মিশে_আছো_আমার_অস্তিত্বে❤️ পর্ব ২+৩

#মিশে_আছো_আমার_অস্তিত্বে❤️
#মেঘ পরী🍀🍀
#Part-২ + ৩💞
.
.
‌ সূর্যের আলো চোখে পড়তেই তৃষার ঘুম ভেঙে গেল,,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল ৭ টা।আড়মোড়া দিয়ে উঠে পাশের সোফার দিকে তাকাতেই আকাশকে দেখতে পেল,, এখনও সে ঘুমাচ্ছে।আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।কিছুক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো আকাশ এখনও ঘুমাচ্ছে তাই তাকে আর না ডেকে নীচে চলে গেল। নতুন ব‌উ এত বেলা পর্যন্ত ঘুমালে লোকেরা পাঁচ কথা শোনাবে আর তাছাড়াও সে এই বাড়ির নতুন ব‌উ।

নীচে নেমে দেখলো তার শাশুড়ি মা রান্নাঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছে।বিয়েটা যেহেতু ঘরোয়া ভাবে হয়েছে তাই কোনো রিলেটিভসরা আসে নি,,তার শাশুড়ি মা অবশ্যই বলেছিল একটা রিসেপশন পার্টি দেবে কিন্তু আকাশ সরাসরি না করে দিয়েছে তার মতে এইসব জিনিসের পিছনে অযথা সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না,,দু দিন পর এমনিতেই সবাই যেনে যাবে যে সে বিবাহিত।বাড়িতে সদস্য বলতে আকাশ আর তার মা।তিন বছর হয়েছে তার বাবা মারা গিয়েছে তারপর থেকে আকাশ নিজে তার বাবার ব্যবসা সামলিয়েছে।

তৃষাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আকাশের মা বলে উঠলেন-;

-:আরে তুই বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভিতরে আয়।

তৃষা এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ভেতরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিল না,,,কিন্তু তার শাশুড়ি মায়ের কথায় তার ভয় মুহূর্তেই কমে গেল।তৃষা তো প্রচুর পরিমাণে ভয় পেয়েছিল গতকাল,, আকাশ যখন প্রথম তাকে নিয়ে বাড়িতে আসে তখন তো সে ভেবেই নিয়েছিল যে তার হয়তো এ বাড়িতে কোনো জায়গা হবে না কিন্তু তার ভাবনাকে দূরে ফেলে আকাশের মা নিজে হাতে তাকে বরন করে বাড়িতে তোলে।

রান্নাঘরে ঢুকে শাশুড়ি মার পাশে দাঁড়াতেই তিনি বলে উঠলেন-;

-:কিরে রাতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো??

-:না আন্টি।

-:সে কিরে কে তোর আন্টি??ওও বুঝেছি আমাকে মনে হয় এখনও আপন করে নিতে পারিস নি তাই না রে??না কি আমার উপর রাগ করেছিস তোকে আমি তুই বলে সম্বধন করছি বলে??

-:না না মা আপনি আমাকে তুই করেই ডাকুন। আমার খুব ভালো লাগে আপনার মুখে তুই ডাক শুনে।

-:তাই বুঝি তাহলে আমাকে আপনি বলছিস কেন??তুমি করে ডাক ন‌ইলে তোর সাথে কোনো কথা নেই।

তৃষা মুচকি হেসে মা কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-;

-:আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে আমি তুমি করেই ডাকবো। এবার তুমি সড়ো তো বাড়ির ব‌উ থাকতে তুমি কেনো রান্না করছো??

-:সে কি রে সবে কাল এলি আর আজ‌ই রান্না করবি??আগে দুদিন রেস্ট নে তারপর থেকে না হয় তুই সব করবি।এখন আপাতত এই কফিটা আকাশকে দিয়ে আয়,, ঘুম থেকে উঠে যদি কফি না পায় তাহলে সারা বাড়ি মাথায় করবে।

তৃষা কিছু একটা বলতে চেয়ে বলতে পারলো না তাই শাশুড়ি মায়ের কথা মতোন কফিটা নিয়ে উপরে চলে গেল।রুমে ঢুকে দেখলো আকাশ অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে‌।তৃষা আকাশের কাছে গিয়ে কফি মাগটা দিয়ে বেরিয়ে আসতে নিলেই আকাশ তাকে ডাকলো।

-:তোমার বাবা সাথে দেখা করতে যাবে??

