মায়াডোর পর্ব-১২+১৩

মায়াডোর (১২ পর্ব)
.
ইতি বাড়িতে ফিরে মন খারাপ করে শুয়ে রইল। হুস্না বেগম ডেকে তুলে খাওয়াতে পারলেন না। ভাবলেন হয়তো বান্ধবীদের সঙ্গে রাগারাগি করে ফিরেছে। রাতে তিনি স্বামীকে বললেন,

– ‘ইতির তো এখন ছুটি। কিছুদিন ওর নানাবাড়ি থেকে ঘুরে আসলে ভালো হতো না?’

মুজিব উদ্দিন নাক টান দিয়ে বললেন,

– ‘তুমি যেতে চাইলেও যাও। কয়েকদিন থেকে ইতিকে রেখে চলে আসবে।’

হুস্না বেগম ভীষণ খুশি হলেন। এটাই চেয়েছিলেন তিনি। তারপর আমতা-আমতা করে বললেন,

– ‘তুমিও আসো, এক রাত থেকে চলে আসবে।’

– ‘না আমি পারবো না। গাড়িতে তুলে দেবো। তোমরা চলে যাবে।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

ভোরে ইতিকে জানালেন হুস্না বেগম। ইতি খুশিই হলো শুনে। অনেকদিন হয়েছে যাওয়া হয়নি। মামাতো বোন তানিয়ার সঙ্গে ওর মিলে ভালো। সেও এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এবার। দুপুরেই তারা বের হয়ে গেল। মুজিব উদ্দিন গাড়িতে তুলে দিলেন। হুস্না বেগমের ভাই রিসিভ করবেন তাদের। কল্পকে কিছুদিন দেখতে পারবে না ভেবে ইতির কষ্ট হচ্ছিল। সেই কষ্টের প্রতিই যেন ইতির প্রচণ্ড ক্রোধ জন্মে গেল। যে মানুষটা তাকে একটুও বুঝে না। বুঝতে চায় ও না৷ তারজন্য কেন এই বেহায়া মন কষ্ট পাবে? এই কষ্টকেই যেন সে শাস্তি দেবার পণ করল। যাওয়ার আগে তাই কল্পের সঙ্গে দেখা করেও এলো না। বাসে তার পাশে নিয়ন আর মায়ের পাশে মিলন বসেছে। ইতি বাইরে তাকিয়ে আছে। চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। তবুও কিছু করার নেই। হয়তো গতকাল মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা বলার সুযোগ হয়নি৷ কিন্তু তার আগ্রহ কি কল্প ভাইয়া জানেন না? পড়তে গিয়ে কি সেরকম কোনো ইঙ্গিত সে দেয়নি? কত পাগলামিই তো করেছে। সেগুলোতে কি ভালোবাসা প্রকাশ পায়নি? প্রায়ই পড়ার টেবিলে বসে ইতি ইচ্ছা করেই কলম ফেলে দিতো নিচে। তারপর তুলতে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে কল্পের পায়ের পাতা দেখতো। চেয়ারে বসে থাকায় ওর জিন্স প্যান্ট এতটাই টানটান হয়ে থাকতো যে পুরুষালি সুঠাম দু’টো উরু আরও বেশি আকর্ষণীয় মনে হতো। একদিন ভীষণ ইচ্ছা করেছিল ওর পা ছুঁয়ে দিতে। ইতি ওর পায়ের পাতায় আলগোছে নিজের পা রেখে দিল। সঙ্গে সঙ্গে কেমন ভালো লাগার আবেশে চোখবুজে এলো।
তখনই কল্প ধমক দিয়ে বললো, ‘এটা কি হলো? কোথায় পা রেখেছো?’

ইতি কাতর চেহারায় বললো, ‘স্যরি বুঝতে পারিনি পায়ে রেখেছি।’

তারপর টেবিলের নিচে মাথা নিয়ে পা ছুঁয়ে সালাম করে উঠে বললো, ‘এবার হয়েছে তো?’

