মায়াডোর পর্ব-০৮+৯

মায়াডোর (৮ম পর্ব)
.
কেমন হবে তা ভাবতে গিয়ে ইতির মানসপটে কল্পের যে অসহায়ত্বের ছবি ভেসে উঠেছে। তাতে আনন্দ না পেয়ে ইতির উল্টো কষ্টই হলো। বুকের ভেতর থেকে মায়া-মমতা যেন বুদবুদ করে জেগে উঠে প্রতিবাদ করলো। মানুষটার সঙ্গে সে এমন কাজ কখনও করবে না। কল্প ইতির দিকে তাকায়। চোখাচোখি হয়ে যায় দু’জনের। ইতি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিল। সবাই যার যার রুমে চলে যায়। হঠাৎ ফেইক আইডির ব্যাপারটা মনে আসায় ইতিও খাওয়া শেষে নীলার কাছে গেল। মোবাইল হাতে নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকে দেখে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এখনও গ্রহণ করেনি৷ অদ্ভুত তো। নীলা আলনার কাপড় ভাঁজ করছিল। সে কাছে গিয়ে বললো,

– ‘এই দেখো এখনও গ্রহণ করেনি। প্রচুর ভাব তো এই ব্যাটার।’

নীলা ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘তুমি এতো রাগ করছো কেন? এটা তো তোমার আইডি না। তোমাকে চিনেও যদি গ্রহণ না করতো তাহলে রাগের একটা ব্যাপার ছিল। তোমার চাচ্চুও এরকম। তার যত অকারণ রাগ অভিমান।’

– ‘সব কথায় চাচ্চুকেই টানতে হবে তোমার।’

নীলা ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘অবশ্য তোমার রাগের পক্ষে একটা গান আছে।’

– ‘কি?’

নীলা গুনগুন করে গাইল,

“তোমাকে চিনি না, নাম ও জানিনা
তবু কেন মনে হয়, কতো চেনা জানা….”

– ‘তো এটা আমার রাগের পক্ষে কিভাবে?’

নীলা গাল টেনে বললো,

– ‘তুমি অভিমান করে ভাবতেই পারো ‘কেন আমাকে চিনবে না, আমি যতই মুখোশ পরে তার কাছে যাই, যতই গলা বদলে ডাকি, সে যেন ভাবে কেমন চেনা চেনা লাগে।’ ভালোবাসার মানুষের কাছে এটা আশা করতেই পারো।’

ইতির মুখ লাল হয়ে গেল। যেন কোনো কিছু চু*রি করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ে পড়ে গেছে। সে কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে মোবাইল বিছানায় ফেলে বললো, ‘বাজে কথা বলবে না তো আন্টি। তুমি যে ফেইক আইডি থেকে মানুষের সঙ্গে মজা করো। তাদের সবাইকে কি ভালোবাসো? আমিও জাস্ট কৌতূহল থেকে করেছি।’ কথাটি বলে ‘হন-হন’ করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

কল্প পড়ার টেবিলে বসে আছে। লতিফ চেয়ারে। খানিক পর সে বললো,

– ‘ভাই সাহেব, আপনে জানেননি? বেশি পড়ালেখা করলে মাথার ব্রেইন আউট হইয়া যায়।

কল্প বইয়ে চোখ রেখেই জবাব দিল,

– ‘এখন জানলাম।’

– ‘আমাদের এদিকে এক বিরাট শিক্ষিত লোক পাগল হইয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। দিন-রাত খালি পড়ালেখা করতো। পড়ে মাথার হইছে ব্রেইন আউট। মাথায়ও আচানক কারবার হয় কি কন ভাই সাহেব?’

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘ভাই সাহেব চলেন বাইরে থাইকা হাঁটাহাঁটি কইরা আসি। ব্রেইন ভালা থাকবো।’

কল্প খানিক ভেবে বললো,

– ‘বিকেলে অবশ্য হাঁটাহাঁটি করা ভালোই। চলেন যাই।’

ইতি ছাদে এসেছিল। মন খারাপ হলেই সে ছাদে আসে। খোলা আকাশ। স্নিগ্ধ বাতাস। একপাশে কিছু ফুলগাছও আছে। ছাদটা তার অসম্ভব প্রিয় জায়গা। চাঁদনী রাত মাঝে মাঝে নীলাকে নিয়ে সে রাতেও ছাদে আসে। নীলা তখন গুনগুন করে গান গায়। অপুর্ব লাগে সবকিছু। ইতির উঠানে চোখ গেল। লতিফ আর কল্প কোথাও যাচ্ছে। ইতি বুঁদ হয়ে তাকিয়ে রইল। ওরা গেইট খুলে রাস্তায় বের হয়েছে। লতিফ অনবরত কথা বলছে। কল্প মাঝে মাঝে মাথা নাড়ছে। কি মিষ্টি লাগছে ওকে। ইতি ভেবে পায় না তাকে এত চম্বুকের মতো টানছে কেন কল্প? নীলা হঠাৎ পিছু থেকে এসে জোরে ‘ভাউ’ বললো। কেঁপে উঠলো ইতি। পিছু ফিরে নীলাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিল সে।

