মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৪২+৪৩+৪৪

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৪২
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

তাদের দেখে সোহাদ রায়জাদার চিনতে বেশি সময় লাগলো না। O.R.R. মাফিয়া কিং এসেছে। সোহাদ রায়জাদা দুজনের দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে থেকে নিজের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
অভিদ তার ভারী কন্ঠে বলে উঠে
” কোথায় যাচ্ছেন মিস্টার সোহাদ রায়জাদা ?”
সোহাদ রায়জাদা রেগে কিড়মিড় করতে করতে বলে
” তোর জন্য আজ আমার এই অবস্থা। তোকে আমি দেখে নেবো। আমার প্রত্যেকটা কাজের বাধা তুই।” অভিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” তাই বুঝি ? তা কি কি করবে ?” সোহাদ রায়জাদা দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” কি করবো সেটা নাহয় পরেই দেখতে পাবি ! এখন কথা না বাড়িয়ে আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়া।”
রায়হান ভেতরের দিকে একবার তাকিয়ে হেসে বলে
” কেনো ? আমরা চলে গেলে বুঝি পেয়ে পাচার করতে থাকবি ?”
সোহাদ রায়জাদা হেসে বলে
” ভালোই তো ! আমাদের উপর সব সময় নজর রাখিস নাকি? যেখানে যেই কিছুই হোক না কেনো আমার লোকরা পৌঁছোবার আগেই তোরা পৌঁছে যাস। তা আজকেও কি ওদের বাঁচাতে এসেছিস ? কিন্তু একটা কথা কি জানিস ? আজকে তুই কাউকেই বাঁচাতে পারবি না। আজকে আমার কোনো কাজে বাধা দিতে পারবি না।”
অভিদ হেসে বলে
” তাই ? ওকে দেখি কি কি করিস।”
সোহাদ রায়জাদা কোটের ভেতর থেকে একটা গান বের করে অভিদের কপাল বরাবর তাক করে। অভিদ রুমালের আড়ালে মুচকি হাসি দিলো। অভিদ কোটের ভেতর থেকে কয়েকটা ছোট ছোট চকলেটের প্যাকেট বের করে। সোহাদ রায়জাদা কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে হা হা করে হেসে বলে উঠে
” এইগুলো নিয়ে তুই আমার সাথে মাঠে নামার জন্য এসেছিস?” সোহাদ রায়জাদার গার্ডরাও হাসতে থাকে। অভিদ আর রায়হান একে অপরের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিলো। রায়হান অভিদের হাত থেকে কয়েকটা প্যাকেট নিয়ে নিলো। দুজন বাড়ির দুইপাশে গিয়ে একটা একটা করে প্যাকেট গুলো রেখে দিতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা অভিদের পেছন পেছন আসতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা বুঝতে পারছে না ওরা কি করছে। রায়হান, অভিদ পুরো বাড়ি ঘিরে প্যাকেট গুলো রেখে কাজ শেষ করে নেয়। সোহাদ রায়জাদা হাসতে হাসতে বলে
” কি ছিলো এটা ? মানে তুই কি নিজের হার মেনে মাফিয়া গিরি ছেড়ে চকলেটের ব্যাবসা করার কথা ভাবছিস নাকি ?”
অভিদ হেসে বলে
” কি করবো সেটা তো দেখতেই পাবি। তবে একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়েনে। O.R.R. মাফিয়া কিং এর ডিকশনারিতে ‘হার” শব্দটা নেই। অ…O.R.R. মাফিয়া কখনো হারেনি আর হারবেও না। আজ এখানে যা কিছু হবে সেগুলো সব কিছু মাথায় ঢুকিয়ে রাখবি যাতে মরার আগে নিজের মাথায় সেসব স্মৃতি চরণ করে নিতে পারিস।”
সোহাদ রায়জাদা জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে বলে
” তুই আমাকে মারবি ? তোর ধারণাও নেই আমি আজ পর্যন্ত কি কি করেছি। তোকে মারা এটা তো আমার হাতের ময়লাই বলা চলে।”
রায়হান হাসতে হাসতে বলে
” তা তো হবেই। যে কিছু প্রোপার্টির জন্য নিজের পরিবারের মানুষদের মেরে ফেলতে পারে তার কাছে তো এসব হাতের ময়লাই।”
সোহাদ রায়জাদা বিস্মিত হয়ে তাকালো। অভিদ তাছিল্য স্বরে বলে
” শুধু কি নিজের পরিবারকে মেরেছে ? নিজের স্বার্থের জন্য ভাইয়ের ছেলেদের ব্যাবহার করছে আজও। বোনকে তো চুপ করিয়ে রাখার জন্য ১৬ বছর আগেই তাকে দেশ ছাড়া করিয়েছে।”
সোহাদ রায়জাদা হতবাক গলায় বলে
” এসব কথা তোমরা জানলে কি করে ?”