কল্প বিভ্রান্ত হয়ে বললো,

– ‘বুঝতে পারছি না ঠিক হলো কি-না। যাইহোক পড়ো।’

এইযে এতকিছু করেছে সে এগুলো থেকে কি কল্প ভাইয়া কিছুই বুঝতে পারেনি? আর কত নিজেকে ছোট করলে বুঝবে? আর কত সস্তা হলে বুঝবে? আর কত বেহায়া হলে বুঝবে? তবুও তো কত শখ করে, বিশেষ একটা দিনে দেখে, আয়োজন করে গতকাল বের হয়েছিল মনের কথাগুলো ক্লিয়ার বলে দেয়ার জন্য। সেই সুযোগটাও দিল না। রাতে রিকশায় তাকে একা ফেলে চলে এলো বাসায়। বাসের কেউ দেখে ফেলার আগে ইতি টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে নিল।

নানাবাড়ি বেশ ভালোই দিন কাটছিল ইতির। হুস্না বেগম তাকে রেখে দু’দিন পর চলে এলেন বাড়িতে৷ নিয়ন, মিলনের স্কুল আছে। ইতি একা একা নিজেকে ধরে-বেঁধে এক সপ্তাহ থেকে গেল। কিন্তু তানিয়া প্রতিটি রাতে ওর মুখে কল্পের গল্প শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে যায়। একদিন ইতিকে ধরে বললো,

– ‘শোন ইতি, কল্প ভাইয়া হয়তো তোর ভালোবাসার কথা জানে না। অথবা বুঝতে পারেনি। আমি প্রেম করিনি তাই জানি না ছেলেদের ব্যাপারে। তবে মানুষ হিসাবে যতটুকু বুঝি ছেলেরা মেয়েদের মতো সবকিছু এত খেয়াল করে চলে না। গিয়ে দেখ ভাবছে তুই এরকমই। এমনিতেই এরকম করিস ওর সঙ্গে। তুই এভাবে অভিমান করে থেকে লাভ নাই। সারাক্ষণ ওর কথাই তোর মুখে। কল্প তোর রক্তে মিশে গেছে। তাই হয় ওকে বলে ফেল ভালোবাসার কথা। আর না হয় যেহেতু তোদের বাড়িতেই আছে। ধীরে ধীরে ওর পছন্দমতো চলাফেরা কর। তারপর একদিন বলে দে। তুই দেখতে এত সুন্দর যে, যেকোনো ছেলেরই মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা। কল্প ভাইয়ারও হবে৷ বলে দে, অথবা লেগে থাক৷ বাড়িতেই চলে যা।’

ইতি যেন তানিয়ার কথায় উজ্জীবিত হলো। এমনিতেই এক সপ্তাহ চলে যাওয়ায় অভিমানের পাহাড়ও ধীরে ধীরে বরফের মতো গলে গেছে। ক্রমশই কল্পকে দেখার জন্য মন ছটফট করছিল। তাই ভোরেই বাবাকে ফোন দিয়ে জানায় এসে নিয়ে যেতে। সেদিনই মুজিব উদ্দিন নিতে আসেন। পরেরদিন তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন। তানিয়ার কথা মতো পুনরায় নতুন উদ্দামে সে কল্পের পেছনে লাগবে। বাড়িতে এসে উঠে করিডরে এসে সবচেয়ে বেশি অবাক হলো নীলা আন্টির কাণ্ড দেখে। দুপুরে ফরিদ সাহেব চা খেতে চাইছিলেন। নীলা চা নিয়ে যাবে তখনই ইতিকে দেখে কাপ মেঝেতে রেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। পুরো মুখে চুমু খেতে খেতে কেঁদে দিল। ইতি হাসতে হাসতে বললো,

– ‘আরে কি হয়েছে তোমার?’

– ‘তুমি আজ আসবে জানতাম না তো।’

– ‘কেন বাবা যাচ্ছেন জানো না?’

– ‘না, তুমি এসেছো কি যে আনন্দ লাগছে। খুবই একা একা লেগেছে এতদিন৷ দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।’

ইতি মুচকি হেঁসে জড়িয়ে ধরলো নীলাকে।

– ‘চাঁদনি রাত আছে বুঝলে ইতি। ছাদে বসে আজ অনেক গান শুনাবো তোমাকে।’

– ‘গান না-কি চাচ্চুর গল্প জমে গেছে?’

নীলা লজ্জা পেয়ে বললো,

– ‘চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে আব্বুকে চা দিয়ে আসি।’

নীলা ছুটে চলে গেল। ইতি ঘরে গিয়ে সবার সঙ্গে দেখা করা শেষে কল্পের রুমের দিকে গেল। গিয়ে দেখে ভেতরে কেউ নেই। মনে পড়লো ভার্সিটিতে গেছে। পুরোটা দিন মনে মনে অপেক্ষা করলো। কল্প ফিরে এলো সন্ধ্যায়। ইতি নীলার কাছ থেকে জানলো ভার্সিটি শেষে এখন টিউশনি করায় কল্প। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে। কথামতো রাতের খাবার শেষে নীলা আর ইতি ছাদে গেল। চাঁদ তখন সামনের একটা উঁচু ভবনের উপরে উঠে গেছে। আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। আমগাছের ছায়া পড়েছে উঠানে। ইতি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। এখনও সে যায়নি কল্পের রুমে। খাওয়ার সময়ও সামনে আসেনি। ভেবেছিল ডাকবে তাকে। কিন্তু ডাকেনি কল্প। আচ্ছা এইযে বাইরে জোছনায় চারপাশ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষটার কি দেখতে ইচ্ছা করে না? মন উথাল-পাতাল করা এই জোছনার রাতে পড়ার টেবিলে বসে আছে কিভাবে!

