শাওয়াম পর্ব -১১+১২

#শাওয়াম
পর্ব ১১
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

১২

‘দেখ শাওয়াম,তুই কি বলছিস এসব?আমি তিনদিন ধরে সানিয়ার সাথে কথা বলছি,ঘুরছি মেয়েটাকে তো একদম খারাপ বলে মনে হচ্ছেনা।’

অন্তীর কথা শুনে শাওয়াম চোখ দুটো ছোট করে বললো,

‘তোমার কি মনে হয় অন্তী বুবু আমি তোমাকে মিথ্যা বলব ! আমি ছোট থেকে ওকে চিনি।তুমি দুদিন এসে কিভাবে ওকে বুঝবে বলো? আমার কথা শোনো।ঐ ডাইনিটার সাথে আর ভুলেও কথা বলবে না তুমি।তুমি জানোনা ও কত্ত খারাপ।’

শাওয়ামের কথা শুনে অন্তী চুপ হয়ে গেল।অন্তী কিছুতেই বুঝতে পারছেনা সানিয়ার মতো একটা হাসিখুশি মেয়েকে শাওয়াম কোন দিক থেকে খারাপ বলে।

অন্তী আর শাওয়াম যেন কোচিং এ পড়া বাদ দিয়ে গল্প না করতে পারে এজন্য তহমিনা দুজনকে দুই শিফটে ভর্তি করিয়েছে।অন্তি মর্নিং শিফটে আর শাওয়াম ডে শিফটে।ব্যস এখানেই যা ঘটার ঘটে গেল।সানিয়া মর্নিং শিফটে কোচিং করে।এ কদিনে অন্তীর সাথে একদম খাতির জমিয়ে ফেলেছে।এতোটাই খাতির যে শাওয়ামের কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছেনা অন্তীর।আর সাদাফ সে তো রীতিমতো মানসিক প্রেসারে রেখেছে শাওয়ামকে। গতকাল সকালে মেসেজে ডিরেক্ট বলেই দিয়েছে শাওয়ামের সাথে ফিজিক্যালি এটাচড হতে চায় সে।শাওয়াম তার স্ত্রী।এই অধিকার সে খাটাবেই।

সব দিক থেকে চিন্তার বেড়াজালে আটকে গেছে শাওয়াম।দিনকে দিন যেন তাকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে নিজের স্বাভাবিক জীবন।নিয়তি কেন এমন করছে তার সাথে।শাওয়াম বুঝে উঠতে পারে না। কত আশা করেছিল সাদাফ যদি এবার পটল তুলে।উল্টা আশার আগুনে ঘি ঢেলে দিল সাদাফ।দুদিন পরেই বাইক সমেত শাওয়ামের সামনে উপস্থিত।তার সাথে সময় কাটাতে চায়।আবাসিক হোটেলের নাম বলে।সেখানকার সুন্দর সুন্দর খাবার,পরিবেশের বর্ণণা দেয় শাওয়ামকে।সেখানে ঘুরতে গেলে নাকি শাওয়ামকে স্বর্গের সুখের দৃশ্য দেখাবে সাদাফ।শাওয়াম ধীরে ধীরে বেশ বুঝতে পারছে মূলত কি চাইছে সাদাফ।

অন্তীকে চুপ থাকতে দেখে শাওয়াম আবার বলে উঠলো,

‘তুমি জানো অন্তী বুবু কেন প্রতিদিন তোমাকে ফোন করে বলতাম তাড়াতাড়ি এসো।তোমাকে কিছু বলার আছে।’

‘তুই তো এখনো বলিসনি আমাকে।’

‘বলব কিভাবে?তুমি তো ঐ ডাইনিটাকে নিয়ে কথা কাটাকাটি করতেই আছো।ঐ ডাইনিটা আমার কত বড় সর্বনাশ করেছে জানো?’

‘সর্বনাশ!মানে?’

