মায়ার বাঁধন পর্ব -১৫+১৬

#মায়ার_বাঁধন 🍂
১৫.
কী সমস্যা তোমার? ওভাবে পালিয়ে আসতে চাইছিলে কেন? বড় ভাবি মানুষটা এমনই। ওনাকে সুযোগ দিলে একেবারে মাথায় চড়ে বসবে।

-“কিন্তু সে তো বয়সে বড়। এভাবে বলাটা বোধহয় ঠিক হলো না।”

-“রাখ তো তোমার নীতি কথা। এরপর যদি দেখি প্রতিবাদ না করে পালিয়ে এসেছ তাহলে সেদিনই বোঝাব মজা।”

তুরান হনহনিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। নীরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। বিড়বিড়িয়ে বলে, “আমাকে শেখাচ্ছে প্রতিবাদ করা। হায় আল্লাহ কী দিন এলো।”

.

ফ্রেশ হয়ে একসঙ্গে জাহানারা চৌধুরীর ঘরে গেল নীরা, তুরান। জাহানারা চৌধুরী সবেই নামাজ সেরে উঠেছেন। ওদেরকে দেখে আনন্দে একগাল হাসলেন। জায়নামাজ টা যথাস্থানে রেখে এগিয়ে এলেন ওদের কাছে। দুজনকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,

-“কেমন আছিস তোরা? কেমন সময় কাটল ও বাড়িতে?”

তুরান বলল,
-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো মা। শরীর কেমন আছে?”

নীরাও উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে। উত্তরের অপেক্ষায়। জাহানারা চৌধুরী ওদের নিয়ে বিছানায় যেতে যেতে বললেন,

-“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।”

-“বাবা এখনো ফেরেনি।”

-“নাহ, চলে আসবে। তোরা চল খেয়ে নিবি। সেই কখন বেড়িয়েছিস। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই?”

-“হ্যাঁ চলো। আসলেই ভীষণ খিদে পেয়েছে।”

নীরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“এমন একটা ভাব করছেন মনে হচ্ছে কত বছরের অভুক্ত।”

তুরান কিছু বলার আগেই জাহানারা চৌধুরী বলেন,
-“আর বলিস না ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা এমন বাহিরে হাজার খেলেও ঘরে এসে বলবে মা খিদে পেয়েছে। এমনও অনেক হয়েছে বিয়ে বাড়ি থেকে খেয়ে এসে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে এসে ওর জন্য রান্না বসাতে হয়েছে।”

জাহানারা চৌধুরী ছেলের কথা বলছেন আর হাসছেন। তুরান লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকে উঠে চলে গেছে। নীরা সেদিক পানে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে, “পেটুক একটা। মনে হচ্ছে আমার বাবা-মা ওকে না খায়িয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। অসভ্য।”

অতঃপর শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,”তোমার ছেলে এখন খায় খাক আমি কিন্তু বাবা এলে তবে খাব।”

জাহানারা চৌধুরী মুচকি হেসে নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,
-“আচ্ছা তাই হবে।”

তুরান খেতে বসতে গিয়ে হিয়া-টিয়াকেও ডেকে নিল। মেয়ে গুলো আগামীকাল সকালেই বাড়িতে চলে যাবে। স্কুল আছে। এখন খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুক। শরীরটা চাঙ্গা থাকবে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তুরানের চোখ দুটো কাউকে খুঁজছে। বারেবারে সে এদিক সেদিক দেখছে। শেষমেশ আশাহত হয়ে জাহানারা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেই বসে,

-“মা, নীরা কোথায়? সে খাবে না?”

-“নাহ, বলল তোর বাবা এলে একসঙ্গে খাবে।”

তুরানের মুখটা ছোট হয়ে এলো। না খেলেও এটলিস্ট এখানে থাকতে তো পারত। অন্তত খাবারটা সার্ভ করে দিত। বড্ড অবুঝ বউ তার। স্বামীর মন বোঝে না। বাকি খাবার টুকু নিরবে খেয়ে প্রস্থান করল তুরান। জাহানারা চৌধুরী মুচকি হাসলেন। ছেলের মনের অবস্থা কিছুটা হলেও বুজে পারছেন তিনি। মা যে!

