মাফিয়া ক্রাশ বর ২ পর্ব -৫৬+৫৭+৫৮

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫৬
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

আখিলের কথায় অনি আরো রেগে আগুন হয়ে গেলো। অনি রেগে বলে
” কি বললেন আপনি ? আমার শিরায় শিরায় রাগ ? তাহলে আজকে থেকে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার সাথে ব্রেকাপ আমার !”
আখিল এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে বলে
” ব্রেকাপ বললেই বুঝি সব শেষ হয়ে যায় ? তোমার কি মনে হয়? তুমি বললেই আমি এখান থেকে চলে যাবো ?” অনি দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” হ্যা চলে যাবেন। দরকার নেই আপনাকে আমার !” আখিল এক পা দুই এগিয়ে আসতে আসতে গম্ভীর গলায় বলে
” কি বললে তুমি ? আবার বলো তো !” অনি রেগে বলে
” একবার কেনো হাজারবার বলবো। দরকার নেই আপনাকে।” আখিল অনির হাত চেপে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে গম্ভীর গলায় বলে
” তোমার আমাকে প্রয়োজন না হলেও তুমি আমার প্রিয় আর প্রয়োজন দুটোই ! আমাকে ছেড়ে এক পা এগিয়ে দেখলে পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেবো। তোমার কি মনে হয় আমার রাগ নেই?” অনি ঢোক গিলে বলে
” আমি কি বলেছি নাকি যে আপনার রাগ নেই ! খুব খারাপ তো আপনি ! আমার বাড়িতে এসেই আমার উপর অধিকার খাটানো শুরু করে দিয়েছেন ! ভাইয়া আমার নিষ্পাপ ভাবিকে বকে আর আপনিও এখন থেকেই আমাকে বকা শুরু করে দিয়েছেন !”
আখিল ঠোঁট বাকি হেসে বলে
” কারণ আমরা আমাদের প্রিয় মানুষটাকে বেশি ভালোবাসি।” অনি ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়। আখিল অনির দিকে চোখ বুলিয়ে প্রশংসার সঙ্গে বলে
” আজকে কিন্তু তোমাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে ! ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই। না জানি বিয়ের দিন কি হবে !”
অনি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। আখিল অনিকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে
” খুব তাড়াতাড়িই কিন্তু এই বাড়ির একমাত্র রাজকুমারীকে আমার রাণী করে নিয়ে যাচ্ছি !”
অনি মুচকি হেসে বলে
” এতো খু্শি হবেন না মিস্টার ! আমাকে ভাইয়ারা এখনই বিয়ে দিচ্ছে না। জাস্ট engagements করিয়ে রাখবে আর আমি বড় হলে আমার বিয়ে দেবে !”
আখিল হেসে বলে
” তোমার কি মনে হয় ? আমি এখনের কথা বলছি ? আমি জানি তোমার ভাইয়া তোমাকে কখন আমার হাতে তুলে দেবে। ধরো আর মাত্র দেড় দুই বছর ! বেশি হলে তিন বছরই হবে সেটা তো তোমার আমার প্রেমেই মাঝেই কাটিয়ে দেবো তারপর বিয়ে করবো।” অনি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে
” নিচে চলুন !” আখিল মাথা নেড়ে অনির সাথে যেতে থাকে।
নিচে আসতেই সবার দৃষ্টি অনুসরণ দুজনের দিকে হয়। অনি রুহির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর আখিলও অনির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। আনোয়ার রহমান হেসে আখিল আর অনিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আমাদের কথা শেষ তোমরা আমাদের পাশে এসে বসো।” আখিল গিয়ে মার পাশে বসে পরে আর অনি আখিল আর রায়হানের মাঝে মাথা নিচু করে বসে থাকে। লিমা রহমান হেসে বলে
” তাহলে অভিদ তোমরা ডেট ঠিক করে আমাদের জানিয়ে দিও। আমাদের তো আবার সব কিছু ব্যবস্থা করতে হবে !”
অভিদ আলতো হেসে বলে
” আসলে আন্টি আমার ফুঁপি নেই এখন তো ফুঁপির সাথে কথা বলেই আমি ডেট বলে দেবো।”
লিমা রহমান আর আনোয়ার রহমান মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। দুই পরিবার মিলে গল্পগুজবে মেতে উঠে। কথার মাঝে অনি আর আখিল জানতে পারে তাদের বিয়ে দুই বছর পর হবে এখন engagement দিয়েই আত্মিয়তা শুরু করছে তারা।
বিকেলে শেষ হয়ে আসবে তখন আখিলের পরিবার চলে যায়। সবাই যার যার রুমে চলে যায়।
রুহি ফ্রেশ হয়ে বের হলে অভিদ ওয়াসরুমে ঢুকে যায়। রুহি নিলাকে ভিডিও কল দিয়ে তার সাথে কথা বলতে থাকে। রুহিকে দেখে নিলাও বুঝতে পারে রুহির মন খারাপ। নিলা কথার মাঝে জিজ্ঞেস করে
” রুহি মন খারাপ কেনো তোর ?” রুহি মন মরা হয়ে বলে
” অভিদ আমাকে একটুও ভালোবাসে না। শুধু বকাঝকা করে। আমি তোমার কাছে চলে আসবো।”
নিলা ভ্রু কুঁচকে বলে
” তোর কেনো মনে হলো তোকে ভালোবাসে না ?”
