লাবণ্যপ্রভা পর্ব ৬

#লাবণ্যপ্রভা
#পর্ব -৬
১১.
আমার সুস্থ হতে সময় লাগলো সপ্তাহ দুয়েক। একটু সুস্থ হওয়ার পর ফারজানা মাহবুব নিজেই আমার সাথে দেখা করতে আসলেন। খালা যদিও আপত্তি করেছিল কিন্তু আমি নিজেই ওনার সাথে দেখা করতে চাইলাম। আমাকে দেখে ওনার প্রথম প্রশ্ন ছিলো, আপনি কেন সুইসাইড করতে চেয়েছিলেন লাবণ্য??
আমি সেকথার উত্তর না দিয়ে বলেছিলাম, আপনার মতে সব আমার দোষ ছিলো আর তুনিড় ছিলো নির্দোষ তাই তো???
ফারজানা মাহবুব ঠান্ডা গলায় বললেন, আপনি কি এখন পুরোপুরি সুস্থ? আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই আপনি কি সেটা শোনার মতো মানসিক অবস্থায় আছেন লাবণ্য??
আমি বললাম, হ্যাঁ আমি সব শুনতে চাই। আপনি বলুন
-লাবণ্য আমি আপনাকে যা বলবো তাতে দোষ গুণ সবই থাকবে আপনাদের দুজনের। আপনি সেটা নরমালি নিবেন প্লিজ।
-জি আপনি বলুন।
-আপনার কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি তা হলো তুনিড় আপনাদের পাড়ায় এসেছে যখন আপনার বয়স ১৪ বছর?
-হ্যাঁ। আগে ওনারা ময়মনসিংহ এর বালুকায় থাকতেন। এখানে বাড়ি বানানোর পর এখানে থাকতে শুরু করেন।
-আচ্ছা। তুনিড় কে দেখেই আপনার খুব ভালো লাগলো আর আপনি প্রেমেও পড়ে গেলেন?
-হ্যাঁ।
-আপনি যে বয়সে তুনিড়ের প্রেমে পড়লেন সে বয়সে তুনিড় ছাড়া আর কাউকে আপনি দেখে মুগ্ধ হন নি। আপনাদের পাড়ায় সবচেয়ে সুন্দর ছেলে ছিলো তুনিড়। তুনিড় ছাড়া অন্যকেউ যদি আপনাদের পাড়ায় থাকত তবে আপনি তুনিড়ের প্রেমে না পড়ে তার প্রেমেও পড়তে পারতেন।
অল্প বয়সের এই আবেগ টাকে আপনি অতি যত্নে লালন করতে লাগলেন। তুনিড়ের সুন্দর চেহারা ছাড়াও তার অমায়িক ব্যবহার ও আপনাকে মুগ্ধ করল। আপনি দিন দিন তুনিড়ের প্রতি ঝুকে যাচ্ছিলেন যে কারনে আপনার আর অন্য কাউকে ভালো লাগেনি। আপনি বিভিন্ন ভাবে সেজেগুজে তুনিড়ের সামনে যেতেন ইমপ্রেস করার জন্য কিন্তু তুনিড় তেমন পাত্তা দিতেন না। আচ্ছা আপনি বলেন লাবণ্য ভালোবাসা কি ভুলিয়ে ভালিয়ে হয়???
আমি তখন নীরব থেকে সব টা শুনেছিলাম।
যদি সেটাই হতো তবে তুনিড় হয়তো রুপসা কে ভালোবাস তো না।
-রুপসা আপুকেও ও ভালোবাসতো না……
আমার কথা থামিয়ে দিয়ে বলল, রুপসার ব্যাপার টা নিয়ে পরে কথা বলি কেমন??