নিজেকে আর সংযত করতে পারলো না শাওয়াম।কেঁদেই ফেললো।একে একে কাঁদতে কাঁদতে অন্তীর সামনে মনের দরজা খুলে দিল। তার এতদিনের জমানো কথা যা কাউকে প্রকাশ করতে পারছে না।শাওয়ামের প্রতিটি কথা অন্তীকে অবাক করছে,শরীরে অদ্ভূত শিহরণ জাগিয়ে তুলছে।রাগে গা রি রি করছে অন্তীর।

অবশেষে ফুপাতে ফুপাতে শাওয়াম নিজের কথা শেষ করলো।শাওয়ামের এমন অবস্থা দেখে অন্তীর ও চোখে জল চলে এসেছে। এতটুকু মেয়ে এত দিন ধরে নিজের মধ্যে সব কথা চেপে রেখেছে।শাওয়ামকে বুকে টেনে নিল অন্তী।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

‘তুই এতদিন কেন আমাকে বলিসনি?’

‘অন্তী বূবূ তুমি এখনো আমার কথা বিশ্বাস করছো না তাই না? চলো আমার ফোনে ঐ শয়তানটার মেসেজ গুলো আছে।দেখবে চলো।’

শাওয়াম উঠতে নিলে অন্তী আটকে দেয়।শাওয়ামকে আবার জড়িয়ে নেয়।

‘আমি তো চিনি তোকে।তোর পক্ষে এরকম বানিয়ে মিথ্যা বলা অসম্ভব।তুই এটা কি করলি বোন? একটা সাদা কাগজে এভাবে সাইন করলি!’

‘আমি নিরুপায় ছিলাম অন্তী বুবু।ঐ শয়তানটা যদি একবার এসে মা বাবাকে সব বলে দেয়না দেখবে আমাকে কেটে দুই টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেবে মা।পরীক্ষায় খারাপ করেছি বলে আমাকে কত কথা শোনায়।’

‘তোর খালামনি খালুকে সব বলা উচিত।’

‘কি বলব আপু বলোতো! আমাকে খুব মারবে।আমাকেই বলবে সব আমার দোষ।এমনিতেই গত পরীক্ষায় হায়েস্ট মার্কস পাইনি বলে মা একি বাড়িতে থেকে আমার সাথে এক মাস কথা বলেনি জানো?আমাকে খুব মারবে।আমার কথা বোঝার চেষ্টাই করেনা।কয়েকবার চেষ্টা করেছি ভেবেছি বলব।কিন্তু মা র ঘরে যেতেই আগে শুনিয়ে দেয় গল্প না করে পড়তে যাও।আমি কি করব বলো অন্তি বুবু?’

‘শোন তুই ঐ ছেলেটার সাথে একদম কথা বলবিনা।ওর বোনকে দেখলেও দূরে থাকার চেষ্টা করবি।’

‘আমি তো ওদের ধারে কাছে যাইনা।ওরাই তো আমাকে টেনে নিয়ে যায়।জানো গতদিন ঐ শয়তানটা কিভাবে আমার গায়ে,,,,,,,আমি কি করব।’

‘শোন এসব মিথ্যা।বিয়ে টিয়ে কিছু হয়নি।আরে তুই কবুল বলেছিস যে তোর বিয়ে হবে!ঐ ছেলেটা তোকে মারাত্নকভাবে ফাসিয়েছে রে। ভয় তো এটাই ওরা এখানকার যে রকম শক্তিশালী লোক তোর নামে বাজে কথা রটাতে একটু সময় নেবেনা। কারোর কিছু হবেনা।তোর আর খালু,খালামণির সম্মান যাবে।ও যদি এখন সবাইকে কাগজ দেখিয়ে হ্যা বলতে বলে না সবাই হ্যা তে হ্যা মেলাবে।’

‘আমাকে বাচাও অন্তি বুবু।ঐ শয়তানটা আমার ক্ষতি করে দেবে দেখো।’

‘কিছু হবেনা।এত চিন্তা করিস না।আমি তো আছি কদিন।দেখি জল কতদূর গড়ায়।শোন কাল নাকি তুবা আসবে।তুই তুবাকে ভুলেও কিছু বলবি না।’

শাওয়াম মাথা নাড়িয়ে সায় দিল,

‘আচ্ছা।’