মাদুরিতে বসে আছে নীলা।
গুনগুন করে সে চোখবুজে রবীন্দ্র সংগীত গাইছে,

“নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে….”

ইতি পিছু ফিরে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে নেমে যায়। দরজায় নক না করেই ঢুকে পড়ে। কল্প পড়ার টেবিলে বসা। ইতিকে দেখেই বললো,

– ‘কি খবর ইতি। তুমি এসেছো শুনেছি, বসো।’

ইতি আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘ছাদে চলুন। সেখানে গিয়ে গল্প করি।’

– ‘কি বলো এসব, রাতের বেলা ছাদে কেন যাবে?’

– ‘রাত মানে? চাঁদনি রাত। জানালা খুলে তাকিয়ে দেখুন দিনের মতো আলো।’

– ‘জানালা খুললে মশা আসবে। চাঁদনি রাত আমি জানি। তাতে কি হয়েছে?’

– ‘আপনি ঘরে বসে থাকবেন?’

– ‘তো বাইরে বসার কি আছে৷ চাঁদনি রাত কি আশ্চর্যের কিছু। মাসে পনেরো দিনই তো থাকে।’

– ‘এতদিন পর আসলাম। আপনার ইচ্ছা করছে না আমার সঙ্গে গল্প করতে?’

– ‘তাইতো বলেছি বসো। গল্প করি। তাছাড়া এসেছো যেহেতু এখন তো রোজই দেখা হবে। উদযাপন করার মতো তো কিছু হয়নি।’

ইতি দরজা ‘ঠাস’ করে লাগিয়ে আবার ছাদে চলে গেল। নীলা এখনও বসে বসে গুনগুন করছে,
“দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে,
আমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে ॥
বাতাস বহে মরি মরি, আর বেঁধে রেখো না তরী–
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে…..।”

ইতি গিয়ে নীলার কোলে মাথা রাখে। খানিকক্ষণ এভাবে শুয়ে থেকে বলে,

– ‘নীলা আন্টি, তুমি চাচ্চুকে ভীষণ মিস করো তাই না?’

নীলা গান বন্ধ করে বললো,

– ‘কেন?’

– ‘গান গাওয়ার সময় প্রায়ই তোমার চোখে পানি আসে। তখন সুর আরও বেশি করুণ হয়ে যায়।’

নীলা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইতির মাথায় হাত বুলায়। ওর বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের সঙ্গেই থাকতো। কিন্তু ভাবি বিশেষ সুবিধার ছিলেন না। বাচ্চা-কাচ্চা হয়ে তাদের আলাদা সংসার। সে এসএসসি দিতেই বিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে ওরা। এদিকে ইতির চাচ্চু মুকিদ উদ্দিন অনার্সে পড়ে৷ বেকার। বয়স কম। সব মিলিয়ে তাকে বিয়ে করা অসম্ভব। কিছুদিন পর আবার তার মাথায় ভূত চাপে কয়েক দেশ হয়ে দালালদের মাধ্যমে ইতালি যাবে। তাইই করলো সে। তখনও মুকিদ ইতালি যায়নি৷ গ্রিস ছিল। যাওয়ার চেষ্টায় আছে। মানসিক অবস্থা ভালো নয়। এদিকে নীলা ভাবির যন্ত্রণা আর বিয়ের চাপ নিতে না পেরে একদিন সোজা চলে আসে এ বাড়িতে। সবকিছু খুলে বলে ফরিদ সাহেবকে। মুকিদ কিছুই জানে না। এ বাড়ির মানুষগুলো তাকে অবাক করে দিয়ে সাদরে গ্রহণ করে নিল। মুকিদকে ফোন করে ধমকালেন ফরিদ সাহেব। সে কেন এই অবস্থায় মেয়েটিকে রেখে বিয়ে না করেই চলে গেল। এ বাড়িতে এত মানুষ থাকতে পারলে, খেতে পারলে, নীলা কি পারতো না? ক’দিনের ভেতরেই ফোনে বিয়ে দেন তাদের। এরপর থেকেই এ বাড়িতে আছে নীলা৷ কিন্তু সমস্যা হলো মুকিদ দেশে আসতে পারছে না। ইতালিয়ান কার্ড না পেয়ে আসা যাবে না। আরও কয় বছর এভাবে অপেক্ষায় থাকতে হবে নীলা জানে না। মুকিদও জানে না।

