লাভ_জার্নি পর্ব ৩

#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#চতুর্থ_পর্ব

ভ্যাপসা গরম পড়া বিকেলে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ মানুষের অবস্থাই বেহাল‌। কড়া রোদ উপেক্ষা করে মিশরাতের পুরো পরিবার আর স্নিগ্ধ শপিং মলে প্রবেশ করলো। ইফতেখার চৌধুরীর অসুস্থতার কারণে মিসেস ইয়ামিনের স্নিগ্ধর সাথে আসা হয়ে উঠে নি। শপিং মলে প্রবেশ করে সবাই দোতলায় চলে গেল। যেহেতু বিয়ের শপিং সেহেতু বর ও কনের জন্য স্পেশালি কেনাকাটা রয়েছে। তাই প্রথমেই কনে অর্থাৎ মিশরাতের জন্য শাড়ির দোকানে প্রবেশ করলো সবাই। কিন্তু মিশরাতের মুখ দেখে মনে হচ্ছে না যে বিয়েটা তার। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে সবার সাথে হেঁটে চলেছে।
একের পর এক শাড়ি, লেহেঙ্গা দেখানোর পর দোকানদাররাও একপ্রকার হাঁপিয়ে উঠেছে কিন্তু মিশরাতের সেসব পছন্দ হওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই।
আর তাতে সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিশরাতের দিকে যেটা তার চোখে পড়তেই ঠোঁট হালকা ভিজিয়ে নেয় সে। পাশ থেকে মিসেস ইবনাত মুখে হাসি রেখে চাপা স্বরে বলে উঠলেন,

– ” কি শুরু করেছো মিশরাত!
এখানে এসে এমন বিহেভিয়ার করার মানে কি? এখন লেট না করে তারাতাড়ি একটা পছন্দ করে।”
মায়ের কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় মিশরাত‌। একবার অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো সে। যার অর্থ তার মাথা কাজ করছে না। কিন্তু তাকে চমকে দিয়ে পাশ থেকে স্নিগ্ধ চোখের ইশারায় দোকানদারকে কিছু একটা আনতে বললো। দোকানদার ও স্নিগ্ধের কথা মতো একটা পার্পেল কালারের লেহেঙ্গা নিয়ে আসলো। পার্পেল এর মাঝে হোয়াইট পার্লের কাজ ও অনেকখানি ঘের থাকায় অসাধারণ লাগছে।
স্নিগ্ধ লেহেঙ্গাটা মিশরাতের দিকে এগিয়ে দিতেই মিশরাত একপলক স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে সেটা হাতে তুলে নিলো। পাশ থেকে মেহের, মিসেস ইবনাত সবাই স্নিগ্ধর পছন্দের প্রশংসা করছে। মিশরাত ও মনে মনে বলে উঠলো,

– ” লোকটার পছন্দ আছে বলতে হবে!
কিন্তু এটা আমার নজরে পড়লো না কেন!”
বিল পরিশোধ করে সবাই চলে যায় বরের কেনাকাটা করতে। স্নিগ্ধও মিশরাতের সাথে মিলিয়ে হোয়াইট আর পার্পেল এর মিক্সড শেরওয়ানি নেয়। পরিবারের বাকি সদস্যদের ও টুকটাক কেনাকাটা করতে করতে সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হয়ে যায়।

সারা বিকেলের ধকল কাটিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে মিশরাত‌ আর বাকি সবাই। মিশরাত‌ গুটি গুটি পায়ে উপরে উঠে দরজা খুলে ভেতরে যেয়ে হাতে থাকা ব্যাগ গুলো পাশে সোফার উপর রেখে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ে। ক্লান্তির ছাপ পড়া শরীর ঘুম এসে জড়ো হয়। আর কিছুক্ষণ পর এমনিই চোখ বুজে আসে মিশরাতের‌।

ঘন্টা এক পর মেহের মিশরাতের দরজায় টোকা দেয়। পরপর দুই তিনবার টোকা দেয়ার পরেও কোনো রেসপন্স না পেয়ে দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়।
মিশরাতকে বিছানায় এলোমেলো ভাবে বেঘোরে ঘুমোতে দেখে মেহের হালকা হেসে দেয়।
– ” আসলেই পাগলী একটা!”
বলেই রুমের লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে চলে আসে মেহের।

