মেঘে ঢাকা আকাশ পর্ব -০২+৩

#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_২
কলমে রোকেয়া পপি।

জলি সিঙ্গেল‌ রুমের এক হোটেলে বসে আছে। ওর কেমন যেন একটু ভয় ভয় করছে। আবার কান্নাও পাচ্ছে।
একটা মন বলছে কাজটা একদম ঠিক হয়নি। আরেকটা মন বলছে জলি তুই এখন একদম স্বাধীন। সজীব তোকে মাথায় করে রাখবে। চাওয়ার আগেই সবকিছু এনে তোর পায়ের কাছে হাজির করবে। তোর বড়োপার কড়া শাসনে আর চলতে হবে না। অভাব অনটনের মধ্যে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হবে না।

জলি রুমটার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। কেমন যেন একটু নোংরা আর ঘুপসি জাতীয় রুমটা। বিছানার চাদর টাও খুব একটা পরিস্কার না। স্যাতসেতে ভাব। ও জানে সজলের বাবার অনেক টাকা। সজীব চাইলে আরেকটু ভালো কোন হোটেলে ওকে তুলতে পারতো।

জলির এখন সত্যি সত্যি খুব কান্না পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে নিজের বাসায় চলে যেতে। কিন্তু সজীব বাইরে থেকে লক করে রেখে গেছে। যাওয়ার আগে বলে গেছে শাড়িটা পরে রেডি হয়ে থেকো। আজ আমাদের ফুলশয্যার রাত কথাটা মনে রেখো জলি। আজ তুমি সাজবে শুধু আমার জন্য।

সজীবের মুখে ফুলশয্যার রাত কথাটা শুনে তখন কেমন শিরশির একটা অনুভুতি হচ্ছিল। কিন্তু এখন আর কিছু ভালো লাগছে না। অনুভূতি শূন্য মনে হচ্ছে নিজেকে।

গতো কাল রাতে ফোনে সজীবকে বিয়ের কথা বলতেই ও এক বাক্যে রাজি হয়ে যায়। শুধু বলেছিল আসার সময় যদি পারো কিছু টাকা পয়সা নিয়ে এসো। আজ আমার হাত একদম খালি। বিয়ে করতে হলে তো টাকার দরকার তাই না জলি ?

জলি ভোর রাতে ওর মায়ের রুমে ঢুকে বালিশের নিচ থেকে চাবির গোছা আস্তে করে বের করে আলমারি খুলে হরলিক্সের বৌয়মটা বের করে আবার তালা দিয়ে চাবি মায়ের বালিশের নিচে রেখে চলে আসে। ও জানে ওর বড়োপা মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রতি মাসে এখানে কিছু করে টাকা রাখে। ভর্তির সময় এক সাথে অনেক গুলো টাকা দিতে যেন‌ কষ্ট হয়ে না যায় তাই।

জলি জানে না এখানে ঠিক কত টাকা আছে। কিন্তু মনে হয় বেশ ভালোই জমছে। পাঁচশ আর এক হাজার টাকার নোট অনেক গুলো।
কৌটা থেকে টাকা গুলো বের করে ওর হ্যান্ড ব্যাগে নিয়ে নিলো। কলেজ ব্যাগে যে কয়সেট থ্রিপিস ঢুকছে, আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে সকাল হবার অপেক্ষায় ছিল।

প্রতিদিনের মত কলেজে একটু কাজ আছে মা। দুপুরর আগেই চলে আসব বলে কলেজ যাবার নাম করে স্বাভাবিক ভাবেই বের হয়ে এসেছিলো ছোট্ট একটা চিরকুট লিখে। ও খুব ভালো করে জানে বিকেল বা সন্ধার আগে এই চিরকুট কারো হাতে পরবে না। মেজপা ভার্সিটি থেকে এসে খাওয়ার পর বিছানায় গড়াগড়ি করতে গিয়ে যদি চোখে‌ পড়ে। নিম্নবিত্ত হবার এই একটা সুবিধা। কেউ কারো খবর সেভাবে রাখে না।