রায়হান বাকা হেসে বলে
” আমাদের থেকে কিছু লুকিয়ে রাখার সাধ্য তোর নেই। আমাদের ব্যাপারে তোর আকাশ কুসুম ভাবনা পাল্টে ফেল। তোর কি মনে হয় আমারা কি কস্টিউম না পরেই ক্রিকেট খেলায় নেমেছি ? ওই রকম কিছু ভেবে থাকলে সব কিছু ভুলে যা। তোর নাড়ি নক্ষত্র সব কিছুই জানা আমাদের। এবার তোর সব অনৈতিক কাজের কথা সবার সামনে তুলে ধরবো আমরা। আটকাতে পারলে আটকে দেখা।”
সোহাদ রায়জাদা রেগে বলতে থাকে
” হ্যা, আমি আমার পরিবারের মানুষ গুলোকে মেরেছি। আমার মা, বাবা, ভাই, ভাবি, রায়হানের মা, বাবা সবাইকে আমিই মেরেছি। শুধুমাত্র আমার স্বার্থের জন্য আমি এসব করেছি। এতে কার কি? আমার সত্যি কিভাবে সামনে আনিস সেটা আমি ভালো করেই দেখবো। তুই আগে নিজেকে নিয়ে ভাবতে থাক।”
অভিদ হেসে তার পেছনে গার্ডকে ইশারা করতেই সে কয়েকটা ফাইল অভিদের হাতে তুলে দেয়। অভিদ সোহাদ রায়জাদাকে দেখিয়ে বলে
” এগুলো চিনতে পারছিস ? এই গুলোই তোর অফিস থেকে হারিয়েছিলো। এগুলোর মধ্যে দুটো ফাইলে তোর অফিসের অপকর্মের সব Details রয়েছে। তুই তোর প্রোডাক্টসের ভেতরে ড্রাগস সাপ্লাই করতি। অফিস পুড়ে যাওয়ায় এখন অন্যের প্রোডাক্টসের ভেতর ড্রাগস সাপ্লাই করিস কালও সেকরম অনেক কিছু পাওয়া গিয়েছে সেই গোডাউনের ভেতর। এছাড়া তোর নারী পাচারের বিষয়েও সব তথ্য রয়েছে এখানে। মানে হলো এই কয়টা ফাইলে তোর সারাজীবনের অপকর্মের ইনফরমেশন রয়েছে। এগুলো একবার পুলিশের হাতে গেলে তোর কি হবে ভাবতে পারছিস?”
সোহাদ রায়জাদার কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে থাকে। সোহাদ রায়জাদা শক্ত গলায় বলে
” এমন কিছু ভুলেও করবি না। তোকে কিন্তু আমি ছাড়বো না !”
রায়হান ঠাট্টার স্বরে বলে
” ছাড়তে বলেছে কে ? ধরে রাখ ! আমরা কি বাধা দিয়েছি নাকি ?” সোহাদ রায়জাদা রেগে চেঁচিয়ে বলে
” তোরা আমার সাথে মজা করা শুরু করেছিস নাকি ?”
অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” আচ্ছা একটা কথা বল ! তুই অভিদ রায়জাদাকে ছোট থেকে বড় করেছিস কেনো ? আর অভিদ রায়জাদার স্ত্রী রুহি কেও তো তুই মারার চেষ্টা করেছিলি। রুহিকে মারার চেষ্টা করে তোর লাভ কি হলো ? সেই তো মেয়েটা বেঁচেই রয়েছে।”
সোহাদ রায়জাদা রাগে রি রি করতে করতে বলে
” আমার গুনোধর বাবা তার সব সম্পত্তির কিছু অংশ আমাকে দিয়েছিলো। অনয় রায়জাদাকে অফিসের দায়িত্ব দিয়েছিলো আর বাকি সব কিছু অভিদের নামে করে দিয়েছিলো। বাবা একটা উইল করে দিয়েছিলো যেখানে লিখা ছিলো অভিদ প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত, অনয় রায়জাদা চাইলে অন্য কাউকে দিতে পারবে।
ভাইয়া ছোট থেকে আমাকে সব দিয়েছিলো কিন্তু যখন আমি সব কিছু নিজের কাধে নিতে চেয়েছিলাম তখন অফিসের আর অভিদের নামে লিখা সম্পত্তি গুলো অনয় রায়জাদা আমাকে দিচ্ছিলো না তাই তাকে মেরে ফেলেছিলাম আমি। পরে সব কিছু তো অভিদই পাবে তাই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম যাতে অভিদ বড় হলে ওর সব কিছু আমি নিতে পারি। রায়হানের মা, বাবারও তেমন অর্থ সম্পদ ছিলো। ওদের মেরে ফেলেছিলাম তাই ভাবলাম দুজনের সব কিছুই আমি নিয়ে নেবো। কিন্তু দুজন বড় হয়ে বাংলাদেশে এসে নিজেদের ব্যাবসা দিয়ে বসে। ওদের উপর রাগ হয়েছিলো অনেক কিন্তু ওদের সাকসেসফুল দেখে বুঝতে পারলাম আমি অভিদের থেকে আরো বেশি কিছু পেতে পারি। এর মাঝে রুহি চলে আসে। রুহি আসার পর মনে হলো ওদের বাচ্চা হলে অভিদ যদি তার সব কিছু বাচ্চাকে দিয়ে দেয় তাহলে আমার এতো বছরের সব কষ্ট বৃথা হবে।তাই ওকে মারা প্ল্যান করলাম। রুহি মারা গিয়েছে সেটা জানলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসে জানতে পারলাম রুহি বেঁচে রয়েছে। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেলো।”
অভিদ আর রায়হান বড় একটা হাসি দিলো।
অভিদ হাসতে হাসতে বলে
” আমার কাজ শেষ এবার তোকে একটা কথা বলি। একটু আগে যেগুলোকে তুই চকলেট ভেবেছিলি সেগুলো আসলে বোম ছিলো। আমার তৈরি স্পেশাল বোম শুধুমাত্র তোর জন্য তৈরি।” সোহাদ রায়জাদা ভয়ে আতকে উঠে। চেঁচিয়ে বলে উঠে
” কি করেছিস এটা তুই ? আবারও আমার সব কিছু ডুবিয়ে দিতে চাইছিস ?”
