মোনালিসা পর্ব ৩

মোনালিসা
লেখা-ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৩
আকাশটা আজ রৌদ্রজ্জ্বল। সকালের রোদ’টা আজ অসম্ভব রকমের মিষ্টি। বেলা যত গড়ায় রোদ তত তিক্ত হয়। মোনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বার বার সূর্যের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে।‌ কিন্তু একটু তাকাতেই চোখ ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে। এই অভ্যাসটা মোনার ছোট বেলা থেকে। মোনার মা সব সময় বলত,’এভাবে সূর্যের দিকে তাকালে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে।’ মায়ের বলা এমন অনেক কথা মনে পড়ে মোনার। নিশান এখনো ঘুমাচ্ছে। মোনার রাতে ঘুম হয়নি। নতুন জায়গা এজন্য বোধ হয়।
মোনা কে একটা বিষয় খুব উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ।মোনার খালু হাবিব সাহেব সাথে একটা কথাও বলল না। খাবার টেবিলে এক সাথে খেয়েছে অথচ কোন কথা বলেনি।হয়ত ওঁরা এখানে আসাতে প্রচণ্ড বিরক্ত।
নাস্তার টেবিল থেকে ডাক আসলো। মোনা রুমে গিয়ে নিশান কে ডাকলো। নিশান বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মোনা নিশানের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। মোনা আঁতকে উঠে। মা-বাবা বেঁচে থাকতে নিশান কে নিয়ে এত ভাবতে হত না।লিলি বেগম ডেকেই যাচ্ছে। মোনা’কে না দেখে ওঁদের রুমের দরজার কাছে এসে একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“কতক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছি,কোন সাড়া নেই কেন?”
মোনা খানিকটা চিন্তিত মুখে তাকায় লিলি বেগমের দিকে। অস্থির গলায় বলল,
-“নিশানের গায়ে জ্বর এসেছে।”
নিশানের জ্বরের কথা শুনে লিলি বেগম ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
লিলি নিশানের মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলো। মোনা পাশে বসে আছে চিন্তিত মুখে। মোনার দিকে তাকিয়ে লিলি বেগম আশ্বস্ত গলায় বলল,
-“আরে বোকা মেয়ে মন খারাপ করছ কেন? ওষুধ খাওয়ালেই সেরে উঠবে নিশান।”
মোনা কোন জবাব দিলো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিরাশ হয়ে বলল,
-“আমরা এখানে আসাতে খালু বিরক্ত হয়েছে তাইনা?”
মোনার কথার জবাব দেওয়ার আগেই নাস্তার টেবিল থেকে লিলি লিলি বলে ডাকতে লাগল রাগান্বিত গলায়। লিলি দ্রুত সেখানে গিয়ে চাপা গলায় বলল,
-“হাবিব প্রবলেম কি তোমার?আরে ছেলেটার গায়ে জ্বর , আমি জলপট্টি দিচ্ছি। তুমি এমন ভাবে ডাকছো মনে হয়েছে এখানে খুনখারাবি কিছু একটা হয়ে গেছে।”
হাবিব সাহেবের রাগ যেন আরো বেড়ে গেলো। গলা খাঁকারি দিয়ে, বাজখাঁই গলায় বলল,
-আমি অফিসে যাবো, দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর তুমি…”
হাবিব সাহেব এই টুকু বলে বিড়বিড় করতে লাগলো, স্পষ্ট বুঝা গেলো না। লিলির রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
-“আস্তে কথা বলো! ওঁরা রুমে, এসব শুনলে কি মনে করবে? ওঁরা আসছে পর্যন্ত একটু কথা বলেছো?আমার আত্মীয়-স্বজন দেখলে তোমার শরীর জ্বলে যায়?”