রাস্তার মোড়েই সজীব বাইক নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। জলি আসা মাত্র টান দিয়ে চলে এসেছিল কাবাব ঘরে সকালের নাস্তা খেতে। ওরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন কফিতে চুমুক দিচ্ছে তখন সজীবের‌ দুই বন্ধু এসে হাজির। ওরা আজিমপুর কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরছে। দুপুরে ভালো রেস্টুরেন্টে খেয়েছে। বিকেলে আড়ং থেকে জলিকে একটা লাল টুকটুকে জামদানী শাড়ি ও কিনে দিছে।
ডায়মন্ডের নোজ পিন, মিনা করা চুড়ি ও টুকটাক সাজার জিনিস কেনাকাটা করে দিছে।

এতেই জলি খুশিতে গদগদ। কিন্তু বোকা মেয়েটা একবারের‌ জন্য ও টের পায়নি চতুর সজীব মাছের তেলেই মাছ ভাজতেছে।

দেখা হবার পরই জলির টাকা গুলো নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছে এই বলে যে, বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তোমার টাকা গুলো ফেরত দিয়ে দিব। এখন ধার হিসেবে নিলাম।

জলি কপট রাগ দেখিয়ে বলেছে ধার আবার কি?
তোমার টাকা যদি আমার হয়, আমার টাকাও তোমার টাকা। তুমি শুধু সবসময় আমার পাশে থেকো। ঠিক এভাবেই ভালোবেসো। আমার চাওয়া গুলো কে সন্মান দিও। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।

সারাদিন খুব ঘুরে বেড়ায় বাইরে খাওয়া দাওয়া করে রাতে এই হোটেলে এসে উঠেছে‌ ওরা। সজীব জলিকে আস্বস্ত করেছে, বাসর রাত টা হয়ে যাক। তারপর আগামীকাল তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব।

তোমার বাবা মা মেনে নিবে?

বাবা তো খুব রাগী। বাবা একটু ঝামেলা করতে পারে। কিন্তু মা মেনে নিবে। আমি আমার মায়ের একমাত্র ছেলে। আজ পর্যন্ত মায়ের কাছে চেয়ে কিছু পাইনি এমনটা হয়নি। আমার মা আমাকে খুব খুব ভালোবাসে। আমার মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা।
দেখো, মা তোমাকে ও খুব ভালোবাসবে।

সজীবের কথা শুনে আনন্দে জলির চোখে পানি চলে আসে। সে ঝাপসা চোখে বিছানায় এসে বসে।
সজীব শপিং ব্যাগ গুলো জলির হাতে দিয়ে বলে তুমি শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজে আমার জন্য অপেক্ষা করো। আজ কিন্তু আমাদের ফুল শয্যার রাত। আজ আমি মন ভরে তোমাকে দেখব। আমার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাব।

তুমি রেডি হও লক্ষী সোনা, আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।
ও হ্যা, বাইরে থেকে লক করে গেলাম। আবার ভয় পেও না যেন। কে না কে এসে নক করবে। তারচেয়ে লক করে রেখে যাই। কি বলো?

জলির পুরো শরীর শিরশির করছে সজীবের কথা শুনে। ও মুখে কিছু না বলে ঘার কাত করে সম্মতি জানালো। আচ্ছা ঠিক আছে।

শাড়িটা হাতে নিয়ে সেই কখন থেকে বসে আছে। কিন্তু এখন আর ইচ্ছে করছে না শাড়ি পরতে। এমন সুন্দর একটা শাড়ির ওর কতোদিনের শখ ।
অথচ আজ শখ পূরণ হয়েছে। কিন্তু ইচ্ছে গুলো যেন মরে গেছে। মা আর বোনদের কথা চিন্তা করে গলার কাছে কষ্ট গুলো কেমন দলা পাকিয়ে উঠছে।

মলি ভার্সিটি থেকে এসে মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো ওর মা একটা গল্পের বই পড়ছে। বাসাটা কেমন যেন শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে।

মা জলি কোথায়? দরোজা খোলা কেন?

