শাওয়াম পর্ব -০৮+৯

#শাওয়াম
পর্ব ৮
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

১০

‘মা একদিন না পড়তে গেলে কি হবে!একটা দিনই তো।আমি বাড়িতে বসে প্রিপারেশন নেই।’

শাওয়ামের এই এক ঘ্যান ঘ্যান শুনে বিরক্ত তহমিনা।মেজাজ একদম বিগড়ে যাচ্ছে তার।রাশেদ আর তিনি কম শিক্ষিত নন।দুজনেই দুজনের কর্মস্থলে সেরকম পদমর্যাদা নিয়ে চলেন।তহমিনার খুব ইচ্ছে তার মেয়ে এক জন নামকরা ডাক্তার হবে।একজন বড় বিশেষজ্ঞ।দেশজুড়ে তার নামডাক।তার কেবিনের সামনে কে আগে সিরিয়াল দেবে সেটার জন্য রোগীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে।আত্নীয় স্বজনকেও বেশ বুক ফুলিয়ে জবাব দেবেন দু জনেই চাকরি করি তো কি হয়েছে?মেয়েকে ঠিকঠাক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছি।বলতে গেলে প্রতিনিয়ত এরকম স্বপ্ন চোখের সামনে বুনে যায় তহমিনা।কবে শাওয়াম বড় হবে ডাক্তার হবে।সকালে ঘুম থেকে উঠেই শাওয়াম পড়ার টেবিলে বসে।গোসল খাওয়া ছাড়া ওঠে না। বিকেল বেলাতে গান শুনতে বসে।তার বাইরে খেলতে যাওয়া আগেই নিষেধ।কার না কার সাথে মিশবে।তার চেয়ে বরং ঐ সময় টুকু পড়া উচিত। শাওয়াম রাত বারোটা একটা অবধি পড়ে।তাতেও সন্তুষ্ট না তহমিনা।রাত জাগলে কি হবে সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠবে।তহমিনার এক কথা,এভাবে লেখাপড়া করলে চলবে না।ভোর চারটায় উঠতে হবে।পড়তে হবে।তবেই না ভালো স্টুডেন্ট।ক্লাসে প্রথম তাতে কি।সে তো দেশে প্রথম হতে পারেনি। আফসোস জাগে তহমিনার। ইদানীং শাওয়ামের পড়াশোনার ফাকিবাজি একদম মনঃপূত হচ্ছে না তহমিনার।একমাত্র মেয়ে বলে আর কতো?

মাকে চুপ থাকতে দেখে শাওয়ামের মনটা কিছুটা শান্ত হলো এটা ভেবে হয়তো তহমিনা শাওয়ামের প্রস্তাবে হ্যাঁ তে হ্যা মেলাবে।আইসি টি প্রাইভেট পড়তে পাঠাবে না।

শাওয়ামের মনের কথা গুলো দিন জেগে স্বপ্ন দেখার মতোই অসম্পূর্ণ রয়ে গেল।

তহমিনার কড়া জবাব,

‘ফাকিবাজি এক দম না।তোমাকে মাথায় তুলতে তুলতে একদম মাথার ওপর নাচতে শুরু করেছো তুমি।এমনি এমনি প্রতি মাসে তোমার জন্য এত টাকা খরচ করি?এই টাকা যদি আমার ব্যাংকে জমাতাম চাকরি ছেড়ে দিলে ও তোমার বাবা আর আমি সপ্তাহে তিন দিন মাংসভাত খেয়ে দিব্যি চালিয়ে যেতাম।প্রতি মাসে তোমার প্রাইভেটে,স্কুলে কত টাকা দিতে হয় হিসেব আছে তোমার? রোজগার করে দেখেছো কখনো? পারো তো শুধু বাবা মায়ের টাকায় ফুটানি করতে।দিন দিন যা পড়াশোনার ছিরি।আমাদের নাক কাটা যাবে তোমার রেজাল্টের জন্য।চুপচাপ পড়তে যাবে।শুধু অজুহাত।আর একটা কথাও যেন শুনিনা আমি।’