হাবিব সাহেব তীব্র বিরক্ত নিয়ে উফ বলে চোখ বন্ধ করে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-“জাস্ট শ্যাট আপ এন্ড গো আউট।”
হাবিব সাহেবের এরূপ আচরণেও যেন লিলি বেগমের মুখের অভিব্যক্তির পরিবর্তন হলো না। যেন অভ্যস্ত এসবে।লিলি বেগম রুমে গিয়ে মোনা আর নিশান কে নিয়ে নাস্তার টেবিলে আসে। নিশানকে জ্বরে অস্থির দেখাচ্ছে। লিলি বেগম নিশানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। হাবিব সাহেব নাকমুখ কুঁচকে নিদারুণ বিরক্তি নিয়ে খাবার মুখে দিচ্ছে। লিলি হাবিব সাহেবের দিকে তাকাচ্ছে না।
মোনা লিলিকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
-“খালা প্রিয়ম ভাই, এরিক উনারা কোথায়?”
হাবিব সাহেব গর্জে উঠলো। যেন এতক্ষনের জমানো রাগ ঝাড়ার একটা মোক্ষম সুযোগ পেলো। রোষারক্ত লোচনে মোনার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“এই মেয়ে ওঁদের দিয়ে তোমার কি দরকার? আমার ছেলেদের সাথে যদি কখনো কথা বলতে দেখি এই বাসা থেকে বের করে দিতে দুই বার ভাববো। নিজের গন্ডির মধ্যে থাকবে।”
মোনা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো হাবিব সাহেবের দিকে। যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। কি বলবে ঠিক বুঝে উঠে পারলো না। হাবিব সাহেবের এমন আচরণের বিপরীতে কি করা উচিত মোনার তা এই মূহুর্তে জানা নেই। হাবিব সাহেব নাস্তার প্লেটে পানি দিয়ে উঠে গেলো। হাবিব সাহেবের এমন আচরণে লিলি বেগম লজ্জিত হলো। নিজের বোনের ছেলে-মেয়েদের সাথে এমন আচরণ লিলি বেগমের মনে সূক্ষ্ম ব্যাথার জন্ম দিলো। লিলি বেগম এসব ওঁদের বুঝতে না দিয়ে হাবিব সাহেবের পিছনে পিছনে রুমে গেলো। রুমের দরজা শব্দ করে বন্ধ করে ক্ষুব্ধ গলায় বলল,
-“কি বললে তুমি মোনা কে এগুলো?”
লিলি বেগম একটু থামে। রাগে যেন মাথার রগ দপদপ করছে। লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে ক্রোধপূর্ণ গলায় বলল,
-“কথা বলছ না কেন? কি প্রবলেম? ওঁরা এ বাড়িতে আসাতে তোমার প্রবলেম’টা হয়েছে কি? আর তোমার ছেলেদের সাথে কথা বললে কি পাপ হয়ে যাবে?”
-“লিলি চুপ করো। অযথা চেঁচামেচি করো না। ওঁরা বাংলাদেশী ন্যারো মাইন্ডেড মেয়ে। আমার সন্তান দের সাথে কথা বলার কি যোগ্যতা আছে?”
-“আমি অযথা চেঁচামেচি করি না? আমার সামনে বসে আমার বোনের ছেলে-মেয়েদের যা ইচ্ছে তা বলবে আর আমি চুপ থাকবো? আর বাংলাদেশি ছেলে-মেয়ে ন্যারো মাইন্ডেড? তুমি কোন দেশি? আমেরিকা স্যাটেল হয়ে নিজের শিকড় ভুলে গেছো?”
হাবিব সাহেব গলায় টাই বাঁধতে বাঁধতে বলল,
-“ওঁদের জন্য আমার সন্তানরা নষ্ট হয়ে যাবে।”
লিলি বেগম তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভরা গলায় বলল,
-“সিরিয়ারলি? তোমার সন্তানরা নষ্ট হয়ে যাবে?তোমার সন্তানরা নাইট ক্লাবে যায় প্রতি রাতে, মদের আড্ডায় ডুবে থাকে, মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করে। তাঁরা নতুন করে কিভাবে নষ্ট হবে? মাঝে মাঝে তোমার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই আমি!
তোমার জন্য ছেলে দুইটা কে ভালো বানাতে পেরেছি?
আমেরিকান কালচারে তুমি এত বেশি শ্রদ্ধা করো, এত বেশি বিশ্বাস করো যে তুমি তোমার ছেলেদের নাইট ক্লাবে যাওয়া শিখিয়েছো আরও কত কি!”
