মায়াবতী পর্ব ১২

#মায়াবতী
#পর্ব_১২
#সুলতানা_পারভীন

রাহাত এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে দেখে মায়া একেবারে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালে আসলেই একেবারে পিঠ ঠেকে গেছে ওর। আর যাওয়ার জায়গাও নেই। কি করবে কার কাছে সাহায্য চাইবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আধৌ সাহায্য করার মতো কেউ আছে কিনা সেটাই বেচারি জানে না। রাহাতও ভ্রু কুঁচকে মায়ার ভীত মুখটা দেখছে। ঘেমে মুখ একাকার। মুখের পাশের এলোমেলো ছোট্ট চুলগুলো মুখে লেপ্টে গেছে। দেখতে একেবারে ভীত মায়া হরিণীর মতো লাগছে মায়াকে। মায়ার এই রূপটাও রাহাতকে যেন আরো বেশি করে টানছে ওর দিকে।

-মায়া? ভয় পাচ্ছো কেন?

-না না না–স্যার—। ভ-ভ-ভয়– পাব-পাবো কেন?

-ভয় না পেলে এভাবে তোঁতলাচ্ছো কেন? আজব তো?

-আপনি এভাবে–এভাবে সামনের দিকে–সামনের দিকে এগিয়ে আসছেন–আসছেন কেন?

-তুমি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছো তাই–। সামনে এসো?

-সামনে! সামনে তো—–?

-সামনে কি মায়াবতী?

-সামনে তো আপনি দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছেন—। সামনেও দেয়াল–। পিছনেও দেয়াল—।

-আমি দেয়াল?

-না না—। না মানে স্যার—–!

রাহাত আরো এগিয়ে এসে মায়ার দুপাশে দেয়ালে হাত দেখে মায়ার মুখের দিকে অপলকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। মায়া প্রথমে ভয় পেয়ে চোখ বুজে ফেলেছিল। অনেকক্ষণ পরেও কিছু ঘটছে না বুঝতে পেরে চোখ মেলে তাকালো। চোখ মেলতেই রাহাতের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। মানুষটা নেশা ধরানো চাহনিতে মায়াকে দেখছে৷ রাহাতের নেশা ধরানো দৃষ্টিতে হাজারো দুষ্টুমি মিশে আছে, সাথে হয়তো অনেক খানি ভালোবাসাও। তবে সেখানে কোন ললুপতা নেই। রাহাতের দৃষ্টি অন্য সবার মতো মায়ার শরীরের বিশেষ কোন অঙ্গ উৎসুক চোখে গিলছে না। কাজল টানা মায়াবী চোখে চোখ রেখে রাহাত মায়ার চোখের গভীরতা মাপায় ব্যস্ত।

ততক্ষণে মায়ারও ভয়টা কেটে গেছে। এই মানুষটা আর যাই হোক ওর কোন ক্ষতি করবে না সেটা মায়া বুঝতে পেরেছে। কিন্তু মানুষটা কি চাইছে সেটাই বুঝতে পারছে না বেচারি। তাই নিজেও হা করে তাকিয়ে আছে রাহাতের মুখের দিকে। রাহাতও সুযোগ পেয়ে শাড়ির মধ্যে দিয়েই মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে একেবারে নিজের কাছে টেনে নিল। মায়া এতোটা অবাক হলো যে নিজের বুকের ধুকপুকানিও কানে এসে বাজছে ওর। এই লোকের কাহিনী কিছুই বুঝতে পারছে না। আবারও নেশা ধরানো চোখে তাকিয়ে আছে। মায়াও সব ভুলে রাহাতকে দেখছে অবাক হয়ে৷ সাদা শার্টের হাতাদুটো আজও ফোল্ড করা। আর নেভি ব্লু প্যান্টের সাথে ম্যাচিং করে টাই ঝুলছে। খোঁচা দাঁড়িতে আর একটু সিল্কি চুলের নাচানাচিতে একেবারে অসম্ভব কিউট লাগছে মানুষটাকে। মানুষটা কেন এতোটা কাছে এসে ওর ভিতরে এভাবে ঝড় তুলছে সেটাই বুঝতে পারছে না মায়া।

এক হাতে মায়াকে কাছে টেনে অন্য হাতে মায়ার গালে হাত দিয়ে মুখটা তুলে ধরে দেখছে রাহাত।

-মায়াবতী?

-হুম?

-একটা পারমিশন চেয়েছিলাম—।

-মা-মানে?

-বুঝতে পারো নি?? মনে করিয়ে দিই আবার??

——————————

-তোমার সাথে রাতের পাগলামিতে মেতে উঠতে চাই। ভালোবাসার সাগরে হারাতে চাই—–। মিস মায়াবতী?

-কি– কিসব বলছেন? স্যার?

