মেঘের আড়ালে পর্ব ১

০১.
বধূ সেজে বসে আছি আমার বড় বোনের পাবনা থেকে পালৌকিত সাইকো ভাসুর এর সামনে। কথাটা শুনতে অদ্ভুত লাগছে তাইনা, লাগলেও কিছু করার নাই। লজ্জায় দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছা করছে।এইমূহুতে দুঃখে চোখ তুলে কেউর দিকে তাকাতে মন চাচ্ছে না। এতোদিন বান্ধপিদের মজার ছলে কতো শত শত কথায় অভিশাপ দিতাম কিন্তু নিজের কপালই যে এমন কিছু অপেহ্মা করে ছিলো কে জানতো। বার বার মনে হচ্ছে সময়টা এইখানেই থেমে থাকুক আর আমি এখান থেকে একটা দৌড় লাগাতে পারলেই আপাতোত বাচি।কাজি সাহেব বার বার তাড়া দিয়ে যাচ্ছেন কবুল বলার জন্য কিন্তু এই সাইকো ছেঁকা খাওয়া বেকা হওয়া বীর পুরুষকে নিজের স্বামী ভাবতে নিলেই শরীল জেনো ভয়ে কান্নায় কেপে উঠছে………….


আমি জান্নাতুল নূর । বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান এভার এইচ এস সি দিয়েছি। এই এইচ এস সি দিয়েই বিয়ে নামক পিরিতে বসতে হলো আমাকে এক প্রকার বাধ্য হয়ে। এখন আপনারা হয়তো অবাক হচ্ছেন আমি কোন দুঃখে এই বেটা সাইকো কে বিয়ে করছি তাইতো। বিষয়টা খুব হাস্যকর তাই না। হ্যা আমার ও খুব হাসি পাচ্ছে নিজের কপালের উপর। এতোই হাসি পাচ্ছে যে খুশির ঠ্যালায় এইমূহুতে বাড়ির পাশে যে পচা নদীটা আছে অইখানে গিয়ে ঝাপ দিতে ইচ্ছে জাগ্রত হয়েছে আমার এই ছোট মনে, কিন্তু পরিবারের মানসম্মানের কথা ভেবে আর তাদের চোখ রাঙানোর জ্বালায় আপাতোত কিছু করতে পারছিনা। আজ আমার বড় আপি ইশারা বিয়ে ছিলো। এই বিয়েইটা জেনো আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো। আসিফ আংকেল আব্বুর ছোটবেলার বন্ধু তার ছোট ছেলে ইরফান ভাইয়ার সাথে ইশারা আপির বিয়ে ছিলো আজ। মূলত দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব আরো পাকাপুক্ত করার জন্য তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। আপু আর ইফরান ভাইয়ার বিয়ের শেষ হওয়ার কিছুহ্মন পরেই আসিফ আংকেল অস্থির হয়ে এসে আব্বুর কাছে এক প্রকার হাত জোড় করে মিনতি শুরে আবধার করে বসে আমার সাথে ইয়াদ ভাইয়ার বিয়ে দেওয়ার জন্য। মুহুতে বাড়িতে বিয়ে বাড়ি আমেজ থেকে ছোটখাটো টনেডো বয়ে যায়। আমি নাকি পারবো তার গম্রা মুখ করা গম্ভির জলে থাকা ছেলেকে আগের মতো করতে। আমার কারনে নাকি তার ছেলে আজ তিন বছর পর হেসেছেন। কই আমিতো একবারো দেখিনি আর হাসলেও বিয়ে করতে হবে এমন কোন কথা আছে আদৌ। আব্বুর কি হলো জানিনা আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে আংকেলকে নিয়ে বিতরের রুমে চলে গেলেন। প্রায় পাক্কা এক ঘন্টা পর এসে আম্মু আর আপিকে উদ্দেশ্য করে বললেন আমাকে রেডি করাতে আজ আমার সাথে ইয়াদ ভাইয়ার বিয়ে হবে। এটার শুনার সাথে সাথেই আমার যেমন রৌদ্দুর আকাশে মেঘ গুলো জমে বর্জ্যপাত ঝড় কানে সো সো করে বয়ে গেলো।আমি কিছু বলতে নিতেই আব্বু আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। আর আম্মু আমাকে হাত এর ইশারা দিয়ে বুঝালেন এতো মানুষ এর সামনে মুখ খুললেই মাইর। এখন তো আমার রিতিমত মনে হচ্ছে রেলস্টেশন বট গাছ এর নিচ থেকে আসলেই আমকে কুড়িয়ে এনেছে তাইতো আমার সাথে এই ঘোরো অনন্য গুলো করছে।

০২.

“মা বলো আলহামদুলিল্লাহ বলো মা!”