রুহি কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” একটুও ভালোবাসে না। চট্টগ্রাম থেকে আসার পর থেকে উনি একদিন ভালো করে কথা বলেনি আমার সাথে। রাতে শুধু এসে খেয়েছি কিনা, শরীর কেমন আছে জিজ্ঞেস করে। ফোন দিলেও গম্ভীর ভাবে কথা বলে।”
নিলা নিশ্বাস ফেলে বলে
” এই ছোট একটা কারণে মন খারাপ করতে হয় ? আর চট্টগ্রাম থেকে এসেছিই তো মাত্র চারদিন হলো ! এরমধ্যেই অভিদ কে নিয়ে তোর এতোবড় অভিযোগ ? হতেও তো পারে অভিদের কাজের প্রেশার চলছে ! তার উপর মাফিয়া বলে কথা তেমন কিছু হলে সব সময় মাথা গরম হয়েই থাকবে ! তুই শুধু শুধু রাগ করছিস ! অভিদের সাথে কথা বল দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”
রুহি আলতো মাথা নেড়ে হ্যা বলে। দুজন আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয়। রুহি ল্যাপটপ অফ করে পাশে রেখে বেডে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।
অভিদ ওয়াসরুম থেকে বের হতেই তার চোখ রুহির দিকে যায়। অভিদ আলতো হেসে হাতের টাওয়াল রেখে গিয়ে সোজা রুহির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। রুহি চমকে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে রুহির পেটে মুখ গুঁজে দিয়ে চুমু দেয়। রুহির সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে অভিদের ঠোঁটের স্পর্শে। রুহি অভিদের চুলে হাত রেখে চিন্তিত স্বরে বলে
” আপনার চুল তো ভেজা ! হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিন নাহলে ঠান্ডা লাগতে পারে।”
অভিদ দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বলে
” থাকুক মাথাটা একটু ঠান্ডা হচ্ছে। সরি বাবুই পাখি এখানে এসে আর তোমাকে সময়ই দিতে পারিনি ভালো করে ! অফিসে একটা ডিল নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম আরো একটা ঝামেলা ছিলো।”
রুহি ভ্রু কুঁচকে বলে
“কি ঝামেলা ?” অভিদ রুহির হাতটা নিজের মাথায় রাখে। রুহি অভিদের মাথা টিপে দিতে থাকে। অভিদ শান্ত গলায় বলে উঠে
” আমার দাদার তৈরি বাড়িটা ভেঙ্গে সোহাদ রায়জাদা বিল্ডিং তৈরি করে সব ফ্ল্যাট বিক্রি করেছিলো। আমি চেয়েছিলাম সেই জায়গাটা ফেরত পাওয়ার জন্য। দাদা,দাদি, মা, বাবা, আংকেল, আন্টি সবার কবর সেখানেই। তো জায়গাটা ফেরত পাওয়ার জন্য অনেক কিছু করতে হলো।”
রুহি অবাক হয়ে বলে
” কিন্তু এসব করলে তো যারা নিজেদের ফ্ল্যাট কিনে ছিলো তারা কোথায় যাবে ? তারা কি এতো সহজে মানবে এসব?”
অভিদ বড় একটা প্রাপ্তির হাসি দিয়ে বলে
” পেয়ে গিয়েছি সেটা বাবুই পাখি। ঝামেলা তো হয়েই ছিলো। ওরা কেউই মানতে রাজি ছিলো না কিন্তু আমার আর রায়হানের অনেক অনুরোধে রাজি হয়। যারা সেই বিল্ডিং এ ছিলো তাদের আমার একটা বিল্ডিং থেকে একটা করে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। সবাই সবার পছন্দ অনুযায়ী ফ্ল্যাট বেছে নিয়েছে। এখন সবাই তাদের ফ্ল্যাটে শিফট হওয়ার অপেক্ষা। তবে হাস্যকর কথা কি জানো ? আমি এবার একদম সাধারণ মানুষ হিসেবে গিয়েছিলাম আর ওদের কোনো ভয় দেখাইনি কিন্তু ওদের দেখে বুঝতে পেরেছিলাম ওরা এমনিই আমাকে ভয় পায়। কিছুটা ভয়ে আর আমাদের অনুরোধেই রাজি হয়েছিলো আমাদের শর্তে।”
রুহি মিটমিট করে হাসলো তারপর বলে
” কিন্তু সেই জায়গা দিয়ে এখন কি করবেন ? এখন কি আর কিছু করতে পারবেন ? বিল্ডিং তো পড়েই থাকবে শুধু শুধু খালি করিয়েছেন!”
অভিদ হেসে বলে
” শুধু শুধু খালি করাইনি বাবুই পাখি ! সোহাদ রায়জাদার অসৎপথের টাকায় সেই বিল্ডিং তৈরি হয়েছিলো তাই আমি আর সেটা রাখতে চাই না। সেই ব্লিডিং সরিয়ে আমি সেখানে বড় করে একটা অনাথাশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করবো। আমার দাদার পরিশ্রমের টাকায় তৈরি ছিলো সেই বাড়ি সেটাই যদি না থাকে তাহলে সোহাদ রায়জাদার কিছু থাকার অধিকার নেই। সেই জায়গা ব্যবহার হলে এই কাজেই ব্যবহার হবে নাহলে হবে না।”
রুহি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে অভিদের ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে থাকে। অভিদ হঠাৎ উঠে বসে রুহির দুই কাধে ভর ছেড়ে হাত রাখে। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে অভিদ উত্তর না দিয়ে রুহির মাথার পেছনে হাত রেখে রুহির মাথা এগিয়ে দুই ওষ্ঠজোড়া এক করে দেয়। রুহি অভিদের সঙ্গে তাল মিলাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর অভিদ রুহিকে ছেড়ে রুহির গালে আর ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে থাকে। অভিদ এবার বেডে হেলান দিয়ে বসে আর রুহি অভিদের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে। অভিদ ফিসফিসানো স্বরে বলে উঠে
” ভালোবাসি বাবুই পাখি !”
রুহি চমকে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ মুচকি হেসে তাকিয়ে রয়েছে। রুহি মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে
” আমাকেই শুধু ভালোবাসেন ? আর কাউকে বাসেন না ?”
