লাভ_জার্নি পর্ব ৪+৫+৬+শেষ

#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#পঞ্চম_পর্ব

মাঝ থেকে কেটে গিয়েছে আরো দুটো দিন। নানা রকমের ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে পার করেছে দুটো পরিবার। আজ স্নিগ্ধ আর মিশরাতের হলুদ সন্ধ্যা।

সারাদিনের তোরজোর এর কারণে মিশরাত সারা বাড়িতে বিরক্তি নিয়ে ঘুরঘুর করছে। সেটা মিসেস ইবনাতের চোখে পড়তেই তিনি ধমকের সুরে বলে উঠেন,
– ” এভাবে সারা বাড়ি টৈ টৈ করে না ঘুরে উপরে যেয়ে বসে থাকো। আর একটু পরেই সময় পাবে না আর। পার্লারের মেয়েরা চলে আসবে।”

মায়ের কথা শুনে বিরক্তি আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায় মিশরাতের‌। একটা নামমাত্র বিয়ের জন্য এতো আয়োজনের জন্য এতকিছু করার কি আছে? অবশ্য এখানে কারোর কিছু করার নেই কেননা মিশরাত আর স্নিগ্ধ ছাড়া আসল সত্যিটা আর কারোর ই জানা নেই। তাই মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে গটগট করে চলে আসে মিশরাত‌।
কাচা হলুদ রঙের শাড়ি, সাথে কাঁচা ফুলের অর্নামেন্টস্ আর মুখের মধ্যে হালকা মেকআপ। মনে হচ্ছে যেন কোনো হলুদ অপ্সরী। মেহের ধীরে ধীরে মিশরাতকে নিয়ে নিচে চলে আসে। স্নিগ্ধর হলুদ পর্ব শেষ হতেই মিশরাতের হলুদ পর্বের সূচনা ঘটে।

একে একে সবাই হলুদের ছোঁয়া দেয় মিশরাতের গালে। মেহের তো একগাদা হলুদ নিয়ে মিশরাতের গালে লাগিয়ে দেয়। যার কারণে মিশরাত কাঁদো কাঁদো চেহারায় মিসেস ইবনাতের দিকে তাকাতেই সবাই সশব্দে হেসে দেয়। কিন্তু এতো হাসি তামাশার ভেতরেও মিশরাতের মুখে এক প্রকার বিষন্নতার ছাপ। ভাবতেই অবাক লাগছে আগামীকাল তার বিয়ে। আবার ঠিক ছ মাস পরই সে বিয়ে নামক বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।

রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। গালের মধ্যে এখনো হলুদের কিছু আবরণ লেগে রয়েছে। রাত প্রায় গভীর হতে চলেছে তবুও তার মাঝে কোনো হেলদোল নেই। সে তো অন্য চিন্তায় মগ্ন।

– ” আমি পারলাম না আমার কথা রাখতে!
আমি পারিনি তোমায় আমার একান্তই আমার করে রাখতে! তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছো।
হ্যাঁ চেয়েছিলাম আমি দ্বিতীয়বার কোনোদিন এসব বিষয় মাথায় আনবো না, কোনোদিন এই বিয়ে নামক বস্তুটাকে নিজের সাথে জড়াবো না, কিন্তু আজ!আজ আমায় সেসব কথা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে হবে!
জড়াতে হবে নিজেকে ঐ বিয়ে নামের মিথ্যে মায়ায়!”
চোখের কার্নিশ বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো স্নিগ্ধর। রাগে ক্ষোভে, অভিমানে না পেরে রেলিং এর উপর সজোরে একটা ঘুষি মেরে বসে স্নিগ্ধ!

শাওয়ার শেষে টাওয়াল দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে রুমে প্রবেশ করে মিশরাত‌। চুলগুলো শুকানো দরকার। নাহলে বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ভালোভাবে মেলে দিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে নিলো সে। তারপর উঁচু করে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিল সেগুলো। উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরতেই আঁতকে উঠে মিশরাত।

– ” আপনি এখানে রবিন ভাই!
আপনার সাহস তো কম না, আপনি এতো রাতে আমার রুমে এসেছেন!!”

রবিন এগোতে এগোতে বলে উঠে,

– ” আরে ফারাহ্ এতো রাগ করোছ ক্যান?
আমি কি কিছু করছি? আমি তো ভাবলাম কাইল তোর বিয়া আজ রাইতে এট্টুখানি দেখা কইরা যাই। আর যাই হোক কাইল থেকা তো তুই ঐ বড়লোক পোলাডার লগে রাইত কাটাবি! আজ রাইত না হয় আমার লগে,,”

রবিনের এমন বিশ্রী ভঙ্গি দেখে রাগে ক্ষোভে কান গরম হয়ে এলো মিশরাতের‌। রাগ সামলাতে না পেরে ঠাঁটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল রবিনের গালে‌। রবিন রক্ত চক্ষু নিক্ষেপ করতেই মিশরাত হুংকার দিয়ে উঠে,

– ” ডোন্ট ডেয়ার!
আপনি আমার ফুফাতো ভাই দেখে আমি আপনাকে সম্মান করতাম কিন্তু আপনার এমন লো ক্লাস মেন্টালিটি দেখে সেটা আর পারছি না!
ডিজগাস্টিং! জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম মাই রুম!”
একপ্রকার চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে মিস্টার আজীজ, ইরফান, মেহের, মিসেস ইবনাত সহ রবিনের মা মিসেস রেহেনা বেগম ও মিশরাতের রুমে উপস্থিত হন। রবিনকে এই মুহূর্তে মিশরাতের রুমে দেখে সবাই বেশ অবাক হয়। মিশরাত আবার ও হুংকার দিয়ে বলে উঠে,

– ” আপনি কি শুনেন নি, জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম মাই রুম!!
রাসকেল কোথাকার!!”

রবিনের সাথে তর্কাতর্কি করার এক পর্যায়ে মিসেস রেহেনা তেতে আসেন।
– ” এই ফারাহ্ এই! তোর সমস্যাডা কি? তুই আমার পোলার লগে এমন ভাবে কথা কইতেছস কেন?
রবিন তোরে কি করছে!! যে তুই এরকম ষাঁড়ের মত চিল্লাইয়া সারা বাড়ি মাথায় তুলছোস!”

মিসেস রেহেনার গলার আওয়াজ পেয়ে পাশ ফিরে তাকায় মিশরাত। বাকি সবাইকেও চোখে পড়ে তার। তাই কোনো রকম ভনিতা না করে সোজাসুজি বলে উঠে,

– ” দেখো ফুপি!
তোমার ছেলেকে আমি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলেছি!
আর তোমার ছেলে কি বলেছে সেটা তুমিই না হয় উনার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিও।
অসভ্য কোথাকার!!”