ওর মা লায়লা বেগম চোখ না তুলেই বললো, ওর নাকি কলেজে কি কাজ আছে। সকালে বের হয়েছে। পড়ার মধ্যে যেন উঠতে না হয় তাই দরোজা খুলে রাখছি। এখন আমার সামনে থেকে বিদায় হ।

এখন তো বিকেল হতে চললো, এখনো আসেনি?

বললো তো দুপুরের আগেই চলে আসবে। গেছে হয়তো কোন বান্ধবীর সাথে আড্ডা দিতে। এ বাসায় কি আর কোন নিয়ম কানুন আছে। তোর বাপ মরার সময় সব নিয়ম কানুন সঙ্গে করে কবরে নিয়ে গেছে।

কি যে বলো না মা। তোমার মাথাটা একদম গেছে।
ঠিক আছে আমি খেয়ে নেই আগে। অনেক বেশি ক্ষুধা লাগছে। তারপর দেখি খোঁজ নিয়ে কোথায় গেল।
কি রান্না করেছো আজ মা?

খেতে বসলেই তো দেখতে পাবি কি রান্না করছি। এতো আজাইরা কথা বলিস কেন? দেখছিস না পড়ছি!

মলি একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে ওর রুমে চলে গেল। ও মনে মনে ভাবছে‌। মা টা দিন দিন কেমন অবুঝ শিশু হয়ে যাচ্ছে। বাসায় একজন শক্ত অভিভাবক থাকা যে কতোটা জরুরী। আপাটার যদি একটা ভালো বিয়ে হতো, ভাইয়া আমাদের সংসার টা আগলে ধরতো। তাহলে কতোই না ভালো হতো।

এতো এতো বিয়ের প্রস্তাব আসে। অথচ সবার এক কথা, চাকরি ছাড়তে হবে। কেউ কেউ আবার সরাসরি বলে বসে ভাই নেই, বাবাও নেই! বিয়ের পর ও কি এই সংসার টানবে নাকি মেয়ে?

মা আমতা আমতা করে। মা ও জোর খাটিয়ে আপাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা তো দূরের কথা, বিন্দু মাত্র চেষ্টা ও করে না। বিয়ের কথা উঠলেই মায়ের মুখটা কেমন শুকিয়ে যায়। মায়ের একটাই ভয়, বড়োপার বিয়ে হয়ে গেলে এ সংসার টা কিভাবে চলবে।

চিন্তাটা মোটেও অমুলক নয়। সত্যিই তো আপা ছাড়া এ সংসার তো ভেসে যাবে। আমি আর কয় টাকা ইনকাম করি টিউশনি করে। নিজের পড়ার খরচ চালাইতে হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর আবার শুদ্ধ কে মাঝে মধ্যে এটা সেটা গিফট করতে হয়। ভালোবাসতেও টাকা লাগে।

মলি এসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে ফিক করে হেসে দেয়। মনে মনে ভাবে আমরা কতটা স্বার্থপর। নিজে ঠিক প্রেম করছি। অথচ আপার বিয়ের কথা শুনেলেই আমরা ভয়ে অস্থির হয়ে যাই। আপাও হয়তো আমাদের মনোভাব বুঝতে পারে। আপা নিজে থেকেই না করে দেয়। বাসা পর্যন্ত কাউকে আসতেই দিতে চায় না। এসব দেখে মা ও স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে!

যাই খেয়ে নেই। ভার্সিটি থেকে ক্লাস শেষে দু দুটো টিউশনি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সেই বিকেল। পেটে ছুঁচোর দৌড় শুরু হয়েছে। আমার আর এতো ভাবাভাবি করে কাজ নেই।

মলি খেতে বসে দেখলো, ঠান্ডা কড়কড়ে ভাতের সাথে আলু ভর্তা আর ডাল ছাড়া কিছুই নেই। ওর একটু রাগ হলো। সারাদিন পর একটু আরাম করে খাবে, তাও একটা তরকারি থাকে না। অধিকাংশ দিন ডাল আর ভর্তা। মাঝে মধ্যে ছোট মাছের চচড়ি। এগুলো কোন খাবার হলো।

