শাওয়াম পর্ব -১৩+১৪

#শাওয়াম
পর্ব ১৩
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

১৫

‘দাদাভাই,দেখোনা তানভীর আমার সাথে কথাই বলছে না।’

‘ওহ তুবা,রিল্যাক্সড।আমি আছিতো।’

‘উফ আর ভালো লাগেনা।একে তো বাড়িতে আম্মুর বকবক সারাদিন একটু প্রেম করেও শান্তি নেই।আর এখানে এসে পেলাম এক হিটলার ফুফু।তানভীর তো এর জন্য আমার সাথে যোগাযোগ ও করতে চাইছে না।আমাকে এভয়েড করছে ও।’

কথা শেষ হতেই তুবা ন্যাকা কান্না জুড়ে দিল।সাদাফ তুবার কাঁধে হাত রাখলো।কাধ ছাড়িয়ে তুবাকে জড়িয়েই নিল নিজের সাথে।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সান্ত্বনা দিচ্ছে তুবাকে।এদিকে তুবাও বেশ মুখ গুজে ন্যাকা কান্না কাদছে।

দূর থেকে এই দৃশ্য শাওয়ামের চোখ এড়ালো না।ঘেন্নায় গা ঘিনঘিন করছে তার।একটা অপরিচিত ছেলেকে এভাবে কিভাবে জড়িয়ে ধরলো তুবা? শাওয়াম ভাবতে পারেনা।একে তো সাদাফ তার স্বামী তাই তার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেও দ্বিধা লাগে শাওয়ামের।ঘেন্না লাগে।এই নিকৃষ্ট মানুষটা তার স্বামী ভাবতেই নিজের কাছে নিজে একবার করে আত্না বিসর্জন দেয় যেন।মাঝে মাঝে তার মাথায় উল্টা পাল্টা চিন্তা করে।কখনো বা দড়ি,কিংবা ওরনা কখনো বা ব্লেড দেখলে তার মাথায় আত্নহত্যা নামক পোকা গুলো যেন বাসা বাধে।কখনো বা চব্বিশ ঘন্টা তারা মাছির মতো কানের কাছে ভন ভন করে।একটু ফ্যানের সাথে দড়ি বেধে গলাটা ভেতরে ঢুকালেই হলো নতুবা ব্লেড দিয়ে তারা ধবধবে সাদা চামড়াটায় একটু দাগ কেটে দিল।দাগটা ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হবে।ধীরে ধীরে রক্তিম বর্ণ ধারণ করবে।ব্যস তাহলেই তো শেষ।আর শুনতে হবে না মায়ের বকুনি,আর কেউ তাকে দিনরাত পড়তে বলবে না,ঘরের চার দেয়াল আর হবেনা তার সঙ্গী,না থাকবে এই সাদাফ নাম,না থাকবে সম্মান হারানোর ভয়।না তাকে দিনরাত একবার অন্তী একবার তুবা দুজনের কথার মাঝে মাঝ নদীতে নাকানি চুবানি খেতে হবে।পরক্ষণে আবার ভাবে শাওয়াম আত্নহত্যা অন্যায়।মহাপাপ এর শাস্তি যে জাহান্নাম।

আজকাল শাওয়াম কেন যেন অন্তীকে সহ্য করতে পারেনা।তুবার কথামতো সে নিয়মিত সাদাফের ফোন রিসিভ করে।রাত জেগে বেলকনিতে দাড়িয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলে।সাদাফের বিশ্রী ইচ্ছে গুলোর কথা শুনে।চুপচাপ ঢোক গিলে সব হজম করে।তুবা তাকে বার বার বলেছে সাদাফ তার স্বামী।তার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে তার জীবনে ভালো হবেনা।কিন্তু একটা বিষয় শাওয়াম বেশ লক্ষ্য করেছে তুবা নিজের স্বার্থের জন্য সাদাফের সাথে এত খাতির করেছে।কদিনেই একদম গলায় গলায় ভাব।দাদাভাই দাদাভাই করে।সানিয়াকে তো শাওয়ামের ননদ ধরে বেয়ান বেয়ান বলে ডাকে।কি একটা অবস্থা।সব কিছুর মাঝে শাওয়াম যেন নিজেকে গুলিয়ে ফেলেছে।মাঝে মাঝে নিজেকে রিমোট কন্ট্রোল করা খেলনা মনে হয়।বাবা মা বলছে তো সারাদিন পড়ছে।ঘুমানোর জো নেই।সাদাফ যখন তখন যা বলছে করতে হচ্ছে তাকে।সবাই যেন তাকে পুতুল ভেবে নিয়েছে।নিজেকে খাচার পাখি মনে হয় শাওয়ামের।