-” এই ছেমড়ি! তোর তো সাহস কম না তুই আমার পোলারে অসভ্য কছ! রবিন তোর লগে কি অসভ্যতামি‌ করছে!!”
মিসেস রেহানা গর্জে উঠলেন। পাশে আজীজ সাহেবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবারো বলে উঠেন,

– ” ভাবছিলাম এইবার তোর বাড়ি আইসা সব ঝামেলা মিটে যাইবো। কিন্তু তোর মাইয়ার ব্যাবহার দেইখা আমি আর এক সেকেন্ড ও এই বাড়িতে থাকমু না! আমি আমার পোলারে নিয়া এখনি চইলা যামু!”

মিসেস রেহানা ভেবেছিলেন আজীজ সাহেব তাকে আটকাবেন। যত যাই হোক সে তার বোন হয়। কিন্তু তাকে চমকে দিয়ে আজীজ সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

– ” ঠিক আছে আপা! আমি ড্রাইভারকে বলবো তোমাদের বাসায় পৌঁছে দিতে। তোমরা না হয় প্যাকিং শুরু করে দাও।”

ভাইয়ের কাছ থেকে এমন‌ অপ্রীতিকর মন্তব্য মোটেও আশা করেন নি মিসেস রেহানা বেগম। অপমান সহ্য করতে না পেরে রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন তিনি। পেছন পেছন রবিন ও বেরিয়ে গেল। তবে যাওয়ার পূর্বে মিশরাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গেল।

মিসেস রেহানা আর রবিন চলে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মিশরাত‌। মেহের আর মিসেস ইবনাত সহ সবাই মিশরাতের কাছে এসে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো। কিন্তু মিশরাত মুখ ফুটে কিছু বললো না এই ভেবে যে আজীজ সাহেব আর রেহানা বেগমের সম্পর্কটা একেবারে না নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে মিস্টার আজীজ রবিনের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত থাকায় কিছুটা আঁচ করতে পারলেন। তিনি চোখের ইশারা দিতেই সবাই আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়ে আসে। সবাই চলে যেতেই মিস্টার আজীজ সাহেব মিশরাতের পাশে গিয়ে বসলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে উঠেন,

– ” আমি জানতে চাইবো না রবিন তোকে কি বলেছে আর তোকেও ওসব কথা মনে করাতে চাই না। মাথা থেকে ওসব ঝেড়ে ফেলো।
আগামীকাল তোমার বিয়ে। তোমার নতুন জীবনের শুরু। আর হ্যাঁ আমি জানি তুমি কোথাও না কোথাও এ বিয়েতে রাজি না। তবে হ্যাঁ একটা সময় পর তুমি বুঝতে পারবে আমার এ সিদ্ধান্ত টা ভুল ছিল না।
সো এসব আজেবাজে চিন্তা না করে তুমি তোমার কালকের মতো স্পেশাল দিন নিয়ে কনসান্ট্রেট করো।
আর ঘুমিয়ে পড়ো। শুভ রাত্রি।”

বাবার মুখে এসব কথা শুনে অনেক টা চমকে উঠে মিশরাত‌। সে যে বিয়েতে রাজি না এটা তার বাবা জানতো! কিন্তু কিভাবে? বাবা বলে? হয়তো তাই!

বধূ বেশে মেহেরের সাথে নিচে হলরুমে উপস্থিত হলো মিশরাত‌। বিয়ের সাজে মিশরাতকে যেন অপরুপ সুন্দর দেখাচ্ছে। ফর্সা শরীরে পার্পেল রঙের লেহেঙ্গা টা ফুটে উঠেছে। খোঁপা করে রাখা চুলের মধ্যে সাদা গাজরা সুন্দর করে লাগানো। কপালে সিঁথির মধ্যে টিকলি আর কপালের মধ্যখানে একটা পার্সেল রঙের টিপ। স্নিগ্ধ কেও কম সুন্দর লাগছে না। পড়নে শেরওয়ানি, মাথায় আভিজাত্য পাগড়ি,হাতের কব্জিতে ঘড়ি। মুখের মধ্যে রয়েছে সৌজন্যমূলক হাসি। তবে ভেতরে ভেতরে যে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তা সে ছাড়া আর কেইবা জানে!!

মিশরাতকে এনে স্নিগ্ধর সামনে বসানো হলো। পাশেই কাজী সাহেব সহ সবাই অধীর আগ্রহে মিশরাতের অপেক্ষা করছিলেন। মিশরাতকে সামনে উপস্থিত দেখে একবার চোখ তুলে তাকালো স্নিগ্ধ। সাথে সাথে চোখ আটকে গেল তার মিশরাতের চেহারার দিকে।
টানা টানা চোখ দুটোতে গাঢ় কাজল, ঠোঁটের নিচ বরাবর কালো রঙের তিল তাকে আকর্ষণ করছে। মিশরাত আর স্নিগ্ধর চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিল স্নিগ্ধ। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।

– ” নো নো স্নিগ্ধ! এগুলো কি ভাবছিস তুই! জাস্ট কন্ট্রোল অফ ইউর মাইন্ড!
এটা বিয়ে না, শুধুমাত্র একটা ডিল!”

কাজী সাহেব প্রথমে স্নিগ্ধকে কবুল বলার জন্য বললে স্নিগ্ধ একটা দম ফেলে বলে দেয় ‘কবুল’। এরপর আসে মিশরাতের পালা!
– “বলো মা কবুল!”
মিশরাত একপলক বাকি সবার দিকে তাকালো। মিসেস ইবনাত আর মিস্টার আজীজ চোখের ইশারায় কবুল বলতে বললে মিশরাতও ছোট্ট করে একটা দম নিয়ে বলে উঠে,
– ” কবুল!”
এরপর সবাই একসাথে বলে উঠে‌ ‘ আলহামদুলিল্লাহ’। কাজী সাহেব কাবিননামা স্নিগ্ধের দিকে এগিয়ে দিলেন স্নিগ্ধ গটগট করে সাইন করে দেয়। মিশরাতের সামনে কাজী সাহেব কাবিননামা তুলে দিয়ে বলে,
– ” মা এখানে সই করে দিন!”
মিশরাত কাবিননামার দিকে একপলক তাকিয়ে আলতো হাসলো। এটা বাকি সবার কাছে কাবিননামা হলেও তার কাছে তার বিয়ের ডিলের কাগজ। যেটাতে সাইন করার মাধ্যমেই স্নিগ্ধ আর সে একটা ডিল কনফার্ম করবে। ছোট একটা শ্বাস ফেলে কলম হাতে নিয়ে কাবিননামায় স্বাক্ষর করার স্থানে গুটিগুটি অক্ষরে লিখে দিলো মিশরাত।