– ‘আন্টি গান গাও।’

– ‘ভালো লাগছে না ইতি।’

– ‘গাইলে ভালো লাগবে। ওইযে নজরুল সংগীত একটা গাও তুমি। আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়। ওইটা গাও।’

নীলা চোখবুজে গাইতে শুরু করে,

“আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়
আমার কথার ফুল গো
আমার গানের মালা গো
কুড়িয়ে তুমি নিও
আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়….।”

ছাদে কারও পদশব্দ পেয়ে নীলা চুপ হয়ে যায়। রাতের নীরবতা নেমে আসে ছাদে। একদল জোনাকিপোকা ঝলমলে বাতি জ্বালিয়ে উড়ে গেল তাদের মাথার উপর দিয়ে। কল্প সামনে এসে বললো,

– ‘আপনাদের গানের আসরে কি আমি একটু বসতে পারি?’

__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলামমায়াডোর (১৩ পর্ব)
.
ইতি অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘আমি জানি না। নীলা আন্টি চাইলে বসুন।’

– ‘কিন্তু তুমিই তো আমাকে বললে ছাদে আসতে।’

নীলা দাঁত কটমট করে ইতির দিকে তাকায়। মুচকি হাসে কল্প। তারপর বসতে বসতে বলে,

– ‘ওর দিকে এভাবে তাকাতে হবে না আন্টি৷ আমি জানি আপনি কারও সামনে গান গাইতে লজ্জা পান। সুতরাং গান গাওয়ার জন্য বলবো না।’

নীলা মুখ টিপে হেঁসে বললো,

– ‘তাহলে বাঁচালে তুমি। ভেবেছিলাম বিপদে পড়ে গেছি।’

ইতি গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থেকো বললো,

– ‘কিন্তু সে তো আর তোমার শ্বশুর না। শোনালে কি হয়?’

নীলা ফিক করে হেঁসে ধমক দেয়, ‘চুপ ইতি, তারচেয়ে বরং আমি গিয়ে লুডু নিয়ে আসি। খেলবো বসে বসে।’

নীলা নিচে চলে গেল৷ ইতি বাঁ পা ভাজ করে ডান পায়ের হাঁটুতে কনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। মাথার চুলগুলো পিঠময় ছড়ানো। কল্প চারদিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,

– ‘জানো আমার কেন চাঁদনি রাত দেখার কোনো আগ্রহ নেই?’

ইতি জবাব দিল না৷ কল্প নিজেই বললো,

– ‘কারণ তোমাকে যেখানে রোজই দেখি। চাঁদ দেখার আগ্রহ আসবে কিভাবে বলো? তোমার সৌন্দর্যের কাছে তো এইসব চাঁদ-টাদ তেতুল গাছের পে*ত্নী।’

ইতি তাতেও জবাব না দিয়ে মুখ টিপে কেবল হাসে। কল্প আবারও ফিসফিস করে বললো,

– ‘চুলগুলো এত সুন্দর করে চারদিকে ছড়িয়ে বসেছো। আমি শিওর এতক্ষণে উল্টো চাঁদই তোমাকে দেখা শুরু করেছে।’

ইতির এত ভালো লাগছে। কি সুন্দর করে প্রশংসা করছে মানুষটা। ইচ্ছা করছে ওর কোলে মাথাটা রাখতে। এই ছাদে, খোলা আকাশের নিচে। মাঝে মাঝে দু’হাত বাড়িয়ে কল্পের মুখটা ছুঁয়ে দেবে সে। ইতি ভেজা গলায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘আপনি এত মিষ্টি করে কথা বলতে পারেন জানতাম না তো।’

কল্প মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘আরও মিষ্টি করে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু তুমি তো মিষ্টি মুখটা চাঁদকে দেখাচ্ছ, আমাকে না।’

ইতি ফিক করে হাসলো। তারপর ওর দিকে ফিরে বললো,

– ‘জ্বি বলুন আপনার মিষ্টি কথাগুলো শুনি।’

কল্প মোবাইল হাতে নিয়ে বললো,

– ‘ফেইসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে একটা লেখা পেলাম। একজন লেখকের। হয়তো বেচারা চাঁদ দেখে দেখে প্রণয়িনীকে নিয়ে লিখেছে, সেটা পড়ি?’