– ‘ছাদে একা একা কি করো।’

ইতি জবাব দিল না। নীলা টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,

– ‘কি? কথা বলবে না আমার সাথে?’

ইতি তাও কথা বললো না। নীলা হঠাৎ কাতুকুতু দিতে শুরু করলো। খিলখিল করে হেঁসে ছাদে বসে গেল ইতি। নীলা তাকে টেনে তুলে বললো,

– ‘চলো দড়িলাফ খেলি।’

নীলা খানিকক্ষণ খেলে হাঁপাতে হাঁপাতে ইতির কাছে দিল। দু’জন দড়িলাফ খেলতে খেলতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। হুস্না বেগম এসে ইতিকে পড়তে যাওয়ার জন্য ডাকলেন। নিচে চলে গেল দু’জন। ইতি কল্পের রুমে উঁকি দিয়ে এসে বললো,

– ‘মা কল্প ভাইয়া তো বাইরে গেছে, এখনও আসেনি।’

– ‘আসেনি আসবে, তুই গিয়ে বস। গণিতে তো তুই দূর্বল। অংক বেশি করে করবি।’

নীলা রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

– ‘সে কি পড়াবে বলেছে ভাবি? এসএসসির গণিত তো এতটাও সহজ না। যদি বাড়তি চাপ হয় তার উপর। নিজের পড়ালেখাও তো আছে।’

– ‘ওর দাদাভাই আজ দুপুরে কথা বলেছেন। সে নিজেই জানিয়েছে সমস্যা নেই, পড়াবে সে। আর উনি রেজাল্ট জিজ্ঞেস করেছিলেন, এসএসসি এইচএসসি দুটাতেই না-কি ছেলেটার জিপিএ ফাইভ ছিল।’

– ‘বাহ তাহলে তো ভালো।’

– ‘গাধিটা তো পড়ালেখায় নাই। দেখো দুইদিন ওর কাছেও পড়তে গিয়ে বাদ দিয়ে দেবে।’

বকাবকি শুরু হওয়ার আশংকা দেখে ইতি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেল। তখনই লতিফের কথা শোনা গেল বারান্দায়। তারমানে কল্প ফিরেছে। ইতি চুলটা ভালোভাবে বেঁধে, মাথায় ওড়না দিয়ে বই হাতে নিয়ে গেল। দরজার সামনে গিয়ে পর্দা সরিয়ে সালাম দিয়ে বললো,

– ‘আসতে পারি স্যার?’

সালাম আর স্যার ডাকায় যে রসিকতা মেশানো ছিল কল্প বুঝতে পারে। সে মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘আসো।’

ইতি ভেতরে এসে লতিফকে বললো,

– ‘আপনি এখন যান আমরা পড়বো।’

লতিফ উঠে যাচ্ছিল কল্প বসতে ইশারা করে ইতিকে বললো,

– ‘উনি আমার কাছে এসেছেন। অসুবিধা হলে আমিই বলবো যাওয়ার কথা। তুমি ওই চেয়ারে বসো।’

ইতি মাথা নেড়ে বললো,

– ‘আচ্ছা স্যার আপনি যা বলবেন তাই হবে।’

লতিফ নিজেই উঠে বললো,

– ‘আমি যাই ভাইজান। পরে আসমু।’

কল্প মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে ইতির সামনের চেয়ার টেনে বসলো।

– ‘স্যার প্রথমদিন পড়া হবে না-কি গল্প।’

– ‘পড়া ছাড়া তোমার সঙ্গে গল্প করার মতো আমার কিছু নাই। তোমার থাকলে করো।’

– ‘না মানে পরিচয় পর্ব তো এখনও বাকি।’

কল্প বুঝতে পারছে প্রচুর ভোগাবে মেয়েটা। সে মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘আচ্ছা কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করো।’

– ‘আপনার নাম?’

– ‘জানো না?’

– ‘না তো।’

– ‘কল্প ইসলাম।’

– ‘আপনাকে কি বলে ডাকবো?’

