মেঘমালা পর্ব ২

#মেঘমালা
#পর্বঃ২
#Sohana_Akther
বিয়ের দুইদিন পর যখন মেঘের ফুফির ছেলে রিসাব দুষ্টুমি করে মালার গালে চিমটি দিয়েছিল। রিসাব বয়সে মালার তিন বছরের ছোট , তার থেকেও ছোট ছেলের সাথে মেঘ কিভাবে সন্দেহ করতে পারে তা মালার ভাবনার বাহিরে ।

মালাকে মেঘ টেনে রুমে নিয়ে এসে গালে এক থাপ্পর মারলো । থাপ্পরের কারণে ছিটকে গিয়ে খাটের উপর পরলো মালা । মালা অবাক হয়ে মেঘথ আচরণ দেখছে । এ কোন মেঘকে দেখছে সে । এতদিনের চেনা মেঘের সাথে আজ এই মেঘের কোন মিল নেই । তার চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো । মালাকে টেনে দাড় করালো মেঘ ।

— আহহ মেঘ এমন করছেন কেনো ?

— রিসাবের সাথে কি করছিলি তুই ? ঐ রিসাব তোর গালে হাত কেনো দিল বল ?

— আমি তো শুধু রিসাবের সাথে কথা বলছিলাম। সে আমাকে বড় বোনের মতো দেখে , দুষ্টুমি করে আমার গাল টান দিয়েছিল শুধু । এতে এভাবে রিএক্ট করার কারন তো দেখতে পারছি না ।

মালার কথা শুনে মেঘ তার গাল চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে বললো ,

— শুধু রিসাব তোর গালে হাত দিবে কেনো , বল তুই কি বলেছিস রিসাবকে ? আর ভাবিকে বোন বানায় কোন পাগলে , আমাকে কি বোকা পেয়েছিস তুই ।

মেঘের চিন্তা ভাবনা, মানসিকতা দেখে অবাক হচ্ছে মালা । ছোট ভাইয়ের সাথে নিজ স্ত্রীকে জরিয়ে কি নোংরা মানসিকতার প্রমাণ দিচ্ছে মেঘ । মেঘ আবার বলে উঠলো,

— তোকে বড় বোনের মতো দেখে বা আর যার মতোই দেখে না কেনো , তোকে ছোঁয়া সাহস কিভাবে হলো ওর বল । তোকে ছোঁয়ার একমাত্র অধিকার আমার আর কারো নয় । আর কখনো যদি দেখি কেউ তোকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে তাহলে তাকে খুন করে ফেলবো । কথাটা মনে থাকে যেনো , ফুফির ছেলে বলে রিসাব বেচে গেল নাহলে তার পরিনতি যে কি হতো তা আমি নিজেও জানি না ।

তুই শুধু আমার , তোর শরীরের প্রতিটা লোমকূপে শুধু আমার অধিকার। আমার ভালোবাসার দিকে কেউ নজর দিলে সেই নজর দেয়া মানুষটাকেই আমি শেষ করে দেবো । আজ থেকে তুই কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না সে যেই কেউ হোক না কেনো ।

নিজের মনের সমস্ত কথা বলে মালাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেঘ রাগে ফোস ফোস করতে সেখান থেকে চলে গেল । তার যাওয়ার পানে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে মালা । ক্ষণিকের মধ্যে কি হয়ে গেল তা বুঝে উঠতে পারিনি এখনো মালা । এ কেমন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ যেখানে স্ত্রীকে সন্দেহ ও করবে আবার ভালোবাসার অধিকারও খাটাবে । মেঘের ডাকে পুরনো স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসলো মালা । সে এতক্ষণ ধরে রান্নাঘর দাড়িয়ে এসব ভাবছিল ।

— কি হলো মালা এখনো তোমার কাজ শেষ হয়নি, আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে রুমে আসো জলদি ।

মালা উওর না দিয়ে চা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। মেঘ এমন ভাবে কথা বলছে যেনো তাদের মাঝে কিছুই হয়নি । যেনো সবকিছু একদম স্বাভাবিক, অন্যদিনের মতো স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে । তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মালা , মেঘের মনের আকাশে কখন মেঘ জমে কখন উজ্বালা হয় তা আজ পর্যন্ত জানতে পারেনি মালা । দ্রুত এক কাপ চা বানিয়ে রুমে আসলো মালা ।

— নিন আপনার চা । মেঘকে চা দিয়ে সম্পূর্ণ রুমটাতে চোখ বুলালো মালা । অল্প সময়ের মধ্যে মেঘ রুমটাকে ঠিক আগের মতো পরিষ্কার করে ফেলেছে । কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের রেশ মাত্র নেই । কেউ দেখে বলতে পারবে না কিছু হয়েছে এই রুমে ।

— দাড়িয়ে কেনো যাও খাটে শুয়ে পরো , অফিসের কিছু কাজ আছে এগুলো কমপ্লিট করে শুবো আমি । আর হ্যা বেড সাইড টেবিলের উপর ওয়েন্টমেন্ট আছে তা ঠোঁটের কোণে লাগিয়ে ফেলো ।