শাওয়ামের চোখ দুটো যেন জলে ভরে এলো।সংযত করা দায়।কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।সে কি নিজের ইচ্ছেই যেতে চাইছে না? সাদাফ নামক ঐ অভিশাপটার জন্য সে যেতে চাইছে না।

তহমিনা মেয়েকে কথা শুনিয়ে ঘরে যেতে নিল আবার থেমে গেল।পিছু ঘুরলো।শাওয়াম এখনো দাড়িয়ে আছে।তহমিনার মেজাজ যেন এখন সপ্ত আসমান।ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,

‘এখানে খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছিস কেন?যা রেডি হয়ে পড়তে যা।আমাকে একটু শান্তি দিবি না তুই!কেন যে তোর মতো মেয়ে জন্ম দিলাম।জীবনের কোন ইচ্ছেই পূরণ করতে পারলিনা তুই।তোর পেছনে খালি খালি টাকাই ঢেলে গেলাম। ‘

তহমিনার মুখ নিঃসৃত একেকটা শব্দ যেন সুই এর মতো শাওয়ামের শরীরের মৃদু আঘাত করছে।ছোট্ট মনটাকে তছনছ করছে।শাওয়াম আর দাঁড়ালো না।মুখ ঘুরিয়ে দৌড়ে ঘরের দিকে চলে গেল।আর সম্ভব না সংযত হওয়া।বাধ ভেঙে পানি গড়িয়ে পড়বে।এ কান্না দেখিয়ে কি লাভ! উল্টা আরো তাকে শুনতে হবে এটা তার নাটক।

ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো শাওয়াম।কান্নায় ভেঙে পড়েছে।ছোট্ট মনে অদ্ভুত প্রশ্ন জাগে।বাবা মা এমন কেন? এত কথাই যদি শোনানোর ছিল,এতো খোটাই যদি দেওয়ার ছিল এরা কেন সন্তান নেয়।নিঃসন্তান থাকতে পারে না !

পুরো পৃথিবী যেন একটা নাট্যশালা।বাবা মা এখানকার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।এরা নিঃসন্তান থাকতে নারাজ।আবার রেগেমেগে খোটা দিতে পারে,কখনো বা কথায় কথায় মৃত্যু কামনা করতে পারে।আবার জ্বর হলে এরাই সৃষ্টিকর্তার কাছে হাত তুলে ফরিয়াদ জানায়,সন্তানকে সুস্থ করো বিনিময়ে ওর অসুখ আমাকে দেও।আর সন্তান গুলো যেন এই নাট্যশালার আরেক চরিত্র।অনেকটা বিরিয়ানির ভেতর গড়াগড়ি খাওয়া এলাচি আর কিসমিসের মতো।কেউ খেতে পছন্দ করে,কেউ বা উগলে ফেলে,কেউ বা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়না।থালার এক কোনায় আলাদা করে রাখে।সন্তান গুলো এমনি।কখনো বা বাবা মাকে আপন করে,ভালোবাসে।কখনো বা তাদের খারাপ ব্যবহারে দুমড়ে মুচড়ে যায়।এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই।এই প্রতিজ্ঞা করে।আবার যখনি কোন অনাথের সাথে মিলিত হয় তখনি মনে করে মা বাবা ছাড়া দুনিয়াটা ঘনিয়ে আসা আধার ছাড়া কিছুই না।অসহায় তার এই বাবা মা চরিত্রের ছায়া দুটো ছাড়া। মাঝে মধ্যে এই নাট্যশালায় অদ্ভুত কর্মকান্ড সংঘটিত হয়।হিতের বিপরীতে অনেক কিছু ঘটে।বাবা মা নামক চরিত্র কখনো কিছু সন্তানের আত্মহত্যার কারণ হয়,আবার সন্তান নামক চরিত্রের জন্য এত কষ্ট করে মানুষের মানুষ হিসেবে বড় করেও বাবা মা চরিত্রের ঠাই হয় বৃদ্ধাশ্রম। পৃথিবী আজব,বড়ই আজব।ক্ষুদ্র আকাশের কমলালেবুর মতো হালকা চ্যাপ্টা আকৃতির আবার বিশাল নাট্যশালা।এই নাট্যশালায় প্রতিনিয়ত নাটক পরিচালিত হয়।কখনো বা আশানুরূপ কখনো বা হতাশার।এই নাট্যশালার নাটকের প্রকারভেদ নির্ণয় অসম্ভব বটে।