ও রাগ করে ফ্রিজ খুললো একটা ডিম ভেজে ভাত খাবে। কিন্তু ফ্রিজ ও খালি। একটা ডিম ও নেই।

মন খারাপ করে আলু ভর্তা ডাল দিয়ে খেয়ে উঠে বিছানায় একটু গড়ানি দিতেই মনে পড়লো জলির কথা।

ও লাফ দিয়ে উঠে বসে ভাবছে, গেল‌ কোই মেয়েটা! এমন তো কখনো করে না। আপার সাথে রাগ করে কি কোথাও গিয়ে বসে আছে নাকি।

টেবিল থেকে মোবাইটা নিতে গিয়ে দেখে পেপার ওয়েট দিয়ে ছোট একটি চিরকুট ভার দেওয়া।
চিরকুট টা হাতে নিয়েই ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।

দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে কান্না করে দিলো। মা দেখো তোমার মেয়ে কি করছে!

লায়লা বেগম বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে মলির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো।

বড়োপা আমাকে মাফ করে দিও। আমি সজীবের সাথে চলে গেলাম। আমাকে খোঁজাখুঁজি করার দরকার নেই। এতে শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে।

বি: দ্র: আমার ভর্তির জন্য যে টাকা জমাচ্ছিলে আমি তা নিয়ে গেলাম। টাকাটা তো একভাবে আমারি তাই না।

লায়লা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দিল। তার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তিনি এই কষ্ট তার মেয়ের সামনে প্রকাশ করতে চায় না।
তিনি কপট রাগ দেখিয়ে বললেন এতো কান্নাকাটির কি হলো! কাঁদতে হলে আমার চোখের সামনে থেকে দূরে গিয়ে কাদ।

মলি হতভম্ব ভাব কাটাতে পারছে না। তার মায়ের মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই জলিকে নিয়ে। অথচ মলি খুব ভালো করে জানে এ বাড়িতে সবচেয়ে বেশি আদরের মেয়ে হলো জলি।

ও নিজের রুমে এসে কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেললো।

পলি অফিস থেকে এসে দেখে মা গম্ভীর হয়ে বই পড়ছে। মনে হচ্ছে চোখ মুখ একটু ফোলা ফোলা ভাব। হয়তো দাঁতের ব্যাথার জন্য ফুলছে। এরমধ্যে মলি চিৎকার করে আপা আপা বলতে বলতে ছুটে আসলো। পলিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

পলি বিরক্ত হয়ে বললো, কি হয়েছে? তুই এমন ষাড়ের মতো চিৎকার করছিস কেন?

মলি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো, আপা এটা পড়ো?

কি এটা?

আপা জলি পালিয়ে গেছে সজীব নামের এক ছেলের সাথে।

পলি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বললো, ভালো হয়েছে। খুব ভালো হয়েছে। একটা খাওয়ার মুখ অন্তত কমলো।

চলবে….#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_৩
কলমে রোকেয়া পপি।

জলি ঘোলা আয়নার ড্রেসিং‌ টেবিলের‌ সামনে বসে আছে বধু সেজে। ইচ্ছে না থাকলেও সজীবের কথা চিন্তা করে শাড়িটা পরেছে। ম্যাচিং করে চুড়ি, টিপ আর গাড় করে কাজল দিয়েছে। কড়া লাল রঙের লিপস্টিক দেওয়ার পর নিজেই যেন নিজেকে চিনতে পারছে না। আর ডায়মন্ডের নোজ পিন পরার পর চেহারা কেমন যেন পাল্টে গেছে।

অস্পষ্ট কাঁচ, খুব পরিষ্কার করে নিজেকে দেখা না গেলেও ও খুব ভালো করে বুঝতে পারছে শাড়িটা ওকে খুব বেশি মানিয়েছে। চুল গুলো খোঁপা করতে গিয়ে ও পিঠের ওপর ছড়িয়ে দিলো। আর মনে মনে বললো, এই যে আমার স্বপ্নের‌ রাজকুমার আসার সময় আজকের দিনে একটা বেলি ফুলের মালা অন্তত নিয়ে এসো।‌ আমি সুন্দর করে খোঁপা করবো আর তুমি আমার খোঁপায় ভালোবেসে বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দিবে। তারপর আজ রাতে আমরা দুজন বেলকোনিতে বসে রাতের আকাশ দেখব আর সারারাত জেগে গল্প করবো।