অভিদ শব্দ করে হেসে উঠে। রুহির পেটে আলতো ভাবে হাত রেখে বলে
” আমি আমার বাবুই পাখি আর আমার অনাগত ছোট বাবুই পাখিকে ভালোবাসি।”
রুহি হেসে বলে
” আমিও ভালোবাসি আপনাকে মিস্টার #মাফিয়া_ক্রাশ_বর।”
অভিদ অবাক হয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” এই নাম কোথা থেকে জানলে তুমি ?”
রুহি থতমত খেয়ে বলে
” মানে ? কোথা থেকে জানবো ? অন্য কেউ আপনাকে ডাকতো নাকি এই নামে ?”
অভিদ মাথা নেড়ে বলে
” উঁহু ! এই নামে তো একমাত্র তুমিই আমাকে ডাকতে। কিন্তু তোমার মনে পড়লো কিভাবে ? তারমানে… বাবুই পাখি তোমার কি কিছু মনে পড়ছে ?”
অভিদকে উত্তেজিত হতে দেখে রুহি শান্তনা দিয়ে বলে
” আরে আগে শান্ত হন আপনি ! আমার সেইসব কিছু মনে পরেনি। আমি তো এমনি ডেকেছি এই নামে আমার তো আগের কথা মনে পড়েনি !” বলতে বলতে রুহির মন খারাপ হয়ে গেলো। অভিদ বুঝতে পেরে বলে
” আরে মন খারাপ করছো কেনো ? তুমি যে এই নামটা বলেছো এতেই খুশি হয়েছি। আর প্লিজ ! আগের কথা মনে নেই এসব ভেবে মন খারাপ করবে না। আমার শুধু তোমাকে আর আমাদের সন্তানকেই সুস্থ ভাবে পাশে চাই আর কিছুই চাই না।” রুহি মুচকি হাসি দিলো।

কৌশিকা রায়জাদার সাথে কথা বলে অনি আর আখিলের engagement এর দিন ঠিক করা হয়েছিলো সেইদিন খুব বড় করে দুজনের engagement হয়। অভিদ রায়জাদা, রায়হান, তুষারের একমাত্র বোন আর ড. আখিল রহমান এর engagement বলে কথা। অনেক মান্যগণ্য মানুষ এসেছিলো সেইদিন। কৌশিকা রায়জাদা আর সিদ্দিকুর রহমানও আসে তাদের একমাত্র মেয়ের বিশেষ একটা দিনে। রুহির বাড়ির প্রত্যেকে আসে আর অভিদ চট্টগ্রাম থেকে এলিজাবেথ কেও স্পেশাল ভাবে ইনভাইট করে নিয়ে আসে।
অনির engagement এর দিন পাঁচ একের মধ্যে তুষারের ইউরোপ যাওয়ার ফ্লাইট হয়। তুষারের যাওয়ার দিন সবাই কম, বেশি কেঁদেছিলো। ছেলেটা খুব কম সময়ে সবার সাথে মিশে যায়। নিলার মনেও তুষারের চলে যাওয়া দাগ কেটেছে। তুষার নিজেও কেঁদেছে। ইউরোপ গিয়ে পড়াশোনা নিয়ে সময় কাটাতে থাকলেও বাড়িতে থাকলে বেশিরভাগ সময় রুহিদের সাথে কথা বলে আর নিলার সঙ্গে প্রতিদিন তার ঘন্টা খানেক সময় কথা হয়ই।
অভিদ, রায়হান আবারও তাদের ব্যস্ত জীবনে ব্যস্ত হয়ে পরে। রুহিও সারাদিন অনি,মিশু অনলাইন কোর্স, মুড সুইং এসবের মাঝেই যেতে থাকে। মাঝে মধ্যে ঘুরতে ইচ্ছে হলে বাবার বাড়ি চলে যায় অভিদকে না বলে আর অভিদ রুহি সহ সবাইকে ডিটারজেন্ট ছাড়া রামধোলাই দিয়ে ধুতে থাকে।
ব্যস্ততা, হাসি, মজার মাঝেই আরো ৫ টা মাস কেটে যায় সবার জীবন থেকে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫৭
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

ব্যস্ততা, হাসি, মজার মাঝেই আরো ৫ টা মাস কেটে যায় সবার জীবন থেকে।
আজকে তুষার আর সিদ্দিকুর রহমান ইউরোপ থেকে চলে আসছে। বাড়িতে একটু বেশি খুশির আমেজ রয়েছে বলাই চলে।
রুহি বিছানায় বসে বসে আচার খাচ্ছিলো। অভিদ তৈরি হয়ে রুহির সামনে বসে। রুহির অভিদের সামনে এক চামচ আচার ধরতেই অভিদ মুখে তুলে নেয়। রুহি এবার নিজের মুখে আচার পুড়ে নিয়ে বলে
” কি ভেবেছেন কি করবেন ?” অভিদ নিশ্বাস ফেলে বলে
” কি করবো বুঝতে পারছো না ? তুষার যখন এই পথ বেছে নিয়েছে তখন এটা পূরণ করার চেষ্টা তো করতেই হবে।” রুহি মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলে
” কিন্তু আজই যাওয়ার কি দরকার ? ভাইয়া এসে রেস্ট নিক তারপর নাহয় কাল পরশু যাওয়া যাবে !”
