। সবাই তৈরি হয়ে বসে রয়েছে তবে রুহির এখনও কোনো পাত্তা নেই।
উপরে রুহি একটার পর একটা ড্রেস সিলেক্ট করছে আর ছুড়ে ফেলছে। তার কোনো ড্রেসই পছন্দ হচ্ছে না। অভিদও খুঁজে খুঁজে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে। রুহি শেষে কিছু খুঁজে না পেয়ে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। অভিদ বিরক্ত কন্ঠে বলে
” এতো ভালো ভালো ড্রেস থাকতে তোমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না ? আজকে কি যাবে না বলে পন করেছো তুমি ?”
রুহি মন খারাপ করে বলে
” আমি যাবো তো কিন্তু আমার পছন্দের ড্রেস পাচ্ছি না।” রুহির কথা শুনে অভিদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। রুহি হঠাৎ বলে উঠে
” আচ্ছা শাড়ি পড়ি আজকে ? কতোদিন হলো শাড়ি পড়ি না।”
অভিদ চোখ বড় বড় করে বলে
” কি ! শাড়ি কোনো ভাবেই পড়া যাবে না। তুমি তো শাড়ি সামলাতেই পারো না।”
রুহি নাচুরে স্বরে বলে
” না আমি শাড়িই পড়বো। আপনি এখন আমাকে শাড়ি না দিলে আমি যাবো না কোথাও।”
অভিদ রেগে ফুস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। রুহির চোখের আড়ালে গিয়ে কাপবোর্ড থেকে নিজের কাপড়ের আড়াল থেকে একটা শাড়ি বের করে রুহির হাতে দেয়। রুহি শাড়িটা দেখে হা হয়ে যায়। অবাক হয়ে বলে
” এতো সুন্দর শাড়ি ? কিভাবে আসলো আপনার কাছে ? আমি তো কাপবোর্ডে দেখিইনি।”
অভিদ রেগে বল্র
” আমি চুরি করে এনেছি এখন তাই আগে দেখতে পাওনি। এবার কুইক তৈরি হয়ে চলো সবাই বসে আছে।”
রুহি মাথা নেড়ে ওয়াসরুমে ঢুকতে ঢুকতে বিরবির করে বলে
” অভিদ রায়জাদা শাড়ি চুরি করেছে ?” রুহি মিটমিট করে হাসতে হাসতে থাকে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৪৭
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রুহি মাথা নেড়ে ওয়াসরুমে ঢুকতে ঢুকতে বিরবির করে বলে
” অভিদ রায়জাদা শাড়ি চুরি করেছে ?” রুহি মিটমিট করে হাসতে হাসতে থাকে।
রুহি পুরোপুরি ভাবে তৈরি হতেই অভিদ রুহির দিকে মুগ্ধভাবে তাকিয়ে থাকে। অভিদের চাহনি দেখে রুহির লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখে। অভিদ রুহির একদম সামনে এসে দাঁড়ায়। রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে মাতাল গলায় বলে
” অপরূপা লাগছে আমার বাবুই পাখিকে।”
রুহি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে
” এতোক্ষণ তো শাড়িই পড়তে দিচ্ছিলেন না আর এখন এসব বলছেন ?” অভিদ মুচকি হেসে বলে
” অনেক দিন পর শাড়ি পড়া দেখছি তোমায় তাই না বলে থাকতেই পারলাম না।” রুহি মিষ্টি একটা হাসি দিলো। অভিদ রুহির ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। মিররের সামনে দাঁড়িয়ে রুহিকে নিয়ে ছবি তুলতে থাকে। নিচ থেকে কৌশিকা রায়জাদার ডাক শুনতেই দুজন নিচে চলে যায়। রুহিকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। তুষার হা করে তাকিয়ে থেকে বলে
” এই ! তুমি আমার ভাবি তো নাকি চেঞ্জ হয়ে গিয়েছো ? শাড়ির পড়ে এতো সুন্দর হয়ে গেলে কিভাবে ভাবি ?”
রুহি মন খারাপ করে বলে
” আমি কি এমনি দেখতে সুন্দর না ?”
তুষার জিভ কেটে বলে
” এমা ! আমি সেটা কখন বললাম ? আমি তো বলছি শাড়ি পড়ায় আজকে তোমাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।”
মিশু মিটমিট হেসে বলে
” রুহিকে তো সুন্দর লাগছে কিন্তু ভাইয়াকে দেখো সবাই। ভাইয়াও কম সুন্দর লাগছে না। তবে রুহির পরে যাবার ভয়ে ভাইয়া ভয়ে রুহির হাত ধরে রেখেছে।”
সবাই মিটমিট করে হাসতে থাকে। অভিদ গলা ঝেড়ে গম্ভীর গলায় বলে
” এইটুকু খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব। যাই হোক সবাই তাড়াতাড়ি চলো নাহলে দেড়ি হয়ে যাবে তো।”
রায়হান কোমড়ে হাত রেখে বলে
” এখন দেড়ি হয়ে যাবে ? আর এতোক্ষণ যে নিজেরা দেড়ি করেছিস !”