অন্তীর মলিন হাসে।তার অন্য চিন্তা।এটা ছোটখাট ব্যাপার নয়।অনেক বড় কিছু।শাওয়ামের মা বাবা জানানোর চেয়ে মূল কথা সাদাফ এটা সবাইকে বলে দিলে শাওয়াম এর সম্মান নষ্ট হবে।হয়েছে কাগজে একটা সাইন।সাদাফ সেটাকে বলবে বিয়ে।আর পাচকান হতে থাকলেই বিয়ে মানে যে কতদূর সম্পর্ক গড়িয়ে যায় সেটা মানুষ আরো বাড়িয়ে একদম কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে দেব শাওয়ামের গায়ে।

১৩

মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে অনবরত।মার্চ মাস।গ্রীষ্মের রোদখেলা চলছে যেন।ঘেমে যাচ্ছি আমি।তবুও আমার মনযোগ একটুও অন্যদিকে যায়নি।আমি সামনে বসে থাকা মানুষটির দিকে চেয়ে আছি।উৎসুক হয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলাম,

‘থামলে কেন আপু?বাকিটা বলো?’

মানুষটি ঢোক গিললো।শুষ্ক হাসি দিয়ে আমার কাছে এসে আমার গাল টেনে দিল।আবার বলতে শুরু করলো,

‘আমার নিজের কোন ভাই বোন নেই।বলতে গেলে আপন ভাই বোন।আমি আমার কাজিনের ই আমার আপন ভাইবোন ভাবতাম জানোতো? কিন্তু আমি তো তখনো জানতাম না কাজিন শব্দ টাই এক দিন আমার জীবনের অর্ধেকটা অন্ধকার করার কাজে নেমে পড়বে।জানো আমি না মাঝে মাঝে ভাবি এতটা সরল কেন ছিলাম?সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করতাম। এই যেমন ধরো তোমাকে বিশ্বাস করে সবটা বলে যাচ্ছি।’

আমি উঠে দাড়ালাম।আপু পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করলাম,

‘বিশ্বাস করতে পারো।আমি মরতে পারি তবুও ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারিনা।আর জানোতো মুনাফিকরাই আমানতের খেয়ানত করে।আর তোমার প্রতিটি কথা আমার কাছে একেকটা আমানত।আমি খেয়ানত করে মুনাফিক হতে পারব না।’

‘সুবহান,খুব তো লিখো।আমার গল্পটাও লিখবে একদিন?’

আমি অবাক হলাম।তার চেয়ে দ্বিগুণ আনন্দিত।উচ্ছ্বাস নিয়েই বলে ফেললাম,

‘অবশ্যই । বাকিটা যদি নাই বলো কিভাবে লিখবো?

‘তবে শুনো। তুবা আর অন্তি দুটো নামই শাওয়ামের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।কিন্তু এই মোড়টা খারাপ দিকে গেল নাকি ভালো দিকে?’

শাওয়াম চোখ বুজলো।আবার ডুবে অতীতের সেই দিনে।
#শাওয়াম
পর্ব ১২
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

‘হ্যা ভাবী বলো।’

‘তহমিনা,কিছু মনে করিস না।আমি নিরুপায় হয়ে তুবাকে তোর কাছে পাঠাচ্ছি।’

‘আরে কিসের নিরুপায়?তোমরা তো ইন্ডিয়া যাচ্ছো তুবা কটা দিন আমার কাছে থাকতেই পারে।এটা নিয়ে কেন বার বার এভাবে বলছো তুমি?’

‘শুধু ইন্ডিয়া যাওয়া কারণ হলে তো হয়েই যেত।তুবাকে আরো আগে পাঠাচ্ছি অন্য কারণে।জানি তোর বোধ হয় খুব চাপ পড়ছে।অন্তী ও নাকি তোর ওখানে।’

‘হ্যা।আরে রাখো তো।চাপের কিছু নেই।কাজের বুয়া এসে সব কিছু ঝাড়মোছ করে যায় আর আমি শুধু রান্নাটাই নিজে করি।আমার তো আরো সুবিধা হলো।শাওয়ামটা সারাদিন বাড়িতে একা থাকে।আগে তো স্কুল খোলা ছিল।এখন তো শীতের ছুটি।কয় বোন মিলে আনন্দেই থাকবে।’