বিয়ের পর্ব শেষ হতেই শুরু হয় বিদায়ের পালা। একে একে সবাইকে জড়িয়ে ধরে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে মিশরাত‌। বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয় সে। ইরফান ও অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল আটকে রেখেছে। এতোটা বছর নিজের বোনকে আগলে রেখেও আজ তাকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। মেহেরও শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। যত যাই হোক মিশরাত ছিল তার সবচেয়ে প্রিয়। ভালোবাসার মানুষ যাকে নির্দ্বিধায় সব শেয়ার করা যেত। মিস্টার আজীজ নিজেকে শক্ত রেখে মিশরাতকে জোর করে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন। গাড়িতে মিশরাতকে বসানো হলেই স্নিগ্ধ চোখের ইশারায় মিস্টার আজীজ কে বোঝালো যে সে তার মেয়েকে আগলে রাখবে।
ড্রাইভার কে বলে গাড়ি ছুটে চলে তার আপন গতিতে।

ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করার আওয়াজ কানে যেতেই স্নিগ্ধ পাশ ফিরে তাকালো মিশরাতের দিকে। কান্না করার ফলে চোখের কাজল অনেকটা লেপ্টে গিয়েছে। যা চোখে পড়তেই ক্রমশ এক অজানা ঘোরে চলে যেতে থাকে স্নিগ্ধ। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় সে। পেছন থেকে টিস্যুর বক্স এনে মিশরাতের সামনে ধরতেই মিশরাত মাথা তুলে একবার স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে টিস্যু নিয়ে চোখ মুছতে থাকে।

ঘন্টা দুয়েক পর গাড়ি এসে থামে চৌধুরী ভিলার সামনে। সুবিশাল বাড়ির নকশা টাও দারুন আকর্ষণীয়। যে কেউ দেখলেই এক মুহূর্তের ভেতর পছন্দ করে ফেলবে।
গাড়ির দরজা খুলতেই মিশরাত বেরিয়ে আসে। স্নিগ্ধ চোখের ইশারা দিতেই হাঁটা শুরু করে ভেতরের দিকে। মিসেস ইয়ামিন যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন মিশরাত আর স্নিগ্ধের জন্য। মিশরাত দরজার সামনে দাড়াতেই তিনি পরম ভালোবাসায় বরণ করে নিলেন মিশরাতকে। মিশরাতও মুখে হাসি ঝুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর মিসেস ইয়ামিন মিশরাতকে নিয়ে উপরে চলে গেলেন। স্নিগ্ধর রুমে প্রবেশ করতেই নাকের মাঝে হরেক রকম ফুলের ঘ্রাণ ভেসে এলো মিশরাতের নাকে। সুসজ্জিত রুমটা তার কাছে বেশ লাগলো। রুমটা বেশ পরিপাটি ও। মিসেস ইয়ামিন মিশরাতকে রুমে রেখে নিচে চলে আসলেন। মিসেস ইয়ামিন চলে যেতেই মিশরাতের চোখ পড়লো লাগেজের দিকে।

প্রায় এক দেড় ঘন্টা পর রুমের দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে স্নিগ্ধ। রুমের ভেতর ঢোকার সাথে সাথে চোখ পড়ে মিশরাতের দিকে। কোমর অবধি লম্বা চুলগুলো ছাড়া আর যেগুলো বাতাসের সাথে খেলা করছে। মিশরাত পেছন দিকে ঘুরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে লেহেঙ্গা ছেড়ে একটা জর্জেটের সালোয়ার কামিজ।
হঠাৎ কারো গলা খাঁকারি দেয়ার আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই পেছনে ফিরে মিশরাত।

– ” কি ব্যাপার তুমি ঘুমাও নি এখনো!
রাত তো অনেক হতে চললো। ঘুমিয়ে পড়ো।”
সোজাসাপ্টা ভাবে বলে উঠে স্নিগ্ধ।

– ” নতুন জায়গায় এডজাস্ট হতে একটু সময় লাগে আমার, তাই ঘুম আসছে না!”
মিশরাত বলে উঠে।

মিশরাতের কথায় ছোট করে ওহ্ বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। দশ পনেরো মিনিট পর শেরওয়ানি ছেড়ে একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে বেরিয়ে আসে স্নিগ্ধ।

– ” আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়ো, সারাদিনে অনেক ধকল গিয়েছে!”
বলেই বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো স্নিগ্ধ।

মিশরাত ঘড়ির দিকে তাকালো। আসলেই অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে। তাই চুপটি করে স্নিগ্ধের পাশে যেয়ে শুতে নিলে স্নিগ্ধ শোয়া থেকে এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে মিশরাত।

– ” কি ব্যাপার এভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন কেন! কি হয়েছে?”
মিশরাতের কথায় ভড়কে উঠে স্নিগ্ধ। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে উঠে,

– ” তুমি কি আমার সাথে ঘুমাবে নাকি!”

স্নিগ্ধর কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল মিশরাত। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

– ” তো আমি কোথায় ঘুমাবো? এই রুমে তো আমি দুটো খাট দেখতে পারছি না!
এক মিনিট। বাই চান্স আপনি আমাকে সোফায় ঘুমোতে বলছেন না তো!
লিসেন এটা কোনো হিন্দি সিরিয়াল না যে বিয়ের রাতে আপনি বলবেন আমি বিছানায় না সোফায় ঘুমাবো! সেটা হবে না!
চুপচাপ এ জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ুন এখানে!
আর হ্যাঁ ডিসট্যান্স মেনে ঘুমাবেন।
যত্তসব!”

বলেই ঠাস করে পুনরায় বিছানায় শুয়ে পড়লো মিশরাত। আর স্নিগ্ধ এখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। মেয়েটা তাকে কতো কিছু শুনিয়ে দিলো। যেখানে সবাই ওর সামনে গলা উঁচু করে কথা বলতে ভয় পায় সেখানে এই পুঁচকে মেয়ে তাকে শাসাচ্ছে। ভাবা যায় এগুলো!

– ” স্নিগ্ধ শেষমেশ এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলি যে কি না তোকেই শাসায়‌। কপাল পুড়লো তোর তাহলে এবার।
আস্ত একটা ইডিয়ট!!”

বিড়বিড় করে স্নিগ্ধও মিশরাতের‌ পাশটায় শুয়ে পড়লো আর কিছুক্ষণ বাদেই তলিয়ে গেল ঘুমের দেশে!…………….
গল্পের নামঃ #লাভ_জার্নি
লেখনিতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

৫.

মুচকি হেসে মহুয়া মোর্শেদ চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলল,

-“বাবা হওয়ার দায়িত্ব পালন করেছো?”

মোর্শেদ চৌধুরী কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলে।মহুয়া আবারো হাসে,নিজের ভাগ্যের উপর তাচ্ছিল্যের হাসি। তার মা যাওয়ার সাথে সাথে যেন তার জীবনের সব সুখ-শান্তি নিয়ে গেছে। মহুয়া চলে যেতে নিলে মোর্শেদ চৌধুরী বলে উঠেন,

-“আমার উপর তোমার অনেক রাগ তাই না ‘সুঁচি’?