আস্তে আস্তে আপনার বয়স বাড়তে শুরু করল। আপনার ওভার কনফিডেন্স ছিলো নিজের রুপ নিয়ে। কিন্তু একদিন জানতে পারলেন যে রুপসা আর তুনিড় রিলেশনশীপে আছে। আপনি স্বাভাবিক ভাবে দুঃখ পেলেন। কিন্তু আশা ছাড়লেন না। আপনার তখনও নিজের রুপ নিয়ে কনফিডেন্স ছিলো যে আপনি যদি নিজেকে ভালোভাবে তুনিড়ের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন তো তুনিড় আপনার প্রতি ঝুকে রুপসা কে ছেড়ে দেবে। তাই আপনি আকার ইঙ্গিতে সেটা তুনিড় আর রুপসা কে বোঝালেন। দুজনেই বুঝল। রুপসা আপনাকে তখন সাজেশন দিলো কিন্তু আপনি সেটা গায়ে মাখলেন না। বরং রুপসাকে অনেক কিছু শুনিয়েও দিলেন। রুপসা কি সেটা তুনিড় কে জানায় নি???

কিন্তু আপনি কি জানেন লাবণ্য এসব করে আপনি নিজেকে তুনিড়ের কাছে সস্তা প্রমাণ করেছেন??
-মানে??
-মানে তুনিড় আপনাকে স্নেহের চোখে দেখত। সেটাও আপনার কাছ থেকে শোনা। আপনার পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতো। কিন্তু যখনই আপনি নিজের দুর্বলতার কথা জানালেন তখনই তুনিড় বুঝে গেল যে আপনি ওকে কি চোখে দেখেন।

রুপসার সাথে বাক বিতন্ডার পর আপনি তুনিড়ের কাছে পড়তে গেলেন। অর্থাৎ আপনি প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠলেন। কিন্তু ভাগ্য তখন আপনার অনুকুলে ছিলো বলে আপনাকে বেশি কিছু করতে হলো না। তুনিড় আর রুপসার ব্রেক আপ হয়ে গেল। এরপর আপনি চরম বোকামি টা করলেন।
তুনিড় যখন বললেন, যে কোনো বন্ধুরাও ওর পাশে নেই সবাই রুপসার পক্ষে। তখনই কি বুঝে নেয়া উচিত না যে তুনিড়ের দোষ বেশি ছিলো??

আপনি তখন প্রেমে অন্ধ হয়ে গেলেন। এতোটাই অন্ধ হয়ে গেলেন যে নিজের বাবা, মা, ক্যারিয়ার সব ভুলে গেলেন। আপনার মনে হলো জীবনে তুনিড় কে পেলে আর কিছুরই দরকার নেই।

আর তুনিড় কি করল! রুপসা চলে যাওয়ার পর সে মেন্টালি সাপোর্টের জন্য আপনার প্রতি ঝুকে পড়ল। আপনার ভাবনায় তখন রুপসার সাথে মিটমাট করিয়ে দেয়ার ব্যাপার টাও আসতে পারতো কিন্তু আসেনি। এসেছিল যে করেই হোক এই সুযোগে তুনিড় কে পাওয়া যাবে।

আপনি যখন নিজে গ্যরাকলে পড়লেন তখন রুপসার কথা মনে হলো আপনার। যদি আগে মনে হতো তাহলে আপনার জীবন টা হয়তো আজ অন্যরকম হতো। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ বুঝে নিতে হয় লাবণ্য। ভালোবাসা আর ভালোলাগা দুটো কিন্তু এক নয়। আপনি কখনো ভেবেছিলেন যে আপনার জীবন টা এরকম হবে?? আপনি যদি সেদিন একটু বুদ্ধি খাটাতেন, তুনিড়ের ব্যাপার নিয়ে আরও কয়েকজনের সাথে কথা বলে তারপর ডিসিশন নিতেন তাহলে কি এরকম হতো।
-আমার বলার মতো কেউ ছিলো না। কোনো বন্ধু ছিলো না বলার মতো।
-আপনি আপনার মাকে বলতেন। আপনার কাছ থেকেই শুনেছি যে আপনার মা আপনাকে সাপোর্ট করেছে।
-এসব কথা কি মাকে বলা যায়?
-বলা না যাক কিন্তু আপনি তার কাছ থেকে আইডিয়া নিতে পারতেন!
-আমি মানলাম আমি ভুল ছিলাম। এবার বলুন তো তুনিড়ের কি কি ঠিক ছিলো??
-বলছি।