অভিদ শব্দ করে হাসলো কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না। সোহাদ রায়জাদা চেঁচিয়ে তার লোকদের উদ্দেশ্য করে বলে
” কু**** এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস তোরা ? ভেতর থেকে সব গুলো মেয়েকে বের কর আর বোম গুলো খুঁজে কর।” সোহাদ রায়জাদার কয়েকটা লোক ছুটে গেলো ভেতরে আর কয়েকজন বোম খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে।
অভিদ হাসতে হাসতে কোত থেকে একটা ছোট রিমোট বের করে বলে
” এই বোমগুলো কোনোদিনও খুঁজে বের করতে পারবি না। এই বাটনে একটা টিপ পড়লেই চলবে এই পুরো এরিয়া সহ তোরা বোম ফেটে মারা যাবি।”
সোগাদ রায়জাদা বুঝতে পারে না কি করবে। দৌড়ে দৌড়ে সব কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করে কিন্তু পাচ্ছে না।
অভিদ তার গাড়ির উপর আধ শোয়া হয়ে বসে থাকে। আর রায়হান ড্রাইভিং সিটে বসে থাকে। ধীরেধীরে সব গুলো মেয়েকে বাইরে নিয়ে আসতে থাকে। সব গুলো মেয়েকে বের করে আনতেই সোহাদ রায়জাদা বলে উঠে
” সবাই এখান থেকে চল নাহলে সব শেষ।”
সোহাদ রায়জাদারা সবাই এক পা বাড়াতেই জঙ্গলের ঝোপের আড়াল থেকে অনেক গুলো মানুষ দৌড়ে বেড়িয়ে আসে। তাদের হাতে ক্যামেরা দেখে সোহাদ রায়জাদা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। অভিদ, রায়হানের মুখে বিশ্বা জয়ের হাসি।
মিডিয়ার মানুষরা নিজেরাই এখনও হতবাকের মতো তাকিয়ে রয়েছে। #মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৪৩
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

ক্যামেরা দেখে সোহাদ রায়জাদা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। অভিদ, রায়হানের মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।
মিডিয়ার মানুষরা নিজেরাই এখনও হতবাকের মতো তাকিয়ে রয়েছে। অনেক পুলিশও এসে দাঁড়ায়। ভয়ে সোহাদ রায়জাদার কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে থাকে। সবার নিস্তব্ধতার মাঝে একজন বলে উঠে
” এটাই তাহলে আপনার আসল রূপ মিস্টার অভিদ রায়জাদা ? আপনাকে এতোদিন সবাই ভালো একজন ব্যবসায়ী বলে জানতো আর সে কিনা এতো বড় বড় একজন অণৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ?”