কল্পের মনে হলো স্যার ডাকাতে পারলে ইতির দুষ্টামি হয়তো একটু কমে আসবে। ওকে পড়ানোর ব্যাপারে সে সিরিয়াস। এর পেছনে একটা কারণ আছে। তার নিজের পড়ার জন্য মামা-চাচাদের তেমন একটা আগ্রহ নেই। দেশের বাইরে পাঠানোর একটা আলোচনা চলছে৷ তাই শুধু সাস্টে পরীক্ষা দেবে সে। চান্স না হলে ন্যাশনালে ভর্তি হয়ে যাবে। তখন মেসে উঠতে হবে। কিন্তু যদি এ বাড়ির বাচ্চাদের পড়ায়। সবাই যদি ভালো মতো পড়ালেখা করে। তার ধারণা মেসে যেতে হবে না। এ বাড়িতে থেকেও সে অনার্স সম্পন্ন করতে পারবে। তাদের বাচ্চাদের পড়ালেখাও হলো, তারও ফ্রী থাকা-খাওয়া চলে যাবে। কিন্তু ইতি মেয়েটাকে সামলানোই কঠিন মনে হচ্ছে৷ অধিক চঞ্চল। কোনোভাবে পোষ মানিয়ে পড়ালেখায় মনযোগী করে তুলতে হবে। সে আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘তোমার যা ইচ্ছা ডাকবে ইতি। সমস্যা নেই। কিন্তু পড়ালেখা ভালোভাবে করো। এসএসসির রেজাল্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ জানো তো।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ভাবছি এ বাড়িতে আপনার সমবয়সী কেউ তো নাই আমি ছাড়া। কল্প বলেই ডাকলে ভালো হবে না?’

– ‘আশ্চর্য কি বলো এগুলো? তুমি মিনিমাম দুই বছরের ছোট আমার।’

– ‘তো এটা কি বেশি? একটা ছেলে প্রেম বা বিয়ে করার সময় কিন্তু তিন-চার বছরের ছোট মেয়েকেও করে। তবুও বন্ধুর মতো থাকে না তারা?’

– ‘প্রেম-বিয়ে এগুলো আসলো কেন এখানে।’

– ‘একটা উদাহরণ মাত্র, আর কিছু না। আমি চাচ্ছিলাম আমরা বন্ধুও হতে পারি। আমি কল্প বলে ডাকলাম। আপনি ইতি ডাকবেন।’

– ‘এসব অদ্ভুত কথাবার্তা আমার সঙ্গে বলবে না৷ পড়তে এসেছো, বন্ধুর মতো মনে করলে তো পড়বে না। তুমি স্যার না ডাকলেও অন্তত ভাই ডাকতে হবে।’

ইতি গণিত বইটা মুখের কাছে নিয়ে হাসি আড়াল করে বললো,

– ‘শুধু ভাই না-কি ভাইজান ডাকতে হবে?’

– ‘তুমি কি রসিকতা শুরু করেছো?’

– ‘রসিকতা না তো। আমরা নানাকে নানাজী ডাকি না? সেরকম শুধু ভাই ডাকলে খারাপ দেখায় তাই শ্রদ্ধা থেকে বলেছি।’

– ‘না এত শ্রদ্ধা লাগবে না৷ তুমি বরং ভাই ডাকলেই চলবে।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে কল্প ভাইয়া।’

কল্প ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ‘কল্প ভাইয়া’ ডাকটাও যেন কেমন শোনাচ্ছে। তবুও সেদিকে নজর না দিয়ে বললো,

– ‘আচ্ছা এখন বই বের করো।’

– ‘আরও প্রশ্ন রয়ে গেছে তো।’

– ‘আচ্ছা বলো আরকি।’

– ‘আপনার বাড়ি কোথায়? আপনার নানাবাড়ি শরৎ পুর তা জানি শুধু।’

– ‘আমি শরৎ পুরেই বড়ো হয়েছি।’

– ‘মা-বাবার সঙ্গে থাকেন না কেন?’

– ‘আমার এক বছর বয়সের আগেই বাবা মারা গিয়েছিলেন প্রবাসে।’

– ‘ভেরি স্যাড, এরকম আমার এক বান্ধবীও আছে। তারপর কি হলো? আন্টি আপনাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন?’

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘আন্টি ভালো আছেন তো?’

– ‘জানি না। কারণ তার সঙ্গে আমি থাকি না। তবে ভালো থাকার অবশ্য কথা।’

– ‘মানে কি? মায়ের সঙ্গে থাকেন না কেন?’