আকাশের কথা শুনে মুহূর্তেই তৃষার চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। আকাশের সাথে এইভাবে বিয়ে করে নেওয়াটা তার বাবা মা মেনে নিতে পারে নি।বিয়ে হয়ে যাবার পর তখন সে হসপিটালে যায় আকাশকে নিয়ে তখন তার বাবার অপারেশন হয়েগিয়েছিল এবং তাকে বেডে দেওয়া হয়েছিল।যখন তিনি জানতে পারে যে তৃষা আকাশকে বিয়ে করেছে তখন তিনি প্রচন্ড রেগে যান এবং তাদের চলে যেতে বলেন।তৃষা তার বাবা মাকে অনেক বুঝিয়েছিল কিন্তু তারা বোঝেন নি।উল্টে অতিরিক্ত হাইপার হ‌ওয়ায় তৃষার বাবার শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে তাই বাধ্য হয়ে তৃষাকে সেখান থেকে চলে আসতে হয়।যদি তার বাবা যানতো যে তাকে বাঁচানোর জন্যই তার মেয়ে নিজের জীবন কুরবানী দিয়েছে,,তাহলে হয়তো তিনি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারতেন।

এতক্ষন তৃষা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলোই ভাবছিল আকাশের ডাকে তার ভাবনার ছেদ পড়ে। নিজের চোখের পানিটা ঝটপট মুছে স্বাভাবিক হয়ে বলে উঠলো-;

-:কার সাথে যাবো??

-:যদি যেতে চাও রেডি থেকো বিকালে এসে নিয়ে যাবো??

আকাশের কথা শুনে তৃষা মনে মনে কিছুটা হলেও খুশি হলো বাবা নাই বা তাকে ডাকলো কিন্তু সে যেতেই পারে তার বাবার সাথে দেখা করতেই পারে,,এসব কথা ভাবতেই তার অশান্ত মন কিছুটা হলেও শান্ত হলো। আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো-;

-:আমি যাবো।

-:ওকে তবে রেডি থেকে।আমি অপেক্ষা করতে পারবো না কারোর জন্য এই বলে আকাশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

.

বিকালে তৃষা তার শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আকাশের সাথে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলো তার বাবা নাকি হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছে,,ডাক্তারদের বারণ ও নাকি তিনি শোনেন নি।তৃষা এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না,,হু হু করে কেঁদে উঠলো।আকাশ তৃষা নামমাত্র শান্তনা দিয়ে গাড়িতে উঠে অথচ আজ তৃষার এই পরিণতির জন্য এই মানুষটাই একমাত্র দায়ি।আর কিছু ভাবতে পারছে না তৃষা নিজের কান্না কোনোমতে সংবরণ করে গাড়িতে উঠে বসলো।

#Part-৩💞

রাত দশটা বাজে আকাশ এখনও আসেনি,,,এদিকে বাবার সাথে দেখা না হ‌ওয়ায় তৃষাও মনখারাপ করে বসে আছে।আকাশের মা তৃষাকে ডিনার করে নিতে বলেছিল কিন্তু সে আকাশ এলে খাবে বলে না করে দেয়।রাত তখন এগারোটা আকাশ ঘরে ঢুকলো,,,আকাশকে দেখে তৃষা বলে উঠলো-;

-:এত দেরি হলো যে??

