শাওয়াম পর্ব -০৬+৭

#শাওয়াম
পর্ব ৬
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

সন্ধ্যা বেলা।

বিদ্যুৎ নেই।হুট করে এলাকার বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারে আগুন ধরেছে।পুরো এলাকায় এখন আধার ছেয়ে গেছে।এমনিতেই প্রাকৃতিক আধার বলা যায়।প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে সূর্য অস্তমিত হতেই ধীরে ধীরে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে লাল আভা।কখনো বা কমলা রঙের মনে হয় দূর থেকে।কখনো বা দেখতে লাগে এক আকাশ আগুন বিচ্ছুরিত হচ্ছে,ছড়িয়ে পড়ছে পুরো পৃথিবীর বুকে,এ যেন অদৃশ্য উত্তাপবিহীন অগ্নুৎপাত।ঘরের ভেতর মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছে শাওয়াম।গুণে গুণে তিনটা মোমবাতি।মোমবাতির আলো তার বেশ লাগে।নিভু নিভু করে জ্বলে।মনে হয় এই বুঝি একটু হাওয়া ছুঁয়ে দিল অমনি মোমবাতি লজ্জায় নত হওয়ার মতো করে নিভে গেল।এক দম লজ্জাবতী লতার মতো।উহুম বললে ভুল হবে।একদম মেয়েদের মতো।লাজুক স্বভাব।আচ্ছা তবে কি মোমবাতি স্ত্রী লিঙ্গ! শাওয়াম ভেবে পায়না।তবে আবার মনে পড়ে কি উদ্ভট প্রশ্ন জাগছে তার মনে।শাওয়াম একটু হাসলো।ম্লান সে হাসি।স্কুল থেকে ফিরে চুপচাপ ঘরে ঢুকেছে তো ঢুকেছে।বের হওয়ার নাম নেই তার।কপালে শুধু চিন্তার ভাজ,ক্রমশ তারা আরো জটলা পাকাচ্ছে।

কি থেকে কি ঘটে গেল! কাউকে কিছু বলতেও পারছে না সে।দম বন্ধ পরিবেশন।তার দেহটা যেন জেলের বাইরে আর মনটা কারাবন্দি।মুক্তি চাই!মুক্তি! এই সাদাফের থেকে মুক্তি।কি করবে সে?চোখের পানি শুকিয়ে চোয়ালের সাথে আঠার মতো লেগে আছে।বিদ্যুৎ নেই তো ভালোই হয়েছে আজ শাওয়ামের জন্য।অন্ধকারে কেদেই চলেছে।কেউ ধরতে পারবে না।আর রইলো মোমবাতির আলো।সেখানে তো ছায়ার প্রতিচ্ছবি আরো প্রকট।মুখের কাছে ধরলে যেন তার সুন্দর মুখটার ভেতর ও দেখা যাবে চোখের নিচে কালি পড়েছে।

রান্না ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আলু পুরির জন্য ছোট্ট ছোট্ট রুটি বানাতে ব্যস্ত তহমিনা।বিদ্যুৎ নেই।ইন্ড্রাকশন কুকারে আর ভাজতে পারছেন না।গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে কড়াইতে একের পর একটা করে পুরি ভেজে চলেছেন।এদিকে অবশিষ্ট লেচি গুলো বেলে আলু পেঁয়াজের পুর ভরে আর কয়েকটা বানাচ্ছেন।মাঝে মাঝে রান্না ঘরের দরজা দিকে উঁকি দিচ্ছেন বাইরের দিকে।রান্না ঘরের দরজা থেকে তাকালে কোনাকুনি বাধে শাওয়ামের ঘর।অন্যদিন পুরি ভাজার কথা শুনলে দুপুর থেকে নেচে নেচে বাড়ি মাথায় তুলতো।আজ তার খোঁজ ই নেই!তহমিনার কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে।মনটা ভালো ঠেকছে না।যখনি সে রান্না করে সব সময় মেয়ে মায়ের পাশে থাকে।হাতে পিঠে কিছু না করলেও বকবক করে মায়ের মাথা খারাপ করে।আজ স্কুল থেকে ফেরার পর থেকেই কেমন চুপ হয়ে গেছে।কয়েকবার মেয়ের চোখের জল চোখ এড়ায়নি তহমিনার।কিছু জিজ্ঞাসা করতে গেলেই শাওয়ামের স্পষ্ট উওর আসে,মাইগ্রেনের ব্যথা বেড়েছে।তহমিনার মন সায় দিচ্ছে না।কেন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।এদিকে রাশেদ ও বাড়িতে নেই।ফ্রিজে মাছ নেই।তরকারি মাছ ছাড়া রাধলে তো স্বাদ হয়না।তাই সন্ধ্যা বেলায় বেরিয়ে গেছেন বাজারের উদ্দেশ্য।সকালের মাছ পাওয়া যাবে।যদিও টাটকা না।তবুও সন্ধ্যার পর মাছ বাজারে কম মূল্যে মাছ পাওয়া যায়।এক দু টাকা সাশ্রয় হলেও লাভ।