অভিদ স্মিত হেসে বলে
” আমি বুঝলেও আমার পাগল ভাই তো বুঝতে চায় না। তাও চেষ্টা করবো যাতে আজ না যাওয়া হয়।”
রুহি খেতে খেতে বলে
” না আজ কোনো ভাবেই যাওয়া যাবে না। ভাইয়াকে আমার কথা বলবেন আমি যেতে চাই আপনাদের সাথে। আমার জন্য হলেও কালকে যেতে।”
অভিদ গম্ভীর চেহারা বানিয়ে বলে
” তোমার শরীর এমনিতেই খারাপ আবার এর মাঝে তোমাকে নিয়ে যাবো ভাবলে কি করে ? তোমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া যাবে না।”
রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” আমি যাবো বাড়িতে। আপনি না নিয়ে গেলে একা একাই যাবো আমি।” অভিদ রাগ মিশ্রিত কড়া গলায় বলে
” রুহি! আর যদি এমন করো তাহলে দেখবে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না ! তুমি এখন পর্যন্ত একা একা কতো বার গিয়েছো জানো তুমি ? আবারও এরকম কিছু করলে সত্যি সত্যি খারাপ কিছু হবে আমি বলে দিচ্ছি।” রুহি মুখ কালো করে ফেলে। নিচ থেকে কৌশিকা রায়জাদার ডাক ভেষে আসতেই রুহির উঠে দাঁড়াতে চাইলে অভিদ রুহিকে ধরে উঠতে সাহায্য করে। নয় মাসের পেট নিয়ে রুহির চলা ফেরায় অনেকটাই কষ্ট হয়। স্বাভাবিক এর তুলনায় রুহির পেট বেশি বড় হওয়ায় সবাই কিছুটা অবাক হয়েছিলো আর ভেবেছিলো টুইন বেবি নাতো ! চেকাপ করিয়ে দেখে একটাই বেবি কিন্তু স্বাস্থ্যকর বাচ্চা হওয়ায় পেট বড় হয়েছে।
অভিদ রুহিকে নিয়ে নিচে আসে। কৌশিকা রায়জাদা রুহিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে অভিদকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তুষার আর তোর আংকেল এর ফ্লাইট তো কিছুক্ষণ পরই ল্যান্ড করবে তোরা বের হবি কখন ?” অভিদ রুহির পাশে বসে বলে
” রায়হান, মিশু, আখিল আসুক তারপর বের হচ্ছি।”
কৌশিকা রায়জাদা চিন্তিত হয়ে বলে
” তোর ভাই যে কি করে বসলো! এবার সব কিছু ঠিক ঠাক হলেই চলে।” অভিদ কৌশিকা রায়জাদার পাশে বসে শান্তনা দিয়ে বলে
” ফুঁপি ! এভাবে বলছো কেনো ? শুধু ভালোই তো বেসেছে আর কোনো ভুল তো করেনি। ভালোবাসা তো কোনো ভুল নয়।”
কৌশিকা রায়জাদা মাথা নেড়ে বলে
” নারে আমি ভুল বলছি না। যদি নিলার পরিবার রাজি না হয়! সেই কথা ভাবছি আমি। ছেলেটা তখন কি করবে ?”
রুহি কৌশিকা রায়জাদার কাধে মাথা রেখে বলে
” আরে ফুঁপি কিচ্ছু হবে না। আমার পরিবার এসব কে কটু দৃষ্টিতে দেখবে না। আমার পরিবার আগে নিজের বাড়ির ছেলে, মেয়ের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করবে তারপর সব কিছু মত দেবে। আমি জানি এই সম্পর্কেও বড় কোনো ঝামেলা হবে না।”
অনি সিরি দিয়ে নামতে নামতে বলে
” বড় কোনো ঝামেলা হবে না মানেই ছোট খাটো কিছু না কিছু তো হবেই তাই না ভাবি ?” রুহি হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলো। কৌশিকা রায়জাদা রুহিকে আলতো ভাবে থাপ্পড় মেরে রেগে বলে
” তুই আমাকে শান্তনা দিচ্ছিস নাকি আরো ভয় দেখাচ্ছিস ?” রুহি দাঁত কেলিয়ে বলে
” দুটোই গো আমার ফুঁপি শাশুড়ি।” কৌশিকা রায়জাদা চিন্তিত হওয়া সত্ত্বেও হেসে দিলো। অভিদ হেসে দরজার দিকে তাকাতেই রায়হানের গাড়ি দেখতে পেয়ে বলে উঠে
” ওই তো রায়হান এসে পড়েছে। তাহলে এখন বেড়িয়ে যাই।” ফুঁপি মাথা নেড়ে সায় দেয়। অভিদ দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়। গাড়ির কাছে এসে দেখে রায়হান ড্রাইভিং সিটে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। অভিদ পাশের সিটে বসতে বসতে বলে
” কিরে মনে কি নতুন রঙ লেগেছে নাকি ? এতো হাসছিস কেনো ?”
রায়হান কিছু না বলে হাসতেই থাকে। অভিদ ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকায়। আখিল আর মিশুও মুখ টিপে হেসে যাচ্ছে। অভিদ আবারও বলে
” কিরে কিছু বলছিস না কেনো ? কি হয়েছে তোদের ?” রায়হান হাসি বন্ধ করে গলা ঝেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে
” আসার সময় একজন গার্ড এর কথা শুনলাম। গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছে। গার্ডের কথা শুনে মনে হলো ওর গার্লফ্রেন্ড তোর জন্য পাগল। তোর গার্ড বলেই ওর সাথে রিলেশন করেছে সেটা নিয়ে এখম দুজন ঝামেলা করছে।” অভিদ শব্দ করে হেসে দিলো। সাথে তিনজন জোড়ে জোড়ে হেসে উঠে। অভিদ হাসতে হাসতে বলে
” আচ্ছা এবার এয়ারপোর্টে চল নাহলে তুষার আর আংকেল আবার আমাদের খুঁজতে থাকবে।”
রায়হান বলে
” আরে চিল ! আমি গার্ডদের পাঠিয়ে দিয়েছি ওখানে।” অভিদ শান্ত হয়ে বলে
” কিন্তু সেখানে কি খবর ?” আখিল মুচকি হেসে বলে
” ভাইয়া আপনাদের ইচ্ছে পূরণ হয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধাশ্রম আর অনাথাশ্রম দুটোরই খুব বড় করে করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে চার শতাংশের মধ্যে তিন শতাংশ বৃদ্ধ আর বাচ্চা রয়েছে। এতো অল্প সময়ে এতোকিছু সত্যিই অবাক হওয়ার মতো।” রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” আসলেই অবাকের বিষয়। আলরা কেউই ম্যানেজারের কথা বিশ্বাস করছিলাম না তাই অভিদ আমাদের পাঠিয়েছিলো। আমি ওদের সব খোঁজ নিয়ে দেখেছি সবই ঠিক আছে।”
আখিল ভ্রু কুঁচকে বলে
” কিন্তু ভাইয়া আপনি নিজে গেলেন না কেনো ?”
