শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -০৪+৫

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_04_05
#Writer_NOVA

কথায় আছে না অতিরক্ত এক্সাইটিং জন্মের খারাপ।আমি অতিরিক্ত এক্সাইটিং ঠেলায় শেষ অব্দি উল্টো পাল্টা কথাই বলে দিলাম।আমি পুরো কথা না শুনে পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বলে উঠলাম,
—তায়াং ভাইয়া তোর মুসলমানি😳!!! অনুষ্ঠান কবে?

এক মুহুর্তের জন্য সব স্তব্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর তায়াং ভাইয়া পারলে তখুনি আমায় কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলে।সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার হুশ ফিরলো। আমি আসলে কি বলছি।
২৮ বছর এক ছেলের সুন্নতে খাৎনা!!তোওবা তোওবা। জিহ্বায় কামড় দিয়ে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।বাকি সবাই মিটমিট করে হাসছে। তায়াং ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে ধমকের সুরে বললো,

—এদিকে আয়,তোকে বলছি অনুষ্ঠান কবে!এত শখ তোর? শখ এবার জন্মের মতো ঘুচাবো।আর তুই এখানে কি করিস?তোকে না বলছি আমার রুমে কেউ থাকলে পারমিশন ছাড়া আসবি না।তাহলে এখানে কি তোর?

—হে হে হে আমি কিছু বলিনি ভাইয়া।এই যে তোদের শরবত।আমি এখন আসছি।টা টা বাই বাই।

শরবতের ট্রে-টা টি-টেবিলে রেখেই আমি দিলাম দৌড়। এখানে থাকলে আজকে আমি শেষ। আজকে আমি পলাতক আসামী হয়ে থাকবো।নয়তো আমি মার্ডার হতে পারি।তখন আগামীকাল নিউজপেপারে বড় বড় অক্ষরে ছাপা হবে “খালাতো ভাইয়ের হাতে এক অবলা শিশুর মৃত্যু”।আসার আগে ভাইয়ার রুম থেকে উচ্চস্বরে হাসির শব্দ পেলাম।এখন নিশ্চয়ই তার হারামী বন্ধুগুলো এই কথার ভিত্তিতে তায়াং ভাইয়াকে পচানি দিবে।রুমে এসে ছিটকিনি আটকে হাঁপাতে লাগলাম। আরেকটু হলে আমার প্রাণপাখিটা উড়াল দিতো।আমাকে হাঁপাতে দেখে তন্বী বললো,

—আপু তুমি এমন হাঁপাচ্ছো কেন? পাগলা কুকুর ধাওয়া করেছে নাকি?

—তোর ভাই কি পাগলা কুকুরের থেকে কম নাকি?

—আমার ভাইয়া আবার কি করলো?

—কি করেনি তাই বল?

—তুমি কি তার বন্ধুদের সামনে গিয়েছিলে?

—হ্যাঁ গিয়েছিলাম।খালামণি জোর করে পাঠালো।বিশাল বড় এক ঘোমটা টেনে গিয়েছিলাম।

—যত বড় ঘোমটাই টানো কোন লাভ নেই। ভাইয়ার পারমিশন ছাড়া তার বন্ধুদের সামনে গেছো তোমাকে আর আম্মুকে দুজনকেই ইচ্ছে মতো হুইল পাউডার দিয়ে ধুবে।তুমি দেখে নিও।

— বোইন আর ভয় দেখাইস না।একটু আগে যা করে আসছি তার জন্য আমি তোর ভাইয়ের হাতে মার্ডারও হতে পারি।

—ঐখানে গিয়েও ভেজাল করে আসছো?

আমি তন্বীকে টেনে নিয়ে খাটে বসলাম।তারপর প্রথম থেকে সবকিছু খুলে বললাম।পুরো ঘটনা শুনে তন্বী চোখ দুটো রসগোল্লা করে আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো।ওর চোখের পলক পরছে না বলে আমি জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

—এই তন্বী কি হয়েছে? কথা বলিস না কেন?