তুনিড় পড়াশোনা করেছে বয়েজ স্কুল কলেজে। স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েদের সাথে তার সখ্যতা কম ছিলো। কিন্তু স্বভাবে ছিলো সে মিশুক। ভার্সিটিতে এসেই প্রথম সে মেয়েদের সাথে মিশতে শুরু করল। সে দেখতে সুদর্শন। কিন্তু অবাক করা বিষয় ছিলো মেয়েরা খুব একটা তার কাছে আসতো না। কারন প্রায় সব মেয়েই ভাবত যে এরকম সুন্দর ছেলের প্রেমিকা থাকবেই।

কিভাবে কিভাবে যেন রুপসার সাথে ওর প্রেম হয়ে গেল। রুপসা কে ছবিতে দেখে আমার তেমন খারাপ লাগেনি। বরং ওকে আমার ইন্টিলিজেন্ট মনে হয়েছে। হয়তো রুপসার মধ্যে এমন কিছু ছিলো যেটা তুনিড় কে টেনেছে।

রুপসার সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর ও তুনিড় ফিরতে চেয়েছে। রুপসা মানতে পারেনি। কিন্তু যে একবার প্রেমে মজা পেয়ে গেছে সে কিভাবে একা থাকবে বলুন!

তাই আপনাকে প্রপোজ করল। আপনি একটা ব্যাপার খেয়াল করুন লাবণ্য, তুনিড় আপনার সাথে প্রথমদিকে যে কথাগুলো বলতেন সেগুলো স্বাভাবিক কথা। বন্ধুর সাথে মানুষ যেভাবে বলে। তখন সে শুধু মেন্টাল সাপোর্ট নিয়েছে। কিন্তু একসময় তার মনে হয়েছে সম্পর্ক টা প্রেমের দিকে নিয়ে যাওয়া উচিত। যেহেতু মেয়েরা ওর কাছে ঘেঁষে কম ও ভেবেছিল আপনি তো আগেই কয়েক পা এগিয়ে ছিলেন তাই আপনার কাছেই যাওয়া উচিত।

সেভাবেই সব হয়ে গেল। তুনিড় দেখল আপনি রুপসার মতো না। আপনি ওর বাধ্যগত প্রেমিকা। তুনিড় খুশি হলো। অবশ্য খুশি হওয়ার মতোই ব্যাপার। এরকম প্রেমিকা কজন পায়! আপনি তুনিড়ের জন্য ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিলেন। তুনিড়ের তখন খুশিতে বাক বাকুম হওয়ার কথা। জানিনা হয়েছিল কি না! এভাবে চলল কিছুদিন। তখন তুনিড় আপনাকে অবজার্ভ করল। আপনি যে রুপসার মতো না সেটা বুঝল। ঝোপ বুঝে কোপ মারল। আর সে সফল ও হয়ে গেল।

আর এখানেই ছিলো আপনার ভুল। আপনি যে ভালোবাসেন না সেটা বোঝার স্পষ্ট কারন। আপনি তুনিড়ের সাথে শারিরীক সম্পর্ক করেছিলেন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। কারন আপনি ভেবেছেন রাজি না হলে তুনিড় হয়তো সম্পর্ক রাখবে না।
-আমি সেটা ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম যেটা বিয়ের পরে হবে সেটা আগে হলে ক্ষতি কি?
-আর তুনিড় ভেবেছে যেটা বিয়ের পরে হওয়া উচিত সেটা তো আগে হয়েই গেছে তাহলে বিয়ের কি দরকার!

লাবণ্য, তুনিড়ের ভালোবাসা নিয়ে আপনার কনফিডেন্স ছিলো না। আপনার নিজের ভালোবাসা নিয়েও কোনো কনফিডেন্স ছিলো না। আপনার ভাবনায় ছিলো শুধু রাজপুত্র কে ছাড়া রাজকন্যাদের লাইফ চলে না। ভালোবাসা ব্যাপার টা ছিলো না। আপনার মধ্যে ছিলো তুনিড় কে বেঁধে রাখার প্রবনতা। যে কারনে আপনি তার কথায় উঠতেন আর বসতেন।