– ‘এত অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন কেন করছো? বই বের করো।’

– ‘আজই তো শুধু প্রশ্ন করবো। আজ পরিচয় পর্ব চলছে তো।’

কল্প ম্লানমুখে হাসলো। তার মায়ের যখন অন্য জায়গায় বিয়ে হয়। তখন তার বয়স মাত্র চার বছর। তাকে গোপন রেখেই মা অন্য জায়গায় বিয়ে বসেছিলেন। এটা কাউকে বলতে ভীষণ লজ্জা লাগে তার। তবুও প্রায়ই এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। দীর্ঘশ্বাস গোপন রেখে বললো,

– ‘এগুলো পরিচয় পর্বের অংশ না। বই বের করো।’

ইতি খাতায় আঁকিবুঁকি কর‍তে করতে বললো,

– ‘আপনি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত?’

কল্প হেঁসে ফেললো৷ হাসতে হাসতে বললো,

– ‘আমাকে বিবাহিত মনে হয়?’

ইতি জবাব না দিয়ে ওর হাসির দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ। কি মিষ্টি হাসি। তারপর আদেশের মতো বললো,

– ‘পরে বলবো শুধু হ্যাঁ না উত্তর দিয়ে যান।’

– ‘না অবিবাহিত।’

– ‘প্রেমিকা আছে?’

– ‘এটা জানার কি দরকার?’

– ‘শুধু হ্যাঁ অথবা না।’

– ‘না নেই। দেখো তোমার কত আজাইরা প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। দয়া করে এবার পড়ো।’

ইতি থুতনিতে হাত দিয়ে তাকিয়ে থেকে বললো,

– ‘কসম আমি পড়বো এবং ভালো রেজাল্ট করবো। এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আর। কিন্তু আমার সঙ্গে এভাবে প্রতিদিন গল্প করতে হবে। গল্প কর‍তে আমার ভালো লাগে।’

কল্প আবারও হাসলো।

– ‘তুমি এভাবে কথা বলছো কেন ইতি? যাইহোক পড়ালেখা ঠিক রাখলে আমারও গল্প করতে ভালোই লাগে। শুধু পড়ালেখা ঠিক রেখো। আমি পড়ানোর পরও যদি রেজাল্ট খারাপ হয় লজ্জা পাব না বলো?’

ইতি মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। সে ভেবে পাচ্ছে না কল্প এতো কোমল আচরণ করছে কেন। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে খাতা বের করে বললো,

– ‘আচ্ছা আমার হাতের লেখার স্পিড খুব কম। আপনি কি টাইম ধরবেন? আমি এক পৃষ্ঠা দেখি কতক্ষণে লিখতে পারি? জানেন তো ফুল মার্কস লিখতে গিয়ে পরীক্ষার সময় চলে যায়।’

– ‘আচ্ছা লিখ, আমি টাইম দেখছি।’

ইতি পুরো পৃষ্ঠায় বারবার একই কথাই লিখে যাচ্ছে, ‘আপনার হাসি এত মিষ্টি কেন, আপনাকে এতো ভালো লাগছে কেন।’

কল্প অবাক হয়ে বললো, ‘এগুলো কি লিখছো? কার হাসি সুন্দর? কাকে এত ভালো লাগে?’

ইতি মুখ টিপে হেঁসে বানিয়ে বললো,

– ‘ইশ স্যরি, আজ হয়েছে কি জানেন? আমার ক্লাসমেট একটা ছেলে চিঠি দিয়েছে। সেখানে শুধু এই দুই লাইন লেখা। মাথা থেকেই যাচ্ছে না। তাই লিখতে গিয়ে কিছু খুঁজে না পেয়ে আনমনে এগুলোই লিখে ফেলেছি।’

– ‘তুমি তো অদ্ভুত একটা মেয়ে। অবলীলায় এসব বলছো আমাকে। ক্লাসে চিঠি দিতেই পারে তাই বলে আমাকে বলার কিছু নেই।’

– ‘আপনি আবার আমাকে খারাপ ভাববেন না। ওই চিঠি আমি ছিঁড়ে ফেলে দিছি। এরকম অনেক ছেলেকেই আমি পাত্তা দেই না।’

– ‘কিন্তু তুমি খুশিই হয়েছো মনে হচ্ছে।’

– ‘তা তো একটু হয়েছি। শত হলেও প্রশংসা করছে।’

– ‘যার-তার প্রশংসায় খুশি হওয়াও ভালো না। যেহেতু তুমি আসলেই সুন্দর, হাসিও মিষ্টি। তাই এই সত্য যার-তার মুখ থেকে শুনে পুলকিত হওয়ার কিছু নাই। আর প্রতিটি সুন্দরী মেয়ের পেছনেই এরকম প্রপোজের লাইন লেগে থাকে। তোমার একার না। এত খুশি হওয়াটাই নিজেকে অপমান করা। টাইমে গন্ডগোল লেগে গেছে। আবার নতুন পৃষ্ঠায় লিখতে শুরু করো।’