লিলি বেগমের কথা শেষ হতে না হতেই হাবিব সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে যায়।লিলি বেগম খাটে বসে বার বার হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি মুছছে। এই সংসারে লিলির সিদ্ধান্তের যেন কোন মূল্য নেই। ছেলে দুইটা কে আমেরিকান কালচারে বড় করতে গিয়ে যে নষ্ট করে ফেলেছে, এই বোধ টুকু কি হাবিবের কখনো হবে না?
___
হাবিব সাহেবের মুখে ওসব কথা শুনে মোনার আর গলা দিয়ে খাবার নামলো না। মোনা হতবাক হয়ে রইল কিছুক্ষণ। নিদারুণ এক অপমানে মোনা দগ্ধ হচ্ছে।মোনা নিশান কে খাইয়ে টেবিল থেকে উঠে রুমে চলে গেলো। লিলি নিজেকে সামলে রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখলো ওঁরা টেবিলে নেই। লিলি বেগম ওঁদের রুমে গিয়ে দেখে নিশান শুয়ে আছে আর মোনা জানালায় গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
লিলি বেগম পিছন থেকে মোনাকে ডাকলো। মোনা নিজের মুখের বিষন্নতা, বিমর্ষতা দূরের চেষ্টা করল। লিলি বেগমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে স্বভাবিক গলায় বলল,
-“খালা!”
মোনা মনে মনে চায় লিলি যেন টেবিলে বসে হাবিব সাহেবের বলা ওসব কথা নিয়ে এখন কিছু না বলে। ওসব কথায় খুব অস্বস্তি লাগবে মোনার। লিলি উদগ্রীব হয়ে বলল,
-“খেয়েছিস তো?”
-“হ্যাঁ খেয়েছি।”
লিলি বেগম কাতর গলায় বলল,
-“মোনা,কিছু মনে করিস না। এ সংসারে আমি নিরুপায়।”
এ কথা বলতে বলতে লিলি বেগমের কোঠরগত চোখ দুটো আর্দ্র হয়ে যায়। মোনা লিলি বেগমের একটা হাত ধরে ব্যথিত গলায় বলল,
-“আমি কিছু মনে করিনি।বরংচ আমরা’ই তোমায় বিপদে ফেললাম।”
হাবিব সাহেবের উপর রাগে লিলি বেগমের চোখ প্রচণ্ড ক্রোধে ছলছল করে উঠছে বার বার।লিলি বেগম মোনার পাশে বসে। তারপর কিছুক্ষণ কেউই কিছু বলল না। প্রগাঢ় নিস্তব্ধতা বিরাজ করল।কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর লিলি বলে,
-“তোর বাবা কি ফোন দিয়েছিলো একবারও?”
লিলির প্রশ্নে মোনা চমকে যায়। চোখ-মুখের অবস্থা মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে যায়, সঙ্গিন হয়ে যায়। কোন উত্তর করেনা।মোনা কে নিরুত্তর দেখে লিলি আবার জিজ্ঞেস করে,
-“কি হলো?”
মোনা থমথমে মুখে বললো,
-“আমরা আমেরিকা আসার আগের দিন বাবা খুন হয়েছে।”
লিলি যেন বড়সড় রকমের একটা ধাক্কা খায়। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলল,
-“কি-কি বললি?”
-“বাবা খুন হয় আমেরিকা আসার আগের দিন।”
লিলি মোনার গায়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,
-“এই কি বলছিস তুই? তোর বাবা খুন হয়েছে!”
লিলি কথাটা হজম করতে পারছে না। যথারীতি ঘেমে যায়। ইমরুল চৌধুরীর মৃত্যু’তে ‌শোক পেয়েছে এমন’টাও না। তবুও খুন হওয়ার কথা শুনে, মানুষের স্বভাবগত অভ্যাগ অনুযায়ী চমকায়। চোখ গুলো রক্তশূন্য প্রচণ্ড আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে বলল,
-” তোরা আমেরিকা আসার আগের দিন তোর বাবা খুন হয়? আমায় তো বলিস নি।আর কথাগুলো তুই এত স্বাভাবিক গলায় বলছিস!”