আমি জানি আজ তুমি কিছুতেই আমার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না। আমি সারারাত ধরে বকবক করব, আর তুমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে আমার মুখপানে।

খুট করে দরোজা খোলার শব্দে জলি দ্রুত গিয়ে বিছানায় উঠে বসলো বড়ো একটা ঘোমটা দিয়ে। ঘোমটার ফাঁক দিয়েই ও বুঝতে পারছে সজীব ভেতরে ঢুকে সিটকিনি আটকাচ্ছে।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই সজীব এসে জলিকে জাপটে ধরলো। একের পর এক পোশাক টেনে খুলে ফেলছে। জলি এতোটাই আশ্চর্য হয়ে গেছে যে ভয়ে ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।

সজীবের মুখ থেকে ভকভক করে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। জলির মনে হচ্ছে ও এখনি বমি করে দিবে।
অনেক কষ্টে নাক চেপে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, তুমি মদ খেয়েছো সজীব? আজকের দিনে তুমি এমনটা করতে পারলে!

সজীব ওর মুখ চেপে ধরে নিজের পুরো শরীর ওর শরীরের ওপর উঠিয়ে নিয়ে বললো, একদম চুপ। একটা কথাও বলবি না এখন।

প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে চললো জলির কচি শরীরের‌ ওপর অমানুষিক অত্যাচার। তারপর একটা সময় নিজের শারীরিক চাহিদা পূরণ হওয়া মাত্র নিস্তেজ হয়ে জলির পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

জলি এখনো ভাবতে পারছে না, এটা কি ওর সাথে সত্যি সত্যি ঘটছে, নাকি স্বপ্ন!

খাট থেকে নামার সময় অনুভব করলো, পুরো শরীর ব্যাথায় নিস্তেজ হয়ে গেছে। পায়ের ধাপ ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে। সাদা পা দুটোতে‌ লাল টকটকে রক্ত শুকিয়ে কালছে কালার হয়ে গেছে।

ও আস্তে করে উঠে নিচ থেকে পেটিকোট তুলে নিয়ে নিজের শরীরে পেঁচিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে ঝর্না ছেড়ে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েলো। ঝর্নার পানি আর চোখের পানি মিলেমিশে একাকার।

পানির স্রোতধারার নিচে বসে বসে ভাবছে কতো স্বপ্ন নিয়ে তোমার হাত ধরে বের হয়ে এসেছিলাম আমি। অথচ এক রাতেই আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিলে সজীব! আমার ভাবতেও অবাক লাগছে তোমার জন্য আমি এতো যত্ন করে সাজলাম, আর সেই তুমি একটা বার তাকিয়ে ও দেখলে না আমাকে কেমন লাগছে! আমার শরীরটা নিয়ে কি বর্বর ভাবে মেতে উঠলে তুমি আদিম খেলায়। আমি তো পালিয়ে যাচ্ছিলাম না সজীব। আমি তো সারাজীবন তোমার সাথে থাকার জন্য তোমার হাতটা ধরেছিলাম। কেন করলে আমার সাথে এমনটা? কেন কেন?

তাহলে কি তুমি আমাকে নয়, আমার শরীরটার লোভেই আমাকে বিয়ে করেছো! আমার জীবনের বাকিটা পথ আমি তোমার হাত ধরে কিভাবে পাড়ি দিব সজীব? আমার তো ফিরে যাওয়ার সব পথ ও আমি নিজের হাতে বন্ধ করে দিয়েছি।
হে আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা করো। আমাকে তুমি সঠিক পথ দেখাও। আমার ধৈর্য শক্তি বাড়িয়ে দাও।
আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

