মিস্টার সিনিয়র পর্ব -০৩ (শেষাংশ)

#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_০৩(২)
®ফিহা আহমেদ

পরশি ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালো।

“আ,,,,আসলে আপু,,,, (পরশি)

“তোর জামাকাপড় ভিজে আছে কেন ? (ইয়ানা)

“পুকুরে পড়ে গিয়েছিলাম আপু”। (পরশি)

“কিভাবে পড়লি? (ইয়ানা)

“ভার্সিটির উওর দিকে একটা পুকুর আছে সেই পুকুর পড়ে গিয়েছি”। (পরশি)

“তুই ভার্সিটির উওর পাশে কেন গিয়েছিলি সত্যি করে বল না হলে এক্ষুনি দাদীকে বলে মার খাওয়াবো।প্রথম দিনই জামাকাপড় ভিজিয়ে এসেছিস এরপর না জানি কি কি করবি আল্লাহ ই ভালো জানে।(ইয়ানা)

বলেই জোরে জোরে মিসেস শিখা কে ডাকতে লাগল ইয়ানা।

“প্লিজ আপু দাদীকে বলো না আমায় অনেক মারবে”। (পরশি ভয় পেয়ে বললো)

“মার খাওয়ানোর জন্যই তো ডাকছি দাদীকে”। (ইয়ানা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো)

“ইয়ানা কি হয়েছে এভাবে চিৎকার করে ডাকছিস কেন? (মিসেস শিখা)

পরশির দিকে চোখ পড়তেই মিসেস শিখা ব্রু কুঁচকে বলে,,,,

“তোর শরীরের এই অবস্থা কেন?

তখন ইয়ানা বানিয়ে বানিয়ে আরো দশগুণ মিথ্যা কথা বললো মিসেস শিখাকে।মিসেস শিখা রেগে পরশির চুলের মুঠি ধরে পরশির দুই গালে চারটা থাপ্পড় দিয়ে বললো,,,,

“দু’দিন তোর খাওয়া বন্ধ। বাড়ির সব কাজ করবি এই দু’দিন তুই”।

পরশি কিছু না বলে কান্না করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল।কান্না করতে করতে পরশির হঠাৎ গায়ে পড়ে থাকা জ্যাকেটের দিকে চোখ পড়লো।

“এতকিছুর মাঝে দাদী আর ইয়ানা আপুর চোখ জ্যাকেটের দিকে যায়নি কেন? (পরশি আশ্চর্য হয়ে বললো)

“ভালো হয়েছে খেয়াল করেনি তাহলে আরো মার খেতাম এই জ্যাকেটের জন্য।কেন যে ওই জোহান না জোভানকে থাপ্পড় মারতে গেলাম।একটা থাপ্পড়ে কত কিছু হয়ে গেল”। (পরশি)

পরশি গোসল সেরে কিচেনে গেল। কিচেনে এসে দেখে সব থালাবাসন এলোমেলো হয়ে আছে।খুব বাজে অবস্থা করে রেখেছে কিচেনের। পরশি ভালো করেই বুঝতে পারছে এসব কার কাজ।ইয়ানা আর মিসেস শিখা ইচ্ছে করে কিচেন ময়লা করে রেখে গেছে। কিচেন পরিষ্কার করে মিসেস শিখার রুমে গেল পরশি।

“দাদী এখন কি রান্না করব?

মিসেস শিখা কিছু না বলে চুপ করে বসে আছেন।পরশি দাদীকে চুপ থাকতে দেখে আবার বললো,,,,

“দাদী এখন কি কি রান্না করব ?

কয়েক মিনিট চুপ থেকে মিসেস শিখা বললেন,,,,

“আজ মেহমান আসবে বাড়িতে। অনেক পদের রান্না করতে হবে। আমি লিস্ট করে রেখেছি বাজারের। লিস্ট নিয়ে বাজার করে নিয়ে আয়”।

“দাদী রহিম কাকুকে দিয়ে,,,,, (পরশি)

পরশি কিছু বলার আগেই মিসেস শিখা ধমক দিয়ে বললেন,,,,,

“রহিম যাবে না।তুই গিয়ে এক ঘন্টার মধ্যে সব বাজার করে নিয়ে আসবি।তারপর রান্না করবি।আমি যা বলছি তাই কর। না হলে,,,,,,

“য….যাচ্ছি দাদী”। (পরশি মন খারাপ করে বললো)

মিসেস শিখা পরশির হাতে পনেরো হাজার টাকা দিয়ে বললেন,,,,,

“এই টাকা দিয়ে সব বাজার করে আনবি”।

পরশি কিছু না বলে দাদীর রুম থেকে বের হয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

_____

~ “বাজারে”….

পরশি লিস্ট দেখে বাজার করা শুরু করলো। প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিটে বেশিরভাগ বাজার করে ফেলেছে পরশি।এখন বাকি আছে চিংড়ি আর ইলিশ। পরশি মাছের বাজারে আসলো।

“মামা এক কেজি চিংড়ির দাম কত?

ডান পাশ থেকে আরেকজন বললো,,,,,

“মামা এক কেজি চিংড়ির দাম কত?