মিশু মুচকি হেসে বলে
” রুহি ভাইয়াকে বলেছে ওদের ভালোবাসার অংশ পৃথিবীর মুখ দেখবে তারপর তিনজন একসাথে সেখানে যাবে এর আগে যেতো ভাইয়া না যায়।”
রায়হান আফসোস স্বরে বলে
” ইশশশ ! আমাকেও বলতে তুমি ! তাহলে বাচ্চা না হলেও বিয়ের পর আমার বউকে নিয়ে যেতাম।”
অভিদ আর আখিল হেসে উঠে রায়হানের কথায়। মিশু লজ্জা পেয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে।
এয়ারপোর্টে আসার পর তুষার আর সিদ্দিকুর রহমানকে বাইরেই দেখতে পায়। অভিদ, রায়হান মুখে মাক্স লাগিয়ে বের হয়। তুষার অভিদকে দেখে খুশি হয়ে যায়। গার্ডরা দুজনের লাগেজ গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। অভিদ তুষার আর সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
কথা বলতে বলতে তুষার খেয়াল করে গাড়ি বাড়ির দিকেই যাচ্ছে। তুষার ভ্রু কুঁচকে বলে
” ভাইয়া গাড়ি এদিকে যাচ্ছে কেনো ? আমাদের তো ভাবির বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো !”
অভিদ শান্ত গলায় বলে
” রুহি বলেছে আজকে যেতে না। ওকে রেখে গেলে তোর বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আর কারো মতালত লাগবে না এমনি ভেঙ্গে দেবে তোর ভাবি।” তুষারের মন খারাপ করে শুধু বলে
” ওহ আচ্ছা !” মিশু তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে
” ভাইয়া মন খারাপ করলেন নাকি?” সিদ্দিকুর রহমান আড়চোখে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে
” মন খারাপের কি আছে ? এতো মাস অপেক্ষা করতে পেরেছে আর ভাবির জন্য একদিন অপেক্ষা করতে পারবে না ?” তুষার মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা পারবো।” অভিদরা মুখ টিপে হাসে তুষারকে দেখে।
বাড়িতে আসতেই সবাই দুজনকে নিয়ে খুশি হয়ে যায়। সবার সাথে কথা বলে তুষার রুহির পাশে বসে মুখ ফুলিয়ে বলে
” ভাবি এটা ঠিক করলে না ! তুমি এভাবে আমার যাওয়া ক্যান্সেল করে দিলে ? কত্তো এক্সাইটেড ছিলাম আজকের জন্য !” রুহি নিজের ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে জোড়পূর্বক হেসে বলে
” আমার জন্য আর একদিন অপেক্ষা করো ভাইয়া ! কালকে নাহয় একটু ভয়মিশ্রিত এক্সাইটেড নিয়ে যেও !” তুষার হেসে মাথা নাড়ালো। সবাই টুকটাক কথা বলতে থাকে। এর মাঝে অভিদের ফোন আসায় সাইডে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর তুষার দেখে রুহির কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে রুহি কেমন কেমন করছে। তুষার সোফা থেকে উঠে এসে রুহির কাছে বসে নিচু স্বরে বলে
” ভাবি তোমার কি খারাপ লাগছে ??” রুহি ঢোক গিলে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে বলে
” অভিদকে ডাক দাও ভাইয়া !” তুষার ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে অভিদকে ডাকতে থাকে। সবাই তুষারের চিৎকারে ভয় পেয়ে যায়। অভিদও চিৎকার শুনে ফোন কেটে দৌঁড়ে চলে আসে।
অভিদ রুহির কাছে বসে অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে ? পেইন করছে তোমার ?”
রুহি অভিদের হাত শক্ত করে আকড়ে ধরে বলে
” হ্যা।” অভিদ ঢোক গিলে কৌশিকা রায়জাদার দিকে তাকায়। কৌশিকা রায়জাদা অভিদকে শান্তনা দিয়ে বলে
” এটা নরমাল পেইন তুই রুহিকে রুমে নিয়ে চল।”
অভিদ রুহিকে কোলে তুলে নেয়।
রুহিকে রুমে এনে শুয়ে দেয়। রুহি শক্ত করে অভিদের হাত ধরে রাখে। অভিদ রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
আধঘন্টা পর রুহি কিছুটা শান্ত হয়। রুহি শান্ত হয়ে অভিদের বুকে শুয়ে পরে। অভিদ নিশ্বাস ফেলে বলে
” আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি !”