—–
নীরা ফোনে কথা বলছে। বেশ প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছে মেয়ে টাকে। হেসে হেসে কথা বলছে। তুরানের মনে হঠাৎ হিংসার আগুন জ্বলে ওঠে। কই তার সঙ্গে কথা বললে তো এভাবে হাসে না মেয়েটা। তাহলে এখন কেন হাসছে? কার সঙ্গে হাসছে? ধীর পায়ে এগিয়ে যায় তুরান। একেবারে নীরার পেছন ঘেঁষে দাড়ায়। কিন্তু কিছু শুনতে পায় না। নীরা তখনই ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলে কল কেটে দেয়। কল কেটে পেছন ঘুরতে নিলেই নীরার মাথা গিয়ে ঠেকে তুরানের বক্ষ বরাবর। চমকিত হয় দুজনেই। পরিস্থিতি ঘোরাতে তুরানই প্রথম বলে,

-“কার সঙ্গে কথা বলছিলে?”

নীরা উত্তরে ‘বা’ বলেও থেমে যায়। কী ভেবে যেন দুষ্টু হাসি হাসে। তুরানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-“সন্দেশ করছেন?”

-“বয়েই গেছে।”

তুরান চটজলদি সরে যায়। চোখে মুখে তার কিঞ্চিৎ ক্রোধের আভাস। কিছুদূর যেতেই মেয়েলি হাসির ঝংকারে থমকে দাড়ায়। নীরা হাসছে। ঘর কাঁপানো হাসি। কিয়ৎক্ষণ এভাবেই চলে। তুরান অপলক চেয়ে থাকে। একসময় নীরা ধীরে ধীরে থেমে যায়। একেবারে গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তোলে মুখশ্রীতে। কদম গুনে এগিয়ে আসে তুরানের সম্মুখে। চোখে চোখ রাখে। এক হাতে টেনে ধরে তুরানের শার্টের কলার। অকস্মাৎ ঘটনায় বিষয়াবৃত হয়ে তাকিয়ে রয় তুরান৷ নীরা তোয়াক্কা করে না সে চাহনির ৷ সে নিজের মতো করে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,

-“যাকে মেতে নিতে এতো দ্বিধা, মিছে কেন তাকে হারাবার ভ’য়?”

কলার ছেড়ে তড়িঘড়ি করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় নীরা। নিচ থেকে শোনা যাচ্ছে জাহানারা চৌধুরীর ডাক,”নীরা,
তোর বাবা এসেছে খেতে আয়।”

তুরান এখনো সেভাবেই দাড়িয়ে। কিছু প্রশ্ন, কিছু অনুভূতি ব্যাপাক হারে মস্তিষ্কে আন্দোলন চালাচ্ছে ক্রমাগত। আচ্ছা, সত্যিই কী সে নীরাকে নিয়ে ভীত? কিন্তু কেন? হ্যাঁ কারণ টা খুব সহজ। নীরা তার বউ। পরিস্থিতির সংকটে হয়তো এখনো তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি তাতে কী খুব শীঘ্রই সবকিছু সহজ হবে। তারাও হবে আর পাঁচটা সুখী দম্পতিদের মতো একজোড়া।

—–
“আয় মা আয়। তো কেমন আছে আমার মেয়েটা? বাবাকে ছেড়ে গোটা একটা দুটো দিন পার করে ফেললি।”

নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কথা গুলি বললেন আলহাম চৌধুরী। নীরা আদুরে কন্ঠে বলল,

-“এভাবে বলছ কেন বাবা? খুব মিস করেছি আমি তোমাদের। তুমি, মা সবাইকেই এই এতোগুলো মিস করেছি। সত্যিই।”