তৃষার কথায় আকাশ গম্ভীর সুরে বলে উঠলো-;

-:তোমাকে আমি আমার ব‌উ করে এখানে আনিনি।তোমাকে যে কাজের জন্য এখানে আনা হয়েছে শুধুমাত্র সেই কাজটা করলে আমি খুশি হবো।

-:আমাকে এখানে কী কাজের জন্য আনা হয়েছে সেটাই তো এখনো বললেন না।

আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-;

-:তোমাকে আজ আমি কিছু কথা বলছি সেগুলো ভালোভাবে শুনবে।আমি একজনকে ভালোবাসি কিন্তু আমার মা তাকে পছন্দ করে না।তার নাম রিনা।

আকাশের এইটুকু কথা শুনেই তৃষা বুক ধুক করে উঠলো,,,কেমন যেন এক চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো কিন্তু এটাতো হবার নয়!!সে তো জানে যে সে নিজের বাবার জীবন বাঁচানোর বিনিময়ে আকাশকে সাহায্য করতে এখানে এসেছে যখন তার কাজ শেষ হয়ে যাবে তখন আকাশ তাকে ডিভর্স দিয়ে মুক্তি দিয়ে দেবে সারা জীবনের মতোন।কিন্তু এটা জানে না যে আকাশ কেন তাকে বিয়ে করেছে??তার উপর আকাশের মুখ থেকে মেয়েটার নাম শুনেও তৃষার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে,,,নামটা তার অনেক পরিচিত বলে মনে হচ্ছে।

আকাশের কথায় তৃষার ধ্যান ভাঙল,,আকাশ আবার বলতে শুরু করল-;

-:দেখো তোমার মনে এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করলাম কেন??তাহলে শোনো আমার মা রিনাকে কোনো কারনে পছন্দ করেন না।আমি যখন বিদেশে থাকতাম তখন রিনার সাথে আমার পরিচয়,,,এক‌ই দেশে দুজনের বাড়ি হ‌ওয়ায় দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ম হল।একসময় রিনা আমাকে প্রপোজ করলো,,রিনাকে ও আমার ভালো লেগেছিল তাই তার প্রপোজ আমি একসেপ্ট করি।বাবা মারা যাবার পর আমি দেশে ফিরে আসি,,রিনা তখন‌ও দেশে আসেনি।

তার কয়েকমাস পর সে দেশে ফিরলে মাকে আমাদের ব্যপারে বলি কিন্তু মা পরিষ্কার যানিয়ে দেয় যে তিনি রিনার সাথে আমার বিয়ে কিছুতেই মেনে নেবে না। মায়ের সাথে আমার খুব রাগারাগী হয় এই বিষয়ে,,, মা অতিরিক্ত স্ট্রেস নিতে না পারায় অসুস্থ হয়ে পড়ে।তারপর হসপিটালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা সাজেশন দেয় মাকে কোনোভাবেই স্ট্রেস দেওয়া যাবে না। নিজের মায়ের কথা ভেবে আমি রিনার কাছ থেকে কিছুটা সময় চাইলাম।রিনা ও আপত্তি জানালো না কারণ সে আগে নিজের স্টাডি কমপ্লিট করতে চেয়েছিল তাই সে আবার বিদেশে চলে যায়।কিন্তু আমাদের মধ্যে সবসময় যোগাযোগ হতো।

এর প্রায় দেড় বছর পর রিনার স্টাডি প্রায় কমপ্লিট এবং সে দেশে ফিরবে এটা জেনে আমি ভীষণ খুশি মাকে এবার এই বিষয়ে বলবো বলে ঠিক করলাম কিন্তু সেই মুহূর্তে মায়ের ক্যানসার ধরা পড়লো,,থার্ড স্টেজের কেমোথেরাপি দিলেও মায়ের যা বয়স সেই বয়স অনুযায়ী মা থেরাপি সহ্য করতে পারবে না তাই আপাতত মেডিসিন দিয়ে মাকে সুস্থ করে রাখা হয়েছে।আর মাত্র তিন থেকে চার মাস মা এই পৃথিবীতে আছে।

কথাগুলো বলার সময় আকাশের কথাগুলো বারবার আটকে আসছিল।তৃষার ও চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিল। ভাবতেই পারছিলাম না হাসিখুশি মানুষটার জীবনের মেয়াদ মাত্র চার মাস।একদিনেই মানুষটা তাকে আপন করে নিয়েছিল।