‘তা ঠিক বলেছিস।শাওয়ামটা মামা বাড়ি আসলে বুঝি মেয়েটা কতোটা বন্দী খাচার পাখির মতো ছটফট করে।সারাদিন ঘরবন্দি থাকতে কার ভালো লাগে?আর ও তো ছোট।’

লায়লা বেগমের কথা শুনে তহমিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।লায়লা বেগম তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী,তুবার মা।আগামীকাল তুবা তহমিনার কাছে আসবে বেশ লম্বা ছুটি কাটানোর জন্য।ভাই বোন সবার মধ্যে কেবল তহমিনারই একটা মাত্র সন্তান।স্বামী স্ত্রী দুজনেই কাজে ব্যস্ত থাকে সারাদিন।তাই ছুটির সময় ভাই বোনদের ছেলে মেয়ে গুলোকে নিজের কাছেই এনে রেখে দেয়।এতে যেমন শাওয়াম ও কটা দিনের জন্য একাকিত্ব ভুলতে পারে তেমনি তহমিনাও বেশ নিশ্চিন্ত হয়।তহমিনা বেশ মন খারাপের সুরেই বলল,

‘কি আর করব ভাবী? একটা মাত্র মেয়ে আমার।চাকরিটা ছাড়তে চাইনা।এমনিতেই তো দেখেছো বিয়ের কত বছর পর আল্লাহ আমাদের ঘর আলো করেছেন শাওয়ামকে দিয়ে।দুজনে যা পারি মেয়েটার জন্য জমা রাখি।আমরা না থাকলে ওর যেন অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়।খুব টেনশন হয় ওর জন্য।’

‘বুঝি আমি।’

‘ও তুমি তো আসল কথাই বললে না।তুবাকে পাঠানোর আরেকটা কারণ কি?’

‘আর বলিস না।তুবা এখানে একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।ছেলেটাও ভালোনা।কেমন বখাটে টাইপের।এর আগেও এই নিয়ে ওর বাবা ওর গায়ে অবধি হাত তুলেছে।ভেবেছিল মেয়ে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু এই গত পরশুদিন ঐ ছেলের সাথে কোচিং ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দেখা করতে গেছে।কিভাবে ওর চাচা যেন দেখে ফেলে।বাড়িতে জানায়।এই নিয়ে তুমুল অশান্তি।ও তোকে তো খুব ভয় পায়।তোর কাছে থাকলে এসবে মন দিতে পারবে না।আর এখান থেকে দূরে গেলে যদি ঐ বখাটের ভূত ওর মাথা থেকে নামে।পড়াশোনা ও একদম লাটে উঠিয়েছে।যত জ্বালা আমার।তোর ভাই শুধু আমাকে দোষ দেয়।তুই বল আমি মেয়েকে সারাদিন বোঝাই।এরপর ঘরের কাজ এটা সেটা আছেই।মেয়ে যদি তলে তলে এতকিছু করে আমি টের পাব কিভাবে?তুই একটু ওকে দেখে রাখিস।’

লায়লা বেগমের কথা শুনে তহমিনার কপাল কুচকে আসলো।ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে নিজের মেয়ের জন্য না ক্ষতি করেন তিনি।তুবার এই কাহিনী নতুন না।তহমিনার ভাবী যতোই বলুক তার ও বেশ দোষ আছে মেয়ের বিগড়ে যাওয়ার পেছনে।আচ্ছা আমার মেয়ে তো মেয়ে বন্ধুর সাথে মিশতে পারে।তার গন্ডা গন্ডায় ছেলে বন্ধু কেন থাকবে?ছেলে বন্ধু থাকতেই পারে।তাই বলে এমন যে তুবার মেয়ে বন্ধু নেই বললেই চলে।তহমিনার বিরক্ত লাগছে।মন চাইছে আচ্ছা মতো কথা শুনিয়ে বলে দিতে তোমার ঐ মেয়েকে আমার বাড়ির ধারে পাঠাবে না।তবুও পারল না তহমিনা।ভাই কদিন পর ইন্ডিয়া যাবে।তাদের বিপদের সময় যদি বোন হয়ে সে এমন কান্ড করে ব্যাপারটা কেমন হবে?