সাদাফ আর তুবা ওভাবেই আছে বেশ অনেকক্ষণ।সানিয়া দ্রুত গতিতে হেঁটে এসে দুজনকে ছাড়িয়ে নিল।কটমট করে সাদাফের দিকে তাকালো।ইশারায় পেছনের দিকে শাওয়াম আছে সেটা বললো।

‘ভাইয়া,মাঝ রাস্তায় কি শুরু করেছিস?তোর বউ এটা না ওটা।’

সানিয়ার কথা শুনে তুবা বেশ লজ্জা পেল।তার মুখে লাজুক আভা।সাদাফ শাওয়ামের দিকে এক নজর তাকালো।শাওয়াম বিরক্তি নিয়েই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।এক গাল হেসে সে বললো,

‘আরে বোনু এটা নরমাল।জানিস না শালী আদি ঘর ওয়ালি।কি তাই না তুবা?’

সাদাফের কথা শুনে তুবা যেন আর লজ্জায় পরে গেল।লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারছে না।সাদাফের বেশ লাগছে।এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতোন অনুভূতি।

‘কিন্ত শালি সাহেবা,তুমি নিজ স্বার্থ হাসিল করাতে ব্যস্ত।আমার দিকটাও তো একটু দেখতে হবে তোমাকে।’

সাদাফের কথার সাথে সাথে তুবা চোখ তুলে তাকালো।সাদাফের কথার অর্থ একটাই শাওয়াম।তুবা সাদাফকে আশ্বস্ত করলো,

‘দাদাভাই,তুমি তো জানো ও একটু এমনই।আস্তে আস্তে সব পাবে।একটু ধৈর্য ধরো।ও তোমাকে ভালোবাসবে।’

‘শাওয়াম আর ভালোবাসা তাও নাকি আমি!’

‘হুম।হবে হবে সব হবে।এই তুবা থাকতে তোমার চিন্তা নেই।আমি সব শিখিয়ে দেব।’

‘সবব শিখিয়ে দেবে!’

‘হ্যাঁ সব শেখাব।’

‘সবব কিছু মাথায় থাকে যেন।’

সাদাফ বিশ্রি হাসি দিল সাথে কামুক দৃষ্টিভঙ্গি।তুবাও মাথা কাত করে তার সায় দিল।

‘দাদাভাই,এখন সব বাদ দেও।আগে আমার ব্যবস্থা কর।’

‘শালি সাহেবা,যেহেতু তুমি আমার আদি ঘর ওয়ালি।তাহলে সেই আদি ঘর ওয়ালির সুষ্ঠু ব্যবহার করি কি বলো?’

‘মানে?বুঝলাম না।’

‘প্রেম প্রেম খেলব।দেখবে আমার সাথে তোমার রিলেশন এই টাইপ কিছু যখনি তানভীরকে বলবে না বেচারা একদম জেলাস হবে।একদম যাকে বলে পোড়া পোড়া গন্ধ পাবে।’

‘সিরিয়াসলি!’

‘হুম।’

‘কিন্তু করবে কিভাবে?’

‘আচ্ছা তোমাদের বাসা কি ফাঁকা থাকে না কখনো? এই ধরো আমি তুমি খুব ক্লোজ ক্লোজ হয়ে তানভীরকে কিছু ছবি পাঠালাম।রাস্তাঘাটে বিষয়টা দেখেই বুঝবে সাজানো।আমরা যদি কোন বেডে গিয়ে,,,,আই মিন ক্লোজ ছবিই তো তুলব তাই না?’

তুবা সাদাফের কথায় কিছুটা ভেবে উত্তর দিল,

‘দাদাভাই কালকেই তো ফাঁকা আছে।ফুফা ফুফী তো অফিসে যাবে।আর আমাদের কোচিং এ কাল পরীক্ষা নেব।কাল মর্নিং শিফটের পরের দিন আমাদের।কাল আমাদের প্রাইভেট অফ।কিন্তু অন্তীর প্রাইভেট আছে।তাই ও বাড়িতে থাকবে না।শুধু আমি আর শাওয়াম।’

‘ওয়াও দ্যটস গ্রেট।তাহলে কালকেই সব হচ্ছে,,,, আই মিন তোমাদের বাড়িতে ফাঁকা বাড়িতে আমি আর তুমি আর শাওয়াম তো আছেই।’

‘হুম।আমি তোমাকে কল করে যখন বলব তখনি চলে এসো।প্রায় চার ঘন্টার মতো সময় পাবে শুধু আমরা দু জন ই থাকব।’

