মেঘ-বৃষ্টি ❤❤পর্ব=৪

# মেঘ-বৃষ্টি
❤❤পর্ব=৪
রোদ-রোদেলা

লেখিকা:তানিয়া [আনিতা]

পরের দিন সকালে…….

বৃষ্টি অফিসে যাওয়ার জন্য উঠতে গিয়ে ও পারল না তার সমস্ত শরীর ব্যাথা করছে, মাথাটা ঝিমঝিম করছে, শরীর জ্বর অনুভব করছে, বুঝতে পারল গতকাল বৃষ্টিতে ভেজার কারণে তার এ অবস্থা, তবুও নিজেকে ফ্রেশ করে রেডি হতে গেলে তার মা রুমে ঢুকে আর বৃষ্টিকে দেখে বলে,

—–আরে কি করছিস এ শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?

——অফিসে

——-মানে পাগল হয়ে গেছিস? এ শরীর নিয়ে তুই অফিসে যাবি আর আমি তোকে যেতে দিব তুই ভাবলি কি করে?

——-মা অফিসে অনেক কাজ না গেলে সমস্যা হবে।

——-আমি তো তোকে যেতে মানা করছি না কিন্তু সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তুই অফিসে যাবি না।

তারপর অনেক জোরাজোরি করে বৃষ্টিকে আটকালো তার মা। এরপর নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে তাকে রেস্ট নিতে বলল। সারাদিন টুকটাক কাজ করে সময় পার করল। তারপর ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে বৃষ্টি বুঝতে পারল তার মাথায় কারো স্পর্শ তাই ঘুম ঘুম চোখে বৃষ্টি চোখ খুলে দেখল তার সামনে রোদ বসে আছে আর তার মাথায় বিলি কাটছে সে শোয়া থেকে উঠতে গেল কিন্তু পারল না কোনোভাবে বালিশে হেলান দিয়ে বলল,

——তুই কখন এলি?

——অনেক্ক্ষণ আগে এসে দেখি তুই ঘুম তাই আর ডাকলাম না।

——-তুই জানিস আমার এখন কি করতে ইচ্ছে করছে

বৃষ্টি মুচকি হাসি দিয়ে

—–কি?

———তোকে টাটিয়ে একটা চর দিতে। তোর অসুখ আর তুই আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না।

——তেমন কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।

——-কি তেমন কিছু না কে বলেছে তোকে সেই কলেজ থেকে দেখছি বৃষ্টিতে ভিজলে তুই অসুস্থ হয়ে যাস আর তুই বলছিস তেমন কিছু না।

——তুই জানলি কীভাবে আমি অসুস্থ?

——-তোকে অনেক বার কল করার পর যখন তুই ধরছিলি না তখন আন্টিকে কল দি উনি বলেন তুই তো আন্টি কেও বলতে মানা করছস।

——-হুম আমি জানতাম তোকে বললে তুই চিন্তা করবি তাই।

——–হয়েছে আর বলতে হবে না এবার ভালো মেয়ের মতো দুধ খেয়ে শুয়ে পর আমি চাই না তোর কারণে বিয়েটা পিছিয়ে যাক।

কথাটি শোনার সাথে সাথে বৃষ্টি হাসতে লাগলো তারপর আরও কিছুক্ষন কথা বলে রোদ চলে গেল.।

আজ দুদিন হলো বৃষ্টি অফিসে যায়নি ওদিকে মেঘ খুব চিন্তা করছে যদি বৃষ্টি রাগ করে জব ছেড়ে দেয় কারন বৃষ্টির রাগ সম্পর্কে মেঘের ধারণা আছে ও রেগে গেলে……

আর ভাবতে পারছে না তাই মেঘ তৃনার সাথে দেখা করতে গেল, যদি কোনো কিছু জানতে পারে

—–তৃনা

—–জ্বি স্যার

—–আচ্ছা বৃষ্টি আসছে কেন তুমি জানো

——না স্যার আমিও চিন্তা করছি ওতো কখনো অফিস কামায় করে না।

——ওর নাম্বার হবে তোমার কাছে

——না স্যার আসলে নিব নিব করে আর নেওয়া হয়নি

——ওকে যদি আসে তবে আমার সাথে দেখা করতে বলবে

—–ঠিক আছে

মেঘ নিজের কেবিনে গিয়ে টেবিলে জোরে একটা আঘাত করল আর বলতে লাগলো কেন যে সেদিন সে বৃষ্টিকে ওসব কথা বলতে গেল তারপর কান্না করতে লাগলো।

৩ দিন পর বৃষ্টি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো রুমে এসে তার মা বলল,

—–এখন না গেলে হতো না

——না মা এমনি অনেক কাজ জমা পড়ে গেছে এখন না গেলে সমস্যা হবে আর তাছাড়া সামনের সপ্তাহে তো এমনি ছুটি নিতে হবে বুঝতেই তো পারছো তাই যাওয়াটা খুব জরুরি।

