মেঘমালা পর্ব ৭

#মেঘমালা
#পর্বঃ৭
#Sohana_Akther
ঐদিনের ঘটনার আজ সাত দিন হয়ে গেল । এই সাতদিনে মালা প্রয়োজন ছাড়া মেঘের সাথে কথা বলেনি । মেঘের প্রতিটি কথার উত্তর হ্যা ও না তে দিয়েছে । মেঘ নিজেও মালার সাথে অতোটা কথা বলেনি, তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে । ঐদিনের এমন ব্যবহারের জন্য সে অনুতপ্ত তাই মালার সাথে চোখ মেলাতে পারে না সে ।

— মালা আজ অফিসে জলদি যেতে হবে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি নাস্তা রেডি করো ।

— জ্বী ।

আর কোনো কথা না বলে মালা রান্নাঘরে যেয়ে নাস্তা টেবিলে সাজাতে লাগলো । রহিমা খালা চুপচাপ সব দেখে যাচ্ছে , ঐদিনের এমন অমানুষিক নির্যাতনের পর ও মালা তার পরিবারের কাউকে কিছু বলেনি । মেঘের সবকিছু মাথা নিচু করে মেনে নিয়েছে । রহিমা খালা একবার বলেছিল মেঘের ফুফিকে সব বলে দিতে কিন্তু মালা বলেনি । সে চায় না মেঘের প্রতি তার ফুফির ভালোবাসা, সম্মান কমে যাক । রহিমা খালা সত্যিই অনেক অবাক হন মালার এমন মন মানসিকতা দেখে ।

— সত্যিই মামনি খুব অবাক হই আমনেরে দেখে , অনেক ভালা মানুষ আমনে । যেইখানে আজকালের বউরাকে জামাই, শ্বশুর বাড়ির মানুষ একটা কথা বললেও পুরা ঘর মাথায় তুইলা ঝগড়া করে, বাপের বাড়ির মানুষ ডাইকা কতো কিছু করে আর আমনে ঐ জায়গায় একটা টু শব্দ ও করেন নাই । বাপের বাড়ি তো দুর শ্বশুর বাড়ির মানুষ যা আছে তাদের ঔ কন নাই সাহেবের এমন ব্যবহারের কথা ।

মালা চুপচাপ দাড়িয়ে এতক্ষণ রহিমা খালার কথা শুনছিল । তার কথা শুনে এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো মালা ।

— সবকিছু চাইলে কি সবাই কে বলা যায় খালা বলেন ? বাবার বাড়ির মানুষকে বললে তারা দুশ্চিন্তা ছাড়া কিছু করতে পারবেনা । এমনি তারা চাইলেও আমাকে এখান থেকে নিতে পারবেনা , আর নিতে চাইলেও ওনি কখনো আমাকে কখনো নিতে দিবে না । সব শেষ করে দিবে । আর এসব কথা শুনে আমার পরিবার খুশি থাকতে পারবে না । আর রইলো ফুফির কথা তিনি ওনাকে অনেক ভালোবাসে । মায়ের স্নেহ, মমতা দিয়ে তাকে বড় করেছেন । এখন ওনার এমন কথা শুনলে তিনি অনেক কষ্ট পাবেন।

— আমনেই একজন আদর্শ বউ , মাইয়া যে নিজের আগে সবার কথা ভাবে । কিন্তু চিন্তা কইরেন না আমনে মেঘ সাহেব একদিন না একদিন ঠিক হবেই । এমনিতেই অনেক ভালোবাসে আমনেরে তয় সন্দেহটা তার মইধ্যে একটু বেশি ঐডা একদিন মুইছা যাইবোই ।

— মালা নাস্তা রেডি তো ?

রুম থেকে মেঘের ডাক শুনে মালা নড়েচড়ে দাড়িয়ে গেল । সব খাবার টেবিলে রেখে সেখানে দাড়িয়ে আছে সে । মেঘ এসে দ্রুত নাস্তা করে অফিসে চলে গেল । মালা চুপচাপ তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে ছিল ।

ঐদিনের পর থেকে অফিসের লোকজন মেঘকে আগের থেকে অনেক ভয় পায় । ঐ কর্মচারী দুজনকে ঠিক ঐদিনেই অফিস থেকে বের করে দিয়েছে । মেঘের একদম কড়া নির্দেশ যাতে অফিসে কাজ ব্যতীত কোনো বাহিরের কথা না হয় । কাজের কথা ছাড়া যেনো অফিসের কাউকে একসাথে দাড়িয়ে কথা বলতে না দেখা যায় । মেঘের ভয়ে মেয়েরাও তাকে নিয়ে গবেষণা করা ছেড়ে দিয়েছে ।

মেঘ অফিসে যেয়ে সোজা তা কেবিনে যেয়ে বসলো । কেবিনে যেয়ে ইন্টারকমে তার ম্যানেজারকে কল করলো ,

— Mr . Khan come to my cabin , right now . l want to know all details about the exhibition. ( মি: খান আমার কেবিনে আসুন , এক্ষুণি । আমি এক্সিবিশনের সব তথ্য জানতে চাই । )