” ব্যাবসার প্রত্যেকটা মানুষ তাকে ভালো মানুষ বলে জানে শুধুমাত্র আপনার বড় ভাই আর বাবার জন্য। সোহাদ রায়জাদা ! আপনার বড় ভাই অনয় রায়জাদার আর তার বাবার সততায় সবাই মুগ্ধ ছিলো ওদের জন্যেই তো আজ আপনি এখানে দাঁড়িয়ে কিন্তু আপনিই নিজের পরিবারকে খুন করছেন ? আসলেই বিষয়টা অবিশ্বাস্য।”
সোহাদ রায়জাদা ভয়ে কাপঁতে কাপঁতে বলে
” আমি কাউকে খুন করিনি। এই মাফিয়া মিথ্যা কথা বলছে।”
পুলিশদের মাঝ থেকে একজন ক্ষিপ্ত হয়ে বলে
” কে কি বলেছে তা তো আমরা সবাই নিজের চোখের দেখেছি আর ভিডিও ও করে নিয়েছি। আর আপনার পেছনে এতোগুলো মেয়েকে দেখে বোঝা হয়ে গিয়েছে আপনি কি করেছেন আর কি করেন নি। মেয়েগুলোর অবস্থা দেখেও মনে হচ্ছে না আপনি ওদের যত্ন করার জন্য ওদের এখানে এনেছেন। আর এই ফাইল গুলো দেখলেই তো বাকি সব কনফিউজড দূড় হয়ে যাবে।”
সোহাদ রায়জাদা বুঝতে পারছে না কি বলবে আর কি করবে। এই রাতের অন্ধকারেই শত মানুষের ভির জমেছে। পুলিশ অফিসার সোহাদ রায়জাদাকে তার গাড়িতে উঠিয়ে নিলো। একে একে সব গুলো লোক কে উঠিয়ে নেওয়া হয় গাড়িতে। সব গুলো মেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছে।
মিডিয়ার লোকজন সবাই তাদের নিয়ে ব্যস্ত। অভিদ, রায়হান তাদের ব্যস্ততার মাঝেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
রাত বারোটার ব্রেকিং নিউজে দেখানো হচ্ছে। দোহাদ রায়জাদার সব অপকর্মের প্রমাণ দেখানো হচ্ছে টিভিতে। সবার মনের ভেতর এখন তাকে নিয়ে আগুন জ্বলছে। একটা মানুষ এতোগুলো অন্যায় করেছে যার জন্য যারা আগে তার ভক্ত ছিলো তারাই আজ তার উপর থু থু ছিটাচ্ছে। এক ঘন্টার মাঝে সব কিছু বদলে গেলো। সোহাদ রায়জাদা নিজেও পাথরের ন্যায় বসে আছে। এভাবে মাত্র কয়েক ঘন্টায় সব কিছু বদলে যাবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি।
রুহির মা, বাবারাও হঠাৎ এসব দেখে অবাক। এভাবে সবার সামনে সব সত্যি এসে পড়বে সেটা ওরাও জানতো না। কৌশিকা রায়জাদা, রুহিরা সবাই বাসায় বসেই সব কিছু দেখে যাচ্ছে। রুহি সব কিছু জেনে আবার অভিদের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে গিয়েছে।
হাজারো মানুষের ক্ষোভের মাঝে রাতটা পেড়িয়ে গেলো। সকাল হতেই থানার সামনে অসংখ্য মানুষের ভির জমেছে। কোথাও এক পা রাখার
জায়গা নেই। পুলিশরা সোহাদ রায়জাদা আর তার সাঙ্গপাঙ্গ দের নিয়ে বের হতেই কেউ কেউ পচা ডিম বা ইট ছুড়ে মারতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা নিজেকে বাচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু জনগণের হাত থেকে বাঁচার মতো অবস্থা নেই এখানে। সোহাদ রায়জাদার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।
সোহাদ রায়জাদার এমন অবস্থা দেখে অভিদ, রায়হানের মনের একটু একটু করে প্রতিশোধের আগুন নিভছে। এই প্রতিশোধের আগুন নিয়েই এতো বছর ধরে পথ চলা শুরু করেছিলো। সেই সব প্রতিশোধের খেলা আজ শেষ করবে। অভিদ বাকা হেসে বলে
” বাকি সব কিছু তৈরি না ?”
রায়হান বড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” সব তৈরি এবার শুধু আমাদের একটা ফোনের অপেক্ষা।” অভিদ দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে।
সোহাদ রায়জাদাকে নিয়ে আজই কোর্টে যাওয়া হয়েছিলো। বিকেল হতেই আবারও নিউজে দেখা যায়। সোহাদ রায়জাদার সব অন্যায় আর সব কর্মকাণ্ডের হিসেব করে তাকে কয়েক দিনের কারাদণ্ড সহ ফাসির রায় দেওয়া হয়েছে। একদিনের মাঝে এতো বড় সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক। এমনও হাজারো মানুষ রয়েছে যেগুলোর এখনও পর্যন্ত কোনো বিচার করা হয়নি সেখানে একদিনের মাঝে সোহাদ রায়জাদার উপর কোর্টের সুপারিশে সবাই অবাক। সোহাদ রায়জাদা নিজেও অবাক। তবে ধীরেধীরে নিউজে দেখা যায় সোহাদ রায়জাদার অন্যায়ের ভার বেশি থাকায় এবং সব প্রমাণ থাকায় তারা কেউ কোনো সময় নেয়নি। এছাড়া সোহাদ রায়জাদাও সব কিছু স্বিকার করে নিয়েছেন তাই তারা সব কিছু কম সময়ে করে নিয়েছেন।

মাথায় তীব্র ব্যাথা নিয়ে ধীরেধীরে চোখ খুলে তাকায় সোহাদ রায়জাদা। চোখের সামনের সব ঝাপসা ঝাপসা দেখে বারবার চোখ বন্ধ করে নেয়। সব কিছু স্পষ্ট হতেই সোহাদ রায়জাদা বোঝার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে। নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে। বড় একটা রুমে চেয়ারে শক্ত বাধনে বাধা অবস্থায় রয়েছে সোহাদ রায়জাদা। সোহাদ রায়জাদার মাথার উপর একটা লাল বাল্ব জ্বলছে যেটার কোনো আলো নেই বললেই চলে। রুমে দুইটা টেবিল আর কিছু চেয়ার, দড়ি এসবই পরে রয়েছে।”
সোহাদ রায়জাদা চেঁচিয়ে বলে উঠে
” কেউ আছে এখানে ? আমি এখানে কি করে এসেছি ? কেউ কি আছে ?”