তহমিনা রাগ সংযত করলো।সৌজন্যমূলক ভাবে বলল,

‘আচ্ছা ভাবি রাখছি।রান্না বসাতে হবে।তুমি তুবাকে সকাল সকাল পাঠিয়ে দিও।’

‘আচ্ছা।ভালো থাক।’

ফোন রেখে কয়টা গালি দিতে মন চাইছে তহমিনার।কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।শাওয়াম অন্তী দুজনেই আর যাই হোক তুবার মতো নয় এই বিশ্বাস তহমিনার আছে।এখন এক ঝুড়ি আমের মধ্যে একটা পোকাযুক্ত আম ছেড়ে দিলে বাকি আম ও সংক্রমিত হতে সময় নেবেনা।তহমিনার ভয় এখানে।তাকে কড়া নজর রাখতে হবে।তহমিনা মনে মনে ঠিক করলো তুবাকে শাওয়ামের সাথে একি ব্যাচে ভর্তি করে দেবে।অন্তীটা অনেক সহজ সরল।অন্তীর সাথে দেওয়া যাবে না।আর শাওয়াম একা যেতে আসতে ইদানীং কেমন ভয় পায়।তার চেয়ে বরং তুবা ওর সাথে থাক।শাওয়ামের ভয় কাটবে আর তুবা শাওয়ামকে কিছু বোঝাতে ও পারবে না কোন বিষয়ে।শাওয়াম তার মায়ের সব কথা শুনে।বড্ড বাধ্য মেয়ে।তাই তহমিনার এই চিন্তাটা কমলো।

পরের দিন সকাল হতেই তুবা হাজির।

১৪

কোচিং শেষ করে দু কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে মৃদু গতিতে হাঁটছে শাওয়াম।এর মধ্যে তুবা পেছন থেকে দৌড়ে এসে খপ করে শাওয়ামের হাত ধরে বসলো।হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

‘এই তুই আমাকে রেখে চলে যাচ্ছিস?তোকে না দাঁড়াতে বললাম?’

তুবা কথা গুলো বলতে বলতে শাওয়ামের হাতে একটা লাল গোলাপ গুজে দিল।শাওয়াম না নিতে চাইলেও জোর করে তার হাতের ভাজে ঢুকিয়ে দিল।শাওয়ামের রাগে কান্না পাচ্ছে।কোন কথা না বলে সে পিছু ঘুরে তাকালো।সাদাফ দাড়িয়ে।সাদাফ ইশারায় শাওয়ামকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিল।গোলাপটা যে সাদাফই পাঠিয়েছে এটা শাওয়ামের অজানা নয়।

তুবা এসেছে সপ্তাহ খানিক হলো।তুবা স্বভাবতই ছেলেদের সাথে বেশি ঢলাঢলি করে।আর এই ঢলাঢলি শাওয়ামের কাল হয়ে দাঁড়ালো।আসতে না আসতেই দুদিনের মধ্যে আয়াজের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলল।আর সেই সূত্রে সাদাফের সাথে।সাদাফের সাথে এতোই বন্ধুত্ব হয়েছে যে সাদাফ তার ফোনে নিয়মিত ফেক্সিলোড করে দেয়,কোচিং শেষে এটা ওটা খাবার কিনে দেয়।শাওয়াম আরো বড় ভুল করে ফেলেছে।অন্তীর কথাটা শুনেনি।সে ভেবেছিল তুবাকে ও সব বললে অন্তীর মতো তুবাও হয়তো সাদাফ আর সানিয়াকে এভয়েড করে চলবে। কিন্তু ঘটলো তার বিপরীত।

শাওয়াম ফুলটা ছুড়ে ফেলতে গেলে তুবা আটকে দেয়,

‘ফেলছিস কেন?’

‘তুমি জানোনা তুবাপু ঐ শয়তান লোকটাকে আমি ঘৃনা করি।তোমাকে তো সব বলেছি আমি।এরপরেও তুমি ঐ লোকটার সাথে কথা বলছো?’

