মেঘমালা পর্ব ৩

#মেঘমালা
#পর্বঃ৩
#Sohana_Akther
মেঘের ডাকে ঘোর ভাঙলো মালার । এতক্ষণ সে অন্য জগৎেই হারিয়ে ছিল । দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেঘকে নিয়ে ভাবছিল ।

— কি হলো তোমার এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

— না এমনিতেই , চা নিয়ে এসেছি আপনার জন্য।

— তা আমি অনেক আগেই দেখেছি যখন তুমি অন্য রাজ্যে হারিয়ে ছিলে । আজ অফিসে জলদি যেতে হবে আমায় তো তাড়াতাড়ি নাস্তা রেডি করো ।

এই কথা বলে মেঘ চায়ে এক চুমুক দিয়ে তার অফিসের কাগজপত্র ঠিক করতে লাগলো কিন্তু মালা এখনো ঠাই দাড়িয়ে আছে চুপটি করে ।

— কি হলো এখনো এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো?

— কিছু বলার ছিল আপনাকে ।

— কী ?

— একটু বাবার বাড়িতে যেতে চাচ্ছিলাম, অনেক মাস হয়েছে যাওয়া হয়না । কথাও কয়েক দিন পর পর একবার হয় ।

— আচ্ছা আমি কালকে নিয়ে যাবো কয়েক ঘন্টা থেকে আবার আমার সাথে চলে আসবে ।

— বলছিলাম কি একটা রাত যদি থাকতে পারতাম ।

ভয়ে ভয়ে কথাটা বললো মালা । বিয়ের এক মাস পরে শেষবার বাবার বাড়িতে ছিল মালা এরপর আর থাকা হয়নি । মেঘের সাথে গিয়েছে আবার তার সাথেই ফিরে এসেছে । মালার কথা শুনে মেঘ দাত কটমট করে বললো ,

— আজ বলেছ এই কথা কিন্তু আর যেনো কখনো তোমার মুখে এই কথা না শুনি । নাহলে আর কখনো বাবার বাড়ির মুখ ও দেখতে পাবে না , এখন যাও আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ।

মালা দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করে রান্না ঘরে চলে আসলো চোখে পানি ছলছল করছে তার । মেঘ একটু তাকিয়ে দেখলে হয়তো দেখতে পারতো মালার চোখের পানি ।

— কি হইছে মামনি তুমি কান্না করতেছো কেনো?

— নাহ খালা কান্না না চোখে কি যেনো পরেছে তাই চোখে পানি চলে আসলো । দাড়াও মুখটা ধুয়েই আমি নাস্তা বানাচ্ছি ।

মালা চোখ মুখ ধুয়েই দ্রুত নাস্তা বানাতে লেগে পরলো । তার মনের কষ্টগুলো চাপা দেওয়ার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা । নাস্তার টেবিলে মেঘ চুপচাপ নাস্তা করেই অফিসে চলে গেল । একটা বার মালা জিজ্ঞাসা করেও নি যে সে নাস্তা করেছে কিনা । মালা চুপচাপ মেঘের পাশেই দাড়িয়ে ছিল । মেঘকে বিদায় দিয়ে রান্নার সব কাজ সেরে এক মগ কফি নিয়ে রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় বসে তার স্মৃতির পাতা উল্টাচ্ছে ।

বিয়ের একমাস পর যখন মালা মেঘের সাথে তার বাবার বাড়িতে গিয়েছিল তখন সব ঠিকঠাকই ছিল । মেঘ তার শ্বশুরের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিল মালা তার মায়ের সাথে রান্না ঘরে কাজ করতে করতে গল্প করছিল । রাতে ডিনারের আগে যখন মালার মামাতো ভাই নীল আসলো তখন থেকেই মেঘের রাগ বাড়তে শুরু করলো । ঐদিন মালা মেঘের অন্য রূপ দেখেছে ।

নীল মালার বড় মামার ছেলে । বয়সে তার থেকে পাঁচ বছরের বড় । একদম নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসে সে মালা । আদর , স্নেহ, শাসন সবি আছে তাদের মধ্যে । কলিং বেলের শব্দ শুনতেই ঐদিন মালা দরজা খুলে নীলকে দেখতে পেল । অনেক দিন পর নিজের আদরের ছোট বোনকে দেখে নীল খুশিতেই জরিয়ে ধরলো ।

— কেমন আছিস তুই মালা ?