রুহি উত্তরে কিছু বললো না।

সকালের ব্রেকফাস্ট শেষ হতেই তুষারের তাড়া পরে। তুষারের পাগলামো দেখে সবাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে রুহির বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রুহি তুষারকে বারবার দুশ্চিন্তামূলক শান্তনা দিচ্ছে যেটা দেখে সবাই মজা করছে।
#মাফিয়া_ক্রাশ_বর_২
#পর্বঃ ৫৮
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা

রুহি তুষারকে বারবার দুশ্চিন্তামূলক শান্তনা দিচ্ছে যেটা দেখে সবাই মজা করছে। রুহিদের বাড়িতে পৌঁছে যেতেই তাদের আপ্যায়ন শুরু হয়। অভিদ দের খাওয়া দাওয়া নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরে সবাই। একে একে নিরা, রাইমা, নিলয় সবাই এসে পরে ড্রইংরুমে। নিলা তুষারকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তুষার জোড়পূর্বক হাসি দেয়। নিলার মা, বাবা কি করবে, কি বলবে সেটার ভয়েই তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে চাইলেও হাসতে পারছে না। নিলা সহ বাড়ির সবাই অবাক তুষারকে দেখে। ওরা কেউই জানে না তুষার বিডিতে কবে এসেছে। অভিদ,রায়হান কাউকেই জানায়নি তুষারের কথা।
নিলা চোখের ইশারায় তুষারকে জিজ্ঞেস করতে থাকে কবে এসেছে আর তাকে কেনো জানায়নি। তুষার উত্তর দিতে না পেরে পলক ফেলে বলে পরে বলবে। দুজনের ইশারায় কথা বলার মাঝেই আনোয়ার এহসান বলে উঠে
” তুষার বাবা কেমন আছো ? কবে আসলে আমাদের জানালেও না কেউ।” তুষার ঢোক গিলে বলে
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আংকেল। গতকালকে বিডিতে ল্যান্ড করেছিলাম।”
আনোয়ার এহসান আফসোস স্বরে বলে
” দুদিন আগে আমরা তো নিউজে তোমার খবর দেখলাম। ইউরোপে এতো ভালো রেজাল্ট করে এতো ভালো একটা চাকরি পেয়েছিলে সেটা কেনো ছাড়লে ? লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে এতো বড় একটা চাকরি আকাশের চাঁদের সমান আর তুমি কিনা সেটা এক্সেপ্ট করলে না !”
তুষার স্মিত হেসে বলে
” যেই কোম্পানি থেকে আমাকে চাকরির অফার করেছিলো সেটা চাইলে আমি এখনও করতে পারবো এর থেকে বড় কোম্পানিতেও করার জন্য প্রোপজাল আসছে। এতোবছর পর পরিপূর্ণ পরিবার পেয়েছি তাই এইসব চাকরি নিয়ে আমার তেমন একটা মাথা ব্যাথা নেই।আমি বাংলাদেশের ভেতরেই চাকরি করতে চাই যাতে পরিবারের কাছে থাকতে পারি।” আনোয়ার এহসান আর আনিল রহমান তুষারের কথায় মনে মনে অনেকটা খুশি হয়। আনিল আহমেদ হেসে বলে
” একদম ঠিক কাজ করেছো তোমার মতো যদি সবাই বুঝতে পারতো তাহলে পৃথিবীটা আজ অন্যারকমই থাকতো। আজকাল সবাই পরিবার নামক ভালোবাসা থেকে দূরে চলে যেতে চায় আর বিলাশ বহুল জীবনযাপন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। পরিবার কি জিনিস সেটাই বুঝতে পারে না।” তুষার মাথা নেড়ে সায় দেয়।
নিলার বাবা আর আখিলের বাবার নাম একই হওয়ায় দুজন এখন দুজনকে ভাই বলে ডাকে।
আনোয়ার এহসান আখিলকে দেখেই বলে উঠে
” কি ডক্টর ! আমার ভাই আর ভাবি কেমন আছে ?”
আখিল হেসে বলে
” জি আংকেল ভালো আছে।”
কৌশিকা রায়জাদা গলা ঝেড়ে বলে উঠে
” ভাইসাহেব ! আজ একটা আমরা আপনাদের কাছে একটা প্রোপজাল নিয়ে এসেছি। বলতে পারেন আবদারই।”
আনোয়ার এহসান হেসে বলে
” আমাদের কাছে এতো ইতস্তত বোধ করছেন বেয়াইন ! আমরা তো একই পরিবারের মানুষ বলে মনে করেছিলাম।”
সিদ্দিকুর রহমান আলতো হেসে বলে
” না ভাই তেমন কিছু না। তবে কথাটাই এমন যে আমাদের বলতে সময় লাগছে।”
সানিয়া বেগম হেসে বলে
” যা বলার এক শ্বাসে বলে ফেলুন বেয়াইন। যা হবার তা তো হবেই !” অভিদ, রায়হান, কৌশিকা রায়জাদা, সিদ্দিকুর রহমান সবাই সবার দিকে তাকা তুকি করতে থাকে। কে বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। অভিদের ইশারায় রায়হান নিশ্বাস নিয়ে বলে উঠে
” আংকেল, আন্টি ! তুষার নিলাকে ভালোবাসে অনেক আগে থেকে। তুষার নিলাকে বিয়ে করে নিজের জীবনের একটা অংশ করে নিতে চায়।”
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তুষারের দিকে। নিলা নিজেও হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
তুষার আর নিলার মাঝে এতো মাসের দূরত্বে দুজন দুজনের মনের কথা বুঝতে পেরেছে। দূরত্বের মাঝেই দুজন তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে একে অন্যের কাছে। তুষার তার পরীক্ষা শেষে বড় একটা কোম্পানি থেকে চাকরির অফার পেয়েও সেটা ছেড়ে দিয়েছে শুধুমাত্র পরিবারের কাছে থাকতে চায় সে আর নিলাকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের করে নিতে চায়। তুষার ফেরার আগেই অভিদকে সব জানিয়ে দেয়। তবে নিলা জানতো না তুষারের বিডিতে ফেরার কথা আর বিয়ের প্রোপজালের কথা তাই সে পুরোই বিস্ময়ে ছেয়ে গেছে।
সবাই তুষারের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর তুষার মাথা নিচু করে বসে আছে। তুষারের ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে কিন্তু সেটা সম্ভব না। আনোয়ার এহসান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি বলছো এসব? ভেবে বলছো তো রায়হান!”
