মায়াবতী পর্ব ৪

#মায়াবতী
#পর্ব_৪
#সুলতানা_পারভীন

মায়া চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে দেখে রাহাত ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে ওর দিকে এগিয়ে এলো ধীর পায়ে। মুচকি হেসে মায়ার দিকের গাড়ির দরজাটা খুলে দিল। তারপর ঘুরে এসে নিজেই ড্রাইভিং সিটে বসে আলতো করে হর্ন বাজালো। হর্নের শব্দে মায়া কেঁপে উঠে চোখ খুলতেই দেখলো গাড়ির সামনের সিটে বসার দরজাটা খোলা। আর ড্রাইভারের সিটে বসে রাহাত হাসছে মিটিমিটি। মায়াকে অবাক চোখে তাকাতে দেখে চোখের ইশারা করে নিজেই হেসে ফেললো। মায়া ভিষণ লজ্জা পেল। লোকটা এগিয়ে আসায় ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিল দেরি করায় আবার হাতটা চেপে ধরবে শক্ত করে। রাহাত আবার হর্ন বাজালো।

-মিস মায়াবতী? আপনার দেরি হয় নি–। অবশ্য যেভাবে দাঁড়িয়েছিলেন মূর্তি হয়ে–দেরি হলেও আমার কিছু বলার সাহসও হয়তো হতো না ব্যথা দেয়ার—–।

-জি?

-গাড়িতে উঠে এসো?

-জি স্যার—–।

-কি হলো? উঠছো না কেন?

-আপ–আপনার পাশে বসবো?

-তো কি পিছনে বসবে? আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হচ্ছে?

-না না–। স্যার—। আসলে– হল কি—।

-তুমি কি উঠবে? নাকি আমি নেমে গিয়ে তোমাকে তুলে আনতে হবে? সেরকম কিছু চাচ্ছো?

মায়া গাল ফুলিয়ে রাহাতের পাশে এসে বসলো গাড়িতে। দরজা টেনে বন্ধ করে মুখ ভার করে বসে রইলো। কয়েক মিনিট কাটার পর খেয়াল হলো গাড়ি স্টার্ট হচ্ছে না। মায়া ভ্রু কুঁচকে রাহাতের দিকে তাকাতে দেখলো রাহাতের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে আছে। লোকটার সমস্যা কি মায়া বুঝে না। সারাদিন গা জ্বালানো একটা হাসি ঠোঁটের কোণে লেগেই থাকে। আর হাসি না থাকলে রাগে চোখ লাল টকটকে করে রাখে‌‌! আজব লোক একটা! গা পিত্তি জ্বলে যায় হাসি দেখলে। অসহ্য!

-এতো ভেবে ভেবে কোনদিন না জানি পাগল হয়ে যাও?

-কি?

-কি কি? আমার হাসি দেখে গা জ্বলে কেন তোমার? ভালোবেসে ফেলেছো নাকি?

মায়া ঝট করে মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকালো। লোকটা এমন কেন! এভাবে বলার কি আছে? আরেকটু হলেই তো দমটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো মায়ার। ভাবতে ভাবতেই কারো হাতের আলতো স্পর্শে চমকে তাকাতেই দেখলো রাহাত একদম কাছে চলে এসেছে। মায়া ভয়ের চোটে কিছু বলতেই পারলো না। চোখ বুজে ফেললো ঝট করে। কিছু একটার বাঁধন অনুভব করতেই চোখ খুলে তাকালো। রাহাত সরে বসেছে দেখে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সিটবেল্ট বাধা৷ রাহাতকে কিছু বলতে গিয়েও পারলো না। লোকটার ঠোঁটের কোণে এখনো সেই আত্মা কাঁপানো বাঁকা হাসি। এই লোকটার মাথায় সারাক্ষণ কি এতো চলে? এতো কেন হাসতে হয় পাগলের মতো সারাদিন?

শপিং সেন্টারের সামনে গাড়িটা পার্ক করে বেরিয়ে রাহাত মায়ার বের হওয়ার জন্য দরজাটা খুলে দিল। মায়া বের হচ্ছে না দেখে মুখ নিচু করে ভিতরে উঁকি দিল।

-কি সমস্যা মায়াবতী?