—আমার কিছু হয়নি নোভাপু।হবে তো তোমার? পিঠে ছালা বেঁধে রেখো।আমি বাবা এই ভেজালে নেই। তোমারটা তুমি সামলাও।আমি এমনি ভয়ে আছি আজ কলেজে গেলে রওনক ভাইয়া কি করবে?সে তো তোমার সাথে সাথে আমাকেও চিনে রাখছে।একা পেলে নিশ্চয়ই তোমার শোধ আমার ওপর দিয়েও উঠাতে পারে।আপাতত সেসব চিন্তা বাদ।আমি এখন একটু ঘুমাবো।তুমি বেঁচে থাকলে আমায় ১২ টার দিকে উঠিয়ে দিয়ো।

কথাগুলো বলে তন্বী ধপ করে খাটে শুয়ে হাত-পা মেলে দিলো।আমি লাফ দিয়ে ওর সামনে গিয়ে ওর কান টেনে ধরে বললাম,

—এই ছেমরি, বেঁচে থাকলে মানে কি হ্যাঁ?

—আহ্ আপু ছাড়ো!!ব্যাথা পাচ্ছি তো।

—তুই চাইছিস আমি তোর ভাইয়ের হাতে শহীদ হয়ে যাই।আমি ভালো করে বুঝতে পারছি।

—তুমি যা উল্টো পাল্টা কাজ শুরু করছো।তাতে তোমার ভাইয়ার হাতে উত্তমমধ্যম খাওয়া উচিত।

—আবার ভাইয়ের হয়ে ওকালতি করছিস।

—কানটা ছাড়ো নোভাপু।

আমি কান ছেড়ে খাটের ওপর চুপ করে বসে রইলাম।ইদানীং সত্যি আমি উল্টো পাল্টা কাজ বেশি করছি।এর জন্য না আবার বিপদে পরতে হয়।

সারাটাদিন শুয়ে-বসে কাটলো।দিনের বেলা আমাদেরকে কলেজে যেতে মানা করছে তায়াং ভাইয়া। শাসিয়ে বলে গেছে যদি দিনের বেলা কলেজে যাই তাহলে রাতের কনসার্টে নিবে না।সেই ভয়ে দিনে কলেজে যাওয়ার নামও নেইনি।সারাদিনে তায়াং ভাইয়ার সামনেও পরিনি।নয়তো বাহাতে এমন চটকনা দিতো যে আমি আর কানে শুনতাম না।ভাইয়া বন্ধুদের নিয়ে দুপুরের পর বের হয়েছে এখনো আসার নাম নেই। সন্ধ্যা হতেই আমরা তৈরি হতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।রাতের কনসার্টের জন্য একটা এ্যাশ কালারের কুর্তি পরবো।সাথে সেম রঙের হিজাব বাঁধবো। মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখি তন্বী বিশাল বড় একটা নীল রেপারে পেঁচানো গিফট বক্স হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলাম,

— এটা কি?

—তোমার জন্য নোভাপু।

—কে দিলো?

—তায়াং ভাইয়া মানুষ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটা নাকি তোমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী তোমাকে গিফট করেছে।

—আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আবার কে?

—তাতো তুমি ভালো বলতে পারবে।

—আমি তো জানি না।

—নাও ধরো।তোমার জন্যও পাঠিয়েছে। আর সকালে আমাকে এনাজ ভাইয়া একটা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি গিফট করেছে। আমি ভাবছি আজ সেটাই পরে যাবো।তুমি খুলে দেখো ভেতরে কি আছে?

তন্বী আমার হাতে গিফট বক্সটা হাতে ধরিয়ে ও তৈরি হতে চলে গেলো।এনাজ ওকে যে শাড়িটা দিয়েছে সেটা আমাকে দেখিয়ে খালামণির কাছে পরতে চলে গেলো।আমি বোকার মতো গিফট বক্স হাতে বসে রইলাম।আমাকে কে গিফট করতে পারে? আমি তো সেই মানুষটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।গিফট বক্সটা খুলতেই
সেখানে আকাশি রঙের একটা শাড়ি দেখতে পেলাম। সাথে সিম্পল কিছু জুয়েলারি।ব্লাউজ,পেটিকোট, হিজাবও আছে।সাথে একটা হলুদ রঙের চিরকুট।সেটাকে হাতে নিলাম।জিনিসপত্রগুলো পাশে রেখে চিরকুট খুললাম।চিরকুটে লেখা ছিলো,