পুরি ভাজা শেষ।তহমিনা এটো বাসনগুলো বেসিনের ওপর রেখে দিলেন।ছোট্ট গামলায় করে বেল ফোলা ফোলা কটা পুরি নিয়ে ট্রেতে সাজালেন।সসের বোতল থেকে একটা পিরিচে সস ঢেলে এগিয়ে গেলেন শাওয়ামের ঘরের দিকে।

দরজা খোলার শব্দ পেয়েই কিছুটা নড়ে উঠলো শাওয়াম।পিছন ঘুরে তাকালো।তহমিনা ছোট ছোট কদম ফেলে মেয়ের দিকে এগিয়ে আসছেন।দেখতে দেখতে বিছানার ওপর ট্রে টা রেখে শাওয়ামের মুখোমুখি বসলেন।

ছোট্ট হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,

‘মা,তোর কি হয়েছে বলতো?সেই এসে থেকে মন খারাপ করে আছিস।’

শাওয়াম ম্লান হেসে জবাব দিল,

‘কিছু না মা।তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো।’

‘পুরি ভাজছিলাম।একবার ও গেলিনা রান্না ঘরে।’

‘মাথা ব্যথাটা এখনো কমেনি।উঠতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।’

‘ওহ।নে খেয়ে নে তো।গরম গরম ভেজে এনেছি।খেয়ে নে তো।আরেকবার মাথা ব্যথার ওষুধ খাবি।’

‘আচ্ছা।’

‘কপালে একটু বাম লাগিয়েছিস?’

‘ধুর ।ওসবে জীবনে মাথা ব্যথা কমে না।যত্তসব টাকা নেওয়ার ধান্দা।চোখ মুখ জ্বলে উল্টা।’

‘একটু লাগিয়ে দেখতি।’

‘বাবা কোথায়?’

‘বাজারে গেছে।ভালো কথা মনে করেছিস।’

‘কি কথা?’

‘তোর বাবা বাজারে যাওয়ার আগে ফোন এসেছিল।তোর অন্তী আপু আসছে।’

অন্তীর নাম শুনেই শাওয়ামের চোখেমুখে খুশির ঝলকানি।অন্তী শাওয়ামের খালাতো বোন।ছোট থেকে দুজনের বেশ খাতির।এই একজন মানুষ যার সাথে সব কথা শেয়ার করে সে।অবশ্য শাওয়ামের আরো একজন কাজিন আছে।যেহেতু নিজের আপন ভাই বোন নেই চাচাতো,মামাতো,ফুফাতো,খালাতো যত ভাই বোন আছে সবাই শাওয়ামকে অনেক ভালোবাসে।আর সে ও তাদের আপন করেই দেখে।

মেয়ের মুখের হাসি তহমিনার চোখ এড়ালো না।নিজেকে শান্ত করলো সে।অবশেষে মেয়ের মুখের হাসি দেখেছে।আর কি লাগে!