কল্পের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে ইতির চোখ-মুখ ঝলমল করে উঠলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে নতুন পৃষ্ঠায় লিখতে শুরু করলো, ‘ধন্যবাদ ভাইয়া।’

__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলামমায়াডোর (৯ম পর্ব)
.
পড়া শেষে ইতি বই রেখে প্রথমেই লতিফার খুঁজে গেল। রান্নাঘরের দরজার কাছে এসে বললো,

– ‘লতিফা আপু এদিকে আসো।’

লতিফা এলো। তাকে নিয়ে গেল সিঁড়ির কাছে। তারপর ফিসফিস করে বললো,

– ‘আপু কল্প ভাইয়াকে আর ভয় দেখানোর দরকার নাই। আমার রুম দখল করেছে তো। তাই প্রথমদিন একটু রেগে ছিলাম।’

লতিফার মুখ মলিন হয়ে গেল। তার ভেতরে পুরোটা দিন একটা উৎসব উৎসব ভাব ছিল। নিমিষেই সেই উৎসবের আনন্দ ধূলিসাৎ হয়ে গেল।

– ‘ইতি লতিফ যখন এতদূর থাইকা আইছে। একবার ভয় দেখাইলে কি হয়। দেখি মাস্টার ভয় পাইয়া কি করে।’

– ‘না আপু দরকার নাই৷ বেশি ভয় পাইতে পারে। জানো তো ভয় থেকে মানুষ অসুস্থও হয়ে যায়।’

– ‘কি যে কও। ব্যাটা মাইনষের অবার ভয় কিসের? ভয় পাইলে বুঝবা মাস্টার কোনো পুরুষই না।’

কথাটা বলে ফিক করে হাসলো লতিফা।
রাগে গা জ্বলে উঠলো ইতির। রূঢ় গলায় বললো,

– ‘ওকে নিয়ে ফালতু কথা একদম বলবে না। অনেক সাহসী মানুষও আছে কিছু কিছু বিষয়ে অনেক ভীতি থাকে৷ কেউ কুকুরকে প্রচণ্ড ভয় পায়। একেবারে নিরীহ তেলাপোকা বা মাকড়সাকে দেখেও অনেকে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। কেউ পানিটা পর্যন্ত ভয় পায়৷ সে ভূ*ত-প্রে*ত ভয়ে পেয়ে তো ঘর ছেড়ে দেয়নি। ভয় দেখানোর পরও নতুন জায়গায় একা থেকেছে।’

লতিফা মুখ বাঁকিয়ে যেতে যেতে বললো,

– ‘বাবা আইজকা দরদ উথলে উঠছে দেখি।’

ইতি পিছু থেকে ডেকে বললো,

– ‘দাঁড়াও আমি আসছি।’

ইতির কাছে দাদাভাইয়ের টাকা ছাড়াও এক হাজার টাকা ছিল। বইয়ের ভাঁজ থেকে এনে ওর হাতে দিয়ে বললো,

– ‘এই নাও, তোমার ভাইয়ের ভাড়ার টাকা হিসাবে দিচ্ছি৷ এখন আমার কাছে টাকা নাই। পরে একদিন আরও পাঁচশো তোমার কাছে দিয়ে দিব।’

লতিফা টাকা হাতে নিয়ে যেতে যেতে বললো,

– ‘দিলে দাও না দিলে নাই। আমরা এত টাকার কাঙাল না।’

ইতি রুমে এসে টেবিলে বসলো। লতিফার বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কল্পের কথা ভাবছে। কেন যেন নিজেকে ভীষণ শান্ত-স্নিগ্ধ লাগছে। ভেতরের কোনো একটা উত্তপ্ত মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে৷ শীতল হাওয়া বইছে। মনে কেমন প্রশান্তির ভাব। কল্প তাকে কিছু অংক দিয়েছে আগামীকাল করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। না পারলে সে বুঝিয়ে দেবে। তবে চেষ্টা করেছে যে তার প্রমাণ দেখাতে হবে। ইতির মনে হচ্ছে পারাই লাগবে, না পারলে ব্যাপারটা ভীষণ লজ্জার হবে। সবগুলো ঠিকঠাক মতো করে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। ভাবের দোকানদার চমকে যেত। ইতি সমাধান বের করে একা বুঝার চেষ্টা করলো। ক্লাসে গণিত স্যারের করানোও ছিল। সেই খাতাতেও চোখ বুলিয়ে একা একা করার চেষ্টা শুরু করেছে। খাওয়ার সময় হুস্না বেগম এসে মেয়েকে পড়ার টেবিলে দেখে ভীষণ খুশি হলেন। পিছু থেকে দাঁড়িয়ে দেখলেন ইতি খাতায় কাটাছেঁড়া করতে ভীষণ ব্যস্ত। পিঠে হাত রেখে বললেন,