‘ওকে মাই ডিয়ার আদি ঘর ওয়ালি।এইবার যাও আমার বউ দেখো দাড়িয়ে দাড়িয়ে কষ্ট পাচ্ছে।ওকে বরং একটু কাছে এনে দেও।’

‘যাস্ট ওয়েট দাদাভাই।’

তুবা শাওয়ামের কাছে গেল।সানিয়া এতক্ষণ চুপ করে ছিল।তুবাকে যেতে দেখেই সাদাফের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

‘ভাইয়া তুই করছিস টা কি? তুই তো দেখছি গাছের ও খেতে চাস আবার তলার ও কুড়াতে চাস।’

‘যাই বলিস এই তুবা একটা জিনিস।কপাল করে এই সময়ে এখানে ওকে পেয়েছি।দেখেছিস কদিনে শাওয়ামের মাইন্ড কিভাবে চেন্জ করে ফেলছে।এই শালি এক পিস।ও ওর স্বার্থ রক্ষা করবে আর আমি আমার।তোর ঐ সুন্দরী বান্ধবীকে দেখার আমার অনেক দিনের শখ।যাস্ট একবার বাগে পাই ইচ্ছে মতো খেলে ছেড়ে দেব।এই তুবাই এই কাজটা করে দেবে দেখিস।’

‘যাই বলিস তুবা বোনের কত ভালো চায় বোঝা হয়ে গেছে।’

‘তুবা আর ভালো? ওর মতো ৪২০ টাইপের মেয়ে না আমি খুব কম দেখেছি।গভীর জলের মাছ।দেখলেও বোঝা ও যায়না এইটুকুন মেয়ে এতদূর চলে গেছে।’

‘তা যা বলেছিস।’

শাওয়াম এতক্ষণ দূরে দাড়িয়ে ছিল।বিরক্ত লাগছিল তার।এতক্ষণ ধরে তুবা ঐ শয়তানটা আর ওর ডাইনি বোনের সাথে কি কথা বলছিল শাওয়াম বুঝতেই পারছেনা।চোখের পলকে তুবা এসে তার মুখোমুখি দাঁড়ালো।

‘এই তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?দাদাভাই ওখানে একা দাড়িয়ে আছে।তুই এত বেয়াদব কবে হলি শাওয়াম বলতে পারিস?এত করে তোকে বলছি দিনরাত তোর শুকরিয়া করা উচিত কপাল করে দাদাভাই এর মতো মানুষকে স্বামী হিসেবে পেয়েছিস।তা না সব সময় শুধু ওনার থেকে দূরে দূরে থাকিস।সমস্যা কি তোর হ্যাঁ?’

তুবা শাওয়ামকে টানতে টানতে সাদাফের দিকে নিয়ে গেল।
#শাওয়াম
পর্ব ১৪
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

১৬

সামনে থাকা মানুষটি কথার মাঝে থেমে গেল।আফসোস ভরা মুখটা তার।নিজের বোনের মতো যাকে দেখেছে সেই যখন পিঠে ছুরি মারে এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে!আমিও নিরব হয়ে রইলাম।সে বলছে বলুক।আমি জানি পরের ঘটনাগুলো সুখকর নয়।এর আগেও এর সংক্ষেপ শুনেছি।আজ বৃহৎ বর্ণণা জানতে মন চাইছে।

অপেক্ষা আর কতক্ষণ? কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে তার হাত ধরে টানতে টানতে বললাম,

‘আপু প্লিজ পরেরটা বলো।আমার এত ধৈর্য নেই।’

‘এতেই ধৈর্য হারা হয়ে পড়লে?হা হা।’