পরশি ডান পাশে তাকাতেই চমকে ওঠলো।

“আপনি,,,,,? (পরশি)

“আরে মিস জুনিয়র”। (জোভান)

“আপনি মাছের বাজারে ও আমায় জ্বালাতে এসে গেছেন”। (পরশি)

পরশির কথা শুনে জোভান আশ্চর্য হয়ে পরশির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,

“তুমি কি পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে আসা পাগলী নাকি” ।

“কিহ্ আপনি আমায় পাগলাগারদের পাগলী বললেন কেন? (পরশি)

“কারন তুমি পাগলীদের মতো কথা বলছো তাই তোমায় পাগলী বলছি। আমি বাজারে এসেছি মাছ কিনতে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তোমার মতো পাগলীর সাথে দেখা হয়ে গেল”। (জোভান)

“উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। আমি ও মাছ কিনতে এসেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আপনার মতো পাগলের সাথে দেখা হয়ে গেল” (পরশি)

“আমার কথা আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছ মিস জুনিয়র”। (জোভান)

হঠাৎ পরশির বাড়ির কথা মনে পড়লো।পরশি হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো।

“ওহ্ শিট আর মাএ পনেরো মিনিট বাকি আছে।দাদী তো এক ঘন্টা সময় দিয়েছিল আমায়।এক সেকেন্ড ও দেরি হলে দাদী আমায় আবার মারবেন” । (পরশি বিরবির করে বললো)

পরশি তাড়াতাড়ি মাছ কিনে সেখান থেকে চলে গেল। আর জোভান পরশির বিরবির করা কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো।

“এতো বড় মেয়েকে কেউ মারে”। আচ্ছা মেয়েটির মা-বাবা কি নেই? (জোভান)

_____

পরশি এক ঘন্টা শেষ হতেই বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। পরশি সোজা কিচেনে চলে গেল। পরশি কিচেনে গিয়ে দেখে পুরো কিচেন রুম অপরিষ্কার হয়ে আছে।থালাবাসন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পরশি ভালো করেই বুঝতে পেরেছে এইসব কাদের কাজ।মিসেস শিখা আর ইয়ানা ইচ্ছে করে কিচেন রুম অপরিষ্কার করে রেখে গেছে পরশিকে খাটানোর জন্য। পরশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিচেন রুম পরিষ্কার করতে শুরু করলো।পরিষ্কার শেষে থালাবাসন ধুয়ে পরশি রান্নার কাজে লেগে পড়লো।

_____

~ “চৌধুরী ভিলা” ….

“বাহ্ ভাইয়া বাহ্। তোর হাতে বাজারের ব্যাগটা দারুন মানিয়েছে”।

জোভান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার ছোট বোন জিহার দিকে।

“কিরে ভাইয়া মুখ এমন করে রেখেছিস কেন ? (জিহা)

জোভান কিছু না বলে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে কিচেন রুমে চলে গেল।

“মম তোমার চিংড়ি মাছ”। (জোভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো)

জোভানের মুখের অবস্থা দেখে মিসেস স্বর্ণা চৌধুরী (জোভানের মা) হেসে দিলেন।জোভান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,,,,,

“রবি কাকাকে দিয়ে মাছ কিনে আনলে হতো না।আমায় দিয়ে ই তোমায় কিনাতে হলো মম”। (জোভান)

“তোর দাদা বলেছে তোকে নিয়ে আসতে”। (মিসেস স্বর্ণা)

জোভান কিছু না বলে কিচেন রুম থেকে বের হয়ে জিহার মাথায় থাপ্পড় মেরে গাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।

জোভান যেতেই জিহা চিৎকার করে বলে,,,,,

“মা তোমার ছেলে আমার মাথায় থাপ্পড় মেরে গাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত ও আবার ছাইপাঁশ গিলতে যাচ্ছে ক্লাবে”।

“এই ছেলেটা আর ভালো হলো না। নিহান ছেলেটার সাথে থেকেও ছেলেটা ঠিক হলো না। এখন আল্লাহ ই ভরসা।আল্লাহ এমন মেয়েকে আমার ছেলের জীবনে এনে দেও। যেন আমার ছেলেটা সব ছেড়ে ভালো হয়ে যায়”। (মিসেস স্বর্ণা)

_____

কফিশপে বসে আছে নিহান, নয়ন আর জোভান।

“ব্যাপার কি বলতো জোভান তোর আজ ভার্সিটিতে মন খারাপ ছিল কেন? (নয়ন)

“আজ আমার বারো নম্বর গার্লফ্রেন্ডর সাথে ব্রেকআপ করে এসেছি তাই”। (জোভান)

“এইজন্য তোর মন খারাপ জোভান।মজা করছিস আমাদের সাথে। রেগুলার তোর ব্রেকআপ হয় আবার নতুন নতুন গার্লফ্রেন্ড হয়।তুই আবার এসব নিয়ে মন খারাপ করছিস কবে থেকে? (নিহান)

“এসবের জন্য না”৷ (জোভান)

“তাহলে,,,, (নয়ন)

“আসলে তিহু বলেছে ওকে বিয়ে না করলে সুইসাইড করবে তাই ভয়ে আছি”। (জোভান)

“নে ফেঁসে গেলি জোভান৷ এখন কি করবি তুই ? (নয়ন)

“সেটা জানিনা তবে,,,, (জেভান)

“তবে কি? আবার কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছিস? (নিহান)

“না। তবে আজ সকালে মন খারাপ ছিল।কেন্টিনে মিস জুনিয়রের সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর মন ভালো হয়ে গেল।ভেবেছিলাম মিস জুনিয়রকে আমার চব্বিশ নম্বর গার্লফ্রেন্ড বানাবো কিন্তু মিস জুনিয়র সব মেয়ের মতো নয়। মেয়েটার অনেক জিদ” ।(জোভান)

“দেখ জোভান মেয়েটা কিন্তু ভীষণ ডেঞ্জারাস। তোকে কিভাবে থাপ্পড় মারল”। (নয়ন)

“ওই থাপ্পড়ে আমার কি জানি হয়ে গেল আমি নিজে ও জানি না”। (জোভান)

“ওই মেয়ের থেকে সাবধান জোভান” । (নিহান)

,

চলবে…..
_____

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here