নীরার বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে নেওয়া আর হাতের ভঙ্গিমা দেখে হেসে ফেললেন আলহাম চৌধুরী। জাহানারা চৌধুরীও হাসলেন। বললেন,”পাগলী মেয়ে আমার।”

অতঃপর খাওয়া শুধু করল তিনজন মিলে। এ যেন এক সুখকর মুহূর্ত। দুতলার ওপরে দুই প্রান্তে দু’জন দাড়িয়ে দেখল সেই দৃশ্য। একজন মুগ্ধ চোখে তো অপরজন ঈষান্বিত দৃষ্টিতে। তুরান ভাবল,

-“মেয়েটা আসলেই সকলের মতো নয়। অতুলনীয় সে। রুপে,গুনে,ব্যবহারে সবকিছুতেই অনন্য।”

এদিকে রিনা ভাবল,
-“এই মেয়ে আমার অধিকারে ভাগ বসাতে এসেছে। সকলের কাছে ভালো সাজা তাই না? কই বাবা তো কখনো আমাকে এভাবে বলেননি। ইনফ্যাক্ট কখনো খোঁজ অব্দি নেই না। মা যেটুকু নেয় তাও অবশ্য দ্বায় ঠেকে। আমিও দেখব তোমার এই ভালো মানুষী কতদিন টিকে।”

—–
রাত গভীর হয়!
নিস্তব্ধ , নিরিবিলি রজনী। গুমোট কক্ষে শুধু দুজনের নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট। ঘড়ির কাঁটায় হয়তো আড়াই টা কী তিনটে হবে। অথচ ঘুম নেই এই কক্ষের মালিকদের চোখে। দুজন কেবল দুদিক ফিরে ঘন নিশ্বাস ফেলছে। দুজনের মধ্যেই চলছে প্রবল উত্তেজনার ঝড়। কিন্তু এগোনোর সা’হ’স বা ইচ্ছে কোনটিই কারোর নেই। তুরানের যে অনাকাঙ্ক্ষিত বাসনা গুলো শুরু থেকেই তৈরি হয়েছে ইদানীং সেই একই জালে নীরাও আটকা পড়ছে। বলিষ্ঠ, সামর্থ্যবান, সুদর্শন স্বামী পাশে থাকতে মনের কোণে অবাধ্য ইচ্ছেরা নাড়া দেবে না এমনটা তো হতে পারে না। তুরানকে নীরার শুরু থেকেই বেশ পছন্দ। স্বামী হিসেবে মেনে নিতেও কোনো আপত্তি ছিল না আর না এখন আছে। কিন্তু তুরান সে তো নীরাকে মেনেই নিল না। নানাবিধ ভাবনাকে আশকারা দিয়ে ধীরে ধীরে প্রবল অস্থিরতায় ভুগতে শুরু করেছে নীরা। ঠিক সেসময়ই বদ্ধ রুমে বজ্রপাতের ন্যায় ঝিলিক দিয়ে ওঠে তুরানের কন্ঠে নীরার নামটি। অতন্ত আবেদনময়ী সেই ডাক যা নীরার ছোট্ট হৃদয় কাঁপিয়ে তুলতে যথেষ্ট। তুরান পুনরায় ডাকে, “নীরাহহহ।” নীরা সইতে পারে না সে ডাক। উপেক্ষাও করতে পারে না। দু’হাতে কান চেপে ধরে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। পরপরই অনুভব করে কাঁধে এক বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ।
#মায়ার_বাঁধন🍂
১৬.
কাঙ্ক্ষিত স্পর্শ অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে পেয়ে চমকে ওঠে নীরা। তড়িৎ বেগে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। তার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। নিশ্বাসের তোড়ে ক্রমাগত বক্ষ ওঠানামা করছে। পরপরই তুরানও উঠে বসে। নীরা চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানছে। তুরানের নিশ্বাসের গতিবেগও প্রখর। কন্ঠনালী আটকে আসছে। কিছু বলতে নিয়েও পারছে না। অতি চেষ্টায় টেনে টেনে বলে,