অভিদ বলে উঠে
” জি চাচ্চু আমরা সব ভেবে চিন্তেই বলছি। তুষার নিলাকে ভালোবাসে। তুষার তার পড়াশোনা শেষ করে নিজেকে তৈরি করে নিলাকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। তুষারের আজ নিজেকে যোগ্য বলার সব কিছুই রয়েছে। তাই তুষার নিলাকে পাওয়ার আশায় আজ এসেছে। চাচ্চু ! আমরা আপনাদের সবার মতামত শুনতে চাই। আপনারা সবাই ভেবে চিন্তে মতামত নিতে পারেন। আমাদের উপর থেকে কোনো রকম চাপ নেই চাচ্চু। আপনারা যা বলবেন তাতেই আমরা সহমত থাকবো আর না হলে এইসব নিয়ে কথা হবে না।”
রুহি, মিশু আর অনি বসে বসে সবাইকে দেখে যাচ্ছে। রুহি মিটমিট করে হাসতে থাকে সবাইকে দেখে। আর হাত দিয়ে অভিদের কোটের কোণা ধরে ঘুঁটছে। অভিদ বারবার হাত ছাড়িয়ে নিলেও রুহি বারবার সেটা ধরছে।
আনোয়ার এহসান কিছু বুঝে উঠতে বা পেরে তার রুমে চলে গেলো। সাথে বাকিরাও ভয় পেয়ে পেছনে ছুটে গেলো। নিলা আর নিলয়ও ছুটে যায়।
কৌশিকা রায়জাদার কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে থাকে। সিদ্দিকুর রহমান শান্তনা দিয়ে বলে
” আরে এতো চিন্তা করার কি আছে ? যা হবার ভালোর জন্যই হবে।”
রুহির খোঁটা খুঁটিতে অভিদ এবার বিরক্ত হয়ে রুহির দিকে ঘুরে বসে গম্ভীর গলায় বলে
” এই তোমাকে না এসব করতে নিষেধ করেছি ? বারবার খোঁটা খুঁটি কেনো করছো ? দেখছো এখানে সবাই কতো চিন্তায় রয়েছে!”
রুহি মুখ ফুলিয়ে নিজের হাত গুটিয়ে নেয়। রেগে বিরবির করে বলে
” আমি একটু কিছু করলেই বকাবকি শুরু হয় আর অন্যকেউ হলে তাকে কিছুই করে না। বজ্জাত লোক একটা !”
অভিদ আড়চোখে তাকিয়ে বলে
” অন্যকেউ এসব করার সাহসও পায় না। আর করলে সাথে সাথে যমের কাছে পাঠিয়ে দেবো।”
রুহি ভেংচি কেটে বলে
” হুহ ! আমিও দেখবো আমি না থাকলে কাকে বকাবকি করেন।” অভিদ রাগি চোখে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই রুহি ঢোক গিলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
এদিকে নয়না বেগম হতাশ গলায় বলে
” আমার তিন মেয়ে একই বাড়ির বউ হবে ? মানুষ কি বলবে এতে ? মিশুর বিয়ে তো আগেই ঠিক হয়েছে কিন্তু এখন আবার নিলা !”
সানিয়া বেগম বলে
” ভাবি ! সমাজের কথা শুনে চলতে গেলে আরো অনেক কিছুই মানার প্রয়োজন। সমাজের কথা ভেবে কি আমরা আমাদের সন্তানের জীবন নষ্ট করে দেবো নাকি ?”
আনিল আহমেদ আনোয়ার এহসানের কাছে গিয়ে বলে
” ভাই কি ভাবছো ? কি করবে ? আমাদের মেয়েরা তো তেমন ভাবে বড় হয়নি যে তিন বোন একই সংসারে থাকলে সেই সংসার নষ্ট হবে।
ছোট বেকা থেকেই ওরা একে অপরের সাথে থাকছে এখনও তো পারবে।”
আনোয়ার এহসান ফুস করে নিশ্বাস ফেলে বলে
” আমি সেটা ভাবছি না আমি ভাবছি নিলার কথা। নিলার ইচ্ছে থাকলেই এই বিয়ে নিয়ে কথা হবে নাহলে এই বিষয় নিয়ে কথা বলা এখানেই সমাপ্তি।”
নিলয় নিলার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে তার কি মত। নিলা উত্তর দিতে গিয়েও আনোয়ার এহসানের তার দিকে তাকানো দেখে চুপ করে থাকে। আনোয়ার এহসান নিলাকে ইশারায় ডাকতেই নিলা এগিয়ে যায়। তিনি নিলাকে বলে
” দেখ মা তোর যা ইচ্ছে বলতে পারিস। বিয়ের প্রোপজালে রাজি হলেও আর না হলেও। আমরাও কোনো প্রেশার ক্রিয়েট করছি না আর অভিদদের ভালো করেই চিনি আমি ওরাও আমাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করবে না।” নিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিনমিন স্বরে বলে উঠে
” আমি রাজি বাবা। এবার তোমাদের ইচ্ছে পুরোটা।” সবার মুখে হাসি ফোটে নিলার কথায়।
অভিদরা একেকজন চিন্তায় হাত পা ঠান্ডা করে ফেলেছে।
সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আনোয়ার এহসান সহ সবাই রুম থেকে বেরিয়ে আসে হাসি মুখে। নিলা লজ্জামাখা চেহারা নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে নিলয়ের পেছনে।
আনোয়ার এহসান হাসি মুখে বলে
” আমরা রাজি বেয়াইন সাহেবা।” সবার মুখে হাসি ফোটে। অভিদরা মন ভরে নিশ্বাস নিলো। সবাই খুশির আমেজে মেতে উঠে। তুষার মুখে হাসি নিয়ে বারবার নিলার দিকে তাকাচ্ছে।
নয়না বেগম সবার গল্পের মধ্যে বলে উঠে
” আচ্ছা আমার একটা শর্ত রয়েছে।”
সবাই উৎসুক হয়ে তার দিকে তাকায়। মিশু ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে
” তোমার আবার কি শর্ত মা ?”