ইতি ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে থেকে মাথা কাঁত করে সম্মতি দিল।

কল্প মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে বললো,
“ভেসে যাওয়া প্রতিটি চাঁদনি রাতে
তোমায় বাহুডোরে বেঁধে ভালোবাসি বলবো;
মাদুরিটা বিছিয়ে নিয়ে অমন জোছনা রাতে, বাড়ির ছাদে
তোমার কোলেই মাথা পেতে রাখবো।”

ইতির বুকটা শিরশির করে উঠে। পুরো শরীরজুড়ে উষ্ণ এক অনুভূতি বয়ে যায়। খুব একটা উঁচুমানের কোনো কথা নয় এগুলো, একেবারে সহজ, সরল, স্বাভাবিক কথা৷ তবুও ইতির কাছে অসাধারণ হয়ে উঠলো তার মনের অপ্রকাশিত বাসনার সঙ্গে মিলে যাওয়ায়।
মুগ্ধ হয়ে বললো,

– ‘যে লিখছে তার নাম কি?’

– ‘জবরুল ইসলাম।’

‘এটা আবার কেমন নাম! কিন্তু লেখাটা ভালোই লেগেছে’ তারপর খানিক থেমে বললো ‘আপনার ইচ্ছা হয় না এরকম?’

কল্প মোবাইল মাদুরিতে রেখে বললো,

– ‘কিরকম?’

– ‘ভেসে যাওয়া কোনো এক চাঁদনি রাতে, বাড়ির ছাদে, কোনো রূপবতীকে বাহুডোরে বেঁধে ভালোবাসি বলতে?’

– ‘তা তো হয়ই।’

– ‘তো রূপবতী কাউকে পাচ্ছেন না বলে ধরা হচ্ছে না না-কি?’

– ‘আজব কথা বলো না। রূপবতী তো তুমিও। তাই বলে কি এখন জড়িয়ে ধরতে হবে? সবার প্রতি সেই অনুভূতি আসে না। যেমন তুমি রূপবতী, কিন্তু তোমাকে আমি অন্য চোখে দেখি। এমন নারীও হয়তো একদিন আসবে, যাকে বাহুডোরে বেঁধে ভালোবাসি বলার জন্য আমার মন থেকেও তাগাদা পাব।’

ইতি ক্রোধে অন্যদিকে তাকিয়ে অস্ফুটে বললো, ‘আপনার অন্য চোখ আমি উপড়ে ফেলে দেবো।’

কল্প বিভ্রান্ত হয়ে তাকায়।

– ‘কি হলো, ভুল কিছু বললাম না-কি?’

ইতি মাদুর থেকে উঠে হন-হন করে চলে যায়। কল্প দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ভেবেছিল রাগ ভাঙাবে। অথচ মেয়েটা উল্টো রেগে গেল।
নীলা ইতিকে সিঁড়িতে পেয়ে হাত ধরে বলে ‘কোথায যাচ্ছ, লুডু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। নিলয় নিয়ে রেখেছিল তোমাদের বিছানার নিচে। তাই দেরি হলো। আসো।’

– ‘আন্টি হাত ছাড়ো। আমি খেলবো না। তোমরা খেলো।’

ইতি নিচে চলে এলো৷ নীলা ছাদে গিয়ে আমতা-আমতা করে বললো,

– ‘ইতি চলে গেল কেন কল্প?’

– ‘বুঝতে পারিনি।’

– ‘মনে হলো রাগ করে গেছে, আচ্ছা বাদ দাও। আজ আর খেলবো না।’

নীলাও চলে এলো ছাদ থেকে। ইতি বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।
রাগে শরীর কাঁপছে। নিজের চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। একটা ছেলে এতটা অনুভূতিহীন হয় কিভাবে? বয়স কম হলেও তো সে এতটুকু জানে পুরুষ মানুষদের নারীদের প্রতি সীমাহীন দূর্বলতা থাকে। রাস্তায় ষাট বছরের বৃদ্ধও রূপবতী নারী দেখলে লোলুপ চোখে তাকিয়ে থাকে। সে কি রূপবতী নয়? তার রূপ দেখে কি একজন পুরুষের বিশেষ কোনো অনুভূতি জাগার জন্য যথেষ্ট নয়? তাহলে ‘অন্য চোখ’টা আবার কি? সে তো কল্পের চাচি-খালা লাগে না যে অন্য চোখে দেখতে হবে। না-কি এত পাগলামির পরও তাদের সম্পর্ক এখনও গম্ভীর রয়ে গেছে। ইতির আরও জেদ হলো। এভাবে বারবার চলে আসলে হবে না৷ আরও চড়াও হবে সে। আরও বেপরোয়া। নিজের মুখেই তো ছাদে প্রশংসা করেছে। তবুও কেন সে অন্য চোখে দেখবে? অন্য চোখ উপড়ে ফেলে অবশ্যই প্রেমে ফেলে ছাড়বে সে কল্পকে।