ডিয়ার মাই লাভ ,

তোমার লাজুক চোখ দেখে ভালোবেসেছি। তোমার ঐ লুকানো হাসি ভালোবেসেছি। তোমার মায়া লতানো মায়া ভালোবেসেছি। শুধু তোমাকে নই তোমার সব কিছু কেই ভালোবেসেছি। এতটাই ভালোবাসি যে যখন তেমার এলোমেলো চুলগুলো লুটেপুটে খায় তোমার অধরে,আমার খুব হিংসে হই।এতটা হিংসে হয় যে ইচ্ছে করে ওকে সরিয়ে বলতে এটা শুধু আমার অধিকার।এখানে ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকার আর কারো নেই। আমি তোমাকে শুনাবো সে সব কথা।চলো আমরা একটি গল্পের আসর জমিয়ে ফেলি। কারণ আমি হ্রদয়ের কথা বলতে ব্যাকুল।হবে কি আমার মনের রাজ্যের রাণী?কথা দিচ্ছি সারাজীবন আগলে রাখবো।সুযোগটা কি দিবে প্রেয়সী?আমি তোমার উত্তরের আশায় থাকবো।শাড়িটা কিন্তু পরে আসবে।কতদিন যে তোমাকে মন ভরে দেখি না।আজ মন ভরে তোমাকে দেখবো।দেখবো আমার প্রেয়সীকে আমার প্রিয় রঙের শাড়িতে ঠিক কতটা সুন্দর লাগে!!জলদী চলে এসো।আমি অপেক্ষা করছি তো।আমার কিন্তু আর তর সইছে না।আর হ্যাঁ শুনো,ভালোবাসি প্রিয়তমা।

ইতি তোমার
ভালোবাসার কাঙাল

চিরকুটটা পড়ে থুম মেরে বসে রইলাম।কে হতে পারে এই মানুষটা?আমার কাছের কেউ, নাকি দূরের।বেশি কিছু ভাবতে পারলাম না।তার আগেই তন্বী রেডি হয়ে এসে আমাকে তাড়া দিতে লাগলো।শাড়িটা পরতে চাইছিলাম না।কিন্তু তন্বীর জোড়াজুড়িতে পরতে হলো।তৈরি হতে হতে রাত আটটার বেশি বেজে গেলো।আমাদের নিতে তায়াং ভাইয়া এনাজকে পাঠিয়েছে। শাড়ি পরে হিজাব বেঁধে বাইরে যেতেই দেখি এনাজ বাইকের ওপর বসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।তন্বী মৃদুস্বরে ডাক দিলো।

—এনাজ ভাইয়া।

—আরে তোমরা এসে…..

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে আমার দিকে তাকালো।তাকিয়ে হা করে রইলো।তার চোখের পাপড়িগুলো যে কেঁপে কেঁপে উঠছে তা আলো না থাকলে বুঝতেই পারতাম না।তাকে আজ কম সুপুরুষ লাগছে না। নতুন করে আরেকবার ক্রাশ খাইছি। সাদা পাঞ্জাবীর সাথে আকাশি রঙের কটি।সাদা পায়জামা,সাদা জুতো।চোখে কালো সানগ্লাস। চুলগুলো এখনো এলোমেলো। এই ছেলের বোধহয় এলোমেলো চুল ভীষণ পছন্দ। আমার মনে হচ্ছে চুল ও সানগ্লাস সাদা হলে আরো বেশি সুন্দর লাগতো😁।
তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমিও একটা ভাব নিলাম।হুহ, আমিও এখন সকালের মতো ভাব নিবো।একটুও পাত্তা দিবো না।এনাজকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তন্বী মুচকি হেসে এনাজের চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,

—ভাইয়া, কলেজে কি যাবেন?নাকি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কনসার্ট দেখবেন।