– ‘খেতে আয় মা। তারপর এসে বসবি।’

ইতি মাথা না তুলে বললো,

– ‘ওদের খাওয়া শেষ?’

– ‘খাচ্ছে ওরা, শেষ হয়ে যাবে।’

– ‘আচ্ছা যাও আসছি।’

হুস্না বেগম প্রচণ্ড খুশি মনে চলে গেলেন। পড়ালেখার প্রতি উদাসীন মেয়েটাকে পড়তে দেখলে বড়ো ভালো লাগে।
ইতি খানিক পর রান্নাঘরে এলো। সেখানেই একপাশে তাদের খাওয়ার টেবিল। ইতিকে দেখে ফরিদ সাহেব বললেন,

– ‘ইতি কাল দুপুরে তুমি উপস্থিত থাকবে। প্রয়োজনে স্কুল বাদ। বাড়ি শিশু থেকে বুড়ো সকলের উপস্থিতি চাই।’

ইতি ভ্রু-কুঁচকে বললো,

– ‘কেন দাদাভাই? তোমার আরেকটা বিয়ে হবে না-কি কাল?’

– ‘আমার সাথে রসিকতা করবি না। আমি তোর রসিক বন্ধু না। লতিফ কবিরাজকে জানিয়েছে৷ কবিরাজ তার দলবল নিয়ে দুপুরের দিকে আসবে।’

ইতি প্রচণ্ড খুশি হয়ে বললো,

– ‘ওয়াও, কালই হবে তাহলে।’

ফরিদ সাহেব রাগান্বিত চেহারায় বললেন,

– ‘খুশিতে লাফানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটে নাই। বাটি চালান কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান না৷ কেউ একজন লোক সম্মুখে চো*র হবে৷ বুঝতে পারছো বিষয়টা কত গুরুতর?’

কথা শেষ হওয়ার আগেই ইতি তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেল। টাকাটা সরিয়ে ফেলা দরকার। বইয়ের ভাঁজ থেকে টাকা নিয়ে রেখে এলো ফরিদ সাহেবের অন্য একটা পাঞ্জাবির পকেটে।
অংক করতে করতে অনেক রাত করে ঘুমালো ইতি। পরেরদিন কেউ স্কুলে গেল না। বাড়ির সবাই প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। ঘটনা কি হয় দেখা লাগবে। লতিফ কল পেয়ে এগারোটার দিকে গেল কবিরাজকে নিয়ে আসতে। বাড়ির সবাই বারান্দায় চাতক পাখির মতো অপেক্ষায়। কারও মনে ভয়-ডর নাই দেখে ফরিদ সাহেব বারবার রেগে যাচ্ছেন৷ বিদ্যুৎ না থাকায় তিনি আম গাছের নিচে বসে আছেন। মাঝে মাঝে অন্যদিকে তাকিয়ে সবাইকে শুনিয়ে বলছেন ‘বাটি চালানে কাজ না হলে চাউল পড়া খাওয়ানো হবে। তারপরও এ বাড়ির চো*র কে বের করা লাগবে।’

ইতি নীলাকে ফিসফিস করে বললো
‘আন্টি চাউল পড়া ব্যাপারটা কি?’

নীলা ঠোঁট উলটে বললো ‘জানি না।’

হুস্না বেগমও বারান্দায় বেঞ্চে বসে আছেন। ভালোই লাগছে সবকিছু। শহরে কখনও এগুলো হয় না৷ বিয়ের আগে বাপের বাড়ি একবার দেখেছিলেন। তাও স্পষ্ট মনে নেই। ইতি হুস্না বেগমের কাছে ছুটে গিয়ে বললো,

– ‘মা চাউল পড়া বিষয়টা কি?’