‘সুঁচি’ নামটা শুনে মহুয়া কেঁপে উঠে। এই নামটা ঠিক কতবছর আগে শুনেছে ঠিক মনে নেই।সুঁচি নামটা শুধুমাত্র তার মা-বাবার জন্য,তারা ছাড়া মহুয়াকে অন্যকেউ এই নামে ডাকে না!মহুয়া মলিন হেসে বলে,

-“আমি কে তোমার উপর রাগ করার?আর কোনটার জন্য রাগ করবো? আমার শৈশব নষ্ট করার জন্য নাকি বাবা থেকেও আমায় অনাথের মতো বড় হতে হয়েছে এজন্য?”

-“আমি তো জানি সব আমার ভুল, নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়,সেটা যে কোন কিছুর ক্ষেত্রেই হোক।তেমনি তোমার মাকে অতিরিক্ত ভালোবাসতাম আমি,যার ফলে তার চলে যাওয়াতো আমি এতটা অগোছালো হয়ে গিয়েছি।তোমার কথা মনেই ছিল না,শুধুমাত্র টাকা থাকলেই যে সবকিছু হয়না তা আমি ভুলে গিয়েছিলাম।”

মহুয়া কিছু না বলে চুপ করে থাকলো। মহুয়াকে চুপ থাকতে দেখে মোর্শেদ চৌধুরী আবারো বলতে শুরু করলেন,

-“এসব কথা ছাড়ো।তোমার চাচী মনে হয় তোমায় কাল রাতে জানিয়েছিলো তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।ছেলে তোমার সাথে আজ দেখা করতে চাইছে,তুমি নিশ্চয়ই ফ্রি আছো।তাই আজ বিকালের দিকে দেখা করে এসো।”

-“তুমি আমাকে ভুলে গেলেও, আমি তোমাকে বাবা হিসেবে সবসময় মনে রেখেছি।কোনদিন তোমার আদেশ অমান্য করিনি,তেমনি আজকেও করব না।”

মহুয়া ধীর পায়ে কথাগুলো বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে এলো।মোর্শেদ চৌধুরী পেছন থেকে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন।আজ তার কিছু বলার নেই।নিজের ভুলের জন্য সারাজীবন এর বোঝা বইতে হবে।

🍁

-“আদনান,,এই আদনান।এতবার ডাকছি কানে যায়না নাকি?”

শিল্পী খাতুন চেঁচিয়ে আদনানকে ডাকছে। কিন্তু আদনানের কোন খবর নেই। কিছুক্ষণ পর কোথা থেকে হুড়মুড়িয়ে রুমে এসে আদনান বলে উঠল,

-“আম্মু ডাকছো আমাকে?”

-“কানে হেডফেন লাগায় রাখলে শুনবি কেমনে?এদিকে আয়,সোফায় বস।”

আদনান সোফায় গিয়ে বসলে শিল্পী খাতুন বলতে শুরু করেন,

-“তোর বাবা কিছুক্ষণ আগে মহুয়ার বাবার সাথে কথা বলেছিলো।আমি বলেছি আজ বিকালে দেখা করতে। তোর সময় হবে তো?”

-“মহুয়া-টা কে?”

-“আরে,তোর সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে।তুই আজকে বিকালে যাবি কিন্তু।”

আদনান একটা হাই তুলে বলল,

-“আচ্ছা যাবোনে,,তুমি বাবাকে বলো আমায় মেয়ের বায়োডাটা মেইল করে দিতে।”

-“তুই কি এখন মেয়ের যোগ্যতা দেখবি?”

-“আরে যোগ্যতা দেখব এটা কখন বললাম।এমনি জানার জন্য চাইছি।”

-“আচ্ছা পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

আদনান রুম থেকে বেরিয়ে আলস্য ভঙ্গিতে নিজর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।কিছুসময় মেসেজের ল্যাপটপটা হাত বাড়িয়ে কাছে আনলো।মেইল খুলে দেখতে পেল মাহমুদ খান মেয়েটার বায়োডাটা পাঠিয়েছে। মহুয়ার বায়োডাটা দেখে আদনান থমথমে ভাব দেখা দিলো।বিড়বিড়িয়ে বল উঠলো, ‘মেয়েতো দেখি আমার চেয়েও ব্রিলিয়ান্ট, এত কম বয়সের মধ্যেই বিদেশে কোর্স কমপ্লিট করে এসে পড়েছে!মাই গড!”

🍁

নিজের কেবিনে মাথা চেপে ধরে বসে আছে মহুয়া,চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে ।কিছু সময় আগের ঘটনা এখনো চোখে ভাসছে। কিছুক্ষণ আগে কেবিন থেকে বেরনোর সময় একটা বিভৎস পোস্টমর্টেম করা লাশ তার চোখের সামনে পড়ে যায়।মহুয়া নিজের ভুলেই এটা হয়েছে।কিন্তু এখন মাথা থেকে বের হচ্ছে না ঘটনাটা। নিজের মায়ের মৃত্যুর পর থেকে লাশ নামক শব্দটা শুনতে পারে না সে। কাটা-ছিড়া,রক্তারক্তি প্রচুর পরিমাণে ভয় পায়।চোখের সামনে কাপড় লাশ দেখলেই রাতে ঘুমাতে পারে না,সেখানে আজকে..! এত পরিমাণ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও মহুয়া একজন ডাক্তার হয়েছে,,সাধারণ ডাক্তার না।একজন সাইক্রিয়াটিস্ট,শুধুমাত্র তার মায়ের স্বপ্নপূরণের জন্য।
মহুয়ার এসিস্ট্যান্ট সুপ্তি পেছন থেকে তাকে জিজ্ঞেস করল,

-“ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?স্যারকে ডাকবো?”

মহুয়া উত্তর দিল না।সুপ্তি দৌড়ে গিয়ে মোর্শেদ চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে আসলো। মিনিট খানেক পরই মোর্শেদ চৌধুরী হতদন্ত হয়ে মহুয়ার কাছে আসেন। মহুয়ার অবস্হা দেখে আঁতকে উঠেন তিনি।পুরো শরীর ঘেমে গিয়েছে,চোখ পুরো লাল হয়ে গেছে।মহুয়াকে নিজের হাত দিয়ে আগলে বলে উঠেন,

-“সুঁচি মা,,তুমি ঠিক আছো?খারাপ লাগছে?”

-“বা..বাবা আম্মু,,,আ..আম্মু…!”