আপু একটু হাসলো।আবার নিজের মতো বলতে শুরু করলো,

‘পরের দিন তুবা সাদাফকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিল।আমি ঐ সম্পূর্ণ সময়টা ঘরে দরজা লাগিয়ে ছিলাম।ওরা কি করছে না করছে আমি দেখতে যাইনি।আমার ভয় হচ্ছিল।আমি সামনে গেলেই সাদাফ উল্টা পাল্টা কিছু করবে।ঐদিন নিয়তি আমার সাথে ছিল।ওরা বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি।সাদাফের কি একটা ফোন আসে।একটা কাজে সে দ্রুত বেরিয়ে যায়।তুবার কাজটাও হয়তো হয়ে গিয়েছিল।এদিকে তুবার এস এসসি পরীক্ষার সময় চলে আসে।ও নিজের বাড়ি চলে যায়।তুবা যাওয়ার পর আমি সাদাফের সাথে সব যোগযোগ বন্ধ করে দেই।নতুন ক্লাসে উঠি।আমাকে বাড়িতেই প্রাইভেট টিউটর দেওয়া হয়।কোচিং ক্লাস আর না।স্কুল টাইমে যেতাম অন্তী আপু আমার সাথে যেত।সাদাফ পাগলের মতো হয়ে গেছিল আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য।আরেকটা জিনিস ঘটে।আমার ক্লাসের বন্ধুরা কিছু আচ করেছিল।তারা ভেবেছিল সাদাফ ভাই এর সাথে আমার রিলেশন।সানিয়াকেও তখন বেশ এড়িয়ে চলতে পেরেছি এ কারণে। এর মধ্যে সাদাফ একদিন আমাদের ল্যান্ড লাইনে কল দেয়।যেহেতু আমি একা বাড়িতে থাকি সারাদিন তাই আমি ফোন রিসিভ করতে যাই।অন্তী বুবু ও তখন নেই এখানে।সাদাফ ফোন করেছিল।আমাকে হুমকি দেয় ওর বাড়ি গিয়ে ওর সাথে দেখা করতে।বলে সে নাকি অসুস্থ।আরো কত কথা।আমি না গেলে কাবিন এর কাগজ এনে সবাইকে দেখাবে।বাধ্য হয়ে আমি যাই।একলা যাওয়া ঠিক হবেনা বলে আমার কাছের বান্ধবী নুরকে নিয়ে যাই।ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখি ও ছাড়া কেউ নেই।নুরকে দেখে অবাক হয় শয়তানটা।আমাকে বলে আমার সাথেই কি কথা আছে।আলাদাভাবে বলতে হবে।আর অসুস্থতা না সব মিথ্যা কথা ছিল।আমাকে জোর করে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে।সেদিন ও আমার ওপর অনেক জোর জবরদস্তি করে।ফিজিক্যালি এটাচড হওয়ার জন্য।কিন্তু পারে না।আমি চিৎকার করতে পারছিলাম না আমার মুখ ও নিজের হাত দিয়ে চেপে রেখেছিল।আমার বান্ধবীর কি মনে করে বলে সাদাফ ভাই দরজা খুলেন ওর কোন ক্ষতি করবেন না,আমি লোক ডেকে আনব।শয়তান টা আমাকে ছেড়ে দেয়।কিন্তু তখনো বুঝিনি ওর মাথায় এত শয়তানি ঘুরছে।ও এমনিতেই খালি গায়ে ছিল সাথে ছিল থ্রি কোয়াটার একটা ট্রাউজার পরা।কি মনে করে দরজা খোলার আগে ওর ওপরেই ও লুঙ্গি পরে সামনে ভাজ গুজতে গুজতে দরজা খুলে।ও প্রায় আধ ঘন্টার মতো আমার সাথে জোর জবরদস্তি করার চেষ্টা করেছিল।প্রথম দিকে কথা বলতে শুরু করলেও আস্তে আসতে ক্লোজড হতে থাকে।এরপর আমার বান্ধবীর কি হলো জানিনা।ওখান থেকে তো আমরা, চলে আসলাম।বান্ধুপী পুরো ক্লাসে ছড়িয়ে দিল আমার সাথে সাদাফ শারীরিক সম্পর্ক করেছে।এজন্য আমি ওর বাড়ি গেছিলাম।আর ও এর প্রুফ হিসেবে বলে ও নিজে দেখেছে সাদাফকে লুঙ্গি পরতে পরতে আসতে।সে তো ট্রাউজার পরা ছিল।ব্যস কিছু না করেও আমার থেকে সব বন্ধুরা যেন সরে যাচ্ছিল।’

‘ছিহ!এত জঘন্য মানুষ!যাক তাও তো তোমার সম্মান বেচেছে ।’

‘বাচেনি সুবহান।আমি তার কাছে রেপড হয়েছি সেদিন না হলেও পরে।’

‘হোয়াট!’