—–আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস

অফিসে যাওয়ার সাথে সাথে তৃনা বৃষ্টিকে দেখে জরিয়ে ধরল।

—–এতোদিন কোথায় ছিলি জানিস তোকে কত মিস করছি।

—–আমিও তোদের মিস করছি

——ও আচ্ছা স্যার বলেছে তুই আসলে দেখা করতে

——কেন

——জানি না উনি তোর কথা অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে

—–ওকে তুই যা

কথাটি বলে বৃষ্টি মেঘের কেবিনে পা বাড়ালো আর তার মধ্যে একপ্রকার ভয় কাজ করছে কারন সেদিন বৃষ্টি মেঘকে অনেক কড়া কথা বলছিল। দরজায় নক করতে

—–আসব

——হুম

বৃষ্টিকে দেখে মেঘের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল

——তো মিস বৃষ্টি আজ তাহলে আসলেন। এতোদিন আসেননি কেন?

——আসলে সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে আমি অসুস্থ হয়ে পরি তাই মা আর আসতে দেয় নি

——ও আচ্ছা যান গিয়ে কাজে মনোযোগ দিন

কেবিন থেকে বের হয়ে বৃষ্টি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কারণ বৃষ্টি ভেবেছিল মেঘ হয়তো তাকে শাস্তি দিবে।

এসব ভাবতে ভাবতে বৃষ্টি নিজের ডেক্সে গিয়ে এতোদিনের জমানো কাজ করতে লাগলো। লাঞ্চের সময় হওয়ায় বৃষ্টি আর তৃণা কেন্টিনে গেল। সেখানে গিয়ে শ্রাবনের সাথে দেখা হয়। তারপর ৩ জন মিলে একসাথে লাঞ্চ করে, সময় থাকায় আড্ডা দেয়।

——তো বৃষ্টি এতোদিন আসোনি কেন তোমাকে কত মিস করছি।

—–ও আসলে অসুস্থ ছিলাম তাই

এরপর অনেক কথা বলে তৃনার একটা অভ্যাস হলো যখন ও কারো কথাই রেগে যায় তখন চিমটি কাটে শ্রাবন মজা করে কথা বলছে তাতে রেগে গিয়ে ওকে একটা চিমটি কাটে আর শ্রাবন বলে উঠে,

——এই মেয়ে চিমটি দিলে কেন

——তুমি আমায় নিয়ে মজা করলে কেন কেউ আমায় নিয়ে মজা করলে আমি চিমটি দেয়।

——ও নো তুমি তো খুব মারাত্মক এমন করলে তোমার কপালে বর জুটবে না

——কি তুমি এটা বলতে পারলে আমি অভিশাপ দিলাম তোমার কপালে দজ্জাল বউ জুটবে

——-শকুনের অভিশাপে গরু মরে না আমি বিয়ে করলে বৃষ্টির মতো একটা শান্ত মেয়েকে করব

——-হবে না কারন বৃষ্টির মতো মেয়ে ওই একপিস আছে কি বলিস বৃষ্টি

বৃষ্টি ওদের কান্ড দেখে হসছে ঠিক তখনি শ্রাবন বলো উঠল,

——তাহলে বৃষ্টিকে বিয়ে করে ফেলব কি বলো বৃষ্টি

কথাটা শুনে বৃষ্টির হাসি মুখ মলিন হয়ে গেল বলল

——না কারন……..

কথাটি বলে বৃষ্টি থেমে গেল শ্রাবন বলল

——কি কারণ

বৃষ্টি বলল ও কিছু না এবার বলো তোমরা কি খাবো আজ আমি তোমাদের ট্রিট দিব

তৃনা :কেন

বৃষ্টি: এমনি কারণ টা পরে জানতে পারবি

লাঞ্চের সময় শেষ হওয়ায় সবাই যার যার কাজে চলে গেল ওদের কথাগুলো এতোক্ষণ মেঘ বাহির থেকে শুনছিল একটা কাজ থাকায় মেঘ কেন্টিনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু শ্রাবনের কথা শুনে আটকে যায় তারপর ওদের কথা শুনে বুঝতে পারে বৃষ্টি কিছু একটা গোপন করছে কিন্তু কি সেটা?

কেবিনে গিয়ে মেঘ একটা কল করে

——-হুম যা যা বলছি সব করেছ এই কয়দিনে ওদের বাসায় কারা যাওয়া আসা করছে আর কি কি হয়েছে সব তথ্য আমার চাই খুব তাড়াতাড়ি কোনো কিছু যাতে বাদ না পরে got it

——Yes sir

তারপর ফোনটা রেখে একটা বাকা হাসি দেয়

সন্ধ্যার দিকে…………..

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here