মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ১৭

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১৭
#Saiyara_Hossain_Kayanat

ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে বেশ মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যেই বেশ অস্বস্তি লাগছে। এই কাজটা প্রায় সময়ই হয় আমার সাথে তবে আর কেউ আমার সয়তান ভাইটাই এমন করে। আমি ঘুমিয়ে থাকলেই ভাইয়া আমাকে বিরক্ত করার জন্য এমন ড্যাবড্যাব করে গরুর মতো তাকিয়ে থাকে যার কারনে আমার গভীর ঘুমও ভেঙে যায় মিনিটের মধ্যেই।

আমি চোখ না খুলেই অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বললাম-

—” উফফ ভাইয়া যা তো এভাবে গরুর মতো তাকিয়ে থাকিস না।”

কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না বরং মনে হচ্ছে আরও কাছে এসে গভীরভাবে তাকিয়ে আছে। প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে চোখ মেলেই রাগে বলে উঠলাম-

—” তোর কি কথা কানে….”

চোখ খুলে সামনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে খুব গভীরভাবে কিছু চিন্তা করছে। আমি ওনাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

—”এতো সকালে আপনি কি করছেন আমার রুমে?” আর এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেন?”

শুভ্র ভাই চেয়ারে বসে দু হাত ভাজ করে গম্ভীরমুখে বললেন-

—” এসব পরের কথা আগে বল আমাকে কোন দিক দিয়ে তোর গরুর মতো মনে হয়? তুই নিজেই তো গরুর মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছিস।”

ওনার কথায় আমি রাগে তেতে উঠলাম জ্ব্বলন্ত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম-

—” একে তো আমার রুমে এসেছেন তারপর আবার আমাকেই গরু বলছেন!! আর হ্যাঁ আমি আপনাকে না ভাইয়া কে মনে করে গরু বলেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঠিকই বলেছে আমি।”

এই কথা বলেই আমি রেগেমেগে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতেই শুভ্র ভাই পেছন থেকে আমার হাত খপ করে ধরে ফেললেন। শক্ত করে আমার হাত৷ চেপে পিছন দিকে ঘুরিয়ে মুচড়ে ধরলেন। আমাকে একদম ওনার কাছে নিয়ে গেলেন আমার ঘাড়ের ওপর ওনার গরম নিশ্বাস আছড়ে পরছে অনুভব করতেই আমি কেঁপে উঠলাম। শুভ্র ভাই রেগে শক্ত গলায় বললেন-

— “কাল সারাটা দিন আমাকে এড়িয়ে চলেছিস। কি ভেবেছিস কি তুই আমি কিছু বলবো না তোকে!! এতো কিসের লজ্জা তোর যে আমার মুখোমুখি হতে পারছিস না। আমাকে দেখলেই পালিয়ে যাস লজ্জায়া লাল হয়ে। এখনই এমন করলে বিয়ের পর কি করবি তুই?? এর পর যদি কখনও আমাকে এড়িয়ে চলতে দেখেছি তাহলে তোর হাত পা ভেঙে আমার সামনে সারাক্ষণ বসিয়ে রাখবো মনে রাখিস।”

শুভ্র ভাই আমার হাত ছেড়ে রুম থেকে বের যেতে যেতেই বললেন-

—” জলদি রেডি হয়ে আয় আমি অপেক্ষা করছি।”

বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছি শুভ্র ভাইয়ের যাওয়ার দিকে। কি অসভ্য লোক আমার রুমে এসে আমাকেই হুমকি দিয়ে গেলেন!!

