মেঘমালা পর্ব ৬

#মেঘমালা
#পর্বঃ৬
#Sohana_Akther
তোকে না বলেছিলাম দরজা খুলবি না তারপরেও কেনো খুললি তুই । যেমনেই শুনলি যে বাহিরের পুরুষ আসছে নিজেকে আর আটকাতে পারিস নি তাই না ? নিজেকে পরপুরুষের কাছে মেলে ধরার খুব শখ তোর তাই না? আজ তোর এই শখ আমি মিটাবো ।

অফিস থেকে এসেই মেঘ একাধারে কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে , বেল বাজার শব্দে রহিমা খালা এসে দরজা খুলে দিল । মেঘ ভিতরে ঢুকে তার গায়ের ব্লেজারটা ছুড়ে ফেলে সোজা রুমের দিকে গেল । মালা সবে মাত্র গোসল করে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুল শুকাচ্ছিল । অমনি সে চুলে টানে ব্যথা পেয়ে চিৎকার করে উঠলো । মেঘ রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বারান্দায় যেয়ে মালার চুল টেনে রুমের ভিতর নিয়ে এসে এলোপাথাড়ি চড় মারতে শুরু করলো । পেন্টের বেল্ট খুলে সে মালাকে পাগলের মতো মারা শুরু করলো । মালার কিছু বুঝার আগেই মেঘ তার সাথে এমন ব্যবহার শুরু করলো । মালা বারবার বলছে ছেড়ে দিতে তাকে , কি করছে সে । কিন্তু মার বন্ধ করার বদলে মেঘ মারের মাত্রা বাড়িতে উপরের এই নোংরা কথাগুলো বলতে লাগলো । এতক্ষণে মালা বুঝেছে তার সাথে পশুর মতো ব্যাপার করার কালণ ।

— মেঘ আমি ইচ্ছে করে এমন করেনি প্লিজ একটিবার আমার সম্পূর্ণ কথা শুনুন । রহিমা খালা ঘরে ছিল না তখন আর আপনার কর্মচারী বারবার বেল বাজাচ্ছিল । আমি ভাবলাম হয়তো অনেক জরুরী ফাইল , আপনার কাজের ক্ষতি হতে পারে তাই দরজা খুলেছি । বিশ্বাস করুন আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না । আপনি কেনো বারবার আমাকে অবিশ্বাস করেন ।

মালার কথা গুলো মেঘের কানে গেল বলে মনে হলো না । সে তার নিজের ধুনেই আছে । তার এটাই মনে হচ্ছে মালা ঐ লোকের সামনে না গেলে আজ মেঘ আহমেদের স্ত্রীকে কেউ মাল বলতে পারতো না । মেঘ মালাকে এখনো নোংরা কথা বলছে ও মেরে যাচ্ছে । অপরদিকে রহিমা খালা অনেক যাবত দরজা ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে মালার চিৎকারের শব্দ শুনে ।

আধ ঘণ্টা ধরে মালার উপর দিয়ে এক তুফান ধেয়ে গেল । মেঘের দেয়া আঘাত সহ্য না করতে পেরে মালা নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে আছে । মেঘ দরজা খুলে হনহন করে ছাদে ছলে গেল । মেঘের যাওয়ার পর রহিমা খালা ভিতরে ঢুকে মালার এই বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে এক চিৎকার দিয়ে উঠলো । দ্রুত সে মালার পাশে বসে তাকে ডাকতে লাগলো ।

— মামনি কি হইলো আমনের? চোখ মেইলা তাকান একবার ?

মালাকে বারবার ডেকেই যাচ্ছে কিন্তু তার কোনো হেলদোল নেই । টেবিল থেকে পানি নিয়ে এসে মালার চোখে মুখে মারলো কিন্তু এতেও তার জ্ঞান ফিরছে না । রহিমা খালা মালার এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেল , কাপা কাপা হাতে সে একবার মালার নাকের কাছে হাত নিয়ে নিঃশ্বাস চেক করলো । নাহ নিঃশ্বাস তো নিতে পারছে কিন্তু জ্ঞান কেনো ফিরছে না । ডাক্তার কে কল করবে না করবে এই দ্বিধায় ভুগছে । এসবের মধ্যেই কুড়ি মিনিট কেটে গেল ।

এতটা সময় ধরে মেঘ ছাদে পায়চারি করছিল । নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল । কোনো রকম রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সে নিচে রুমে চলে আসলো । রুমে এসে দেখলো রহিমা খালা মালার পাশে বসে আছে । মালা এখনো সেই আগের অবস্থাতেই আছে যেভাবে মেঘ তাকে ফেলে গিয়েছিল । মালার গায়ের শাড়ি আলুথালু হয়ে আছে , বেল্টের আঘাতে শরীরের অনেক জায়গা কেটে রক্ত পরছে । চড়ের কারণে গাল দুটো একদম রক্তিম হয়ে আছে ।