সোহাদ রায়জাদার চিৎকারের মাঝেই দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো তিনি। সোহাদ রায়জাদা তার গলা ফাটানো চিৎকার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে কে এসেছে দেখার জন্য। অন্ধকার রুমে দুই জোড়া জুতোর শব্দ শুনতে পেলো। সোহাদ রায়জাদার এক হাত দূরত্বে কোট পড়া দুই ব্যাক্তিগন এসে দাঁড়ায়। হালকা লাল বাল্বের আলোয় দুজনকে চিনতে পাড়ল সোহাদ রায়জাদা। সোহাদ রায়জাদা কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে কান্না করতে থাকে। অভিদ আর রায়হানের মুখে তাদের বিশ্ব জয়ের হাসিটা এখনও বিরাজমান। সোহাদ রায়জাদা কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে
” আজকে আমি স্বিকার করেছি আমি হেরে গিয়েছি। আমাকে এভাবে শেষ করে দিতে নাও পারতে। কেনো এমন করলে ? দুইদিন পর তো আমার ফাসিই তাহলে আবার এখানে কেনো এনেছো ?”
অভিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” আসল খেলাই তো এখনও বাকি। আমাদের পরিচয় না জেনেই হার মেনে নিলে ? আর ভাবলে কি করে তোকে আমরা অন্যের হাতে মারতে দেবো? তোকে আমরা নিজের হাতে শাস্তি জন্য এতো বছরের এতো পরিশ্রম করলাম আর আজ সব কিছু করেও যদি ছেড়ে দেই তাহলে কি হবে ?”
সোহাদ রায়জাদা কাঁদতে কাঁদতে বলে
” চাই না আর কিছু আমার। তোমাদের পরিচয়ও জানতে চাই না। দয়া করে ছেড়ে দাও আমাকে।”
রায়হান তার হাত থেকে গান টা পাশে টেবিলে রাখে। সোহাদ রায়জাদা না চাইতেও মাথা তুলে তাদের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। রায়হান তার মুখে রুমাল মাক্সটা খুলে ফেলে। সোহাদ রায়জাদার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অভিদও এক টানে তার মুখের উপর থেকে রুমালটা সরিয়ে ফেলে। অভিদ, রায়হান দুজনকে দেখে সোহাদ রায়জাদার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। অভিদ মুচকি হেসে বলে
” কেমন লাগছে আমাদের দেখে ? O.R.R. মাফিয়া কিং এর পরিচয় জানতে চেয়েছিলে না ? আজকে আমরা নিজেরাই নিজেদের পরিচয় দিয়ে দিলাম।”
সোহাদ রায়জাদার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না তিনি একদম ফ্রিজ হয়ে রয়েছে। অভিদ হেসে হলে
” আজকে আমি অনেক খুশি কেনো জানো ? আজকে আমি আমার পরিবারের খুশিকে শাস্তি দেবো। তাকে আর চাচ্চু বলে সম্মোধন করতে হবে না। মিথ্যা নাটক করে তার ভক্ত সাজতে হবে না। আর এই সব পরিচয় দিয়ে তোর সামনে আসতে হবে না। এবার আমি আমার আসল পরিচয় নিয়েই সবার সামনে আসবো।”
সোহাদ রায়জাদা হেসে উঠে। হাসতে হাসতে বলে
” অভিদ, রায়হান ! মজা করছো তোমরা তাই না ? তোমরা এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ছাড়িয়ে আনবে আমি ভাবিনি। অভিদ, রায়হান দেখো মিডিয়াদের কথা বিশ্বাস করো না প্লিজ ! তোমাদের তো জানা আছেই ওরা কতো মিথ্যা কথা রটায়। O.R.R. মাফিয়া কিং আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই খেলা খেলেছে। তুমি প্লিজ একদম এসবে কান দিও না।”
অভিদ আর রায়হান হাসতে থাকে। রায়হান হাসতে হাসতে বলে
” রিয়েলি ? তোর এখনও এসব মিথ্যা মনে হচ্ছে ? এতো গুলো সত্যি জেনেও এতো বছর ধরে তোকে সম্মান করেছি যদিও সেসব নাটক ছিলো কিন্তু করতে তো হয়েছে যার কারণে মাঝে মাঝে নিজের প্রতি ঘৃণা অনুভব হয়। তোর জন্য আমরা আমাদের মা, বাবাকে হারিয়েছি, তোর জন্য অনি, ফুপিদের থেকে দূড়ে ছিলাম আমরা। তোর জন্য রুহির এতো বড় এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। তোর জন্য আমি আমার মা, বাবার ভালোবাসা পেলাম না। আজ যা কিছু হচ্ছে সব কিছু তোর কর্মের ফলই। তোর শাস্তিয়াও তোর কর্মের ফল। তোকে আমরা ছাড়িয়ে এনেছি ঠিকই তবে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুনিকে পালার জন্য জন্য নয় তোকে আমরা নিজের হাতে মারবো বলে।”
সোহাদ রায়জাদা বিস্ময়ের স্বরে বলে
” মানে ? তোমরা কি আগে থেকে সব কিছু জানতে ?”
অভিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” আগে থেকে নয় ১১ বছর বয়স থেকে সব জানি। আরো একটা সত্যি জানিস ? তোর কুকর্মের সাথী, প্রাণের বন্ধু রেদোয়ান আহমেদকে আমিই মেরেছি। কিভাবে মেরেছি সেটার ভিডিও পর্যন্ত করে রেখেছিলাম তোকে দেখাবো বলে। বাংলাদেশে এসে মাফিয়া পথে যোগ হয়েছিলাম তোকে শাস্তি দেবো বলে। O.R.R. মাফিয়া কিং আমি। তোর সব কাজের বাধা আমিই ছিলাম। জানিস আমি মাঝে মাঝে ভাবি তোকে চালাক বলবো নাকি বোকা বলবো। তুই যদি চালাক হতি তাহলে আজও আমাকে খুঁজে বের পারলি না কেনো ? তুই আমাকে এতোই বোকা ভাবতি যে আজকের আমি যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, এই জায়গায় আমাকে দেখা মানেই তোর দুঃস্বপ্নেরও বাইরে ছিলো।”
সোজাদ রায়জাদার সামনে একজন বডিগার্ড এসে দাঁড়ায়। সোহাদ রায়জাদা তার দিকে তাকাতেই গার্ড ফোন থেকে ভিডিও অন করে। সোহাদ রায়জাদা, অভিদ যেভাবে রেদোয়ান আহমেদকে মেরেছে সেটার অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে অভিদের দিকে তাকায়। সোহাদ রায়জাদা অভিদকে নিয়ে যা ভাবতো অভিদ আজ সেই ভাবনার ধারে কাছেও নেই।#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৪৪
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

সোহাদ রায়জাদা অভিদকে নিয়ে যা ভাবতো অভিদ আজ সেই ভাবনার ধারে কাছেও নেই।
অভিদ সোহাদ রায়জাদার দিকে তেড়ে যায়। চেয়ার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” আজকে এতো বছরের সব প্রতিশোধ নেবো আমি। আর তুই শুধু চিৎকার করবি।”
সোহাদ রায়জাদা ভয়ে কাপঁতে কাপঁতে বলে
” অভিদ ! বাবা তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না। তোমাকে আর রায়হানকে আমি ছোট থেকে বড় করেছি, পড়ালেখা করিয়েছি। তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারবে ?”
অভিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” তুই বড় করেছিস ? তুই নিজের স্বার্থে কি কি করেছিস সেটা আমরা সবাই ভালো করে জানি।”
অভিদ চেঁচিয়ে তার গার্ডদের ডাকে। তারা সবাই দৌড়ে ভেতরে আসে। অভিদ বাক্ব হাসি দিয়ে বলে
” স্পেশাল গেস্ট কে নিয়ে যা ওই রুমে।”
গার্ডরা সোহাদ রায়জাদাকে বেধে রাখা শিকল খুলে তাকে নিয়ে যেতে থাকে সেখানে আর সোহাদ রায়জাদা যাবে না বলে চিৎকার করতে থাকে।
রায়হান অভিদকে বলে
” সত্যিই কি এবার O.R.R. মাফিয়ার কিং এর পরিচয় দিবি সবাইকে ?”