-:মা আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে লাগল,,,মারা যাওয়ার আগে নিজের ছেলের ব‌উকে দেখে যেতে চাই কিন্তু এদিকে আমিও রিনাকে প্রচুর ভালোবাসি আর ওকে ছাড়া থাকতেও পারবো না।এইসব কিছু নিয়ে প্রচন্ড টেনশনে ছিলাম ঠিক সেই সময় তুমি এলে নিজের বাবার জন্য সাহায্য চাইতে।আর তোমাকে দেখে ভালো মেয়ে মনে হয়েছিল তাই তোমাকে আমি এই প্রস্তাব দিই এবং তুমি রাজিও হয়ে যাও।শোনো আর চার মাস পর মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে সুতরাং এই কয়মাস তুমি আমার মার সাথে ভালো বিহেভিয়ার করবে,,আমার মা যেন কোনোভাবেই জানতে না পারে যে তোমার সাথে আমার কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ হয়েছে। মায়ের সাথে সবসময় হাসিখুশি থাকবে।আর ছয়মাস পর তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো তখন তুমি এই মিথ্যা সম্পর্ক থেকে চিরজীবনের জন্য মুক্তি পেয়ে যাবে আর চিন্তা করো না তোমাদের ফ্যামিলি আর তোমার সমস্ত দায়িত্ব আমি নেব।

তৃষা আকাশের কথা শুনে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু সে শুধুমাত্র একটা কথাই বলল-;

-:আপনি ফ্রেশ হয়ে নীচে আসুন।আমি ডিনার রেডি করছি।

-:ওও তোমাকে তো বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম আজ রিনা ব্যাক করেছে ওর সাথে মিট করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল।আর তুমি ডিনার করে নাও আমি রিনার সাথে বাইরে থেকে ডিনার করেই এসেছি।আর হ্যা রিনা তোমার কথা জানে ও তোমার কথা বলবে বলেছে। দাঁড়াও এক সেকেন্ড।

এইবলে ফোন বের করে রিনার নাম্বার ডায়েল করলো,,কিছুক্ষণ রিং হ‌ওয়ার পর অপর পাশ থেকে এক নারী কন্ঠ ভেসে এলো।

-:হ্যালো বেবী তুমি বাড়ি পৌঁছেছো??

-:হ্যাঁ জান চলে এসেছি।তুমি বললে না যে তুমি তৃষার সাথে কথা বলতে চাও,,তৃষা এখন আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।এই নাও ধরো কথা বলো ওর সাথে।

এই বলে তৃষার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে,,আকাশ ওয়াশ রুমে চলে গেল।তৃষা ফোনটা কানে ধরতে অপর পাশ থেকে বলে উঠলো-;

-:হ্যালো আমি রিনা আহমেদ।আজকেই স্টাডি কমপ্লিট করে দেশে ফিরেছে।শুনলাম তুমি নাকি আকাশের সাথে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করেছে,,টাকার বিনিময়ে।হাহা অবশ্যই তোমাদের মত মেয়েদের থেকে এর বেশি কিই বা আশা করা যেতে পারে!!

যাই হোক ম্যারেজ যখন করেছ ডিভোর্স নিশ্চয়ই হবে।আর তুমি আকাশের থেকে যতটা সম্ভব পারবে দূরে দূরে থাকবে,,কারণ আমি চাই না তোমাদের মত মেয়েদের সংস্পর্শে এসে আকাশ কোন ভুল স্টেপ নিক।আর হ্যা কন্ট্রাকের মেয়াদ শেষ হলেই নিজের টাকাটা গুছিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ও বাড়ি থেকে কেটে পড়বে। কারণ আকাশের মা মরে যাওয়ার পরেই আমরা বিয়ে করে নেব আর আমি চাই না তোমার মতো মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে আমাদের আশেপাশে থাকুক।