—হ্যাঁ,হ্যাঁ চলো।

অবশেষে আমরা কলেজে এসে পৌঁছালাম।চারিদিকে আলোকসজ্জায় ভরপুর।দিনের থেকে রাতে যেনো পুরো কলেজটা আকর্ষণীয় লাগছে।চারিদিকে মানুষ গিজগিজ করছে।এনাজ বাইকের চাবিটা একজনের হাতে তুলে দিয়ে বাইক রেখে আসতে বললো।ছেলেটা চলে গেল।আশেপাশে তাকিয়ে ধীর গতিতে হাঁটতে লাগলাম।এনাজ আমাদের থেকে কিছুটা সামনে।পেছনে ঘুরে আমাদেরকে দেখলো।তারপর হুট করে আমাদের সামনে এসে এক হাত ধরে টেনে সামনে নিয়ে যেতে লাগলো।সে আমার হাতটা ধরতেই আমার সারা শরীরের ৪৪০ ডিগ্রি ভোল্টেজে শক খেলাম।আমি একবার এনাজের দিকে আরেকবার ওর হাতের দিকে তাকাতে লাগলাম।আরেকহাতে তন্বীকে ধরে নিয়ে আসছি।তায়াং ভাইয়ার সামনে এসে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়ালো। তায়াং ভাইয়া আমার দিকে একবার চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো।আমি তন্বীর পেছনে লুকালাম।তন্বী কয়েকজনের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো।আমি তেমন কাউকে চিনি বলে চুপ করে সাইডে দাঁড়িয়ে রইলাম।তারা সবাই খোশগল্প করছে।সাথে চলছে ঠাট্টা-তামাশা, বিটকেল মার্কা হাসি।আমি ও তন্বী নীরব দর্শকের মতো তা দেখছি।কথায় কথায় তায়াং ভাইয়ার এক বন্ধু তায়াং ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—দোস্ত তোরে কিন্তু আমি মাইরাই ফালামু।তুই কিন্তু এখনো ঐ বিষয়টা ক্লিয়ার করিসনি।

আমি ফট করে চোখ দুটো বড় বড় করে জোরে চেচিয়ে বলে উঠলাম,

— ভাই ওরে মাইরা ফালান নয়তো কাইট্টা ফালান। কিংবা বেইচা দেন।তাতে আমার কিচ্ছু আসে-যায় না।কিন্তু দয়া করে ওর কিডনি দুটোর যাতে কিছু না হয়।ঐ দুটো আমাকে দিয়ে দিয়েন।আমার বহুদিনের শখ ওর কিডনি দুটো বেঁচে আইফোন কিনবো।আপনারা প্লিজ আমার এই অনুরোধটা রাইখেন।আমার আইফোন কেনার শখটারে মাটি কইরেন না।আমি তায়াং ভাইয়ার কিডনি বেঁচে আইফোন কিনতে চাই।

#চলবে

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_05
#Writer_NOVA

আমি ফট করে চোখ দুটো বড় বড় করে জোরে চেচিয়ে বলে উঠলাম,

— ভাই ওরে মাইরা ফালান নয়তো কাইট্টা ফালান। কিংবা বেইচা দেন।তাতে আমার কিচ্ছু আসে-যায় না।কিন্তু দয়া করে ওর কিডনি দুটোর যাতে কিছু না হয়।ঐ দুটো আমাকে দিয়ে দিয়েন।আমার বহুদিনের শখ ওর কিডনি দুটো বেঁচে আইফোন কিনবো।আপনারা প্লিজ আমার এই অনুরোধটা রাইখেন।আমার আইফোন কেনার শখটারে মাটি কইরেন না।আমি তায়াং ভাইয়ার কিডনি বেঁচে আইফোন কিনতে চাই।

আমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। আমিও তাদের সাথে তাল মিলালাম।কিন্তু বেশি সময় দাঁত কেলানো হলো না।তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দমে গেলাম।সে যে দাঁতে দাঁত চেপে সবকিছু হজম করে নিচ্ছে,তা আমি ভালো করে জানি। তবে পরে যে এর অবস্থা কি হবে তা একমাত্র আল্লাহ মালুম।আমার সাধের চুলগুলো আস্ত থাকলেই হয়।এর তো আবার আমার চুল টানাটানির অভ্যাস আছে। তায়াং ভাইয়ার সব ফ্রেন্ডরা এসেছে। একজন আমাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,