বিকাল গড়িয়েছে।

কোচিং সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাওয়াম।সামনের রাস্তায় এগুনোর সাহস খুঁজে পায়না।অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীরা বেরিয়ে গেছে।শাওয়াম এগুতেই পারছে না।তার থেকে প্রায় পনেরো বিশ কদম দূরে সাদাফ বাইক নিয়ে দাঁড়ানো।সানিয়াকে নিতে এসেছে।এখানেই শাওয়ামের ভয়।সাদাফকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।আরো সকালের আরেক মেসেজ।

যেখানে ফোনের ছোট্ট বার্তায় ও সাদাফ বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছিল- ‘শাওয়াম,বিকেলে পড়তে আসিস কিন্তু।ওরনা ছাড়া আসবি।আমি না তোর স্বামী? স্বামীর আদেশ শুনবি।এসে জড়িয়ে ধরবি।আর কতকাল কচি থাকবি?কচি খুকি! তোর জন্য আমি আর কচি থাকতে পারব না।আই নিড এভরিথিং ফ্রম ইউ।’

এই এভ্রিথিং এর অর্থ শাওয়ামের অজানা নয়।

এদিকে শাওয়ামকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সাদাফের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে।তার মেসেজের রিপলাই করেনি, ফোন ও রিসিভ করেনি।সাদাফ পাশে দাড়িয়ে থাকা সানিয়ার দিকে ইশারা করলো শাওয়ামকে টেনে আনার জন্য।সানিয়া মুখে বিশ্রী হাসির রেখা টেনে এগিয়ে গেল।

সাদাফের বাইকের পাশে আরেকটা বাইক।হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছে আয়াজ।আজকে বাইক রেস করবে তারা।এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেও সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে।মনে মনে তার অন্য ভাবনা জাগে,

‘যে মেয়েটার মুখটা এত সুন্দর না জানি সব দিক থেকে সে কতোটা,,,,,,,,,,।সাদাফের যেন কেন ওর দিকে চোখ গেল।ও তো টার্গেট যখন করেছে খেয়ে তবেই ছেড়ে দেবে।বাট আই নিড শাওয়াম।এক দম এক দিনের জন্য হলেও ইনটেক।’

আয়াজের ভাবনা আর দৃষ্টি দুটোই আপাতত শাওয়ামকে ঘিরে।
#শাওয়াম
পর্ব ৯
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

‘কিরে শাওয়াম তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?’

সানিয়ার খোচা মারা প্রশ্ন যেন শাওয়ামের গায়ে কাটা দিচ্ছে ।এই মেয়েটাকে একদম সহ্য হয়না তার।মেয়ে মানুষ এত্ত খারাপ হতে পারে তা সানিয়াকে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। কান্না পাচ্ছে শাওয়ামের।এ যেন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ সেই পরিস্থিতি।উভয় সঙ্কট!

শাওয়ামকে চুপ থাকতে দেখে সানিয়া তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,

‘কি ভাবছিস? আমার ভাইয়ের কথা বুঝি?’

