শাওয়াম পর্ব -১০

#শাওয়াম
পর্ব ১০
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দ।ভাবনার ছেদ ঘটলো।শাওয়াম বই টেবিলের ওপর রেখে উঠে পড়লো।বিছানার মাঝ বরাবর ফোনটা পড়ে আছে।শাওয়াম রিসিভ করলো,

‘হ্যালো।’

‘কিরে খালামনিকে কতবার ফোন করলাম ধরেনা কেন?’

‘মা তো হসপিটালে আছে আপু।হয়তো ব্যস্ত আছে।’

‘হবে হয়তো।’

‘কোন দরকার?’

‘এখন রওনা দিচ্ছি।মা বললো খালামনিকে জানিয়ে দিতে।’

‘তুমি এখনি বের হচ্ছো!এখানে আসতে আসতে কত সময় লাগবে?’

‘বিকেলের দিকেই পৌছে যাব।’

‘আচ্ছা।বাবা তোমাকে আনতে যাবে।তুমি স্টেশনে নেমে কল করবে কিন্তু।’

‘আচ্ছা এখন রাখ।আজ তো তোর পরীক্ষা শেষ।শেষ পরীক্ষা ভালো করে দিস।’

‘তাতো দেবোই।কথায় আছে না,শেষ ভালো যার সব ভালো তার।’

‘রাখছি রে।’

‘সাবধানে এসো।’

অন্তির সাথে কথা বলে নিজেকে বেশ ফুরফুরে লাগছে শাওয়ামের।কখন অন্তী আসবে সেই অপেক্ষা।অন্তত এই সাদাফ নামক শয়তানটার কথা বলার জন্য হলেও অন্তিকে খুব দরকার তার।শাওয়াম উঠে পেন্সিল বক্স,কলম সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।একটু পর সে বের হবে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে।শেষবারের মতো বইয়ের পাতায় একটু চোখ বুলিয়ে নিল শাওয়াম।এবারের পরীক্ষা গুলো তার খুব ভালো হয়নি।পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার আগেই সাদাফ নামক ইবলিশটাকে দেখে তার ভয়ে প্রাণপাখিটা উড়াল দেওয়ার মতো অবস্থা। আর পরীক্ষা শেষ হলে তো আছেই।সাদাফ তাকে টেনে নিয়ে যাবে এদিক ওদিক।সব সময় তার গায়ে বাজেভাবে স্পর্শ করবে।বিশ্রী বিশ্রী কথা বলবে।মাঝে মাঝে তো শয়তানটার পাখনা যেন আরো দুটো বেশি গজায়।কথায় কথায় আজ বাড়ি ফাঁকা আছে,চল হোটেলে ঘুরে আসি।শাওয়াম ও বুঝতে পারছে সাদাফ কি চাইছে।সাদাফকে তার একদম সহ্য হয়না।যেমন ভাই তেমন বোন।সানিয়ার জন্য ও বিন্দু মাত্র শান্তি নেই তার।পরীক্ষার হলেও ঐ এক কাবিননামার ভয় দেখিয়ে শাওয়ামের পিছে সিট ফেলে নিজের বোনের পাশ করার পথ সুগম করেছে সাদাফ।অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে শাওয়াম।

প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় একবার করে শাওয়াম বলে আল্লাহ গিয়ে যেন শুনি শয়তানটা ঠাডা পড়ে মরে গেছে।অথবা ওকে পাগলা কুত্তায় কামড়িয়েছে।এতগুলো ইনজেকশন দিতে হয়েছে ওর।না হয় ডাকাতরা ওর বাপের টাকা দেখে ওকে ডাকাতি করে নিয়ে গেছে।আচ্ছা প্রতিদিন তো এত এক্সিডেন্ট ঘটে।ঐ শয়তানটা কী এক্সিডেন্টে মরতে পারেনা!

শাওয়াম দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কারো মৃত্যু কামনা করতে নেই।কিন্তু সাদাফের মৃত্যু প্রতিনিয়ত কামনা করে যায় সে।

বেলা ১২ টা।

পরীক্ষার হল থেকে কাছের বান্ধবী জুহির সাথে বকবক করতে করতে বের হচ্ছে শাওয়াম।

হুট করে জুহি বলে উঠলো,

‘আজ সানিয়া পরীক্ষা দিতে আসেনি দেখেছিস?’

শাওয়াম থেমে দাঁড়ালো।আসলেই তো সে ও বিষয়টা খেয়াল করেছে।শাওয়াম ও বেশ দোটানা নিয়ে বললো,

‘হুম।কিন্তু আসেনি কেন জানিস?’