-হু।

-কিন্তু সে ছিলো খুব চালাক। আপনার সাথে শুধু প্রেম ই করতে চেয়েছে। বিয়ে করতে চায় নি। আপনাকে কখনো বিয়ের কথাও বলেনি।
-কিন্তু বাচ্চার নাম কি রাখা হবে সেটা নিয়ে……..
-ওটা আপনার খুশির জন্য বলেছে। আপনি কিসে খুশি হতে পারেন, দুঃখ পেতে পারেন সেটা সে ভালো করেই বুঝে গিয়েছিল।
সে যে আপনাকে বিয়ে করতে চায়নি সেটা আপনি একটু মাথা খাটালেই বুঝতেন। রুপসার কথা পাড়ার সবাই জানত। রুপসাকে হয়তো বিয়েও করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনার ব্যাপার জানাতে বারন করেছে। আবার সব প্রমাণ চতুরতার সাথে শেষ করেছে
-কিন্তু ও তো রুপসা আপুকেও বাজে প্রস্তাব দিয়েছিল।
-হ্যাঁ। শয়তানি আর কতদিন চেপে রাখবে তাই বেরিয়ে গেছিলো। সেটার জন্য অনুতপ্ত ছিলো বলেই হয়তো ব্রেক আপের পর তুনিড় কেঁদেছিল।

আপনি প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর ওর মাথা খারাপ হয়ে গেল। যদি ফাস হয় তবে ওর ভালো মানুষের ইমেজ শেষ হয়ে যাবে। তাই আপনাকে ভুল ভাল বুঝিয়ে গর্ভপাত করালেন। কিন্তু আপনি আবারও বোকামি করলেন।

মালয়েশিয়া যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর থেকেই আপনাকে ইগ্নোর করছিলো। তখন কিন্তু প্রগতির সাথে দেখা হয়নি। তবুও সে আপনাকে লাইফ থেকে সরাতে চেয়েছিলেন। এরপর প্রগতির সাথে সে এমন বিহাভ করলেন যে বাধ্য হয়ে গেল প্রগতি প্রেমে পড়তে। প্রগতির মায়ের বাড়ি বাংলাদেশে। তাই এদেশের প্রতি টান থেকেই বাংলাদেশের ছেলের প্রতিও টান চলে এসেছে। এবার তুনিড় ভুল করল না। কারন প্রগতি রুপসার মতো শিক্ষিত বুদ্ধিমতি মেয়ে। আপনার মতো বোকা না। একে জয় করতে মনের সাথে মাথাও খাটাতে হবে। আর সেটাই করল তুনিড়।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলাম। ফারজানা মাহবুব আবারও বললেন,
-আমরা যতই আধুনিক হই। এখনো ছেলেরা ভাবে কোনো মেয়ে যেচে প্রেম নিবেদন করলে সে ক্যারেক্টার লেস। তুনিড় দেখেছে তাকে ইমপ্রেস করার জন্য আপনি কি কি করেছেন। তার এক বলায় আপনি ওর সাথে বিছানায় ও গেছেন। কই রুপসা তো যায় নি। তখনই সে ভেবে ফেলেছে আপনি সস্তা।

আর আপনার ভুলগুলো হয়েছে আপনার নিজের জন্য। আপনি ঠিক ভুলের বিচার করেন নি। নিজের অহংকার, জেদ, আর বাবা মায়ের কথা না শোনার মাসুল দিতে হয়েছে।