তহমিনা ব্যস্ততার ভঙ্গিতে বললো,

‘সব গুলো শেষ করবি।আমি তোর বাবার জন্য আলাদা করে ঝাল কম দিয়ে পুরি ভেজে আসি।’

শাওয়াম মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল,

‘আচ্ছা।’

তহমিনা চলে যেতেই শাওয়াম একটা পুরি তুলে নিয়ে কামড় বসালো।মনে যেন কিছুটা বল পাচ্ছে সে।অন্তীর কাছে নির্দ্বিধায় নিজের সব কথা বলতে পারবে সে।সে নিশ্চিত তার অন্তী আপু তাকে ঠিক বুঝবে।আর ঐ রাক্ষস,শয়তান সাদাফের থেকেও বাঁচতে সাহায্য করবে।

রাত এগারোটা বাজে।

চৌমাথার বাজারের এক কোনে বিরাট বটগাছ।তার পেছন থেকে সরু খাল বয়ে গেছে।খালের পাশ দিয়ে ধানী জমি।একপাশে সাদাফের বাবার বিশাল আম বাগান।আম বাগানের মধ্যখানে বেশ খানিক জায়গা জুড়ে ছোট্ট মাঠের মতোন।ঐ ফাঁকা জায়গাটায় একদল ছেলে গোল করে বসে আছে।মাঝখানে কাঠ,লতা,পাতা দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছে।রাত যত গভীর হবে ততোই এখানে আরো আসর বসবে।নেশাখোরদের আড্ডাখানা।এলাকার কেউ কিছু বলতে পারেনা।কিছু বলতে গেলেই সাদাফের বিশ্রী গালিগালাজ তার সাথে সেই এক কথা,আমার বাপের জায়গায় যা ইচ্ছে তাই করব।তাতে তোদের কি মাতারি?

আজ ও ব্যতিক্রম না।মদের নেশায় ডুবে আছে সাদাফ।তার পাশে তাকে ঘিরে বসে আছে তার বন্ধুরা।মোট পাঁচজন বসে আছে।সাদাফ মদের বোতলে ঠোট ছোয়ালো।পকেট থেকে ফোন বের করলো।হুট করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।সাদাফের আচরণ দেখে বাকি চারজন হাতের তাস ফেলে সাদাফের দিকে তাকালো।

আয়াজ বিরক্তি নিয়ে বললো,

‘মাঝরাতে কি তোকে ভূতে ধরেছে?’

আয়াজের বিরক্তির সুর শুনে সাদাফ পাশ ফিরে তাকালো।আয়াজ তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।কিন্তু তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড গুলো ছাড়া আর সকল বিপদে আপদে আয়াজকে পায় সে।আয়াজ সাদাফের সাথে মিশলেও অতোটা খারাপ নয়।বলতে গেলে ল্যাংটা কালের বন্ধু দুজন তাই তো কেউ কাউকে ছাড়তে পারেনা।আয়াজ সব সময় তাদের সাথে আড্ডা জমাতে আসে না।আজ নির্ঘাত বাজারে সাদাফের সাথে দেখা হলো রাতে তাই তাকে টেনে এনেছে সাদাফ।

সাদাফ হাসি থামিয়ে বললো,

‘আরে ব্রো!চিল যাস্ট চিল।এখন তো একটা গুরুত্ব পূর্ণ কাজ করব।তাই তার আগে মন খুলে হেসে নিচ্ছি।’

আয়াজ প্রশ্ন করে বসলো,

‘তোর আবার গুরুত্বপূর্ণ কাজ!কি কাজ শুনি?’

‘আমার কাগজে কলমের বউ কে মেসেজ দিতে হবে না!প্রেম হবে প্রেম।ইশ!বাসর টা যে কবে করব!’