অভিদ আড়চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” দেড়ি করেছি বলেই তো বলছি আর দেড়ি করা যাবে না।” কৌশিকা রায়জাদা বিরক্তির সাথে বলে
” এই তোদের কথা শেষ হয়েছে ? নিলয় তো আমাকে দুইবার ফোন দিয়ে ফেলেছে। তোরা যাবি নাকি আমি একাই চলে যাবো ?” সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে বেড়িয়ে যায়। একে একে তিনটা গাড়ি বেরিয়ে যায় তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
এদিকে আনিল আহমেদ আর আনোয়ার এহসান দুজন পুরো বাজার উঠিয়ে এনেছে বললেই চলে। দুই ভাই সকাল থেকে বাজারই করেছে। রুহির আসার খবর শুনে সবাই খুশি। একেক জনের মনে ঈদের আনন্দ লেগেছে। সানিয়া বেগম আর নয়না বেগমও রান্নার কাজে ব্যস্ত। নিলা একজনের ডাকে একবার এদিক দৌড়াচ্ছে তো আবার অন্যদিকে দৌড়াচ্ছে। নিলয়ও কাজে বিভিন্ন ব্যস্ত।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির বাইরে থেকে গাড়ির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। নিলয়, নিলা, আনিল আহমেদ, আনোয়ার এহসান সবাই ছুটে যায় বাইরে। অভিদরা একে একে সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরে। রুহি নামতেই অভিদ রুহির হাত ধরে চোখ রাঙিয়ে বলে
” এই একদম দৌঁড়ো দৌঁড়ি করবে না।”
রুহি ইনোসেন্ট ফেস করে মাথা নাড়ায়। মিশু, রাইমা দৌঁড়ে বাড়িতে চলে যায়। রুহি গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে তারপর কাকাকে জড়িয়ে ধরে। নিলয় রুহিকে ভেতরে চলে যায়। আনিল আহমেদ আর আনোয়ার এহসান অভিদ দের নিয়ে ভেতরে আসে। সানিয়া বেগম আর নয়না বেগম সবার কাছে আসে। সবাই অভিদ দের আপ্যায়নে লেগে পড়ে। রুহিও মা, বাবার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই আড্ডার আসর বসায় বাগানে। বড়রা এক পাশে আর ছোটরা এক পাশে। সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত তখন তুষার এসে নিলার পাশে বসে। নিলা তুষারকে দেখে আলতো হাসলো। তুষার গলা ঝেড়ে বলে
” কেমন আছেন ?”
নিলা হেসে বলে
” ভালোই আছি আপনি কেমন আছেন ?”
তুষার হেসে বলে
” এই তো ভালোই।” তুষার আর নিলার মাঝে নিরবতা বিরাজ করতে থাকে। নিলা কিছু বলার মতো কথা খুঁজে পায় না আর তুষার কি বলে শুরু করবে সেটা বুঝতে পারছে না। আরো কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তুষার বলে উঠে
” দুই সপ্তাহ পর ইউরোপ চিলে যাচ্ছি আবার।”
নিলা চমকে তুষারের দিকে তাকালো। কিছুটা অবাক হয়ে বলে
” চলে যাবেন মানে ? আপনাদের তো বাংলাদেশেই একেবারে এসে পড়ার কথা ছিলো ! তাহলে আপনি আবার যাচ্ছেন কেনো ?”
তুষার হেসে বলে
” হুম আসবো তবে আমার পড়াশোনা শেষ করেই আসবো। লাস্ট ইয়ার এক্সামের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি এখন ট্রান্সফারের ঝামেলা করে লাভ নেই। তাই একেবারে এক্সাম শেষ করেই সেই দেশ থেকে বিদায় নিয়ে আসবো।”
নিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
” তো চলে গেলে একা থাকতে পারবেন ? আমাদের ভুলে যাবেন না তো ?”
তুষার মাথা নেড়ে বলে
” কোনোদিনই না। সবাইকে মিস করবো। ইউরোপে তো এমন ফ্যামিলির আনন্দ ছিলো না। ছোট বেলা থেকেই একা বড় হয়েছি বন্ধু বলতে অনিই ছিলো। এখানে এসে অনেক কিছুই পেয়েছি। অভি ভাইয়া, রায়হান ভাইয়া, ভাবি, মিশুপি, রাইমা, আপনি সবার সাথেই জড়িয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশ যেমই হোক না কেনো ! বাংলাদেশের মানুষ মানে আপনাদের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।”
নিলা ভ্রু কুঁচকে বলে
” আমাদের প্রেমে ? তা কতোজন মেয়ের প্রেমে পড়েছেন ?”