মেঘের কথা শুনে মুচকি হেসে খাটে বসে ওয়েন্টমেন্টটা হাতে তুলে নিল মালা । তার মেঘের এই কেয়ারিংটাই ভালো লাগে । শত আঘাত দেয়ার পর সে আঘাতে মলম সে নিজেই লাগাবে। মনে মনেই মেঘ অনেক ভালোবাসে মালাকে । কিন্তু মারার প্রতি তার এই ভালোবাসা প্রকাশ না পেয়ে তার সন্দেহপ্রবনতা আর অবসেসন প্রকাশ পায় ।

মেঘ তার কাজ সেরে লাইট অফ করে এসে শুয়ে পরলো । মালা এখনো ঘুমায়নি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল শুধু । হঠাৎ সে অনুভব করলো মেঘের উপ্তত গরম নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে পরছে । মেঘ পিছন থেকে মালেকে জরিয়ে তার ঘাড়ে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে কিছু বলছে ।

— তুমি কেনো বুঝো না মালা আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি । তোমার সবকিছুতে একমাত্র আমার অধিকার । তোমার সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধুমাত্র আমার । তোমার সৌন্দর্য অন্য কোন ছেলে দেখে কেনো প্রশংসা করবে বল তুমি । কোনো ছেলে তোমার প্রশংসা করুক তা আমি একদম সহ্য করতে পারি না ।

তোমার আশেপাশে ও আমি কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারি না । ইচ্ছে করে একদম খুন করে ফেলি তাদের । আমার মাঝে মাঝে কেনো মনে হয় তুমিও আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে তাদের সাথে মিশতে চাও । তুমি যদি কখনো এমন করার চেষ্টাও করো তাহলে তোমাকে খুন করে আমি নিজে মরে যাবো ।

ফিসফিস করে কথাগুলো বলে ঘুমিয়ে গেল মেঘ। মালা চুপটি করে এতক্ষণ মেঘের সব কথা শুনলো । মানুষটা মন থেকে অনেক ভালো , কিন্তু অনেক রাগ তার । মালাকে নিয়ে অনেক পজেসিভ , মালাকে ঘর থেকে বের হওয়াও নিষেধ করে দিয়েছে । যখন যা লাগবে তা বলার আগেই মেঘ তা নিয়ে হাজির । মনে মনে ভাবলো মালা মেঘকে আর দশটা সাধারণ স্বামীর মতো ঘরে তুলবে । তার মালাকে নিয়ে এই সন্দেহ শেষ করবে । এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো মালা ।

সকালে সোনালী রোদ্দুর চোখে পরতেই ঘুম ভাঙলো মালার । বাহিরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনা যাচ্ছে । যেনো তারা তাদের সঙ্গীদের সকাল হওয়ার জানান দিচ্ছে । পাশে তাকিয়ে দেখে মেঘ এখনো ঘুমাচ্ছে । ঘুমন্ত অবস্থায় কি নিষ্পাপ লাগছে তাকে , দেখে মনে হচ্ছে এই লোকটা কখনো কোনো খারাপ আচরণ করতেই পারে না । মেঘের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে পরলো মালা ।

ঘরিতে আটটা বাজে, দশ টায় অফিস তার । কাজে খালা রহিমা সকালে আশে আর বিকেলে চলে যায় । বাড়ির সমস্ত কাজ রহিমা খালাই করে মালা শুধু রান্নার দিকটা দেখে । মেঘের করা নির্দেশ রান্না মালাকেই করতে হবে সে অন্য কারোর হাতের রান্না খাবে না । তাই মালাকেই রান্নার দিকটা সামলাতে হয় । ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গেল মালা , ইতিমধ্যে রহিমা খালা এসে কলিং বেল বাজাচ্ছে । দরজা খুলে মালা সোজা রান্না ঘরে এসে চা বানাতে লাগলো মেঘের জন্য আরেকটু পরে ঘুম থেকে উঠে তার চা লাগবে ।

— মামনি আমনে মাথায় ব্যথা পাইলেন কেমনে ?

— তা কিছু না খালা , কাল রাতে বাথরুমে পরে গিয়েছিলাম ।

— আহহ আচ্ছা এই কথা , দেইখ্যা শুইন্যা চলবেন না ।

— এবার থেকে দেখে চলবো । এখন জলদি কাজ শুরু করো আমি তোমার সাহেবের জন্য চা নিয়ে যাই ঘুম থেকে হয়তো উঠে গেছে ।

রুমে যেয়ে মেঘকে দেখতে পেলো না মালা । বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে তারমানে মেঘ বাথরুমেই গোসল করছে । চা টেবিলে রেখে এলোমেলো খাট ঠিক করলো মালা । এরমধ্যে মেঘ টাওজার পরে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসলো , টাওয়াল দিয়ে ভেজা চুলগুলো নাড়াচাড়া করছে । এই অবস্থায় তাকে একদম নায়কদের মতো লাগছে । মালা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার দিকে । মেঘের ডাকে ঘোর ভাঙলো মালার …..

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here