রাতের আকাশে এক ফালি চাঁদ দৃশ্যমান। হালকা মেঘও করেছে! তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী নয়। কিন্তু মনের মধ্যে যে মেঘ জমেছে সেটা? সেটা কি করে মুছে ফেলবে স্নিগ্ধ। জ্বলন্ত সিগারেটের পুড়ে যাওয়া অংশগুলো বাতাসের সাথে মিলে মিশে ধোঁয়াশায় পরিনত হচ্ছে। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই স্নিগ্ধের। সে তো আকাশ পানে তাকিয়ে থাকায় ব্যস্ত। আজ অনেক দিন পর সিগারেটে আগুন ধরালো সে। যখন যন্ত্রণা গুলো খুব করে মনের ভেতর নাড়া দেয় তখন একটা হলেও এটা প্রয়োজন।

– ” আচ্ছা আমি সত্যিই কোনো ভুল করছি না তো?
মিশরাতকে বিয়ে করে ওর জীবনটা নষ্ট করে দেবো না তো? আমি তো বিয়েটা শুধুমাত্র বাবার জন্য করছি!”

নিজের ভেতর একপ্রকার অনুতপ্ত বোধ হলেও পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো স্নিগ্ধ।
– ” না, না তা হতে যাবে কেন? আমি যে কারণে বিয়েটা করছি তা তো আমি মিশরাতকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছি। আর মিশরাত ও তো এসবে বিশ্বাসী নয়। সে ও তো এটাই ধরে নিয়েছে যে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত সে আমার নাম মাত্র বউ। তারপর তো সে আবার ও তার পুরনো লাইফে চলে যাবে!
আর সবচেয়ে বড় কথা আমি অন্য কাউকে আর কোনোদিন ভালোবাসতে পারবো না!!”

লাস্টের কথাটি ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে উঠল স্নিগ্ধ। সিগারেটের জ্বলন্ত অংশ স্নিগ্ধর আঙুল ছুঁতেই তার টনক নড়ে। হাত টা হালকা ঝাড়া দিয়ে রুমের ভেতরে চলে আসে। জ্বলতে থাকা টেবিল ল্যাম্পের সুইচ অফ করতে যাবে তখনি চোখ পড়ে টেবিলের উপর থাকা কালো রঙের ডায়েরিটার উপর। অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে যেন এই জিনিস টাকে ঘিরেই তার ভেতরের যত শূন্যতা!!

সকালের আলোর ঝাপটা চোখের উপর পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে মিশরাত। আজকাল সকালের আলোর তেজটা বোধহয় একটু বেশিই। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই নজর পড়ে দেয়ালে থাকা ঝুলন্ত ঘড়িটার উপর। বেলা হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। ধড়ফড়িয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে মিশরাত‌। নিশ্চিত আজও বকা খেতে হবে। এই ঘুম নামক জিনিসটা তাকে এমন ভাবে গ্রাস করেছে যে তা বলার বাহিরে। অলসতা কাটিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে যায়।

নিচে নামতেই খেয়াল করে বাড়িতে মেহমান গিজগিজ করছে। আর সবার নজর মিশরাতের দিকে পড়তেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে মিশরাতকে নিয়ে। এর ই মাঝে মিশরাতের ফুপি মিসেস রেহেনা পান চিবোতে চিবোতে বলে উঠে,

– ” তো ভাই বিয়া তো দিতেইছো তো মাইয়াডারে! আমি যে তহন কইলাম আমার পোলাডার লগে বিয়া দাও! তহন তো কথাডা শুনলা না! রবিন পোলা হিসেবে কোন দিক দিয়া খারাপ তুমি কও তো!!”

রেহেনা বেগমের কথা শুনে চায়ের কাপ থেকে চোখ তুলে তাকালেন আজীজ সাহেব। বোনের মুখে এমন কথা শুনে কপাল কুঁচকে ফেললেন তিনি।

– ” আপা তুমি আবারো রবিনের কথা বলছো?
তুমি ভালো করেই জানো আমি রবিনের সাথে ফারাহর বিয়ে দিবো না। আর আমি আশা করি তুমি তোমার ছেলের চরিত্রের সাথে অবগত।
তাই এ ব্যাপারে আমি দ্বিতীয়বার কোনো কথা বলতে চাই না।”