তুষার থতমত খেয়ে যায় নিলার কথায়। আমতা আমতা করে বলে
” আরে আমি বলতে চেয়েছি যে আপনাদের প্রেমে মানে হলো…আপনাদের মানে ভাইয়ারা, ভাবিরা তারপর আপনি, রাইমা সবাই অনেক ভালো। আপনাদের প্রেমেই পরেছি সেটা বলছি। আমি অন্য কারোর কথা বলতে চাইনি।”
নিলা মাথা নেড়ে বলে
” হুম বুঝলাম। তো আপনি আবার ফিরবেন কবে ?”
তুষার হেসে বলে
” ফিরবো এক্সাম শেষে। চার,পাঁচ মাস পর।” নিলা আর কিছু বললো না। তুষার বলে
” আপনি কি চাকরিই করিবেন নাকি ? বিয়ে টিয়ে করার ইচ্ছে নেই ?” নিলা হেসে বলে
” জীবন সঙ্গী কিরার মতো এখনও মনের মতো কাউকে পাইনি। পেলে অবশ্যই বিয়েতে ইনভাইট করবো আপনাকে।”
তুষার আফসোস স্বরে বলে
” আপনার থেকে বড় হয়েও পড়াশোনা করছি আর আপনি কিনা চাকরিও করে ফেলছেন !”
নিলা শব্দ করে হেসে দেয়। তুষার মুখ বাকিয়ে তাকিয়ে থাকে। নিলা হাসতে হাসতে বলে
” আপনিও তো চাইলে চাকরি করতে পারবেন। ইউরোপ আর বাংলাদেশের পড়াশোনা কি এক নাকি ?” তুষার নিলার সাথে বসে গল্প করতে থাকে। সন্ধ্যা হয়ে আসতেই অভিদরা সবাই বাড়িতে আসার জন্য রওনা দেয়।
বাড়িতে ফিরে অভিদ ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে রুহি ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় শুয়ে পরে। অভিদ রুহিকে দেখে রুহির হাত টেনে ধরে বলে
” রুহি ! উঠো ফ্রেশ হয়ে যতো ইচ্ছে ঘুমাবে।”
রুহি ক্লান্ত স্বরে বলে
” আমি এখন পারবো না। আমার খারাপ লাগছে। আমি পরে ফ্রেশ হয়ে নেবো।”
অভিদ রুহিকে শোয়া থেকে টেনে উঠিয়ে বলে
” নাহ ফ্রেশ হয়ে ঘুমাও তাহলে একটু ভালো লাগবে।”
রুহি রেগে উঠে ধাইধাই করে ওয়াসরুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো। অভিদ ফুস করে নিশ্বাস ফেলে। ল্যাপটপ বের করে কিছু ই-মেইল চেক করতে থাকে। কয়েকটা ই-মেইল চেক করতে করতে হঠাৎ একটা ই-মেইল এর মধ্যে চোখ আটকে যায়। রায়হান পাঠিয়েছিলো সেটা একটা ছেলের ডিটেইলস রয়েছে। অভিদ ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো এটা সেই ছেলের ডিটেইলস যার সাথে অনিকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। অভিদ ঘেটে ঘেটে সব কিছু দেখলো।
আখিল রহমান মা,বাবার একমাত্র ছেলে। বাবা একজন বিজনেসম্যান হলেও আখিল রহমান একজন ডক্টর। দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে নিলয়ের মতোই বাংলাদেশের নামকরা ডক্টর উনি। আখিল রহমানের প্যাশন সিংগার।
অভিদ সব কিছু দেখে ভাবলো অনির সাথে কথা বলা দরকার। অভিদের ভাবনার মাঝেই রুহি বের হয়। রাগের কারণে ধুপধাপ করব ওয়াসরুমে ঢুকলেও এখন রুহির অবস্থা একদমই তেমন নেই। রুহির কানে একটা শব্দ হচ্ছে আর মাথা ঝিমঝিম করে ঘুরাচ্ছে। রুহি মাথায় হাত দিয়ে ধীরেধীরে বিছানার কাছে আসতে থাকে। অভিদ দৌঁড়ে রুহির কাছে গিয়ে রুহিকে ধরে। রুহি অভিদকে পেয়ে সাথে সাথে অভিদের শার্ট খামঁছে ধরে অভিদের বুকে মাথা রাখে। অভিদ অস্থির হয়ে যায় রুহিকে দেখে। কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয় রুহিকে। তবে রুহি অভিদকে না ছেড়ে অভিদের বুকেই শুয়ে থাকে। অভিদও রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ সময় যেতেই দেখলো রুহি ছটফট করছে। অভিদ অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে বেশি খারাপ লাগছে ?”
রুহি অভিদের শার্ট খামছে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” খারাপ লাগছে আমার কিন্তু কেনো বুঝতে পারছি না।”
অভিদ রুহিকে নিয়ে ব্যালকনির দোলনায় এসে বসে। রুহির গায়ে চাদর দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে
” এখনও বেশি খারাপ লাগলে বলবে।”
রুহি অভিদের হাত জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। তবু কোনো কাজ হয় না আরো কিছুক্ষণ ছটফট করতে করতে রুহি ঘুমিয়ে পরে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here