হুস্না বেগম এসে তাকে শুয়ে থাকতে দেখে বললেন,

– ‘কিরে মা, ঘুমিয়ে যাচ্ছিস না-কি। ঘুম পেলে ওদের সঙ্গে খেয়ে নে৷ তোর বাবা আজ এখনও আসেনি। ঘুম পেলে আব্বা আর কল্পের সঙ্গে খেয়ে নে।’

ইতির মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি উদয় হলো। সে উঠে মায়ের পিছু পিছু রান্নাঘরে আসে। দাদার পাশে গিয়ে চেয়ার টেনে সোজা কল্পের মুখোমুখি বসলো। টেবিলে খাবার দিয়ে হুস্না বেগম বললেন, ‘কিছু লাগলে ডাক দিছ তো মা’ বলে তিনি সিরিয়াল দেখতে চলে গেলেন।

কল্প প্লেটে খাবার নিচ্ছে। ইতি মুখ টিপে হেঁসে ওর দিকে তাকিয়ে টেবিলের নিচ দিয়ে পা দু’টো ওর কোলে রেখে দিল। বাসায় একটা বিড়াল আছে। প্রায়ই লাফালাফি করে। কল্প প্রথমে ভাবে বিড়াল হয়তো কোলে উঠে বসে আছে। প্লেটে ভাত নিতে নিতেই বাঁ হাতে ‘ঠাস’ করে বিড়ালকে থা*প্পড় দিয়ে ঠোঁটে ‘যাহ’ বললো।
ব্যথায় ‘উফ’ করে উঠলো ইতি। ফরিদ সাহেব ইতির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ফাজলামি না করে ভাত খা, মেরেছে বিড়ালকে আর তুই এখান থেকে “উফ” করছিস কেন।’ কথাটি বলে তিনি মাথা নীচু করে খাবারে মনযোগ দিলেন। কল্প ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চারিদিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলছে৷ পা সরানোর জন্য বারবার হাত দিয়ে ঠেলছে। কিন্তু ইতির পা সরানোর কোনো নামগন্ধ নেই। একবার নিরুপায় হয়ে ভাবে চিমটি দিলে কাজ হতে পারে। জোরে দেবে না-কি আস্তে দেবে? এত সুন্দর কোমল পায়ের পাতায় জোরে চিমটি দিলে নিশ্চয় দাগ পড়ে যাবে। তাছাড়া বেশি ব্যথা পেয়ে যদি চিৎকার দিয়ে উঠে তাহলে তো আবার ফরিদ সাহেব বুঝে যাবেন। সে আস্তে-আস্তে চিমটি দিল। সঙ্গে সঙ্গে ইতি ‘উফ’ করে উঠলো। ফরিদ সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন,

– ‘তোর কি পেটে কৃমি হইছে? শান্তি নাই তোর জানে?’

– ‘মশা কামড়ালে কি উফ বলবো না?’

ফরিদ সাহেব পুনরায় খেতে শুরু করলেন। কল্প বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে ভেবে খাবার খেতে শুরু করে। পা থাকুক,
কোনোভাবেই সরানো যাবে না। তাকে শান্ত দেখে ইতি পা নাড়াতে নাড়াতে বললো, ‘উফ কি মজা।’

ফরিদ সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,

– ‘নির্বোধের বাচ্চা না-কি? একা একা কি বলিস?’

– ‘তরকারি ভালো হলে কি আরেকজনকে ডেকে এনে বলতে হবে মজা হইছে? নিজেই বলতে হয়। সব মজার কথা সবাইকে বলা যায় না।’

– ‘খেতে বসে রসিকতা করবি না। খেতে বসেছিস চুপচাপ খা।’

– ‘রসিক বন্ধুর সঙ্গেই তো রসিকতা করছি।’

ইতির সাহস দেখে কল্প ‘হা’ করে তাকিয়ে আছে। ওর মনে হয় মাথা ঠিক নেই আজ। তাড়াতাড়ি খেয়ে চলে যেতে পারলেই বাঁচে কল্প। খানিক পরেই হুস্না বেগমকে দরজার সামনে দেখেই তার বিষম খেয়ে হেঁচকি উঠতে শুরু করলো।

– ‘আরে গাধি বসে কি দেখছিস ওকে পানি দে।’

