গল্প :মেঘ-বৃষ্টি পর্ব=৩
❤❤
রোদ-রোদেলা
লেখিকা: তানিয়া [আনিতা]
পরের দিন সকালে….
প্রতিদিনের মতো সব কাজ করে বৃষ্টি অফিসে গেল
কিন্তু আজ একটু আগে গেল কারণ আজ অফিসে খুব জরুরি কাজ আছে তাই। তাড়াতাড়ি করে গেল অফিসে গিয়ে নিজের ডেক্সে বসে ফাইল দেখছিল কিন্তু একটা ফাইল কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় সে শ্রাবনের ডেস্কে গেল কিন্তু গিয়ে দেখে শ্রাবন কোনো একটা প্রজেক্ট নিয়ে খুব বিজি তাও বৃষ্টি গিয়ে বলল,
—–শ্রাবন তুমি কি খুব বিজি?
—–কেন?
——না আসলে এই ফাইলটাতে একটু সমস্যা হয়েছে যদি বুঝিয়ে দিতে।
—-ও কিন্তু আমি তো এখন পারবো না আসলে তুমি তো জানো আজ দুপুরে আমাদের একটা প্রজেক্ট শো করতে হবে আর স্যার সেটার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে তাই একটু বিজি তুমি চাইলে স্যারকে দেখাতে পারো।
কথাটি শুনে বৃষ্টির মন খারাপ হয়ে গেল সে কোনো ভাবে মেঘের সামনে যেতে চাইছে না কিন্তু উপায় না দেখে যেতে হচ্ছে পেছন থেকে শ্রাবন বলে উঠল,
——সরি কিছু মনে করো না আসলে বুঝতেই তো পারছো ব্যাপারটা।
বৃষ্টি কিছু না বলে মুচকি হাসি দিয়ে মেঘের কেবিনে পা বাড়ালো দরজা নক দিয়ে ঢুকতে গিয়ে দেখে মেঘ টিনাকে কিছু একটা বুঝিয়ে দিচ্ছে কিন্তু দুজনে এতোটা কাছাকাছি ছিল দেখে বুঝাই যাচ্ছে না বস আর পিএ ওদের দেখে বৃষ্টি বেড়িয়ে যেতে গেল মেঘ বলে উঠে,
——কি হলো মিস বৃষ্টি কিছু বলবেন?
——আসলে ফাইল নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল তাই।
——ও… টিনা তুমি যাও আমি তোমাকে পরে ডেকে নিব।
টিনা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বেরোতে গেলে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে আসে
—–মিস বৃষ্টি বলুন কি সমস্যা?
তারপর দুজন বিপরীত ভাবে বসল বৃষ্টি সমস্যা গুলো বলছিল হঠাৎ খেয়াল করল মেঘ তার দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে আছে এতে সে খুব অসস্তিবোধ করল তাও কিছু না বলে সে তার সমস্যা বলতে লাগলো কিন্তু মেঘের কোনো পরিবর্তন না দেখে বিরক্ত হয়ে বৃষ্টি নিজেই একটু চেচিয়ে বলল,
—–স্যার????
তখন মেঘ বলে উঠল তুমও ঠিক আগের মতো আছ কোনো পরিবর্তন হওনি সে চোখ, সে রাগ, সে হাসি যা দেখে আমি বারবার তোমার প্রেমে পড়েছি।
মেঘের কথা শুনে বৃষ্টি অবাক না হয়ে পারল না এবার সে রেগে গিয়ে বলল,
——স্যার কি বলছেন আপনি জানেন আপনি কি বলছেন?
হঠাৎ মেঘের ধ্যান ফিরল আর বুঝতে পারল সে এতোক্ষণ ঘোরের মাঝে ছিল তাই তার মুখ থেকে কিসব কথা বেরিয়ে এসেছে সে কোনো ভাবে নিজেকে ঠিক করে বৃষ্টিকে সব বুঝিয়ে দিল।
বৃষ্টি সব বুঝে তার কেবিন থেকে বের হয়ে গেল আর মেঘ তার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল চেয়ার থেকে উঠে জানলার কাছে গিয়ে দাড়ালো আর মনে মনে বল্ল তুমি কি কখনো বুঝবে না আমার ভালো বাসা আর কতো পরীক্ষা নিবে।
কাজ থাকায় বাসায় যেতে দেরি হয়ে যায় বৃষ্টির বাসায় গিয়ে শাওয়ার নিয়ে যেইনা চুল বাধবে ওমনি বৃষ্টির ফোন বেজে উঠল ফোনের স্ক্রিনের নামটা দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে রিসিভ করল।
——কীরে এই সময়ে কল দিলে?