বাবা মাকে মিথ্যে বলে দূরে গিয়ে প্রেমিকের সাথে থাকা সেটা আপনার বিবেকে কেন বাধল না লাবণ্য??
-আপনি সত্যি বলছেন যে তুনিড়ের প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো না??
-আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন লাবণ্য। উত্তর পেয়ে যাবেন।
-আপনার কি মনে হয় তুনিড় প্রগতি কে ভালোবাসে?
-সেটা জানিনা। তবে তুনিড় স্টাবলিশড, হাইলি এডুকেটেড মেয়ে পছন্দ করে। রুপসা কিন্তু সরকারি কলেজের লেকচারার। প্রগতিও সেরকম। আর তাছাড়া প্রগতির কোটি টাকার সম্পত্তি আছে বলে শুনলাম। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
আপনার রাজপুত্র রাজা হতে চেয়েছিল লাবণ্য। তাই হয়তো আপনাকে ছেড়ে গেছে। রাজা হতে হলে যে রাজ্য লাগে। আর রাজ্যের সন্ধান হয়তো প্রগতিই দিতে পারবে।
-আমি মানলাম আমার দোষ কিন্তু এতো কিছুর পর তুনিড় কে নিয়ে আপনি কি বলবেন?
-তুনিড় হলো জাত শয়তান। জাত শয়তান না বুদ্ধিমান শয়তান। হেটে আসা লক্ষ্মী কে কেউ পায়ে ঠেলে লাবণ্য? সেও সেটাই করেছে।

-আমি তো আমার শাস্তি পেয়েছি। কিন্তু ও তো পেল না। ও ছাড় পেয়ে গেলো!

-প্রকৃতি কখনো হিসেবে ভুল করেনা লাবণ্য।

ফারজানা মাহবুব এর কথা গুলো যে মিথ্যে ছিলো না সেটা আমি বুঝলাম। সে আয়না না ধরলে হয়তো আমার আমিকে চিনতাম ই না।

আমি নিজেকে গুটিয়ে ফেললাম। আমার খালা ছিলেন নিঃসন্তান। আর সে কারনেই হয়তো সে আমার প্রতি খেয়াল বেশি রাখত। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে আমি প্রচুর বই পড়তে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে একটু একটু করে সব ভুলতে শুরু করেছিলাম। বাবার সাথে সম্পর্ক ঠিক না হলেও অল্প দিনে মায়ের সাথে ভালো সম্পর্ক হলো। মা ক্ষমাও করে দিয়েছিল।

এভাবেই চলছিলো দিনকাল। খালা ল্যাপটপ কিনে দিলো আমাকে। আমি কৌতুহলবশত তুনিড়ের নাম সার্চ করলাম। পেলাম না, প্রগতি ফ্রান্সিস লিখে সার্চ দেয়ার পর পেলাম। টাইমলাইন ভর্তি করে দুজনের হাস্যোজ্জ্বল ছবি। কয়েকটা ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল। প্রগতির ফোলা পেটে তুনিড় হাত রেখেছে। যা বোঝার বুঝলাম।

দুনিয়ার প্রতি আবারও বিতৃষ্ণা এসে গেছে। শাস্তি যা পাওয়ার সব আমিই পেলাম আর ওরা তো শান্তিতেই আছে!

দ্বিতীয়বারের মতো সুইসাইড করতে গিয়েও বেঁচে গেলাম। খালা আবার ফারজানা মাহবুব কে ডাকলেন।

তিনি আমার কাছে কারন জানতে চাইলে বললাম। তিনি বললেন, তুমি কি চাও লাবণ্য?
আমি ওনাকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
-আমি একটু শান্তি চাই। রাতে ঘুমাতে চাই। আগের বাবা মাকে ফিরে পেতে চাই। আর চাই সারা পৃথিবী যেভাবে আমাকে ছিঃ ছিঃ করেছে তুনিড় কে ও যেন সেভাবে করে।
-তাহলে এক কাজ করো। তুমি তোমার জীবনের গল্প নিজের মতো করে লেখ। তাতে একদিকে তোমার হতাশা দূর হবে অন্যদিকে তোমার মনের ক্ষোভ হালকা হবে। আর এই লেখাগুলো ছাপিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দাও। যেন আর কোনো লাবণ্য তোমার মতো ভুল না করে।

লিখতে গিয়ে আমি ঠিক করলাম বাবা মায়ের তাসমিন তাবাসসুম লাবণ্য নাম টা দেব না। কিন্তু এমন নাম দিতে হবে যেন তুনিড় বা প্রগতি যদি কখনও আমার লেখা পায় তবে যেন বুঝতে পারে যে ওটা আমি।

আর সেখান থেকেই নিজের নামকরন নিজেই করলাম লাবণ্যপ্রভা।

চলবে……….
সাবিকুন নাহার নিপা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here