নয়না বেগম হেসে বলে
” আমার দুই মেয়ের বিয়ের যখন একই বাড়িতে হচ্ছে তাহলে বিয়েটাও একই দিনে, একই সাথে হবে।” সবাই তার কথায় সহমত পোষণ করে।

দুপুরের খাবার শেষে নিলয়ের একটা সার্জারির জন্য কল আসতেই সে চলে যায়। বিকেলে অভিদরা বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আখিল, রায়হান, অভিদ, রুহি চারজন এক গাড়িতে উঠে। রুহি অভিদের সাথে যাবে বলে জেদ ধরেছে তাই কেউ বাধা দেয়নি আর। আখিলের হসপিটালে যেতে হবে তাই অভিদ তাকে ড্রপ করে দেওয়ার জন্য অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে।
আখিল অভিদকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ভাইয়া আমাকে দিয়ে আসার কোনো দরকার ছিলো না। আমি ড্রাইভারকে ফোন দিলে বা টেক্সি দিয়েই চলে যেতে পারতাম।
অভিদ হেসে বলে
” এইটুকু তো কি আমি করতে পারি না?” রায়হান হেসে বলে
” আরে তুমি আমাদের বাড়ির একমাত্র হবু জামাই তোমার জন্য এইটুকু করা তো জায়েজ আছে।”
আখিল মুচকি হেসে বলে
” সেটা তো আছেই কিন্তু রুহি ভাবির শরীর তো এখন ভালো না এই অবস্থায় আবারও জার্নি করা কি ঠিক হবে ?” অভিদ আড়চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” সেটা কি তোমার গুনোধর ভাবি বুঝতে পারে নাকি? তার তও শুধু ঘুরতে যেতে পারলেই চলে।”
রুহি চোখ ছোট ছোট করে একটা লুক দিয়ে ভেংচি কাটে।
বাইরের দিকে তাকাতেই একটা ব্রিজের দিকে চোখ পরে রুহির। রুহি ব্রিজের দিকে তাকিয়ে বলে
” আচ্ছা এটা কিসের ব্রিজ? ওখানে নিয়ে চলুন না আমাকে !”
অভিদ গাড়ি থামিয়ে সেই ব্রিজের দিকে তাকিয়ে আবার রুহির দিকে তাকায়। রায়হানের দিকে তাকাতেই রায়হান মাথা নেড়ে না করে সেখানে যাওয়া জন্য। অভিদ রুহিকে বলে
” নাহ ওখানে যাওয়া যাবে না। এমনি দেড়ি হয়ে গিয়েছে। ওখানে গেলে আরো দেড়ি হবে।”
রুহি জেদ ধরে বলে
” না ওখানে যাবোই আমি। নিয়ে চলুন আমাকে !”
আখিল তাল মিলিয়ে বলে
” ভাইয়া নিয়ে চলুন গাড়ি থেকে বসেই দেখে নেবে ভাবি।” অভিদ আতংকিত চোখে রায়হানের দিকে তাকাতেই রায়হান শান্তনা দিয়ে বলে
” ঠিকাছে কিছু হবে একটু সময়ে, চল।” অভিদ সেই ব্রিজের দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয় আবারও।
অভিদের হৃদস্পন্দন করতে থাকে খুব জোড়ে জোড়ে।
দিকে গাড়ি ব্রিজের যতো কাছে যাচ্ছে রুহির মনে হচ্ছে এই রাস্তায় এসেছে সে। ব্রিজ পার হতে হতে রুহির চোখের সামনে ঝাপসা কিছু ভেসে আসতে থাকে। রুহির চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। রুহি অস্থির হয়ে যায়। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে স্টেয়ারিং ধরে রাখা অভিদের হাতের উপর হাত রাখে রুহি। অভিদ সাথে সাথে গাড়ির ব্রেক করে। রায়হান আর আখিল জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। অভিদ উত্তর না দিয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে রুহির কাছে যায়। অভিদ রুহির গাল ধরে বলে
” রুহি ! কিছু হয়নি দেখো ! রুহি ! এমন করছো কেনো ?” রুহি মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” এটাই তো… এটাই তো সেই জায়গা।” রায়হান আর আখিলও বেড়িয়ে রুহির কাছে যায় দ্রুত। আখিল বলে
” কোন জায়গা ভাবি ?”
রায়হান ঢোক গিলে বলে
” এটা রুহির এক্সিডেন্ট করেছিলো সেই জায়গা। ব্রিজ থেকে যেই জঙ্গল দেখা যাচ্ছে সেটার শেষ মাথা থেকে রুহি পরে গিয়েছিলো।”
রুহির চোখের সামনে বারবার সেই দৃশ্য গুলো ভাসতে থাকে। গাড়ির ভেতর ছটফট করছিলো সে আর এভাবেই গাড়ি থেকে ছিটকে পরে যায় জঙ্গলের শেষ মাথার একদম নিচে।
রুহির অবস্থার খারাপ হতে থাকে। রুহি কাঁদতে কাঁদতে এক হাতে অভিদের শার্টের কলার খামঁছে ধরে অন্যহাতে পেট ধরে আরো জোড়ে কেঁদে উঠে। অভিদ রুহিকে নিয়ে পেছনে গিয়ে বসে আর আখিল গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
রায়হান বাড়িতে জানিয়ে দেয়।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here