—তায়াং,এই মেয়েটাকে তো ঠিক চিনলাম না।

তায়াং ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে উত্তর দিলো,

—শাঁকচুন্নিকে চিনে কি করবি?এ আমাদের বাসার পাশের ড্রেনের সামনে কাগজ কুড়ায়।আমরা আবার দয়ালু মানুষ তো।তাই তিনবেলা খাবার দেই।আজ অনুষ্ঠান আছে জেনে গতকাল থেকে বায়না ধরেছে এখানে আসবে।তাই অসহায় মেয়েটাকে নিয়ে এলাম।

আমি চেচিয়ে বলে উঠলাম,
—তায়াং ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু 😤।

এতে সবাই আরেকদফা হেসে নিলো।তায়াং ভাইয়া
আমার দিকে এগিয়ে এসে কিছুটা ঝুঁকে নিচুস্বরে বললো,

—তোকে শুধু একবার হাতের নাগালে পাই। তারপর মজা দেখাবো।খুব বেড়েছিস তুই। সকাল থেকে কিছু বলছি না বলে পার পেয়ে গেছিস তা ভাবিস না।আমি সব জমিয়ে রাখছি।একসাথে ফেরত দিবো।বন্ধুদের সামনে আমি কোন সিনক্রিয়েট করতে চাই না।তাই এখন বেঁচে গেলি।

ভাইয়ার এই ঠান্ডা স্বরের ধমকি অন্য সময় হলে আমি ভয় পেতাম।কিন্তু এখন যেহেতু এত মানুষের মাঝে আমাকে কিছু বলবে না তাই আমি একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে ভেংচি কাটলাম।তাতে যেনো ভাইয়া আরো চটে গেলো।আমার সামনে থেকে সরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—আরে কনসার্ট শুরু হয়ে যাবে জলদী চল।এখন না গেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশা মারতে হবে।

সবাই কনসার্টের স্টেজের দিকে ছুটলো।ভাইয়া যে খুব শান্তপর্ণে আমার পরিচয়টা লুকালো তা আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝে গেছি। কিন্তু কেন তার উত্তর আমার ছোট মাথায় খুঁজেও পেলাম না।প্রায় ১০/১২ সারি পর আমরা বসলাম।আমার সাথে এনাজ আর তায়াং ভাইয়ার সাথে তন্বী বসেছে।এনাজ মহোদয় বসে বসে মোবাইল চালাচ্ছে। আমি কিছুটা উঁকি মেরে তার মোবাইলের দিকে তাকালাম।এতে সে সাথে সাথে মাথা উঠিয়ে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।আমি দাঁতগুলো দেখিয়ে মিনমিন করে বললাম,

—কিছু না।

উনি কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার মোবাইলে মনোযোগ দিলেন।উনি এতো মনোযোগ সহকারে গেম খেলছে যে আশেপাশের আর কিছুতে তার মনোযোগ নেই। কনসার্ট এখনো শুরু হয়নি।যাদেরকে গান গাইতে আনবে তারা এখনো এসে পৌছায়নি। আমার আবার চুপচাপ বসে থাকতে একটুও ভালো লাগে না।কি করা যায় তাই ভাবছিলাম।তায়াং ভাইয়াকে এখন জ্বালানো যাবে না। সারাদিন যেই ডোজ দিয়েছি তাতে আমি সবার সামনে দু-চার ঘা খেতে পারি।তখুনি আমার এনাজের কথা মাথায় এলো।আমি এনাজকে জ্বালানোর উদ্দেশ্য বলে উঠলাম,

—কি খেলেন ভাইয়া?

আমার কথা শুনে এনাজ এমন করে তাকালো মনে হয় আমি না জানি কতবড় অপরাধ করে ফেলেছি।আমি বুঝতে না পেরে আবারো জিজ্ঞেস করলাম।

—কি হয়েছে ভাইয়া?এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?