সানিয়ার কথা শুনে শাওয়ামের গা পিত্তি যেন জ্বলে যাচ্ছে।শাওয়াম মিন মিন করে বললো,

‘ঐ রকম জানোয়ারের কথা ভাবার থেকে রাস্তার কুত্তার কথা ভাবলেও জীবনে কিছু করা হবে।ইবলিশের ইবলিশ একটা।যেমন কুত্তা মার্কা ভাই তার তেমন কুত্তী বোন।এদের কুত্তা বললে কুত্তারাও এই অপমানে আমার বাড়ির সামনে অনশন ধর্মঘট শুরু করবে।’

শাওয়ামের কথাগুলো স্পষ্ট না।সানিয়ার কান অবধি পৌছালো না।তবে সে বেশ আন্দাজ করেছে এই মেয়ে আর যাই হোক বেড়ালের মতো মিউমিউ করে তার সুনাম করবে না।সানিয়া আর কোন আলাপের প্রয়োজন মনে করলো না।একেবারে সময় নষ্ট।খপ করে শাওয়ামের ডান হাতের কনুই এর ওপরের অংশ ধরে ফেললো।বেশ শক্ত করেই চেপে ধরলো।ঘটনার আকস্মিকতায় শাওয়াম অবাক। এক নজর তাকিয়ে কিছু বলার জো পেল না। তার আগেই তাকে আসামির মতো টানতে টানতে সাদাফের সামনে গিয়ে এক প্রকার ঢিল ছোড়ার মতো ছুড়ে ফেললো সানিয়া।পায়ে উঁচু জুতো।শাওয়াম টাল সামলাতে পারলো না।হুমড়ি খেয়ে পড়লো সাদাফের গায়ের ওপর।সাদাফ যেন এই সুযোগ লুফে নিল।শাওয়ামকে ধরার নাম করে স্পর্শ করলো তাকে অন্যভাবে।মেয়েদের কাছে যেটা স্বামীর হক।মুহূর্তেই যেন শাওয়ামের শরীরে বৈদ্যুতিক ভোল্টেজের শক লাগলো। শাওয়াম মাথা তুলে সাদাফের থেকে নিজেকে সরানোর জন্য উদ্যত হতেই সাদাফ এক হাতে তাকে জড়িয়ে ধরলো আলতো করে।শাওয়ামের চোখ দুটো ভিজে আসলো।

এক হাতে শাওয়ামকে ধরে আরেকহাতে তার মুখের ওপর থেকে বেবি হেয়ারগুলো সরিয়ে দিল সাদাফ।

কামুক কন্ঠে বললো,

‘উফ!তোকে আমি কচি ভেবেছিলাম!শাওয়াম তুমি এমন কেন বলোতো?আমি তোমার স্বামী।আমার হক আদায় করবে না?’

সাদাফের কথা শুনে শাওয়াম ভয়ে কাঁপছে ।কম্পিত কন্ঠে বললো,

‘আমায় বাড়ি যেতে দিন সাদাফ ভাই।বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি।’

‘ফোন রিসিভ করিস নি কেন?ইগনোর!ইগনোর করছিস!তাও কিনা আমাকে ! সাদাফ মির্জা কে? তুই জানিস তোর সাথে আমি কি করতে পারি।তোর বাপ মা সহ তোকে মেরে গুম করে দিলে ও কেউ কিছু করতে পারবে না। আমাকে ইগনোর করছিস তুই?’

‘আপনি কেন আমার সাথে এমন আচরণ করছেন? ছাড়ুন আমাকে।আমাকে টাচ করার সাহস কি করে হয় আপনার?’

‘কাবিননামার কথা ভুলে গেলি নাকি? আরেকটু মনে করিয়ে দিতে হবে? তার চেয়ে বরং একটা কাজ করি কাল থেকে কাবিননামার কাগজটাকে লেমনেটিং করিয়ে আইডি কার্ড এর মতো ঝুলিয়ে পুরো এলাকা ঘুরব।সবাই আমাকে কি নামে চিনবে বলতো? শাওয়ামের জামাই।ভালো হবে না?’

সাদাফের কথা শুনে শাওয়ামের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।এমন কিছু ঘটলে তার মা বাবা যে তাকে মেরেই ফেলবে।শাওয়াম করুণ দৃষ্টিতে সাদাফের দিকে তাকালো।মিনতির সুরে বললো,

‘আপনি কিছু করবেন না সাদাফ ভাই।আমি আপনার কল রিসিভ করব।সামনে পরীক্ষা এজন্য পড়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।’

‘রাখ তোর পড়াশোনা।আমি না তোর জামাই?আগে জামাই সামলাবি তারপর সব।তুই যদি আমাকে ঠিক মতো না সামলাস আমি আমার শ্বশুর বাড়ি চলে যাব।সবাইকে নালিশ জানাতে।’

‘নাহ!’