সাদাফের কথার সাথে বিশ্রী লোভাতুর অঙ্গভঙ্গি।অন্য বন্ধুরা হেসে মজা নিচ্ছে।আয়াজের বিষয়টা একদম পছন্দ হলো না।শাওয়ামের ক্ষেত্রে তো একদম না।মেয়েটাকে ছোট থেকে দেখেছে সে।মিষ্টি একটা মেয়ে।ঠিক যেন পুতুল।

সবার কথার মাঝে সাদাফ মেসেজ টাইপ করে পাঠালো শাওয়ামের নাম্বারে।আয়াজ সাদাফের দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকালো।ব্যথিত কন্ঠে বললো,

‘ঐ মেয়েটাকে ছাড় দিলে হয়না!’

সাদাফ আয়াজের কথা শুনে আরেক দফা হেসে বললো,

‘কেন?তোর জ্বলছে কেন?ওকে নিয়ে পড়েছি বলে?’

আয়াজ উওর দিল না।নিরব রইলো।মদের গ্লাসে চুমুক দিল।সামনে আগুনের ধোয়া।আয়াজ যেন সেই ধোয়ায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে এক ললনার চোখ,পিছু ঘুরে তাকানো।ঠোঁটের কোনের বাকা হাসি।খোলা চুল।আর কি লাগে!
#শাওয়াম
পর্ব ৭
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

রাত দুটো বাজে।রান্নাঘর থেকে ভাজা বাদামের বয়ামটা হাতে করে নিয়ে পা টিপে টিপে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে শাওয়াম।ভুলেও লাইট অন করলো না।কোন ভাবে তহমিনা টের পেলে তো খবর।উঠে এসে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে তবেই যাবে।ঘুম না এলে প্রয়োজনে ঘুম পাড়ানি মাসি পিসিকে বাপের বাড়ি থেকে তলপি তলপা গুছিয়ে টেনে আনবে চোখের পাতা নামক শ্বশুর বাড়ির দুয়ারে।মায়ের কোমল হাতের স্পর্শে যে কেউ ঘুমাতে বাধ্য।কিন্তু ঐ যে সব সময় প্রিয় জিনিস গুলো যে প্রিয় থাকেনা।বছরে একবার হলেও তাদের ওপর বিতৃষ্ণা জন্মে।শাওয়ামের আজ ইচ্ছে করছে রাত জাগতে।রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমানোর ভান করলেও সে ঘুমায়নি।বালিশের নিচে ফোন রেখে গান শুনছিল।রাত গভীর হতেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলো এক প্রকারে।রান্না ঘরের জানালা টাও খোলা থাকে রাতে।বাইরে থেকে রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্টের আলো কিছুটা আছড়ে পড়ে রান্নাঘরের ভেতর।ঐ টুকুন আলোই যথেষ্ট কোন রকমে উপরের তাক থেকে বাদামের বয়াম আনতে।

পা টিপে হাঁটতে হাঁটতে নিজের ঘরের সামনে চলে এলো সে।পিছু ঘুরে তাকালো।মা বাবার ঘরের দরজা বন্ধ।নিশ্চিন্ত মনে হাফ ছাড়লো।ঘরের ভিতর ঢুকেই আলতো করে দরজাটা লাগিয়ে খাটের পশ্চিম দিকের জানালার কাছে গিয়ে বসলো।এদিকে ছোট্ট বাটন ফোনটায় এখনো গান প্লে করে রেখেছে।ভলিউম আরেক দাগ বাড়িয়ে দিল।খোলা জানালা,রাতের আধার।রাস্তা ঘাট জনমানবশূন্য।আশে পাশের বাড়ি গুলোতেও লাইট অফ আছে।বয়ামের মুখ খুলে শাওয়াম বাদাম ভাজা মুঠোয় নিয়ে মুখে পুরতে লাগলো।