এবার যেনো সে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। একে আসার পর থেকে প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে বেশি একটা কথা বলতে দেখিনি।বেশ গম্ভীর টাইপের ছেলে।তাকে এভাবে রাগতে দেখে আমিও মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম।সে কিছুটা রাগ মিশ্রিত কন্ঠ উত্তর দিলো।

—কে ভাইয়া?আমি কারো ভাইয়া নই।ভাইয়া বললে তোমার বাপের সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে। আর আমার ভাগ আমি আদায় করে নিতে পারি। তাই পরেরবার ভাইয়া বললে সোজা তোমার বাবার কাছে গিয়ে সম্পত্তির ভাগ নিবো।সো বি কেয়ারফুল। আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে না।

—তাহলে কি আঙ্কেল বলবো নাকি মামা🤔?

—এই মেয়ে আমাকে দেখে কি তোমার আঙ্কেল কিংবা মামার বয়সী মনে হয়?

—আপনিই তো বললেন ভাইয়া বলতে না।আপনাকে ডাকতে হলে তো আমাকে কোনকিছু সম্বোধন করতে হবে। নাম ধরে তো ডাকতে পারি না আমি।তাই আঙ্কেল বা মামা বেটার।

—তোমাকে কিছুই বলতে হবে না। আমার নাম ধরে ডেকো।

—তোওবা তোওবা কি বলেন?আপনি আমার বড়।আপনাকে কি আমি নাম ধরে ডাকতে পারি। এতে আপনাকে অসম্মান করা হয়।

—তুমি আবার সম্মান-অসম্মানও বুঝো নাকি?

—দেখুন আমি শুধুমাত্র তায়াং ভাইয়ার সাথেই মজা করি।এছাড়া বাকি সবাইকে যথাসাধ্য সম্মান করার চেষ্টা করি।তাই তায়াং ভাইয়া আর আমার বন্ডিং দেখে কখনো আমাকে বিবেচনা করবেন না।

—হু বুঝতে পারছি। তবে তুমিও আমায় কোন ভাইয়া,মামা, আঙ্কেল এসব নামে ডাকতে পারবে না। মন চাইলে নাম ধরে ডাকবে। নয়তো কোনকিছু বলে ডাকতে হবে না।

—আপনার পুরো নাম কি?

—কেন?

—আরে বলুন না।

—এনাজ আহমেদ।

—এনাজ নামটা কি A দিয়ে নাকি E দিয়ে?

—A দিয়ে।

—কিন্তু এনাজ লিখতে তো E হয়।

—হ্যাঁ হয়।কিন্তু আমার বাবা-মা ছোট বেলায় A দিয়ে রেখেছে। তাই আমার নাম হলো Anaj। অনেক সময়
আমরা একেক নামের উচ্চারণ একেকভাবে করি।তার ক্ষেত্রে একেক অক্ষর ব্যবহার করি।আমার এক ফ্রেন্ডের নাম অনন্যা।ওর নামটা কিন্তু O দিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু ওর নামটা A দিয়ে লিখতে হয়।এটা যার যার ইচ্ছা। যে যেভাবে তাদের সন্তানের নাম লিখে।তাই বলে কোনটা ভুল নয়।আমার নামও তাই Anaj নট Enaj. বুঝতে পেরেছো।আরেকটা উদাহরণ দেই তোমাকে, তোমার বোনের নাম তো ইভা।ইভা লিখতে “I” হওয়ার কথা কিন্তু E দিয়ে কেন লিখো? তাহলে তো এভা হয়ে যাবে।এখানে E শব্দটা বাংলার ই শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। তাই বলে কি ওর নাম ভুল নাকি?

— না ভুল নয়।কিন্তু আমার বোনের নাম আপনি জানলেন কি করে?

—তায়াং বলেছে।

— A দিয়ে আপনার নাম।তাইতো?