কারণ তোমাদের মত মেয়েদের উপর ভরসা করা একদমই যায় না।বড়লোক ছেলে দেখে আবার না ডিভোর্স দিতে মানা করে দাও,, আশাকরি মনে থাকবে আমার কথাগুলো।আর হ্যাঁ তোমাকে যা বললাম সেগুলো আবার আকাশকে বলোনা যেন।

এই বলে অপর পাশ থেকে ফোনটা কেটে গেল দিল কথাগুলো শুনে তৃষার চোখ জোড়া ভোরে এল মনে মনে ভাবছে একজন মানুষ নিজের মাকে বাঁচানোর জন্য তার সমস্ত খুশির আয়োজন করছে আর একজন মানুষ কবে তার মা মরবে এবং তার ছেলেকে বিয়ে করবে এই আশায় দিন গুনছে।তৃষা এসব কথা ভাবছিল তখন ওয়াশরুম থেকে আকাশ বেড়িয়ে এলো,,তৃষাকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো-;

-: কি হল তুমি দাঁড়িয়ে আছে ওরকম ভাবে?? রিনা তোমার সাথে কথা বলেছে??

-:হ্যা

-:ও ঠিক আছে।তুমি গিয়ে ডিনার করে এসো আমি আজকে আর ডিনার করবো না।

-: আমার ডিনার হয়ে গিয়েছে।

জেনেশুনে ইচ্ছে করে তৃষা মিথ্যা কথা বলল,, আসলে এত কিছুর পর তারা আর খেতে মন চাইছে না।

-: ও তাহলে তুমি বেডে শুয়ে পড়ো।

এই বলে বিছানা থেকে একটা বালিশ এবং চাদর নিয়ে আকাশ সোফার দিকে যেতেই তৃষা বলে উঠলো-;

-: শুনুন বলছিলাম আপনি বেডে শুয়ে পড়ুন। আপনার সোফায় শুতে প্রবলেম হয় আর তাছাড়া আমার ছোট জায়গায় শোয়ার অভ্যাস আছে আপনি বরং বেডে শুয়ে পড়ুন।

-: সিওর। না মানে আই ক্যান এডজাস্ট তুমি বেডে শুতে পারো।

-: আমি পারবো।

-: ওকে তোমার যেমন ইচ্ছে।

এই বলে আকাশ বেডে শুয়ে পরলো আর তৃষা সোফায়। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখলো তার শাশুড়ি মা সকালের ব্রেকফাস্ট করছে পাশে সার্ভেন্টরা হেল্প করছে।তৃষা সেখানে গিয়ে বলল-;

-:মা আজকে আমি ব্রেকফাস্ট বানাবো আর তুমি রেস্ট করবে।কোথায় কি আছে আমাকে শুধু বলে দাও।

-:আরে তুই কেন ব্রেকফাস্ট বানাবি।সবে বিয়ে করে এলি দুদিন হলো এখন কিছুদিন রেস্ট নে,,পরে তো তোকেই এই সংসারের হাল ধরতে হবে।

শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে তৃষা একটা মলিন হাসি দিয়ে বলে উঠলো-;

-:সে তো হবেই কিন্তু আজকে থেকে তোমাকে কোন কাজ করতে হবে না,,এই আমি বলে রাখলাম।তুমি শুধু রেস্ট নেবে আর কি করতে হবে আমাকে বলবে। তোমার কথা শুনে কালকে রেস্ট নিয়েছি আজ কিন্তু তোমার কোন কথা শুনবো না,আমিই ব্রেকফাস্ট বনাবো।

-:আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তাহলে রুমে যাচ্ছি তোর যা প্রয়োজন তুই রাহেলার (সার্ভেন্ট) কাছ থেকে জেনে নিস।

এই বলে তিনি চলে গেলেন।তৃষা‌ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো আর মনে মনে ভাবছে সত্যি মানুষকে দেখে বোঝাই যায়না যে তার মনের ভিতর কী চলছে।এত হাসিখুশি মানুষটা তাদের সাথে থাকবে আর বড়জোর চার মাস।ভাবতেই মন থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here