মোনা নড়েচড়ে বসল। প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো লিলি বেগমের দিকে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আক্ষেপ করে বলল,
-“খালা তুমি ভালো করেই জানো বাবার মৃত্যুতে শোক পাওয়ার মত সম্পর্ক বাবার সাথে আমাদের ছিলো না। স্বাভাবিক গলায় বলবো না তো শোক আহত গলায় বলবো?”
লিলি বেগম বিহ্বল হয়ে অস্ফুট ভাবে বলল,
-“তাই তো।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তীক্ষ্ণ আর্তনাদের স্বরে বলল,
-“তোর মায়ের মৃত্যু হয় আমরা কেউ জানি না! আমাদের জানাস নি! জানিস মোনা তোর মা ছিলো আমাদের পরিবারের সব চেয়ে আদরের সন্তান।”
মোনা চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে। চোয়াল শক্ত করে বলে,
-“মায়ের মৃত্যুর কথা জানালে তুমি হয়ত যেতে। আর কেউ কি যেত? তোমার বাবা-মা, ভাইবোন কেউ কি যেত? আচ্ছা বলো তো মা এমন কি ভুল করেছিল যার জন্য এত ঘৃন্য ছিলো সবার মায়ের প্রতি? প্রেম করে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছে তাই?”
লিলি বেগম কষ্টে নির্বাক হয়ে বসে রইলো। মোনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-“যে মানুষটার জন্য নিজের পরিবার হারালো ,সে মানুষটাও তো মা’কে ভালোবাসি নি। আচ্ছা খালা বলো তো মা-বাবা তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিল, তাঁদের সেই ভালোবাসাটা বদলে গেল কেন? ভালোবাসাও সময়ের স্রোতে এত বাজে ভাবে বদলায়!”
মোনা এই টুকু বলে অস্ফুট স্বরে বিড়বিড় বলল,
-“ভালোবাসা এতটাই বদলিয়েছে যে মা’কে ই মেরে ফেলল!”
লিলি বেগমের যেন নতুন করে বোন হারানোর শোক হানা দিয়েছে। মোনার মায়ের নাম ছিলো লিপি, আর খালার নাম লিলি। দুইজনের নামেও মিল আছে। মোনার নাকি আরো একটা খালা আছে নাম নিপা, মোনা তাঁকে কখনো দেখিনি। তাঁদের সাথে কোন যোগাযোগও নেই। শুধু লিলির সাথেই মোনার মায়ের যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু মায়ের অমন অস্বাভাবিক, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পর কাউকে জানানোর মত অনুভূতি ছিলো না মোনার। লিলি বেগম নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। শুধু বোন হারানো না হয়ত নিজের সংসারের পরিস্থিতি, মূল্যহীনতা এসব মিলে নতুন এক শোকের জন্ম দিয়েছে।
____
মোনা খুব একাকিত্ব ভুগছে। বাজে রকমের একাকিত্ব। খালার সাথে টুকটাক কথাবার্তা এছাড়া সারাক্ষন রুমে থাকে। মোনার ইউনিভার্সিটি ক্লাস শুরু হবে আরো কিছুদিন পর। মোনা শুনেছে এখানে পার্টটাইম জব করে নাকি লেখাপড়া করা যায়। এভাবে কারো বাসায় বিরক্তির কারণ হয়ে না থেকে , অন্য কোন চিন্তা ভাবনা করা ভালো।
মোনা তো হোস্টেলে থাকতে পারত কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নিশান কোথায় থাকবে? নিশান কে মোনা নিজের কাছ থেকে কোন ভাবেই দূরে রাখবে না। নিশান বোবা বলে ছোট বেলা থেকে সবার কাছ থেকেই অবজ্ঞা পেয়ে আসছে। মোনা যে করেই হোক নিশান কে ওর কাছেই আগলে রাখবে।
নিশানের গায়ের জ্বর কমেছে একটু। রাত প্রায় ১টা বাজে। মোনার চোখে ঘুম নেই। এপাশ-ওপাশ করছে শুধু। একটা অপরাধ বোধ ওকে ভীষণ ভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মোনা নিজের বিবেক কে বুঝানোর চেষ্টা করে মোনা যা করেছে তা অপরাধ না, অপরাধীকে প্রাপ্য শাস্তি দিয়েছে। মোনার বুক চিঁড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসে। সুখ জিনিসটা মোনার ধরাছোঁয়ার বাইরে। কখনো সুখের সন্ধান পায়নি। সুখ যেন মোনার জন্য মরীচিকা। তীব্র ভাবে ছুটেছে সুখের পিছনে, কিন্তু নাগাল পাইনি কখনো।
মোনার রুমের দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়। মোনা কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে। এত রাতে কে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে?লিলি বেগম ছাড়া আর কে!