আর বলতে পারলো না মহুয়া সেখানেই অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ল।মোর্শেদ চৌধুরী তাড়াতাড়ি সুপ্তিকে ডাক্তার ডাকতে বললেন।নিজে একজন বিখ্যাত ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও তিনি আজ কিছু করার সাহস পাচ্ছেন না।মহুয়াকে ইমারজেন্সি কেবিনে সিফ্ট করা হলো।এক জুনিয়র মহিলা ডাক্তার মহুয়াকে চেক করতে গেলেন। কিছুসময় পর তিনি বেরিয়ে এসে মোর্শেদ চৌধুরীকে অসহায় কন্ঠে বলে উঠেন,

-“স্যার আপনি তো বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই যে ম্যামের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।তিনি পৃরচুর ঘুমের ঔষধ আর নাপা খেত যার ফলে সমস্যা বিকট আকার ধারণ করেছে।এখনই অপারেশন করাতে হবে,নাহলে আপনি জানেন যে ম্যামকে বাঁচানো যাবে না।”

মোর্শেদ চৌধুরী দুর্বল স্বরে বললেন, “যা করার করো,আমার সুঁচিকে শুধু বাঁচিয়ে দাও।”

ডাক্তার ধীর কন্ঠে বললে, “অপারেশন করলে বাঁচার আশা ৪০% মাত্র!”

চলবে,,

গল্পের রেসপন্স একেবারেই নেই।আশাহত আমি,,শেষ করে দিব দ্রুত ইনশাআল্লাহ।
কাল না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। চাইলেও বড় করে দিতে পারছি না কারন আগামীকাল স্কুলে ১৫টি অয়াসাইনমেন্ট+ফিডব্যাক এক্সামের কপি জমা নিবে এ অবস্হায় এর বেশি লিখা সম্ভব নয়।গল্পের নামঃ #লাভ_জার্নি
লেখনিতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

৬.

মহুয়ার অপারপশন শুরু হয়ে গিয়েছে।মোর্শেদ চৌধুরী সাহস করতে পারেননি নিজ হাতে অপারেশনের জন্য। তাই অন্যান্য ডাক্তাররাই গিয়েছে অপারেশনের জন্য। ডাক্তারের কথাতে বোঝা যায় মহুয়ার সোশ্যাল ফোবিয়া আছে,যাকে বলা হয় ছোট বেলার কোন খারাপ ঘটনার সম্মুখীন হলে কিংবা কোন কারনে অত্যাচারিত হলে সোশয়াল ফোবিয়া দেখা যায়।ছোটবেলায় মহুয়া নিজের মাকে রক্তাক্ত অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখেছিলো যা তার মস্তিষ্ক সে সময় ঠিকভাবে নিতে পারেনি।আবার যখন তার মাকে সাদা কাফনের কাপড়ে পেঁচিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখনও মহুয়া দেহটি দেখে প্রচুর পরিমাণে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।যার ফলে তার মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব পড়েছে,এবং ধীরে ধীরে এটা ফোবিয়ায় পরিণত হয়েছে।ছোট থাকতে তাকে বুঝালে হয়তবা ফোবিয়াটা এতটা মারাত্নক হয়ে যেত না।কিন্তু আজকে পোস্ট মর্টেম করা লাশ দেখে প্রচুর পরিমাণে ভয় আর টেন্সের কারনে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।আর লাইফ রিক্সের-ও কারন আছে।মহুয়ার অ্যাজমা,মাইগ্রেন, সাইনাসের প্রবলেম আছে,যার ফলে কিছুটা লাইফ রিক্স-ও রয়েছে।

অপারেশন রুমের বাহিরে থাকা লাল আলোটি জ্বলজ্বল করছে।মোর্শেদ চৌধুরী হাতের মধ্যে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছেন। তার ভুলের জন্য মেয়েটার জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে গেছে।শুধুমাত্র একটা ভুল সিদ্ধান্ত!
মোর্শেদ চৌধুরী বারবার অটির দিকে তাকাচ্ছে।এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তার নিজেকে এতটা অসহায় লাগছে। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। কিন্তু বাবাদের কাঁদতে নেই! আচ্ছা,সে কি কোনদিন বাবা হতে পেরেছিল নাকি?সে তো কোন দায়িত্ব-ই পালন করেনি,তাহলে কি করে নিজেকে বাবা দাবি করছে!
ফোনের রিংটোনের শব্দে চোখের কোনে থাকা পানিটা মুছে ফোন বের করে।মাহমুদ রহমানের নাম্বার দেখে
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফোনটা ধরে ধরা গলায় বলে উঠে,”হ্যালো,মাহমুদ।”
মাহমুদ রহমান ওপাশ থেকে অবাক গলায় বলে উঠেন,”গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? কিছু হয়য়েছে নাকি?”
মোর্শেদ চৌধুরী আবারো ধরা গলায় বলেন,”মহুয়ার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।আমার ভুলের কারনে মেয়েটা প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছে।”
মাহমুদ রহমান ওপাশে হতভম্ব হয়ে গেছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।মহুয়ার সবকিছু জেনেই আদনানের সাথে তিনি বিয়ে ঠিক করেছিলেন।ওয়াদাও করেছিলেন মোর্শেদ চৌধুরীকে বিয়ের ব্যাপারে।এখন মহুয়ার এমন অবস্হার কথা শুনে তিনি কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।
মোর্শেদ চৌধুরী বোধহয় মাহমুদ রহমানের অবস্হা বুঝতে পেরেছেন।বলে উঠেন,”বিয়ের ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করতে হবে।তুমি যা চাইবে তাই হবে।”
মাহমুদ রহমান ওপাশ তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “আরে না,বিয়ে ভাঙবো কেন।মহুয়া মা কোন হসপিটালে আছে তাড়াতাড়ি বলো।আমি আসছি।”
মোর্শেদ চৌধুরী হাসপাতালের নাম বলে ফোন কেটে দিলেন। কেন ভালো মানুষগুলোরই দুঃখ পেতে হয় সবসময়!

🍁

মাহমুদ রহমানকে তাড়াহুড়ো করে বেরোতে দেখে শিল্পী খাতুন রান্না রেখে তার দিকে এগিয়ে এলো। শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বললো,”কি হলো কোথাও যাচ্ছ নাকি?”
মাহমুদ রহমান তড়িঘড়ি করে পান্জাবি পড়তে পড়তে বললেন,”আরে মহুয়া আছে না।মেয়েটার আজ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে নাকি!মোর্শেদকে ফোন দিলাম সে বলল।
শিল্পী খাতুন বলে উঠলপন,”আমিও যাবো।”
মাহমুদ রহমান বাধা দিয়ে বললেন,”আরে না তোমার যাওয়ার দরকার নেই।তুমি থাকো।”
শিল্পী খাতুন তার কথা শুনলেন না।মাহমুদ রহমানকে অপেক্ষা করতে বলে দৌড়ে বোরকাটা পড়ে আসলেন।অগত্যা আর কি করার। বাধ্য হয়ে মাহমুদ রহমান শিল্পী খাতুনকে নিয়েই হসপিটালে এলেন।