-এটা খু-খুলতে পারছি না—।

-হা হা হা–। গায়ে একটু শক্তিও নেই—। তোমাকে নিয়ে যে কি হবে?

-সেটা আপনার না ভাবলেও চলবে–। আমি নিজেই খুলবো–। সরুন—।

মায়া রাহাতের হাত থেকে সিটবেল্টটা টানছে। কিছুতেই খুলতে পারছে না। রাহাত একমনে ওর বিরক্তি ফুটে ওঠা মুখটা দেখছে। বেশি বিরক্ত হলেও মনে হয় মেয়েটার চোখে পানি চলে আসে। ছলছল করে উঠছে বারবার চোখ দুটো। রাহাত মায়ার হাত থেকে আলতো করে বেল্টটা টেনে নিয়ে হালকা করে প্রেস করতেই খুলে গেল। মায়া যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। মুখ তুলতেই দেখলো রাহাত ওর দিকে এখনো ঝুঁকে আছে। চোখে ঘোর লাগা দৃষ্টি। ঘোরের সাথে অন্য কিছু একটাও আছে। সেটায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে মায়ার। কথাটা মাথায় আসতেই নিজের সমস্ত শক্তি দিয়েই সেই ব্যাপারটা মন থেকে মুছে ফেললো। এভাবে আবেগ প্রশ্রয় দিয়ে লাভ নেই।

-স্যার?

——————————

-স্যার!

-হুম?

-আমরা শপিংমলের সামনে এসে গেছি—। নামতে হবে—-।

-ওপস–। সরি–। এসো?

রাহাত সরে দাঁড়াতেই মায়া গাড়ি ছেড়ে বের হলো। মুখ তুলে মানুষটার মুখের দিকে তাকালো একবার মায়া। নেভি ব্লু কালারের ফরমাল প্যান্ট, সাদা শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো। নেভি ব্লু রঙা কোটটা গাড়িতে রাখা। মুখের হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, আর পিছনের দিকে ব্রাশ করা চুল। সব মিলিয়ে তামিল মুভির হিরো একদম। দেখলে বোঝাই যায় না লোকটা এতোটা—।

গাড়ি লক করে শপিংমলের ভিতরে এসেছে রাহাত। মায়া পাশে পাশে হাঁটছে। মায়াকে ড্রেস চুজ করতে বলে নিজেও ঘুরে ঘুরে দেখছে রাহাত। যেটা পছন্দ হচ্ছে নিচ্ছে। এর মধ্যেই মায়া রাহাতের সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে দুটো থ্রিপিস জামা। রাহাত চোখ লাল করে তাকালো মায়ার দিকে। মায়া ভয়ে ঢোক গিললো। এই লোকটার আবার কি হলো?

মায়ার হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে আসলো রাহাত।

-মিস মায়াবতী? আপনার কি মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে? আপনি এই ড্রেস পড়ে আমার ক্লাইন্টদের সামনে যাবেন?

-আজব! তো কি পড়বো? আপনার পি.এর মতো শর্ট পড়ে যেতে হবে? কি ভাবেন কি হ্যাঁ? পি.এ হিসেবে রাখবেন না বলে দিন। মিটে গেল—। এতো কাহিনী করার কি আছে—–।

-জাস্ট শাটআপ—।

-আমি আপনার ওই মিস জুলির মতো ওসব পড়তে পারবো না—।

-কেউ বলেছে তোমাকে এসব পড়তে?

-তাহলে?

-ধরো—। এগুলো ট্রাই করে এসো।

রাহাত মায়ার দিকে কয়েকটা কোট, সুট এগিয়ে দিলো। মায়ার রাগে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার দশা। হাত বাড়িয়ে দিতেও মায়া ড্রেসগুলো নিচ্ছে না দেখে সামনে তাকালো রাহাত। মায়া ওর দিকে কটমট করপ তাকিয়ে আছে দেখে রাহাত নিজেই ঢোক গিললো এবার। মেয়েটা হঠাৎ করে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? মনে হচ্ছে কাঁচা খেয়ে ফেলবে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here