সামনের বাড়ির ছাদের দিকে তাকিয়ে শাওয়াম ঢোক গিললো।ছাদে কেউ নেই।তবুও তার ভয় করছে।তুবা আপুর কথা খুব মনে পড়ছে তার।তুবা তার ছোট মামার মেয়ে।গতবার নানু বাড়ি গিয়ে এমনি এক রাতে ভাই বোন সব উঠোনে বসে আড্ডা জমাচ্ছিল।তখনি তুবা বলে ওঠে এক অদ্ভুত কথা।তুবাদের স্কুলের ইংরেজি স্যার একদিন একটা গল্প বলেছিল তাদের।এটা সত্যি না মিথ্যা শাওয়ামের জানা নেই।না সে যাচাই করার চেষ্টা করেছে।সে শুধু জানে তার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়,রাতে একা ঘুমাতে ভয় করে ঐ কথা মনে পড়লে।

রাত যতো গভীর হয় তখন পৃথিবীতে আরেকটা শক্তির প্রভাব তীব্র হয়।সহজ ভাষায় বলা যায় জ্বীনের আনাগোনা শুরু হয় নাকি মধ্যরাতের পর।গভীর রাতে কোন মেয়ে যদি জানালা খুলে ঘুমায় তো মাঝরাতে সে জেগে ওঠে।তার মনে হয় তাকে কেউ দেখছে।কিন্তু সে যখন আশে পাশে মানুষটিকে খোঁজার চেষ্টা করে তাকে আর পায় না।এই অনুভূতির মূল কারণ সেই শক্তি।রাতের আধারে ঐ শক্তির চোখে লাল রঙ,নীল রঙ দুটো রঙ দৃশ্যমান হয়।মেয়েদের তারা তাদের চোখে লাল রঙ আর ছেলেদের নীল রঙ হিসেবে দেখে।আর লাল রঙের প্রতি তারা বেশি আকৃষ্ট হয়।তাই গভীর রাতে জানালা খোলা রাখা অবস্থায় কোন মেয়ের যদি হুট করে কোন কারণ ছাড়া বার বার ঘুম থেকে উঠতে দেখা যায় তো বুঝতে হবে ঐ শক্তিই তাকে দেখছিল।

কথার সত্যতা আছে কিনা শাওয়ামের জানা নেই।তবে রাত যত গভীর হয় কোন শক্তির প্রভাব যে কখনো তীব্র হয় এটা সে বাবার থেকে ও শুনেছে।বাবা অনেকবার ফজরের নামাজের পর মসজিদ থেকে এসে তাকে সে সব শুনিয়েছে ও।মসজিদের খাদেম ইশার নামাজের পর পুরো মসজিদ পরিষ্কার করে তবেই বাড়ি যান।অথচ পরের দিন সকাল হতেই মসজিদ ঝাড় মোছা করতে গেলে অনেক লম্বা আকারের সাদা চুল পাওয়া যায়।কখনো বা চুলের জট।মধ্যরাতে নাকি জ্বিন রা মসজিদে এসে ইবাদত করে।

আপাতত সেসব মনে করে শাওয়ামের ভয় করছে।একা ঘুমাতে হবে তাকে।মা কে ও ডাকতে গেলে আরেক দফা বকা খাবে।তহমিনা এসেই শুরু করে দেবে আবার সে কেন ভূতের গল্পের বই পড়েছে।এসব তারই ফল।এই সুযোগে তহমিনা তার সব গল্পের বই ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে দেলবাহার কিনে আনবে।কি একটা অবস্থা!শাওয়াম বাদাম খেতে খেতে ফোনটা হাতে নিল।অনেকক্ষণ ধরে হিন্দি গান শুনছে।এখন রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনলে মন্দ হয়না।

ফোন হাতে নিয়েই শাওয়াম চমকে উঠলো।মুহূর্তেই তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল।স্ক্রিনের ওপর টু মেসেজেস লেখা উঠে আছে।অনেকক্ষণ আগেই পাঠানো হয়েছে।মেসেজ দুটোর আগে সাদাফের নাম্বার ভেসে উঠেছে।সেভ করা না থাকলেও সাদাফের নাম্বার চিনতে অসুবিধা হলোনা শাওয়ামের।শাওয়াম কাপা কাপা হাতে মেসেজ দুটো ওপেন করলো।

