মেঘমালা পর্ব ৪

#মেঘমালা
#পর্বঃ৪
#Sohana_Akther
এই কয়টা লাগে তোর বল , একজনকে দিয়ে তোর মন ভরে না । নিজের স্বামীর সামনে আরেকটা ছেলেকে জরিয়ে ধরতে লজ্জা করলো না তোর । এই বল কি চলে তোদের মধ্যে , বিয়ের আগে থেকেই এসব চলছিল নাকি । ঐ ছেলেকে তো আমি একদম খুন করে ফেলবো, তোকে জরিয়ে ধরার সাহস কি করে হলো ওর।

দরজা খুলেই মালা যখন রুমে আসলো ঠিক তখনই মেঘ তাকে দরজার সাথে মিশিয়ে গাল চেপে ধরে তাকে উপরোক্ত কথাগুলো বললো ।
মালা যেই ভয়ে আচ্ছন্ন ছিল ঠিক সেটাই হলো । মেঘ তার আর নীলের সম্পর্ককে বাজে দৃষ্টিতে দেখেছে । ভাইয়ের সাথে জরিয়ে এমন বাজে কথা শুনে মালা লজ্জায় মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো ।

— কি হলো চুপ করে আছিস কেনো , কিছু বলছিস না কেনো এখন তুই । গড ডেমেট…

বলে দরজায় অনেক জোরে হাত দিয়ে বারি দিলো । দরজায় বারি দেয়ার শব্দে মালা ভয়ে চুপসে গেল । ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বললো,

— আপনি ভুল বুঝছেন মেঘ ! নীল ভাইয়ার সাথে আমার সেরকম কোনো বাজে সম্পর্ক নেই । আমার নিজের কোনো ভাই নেই ছোট থেকে তাকেই নিজের ভাইয়ের মতো দেখেছি । নীল ভাইয়াও আমাদের তিন বোনকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসে ।

— এই তুই কি বোকা পেয়েছিস আমাকে , কি মনে করেছিস আমি কি কিছু বুঝি না । নিজের ভাই ছাড়া আর অন্য ছেলে কখনোই ভাই হতে পারে না । ঐ ছেলের অন্য কোনো মতলব আছে, নাহলে তোকে জরিয়ে ধরবে কেনো । সে জানে না তোর বিয়ে হয়েছে স্বামী আছে , তার সাহস হলো কিভাবে মেঘ আহমেদ স্ত্রীকে তারই সামনে জরিয়ে ধরার ।

— আমাকে ছোট বেলা থেকে ভাইয়ের আদরে বড় করেছে । বিয়ের এতদিন পর আজ আমায় দেখে আবেগ প্লবন হয়ে জরিয়ে ধরেছে , একজন ভাই হিসেবে বোনকে জরিয়ে ধরতে পারে না বলেন । আপনি বিশ্বাস করেন আমাদের মধ্যে ভাই বোনের সম্পর্ক ছাড়া আর অন্য কোনো সম্পর্ক নেই । দয়া করে এই পবিত্র সম্পর্ককে অপমান করবেন না । আপনার তো নিজের কোনো বোন নেই আপনি কি করে ভাই বোনের সম্পর্কের মর্ম বুঝবেন ।

শেষের লাইনটা মালা একটু কঠিন হয়েই বললো। তার এই কথা শুনে মেঘ একদম চুপ হয়ে গেল । মালাকে ছেড়ে সে কয়েকটা বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে টেবিলের উপর থেকে সিগারেট ও লাইটার নিয়ে বারান্দায় চলে গেল । মালা দপ করে সেখানে দরজায় মাথা ঠেকিয়ে বসে কাঁদতে লাগলো । তার জীবনটা এমন না হলেও তো পারতো ? আর দশটা নব দম্পতির মতো তার বিবাহিত জীবনটা অনেক সুন্দর হতে পারতো ?
যেখানে থাকতো স্বামীর ভালোবাসা, বিশ্বাস, সম্মান, স্ত্রীর প্রতি মর্যাদা? তার ও তো ইচ্ছে করে স্বামীর ভালোবাসায় সিক্ত হতে ।

ভালোবাসা ? তা আছে বৈকি । কিন্তু একেই কি ভালোবাসা বলে । যে সম্পর্কে না আছে কোনো বিশ্বাস না আছে সম্মান সেখানেকি আদো ভালোবাসা জন্মায় ! ! এই কোন ধরনের ভালোবাসা মেঘের যেখানে সে নিজের স্ত্রীকে বিশ্বাস করতে পারছে না , এত সন্দেহের বাস তার মনে । তার সাথেই কেনো এমনটা হতে হলো।

মা বাবাকে চাইলেও কিছু বলতে পারবে না মালা। তাদের পরিবারের উপর অনেক উপকার করছে মেঘের ফুফি । তার বিনিময়ে মেঘের এমন ব্যবহার সহ্য করতে কষ্ট হলেও তা সহ্য করতে হবে । মা বাবাকে বললে তারা অনেক কষ্ট পাবে তাদের আদরের মেয়ের সংসারের এমন কথা শুনে । তাছাড়া মা নিজেও অনেক বার বলেছে সবসময় স্বামীর কথা মতো চলতে । যা বলে সব চুপচাপ মেনে নিতে কোনো প্রকার তর্কে না জরিয়ে । এতেই নাকি সংসারের মঙ্গল !