— ok sir , I’ll come your cabin in 5 minutes ( ঠিক আছে স্যার, আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আপনার কেবিনে আসছি । )

কিছু সময়ের পর,

— May I come in sir ? ( আসতে পারি স্যার? )

— Yes Mr. Khan come in . Sit down and tell me about the progress of art exhibition. ( হ্যা আসুন মি: খান । বসেন এবং বলেন এক্সিবিশনের কাজ কতটুকু এগিয়েছে।)

— স্যার সব ঠিকঠাক । এক সপ্তাহ পরেই আমাদের কোম্পানি থেকে প্রতিবছরের মতো এবার ও আর্ট গ্যালারিতে এক্সিবিশনের প্রোগ্রাম হবে । নতুন চিত্র শিল্পীরাও তাদের চিত্র প্রদর্শন করতে পারবে । সত্যিই স্যার, আপনার মতো মানুষ হয়না । আপনার কারণে ছোট ছোট আর্টিস্টরা তাদের কলা দেখানোর সুযোগ পায় । তা নাহলে আজকাল এইসবের কদর আমাদের সমাজ এতোটা করে না ।

— আচ্ছা ঠিক আছে, সবকিছু ঠিকঠাক হলেই ভালো । এখন আপনি যেতে পারেন ।

— জ্বী স্যার, আশা করি এবার আপনি আপনার সেরা চিত্র প্রদর্শন করবেন সবাইকে ।

মেঘ নিজ অফিস থেকে Painting Exhibition আয়োজন করে যেখানে সে তার চিত্র প্রদর্শন করে সবার সামনে । নতুন নতুন চিত্র শিল্পীদেরও সুযোগ করে দেয় । শহরের নামি দামি সকল মানুষ সেখানে আসে । প্রত্যেকবার খুব চড়া দামে মেঘের সব পেন্টিং বিক্রি হয় ।

বারান্দায বসে শেষ বিকেলের সোনালী রোদ উপভোগ করে সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন উপন্যাস পরছিল মালা । তার বোনের কাছে শুনেছে উপন্যাসটি নাকি একদম মনে দাগ কাটার মতো । তাই উপন্যাস পড়তে বসেছে আজ। কয়েক পাতা পড়ার পর হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো । এই বিকেল বেলা কে হতে পারে তা ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে দেখলো মেঘের ফুফি দাড়িয়ে আছে ।

— আসলামুআলাইকুম ফুফি কেমন আছেন ? এই বিকেলবেলা হঠাৎ ওনাকে ফোন করে বলে দিলেই তো ওনি নিয়ে আসতো। আফনি কষ্ট করে একা কেনো আসলেন ?

— ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো । আগে ঘরে ঢুকতে দে তারপর সব বলি হুম ।

— হ্যা আসুন আসুন, আপনি বসেন আপনার জন্য আমি চা নিয়ে আসি ।

মালা রান্নাঘরে যেয়ে চট জলদি চা বানিয়ে নিয়ে আসলো । ছুটাছুটি করতে করতে মালার শাড়ি কিছুটা এলোমেলো হয়ে তার শরীরের মারের দাগগুলা দেখা যাচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেই । কিন্তু মেঘের ফুফি তা ঠিকি খেয়াল করছে এবং বুঝতেও পেরেছে যে এসব মেঘেরই কাজ । তিনি জানেন ছেলেটার রাগ অনেক, মালাকে একদম নিজের করে আগলিয়ে রাখতে চায় কিন্তু তাই বলে নিজের স্ত্রীর সাথে এমন পশুরমত ব্যবহার । এমন ব্যবহারের কারণে অন্য কোন মেয়েও মেঘের সাথে থাকতে চাইবে না , মালাতো দাত কামড়ে পরে আছে । আজ মালাকে মেঘের অতীত সম্পর্কে সব বলবে বলে ঠিক করেছেন তিনি ।

— ফুফি সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি, আপনার চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে । কি ভাবছেন এতো আপনি ।

— মালা তোমাকে আমার কিছু বলার আছে , হয়তো এই কথাগুলো আমাকে তোমার আরো আগেই বলার উচিত ছিল ।

— কি এমন কথা ফুফি ?

— মেঘের অতীত নিয়ে অনেক কিছুই তোমার থেকে লুকিয়েছি তোমার থেকে । সেগুলো জানার অধিকার আছে তোমার । মেঘের রাগ সম্পর্কে তোমার থেকে আর কেউ ভালো জানতে পারবেনা । আর এই কালো অতীতের জন্যই আজ সে এমন , একরোখা, জেদী । আমার বিশ্বাস মেঘের অতীত সম্পর্কে জানলে তুমি মেঘকে আর দশটা সাধারণ মানুষের মত ঘড়ে তুলতে পারবে । সে তার অতীতের ঘটনা দিয়ে তার আজ পরিচালনা করছে । মেঘের সম্পর্কে সবকিছু আজ তোমাকে বলবো আমি ।

মালা চুপচাপ বসে অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কি হতে পারে মেঘের অতীত যার জন্য আজ সে এমন !

চলবে . . .

( দুঃখিত সবাইকে অনেক অপেক্ষা করানোর জন্য )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here