——কেন তুই ডিস্টার্ব হচ্ছিস?
——আরে না এমনি জিজ্ঞেস করলাম তো বল কিছু বলবি?
——হুম কিন্তু ফোনে নই কাল অফিস থেকে আসতে কি লেট হবে।
—–হুম একটু কেন?
——-কাল একটু তাড়াতাড়ি আসবি তোর সাথে আমার খুব দরকারি কথা আছে।
——বল না কি কথা?
——-বললাম না ফোনে বলতে পারব না।
——কিন্তু…..
কোনো কিন্তু না কাল তাড়াতাড়ি আসবি বেস
কথাটি বলার সাথে সাথে কল কেটে দিল রোদ বৃষ্টি বুঝতে পারল না কি এমন জরুরি কথা বৃষ্টি আর কিছু না ভেবে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল
সকালে অফিসে গিয়ে সব কাজ শেষ করল সনধ্যা হওয়ার আগে বৃষ্টি অফিস থেকে বের হলো কারন আজ বাসায় রোদ আসবে তাই।
বিষয়টি মেঘের নজর এড়ালো না সে বুঝতে পারল আজ বৃষ্টি আগেই অফিস থেকে বের হয়ে গেছে আর বৃষ্টিকে খুব চিন্তিত লাগছিল।
বাসায় গিয়ে নক দিতেই তার ভাই দরজা খুলে দিল কিন্তু বসার রুমে গিয়ে যা দেখল তা দেখে বৃষ্টি শকড
কারণ তার সামনে রোদ আর তার বাবা মা। সে তাদের কে সালাম জানিয়ে ফ্রেশ হতে গেল তারপর এসে বল্ল,
–
—–কেমন আছেন আপনারা?
রোদের বাবা মা ও বলল,
—–ভালো তুমি?
—–হুম ভালো।
তারা আরও কিছু কথা বলার পর বৃষ্টি রোদকে বলল
এবার বল তোর জরুরি কথা।
ঠিক তখনি রোদের মা বলে উঠল আসলে আমরা এসেছি তোমার আর রোদের এনগেজমেন্ট করাতে তুমি তো জানো রোদ তোমাকে কতোটা ভালোবাসে আর তাই আমরা তোমাদের বিয়ে ঠিক করতে আসছি
কথাটি শোনার সাথে সাথে বৃষ্টি কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেল তারপর রোদের মাকে বলল আন্টি আমি রোদের সাথে কথা বলতে চাই তাদের অনুমতি পেয়ে রোদ আর বৃষ্টি পাশের রুমে গেল।
——-এই কাজটা কি তুই ঠিক করলি তোকে তো আমি আগেই বলছি আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না কারণটা তুই ভালো করে জানিস তাহলে কেন এমন করছিস।
—–তুই শুধু তোরটাই দেখলি আমি যে তোকে এতো ভালোবাসি সেটা তুই বুঝিস না।
—— হুম কিন্তু কি করবো বাবার মৃত্যুর পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে আমার বিয়ে হলে আমার পরিবারকে কে দেখবে তাই আমি বিয়ে করতে চাই না।
——-কেন তোর পরিবার কি আমার পরিবার নয় বিয়ের পর আমিও দেখবো তোর পরিবারকে।
——না এটা হয় না আমও কারো কাছে নিজের পরিবারকে ছোট করতে পারবো না আর তাছাড়া আন্টি আংকেল কি ভাববেন।
কিছু ভাববো না মনে করবো আমার মেয়ের জন্য আমরা কিছু করতে পেরেছি।
কথাটি বলতে বলতে রুমে রোদের বাবা মা আর বৃষ্টি মা ঢুকল,
——আমাদের কি তুই এতোটা পর মনে করিস কথাটা বৃষ্টি র মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে, বলল রোদের মা
——আসলে তা না আন্টি আমি বলছিলাম শুধু শুধু আপনারা কেন বারতি জামেলা করবেন।
—–এই কেমন কথা আমার বোনের পাশে দাঁড়াবো এটা বারতি হবে কেন বরং এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় তুমি আর অমত করো না।
কথাটি শুনে বৃষ্টি তার মায়ের দিকে তাকালো তার মা চোখ দিয়ে ইশারা করল রাজি হয়ে যেতে তাই বৃষ্টি আর অমত করল না সেদিন দুই পরিবারের সম্মতিতে বৃষ্টি আর রোদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেল আর তার এক সপ্তাহ পর বিয়ের দিন ঠিক করল।রাতের খাবার খেয়ে কিছুটা সময় পেরিয়ে রোদের বাবা মা সহ রোদ চলে গেল আর বৃষ্টি সব গুছিয়ে ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়ল।
যথারীতি সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বৃষ্টি বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়ায় আজ আকাশ মেঘলা থাকায় বৃষ্টি বুঝতে পারল বৃষ্টি হবে কিছু ভাবার আগেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পরতে আরম্ভ করল বৃষ্টি তখনও দাড়িয়ে ছিল আচমকা একটা গাড়ি এসে বৃষ্টির সামনে গেল আর ওখানে থাকা ময়লা পানি গুলো বৃষ্টির গায়ে পরল বেস তাতেই বৃষ্টির পুরো শরীরে কাদা ছিটিয়ে গেল কি আর করবে এ কাপড়ে তো অফিসে যাওয়া সম্ভব না তাই বৃষ্টি বাসায় গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে বাস স্টপে আসল কিন্তু ততক্ষণে বাস চলে গেল কোত্থেকে একটা বাইক এসে সোজা তার সামনে দাড়ালো হেলমেট খুলতে দেখল আর কেউ নয় শ্রাবন,
—–কি হলো বৃষ্টি তুমি এখানো অফিসে যাওনি?