‘তাহলে আমার সব কথা শুনবি।একদম লক্ষী মেয়ের মতোন।’

শাওয়াম মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।

‘গুড গার্ল।তোকে কিছু বলার ছিল রে।’

‘বলুন।’

‘উম!এদিকে না।চল ঐ পাশের ঝোপের আড়ালে যাই।জনসম্মুখে কি স্বামী স্ত্রীর প্রাইভেসি আছে বল?’

সাদাফ শাওয়ামকে কিছু বলার সুযোগ দিলনা।টেনে নিয়ে গেল কিছুটা দূরে ঝোপের আড়ালে।

আয়াজ চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।পকেট থেকে সিগারেট বের করে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে মুখে দিল।সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে সাথে নিজের অদৃশ্য কামনাগুলো কে ও মিলিয়ে যেতে দেখছে সে।এটা মানা যায়না।সাদাফের উদ্দেশ্য আয়াজের অজানা নয়।সে পাশ ফিরে তাকালো।সানিয়া ফোন নিয়ে বিজি।নিশ্চয়ই কত নম্বর বফের সাথে কথা বলছে কে জানে। এই সুযোগে আয়াজ ও পা বাড়ালো দূরের ঝোপের দিকে।

এদিকে ঝোপঝাড়ের আড়ালে রাতের আধার ও যেন দ্বিগুণ আধার হয়।গা ছমছম পরিবেশ।শাওয়াম কাদছে।সাদাফের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।সাদাফের অবৈধ আবদার কোন ভাবেই মানা যায়না।

শাওয়াম কাঁদতে কাঁদতে বললো,

‘আমি বাড়ি যাব সাদাফ ভাই।আমার হাত ছাড়ুন আপনি।’

‘সেই থেকে এক কাহিনী শুরু করেছে বাড়ি আর বাড়ি।একটু জড়িয়ে ধরবি শক্ত করে।আর ঠো*** কি এত সমস্যা তোর হ্যাঁ?’

সাদাফ বিশ্রীভাবে শাওয়ামকে স্পর্শ করছে।শাওয়াম ছোটার চেষ্টা করলে আরো জাপটে ধরছে সাদাফ।

‘সাদাফ! সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।ওর মা বাবা এবার খোঁজ নিতে এখানেই চলে আসবে।’

দু জনের মধ্যে আরেকটা তৃতীয় কন্ঠ। সাদাফ কিছুটা বিরক্ত হলেও আয়াজের কথার যুক্তি আছে এটা ভেবেই থেমে গেল।শাওয়ামের হাত ছেড়ে দিল।আয়াজকে দেখে শাওয়াম যেন কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো।আয়াজের শান্ত চাহনি।শাওয়াম একটু আশ্বস্ত হলো।সাদাফের হাত থেকে তো বেচে গেল এবারের মতো।

আয়াজ শান্ত সুরেই বললো,

‘শাওয়াম যাও বাড়ি যাও।’

শাওয়াম আর এক মূহূর্ত দাঁড়ালো না।দৌড়ে বেরিয়ে গেল।সাদাফ রাগে গজগজ করতে করতে আয়াজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ঝাড়ি মেরে বললো,

‘কি করলি তুই এটা?’

‘খাবি যখন একটু রয়ে সয়ে খা।স্বাদ বেশি পাবি।’

‘কিন্তু?’