——————

রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই সবার সাথে বসে হেসে হেসে কথা বলছে। ওনাকে দেখলে হয়তো কেউ-ই বিশ্বাস করবে না যে এই লোকটা কিছুক্ষন আগেই আমাকে ভয়ানকভাবে হুমকি দিয়ে এসেছে। নাস্তা করে বেরিয়ে পরলাম শুভ্র ভাইয়ের সাথে।

গাড়িতে গাল ফুলিয়ে বসে আছি ওনার সাথে কথা বলিনি একটুও। শুভ্র ভাই আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন-

—” এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে থাকলে একদম জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিবো তোকে। সুন্দর করে একটা হাসি দে এখন।”

আমি রাগী কন্ঠে ওনাকে বললাম-

—” আজব আপনি হাসতে বললেই হাসি এসে পরবে নাকি।”

আমার রাগের কোনো পাত্তা না দিয়ে উনি কিছুটা ভড়কে উঠলেন রেগেমেগে বললেন-

—” আমি হাসতে বলেছি মানে হাসবি না হলে কিন্তু তোকে কিভাবে লজ্জায় ফেলতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে অনন্য।”

শেষের কথাটা বলে এক পৈশাচিক হাসি দিলেন। ওনার এমন আচরণ দেখে রাগে আমার পিত্তি জ্বলে উঠলেও তা প্রকাশ করলাম না। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে জোরপূর্বক বত্রিশ দাঁত বের করে এক হাসি দিলাম। কারন এই মুহুর্তে লজ্জিত হওয়ার চেয়ে এই হাসি দেওয়াই আমি শ্রেয় মনে করছি।

শুভ্র ভাই আজ সকাল থেকেই অদ্ভুত রকমেরই আচরণ করছে। ওনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম “অসভ্য লোক”। শুভ্র ভাই একটু করে হাসি দিয়ে বললেন-

—” যতই বকা দিস না কেন আমি শেষ পর্যন্ত তোরই থাকবো অনন্য।”

ওনার কথায় চমকে উঠলাম এই লোকের সামনে তো দেখি মনে মনে বকা দেওয়াও বিপদজনক।

ভার্সিটি পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার আগে শুভ্র ভাই প্রতিদিনের মতো আজও সাদা গোলাপ দিলেন তবে আজ তিনটা দিলেন। হয়তো গত দুইদিন দিতে পারেনি তাই। আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্ত গলায় বললেন-

—”আজ আমার একটা মিটিং আছে তাই আসতে একটু দেরি হবে। তুই সামনের ওই রেস্টুরেন্টে বসে অপেক্ষা করিস আমার জন্য। আর নিজের খেয়াল রাখিস অনন্য।”

আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলাম। পিছন ফিরে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকাতেই উনি একটা অমায়িক হাসি দিয়ে চোখের ইশারায় আমাকে ভিতরে যেতে বললেন।

আজ আমার কেমন যেন লাগছে। মনে কু ডাকছে মনে হচ্ছে কিছু খারাপ হতে চলছে।

——————

ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি থেকে বের হলাম আজ মিমশি আসেনি। ভেবেছিলাম ওর সাথে সময় কাটাবো কিন্তু ফাজিলটা দরকারের সময়ই আসে না। এমনিতেই আজ মন ভালো না তারপর আবার হারামিটা ও আসেনি। একা একা রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে আমার নাম ধরে কেউ ডাক দিলেন। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম আহনাফ দাঁড়িয়ে আছে।
আহনাফকে দেখে বেশ অবাক হলাম কারন উনি তো জেনেই গেছে আমার বিয়ে ঠিক তারপরও কেন আসলেন এখানে??

আহনাফ আমার দিকে এগিয়ে এসে মলিন মুখে জিজ্ঞেস করলেন-

—” কেমন আছো অনন্যা?”

আমি স্বাভাবিক ভাবেই বললাম-

—”জ্বি ভালো কিন্তু আপনি এখানে কেন এসেছেন?”