ইতি আলগোছে পা নামিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিল। তবুও হেঁচকি আর থামলো না তার। প্লেটের খাবার রেখেই উঠে চলে গেল। হুস্না বেগম আফসোস করে বললেন, ‘দেখো তো হেঁচকির যন্ত্রণায় ছেলেটা খেতেই পারলো না।’

ইতি সুর মিলিয়ে বললো,

– ‘মা একটা প্লেটে করে উনার রুমে ভাত ঢেকে রেখে আসবো। রাতে উঠে ক্ষিধে লাগলে খেতে পারবে।’

– ‘হ্যাঁ ভালো কথা বলেছিস। তুই খেয়ে রেখে আয় তো।’

ইতি খাওয়া শেষে সত্যি সত্যি প্লেটে করে কল্পের জন্য খাবার নিয়ে চলে গেল। কল্প বিছানায় শুয়ে-শুয়ে হেঁচকি তুলছে। টেবিলে প্লেট রেখে ইতি মেঝেতে হাঁটু ভাজ করে বসে কল্পের চুলে আঙুল ডোবায়। চোখ বুঝে আসে ভালো লাগায়। কিন্তু কল্পের গলার সুর রুক্ষ, বেরসিক। সে হেঁচকি তুলে বললো,

– ‘এগুলো কিরকম ফাজলামো হচ্ছে ইতি?’

ইতির গলায় তবুও মমতা মাখা। গাঢ় মমতা নিয়ে ঠোঁট কানের কাছে এনে ফিসফিস করে বলে,

– ‘আপনাকে এত ভালো লাগে কেন বলুন তো জনাব?’

কল্প বিস্মিত হয়ে আধশোয়া হয়ে বসে তাকিয়ে রইল। ইতি বিছানায় কনুই ঠেকিয়ে হাতের তালুতে থুতনি রেখে বললো,

– ‘টেবিলে খাবার ঢাকা আছে ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিয়েন।’

কল্প উঠে আসন পেতে বসে রূঢ় গলায় বললো,

– ‘তুমি কি করছো এসব? এগুলোর মানে কি? কেউ দেখলে কি হতো জানো?’

ইতি উঠে বারান্দায় সতর্কভাবে দেখে এসে পাশে বসে বললো,

– ‘মাথা খারাপ হয়ে আছে, এতকিছু ভেবে কি কাজ করছি না-কি?’

– ‘মাথা খারাপ মানে?’

– ‘এত কথা বলবেন না তো। হেঁচকি মনে হয় কমে গেছে। বসুন আরাম করে, আমি খাবার খাইয়ে দেই হাত দিয়ে?’

কথাটা শুনেই কল্পের আবার হেঁচকি উঠে গেল, ‘কি বলছো তুমি এসব!’

ইতি ওর গালে পরম মমতায় হাত ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

– ‘ইশ খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে কি ভীষণ মায়াবী লাগছে আপনাকে। আর মুখ শেভ করবেন না তো।’

কল্পের হেঁচকি আরও বেড়ে গেল। ইতি হাসতে হাসতে গ্লাসে পানি ঢেলে এনে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘পানি খান।’

কল্প পানি খেয়ে বললো, ‘তোমার কি আজ মাথা খারাপ হয়ে গেছে? তুমি এগুলো কি বলছো?’

ইতি আবার উঠে গিয়ে সতর্কভাবে বারান্দা দেখে এসে বললো ‘আজ আমার আসলেই মাথা খারাপ। আপনি বাঁচতে হলে একবার আমাকে বাহুডোরে বেঁধে জড়িয়ে ধরুন।’

কল্প বিস্মিত হয়ে বিছানা থেকে নেমে ওর হাত ধরে টেনে বললো,

– ‘তুমি এখনই আমার রুম থেকে বের হয়ে যাও। হঠাৎ কেউ এসে এসব শুনলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’

ইতি আলগোছে কল্পের বুকের সঙ্গে মিশে গেল৷ দম আঁটকে গেল কল্পের। ইতি শক্ত করে ধরলো তাকে। দুজনের শরীরই যেন কাঁপতে শুরু করেছে। ইতি ঘোর লাগা গলায় বলে,

– ‘সর্বনাশ আর নতুন করে কি হবে বলুন, আপনি তো আমার সর্বনাশ অনেক আগেই করে ফেলেছেন।’

কল্প বিস্মিত হয়ে তাকে ঠেলে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,

– ‘করছো কি তুমি! কেউ দেখে ফেললে কি হতে পারে তোমার কোনো ধারণা নাই।’