তিনি হেঁসে বললেন,

– ‘চাউল পড়া আবার কি, চাউল পড়া তো চাউল পড়াই।’

ইতি আবার কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল। তখনই লতিফ দু’জন লোক নিয়ে গেইট দিয়ে ঢুকলো। নিয়ন আর নিলয় আজ ভয়ে অস্থির। মায়ের কাছ থেকেই যাচ্ছে না। লোক দু’টাকে দেখে আরও কাছ ঘেঁষে বসলো। ইতি বারান্দার গ্রিল ধরে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। দু’জন লোকই দেখতে অদ্ভুত। একজনের চুল আর গোঁফ অনেক লম্বা। কপালে হলুদ রুমাল বাঁধা। গলায় ঝুলছে লাল চাদর। পরনের শার্ট এবং লুঙ্গি দুটাই ধবধবে সাদা। আঙুলে বড়ো বড়ো আঙটি। দ্বিতীয়জন খাটো স্বাস্থ্যবান মধ্যবয়সী লোক। তার গোলগাল মাথা ন্যাড়া করা। ফরিদ সাহেব তাদের নিয়ে বারান্দায় এলেন। হুস্না বেগম নীলা আর ইতিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। এখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। লতিফকে দেখা যাচ্ছে সাদা পোশাক পরা লোকটিকে ভীষণ সমীহ করছে। চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘ওস্তাদ বসেন।’

এদিকে লতিফা নিজেই ব্যস্ত হয়ে হুস্না বেগমকে বললো,

– ‘চাচি চা-নাশতার ব্যস্ত করি গিয়ে।’

হুস্না বেগম অনুমতি দিলেন।

লতিফ গিয়ে কল্পকে বললো,

– ‘ভাই আপনে দরজার সামনে থেকে কি দেখছেন? আচানক কারবার হইব এখন। আমাদের ওস্তাদ মানেই আচানক কারবার। আমিও মাঝে মাঝে ওস্তাদের লগে পোগ্রামে যাই।’

কল্প মুচকি হেঁসে তার সঙ্গে বাইরে এলো। বাজার থেকে তখন মুজিব উদ্দিনও ফিরেছেন। তিনিও হাসি হাসি মুখে এসে বেঞ্চে বসলেন। সাদা পোশাকের লোকটি পানি চাইল। লতিফ দৌড়ে গিয়ে গ্লাসে করে পানি এনে দিল। কবিরাজ প্রথম চুমুক পানি কুলি করে উঠানে ফেললেন। সুপারির দানা সহ লাল টকটকে পানি গিয়ে পড়লো আছড়ে পড়লো। পানি খেয়ে লতিফের কাছে গ্লাস দিয়ে কবিরাজ বললেন,

– ‘তুলারাশিকে ছাড়নের আগে একটা কথা বলে রাখা দরকার। বাটি যদি আশেপাশের বাসার দিকে চলে যায় তখন কি করবেন? আটকাবে না-কি যেতে দিবেন।’

ফরিদ সাহেব এবং মুজিব উদ্দিন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। মুজিব আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘বুঝি নাই ব্যাপারটা।’

কবিরাজ আবার বললো,

– ‘মনে করেন আপনার পাশের বাসার কেউ টাকা চু*রি করছে। এখন বাটি পাশের বাসায় চলে গেল। তখন ওদের ইজ্জতে লাগলে ঝামেলা করবে না? আপনাদের কি সেই ক্ষমতা আছে ওই বাড়িতে বাটি নিয়ে ঢোকার।’

ফরিদ সাহেব মাছি তাড়ানোর মতো বললেন,

– ‘সেই চিন্তা আপনার করা লাগবে না।’

– ‘না চিন্তা করা লাগবে। আপনি না করলে বাটি কারও গেইটের কাছে গেলেই আঁটকে ফেলবো।’

মুজিব উদ্দিন আমতা-আমতা করে নাক টান দিয়ে বললো,

– ‘মানুষের গেইটের সামনে না। ব্যাপারটা যা হয় আমাদের গেইটের ভেতরে থাকলেই ভালো হয়। লোক হাসানোর দরকারটা কি?’

কথাটা বলেই তিনি উঠে চলে গেলেন। ফরিদ সাহেব চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রইলেন। লতিফা চা এনে দিল। কবিরাজ চা হাতে নিয়ে লতিফকে বললেন,

– ‘তাহলে গেইটের কাছে গেলেই তুই কোমর ধরে আঁটকে দিবি৷’