‘শোন তুই যদি এরকম করতে থাকিস এখনই এত উতলা হোস মেয়েটা ফট করে বাবা মাকে সব বলে দেবে।এখন তো মাইরের ভয়ে চুপ আছে।ও কি বোঝে এই সব কথা বলে দিলে ওর ভালো হতো উল্টা।একটু রয়ে সয়ে খা।আগে বশ কর।তারপর দেখিস ঝামেলায় পড়বি না।’

আয়াজের কথা গুলো সাদাফকে ভাবাচ্ছে। সেও সম্মতি দিল,

‘ঠিক বলেছিস।আস্তে আস্তে মানাতে হবে। ‘

‘হুম।চল আমাদের বাইক রেস আছে তো।’

‘চল।’

সাদাফ ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো।আয়াজ ও পা বাড়ালো।তার মনে অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।এই সুযোগ সে শাওয়ামকে সাদাফের থেকে বাঁচিয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে।লুফে নিতে পারবে সব।

১১

দেখতে দেখতে ডিসেম্বর মাস চলে এলো।শাওয়ামের ফাইনাল পরীক্ষার শেষ দিন আজ।প্রতিবারের মতো এবারেও শাওয়ামের মন বেশ উৎফুল্ল।ফাইনাল পরীক্ষা শেষ মানেই গা ছাড়া একটা ভাব।লম্বা শীতের ছুটি।দাদু বাড়ি যাওয়া।সারাদিন বাড়িতে ঘুমানো।কেউ কিছু বলবেও না।যদিও তার মা বরাবর এডভান্স।পরীক্ষা শেষ হতেই পরবর্তী শ্রেণীর কোন স্টুডেন্ট থেকে পুরানো বই এনে তাকে প্রাকটিস করানো শুরু করবে।প্রাইভেট টিউটর গুলো ডিসেম্বরে ও আসবে তাকে পড়াতে।এতে নাকি সে সবার থেকে এগিয়ে থাকবে।আদৌ কি এগিয়ে থাকবে? মানসিক প্রশান্তি কি সে পায়! অবসর যদি নাই থাকে জীবনটা যান্ত্রিক ছাড়া কিছুই না।মাঝে মাঝে নিজেকে রোবট মনে হয় শাওয়ামের। জীবনে এত্ত কষ্ট কেন?মা বাবা কেন পাঁচ মিনিট পাশে বসে জিজ্ঞাসা করেনা কি অবস্থা তোমার? মনের খবর কেন কেউ রাখে না।

মনে মনে বেজায় খুশি শাওয়াম।আগামী কাল তার খালাতো বোন অন্তি আসবে।পিঠাপিঠি হলেও কয়েক মাসের ছোট বড়র জন্য আপুই ডাকে সে।আরো খুশির বিষয় জানুয়ারির দিকে তার তুবা আপুও আসবে।বেশ কিছুদিন থাকবে।ছোট মামা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবে।তুবাকে তহমিনার কাছেই রেখে যাবেন।তিন বোন একসাথে এতদিন অনেক মজা হবে।

সাদাফ নামটা মনে পড়তেই আবার ভয়ে কুকড়ে যায় শাওয়াম।এ কদিনে ঠিকই জ্বালিয়েছে ঐ জানোয়ারটা।ধীরে ধীরে তাকে শারীরিক সম্পর্কের জন্য প্রেসার দিচ্ছে সাদাফ।শাওয়াম না পারছে সইতে না পারছে গিলতে।অন্তি আপু আসলেই ঠিক এর একটা সমাধান হবে।

আয়াজ নামটা যেন সাদাফের পর আরেকটা ঘৃনার বস্তু শাওয়ামের কাছে।দেড় মাস আগেও শাওয়াম ভেবেছিল এই লোকটা তাকে সাদাফের থেকে বাচিয়েছে।কে জানতো এ আরেক ছদ্মবেশী ক্ষুধার্ত বাঘ।ঝোপের আড়ালে তার কামনা নিয়ে ঘাপটি মেরে বসে ছিল।যেই পেল না সেই শুরু করলো আরেক কাহিনী।সাদাফকে আরো বেশি উস্কে দেয় এই আয়াজ।

শাওয়াম এর জীবনের এই অন্ধকার কেটে আলোর দেখা কি আদৌ মিলবে!

চলবে————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here