মোনা বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে। দরজা খুলতেই কেউ একজন মোনার গায়ের উপর ঢলে পরে। মোনা আঁতকে উঠে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-“কে, কে?”
মোনা দুই হাতে জড়িয়ে রেখেছে মানুষটাকে। নয়ত ফ্লোরে ঢলে পড়বে। মোনার হাত-পা কাঁপতে থাকে। মোনার গায়ে ঢলে পড়া মানুষটা নেশা জড়ানো গলায় বলে,
-“আমার রুম।”
মোনা এবার বুঝতে পারলো মানুষটা প্রিয়ম।‌ নেশায় বুঁদ হয়ে নিজের রুম ভেবে মোনার রুমে চলে এসেছে। মোনা নার্ভাস হয়ে পড়ে। একবার ভাবে লিলি বেগম কে ডাক দিবে, পরক্ষনে আর ডাক দেয়না। হাবিব সাহেব সজাগ হয়ে গেলে বিশ্রী এক কাণ্ড হয়ে যাবে।
নিজের ব্যালেন্স রাখতে প্রিয়ম খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে মোনা কে। মোনার দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। বিশ্রী রকমের গন্ধ আসছে প্রিয়মের মুখ থেকে, মোনার বমি আসছে। মোনা অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারেনি‌। এমন অবস্থায় যদি হাবিব সাহেব দেখে ফেলে?অস্বস্তি , ভয়ে মোনা যথারীতি ঘেমে যাচ্ছে। মোনা আস্তে আস্তে প্রিয়ম কে ধরে প্রিয়মের রুমের দিকে যেতে লাগল। প্রিয়মের রুমের পাশেই এরিকের রুম। প্রিয়ম মোনা কে এমন ভাবে জড়িয়ে রেখেছে যে মোনা হাত দিয়ে এরিকের দরজায় নক করবে এমন অবস্থাও নেই। মোনা পা দিয়ে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে, ঠকঠক শব্দ হচ্ছে। মোনা হাঁপিয়ে যাচ্ছে। অনেকক্ষণ ঘুম ঘুম চোখে এসে এরিক দরজা খুলে দেয়। আবছা অন্ধকারে এরিকের মুখ স্পষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু প্রিয়ম যে মোনা’কে জড়িয়ে রেখেছে, এটা অস্পষ্ট ভাবে হলেও বুঝা যাচ্ছে। মোনা অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়ে।ব্রিবত হয়ে বলল,
-“উনি আমার রুমের দরজা নক করছিলো, আমি ভেবেছি খালা এসেছে। দরজা খুলতেই দেখি এই অবস্থা।”
এরিক চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম জড়ানো গলায় বলল,
-“ইট’স ওকে, ইট’স ওকে। ডোন্ট বি নার্ভাস। আই সি।”
এরিক প্রিয়ম’কে ধরলো। মোনার মনে হলো ও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে।কিছুটা ক্লান্ত হয়ে গেছে মোনা। এরিক বলল,
-“থ্যাক্স মোনাপু।”
-“থ্যাক্স কেন? আর শোন একথা খালু’কে বলো না। আমায় দোষারোপ করবে।”
-“তোমায় কেন দোষারোপ করবে?আর এসব বাবা কে বলার কি আছে?”
মোনার হাত পা যেন এখনো কাঁপছে। মোনা ওর রুমের দিকে পা বাড়ায়। একটা ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়েছে যেন।
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here