‘দেখ তুই একটা আস্ত মাথামোটা।আর তোর মোটা মাথাটাকে আরো মোটা করেছে ঐ অন্তী।সাদাফ ভাই তোকে কত ভালোবাসে।প্রতিদিন তোর জন্য অপেক্ষা করে।তুই দেখেছিস সাদাফ ভাই এর পেছনে মেয়েদের লাইন লেগে থাকে।কত বড়লোক ওরা।ও চাইলে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পারে।কিন্ত তোকে ভালোবাসে বলে বিয়ে করেছে।’

‘ব্যাস।তুবাপু তুমি ঐ লোকটার নামে একটা কথাও বলবেনা।ঐ লোকটার মতো শয়তান একটাও দেখিনি আমি।অন্তি বুবু আমাকে বার বার বলেছিল তোমাকে যেন কিছু না বলি।আর দেখ বলে আমি নিজেই খাল কেটে কুমির আনলাম।’

‘শাওয়াম! এত বড় কথা তুই বললি! শোন এই দুনিয়াতে কেউ কারো ভালো চায়না। অন্তীর আছে টাকি? না আছে রূপ না আছে গুণ।ও কি কখনো চাইবে সাদাফ ভাই এর মতো এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তোকে বিয়ে করুক।তুই রাজ রাণী হয়ে থাক।চাইবে না বুঝেছিস? উল্টা বলব তুই অন্তীকে এসব বলে ঠিক করিসনি।’

‘আমি ঠিক করিনি? ঐ লোকটা আমাকে ফিজিক্যালি এটাচড হওয়ার জন্য প্রেসার দিচ্ছে।তুমি এখনো ওর সাপোর্ট করবে?’

‘দেখ শাওয়াম যাই বলিস সাদাফ ভাই এখন তোর স্বামী।এটা তার হক।স্বামীর মন রক্ষা না করলে তুই মরেও শান্তি পাবিনা।তুই তোর স্বামীকে শারীরিক মানসিক সব দিক থেকে বঞ্চিত রাখছিস এটা কত বড় গুনাহ জানিস?’

শাওয়ামের মাথা ধরে আসছে।মাঝে মাঝে তার মনে হয় অন্তী ঠিক।সে মিশতে নিষেধ করে।আবার মনে হচ্ছে তুবাও কিছু ভুল বলছে না।কেউ তো এই দুনিয়াতে কারোর ভালো চায়না।তুবা তাকে দিনরাত বোঝাচ্ছে সে মস্ত বড় গুনাহ করছে।তার উচিত সাদাফকে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া।শাওয়ামকে চুপ থাকতে দেখে তুবা বলে উঠলো,

‘দেখ তুই হয়তো আগে সাদাফ ভাইকে খারাপ জানতিস।এখন ভাই তোর স্বামী। তুই ভালোবাসার চেষ্টা কর দেখবি তুই খুব ভালো থাকবি।আর অন্তিকে তো এসব নিয়ে কিছু বলবি না।ও সহ্য করতে পারছেনা যে তুই এত ভালো বর পাস।তোকে ভুলভাল বোঝাচ্ছে।দেখ তুই গুনাহ করিস না স্বামীর মনে কষ্ট দিয়ে।এখন মরে যা দেখিস জাহান্নামে যাবি এই জন্য।’

(বাস্তবের তুবা চরিত্র শাওয়াম কে এইরকম ধর্মীয় ভীতি দেখিয়েছিল।তাই লাইন গুলো আমার লেখা হলেও তার বলা।যেহেতু বাস্তবতা তুলে ধরছি তাই তার কথা গুলো সেভাবেই লিখছি।ঠিক কিভাবে একটা মেয়ের ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছিল।না হলে আমি তুবার কথা সমর্থন করিনা।যেখানে বিয়েই হয়নি সেখানে গুনাহ র প্রশ্ন আসেনা।অনেকে ধর্মীয় ব্যাখার বিষয় আনতে পারেন।এজন্য আমি বিষয়টা ক্লিয়ার করলাম।আশা করছি কারো প্রশ্ন থাকবে না।)

শাওয়াম ভয়ে আতকে উঠলো।তুবার কথা যদি সত্যি হয় সে যদি ঘোর অন্যায় করে তার তো কঠোর শাস্তি হবে।তাহলে কি করবে সে?তুবার কথা মতো কি সাদাফকেই স্বামী হিসেবে মান্য করবে? ভালোবাসবে তাকে?

চলবে————-
চলবে————–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here