জলি ঠিক কয় ঘন্টা ধরে পানির নিচে বসে আছে ও নিজেও জানে না। হঠাৎ করে ওর প্রচন্ড রকম শীত করতে লাগলো। ঠোঁট দুটো ঠকঠক করে কাঁপছে। ও আস্তে আস্তে উঠে কলটা বন্ধ করে টাওয়াল পেঁচিয়ে রুমে এসে লাগেজ খুলে একটা একটা কালো আর কমলার কম্বিনেশনের সুতি থ্রিপিস বের করে পড়লো।

সজীবের দিকে তাকিয়ে দেখলো কি আরাম করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। চেহারাটা কি নিস্পাপ লাগছে। অথচ একটু আগেও এই মানুষ টাকে মানুষ রুপি জানোয়ার মনে হচ্ছিল। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো ভোর চারটা বাজে। একটু পরেই ভোরের আলো ফুটবে। ও বিছানায় না গিয়ে বেলকোনিতে গিয়ে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আকাশের তারা গুলোর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।

সকালে সজীবের ঘুম ভাঙা মাত্র, চোখ না খুলেই ঘুম ঘুম চোখে সে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে জলিকে কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করতেই অনুভব করলো, বিছানা ফাঁকা। ও লাফ দিয়ে উঠে বসলো। প্রথমে ভাবলো, জলি হয়তো ওয়াশ রুমে। কিন্তু ওয়াশ রুমের দরোজা বাইরে থেকে লক করা। রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো দরোজাও ভেতর থেকে লক করা। ও তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নামতেই দেখখলো, বেলকোনির দরোজা ভেজানো।

ও আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে জলির পেছনে দাঁড়িয়ে নিচু হয়ে জলিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, কি হয়েছে আমার মিষ্টি বউ টার? ঘুম আসছে না? আসো আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দেই।

জলির পুরো শরীর ব্যাথা আর ঘৃনায় রি রি করে উঠলো। ও দাঁতে দাঁত চেপে আস্তে আস্তে ফিসফিস করে বললো, আমাকে আমার মত থাকতে দাও সজীব। তুমি গিয়ে ঘুমাও।

কি বলে আমার মিষ্টি বউটা! খুব অভিমান হয়েছে বুঝি?
জলিকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সজীব নিজেই অবাক হয়ে গেল ওর মুখের দিকে তাকিয়ে।
বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে জলির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার চেহারার? ঠোঁট কাটলো কিভাবে?

আমি কি রাতে তোমার সাথে খুব বেশি জোরাজুরি করেছি? তোমার পুরো শরীর এমন লাল লাল দাগ হয়ে গেছে কেন?

জলি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।

সজীব জলিকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো, সরি জলি। কাল বন্ধুরা জোর করে ধরে মদ খাইয়ে দিল। রাতে আমার কোন হুশ ছিল না। আমি আসলে কি করেছি কিছুই মনে নেই। আসো এখন তোমাকে সুন্দর করে একটু আদর করে দেই।

জলি আৎকে উঠে বললো, না না আমার আর আদর চাই না। খবরদার আমার শরীরে হাত দিবে না। আমার পুরো শরীর ব্যাথায় টনটন করছে। আমি একটু ঘুমাতে চাই।

আমি সুন্দর করে তোমার পুরো শরীর টিপে দিব। দেখবে আর ব্যাথা করবে না। আদর করা নিয়ে তোমার মধ্যে যে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে, তা আমি দূর করে দিতে চাই। প্লিজ জলি বাঁধা দিও না।

জলিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে সজীব আস্তে আস্তে ওর ঘাড়, পিঠ থেকে শুরু করে পুরো শরীর এমন ভাবে ম্যাসেজ করা শুরু করলো, যে আরামে জলির চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। একটু একটু করে সজীব ওর শরীরের দিকে আগাচ্ছে। খুব যত্ন করে পোশাক গুলো খুলছে।

জলি অনুভব করলো, এবারের আদরটা সত্যিই বেশ ভালো লাগছে। ও মনে মনে সজীব কে মাফ করে দিলো রাতের ঘটনার জন্য।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here