🍁

হাসপাতালের পরিবেশ অনেকটাই বিচিত্রময়। এইতো কেউ স্বজন হারানোর শোকে কাঁদছে,আবার কেউ বাড়ি ফিরে যাওয়ার খুশিতে হাসছে।কিছু মানুষ অপেক্ষারত আছে নিজের প্রিয়জনের সুস্হতার খবর পাওয়ার জন্য,আবার কেউ অসুস্হ রোগী রেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।কেউ কেউ নিজের সিরিয়াল নাম্বার নিয়ে তর্কাতর্কি করছে,আবার কয়েকজন হাই তুলে তাদের ঝগড়া দেখছে।আবার অসুস্হ কিছু মানুষ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে,তাদের প্রিয়জন তাকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছে।আবার দেখা যাচ্ছল অটির সামনে এক অপেক্ষারত হবু পিতা তার সন্তানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।ডাক্তার কিংবা নার্স বের হওয়ার সাথে সাথেই তার কাছে গিয়ে খবর জানতে চাইছে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার শিশুটিকে নিয়ে বের হলে ছলছল চোখে কাঁপা হাতে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পিতা হওয়ার সুখ অনুভব করছে।সেই দৃশ্যটি আবার একদল মানুষ আগ্রহ ভরে দেখছে।

আরোআধা ঘন্টা কেটে গেছে।অপারেশন থিয়েটারে মহুয়ার অপারেশন চলছে।মোর্শেদ চৌধুরী আগের মতো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।ঠিক সেই সময়ই শিল্পী খাতুন ও মাহমুদ রহমান হসপিটালে ঢুকলেন।রিসেপশনে গিয়ে মহুয়ার নাম বলতেই সেখানে বলে দিল কোথায় যেতে হবে। আর সময় নষ্ট না করে তারাও চলে গেলেন উল্লেখিত তালায়।
অপারেশন থিয়েটারের সামনে মোর্শেদ চৌধুরীকে দেখে মাহমুদ রহমান তার দিকে এগিয়ে যায়। তার পিছু পিছু শিল্পী খাতুন-ও আসতে থাকে। মোর্শেদ চৌধুরীর পাশে বসে তাকে ডাক দিলে তিনি মাথা তুলে থাকান। মাহমুদ রহমান মোর্শেদ চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেন,”এসব কিভাবে হলো?”
মোর্শেদ চৌধুরী গলা ভিজিয়ে বললেন,

-” মহুয়ার মা মারা যায় যখন ওর বয়স ছয় হতে চললো।সিড়িতে রক্তাক্ত অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখে আর তার কাফনের কাপড়ে মোড়ানো লাশ দেখে তার মনে লাশ নিয়ে বিভিন্ন ধারণার জন্ম হয়।একসময় ধীরে ধীরে তা মারাত্নক ফোবিয়ার রূপ নেয়।দূর থেকে লাশবাহী গাড়ি দেখলেই ভয়ে-আতঙ্কে জমে যেত।আজকে ভুলবশত অন্যরুমে গিয়ে পোস্ট মর্টেম করা লাশ তার চোখের সামনে পড়ে যায়।ফলে অতিরিক্ত ভয় পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেছে।”

মাহমুদ রহমান ও শিল্পী খাতুন কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলপন।কৌতুহল কাটাতে না পেরে শিল্পী খাতুন প্রশ্ন করে বসলেন,”কিন্তু ভাই,আপনি তো চাইলে মহুয়ার ফোবিয়ার চিকিৎসা করাতে পারতেন।করাননি কেন?”
মোর্শেদ চৌধুরী লজ্জিত মুখে মাথা নিচু করে ফেললেন।মাহমুদ রহমান পরিস্হিতি বুঝে নিজের স্ত্রীকে অন্য দিকে টেনে নিয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ পর তারা ফিরে এলে শিল্পী খাতুন মোর্শেদ চৌধুরীকে বলেন,

-“আমি আপনার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি ভাই।কিন্তু এখানে আপনারই দোষ,মহুয়া ছেট থেকেই পুরোপুরি একা বড় হয়েছে।মা না থাকাটা একটা সন্তানের জন্য অনেক কষ্টের,আবার সেই সময় সে আপনাকেও পাশে পায়নি।জানিনা নিজেকে কিভাবে সামলিয়েছে সে!”

মোর্শেদ চৌধুরী কিছু না বলে মাথা নিচু করে আগের মতো বসে রইল।মাহমুদ খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিল্পী খাতুনের পাশে গিয়ে বসে রইলেন।এই মূহুর্তে তাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই নেই।

🍁

আদনান নিজের রুমে বসে মনের শান্তিতে ভিডিও গেমস খেলছে। আব্দুর রহমান কিছুক্ষণ আগে পার্কে গিয়েছে হাঁটাহাঁটির জন্য।হুট করে কলিংবেলের শব্দ পেয়ে আদনান খেলাটা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দরজা খুলতে গেল। ‘আজ এত তাড়াতাড়ি দাদু এসে পড়ল,’-ভাবতে ভাবতে আদনান দরজা খুলতে গেল।
দরজা খুলার সঙ্গে সঙ্গে এক নারীমূর্তি তাকে ঝড়ের বেগে জড়িয়ে ধরলো।

চলবে,
মতামতের আশা করছি ❤️গল্পের নামঃ #লাভ_জার্নি
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

৭.(নতুন পর্ব)

নিজের রুমে চোখ বন্ধ করে বসে আছে মহুয়া।পড়নে তার লাল শাড়ি,চোখে গাড় কাজল আর হাত ভর্তি চুড়ি।ছেড়ে রাখা চুলগুলো বাতাসে উড়।কিছুদিন আগে হসপিটাল থেকে সুস্হ হয়ে ফিরে আসার পর নিজের বাবার এক অন্যরূপ দেখতে পেয়েছে সে।তার বারবার মনে হচ্ছিল এত সুখ তার কপালে সইবে না,সবই স্বপ্ন।কিন্তু না,সেগুলো বাস্তব ছিল।মালতির ডাকে মহুয়া নিজের ভাবনা থেকে বের হলো। দরজার বাহির থেকে মহুয়াকে মালতি চেঁচিয়ে ডাকছে খাওয়ার জন্য।
মহুয়া দৌড়ে নিচে গেলো,সে জানে মোর্শেদ চৌধুরী তার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছে।
মহুয়াকে শাড়ি পড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নামতে দেখে মোর্শেদ চৌধুরী তাকে ধমক দিয়ে বললেন,

-“এই সুঁচি,শাড়ি পড়ে এভাবে কেউ লাফিয়ে লাফিয়ে নামে।পড়ে গেলে কি হতো?”