ইতি চম্বুকের মতো মিশে আছে। বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে উষ্ণ শ্বাস ফেলে ঘোরলাগা গলায় বললো, ‘ইশ ছাড়তে ইচ্ছা করছে না। আপনার বুকে দুনিয়ার সকল শান্তি নিয়ে বসে আছেন।’

কল্প কাতর গলায় বলে,

– ‘প্লিজ ইতি, ছাড়ো আমাকে। তোমার মাথা ঠিক নাই। দু’জনই বিপদে পড়বো আজ।’

ইতি ছেড়ে দিয়ে দুইহাতে কল্পের মুখ ধরে বললো,

– ‘ইশ এত কাতর হয়ে বলেন কেন? এভাবে বললে কি না ছেড়ে পারি? আচ্ছা আপনি কি জানেন? আপনাকে যে আমি অন্য চোখে দেখি?’

কল্প ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে বললো,

– ‘তুমি আজ যা করেছো তোমাদের বাড়িতে আর থাকতে পারি না আমি। কয়েকদিনের ভেতরেই আমার চলে যেতে হবে।’

ইতি ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড ভয় পেল। কল্প যদি সত্যিই চলে যায়? তারপর সঙ্গে সঙ্গে সুলতানার একটা খেলার কথা মনে পড়ে গেল। চেহারা বদলে নিয়ে মুখে হাত দিয়ে খিলখিল করে হেঁসে উঠে বললো,

– ‘আপনি ভয় পাইছেন তাই না? এইযে আমি কান ধরেছি। প্লিজ রাগ করবেন না। এটা একটা খেলা ছিল।’

কল্প ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রূঢ় গলায় বললো,

– ‘খেলা মানে?’

– ‘ ডেয়ার ট্রুথ খেলা। সুলতানা দিয়েছিল এই ডেয়ার। একটা সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আবোল-তাবোল কিছু কথা বলতে হবে। অবশ্য পূরণ না করে মিথ্যে বলতে পারতাম। কিন্তু সে কসম করিয়ে দিয়েছে যাতে সত্য বলি।’

– ‘থা’প্পড় দিয়ে তোমাদের দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত। এটা কেমন খেলা? আর একজন ডেয়ার দিলেই পূরণ করার জন্য ফরজ হয়ে যায় না। ফালতু কোথাকার। আর এটা ডেয়ার হলে রান্নাঘরের ওইগুলো কি ছিল?’

– ‘স্যরি বললাম তো।’

– ‘শোনো ইতি, ছেলেরা মেয়েদের মতো নিজেকে সামলাতে পারে না। তোমাদের পিছু পিছু ঘুরলেও কিচ্ছু হয় না। কিন্তু একটা ছেলের সঙ্গে এরকম করলে নিজেকে সামলে রাখা তারজন্য একটা যুদ্ধের মতো হয়ে দাঁড়ায়। তুমি যথেষ্ট সুন্দরী একটা মেয়ে। এইযে কাজগুলো করেছো। আমি যদি হঠাৎ আবেগের বশে হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে দরজা বন্ধ করে দিতাম? তখন কি হতো?’

ইতি মাথা নুইয়ে থুতনি বুকের সঙ্গে লাগিয়ে বললো,

– ‘তা করবেন না জানি। কারণ আপনি তো আমাকে অন্য চোখে দেখেন।’

কল্প কোমরে হাত দিয়ে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বলে,

– ‘প্লিজ তুমি যাও, চলে যাও বলছি।’

– ‘কেন? না গেলে কি দরজা বন্ধ করে ফেলবেন? কি করবেন বন্ধ করে?’

কল্প হেঁসে ফেললো। তারপর হাত ধরে টেনে বারান্দায় বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। ইতির পুরো শরীরে ‘ওম ওম’ একটা ভাব৷ ভাবতেই পারছে না খানিক আগে কল্পকে জড়িয়ে ধরেছে সে৷ এখনও নাকে পুরুষালি মিষ্টি একটা ঘ্রাণ লেগে আছে। এখনও ওর গালের স্পর্শ দুইহাতে লেগে আছে। একটা মানুষ কতদিন গোসল না করে থাকতে পারে? এই স্পর্শগুলো সে কিভাবে গোসল করে জলের সঙ্গে ভাসিয়ে দেবে? চোখ এখনও বারবার ভালো লাগার আবেশে বন্ধ হয়ে আসছে ইতির। কবে যে পুরোপুরি নিজের করে পাবে মানুষটাকে। ইতি ধীরপায়ে রুমে এসে একটা বালিশ ভীষণ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখবুজে শুয়ে রইল।

___চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here