‘হুম।সেদিন সাদাফ ওর ঘরের ফ্যানের সাথে ক্যামেরা লাগিয়ে রাখে।পুরোটা ভিডিও রেকর্ড হয়েছিল।দুদিন পর সাদাফ নিজে আমাকে সেটা দেখায়।এইবার শুরু হয় ওর আরেক নোংরামি।আমি স্কুলে যাওয়া ও বন্ধ করেছিলাম।এটি সেটা অজুহাত দিয়ে।কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।ওর সাথে যোগাযোগ অফ করতেই ও রীতিমতো আমার বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে থাকত।আর হ্যা স্কুলের ফ্রেন্ড থেকে ঐ সব ঘটনা মা বাবার কান অবধি তখনো পৌঁছাতে পারেনি।কারণ একটাই।সাদাফ ই তাদের মুখ বন্ধ করেছিল।ও তো শুধু নিজের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টায় ছিল।এরপর ও আবার ল্যান্ড লাইনে কল দেয়।সেদিন আমাদের বাড়ির নিচে দাড়িয়ে কল দিয়েছিল।ঐদিন ও আমাকে বলে আমি না গেলে ও সেই ভিডিও কাবিনের কাগজ সবাইকে দেখাবে।আমি অবশেষে পরে আবার একদিন যাই ওর বাড়িতে।ও আমাকে বলেছিল ও আমার কোন ক্ষতি করবে না।বাট সেদিন আমাকে সুযোগ দেয়নি।আমাকে রেপড করে সাদাফ।’

কথা বলার মাঝে সামনের মানুষটি এবার কেঁদে ফেললো।আমি বুঝতে পারছি না কি বলে তাকে সান্ত্বনা দেব।নিজেই কান্না করতে করতে আবার বলতে শুরু করলো,

‘ঐ দিনের পর আমি টোটালি ডিপ্রেশনে চলে যাই।সাদাফ আর আমি ছাড়া কেউ জানতো না এই ঘটনা।এটলিস্ট যখন সব জানাজানি হয়েছে তখনো না।আমার শুধু মনে হতো নারীর মূল সম্পদ তার ইজ্জত আর সেটাই চলে গেছে আমার।আমাকে আর কোন পুরুষ স্পর্শ করতে পারবে না।আমি তখন এটাই মানতে শুরু করি সাদাফ ই আমার স্বামী।আমি ওকে ভালোবাসতে শুরু করি।শুধু এই এক কথা কেউ জানলে আর কোনদিন আমার বিয়ে হবেনা।সাদাফ ই যখন সব শেষ করে দিল তাহলে শেষটা ওর হাতেই হোক।আমার জে এসসি পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়।মা বাবার কানেও বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে আংশিক তথ্য আসে।তারা আমাকে জেরা করে।আমি কিছুই বলতে পারিনি তাদের।মা অন্তী আর তুবাকে বাড়িতে আনে।অন্তী আর তুবা দুজনেই সব কিছু বলে দেয় তাদের।কিন্তু সেদিন তুবা আমার সাথে যেটা করলো ভুলব না।ও সবার সামনে বলে আমার শারীরিক চাহিদার জন্য আমি সাদাফকে তুবার সাহায্যে বাড়িতেও এনেছি।অথচ তুবা নিজ প্রয়োজনে আনলো দোষ হলো আমার।সাদাফের পরিবারের সাথে এটা ওটা অনেক ঝামেলা চলতেই লাগল।পুরো এলাকায় আমার বদনাম।অথচ দোষ সাদাফের ছিল আমার দোষ ছিল আমি মা বাবার ভয়ে সব লুকিয়েছি।আমি চরিত্রহীন উপাধি পেলাম।মা বাবাও আমার দিকে ঘেন্নার চোখে তাকাতো।কথা বলতো না আমার সাথে।আমার প্রাইভেট টিউটর আর মা বাবা ছাড়া সে সময়টা কেউ আমার পাশে থাকেনি।এর মধ্যে সাদাফ একদিন আমাদের বাড়িতে আসে।মা বাবার থেকেই অনুমতি নিয়ে আমার সাথে কথা বলে।সেদিন জানতে পারি ওর শুধু আমার দেহটা দরকার ছিল।রেপড হওয়ার পর ও অনেকবার আমাকে জোর করতো কিন্তু তখন আমি এই টপিক খুব এড়িয়ে যেতাম।সাদাফ এর উদ্দেশ্য ছিল আমার জীবন নষ্ট করা।সেটা সে করেছে।তার ডেইলি বেড পার্টনার হিসেবে না পেলেও সে একদিনের জন্য হলেও আমার সব শেষ করেছে।এটাতেই সে সেটিসফাইড।এরপরেও এলাকায় থাকা মুশকিল হয়ে গিয়েছিল।না পেরে বাবা ক্ষমতাধর নেতাদের শরণাপন্ন হয়।বাধ্য হয়ে সাদাফ আমার জীবন থেকে সরে যায়।আমরা এলাকা ছাড়ি।’

‘তারপর?’

‘এরপর আমার জীবনে ভালোবাসা আসে।খুব ভালোবাসতাম তাকে আমি।কিন্তু,,,,,।’

‘আবার কিন্তু!’

চলবে————-
চলবে,,, ,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here