মহুয়া বাবার ধমক শুনে মুখ ফুলিয়ে মোর্শেদ চৌধুরীর থেকে দূরের চেয়ারে বসে পড়ল। মেয়ের অভিমান দেখে মোর্শেদ চৌধুরী মুচকি হাসলেন।মেয়ের সামনের চেয়ারে বসে মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলেন।মহুয়া নাক ফুলিয়ে বলল,

-“আমি খাবোনা,তোমারটা তুমি খাও।”

মোর্শেদ চৌধুরী মহুয়ার কথার উত্তরে বললেন,

-“আমার মনে আজ না খেয়েই অফিসে যেতে হবে।মালতি তুমি সব খাবার-দাবার গুছিয়ে ফেলো।আমি বের হচ্ছি।”

মহুয়া তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “হয়েছে আর ইমোশোনাল ড্রামা করতে হবে না,দাও খায়িয়ে দাও।”
মোর্শেদ চৌধুরী হেসে মহুয়াকে খায়িয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলেন।দুজন একসাথেই আজ হসপিটালের জন্য বের হলো।মহুয়া গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মোর্শেদ চৌধুরী তার পাশে বসে আছে।মোর্শেদ চৌধুরী গাড়িতে বসে মহুয়াকে বলল,
-“তোমার কিন্তু আজ ছেলেটার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা।মনে আছে তো?”

মহুয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“সকাল থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ বার এই কথাটা বলেছ বাবা।”

মোর্শেদ চৌধুরী অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বললেন,
-“তাই নাকি?মনে নেই তো!”

মহুয়া হেসে বলল,
-“বাদ দাও।তোমাকে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিল। আম্মুর কিভাবে মারা গিয়েছে তা তো তুমি জানো।”

মোর্শেদ চৌধুরীর মুখ থমথমে হয়ে এলো।ধীর গলায় বলল,
-“জানি তো,অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে।”

মহুয়া মৃদু হাসি দিয়ে বলল,
-“রক্তক্ষরন হলেই তো হবে না।আম্মু প্রেগন্যান্ট ছিল,প্রেগন্যান্সিতে কিছু সমস্যা থাকার কারনে বাচ্চা মৃত হয়ে জন্ম নেয়।কিন্তু আম্মু সিজারের পর ঠিকই ছিল,,তবে একটু দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যার কারনে স্যালাইন দিতে হয়েছিল।সেই স্যালাইনের সাথে আম্মুকে লিকুইড রক্ত-ও দেয়া হয়েছিল।”

মোর্শেদ চৌধুরী আঁতকে উঠে বললেন,
-“তুমি কিভাবে জানলে এসব?”

মহুয়া স্লান হেসে বলল,
-“রিপোর্ট দেখে।আম্মুর বেবি হওয়ার চার ঘন্টা পর মারা যায়।সাধারণত বেবি হলে প্রচুর ব্লাড লস হয়,আর অনেকের Blood Ejaculate বন্ধই হয়না।তখন ব্লাড জমাট বাঁধতে দিতে হয়।কিন্তু সেই সময় যদি ব্লাডকে আরো লিকুইড করে দেওয়া হয় মানে পুরো পানির মতো,তাহলে তো পেটে রক্তের পুকুর হয়ে যাবে।আর সেই মানুষটির মৃত্যু নিশ্চিত,,কি তাই না?”

মোর্শেদ চৌধুরী অবাক দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,”হে,তাহলে যেকোন পেশেন্টই মারা যাবে।”

মহুয়া এবার বলল,

-“ঠিক আম্মুকেও এভাবে মেরে ফেলা হয়েছে বাবা,,আম্মুকে এরকম নির্মম ভাবে কষ্ট দিয়ে মেরেছে চাচিরা।”

মোর্শেদ চৌধুরী ধমকে উঠলেন,
-“কি সব আজগুবি কথা বলছো তুমি সুঁচি,মাথা ঠিক আছে তোমার?তোমার চাচিরা কেন এরকম করতে যাবে?”

মহুয়া কিছু না বলে মোর্শেদ চৌধুরীর হাতে একটা রিপোর্ট দিল যাতে স্পষ্ট লিখা আছে মহুয়ার মাকে এক্সট্রা রক্ত দেওয়া হয়েছে এবং তার নিচে মহুয়ার চাচীর স্বাক্ষর।মোর্শেদ চৌধুরী কিছুক্ষণ ভাঙা গলায় সেদিকে চেয়ে থেকে বললেন,
-“কেন করলো ওরা এই কাজ?সম্পত্তির জন্য?”

মহুয়া গাড়ি হাসপাতালের সামনে থামিয়ে বললো,
-“ঠিক ধরেছ,সম্পত্তির জন্য।তাদের ধারণা ছিল আম্মু বেঁচে থাকলে তারা কখনো পুরো সম্পত্তি নিজেদের আওতায় নিতে পারবে না।তার জন্য এমন জঘন্য কাজ করেছে।ওদের শাস্তি নিয়ে চিন্তা করো না,যে সম্পত্তির জন্য ওরা এসব করেছে সেই সম্পত্তি অনেক দিন আগেই ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে।”

মোর্শেদ চৌধুরী সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললেন,
-“কি করেছ তুমি?”

মহুয়া ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
-“প্রতিটা বিভাগে একটা করে বৃদ্ধাশ্রম আর এতিমখানা বানিয়েছি।বৃদ্ধাশ্রম আর এতিমখানা গুলো একসাথে,যাতে কোন বৃদ্ধ পিতা-মাতা সন্তানের অভাব অনুভব না করে। আর কোন বাচ্চা তার মা-বাবার অভাব বুঝতেনা পারে।আমার মনে হয় আমি সফল-ও হয়েছি,তারা সবাই এখন আগের চেয়ে ভালো আছে।তাদের দিকে তাকাতেই তাদের মুখে ফুটে তৃপ্তির হাসিটুকু দেখে বুঝতে পারি তারা সুখে আছে।”

মোর্শেদ চৌধুরী চোখের জল লুকিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন।আজ তার মনে হচ্ছে,তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তানের পিতা।ছলছল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,দেখেছ রেখা (মহুয়ার মায়ের নাম) তোমার ছোট্ট সুঁচি আজ এতো বড় হয়ে গিয়েছে।তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করেছে,সবকিছুই আছে।শুধু তুমি নেই!”

🍁

কফিশপে বিরক্তি মুখে বসে আছে আদনান।গরমে বারবার পাঞ্জাবির কলার ঝাকাচ্ছে।সাধারণত এখনকার কফিশপগুলোতে এসি থাকে,কিন্তু এটাতে নেই। রাগে আদনান মনে মনে কফিশপের ম্যানেজারকে ভয়ংকর একটা গালি দিয়ে দিলো।এইসব মেয়ে মানুষ মানেই বিরক্তি।এইতো কয়েকদিন আগে রুহিকে এত অপমান করলো জড়িয়ে ধরার অপরাধে তাও আজ আবার ফোন দিয়েছিল! সামনে থাকা পানিটা এক ঢোকে শেষ করে দেওয়ার পর পরই তার চোখ পড়ল শাড়ি পড়িহিতা এক মেয়ের দিকে।এক ধ্যানে কিছুক্ষণ মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর বিড়বিড়িয়ে বলল,
-“দাদি কি আবার পৃথিবীতে নতুন করে যুবতী হিসেবে ল্যান্ড করলো নাকি!একে তো পুরো দাদীর মতো দেখতে।”

মেয়েটাকে নিজের টেবিলের সামনে আসতে দেখে বেশ অবাক হলো সে।মেয়েটা গম্ভীর স্বরে বলল,
-“আপনি মিস্টার আদনান রহমান, রাইট?”