-“ন নী নীরাহহহ”

নীরা নিশ্চুপ রয়। হাতের মুঠোয় ওড়নার আঁচল শক্ত করে চেপে ধরে। তুরান পুনরায় চেষ্টা চালায়। বলে,

-“নীরাহহ আ আ আমি…. ”

নাহ সম্ভব হয় না। এই শীতের রাতেও অসম্ভব ঘামছে সে।
তুরান নিজের মাথার চুল নিজেই টেনে ধরে। বেসামাল পায়ে বিছানা ছেড়ে নেমে যায় দ্রুত। সিগারেটের প্যাকেট হাতে বেড়িয়ে পড়ে ছাদের উদ্দেশ্যে। নীরা নিশ্চুপে উপলব্ধি করে মানুষটির চলে যাওয়া। ঘাড় ঘুরিয়ে এক পল দেখে নেয়। পরপরই বুকে হাত রেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আপাদমস্তক কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পড়ে।


রাতটা ছাদেই কাটিয়ে দেয় তুরান। ঘরে এসে নীরার ওই জ্বালাময়ী রুপে নিজেকে ধ্বং’স করতে চায় না। ক্ষণেকের ভুল সিদ্ধান্ত গোটা জীবনটা দু’র্বি’ষ’হ করে তোলার জন্য যথেষ্ট। সে আরও সময় নিতে চায়। নীরাকেও সময় দিতে চায়। হুটহাট কিছু করে জীবনে দোটানা আনতে চায় না।
সিগারেটের খালি প্যাকেট পায়ে পিষে উঠে দাড়াল তুরান। সারারাত না ঘুমিয়ে চোখজোড়া অসম্ভব জ্বালা করছে তার। এখনই শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন। ঘন্টা খানেক বাদেই পৌঁছতে হবে ভার্সিটিতে। আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়াল সে।

নীরা ঘরে নেই। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। হয়তো শাওয়ার নিচ্ছে। তুরান কাবার্ড খুলে নিজের পোশাক নেয়। এগিয়ে যায় বেলকনিতে। বেলকনিতে টাওয়াল নাড়া ছিল সেটা নিয়ে ফিরে আসে রুমে। নীরা ততক্ষণে বেড়িয়েছে। একহাতে ভেজা জামাকাপড় আরেক হাতে টাওয়াল। ভেজা চুলগুলো লেপ্টে আছে পিঠের ওপর। কয়েকটা গাল বেঁয়ে গলায় গিয়ে থেমেছে। ঘন পল্লব গুলির সিক্ততায় যেন স্নিগ্ধ এক রুপ ফুটে উঠেছে মুখশ্রী জুড়ে।

নীরা একপল তাকায়। তুরানের শীতল দৃষ্টি নীরাতে নিবন্ধ। তড়িঘড়ি করে চোখ ফিরিয়ে নেয় নীরা। পায়ের চলন থেমে গেছে নিজ উদ্যোগে। নীরার হাঁসফাঁস লাগছে। রাতের কথা মনে হতেই দ্বিগুণ হচ্ছে অনুভূতি। তার কাচুমাচু ভঙ্গি টের পেয়ে স্বাভাবিক হয় তুরান। তাকে পাশ কাটিয়ে ঢুকে যায় ওয়াশরুমে। নীরা পেছন ঘোরে না আর। দরজার শব্দেই সচকিত হয়। দ্রুত এগিয়ে যায় বেলকনিতে। তড়িঘড়ি করে জামাকাপড় নেড়ে দিয়ে ডাইনিংয়ে দৌড় লাগায়।


