মিস্টার সিনিয়র পর্ব -০৪

#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_০৪
®ফিহা আহমেদ

“পরশি পরশি কোথায় তুই?

“লারা আপুর গলার স্বরের মতো লাগছে। কিন্তু লারা আপু,,,,, (পরশি)

পরশি আর কিছু বলার আগেই একটা মেয়ে কিচেন রুমে এসে পরশিকে জড়িয়ে ধরে।

“কিরে পরশি তোকে কতবার ডাকলাম তুই সাড়া দিলি না যে। পরে দাদী মা বললো তুই কিচেন রুমে”।

“আপু হঠাৎ তুমি এইখানে”। (পরশি অবাক হয়ে বললো)

“মানে কি বলছিস তুই এইসব পরশি। দাদী মা কিছু বলেনি তোকে? (লারা অবাক হয়ে বললো)

“হ্যাঁ। বলেছে আজ মেহমান আসবে”। (পরশি)

“আচ্ছা তোর চোখে কি আমায় ফকিন্নি মনে হচ্ছে মেহমান মেহমান লাগছে না? (লারা গম্ভীর ভাব নিয়ে বললো)

লারার কথায় পরশি শব্দ করে হেসে দিলো। পরশির হাসির শব্দ কিচেনের বাহিরে চলে গেল। ড্রয়িং রুম থেকে মিসেস শিখা পরশির হাসির শব্দ শুনে রেগে সেখান থেকে ওঠে কিচেন রুমে আসলো।

“কাজ ছেড়ে হাসিঠাট্টা করা হচ্ছে। লারা ইয়ানা তোমায় ডাকছে ইয়ানার কাছে যাও”। (মিসেস শিখা)

লারা মন খারাপ করে কিচেন থেকে চলে গেল।লারা যেতেই মিসেস শিখা পরশির চুলের মুঠি ধরে নিজের মুখের সামনে নিয়ে আসলো।

“খুব বেড়ে গেছিস তুই। মেহমানরা সবাই যাক তারপর তোকে আমি দেখে নিব”। (মিসেস শিখা)

পরশিকে ধমকি – ধামকি দিয়ে কিচেন রুম থেকে চলে গেল মিসেস শিখা ।মিসেস শিখা কিচেন রুম থেকে যেতেই পরশি নিরব কান্না শুরু করলো।

পরশি সব রান্না শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে গোসল সেরে নিচে আসতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।

“মেহমানদের সামনে গেলে দাদী যদি বকে”। (পরশি)

তখন লারা আসে পরশির রুমে।

“কিরে পরশি এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন।চল সবার সাথে নিচে আড্ডা দিবি।চল”। (লারা পরশির হাত ধরে বললো)

“আসলে আপু,,,,, (পরশি)

“খুব ভালো করেই জানি তুই কেন ভয় পাচ্ছিস ওই ডাইনি বুড়ির জন্য”। (লারা)

“আস্তে বলো আপু”। (পরশি)

“আমি তোর কোনো কথা শুনবো না। চল আমার সাথে”। (লারা)

লারা পরশিকে জোর করে নিচে নিয়ে আসলো।

পরশি ভীতু চোখে বার বার তাকাচ্ছে মিসেস শিখা আর ইয়ানার দিকে।সবার সামনে তারা দু’জন কিছু বলতে ও পারছে না। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে পরশিকে।

“এই হলো পরশি তোদের যার কথা বলেছি আমি”। (লারা)

“হায়, আমি তাসির শেখ তুমি?

পরশি ইয়ানার দিকে তাকালো। ইয়ানা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো পরশির দিকে। লারা পরশির পিঠে হাত দিয়ে গুঁতা দিয়ে পরশির কানে ফিসফিস করে বললো,,,,

“তাসিরকে কিছু বল”।

পরশি হালকা হেসে বললো,,,,

“আ,,,,আমি পরশি সিকদার”।

“নাইচ নেম”। (তাসির)

তাসিরের পাশ থেকে একটা মেয়ে পরশির কাছে এসে পরশিকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,

“তুমি দেখতে অনেক মিষ্টি”।

“পরশি ও হচ্ছে রিশা আমার বান্ধবী আর তাসির আমার বন্ধু”। (লারা)

[আহাদ সিকদারের বন্ধু লিমন খানের মেয়ে লারা। লারা তার বন্ধুদের নিয়ে কয়েকদিন বেড়াতে এসেছে আহাদ সিকদারের বাড়িতে]

“লারা সবাই বাহিরে থেকে ঘুরে আসি”। (তাসির)

“খুব মজা হবে। আরো বিকেলবেলা ঘুরতে দারুণ হবে”। (রিশা)

এতো আদিখ্যেতা ইয়ানা আর মিসেস শিখার ভালো লাগছে না।তারা দু’জন নিজের রুমে চলে গেল। ছেলের বন্ধুর মেয়ে দেখে মিসেস শিখা কিছু বললো না। মিসেস লিমা সিকদারের মা অসুস্থ তাই আহাদ সিকদার মিসেস লিমা সিকদারকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গেলেন।

“পরশি চল”। (লারা)

“কোথায় ? (পরশি)

“আমাদের সাথে তুই ও যাবি”। (লারা)