-সত্যি বলছি—। তবে শুধু একটা রাত বা আজকের জন্য নয়–। জীবনের বাকি প্রত্যেকটা দিন-প্রত্যেকটা রাত তোমাকে চাই আমার। প্রতিদিন ভোরে ভোরে চোখ খুলে তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখে বুকে টেনে নিতে চাই। প্রতিদিন রাতে তোমাকে বুকে জাপটে ধরে সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তি ভুলতে চাই–। তুমি বিপদে পড়ার আগে বুকে আগলে রাখতে চাই ভালোবেসে। তুমি ভয় পেলে আদরে সে ভয় ভাঙিয়ে দিতে চাই। কারণে অকারণে হুট করে জাপটে ধরে ঘাবড়ে দিতে চাই তোমাকে। তুমি রাগ করলে আমার উষ্ণ স্পর্শে তোমার সে রাগ আমি ভাঙাতে চাই। অভিমান করলে তোমার নিচের ঠোঁট আঁকড়ে অভিমানের বরফ গলাতে চাই—। তোমার সারাদিনের ক্লান্তির পর শরীরে আলতো পরশ বুলিয়ে সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিতে চাই। অবসর ছুটির দিনগুলোতে ঘরের প্রতিটা পরতে পরতে তোমার আমার ভালোবাসার গল্প সাজাতে চাই। আর চাই যত মান অভিমানই হোক না কেন দিনশেষে তোমার ওই কাজল কালো চোখে ডুব দিয়ে তার গভীরতা মাপবো আমি। তুমি অবাক চোখে তখনো আজকের মতো আমাকে দেখবে। আজকের মতো লজ্জায় লাল হবে প্রতিদিন প্রতিটা রাতে। আমার ছেলেমানুষি পাগলামিগুলো সহ্য না হলে চুল টেনে ধরবে। বা আজকের মতো হাতটা খামচে ধরবে৷ সত্যি বলছি মায়াবতী– তখনো খুব করে জ্বালাবো–। তবে একটুও বলবো না তোমার এই স্পর্শে কতোটা মাতালতা জাগে তোমাকে কাছে পাওয়ার——-।

——————————-

-মায়াবতী?

মায়া কথা বলার শক্তিটাও যেন হারিয়ে ফেলেছে। ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে উঠছে। লজ্জা পেয়ে সত্যি সত্যিই লাল হয়ে গেছে বেচারি। আর রাহাতের হাতটাও শক্ত করে খামচে ধরেছে। এই লোকটা এতো খারাপ কেন বুঝতে পারে না মায়া। এভাবে কথা বলে বুকের ভিতরে তুফান তোলার কোন মানে আছে?

-মায়া?

-হুম?

-ক্যান আই কিস ইউ?

মায়া একবার কেঁপে উঠে চোখ বুজে ফেললো। রাহাত হেসে মায়ার মুখটা তুলে ধরে অপলকে দেখলো কিছুক্ষণ। তারপর আলতো করে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মায়া কোনমতে চোখ খুলে রাহাতের দিকে তাকালো।

-বাকিটা অধিকার নিয়ে করবো মায়াবতী—-। যেদিন তুমি লাজুক লাজুক মুখ করেও আমার কাছে নিজে থেকে ধরা দিবে—। এখন বলুন তো মিস মায়াবতী? মিসেস রাহাত মাহবুব চৌধুরী হতে কি রাজী আছেন? সারাজীবন এই পাগলাটে লোকটার পাগলাটে কাজকর্ম হজম করতে পারবেন তো? ভুল করলে ভালোবেসে শুধরে দিবেন তো? দিনশেষে মায়াবতী আমার হবেন তো আপনি?

-স্যার?

-কল মি রাহাত—-মায়াবতী—।
-মানে!

-তুমি না চাইলে জোর করবো না—।

রাহাত মায়াকে নিজের হাতের বন্ধন থেকে ছেড়ে একটু সরে দাঁড়ালো।। মায়া এক পলক রাহাতের মুখের দিকে তাকিয়ে ছুট লাগালো। এই লোকের সামনে আর এক মিনিট থাকলেই হার্ট এ্যাটাক হওয়ার সম্ভবনা আছে। দরজার কাছে এসেই কি মনে হতে রাহাতের দিকে একবার ফিরে তাকালো মায়া। রাহাত মুখটা কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া মুখ টিপে একটু হাসলো।

-রেজিগনেশন যখন দিয়েছি তখন আপনার পি.এ র চাকরিটা করবো না আর—–।

——————————-

-আপনার বাবাকে বলবেন বাসায় এসে আমার মায়ের সাথে বাকি কথা বলে যেতে—-।

কথাটা বলেই মায়া ছুটে বেরিয়ে গেল। রাহাতও অবাক চোখে মায়ার ছুটে পালিয়ে যাওয়া দেখলো। কি বলেছে সেটার মানে বুঝতেই তার কয়েক মিনিট লেগে গেল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here