বুঝতে পারলাম আমার কাছে এমন কোনো নিঞ্জাটেকনিক জানা নেই, এই বিয়ে নামক ঝড় থেকে বাচার । তাই বাধ্য হয়ে বলে ফেললাম “আলহামদুলিল্লাহ ” হয়ে গেলাম ইয়াদ নামক সাইকোর বেটার বউ। বউ হেয় বউই তো এমন তেমন কেউর বউ না আবার এই সাইকো টার বউ ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। রাগে দুক্ষে ফুসফুসে পাশে বসে থাকা ইয়াদ নামক দানব এর দিকে রুহ্মুচোখে তাকিয়ে দেখি সেই আপাতোত তার গম্ভির চিন্তায় মুগ্ধ আছে। আচ্ছা ওর মনে এখন কি চলছে? ও কি আমাকে নিয়ে ওর মনে পাগলা গারোদের কোনো কাহানী সাজাতে ব্যস্ত নেই তো। ভেবেই গা যেমন মূহুতে কাটা দিয়ে উঠল এখন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।


——বাবাইটা আমার, কখন যে তুই এতো বড় হয়ে গেলি বুঝতেই পারিনি গালে হাত দিয়ে কান্না মিশিতো শুরে। এতোদিন আমার ঘর তোর হাসি দুষ্টুমিতে মেতে থাকতো আজ সব শান্ত করে চলে যাচ্ছিস অনের ঘর আলৌকিত করতে।

——- বুঝতে যেহেতু পারনি তাহলে পাঠাচ্ছো কেনো আব্বু ওই সাইকো ঘরে। আমার আলৌকিত কারনে কি তোমার ঘরে বেশি কারেন্ট বিল আসছিলো যে তুমি সেই রাগে আমাকে এইভাবে তারিয়ে দিচ্ছো।

—- বাবাইটা বড্ডো অভিমান হয়েছে আব্বুর উপর তাইনা। আচ্ছা তুই কি ভরসা করিস তোর আব্বুকে!

——- নিজের থেকেও হাজারগুন বেশি করি, কাল ও করতাম আজও করি। কোনো সন্দেহ আছে আমার উপর।

——— তাহলে তোর আব্বুর উপর একটু ভরসা রাখ। আমি যা করেছি তোর ভালোর কথা চিন্তা করেই করেছি, এখন হয়তো আমার কথা তুই বুঝছিস না সময় হলে তুই একদিন ঠিকই বুঝবি তোর আব্বু তোর জন্য কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি। কপালে চুমো দিয়ে।

—-আব্বুর কথা শেষ হতেই আম্মু কাছে এসে আমার হাত মুঠো শক্ত করে ধরে।

“তুই বয়সে তোর আপি থেকে ছয় বছরের ছোট হলে ও ইশারা থেকে তুই বেশী বুদ্ধিবান “।আমার লহ্মি মেয়ে তোকে কিছু বলতে বা বুঝাতে হবে না আমার। আমার তোর উপর বিষাশ আছে তুই সব পরিস্থিতিতে নিজেকে হ্মাপ খায়িয়ে চলতে পারবি।

“শুন মা ইয়াদ খুব ভালো ছেলে, তুই ইয়াদকে মানিয়ে নিয়ে ওর সাথে সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারবিনা”।

আম্মু কথা শুনে ইতিমধ্যে ৪৪০ বোল্ড এর সর্কট খেলাম। ইয়াদকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে বলছে তার উপর আবার শান্তিতে সুখে সংসার আদৌ কি আমি পারবো।

“ইয়াদের পরিবার বেশী দেরি করলো না।খুব তাড়াতাড়ি তারা নূর ও ইশারাকে নিয়ে চলে আসলো “।

০৩.
বাসর ঘরে বসানো হয়েছে নূরকে। বাসায় আসার পর থেকেই ইয়াদের আত্বীয়-স্বজন অনেকেই অনেক কথা বলেছেন সাথে একটা সাথে একটা ফ্রি টাইপ জ্ঞান ও দিয়েছেন।নূরের দাদি শাশুড়ি নূরের অব্যস্থা বুঝতে পেরে ইয়াদ এর ছোট বোনকে বলে বাসর ঘর নামক ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে।

আপাতোত আমার জীবন এর মতো রুমটা কিছুটা অন্ধকার হয়ে আছে, কিন্তু ডিম লাইটের মৃদ্যু আলোতে চারপাশটা আফছা আফছা বুঝা যাচ্ছে। দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলে প্রথমে গিয়ে চোখ পরে বেডের উপরে ইয়াদ ভাইয়ার বিশাল এক ছবির উপর। বাইক এর সাথে কিলার লুক দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে সানগ্লাস মুখে আঁকাবাকা দাতে উজ্জ্বল করা হাসি, লাল পাঞ্জাবি পরিহিত হাতা কুনি পর্যন্ত গোটানো। ছবিটার দিকে আমি হা করে তাকিয়ে আছি বড় সড় ক্রাশ খাওয়ার মতো এটা কি এই ইয়াদ যাকে আমি কিছুহ্মন আগে গুমরা লুকে দেখেছিলাম। ছবিটা আজ থেকে ঠিক তিন বছর আগের তোলা ছবির নিচে তারিখ দেওয়া আছে তাই বুঝতে কষ্ট হলো না। হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজে আমি ঘুরে তাকালাম,,,,,
চলবে……..

#মেঘের আড়ালে 💞
#পর্ব__০১
#লেখিকাঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা
[ভুলগুলো হ্মমার চোখে দেখবেন আসা করি। কেমন লাগলো অভস্য কমেন্ট জানাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here