অভিদ পলক ফেলে বলে
” হ্যা। সোহাদ রায়জাদার জন্যই তো এতোদিন আসল পরিচয় দেইনি। এখন তো আর কোনো কারণ নেই। এবার যা করার সব সামনা সামনি আর সবার সামনে করবো।”
রায়হান মুচকি হাসলো। অভিদ আর রায়হান সোহাদ রায়জাদাকে রাখা রুমে চলে গেলো। সোহাদ রায়জাদাকে চার ফুট উপরে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা রয়েছে। তার নিচে এক পাশে ফুটন্ত গরম পানি ফুটছে অন্যপাশে আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। সোহাদ রায়জাদা কাঁদতে কাঁদতে আকুতি স্বরে বলে
” অভিদ ! প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে। বাকিটা জীবন তোমার চাকর হয়ে কাটিয়ে দেবো তবু আমার সাথে এমন করো না প্লিজ! আমি আমার সব ভুল বুঝতে পেরেছি। আমাকে ক্ষমা করতে না পারো তবে এই শাস্তি গুলো দিও না।”
অভিদ হেসে টেবিলের পাশে তাকালো। গার্ডরা একে একে ছুড়ি, গান, তীর প্রায় সব রকমের অস্ত্রই নিয়ে আসছে। সোহাদ রায়জাদার চিৎকার কারো কানে যাচ্ছে না। অভিদ রায়হানকে ইশারায় সামনে আসতে বলে। রায়হান আসতেই অভিদ বলে
” তোর হিসাব দেওয়া শুরু কর। আমি শেষ করবো।”
রায়হান টেবিল থেকে একটা ছুরি হাতে তুলে নেয়। সোহাদ রায়জাদার বাহু বরাবর তাক করে শান্ত গলায় বলে উঠে
” এটা আমার মাকে মারার জন্য। তোর জন্য ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি। মায়ের ভালোবাসা উপলদ্ধি করতে পারিনি। মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে পারিনি। ব্যাথা পেলে কখনো আমার মার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারিনি।”
রায়হান কথা শেষ করেই ছুরিটা ছুড়ে মারে। সোহাদ রায়জাদার বাহুর ছেদ করে ঢুকে পরে। সোহাদ রায়জাদা জোড়ে চেঁচিয়ে উঠে ব্যাথায়।
রায়হান আরো একটা ছুরি হাতে নেয়।
” এটা আমার বাবাকে মারা জন্য। বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে পারিনি। বড় হয়ে বাবার শাসন, বকা, ভালোবাসা কোনো কিছু অনুভব করতে পারিনি শুধুমাত্র তোর জন্য।”
রায়হান এবার একটা বিশ যুক্ত তীর হাতে তুলে নেয় বলে
” এটা সব কিছুর জন্য। আমার বন্ধুর পরিবার শেষ করেছিস। আমার পরিবারকেও শেষ করেছিস। আমাদের অজান্তে গিয়ে সব কিছু কেড়ে নিতে চেয়েছিস।”
রায়হান তার শেষ তীর ছুড়ে দেয়। সোহাদ রায়জাদা চিৎকার আর কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না।
অভিদ এবার ছুরি হাতে নেয়। ছুরি ঘোরাতে ঘোরাতে বলে
” আমার পরিবারকে দূড় করেছিস। আমার ছোট কলিজাকে আমার কাছ থেকে দূড়ে রেখেছিলি এতো বছর। অনিকে পাওয়ার জন্য কতো ছটফট করেছি চোখ ফিরিয়েও কোনোদিন দেখিসনি। আকাশেত দিকে তাকিয়ে কেঁদেছি মা, বাবা, বোনের জন্য। একমাত্র রায়হানকে ছাড়া আর কাউকে কাছে পাইনি, ফুপিকেও পাইনি। বাংলাদেশে আসার পর থেকে পাগলের মতো এই থেকে ওই দেশে খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। শেষ পর্যন্ত যখন পেলাম তখন সবার আগে ফুপির ভীতু চেহারাটা দেখেছিলাম। তার একটাই ভয় ছিলো পরিবারের কারোর না কোনো ক্ষতি হয়ে যায় ! মত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস। কতো ছেলে, মেয়ে সহ মানুষদের ড্রাগস দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছিস। তারপর ! শেষে কিনা আমার রুহিকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিস ! সত্যি কথা কি জানিস ! সেই ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুটা বিস্ময়ের ব্যাপার ছিলো। আবারও এই সম্পত্তির জন্য আমার রুহি আর আমার সন্তানকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলি। ভাগ্যক্রমে তারা আজ বেঁচে আছে। সব তো আমার ছোট বেলায়ই করে ফেলেছিস। আমাকে সব কিছুর থেকে আলাদা করেছিলি। কিন্তু রুহির সাথে এতো কিছু না করে আমাকে বললে আমি নিজেই সব কিছু দিয়ে দিতাম। এতো কিছু করার দরকার ছিলো না।
যাই হোক এবার তোর শাস্তি তো তুই পাবিই।”