গলা ঝেড়ে আদনান বলে উঠলো,
-“ইয়েস,আপনি কি মিস মহুয়া?”

মহুয়া মুচকি হেসে বলল,
-“জি,আমি কি বসতে পারি?”

আদনান হতভম্বের মতো মাথা নাড়লো।তার কেনো জানি সব অদ্ভুত লাগছে সব।আসার আগে ভেবেছিলো মেয়েকে তার পছন্দ হবে না,কিন্তু মহুয়াকে দেখার পর তার সব উলোটপালোট হয়ে গেছে।তার মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে এই মূহুর্তেই জোর করে বিয়ে করে ফেলা উচিত।
মহুয়া কথায় তার ধ্যান ভাঙে।তোতলানো স্বরে বলে,
-“কিছু বলছিলেন আমায়?”

মহুয়া ধীর কন্ঠে বলে,
-“জি,আপনাকেই বলছিলাম।এখানে খুব গরম,চলুন বাহিরে গিয়ে কথা বলি।আপনার কোন সমস্যা হবে না তো?”

আদনান হেসে বলে,
-“আরে না সমস্যা হবে না,চলুন।”

আদনান ও মহুয়া বাহিরে একটা টঙের দোকানে বসে পড়ে।এই টঙের দোকানে মহুয়া এর আগেও বহুবার এসেছে।অভ্যাসবশত বলে উঠে,
-“মামা একটা কড়া লিকারের এককাপ দুধ চা দাও তো,চিনি কিন্তু

মহুয়া বাক্য সম্পূর্ণ করার আগেই টঙের দোকানে থাকা লোকটা বলে উঠলো,
-“তিন চামচ চিনি তাই তো আম্মাজান?”

মহুয়া হেসে বলল,”হে মামা।”
আদনান তাদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।মহুয়া পাশ ফিরে তাকিয়ে আদনানকে দেখে জিভ কাটলো। থতমত স্বরে বললো,
-“সরি,আসলে আপনার কথা মনে ছিল না।আপনার জন্যও বানাতে বলছি,আপনি কি খাবেন?রং চা নাকি দুধ চা?”

-“আমি রং চা খাই,দুধ চা খাই না।”

মহুয়া বিড়বিড়িয়ে বললো,রং চা কেউ খায় নাকি!আমার তো ঘন দুধ দিয়ে চা খেতে ভালো লাগে।পারলে তো পুরো চিনির ডিব্বাই চায়েতে দিয়ে দেই।মহুয়াকে বিড়বিড় করতে আদনান নিজেই চায়ের কথা বলল। দোকানদার চা দিলে মহুয়া চা নিয়ে বলল,
-“পাশে একটা ছোট্ট বিল আছে,চলুন সেখানে যাই।এখানটায় কিছুক্ষণ পর লোকজন ভীর করবে।”

আদনান মহুয়ার কথামতো বিলে ধারের গিয়ে বসলো।বিকেল হতে চলেছে,সূর্য মামা মেঘের আড়ালে গিয়ে বসে আছে।নিরবতা ভেঙে আদনান বলল,
-“আপনি কি করেন?”

চায়ে চুমুক দিয়ে মহুয়া বলল,
-“আমি একজন সাইক্রিয়াটিস্ট।আরেকটা কথা, আমি আপনার অনেক ছোট তাই তুমি করে বললে খুশি হবো।”

আদনান হেসে বলল,
-“আচ্ছা, এবার আসল কথায় আসি।তোমার আমাকে পছন্দ হয়েছে?”

মহুয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-“কথাটা আমিও আপনাকে বলতে পারি,আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে?”

আদনান চায়ের কাপটা খালি করে গম্ভীর স্বরে বলল,
-“আমি কোনদিন প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাসী ছিলাম না।ক্যারিয়ার আর পরিবার ছাড়া ছাড়া অন্যকিছু আমার কাছে প্রাধান্য পায়নি।প্রিয়জনদের বলতে শুধুমাত্র পরিবারই বুঝি আমি।তোমাকে অভিনন্দন যে তোমারও আমার পরিবারে অভিষেক হতে যাচ্ছে,আদনান রহমানের ওয়াইফ হিসেবে।”

মহুয়া অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকালো।আদনান সেদিকে তাকিয়ে মহুয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
-“শুধুমাত্র মানুষের চিকিৎসা করালেই হবে না,আমার মনের ডাক্তার-ও হতে হবে।”

চোখ বন্ধ করে মহুয়া লাজুক হাসলো।তারা মেইন রাস্তায় আসতেই আদনান একটা রিকশা ডেকে মহুয়াকে সেখানে বসতে বললো।মহুয়া রিক্সায় উঠার আগ মূহুর্তে তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
-“সাধারণত প্রতিটা জার্নি বা ভ্রমণ অতি উত্তেজনা ও আমেজ নিয়ে শুরু হয়।সেই সাথে আবার জার্নিটার সমাপ্তিও ঘটে বিষাদের সাথে।আজ থেকে আমাদের লাভ জার্নি শুরু,তবে এ জার্নির শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।যতদিন বেঁচে থাকব,আমাদের জার্নি চলবে।”

🤍🌸

রাতের বেলা অনেকটা অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে গেলো মহুয়ার।বুঝতে পারলো আদনান তাকে শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে আছে।।আদনান আর মহুয়ার বিয়ের দুইবছর পেরোতে চলল,কিন্তু তাদের ভালোবাসাটা এখনো আগের মতোই আছে।মহুয়া ভেবে পায়না তার ভিতর কি এমন আছে যার ফলে আদনান তাকে এতটা ভালোবাসে। এখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সে পায় আদনান তার দিকে তাকিয়ে আছে,হয়তবা তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের ঘোরে আদনানকে বিড়বিড় করতে দেখে মহুয়া তার মুখের কাছে কান নিয়ে যায়।শুনতে পায় আদনান ঘুমের ঘোরে বলছ,
-“ভালোবাসি মহুপাখি!”
মহুয়া মুচকি হেসে আদনানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আমিও ভালোবাসি,একটু বেশি ভালোবাসি!”

সমাপ্ত..
গল্পটা বেশি বড় করার ইচ্ছা ছিল না,তাই তাড়াতাড়ি শেষ করে দিয়েছি।
ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।কয়েকটা মন্তব্যের আশায় আছি ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here