হিয়া টিয়া নাস্তা সেরেই চলে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও আজ আরও একটি অবাক করা কান্ড ঘটে গেছে। সকাল সকাল রিনা হাজির ডাইনিংয়ে। সে ও নাকি এখন থেকে সকলের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করবে। জাহানারা চৌধুরী যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তার চোখ জোড়া মার্বেলের ন্যায় গোলাকার আকৃতি ধারণ করেছে। রিনা উঠেছে এতো সকালে? সকলের দৃষ্টিতেই বিষয়টা ঠেকেছে। নীরা দেখেও না দেখার ভঙ্গিতে রয়েছে। তার মনে আপাতত অন্য কিছু চলছে।

তুরান নিচে নামে যথা সময়ে। সকলের মতো সেও রিনাকে দেখে অবাক হয় তবে কিছু বলে না। এই মহিলার সঙ্গে কথা বলে সকাল সকাল মুড খারাপ করার কোনো ইচ্ছে নেই তার। তুরান একপলক তাকায় তার ডান সাইডের চেয়ারে কাচুমাচু হয়ে ব্রেকফাস্ট করা নীরার দিকে। পরপরই খাবারে মনোযোগী হয়। রিনা খাবার খাচ্ছে তার শ্বশুর – শ্বাশুড়ির সঙ্গে এটা ওটা বলে ভাব জমাতে চেষ্টা করছে। ওপরে ওপরে সকলে কথা বললেও ভেতরে ভেতরে চরম বিরক্ত হচ্ছে। সকলেই বুঝতে পারছে এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।

তুরান চুপচাপ খেয়ে বাবা – মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার আগে আড়চোখে নীরার দিকে তাকিয়ে ছিল অবশ্য। তাও ক্ষণেকের জন্য। খাওয়া শেষে সব গোছগাছ করে ওপরে যাওয়ার সময় আলহাম চৌধুরী নীরাকে বলেন তৈরি হয়ে আসতে। আজকেও তিনি নীরাকে ভার্সিটি পৌঁছে দিয়ে আসবে। নীরা বরাবরের ন্যায় মান্য করে তার কথা। সম্মতি জানিয়ে চলে যায় তৈরি হতে।

আজ পুরোপুরি ব্ল্যাক কালারের কামিজে তৈরি হয়ে নিল নীরা। সেই সঙ্গে মিলিয়ে ব্ল্যাক হিজাব বেঁধে নিল মাথায়৷ চোখে হালকা কাজল, ঠোঁট গোলাপি লিপজেল, হাতে লেডিস ঘড়ি। ব্যস ক্লিয়ার! কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়ল শ্বশুড়ের সঙ্গে। যাওয়ার আগে শ্বাশুড়িকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গেল, “সে যেন চুলোর কাছে না গিয়ে হালিমাকে দিয়ে সব করায়।” জাহানারা চৌধুরীর হৃদয় শীতল হয়। বড় ছেলের বউয়ের কাছ থেকে তো সামান্য যত্ন অব্দি পাননি। এখন ছোট ছেলের বউ যেটুকু যা করে তাতেই প্রশান্তি মেলে।


ভার্সিটি গেটে নীরাকে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন আলহাম চৌধুরী। বলে গেছেন ঠিক ভার্সিটি শেষ হলে গাড়ি পাঠিয়ে দিবেন। ওটাতে করে বাড়ি চলে যেতে। আলহাম চৌধুরীকে বিদায় জানিয়ে ভার্সিটির মধ্যে প্রবেশ করে নীরা। মনে এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তার। অনেক দিনের জমে থাকা স্বপ্ন পূরণ হলে বোধহয় এমনটাই লাগে। মুগ্ধ দৃষ্টি ফেলে, প্রফুল্ল চিত্তে এগিয়ে চলেছে সে। অকস্মাৎ বাঁধা পড়ে তার চলার পথে। পায়ের কাছে কিছু একটা এসে ঠ্যাক খায়। নীরা ভ্রু কুঁচকে নিচে তাকায়। পায়ের সামনে কিছু একটা দেখতে পায়। নিচু হয়ে তুলতে গেলেই…..

.
চলবে,
®অহমিকা মুনতাহাজ নিশি

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here