অভিদ তার হাতে ছুরিটা সোহাদ রায়জাদার পায়ে ছুড়ে দেয়। সোহাদ রায়জাদা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকে। অভিদ বিষাক্ত তীর ছুড়ে দেয় সোহাদ রায়জাদার পেটে। গার্ডকে আরেকবার ডাকতেই গার্ড একটা রড দিয়ে আসে। মনে হচ্ছে মাত্রই লাল আভা দিয়ে তৈরি হচ্ছিলো সেখান থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। নিচের দিকে কাপড়ে পেচিয়ে ধরে নিয়ে আসে। অভিদ সেটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে সোহাদ রায়জাদার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা চেঁচিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” অভিদ ছেড়ে দাও দয়া করে ! আমাকে সারাজীবন একটা অন্ধকার ঘরে বন্ধি করে রাখিস তাও আমাকে ছেড়ে দে।”
অভিদের কানে কোনো কথাই ঢুকলো না। হাতে থাকা গরম রড সোহাদ রায়জাদার শরীরে চেপে ধরে। সোহাদ রায়জাদার গগন ফাটানো চিৎকারে সবাই কানে তুলো গুঁজে নেয়। কারোর উনার আর্তনাদ শোনার ইচ্ছে নেই। অভিদ কিছুক্ষণ পর সেটা সরিয়ে হাতে গ্লাভস পড়ে মরিচ হাতে নেয়। সোহাদ রায়জাদার আঘাতের স্থান গুলোতে মরিচ ডলে দিতে থাকে। সোহাদ রায়জাদা কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে যায়। অভিদ নিজেও ক্লান্ত হয়ে যায়। অভিদ রেগে সোহাদ রায়জাদাকে ঝুলিয়ে রাখা দড়িটা কেটে দিলো। সোহাদ রায়জাদা ফুটন্ত পানিতে পরে যায়। সোহাদ রায়জাদা গলা দিয়ে কোনো শব্দ করতে পারে না। মুখ দিয়ে শুধু গোঙ্গানির শব্দ হতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে সব কিছু চুপচাপ হয়ে গেলো। নিশ্বাস ফেলার শব্দটাও শোনা গেলো না। সোহাদ রায়জাদাকে দেখার মতো অবস্থা নেই। অভিদ, রায়হান বেড়িয়ে পরে সেখান থেকে।
সেখানের গার্ড দের সাথে সভ কথা বলে অভিদ, রায়হান গাড়িতে উঠে বসে। রায়হান দেখলো অভিদের চোখে পানি টলমল করছে। রায়হান অভিদের কাধে হাত রেখে বলে
” তুই কাঁদছিস ?”
অভিদ শব্দ করে হেসে বলে উঠে
” আজ অনেক খুশি আমি। আমার পরিবার আর তোর পরিবারের খুনিকে মারতে পেরে খুব খুশি লাগছে আমার।”
রায়হান, অভিদ বড় একটা শ্বাস নিয়ে বিশ্ব জ্বয়ের হাসি হাসলো।
সন্ধ্যার দিকে আবারও টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখা যায়। রুহি অসুস্থ শরীর নিয়ে টিভির সামনে বসে রয়েছে।
” এতো বছর পর O.R.R. মাফিয়া কিং এর পরিচয় প্রকাশ পেলো। অভিদ রায়জাদা, রায়হানই আসল O.R.R. মাফিয়া কিং। সোহাদ রায়জাদার সব সত্যি বের করার জন্যই এতো বছর নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলো। আজ সোহাদ রায়জাদাকে প্রাপ্য শাস্তি দিয়েই সবার সামনে নিজের পরিচয় প্রকাশে এনেছে। সোহাদ রায়জাদার সত্য প্রকাশের সব কিছুর মুলেই ছিলো অভিদ রায়জাদা এবং রায়হান অরফে O.R.R. মাফিয়া কিং।”
রুহি চোখ বন্ধ করে বড় একটা শ্বাস নিলো।
” বাবুই পাখি !” অভিদের গলা শুনে রুহি চমকে দরজার দিকে তাকায়। অভিদ আর রায়হানকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
অভিদকে দেখে রুহি দৌঁড়ে অভিদের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। অভিদ পিছিয়ে পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। রায়হান মুচকি হাসে দুজনকে দেখে। রুহি ঢুকড়ে কাঁদতে থাকে। অভিদ অবাক হয়ে বলে
” কি হয়েছে কাঁদছো কেনো তুমি ?”
রুহি কথা না বলে কাঁদতেই থাকে। অভিদ রুহিকে শান্তনা দিয়ে বলে
” পাগলি দেখো আমার কিছু হয়নি।”
রুহি কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। রুহি শরীরের ভর ছেড়ে দিতেই অভিদ রুহিকে ধরে নেয়। রায়হান অবাক হয়ে বলে
” কি হয়েছে রুহির?”
অভিদ অস্থির হয়ে বলে
” বুঝতে পারছি না। রুহি ! এই রুহি !” রায়হান চেঁচিয়ে মিশু আর অনিকে ডাকতেই তারা দৌঁড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। অভিদ রায়হানকে দেখে অবাক হলেও রুহিকে খেয়াল করে আগে। অভিদ রুহিকে নিয়ে সোফায় শুয়ে দেয়।
অনি এগিয়ে এসে বলে
” ভাইয়া রুহি কালকে থেকেই অনেক অসুস্থ।”
অভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে
” অসুস্থ মানে কি হয়েছে ? ডক্টর ডাকা হয়নি ?”
মিশু মিনমিন স্বরে বলে
” ডক্টর ডাকা হয়েছে তবে রুহি টিভির নিউজ দেখে তার উপর আপনাকে নিয়ে চিন্তা করে করে খাওয়া দাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে।”

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here