আজীজ সাহেবের মুখে এমন তিক্ত কথা হজম করতে পারলেন না রেহেনা বেগম। একপ্রকার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠার মতো অবস্থা তার। মুখ বাঁকিয়ে কটাক্ষের সুরে বলে উঠলেন,

– ” হইছে থামো! আমার পোলাডা এতো ও খারাপ না। হ এইডা মানি ও দু একখান সিগারেট খায়, আর বেশি হইলে একটু আধটু বন্ধু গো পাল্লায় পইরা মদ খায়।
তয় পোলাডা আমাগো ফারাহরে মেলা পছন্দ করে। কিন্তু তুমি তো ফারাহর বিয়া ঐ বড়লোক পোলাডার লগে ঠিক করলা!
ঐ পোলায় বুঝি ঐসব ছাইপাশ গিলে না!
হুহ, যত্তসব!”

এতক্ষণ চুপচাপ সব সহ্য করলেও আজীজ সাহেবের মেজাজ এবার চড়া হয়ে গেল।

– ” আপা এবার কিন্তু তুমি তোমার সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছো!

তোমার ‌ছেলের চরিত্রের সাথে স্নিগ্ধের চরিত্রের তুলনা করছো! তোমার সাহস হয় কি করে এসব উল্টো পাল্টা কথা বলার!!”

আজীজ সাহেবের চিটচিটে মেজাজ দেখে রেহানা বেগম মুখ বাঁকিয়ে উঠে চলে যান।
এদিকে মিশরাত পড়েছে অস্বস্তিতে। একেক জনের একেক উদ্ভট প্রশ্ন শুনে প্রত্যুত্তরে শুধু হু হু করে যাচ্ছে। সেটা মেহের খেয়াল করতেই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

– ” এই অনেক জেরা করা হয়েছে। এবার সবাই সবার ঘরে যাও। এমনিতেই বেলা হয়ে গিয়েছে। দুপুরের খাবার খেতে হবে একটু পর।”
মেহেরের কথা শুনে সবাই বাধ্যমতো চলে যায়। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিশরাত‌। যাক বাবা বাঁচা গেল।

উঠে দাড়াতেই সামনে হুট করে কেউ এসে দাঁড়ায় মিশরাতের‌। মাথা তুলে তাকাতেই দেখে রবিন তার দিকে বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। মুখে রয়েছে হাসি। সেটা খেয়াল করে রাগে শরীর রি রি করে উঠে মিশরাতের‌।

-” শালা, অসভ্য, খবিশ! যখন দেখো তখন সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। মেজাজ টা গরম করে দেয়। সাথে তো বত্রিশ পাটি দাঁতের হাসি তো ফ্রী!”

মনে মনে বিড়বিড় করে মিশরাত‌।
– ” এভাবে আমার পথ রুখে দাঁড়িয়েছেন কেন রবিন ভাই! আমার রাস্তা ছাড়ুন রবিন ভাই! আমি উপরে যাবো!”

রবিন বিশ্রীভাবে হেসে বলে উঠে,
– ” আহা ফারাহ্, তোরে কইছিনা আমারে ভাই ডাকবি না!
ভাই শব্দ টা কেমন জানি পর পর লাগে! আমি তো তোর,,,,”

চোখ গরম করে তাকায় মিশরাত‌।
– ” দেখুন রবিন ভাই, নিজের লিমিটে থাকুন! আর মুখে লাগাম দিন!
এটা ভুলে যাবেন না আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেলে আমি আত্মীয় স্বজন মানি না!
সো ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট!
আর এটাও ভুলবেন আর কদিন পর ই আমার বিয়ে!!”
বলেই গটগট করে ওখান থেকে চলে আসলো মিশরাত‌। আর ওদিকে রবিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে।

– ” এতো ভাব? ঐ বড়লোক পোলার লগে বিয়া হইবো তাই এতো ভাব!
তোর ঐ সংসারে যদি আমি ফাটল না ধরাইছি আমার নাম ও রবিন না। ঘুইরা ফিরা তোর আমার কাছেই আসা লাগবো ফারাহ!”

বলেই এক শয়তানি হাসি দিল রবিন।………….

#চলবে 🍂

( আসসালামুয়ালাইকুম। আজকে ব্যস্ত থাকার জন্য পর্ব পূর্বের তুলনায় ছোট হয়েছে। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আগামীকাল একটা বড় পর্ব দিবো।
কেমন হয়েছে জানাবেন।
ভালোবাসা অবিরাম 🖤🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here