এসব ভাবতে ভাবতেই রাতটা যে কখন পাড় হয়ে গেল সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কারোর । ঐদিন সকালেই মেঘ মালাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে । ঐরাতের পর মালা আর কখনো তার বাবার বাড়িতে থাকে নি , দিনে যেয়ে দিনেই চলে এসেছে । স্মৃতিচারণ করতে করতে কখন যে দুপুর হয়ে গেল সেদিকে খেয়াল নেই তার । কলিং বেল বাজার শব্দে সে তার মলিন স্মৃতির শহর থেকে বেরিয়ে আসলো । দুপুর দুইটা বাজে, মেঘের লাঞ্চের সময় । দুপুরের খাবার সে বাড়িতে এসেই খায় ।

মালা দ্রুত যেয়ে দরজা খুলে দিল। একহাতে মেঘ তার ব্লেজার রেখেছে অন্য হাতে একটি শপিং ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে । ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে আছে একদম, মুখে ক্লান্তি একদম ফুটে উঠেছে ।

— কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ? সেই কখন থেকে কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছি, আর রহিমা খালা কোথায় তিনি ও দরজা খুলতে আসেনি ।

— বারান্দায় বসে ছিলাম তাই বেলের শব্দ শুনতে পায়নি ।

— এই ভরদুপুরে বারান্দায় কি করছো তুমি? এখনো গোসল ও করোনি , কি করেছো এতোটা সময়?

— এমনি বসে থাকতে থাকতে একটু চোখ লেগে এসেছিল । আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন এরমধ্যে আমি ও ফ্রেশ হয়ে নেই আর রহিমা খালাকে বলি খাবার রেডি রাখতে ।

ফ্রেশ হয়ে খাবার দাবার খেয়ে মেঘ রুমে চলে গেল । মালা বাকি কাজগুলো সেরে রুমে যেয়ে দেখলো মেঘ খাটে বসে পায়ের উপর ল্যাপটপ রেখে কি যেনো করছে । তার হাতের ব্যাগটা খাটের উপরেই রাখা ।

— কি করছেন আপনি, অফিসে যাবেন না ?

— নাহ আজ আর অফিসে যাবো না । বাকি কাজগুলো বাড়িতে বসেই করে ফেলবো । আর এইটা তোমার জন্য ।

বলে তার সাথে করে নিয়ে আসা ব্যাগটার দিকে ইশারা করলো । মালা ব্যাগটা হাতে নিয়ে মেঘকে জিজ্ঞাসা করলো এ আছে এতে ।

— তোমার হাতেই তো ব্যাগ । আমাকে জিজ্ঞাসা না করে নিজেই খুলে দেখতে পারো কি আছে এতে ।

মালা যটপট শপিং ব্যাগটা খুলে দেখতে পেলো একটি গাঢ় সবুজ রঙের কাতান শাড়ি । গাঢ় সবুজ রঙে বরাবরই মালার অনেক পছন্দ । শাড়িটি দেখে মালা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল ।

— এটা আমার জন্য! অনেক সুন্দর দেখতে ।

— নাহ তোমার জন্য না । শাড়িটা আমি রহিমা খালার জন্য নিয়ে এসেছি , অফিসে বসে ভাবছিলাম যে রহিমা খালাকে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়িতে কেমন লাগবে । যেই ভাবা সেই কাজ, শাড়ি কিনে নিয়ে চলে আসলাম ।

— আপনি এই শাড়ি রহিমা খালার জন্য নিয়ে এসেছেন ?

— বোকা মেয়ে এই শাড়ি আমি তোমার জন্য এনেছি , কালকে বাবার বাড়িতে তুমি এই শাড়ি পরে যাবে ।

নিজের প্রতি মেঘের যত্ন দেখে মালা মুচকি হাসলো । মেঘ প্রায়ই তার পছন্দের জিনিস তাকে
উপহার হিসেবে দেয়। তার পছন্দ অপছন্দের সব দিকটাই খেয়াল রাখে । শুধু তার এই অতিরিক্ত রাগ , অবসেসন ও পাগলামিই সব নষ্টের মূল ।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here