“না আপু প্লিজ আমি যাব না।তুমি তো সবকিছু জানো দাদী,,,,, (পরশি)

“ওই ডাইনি বুড়ি কচু করবে আমি আছি না চল”। (লারা)

লারা জোর করে পরশিকে গাড়ির কাছে নিয়ে গেল।
তাসির গাড়ি স্টার্ট দিল। তাসির গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু পর পর পিছনে তাকাচ্ছে। লারা আর রিশা ব্যাপারটা খেয়াল করেছে।লারা খুকখুকানি শব্দ করে তাসিরের উদ্দেশ্যে বলে,,,,

“বার বার পিছনে তাকালে গাড়ি এক্সিডেন্ট করবি। নিজে তো ওপরে যাবি সাথে আমাদের ও নিয়ে যাবি”।

তাসির লজ্জা পেল লারার কথায়।তাসির আর একবার ও পিছনে তাকালো না।কিন্তু গাড়ির লুকিং গ্লাসের দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছে।লুকিং গ্লাস থেকে পরশিকে দেখা যাচ্ছে। রিশা তাসিরের পাশের সিটে বসে সব দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। রিশার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো।রিশা লুকিং গ্লাস নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,,,,

“আমার ঠোঁটের লিপস্টিক অনেকটাই ওঠে গেছে। আর একটু লাগাই”।

বলে রিশা লিপিস্টিক দিতে লাগলো ঠোঁটে। আর লারা পিছনের সিট থেকে নিরবে হেসে যাচ্ছে। তাসিরের লজ্জায় অবস্থা খারাপ। কিন্তু পরশির এতদিকে খেয়াল নেই। পরশি দাদী আর ইয়ানার ভয়ে আছে।গাড়ির জানালায় মুখ দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।

দশ মিনিট পর তাসির গাড়ি থামালো।

“তাসির কোথায় নিয়ে আসলি? (লারা)

“তুই তো বললি ফুচকা খাবি। তাই ফুচকার দোকানের সামনে গাড়ি থামালাম”। (তাসির)

“ওহ হ্যাঁ। পরশি গাড়ি থেকে নেমে পড়ো”। (লারা)

পরশি গাড়ি থেকে নামার আগেই তাসির গাড়ি থেকে নেমে এসে গাড়ির দরজা খুলে পরশিকে বললো,,,,,

“পরশি উঠে এসো”৷

তাসিরের কাজে লারা আর রিশার মুখ হা হয়ে গেল। রিশা লারার কানে ফিসফিসিয়ে বললো,,,

“তাসিরের হঠাৎ হলো কি বলতো এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে কেন?

“আমি যা ভাবছি তুই ও কি তা ভাবছিস? (লারা)

“আমার মনে হচ্ছে তাসির পরশিকে পছন্দ করতে শুরু করেছে”। (রিশা)

“আমি ও তাই ভাবছি”। (লারা)

“এই তোরা দু’জন ফিসফিস করে কি বলছিস”। (তাসির সন্দেহ নিয়ে বললো)

লারা আর রিশা থতমত খেয়ে বললো,,,,

” ক,,,,কিছু না”।

“ফুচকা খাবি চল”। (তাসির)

“হ্যাঁ চল।(লারা)

সবাই একসাথে ফুচকার দোকানে ফুচকা খেতে বসলো। ফুচকাওয়ালা সবাইকে ফুচকা দিল।সবাই ফুচকা খাচ্ছে।আর পরশি ফুচকার দিকে চিন্তিত হয়ে তাকিয়ে আছে।

“কি হলো পরশি ফুচকা খাচ্ছো না কেন? (রিশা)

“খাচ্ছি তো আপু”। (পরশি)

হঠাৎ পরশির ডান পাশে চোখ গেল। রাস্তার পাশে একটা লোক কালো শার্টের ওপর জ্যাকেট, কালো প্যান্ট পড়ে আর মুখে মাক্স দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পরশির কেন জানি লোকটার ওপর সন্দেহ হলো।

“লোকটাকে দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না”। (পরশি মনে মনে বললো)

তখন পরশির চোখ পড়লো রাস্তা মাঝখানে। পরশি ভয় পেয়ে গেল।

“আ,,,,আরে বাচ্চা মেয়েটা এখানে। (পরশি মনে মনে বললো)

পরশি চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়ালো। সবাই পরশির দিকে তাকালো। পরশি আমতাআমতা করে বললো,,,,

“আ,,,,আমি উল্টি করে আসি।অনেক উল্টি পাচ্ছে আমার ।

“আচ্ছা ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি উল্টি সেরে আয়”।(লারা)

পরশি ফুচকার দোকান থেকে বের হয়ে রাস্তার মাঝে চলে গেল।সকালের সেই বাচ্চা মেয়েটিকে কোলে নিয়ে রাস্তার পাশে আসলো । তখনি ওই কালো জ্যাকেট-প্যান্ট পড়া লোকটি বাচ্চা মেয়েটিকে পরশির কোল থেকে জোর করে নিয়ে নিল আর পরশিকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার নিচে ফেলে দিল।

চলবে…..
_____

(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না লিখে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here