আহনাফ একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন-

—”তুমি ছাড়া তো আমার এখানে আসার আর কোনো কারন থাকতে পারে না অনন্যা। তোমার জন্যই তো আমার এখানে আসা।”

আমি কিছু বললাম না চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। আহনাফ আচমকাই আমার হাত ধরে কিছুটা ইমোশনাল হয়ে বললেন-

—” অনন্যা প্লিজ আমাকে একটি বারের জন্য ক্ষমা করে দাও। আমি মানছি আমি ভুল করেছি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। তুমি আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার দাও তবুও আমার কাছে ফিরে আসো অনন্যা। আমি তোমার দেওয়া সব শাস্তি মাথা পেতে মেনে নিব। এই দু’বছর তোমাকে ছাড়া অনেক কষ্টে কাটিয়েছি কিন্তু সারাজীবন আমি তোমাকে ছাড়া এভাবে থাকতে পারবো না। প্লিজ এবারের মতো আমাকে মেনে নাও। আর কখনও কোনো অভিযোগের সুযোগ দিবো না প্রমিজ।”

আমি ওনার কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম-

—” দেখুন আহনাফ দু’বছর চলে গেছে আমাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়েছে। এই দু’বছরে অনেক কিছুই পালটে গেছে। আপনি প্লিজ সব ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যান। আর আমি আপনাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি তাই বার বার মাফ চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না।”

আহনাফ আমার অনেকটা কাছে এসে আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললেন-

—” অনেক কিছু পালটে গেলেও তোমার জন্য আমার অনুভূতি ভালোবাসা কিছুই পালটায় নি অনন্যা। প্রতিটা দিন ডায়েরির পাতায় তোমাকে নিয়ে লিখতাম। এই যে দেখো এই ডায়েরির প্রতিটা পাতায় লেখা এক এক অক্ষর শুধু তোমার প্রতি আমার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।”

আহনাফ একটা ডায়েরি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি নিলাম না ডায়েরিটা।

—” এটা আমি নিতে পারবো না আপনার কাছেই রাখুন। আর এখন এসব বলে কিছু হবে না আহনাফ। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর আমার মনে এখন আপনার জন্য কোনো জায়গা নেই। আমাকে মাফ করবেন আমি আসছি।”

একথা বলেই চলে যাচ্ছিলাম পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলাম কিছুটা দূর থেকে শুভ্র ভাই আসছে। ওনার দিকে এগিয়ে যাবো তখনই নজর পরলো রাস্তার দিকে। একটা বাচ্চা রাস্তার প্রায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে চোখে মুখে আতংকের ছাপ হয়তো ভয় পাচ্ছে। আমি দ্রুত পায়ে ওখানে গিয়ে বাচ্চাটা কে রাস্তার পাশে নিয়ে আসবো তখনই হর্নের শব্দে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম একটা ট্রাক আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি বাচ্চাটাকে দ্রুত ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে ভয়ে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে নিলাম।

হঠাৎ করেই কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিলো। কিছু একটার সাথে মাথায় বারি লেগেছে। মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম তবু্ও নিজেকে সামলিয়ে উঠে দাড়ালাম। আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া মানুষটা কে দেখতে রাস্তার দিকে দৃষ্টি দিলাম।

রাস্তার দিকে তাকাতেই ভয়ে আঁতকে উঠলাম। রক্তেমাখা নিথর দেহটা পরে থাকতে দেখেই ভয়ে আমার পুরো শরীর কাঁপা শুরু করছে। শরীরে কোনো শক্তি পাচ্ছি না চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। রাস্তায় থাকা রক্তাক্ত নিথর দেহটা আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখের পানি যেন বাধ ভেঙেছে আজ।

চলবে….

( আপনাদের রেসপন্স কমে যাচ্ছে তাই ভাবলাম একটা ধামাকা দেই।🤭 নায়ক মরে গেলে কেমন হবে বলুন তো?? আমাকে আবার বকা দিয়েন না আপনারাই তো ধামাকা চেয়েছিলেন।🙄

আর হ্যাঁ দয়া করে নেক্সট, নাইছ এইসব বিরক্তিকর শব্দ লিখে কমেন্ট করবেন না। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here