‘ওর ভাইয়ের নাকি ডায়রিয়া হয়েছে।মারাত্মক অসুস্থ। ও নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।অবশ্য ওর সুস্থতা অসুস্থতা দিয়ে কি হবে।হেড স্যারকে টাকা খাইয়ে ঠিক রেজাল্ট বের করে নেবে।’

জুহি কথা বলতে বলতে হেঁটে চললো।এদিকে শাওয়াম তো মনে মনে সেই খুশি। এতদিনে তার দোয়া কবুল হয়েছে।এবার ডায়রিয়ায় দুই ভাই বোন অক্কা পেলেই হয়।সাদাফের পটল তোলার শোকে সে না হয় অপছন্দের পটলের দলমা ও খাওয়া শুরু করবে।এ যাত্রায় দুটো বিদায় হলে হয় চিরতরে।

অন্তীর আগমনের সাথে সাথে শাওয়ামের খুশিটা যেন আরো বেড়ে গেল।

সন্ধ্যাবেলা।

অন্তী এসেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।খেয়ে দেয়ে দুই বোন গল্প করতে বসেছে।এটা সেটা কত কথা।অন্তী বেশ কিছুদিন এখানে থাকবে।হয়তো তুবা ও চলে আসবে ততদিনে।ফাঁকা বাড়িটা একদম মানুষে থৈ থৈ করবে যেন।

অন্তী অনেকক্ষণ ধরে বকবক করছে।শাওয়াম কেমন শান্ত হয়ে বসে আছে।বিষয়টা অন্তীর মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে। তাই ফট করে প্রশ্ন করেই বসলো,

‘এই তোর কি হয়েছে রে? আর কি যেন বলবি আমাকে? ফোনে তো বলতে পারলিনা।’

শাওয়াম মাথা তুলে অন্তীর দিকে তাকালো।সে নিজেও এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছে।কখন সবকিছু বলে নিজে হালকা হবে।এদিকে আবার তার মনে অন্য চিন্তা।সাদাফ শয়তানটা কি ডায়রিয়াতে মরেছে নাকি বেচে আছে? শুনেছিল তো মারাত্মক অবস্থা।এই মারাত্মকে যদি ব্যাটা পটল তুলে তাহলে সে অন্তী আপুকে এই নিয়ে কিছু বলবেনা।যা শেষ হবার হয়েই যাবে।কিন্তু যদি সেটা না হয়!

শাওয়ামের জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটলো অন্তীর কথায়,

‘কি রে আকাশের তারা গুণতে বসলি নাকি?’

‘না।এমনি।’

এর মধ্যে তহমিনা ট্রে হাতে ঘরের ভিতরে ঢুকলো।তহমিনাকে দেখে দুজনেই একটু নড়েচড়ে বসলো।তহমিনা ট্রে এনে বিছানার ওপর রাখলেন।চা,বিস্কুট আর কিছু ফল নিয়ে এসেছে দুজনের জন্যে।

তহমিনার এত আয়োজন দেখে অন্তী বলে উঠলো,

‘খালামনি কেবল এতো খাবার খাইয়েছো ।এখন এসব কি?’

‘চুপ কর।চুপচাপ খেয়ে নে।আর শোন তোদের দুজনের জন্য একটা খবর আছে।’

তহমিনার কথায় দুজনেই উৎসুক হয়ে একসাথে বলে উঠলো,

‘কি?’

‘পরশুদিন থেকে তোমাদের টিউশনি ঠিক করেছি।সামনের ক্লাসে ওঠার আগে এখনি পড়াশোনা কর ভালো করে।ক্লাসে সবার আগে এগিয়ে থাকতে হবে।শাওয়াম এর অনেক বন্ধুর গার্ডিয়ান রাও ভর্তি করেছে।তোমরা পিছিয়ে থাকবে কেন?অন্তী পড়াশোনাতে কোন ফাকিবাজি না।খেয়ে নেও।’

তহমিনা চলে গেল।এদিকে শাওয়াম আর অন্তীর মুখে যেন আধার নেমে এসেছে।অবকাশ জিনিস টা তাদের জন্য নিষিদ্ধ তবে।অন্তীর মায়ের থেকে তার ব্রিটিশ খালামনি ও কোন অংশে কম না।

চলবে———-

সবাই সাদাফের জন্য দোয়া করো।পটল তুললে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here