ফরিদ সাহেব থমথমে মুখে বসে রইলেন। চা খাওয়া শেষ হতেই কবিরাজ ব্যাগ থেকে একটা সোনালি বাটি বের করলেন। তারপর উঠানে গিয়ে লাল চাদর বিছিয়ে সেখানে বাটি রাখলেন। ন্যাড়া মাথার লোকটি এসে ডান হাত বাটিতে রেখে ভর দিয়ে বসলো। পুরুষ সবাই বের হয়ে এলেন উঠানে। মহিলারা বারান্দা থেকে তাকিয়ে দেখছে৷ কবিরাজ একটা বোতল থেকে মুঠোয় পানি নিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা পড়ে ছুড়ে মারলো ন্যাড়া মাথার লোকটির গায়ে৷ সে ক্রমশই কাঁপতে শুরু করলো। অস্বাভাবিক কাঁপন৷ আরও দু’বার লোকটি পানি ছুড়ে দিল। ধীরে ধীরে বাটি সহ লোকটি দ্রুত চলতে শুরু করলো। ইতি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। সবকিছু কেমন অলিক মনে হচ্ছে। লোকটি উঠানের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে চলে গেল গেইটের দিকে। লতিফ গিয়ে দৌড়ে কোমরে ধরলো। ন্যাড়া লোকটি ঘেমে একাকার। কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে গেল। কবিরাজ এসে ফরিদ সাহেবকে ফিসফিস করে বললো,

– ‘চো*র তো বাইরের।’

ফরিদ সাহেব মাথা নেড়ে বললেন,

– ‘অসম্ভব চো*র অবশ্যই বাড়িতে আছে। আবার ছাড়েন দেখি।’

তুলারাশির জ্ঞান ফেরার পর আবার ছাড়া হলো। পুনরায় বাটি চলে গেল গেইটের দিকে। কবিরাজ জোর গলায় বললো,

– ‘চো*র বাইরের। এখন আপনাদের সাহস থাকলে বাটি বাইরে যেতে দিন। না হলে কিছু করার নাই। আমাদের বিদায় দেন।’

ফরিদ সাহেব রেগে গিয়ে বললেন,

– ‘তোমরা ভ’ণ্ড কবিরাজ। চো*র অবশ্যই বাড়িতে আছে। বাইরের লোক আমার রুমে যাবে কিভাবে? তুলারাশির চোখ বেঁধে আবার ছাড়ো।’

কবিরাজ ক্লান্ত হয়ে বললো,

– ‘ঠিক আছে সুপারি আনেব। তুলারাশিরও জিরানো প্রয়োজন।’

সুপারি এনে দেওয়া হলো তাদেরকে। ইতি সবার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। চো*র বাইরের হবে কিভাবে? টাকা সে নিজের হাতেই রেখেছে দাদাভাইয়ের রুমে? তবুও সে এর শেষ দেখতে চায়, প্রবল আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। পুনরায় তুলারাশির চোখ বেঁধে আয়োজন শুরু করা হলো। মুজিব উদ্দিন খাবার শেষে বাজারে যাওয়ার জন্য হাসি হাসি মুখে উঠানে এলেন। তখন কৌতূহল থেকে আমগাছের নিচে গিয়ে খানিক দাঁড়ালেন। কেঁপে উঠলো বাটি। তুলারাশি পাগলের মতো পুরো উঠানে ঘুরতে শুরু করছে। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ছুটে এলো মুজিব উদ্দিনের দিকে। তিনি ভয়ে সরে যাচ্ছিলেন। লতিফ ধরে বললো ‘দাঁড়িয়ে থাকেন ভাইজান।’

বাটি এসে থামলো উনার পায়ের কাছে। বিস্মিত হয়ে নাক টান দিয়ে বললেন,

– ‘এটা কি হলো কিছুই তো বুঝলাম না।’

ফরিদ সাহেব ছেলের কাছে এসে আহত নয়নে বললেন,

– ‘তুই তাহলে চো*র?’

– ‘কি বলেন বাবা? আমি উল্টো তোমার জন্য দোকান থেকে তিন হাজার টানা নিয়ে ফিরেছি। ভাবলাম তোমার যেহেতু মানতের টাকা। তাহলে দেয়া দরকার। এই দেখো আমার পকেটেই তিন হাজার টাকা।’

– ‘তাহলে তুই দিলি না কেন? না দিয়ে চলে যাচ্ছিলে কেন? চো*রের বাপের বড়ো গলা তাই না? এই টাকাই তো আমার তিন হাজার টাকা।’

লতিফা এগিয়ে এসে বললো, ‘দেখলেন তো দাদাভাই নিজের ছেলেই চো*র আর আমারে গিয়ে ধরেছিলেন। আমরা পীর বংশের মানুষ, চো*রের না।’

মুজিব উদ্দিন অসহায় হয়ে চারদিকে তাকিয়ে অস্ফুটে বললেন, ‘বুঝলাম না, আমি কিভাবে ফেঁসে গেলাম!’
কথাটা বলেই তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন।

…চলবে__
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here