লেখা ভেসে উঠলো-“কি রে শাওয়াম?আমাকে রেখে ঘুমিয়ে পড়লি নাকি!এই তুই জানিস না বিয়ের পর বরের সাথে ঘুমাতে হয়।তোর মা বাবাকে দেখেও তো শিখতে পারিস।অন্তত তোর মা বাবা তো আলাদা ঘুমাবে না।মাঝরাতে তো,,,,,,,,, থাক তুই ছোট মানুষ।বাদ দেই।আমার কচি বউ।”

মেসেজটা দেখেই শাওয়ামের রাগ উঠলো।সাদাফ কি বোঝাতে চাইছে পুরো না হলে ও আধো আধো বুঝছেই সে।বড় হচ্ছে তো।শাওয়াম পরের মেসেজটা ওপেন করলো।

সেটাতে লেখা- “উফ!বিয়ে হয়েছে।বাসর রাত সেলিব্রেট করতে পারলাম না।এই তুই জানিস বাসর রাতে কি হয়!উফ।আবার ভুলে গেলাম।তুই তো আমার কচি বউ।এই কাল তো তোর স্কুল বন্ধ।শনিবার তো সানিয়ার ঐ আইসিটি টিচারের কাছে তুই ও না প্রাইভেট পড়িস।যাই বলিস ছুটির দিন গুলোতে তোকে আনড্রেস ওহ সরি আউট ড্রেসে দেখতে ভালোই লাগে।এতো মোটা কাপড়রের জামা পড়িস কেন হ্যাঁ? পাতলা ফিনফিনে কাপড় পরতে পারিস না!গরমে আরাম পাবি। আর শোন আন্টি কোয়ালিটির মহিলাদের মতো ওড়না নামক ঐ সব বাল ছাল গলা দিয়ে পেচিয়ে এতো সামনে ঢাকার কি আছে?দেখে তো মনে হয় গলায় অজগর সাপ ঝুলিয়ে হাটছিস।এক পাশে ওরনা পরবি বুঝেছিস? আর না পরলেই ভালো।ঐসব বাল ছাল একস্ট্রা জড়ানোর কি দরকার।ওড়না ছাড়া বের হতে কি সমস্যা? দেখতে তো আরো ভালো লাগবে।সব কিছু নিট এন্ড ক্লিন।আচ্ছা থাক ঘুমা তুই।ইশ কবে যে তোর সাথে এক বিছানায়,,,, ,,ঐ ঘুমাব আর কি।গুড নাইট।”

সাদাফের মেসেজ পড়ে শাওয়ামের কান্না আসছে।বুক ফেটে কান্না আসছে।কি বিশ্রি বিশ্রি ভাষা আজ শুনতে হচ্ছে তাকে।ছিহ! নিজেকে কেমন আবর্জনা মনে হচ্ছে শাওয়ামের।কি করলে সে এই জানোয়ারের থেকে মুক্তি পাবে!কি করলে!মুখ খুললেই তো তার জীবন শেষ করে দেবে ঐ শয়তান।শাওয়াম কেদেই ফেললো।যতোই ভোলার চেষ্টা করছে।ততোই যেন সাদাফ অজগরের মতোই তার ভাবনা গুলোকে পেচিয়ে ধরছে।তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

শাওয়াম সিদ্ধান্ত নিল সে শনিবার পড়তে যাবে না।ঐ প্রাইভেট টাই বাদ দিয়ে দেবে।সামনে পরীক্ষা।আর স্কুলেও যাবেনা সে।না হয় জরিমানা হলো।এখন চিন্তা একটাই তার মা বাবা মানলে হয়।

বিদ্র- অনেকে মন্তব্য করেছেন সাদাফের চরিত্রটা বেশি বাজেভাবে ব্যাখা করছি আমি।অথবা আমি এসব কিভাবে জানলাম।যার সাথে ঘটনাটা ঘটেছে তার থেকে সব শুনেছি আমি।সব।আর বাস্তবের সাদাফ গল্পের সাদাফের থেকেও নিকৃষ্ট জঘন্য।আমি মার্জিত ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি শুধু।

চলবে———-
চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here