মালার এই অবস্থা দেখে মেঘের বুকে মোচর দিয়ে উঠলো । সে দ্রুত মালার কাছে যেয়ে তাকে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দিল । বারবার মালা বলে ডাকছে , চোখে মুখে পানি দেয়ার পরও মালার জ্ঞান ফিরছে না । মেঘ রহিমা খালাকে গরম পানি নিয়ে আসতে বললো । গরম পানি করে নিয়ে আসার পর মেঘ দরজা বন্ধ করে মালার শাড়ি পরিবর্তন করে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে নতুন শাড়ি পরিয়ে দিল । শাড়ি পরাবার সময় বুকে , পেটে , পিঠে ও আঘাত প্রাপ্ত সকল জায়গায় মেঘ তার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল।

রাতে ব্যথার কারণে মালার হাড় কাঁপিয়ে জ্বর আসলো । জ্বরে তার সমস্ত শরীর একদম আগুনের মতো গরম হয়ে ছিল । জ্বরের কারণে ঠান্ডায় সে বারবার মেঘকে জরিয়ে ধরছিল । মালার শরীরের তীব্র উত্তাপ মেঘ নিতে পারছিল না । কিন্তু তারপরও সে মালাকে নিজের সাথে আকড়ে ধরে ছিল । সারা রাত ধরে জলপট্টি দেয়ার পর রাত চারটার সময় মালার জ্বর কিছুটা কমলো ।

জ্বর কিছুটা কমার ফলে জ্ঞান ফিরলো মালার । কিন্তু সে ঠিক মতো চোখ মেলে তাকাতে পারছে না, জ্ঞান ফেরার পর মেঘ তার জন্য সুপ বানিয়ে নিয়ে এসে তাকে খাওয়ানের চেষ্টা করছে। মালা একদম নেতিয়ে আছে , মেঘ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে কোনো রকম খাইয়ে ব্যথার ও জ্বরে ঔষুধ খাইয়ে দিল । খাওয়ানোর কয়েক মিনিট পর মালা একদম মেঘের বুকের উপর বমি করে সব বের করে ফেললো । মেঘ একদম আদর্শ স্বামীর মতো সব পরিষ্কার করে মালাকে শুইয়ে নিজে পরিষ্কার হয়ে আসলো ।

মেঘ মালাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে আর মালা জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকে যাচ্ছে ।

— আপনার মনে কি কোনো মায়া দয়া নেই নাকি ? আপনি সবসময় আমাকে এত কষ্ট কেনো দেন বলুনতো । কেনো আপনি আমাকে এতটা অবিশ্বাস করেন ? আমার যে অনেক কষ্ট হয় আপনার এমন ব্যবহারে তা আপনি বুঝেন না ? কোথায় কষ্ট হয় দেখেবেন ( মেঘের হাত মালা তার বুকে রেখে বললো ) ঠিক এই জায়গায় কষ্ট হয় । আপনাকে যদি দেখাতে পারতাম এই জায়গাটা কত ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে তাহলে আপনি আমার কষ্টের পরিমাণটা বুঝতেন ।

মেঘ চুপচাপ মালা কথা শুনে যাচ্ছে । বাচ্চাদের মতো ছোট্ট মুখ করে মালা কথাগুলো বলে যাচ্ছে। এতদিন যা সে সজ্ঞানে মুখ ফুটে বলেনি আজ সে জ্বরের ঘোরে সব বলে দিচ্ছে । আজ সে তার দীর্ঘদিনের জমানো অভিযোগ মেঘের সামনে তুলে ধরছে । মালা নিজেও বুঝতে পারছে না সে কি বকবক করে যাচ্ছে । সে আবার শুরু করলো ,

— আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না সবসময়ই শুধু বকাঝকা করেন , মারেন । আপনার মারে যতটা না শরীরে ব্যথা পাই তারচেয়ে দশ গুন আমার মনে ব্যথা পাই । আপনার দেয়া প্রতিটা আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায় আমার হৃদয় । দেখে নিয়েন একদিন আমি না ফেরার দেশে চলে যাবো, তখন দেখবো আপনি কাকে মারেন , বকাঝকা করেন ।

মালার না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার কথা শুনে মেঘ তাকে আরো তীব্র ভাবে জরিয়ে ধরে বললো ,

— তুমি কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না । যদি যেতে হয় তবে আমার সাথেই যাবে তার আগে নয় ( কি করে তোমাকে বোঝাব আমি যে তোমায় কতোটা ভালোবাসি । ভালোবাসার কথাটা কখনো মুখ ফুটে বলতে পারি নি । আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন যে শুধু তুমিই , তুমি কেনো বুঝো না অন্য কেউ তোমাকে নিজে কথা বলুক সেটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না । মালাকে বুকে নিয়ে মনে মনে এসব কথা বলে যাচ্ছে মেঘ )

কষ্টের রাত গুলো অনেক দীর্ঘ হয় । এই রাতটা যেনো কাটতেই চাচ্ছে না । আরো একদফা বমি করে মালা খাটে একদম নিস্তেজ হয়ে পরে রইলো। কখন ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় মেঘ । নতুন একটি ভোর কি সম্পর্কের নতুর মোড় নিয়ে আসবে মেঘমালার জীবনে ?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here