— ভালো তুমি কেমন আছো ভাইয়া ?

— এতক্ষণ ভালো না থাকলেও এখন একদম ভালো আছি । তুই যে আসবি কই কেউ তো বললো না । ফুফি ও একটা কল করলো না ।

— মা একদম পাগল হয়ে আছে মেয়ে জামাইকে কি খাওয়াবে না খাওয়াবে তাই কাউকে বলতে পারেনি হয়তো । আমরাও না বলে হঠাৎই এসেছি।

মেঘের কথা উল্লেখ করতেই মালার মেঘের কথা মনে হলো , মেঘ ও সোফাতেই বসে আছে । মালা পিছনে তাকিয়ে দেখে মেঘ রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে । ভয়ে মালা কয়েক ঢোক গিললো , যেখানে মেঘ তাকে কোনো ছেলের আশেপাশে যেতে বারণ করছে সেখানে আজ তার সামনে কেউ মালাকে জরিয়ে ধরেছে । আজ তার কপালে কি আছে তা কেবলমাত্র মেঘ নিজেই জানে । অবশ্য মেঘকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে নীল তার মামাতো ভাই । ছোট থেকেই তাকে ছোট বোনের দেখে এসেছে ।

— কিরে কি হলো এখানেই কি দাড় করিয়ে রাখবি নাকি ।

— উঁহু চলো ভিতরে চলো , আমি মাকে বলছি তুমি এসেছো ।

এতটা সময় মেঘ চুপচাপ বসে ছিল, মালাকে কিছু বলেনি । নীল যেয়ে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তেমন একটা কথা সে বলেনি । খাবার টেবিলে নীল বারবার মালার সাথে দুষ্টুমি করছিল । মালা কোনো রকম কথা বলে নীলকে চুপ করানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু নীল তো আজ অনেক দিন পর তার বোনকে পেয়েছে তাই এত দুষ্টুমি করছে । মালা বারবার মেঘের দিকে তাকাচ্ছে, মেঘ রাগের বশত সবার সামনে খারাপ ব্যবহার না করে ফেলে । কিন্তু মেঘ তেমন কিছুই করেনি চুপচাপ সব পর্যবেক্ষণ করে গেছে । খাবারের পাঠ চুকিয়ে মেঘ আগেই রুমে চলে গিয়েছিল । মালা অনেকক্ষণ যাবত বাহিরেই পায়চারি করছিল । পিছন থেকে হঠাৎ তার মায়ের ডাক শুনতে পেল ,

— মালা রুমে না যেয়ে এখানে কি করছিস ?

— না মা কিছু না এমনিতেই হাঁটছিলাম খাওয়ার পর তো একটু হাঁটাহাঁটি করার দরকার তাই না এই জন্য আরকি ।

— জলদি রুমে যাহ , মেঘ বাবা একা একা বসে কি করছে না করছে । তার কি লাগবে না লাগবে সেদিকে তোর খেয়াল দিতে হবে না কি ।

— আচ্ছা বাবা যাচ্ছি ।

— দেখ মা সবসময় স্বামীর খেয়াল রাখবি । কখনো তাকে অসন্তুষ্ট করবি না ।

— মা তুমি চিন্তা করো না , আমি সব দেখে রাখবো ।

কয়েক মিনিট পর যখন মালা রুমে গেল তখন মেঘকে দেখতে পেলো না । দরজা বন্ধ করে সামনে ফিরতেই কোথায় মেঘ এসে তাকে একদম দরজারসাথে মিশিয়ে ফেললো ।

চলবে ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here