বৃষ্টি শ্রাবনকে সব খুলে বলল শ্রাবন বলল
—–ঠিক আছে বাইকে উঠ
একদিকে ঝুম বৃষ্টি অন্যদিকে অফিসের অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি আর না করল না এদিকে মেঘ অফিসে গিয়ে দেখে বৃষ্টি এখনো আসে নি সে চিন্তা করতে লাগলো তাহলে কি কিছু হয়েছে সাথে সাথে সে হাসির শব্দ পেয়ে যেইনা দরজার দিকে তাকালো দেখলো বৃষ্টি শ্রাবনের সাথে হেসে হেসে অফিসে ঢুকছে দুজনকে একসাথে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল মেঘের সাথে সাথে সে বৃষ্টিকে ডেকে পাঠালো মেঘের ডাকে বৃষ্টি মেঘের কেবিনে গেল,
—–আসব স্যার?
—–হুম কয়টা বাজে?
—–ইয়ে মানে স্যার আজকে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে কারণ আসার সময় একটা গাড়ি আমার ড্রেস নষ্ট করে দেয় তাই……
——ও শাট আপ আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না এটা অফিস কোনো রেস্টুরেন্ট নয় যে নিজের মন মতো আসবেন আর যাবেন আর কি নিশ্চয়তা আছে যে আমাকে সত্যি কথা বলছেন হয়তো এমন একটা ওয়েদারে নিজের বিএফ এর সাথে রাস্তায় রোমেন্স করছেন আপনাদের মতো মিডেল পরিবার এসব আবার খুব ভালো পারে।
মেঘের কথা শুনে বৃষ্টি এবার নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না তাই জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,
——-ইনাফ ইজ ইনাফ আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলার কে দিয়েছে এ রাইট সবাইকে কি নিজের মতো চরিত্র হীন ভাবেন এমন অসভ্য কথা আপনি ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না কারন আপনি একজন জঘন্য মানুষ যাকে আমি কখনো সহ্য করতে পারতাম না কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আপনার এখানে জব হওয়ায় কিছুই করতে পারছিনা।
কথা গুলো বলতে কান্না করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল মেঘ তখনও টায় দাঁড়িয়ে ছিল।
আর কিছু না ভেবে বৃষ্টি বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে বাসায় পৌঁছে যায় বৃষ্টির এই অবস্থা দেখে ওর মা জিজ্ঞেস, করল,
——কিরে আজ তাড়াতাড়ি চলে এলি যে অফিসের কাজ শেষ?
——না মা বৃষ্টিতে ভিজে একটু অসুস্থ লাগছিল তাই চলে আসলাম।
——ও তুই যা আমি খাবার দিচ্ছি।
——-না মা তুমি খেয়ে নাও আমি পরে খাব।
কথাটা বলে বৃষ্টি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ইজি চেয়ারে বসল মনে মনে বল্ল,
——-এই আমায় কোন পরীক্ষায় ফেললে আমি আর পারছিনা পুরোনো ক্ষত আবার কেনো জ্বালিয়ে তুললে আল্লাহ আমি একটু শান্তি চাই ওই মেঘ আহমেদ থেকে মুক্তি চাই
কথাটি বলতে লাগলো আর চোখের জল ফেলতে লাগলো।
পরের দিন সকালে…………
চলবে…….