—হ্যাঁ।

— এনাজ আহমেদ লিখতে তাহলে দুটো A ব্যাবহৃত হয়।তাই আমি আপনাকে A2 বলে ডাকবো।তাহলে আপনাকে নাম ধরেও ডাকতে হলো না। আর ভাইয়া, মামা,চাচাও বলতে হলো না।

—এজ ইউর উইশ।

—নাহ্ এটা অনেক ভালো নাম হয়ে যায়।আমি বরং আপনাকে এনজিও সংস্থা বলে ডাকবো।আর রাগ উঠলে আনাইজ্জা কলা।

—কি বললে?

—নাহ কিছু না।আপনি গেমে হেরে যাচ্ছেন।সেদিকে নজর দিন।

এনাজ কিছু সময় কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আবার খেলায় নজর দিলো।আমরা যেদিকে বসেছি সেখানকার ঘাসগুলো অনেক বড় বড়।হঠাৎ আমার পায়ের কাছে কিছু একটার সুরসুরি পেতেই আমি “ও মাগো”বলে লাফিয়ে উঠলাম।এতে আশেপাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।তায়াং ভাইয়া, এনাজ দুজনেই একসাথে বলে উঠলো,

—কি হয়েছে?

—পায়ের কাছে কি জানি লাগলো?

আশেপাশের সবাই জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে, কি হয়েছে? তায়াং ভাইয়া বললো,

—কিছু হয়নি।আপনারা আপনাদের কাজে মনোযোগ দিন।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললো,

—এতো জোরে চেচিয়ে ছাগলের মতো ম্যাঁ ম্যাঁ করছিস কেন?

—আমার পায়ে কি জানি লাগলো।আমি এখানে বসবো না।কুটুস করে একটা কামড়ও দিয়েছে।

এনাজ ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—কোথায় কামড় দিয়েছে? অনেক জ্বালা করছে? বরফ ধরতে হবে নাকি?

আমি মুখ ফুলিয়ে উত্তর দিলাম, ” কিছুই করতে হবে না। ” তারপর ধপ করে চেয়ারে বসে পরলাম।এবার ঘটলো আরেক বিপত্তি। একজন চেয়ার রাখতে গিয়ে আমার পায়ের ওপর রেখে বসে পরলো।চায়েরের এক পায়া আমার পায়ের ওপর রাখা।আবারো চেচিয়ে উঠলাম।পেছন থেকে চিৎকারের শব্দ পেয়ে লোকটা জলদী তার চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ততক্ষণে আমার পায়ে ভালো ব্যাথা পেয়ে গেছি।তায়াং ভাইয়া ও এনাজ দুজনে একসাথে লোকটাকে ইচ্ছে মতো ধুলো।আমি পা ধরে চেয়ারে বসে আছি। প্রচুর জ্বলছে।এনাজ সেখান থেকে কোথায় জানি চলে গেল।কিছু সময় পর কতগুলো বরফের টুকরো আর চারটা কোণ আইসক্রিম নিয়ে ফিরে এলো।আমার হাতে একটা কোণ আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বললো,

—নাও এটা খেতে থাকো।ততক্ষণে আমি তোমার পায়ে বরফ ডলে দেই।আশেপাশে কোন ফার্মেসীর দোকান পেলাম না।

—আরে আপনি আমার পায়ে হাত দিবেন নাকি? তার দরকার নেই। এভাবেই চলে যাবে।

আমাকে এক ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখলো।তারপর নিজে সেই জায়গায় আলতো হাতে বরফ ডলে দিতে লাগলো।বরফ ডলায় ব্যাথা অনেকটা কমলো।সাথে ফোলাটাও।তন্বী এতক্ষণ দুই কানে এয়ারফোন গুঁজে হাই ভলিউমে গান শুনছিলো।আর মোবাইলে কারো সাথে চ্যাটিং করছিলো।তাই এসবের কিছুই জানে না। আইসক্রিম নিতে ওকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতেই ওর হুশ ফিরলো। কানের থেকে এয়ারফোন খুলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

—তোমার পায়ে কি হয়েছে নোভাপু?এনাজ ভাইয়া তোমার পা ধরে কি করছে? মাফ চাচ্ছে নাকি সালাম করছে।

আমি ওর পিঠে দুম করে এক কিল বসিয়ে দিয়ে বললাম,

—কিছু করছে না।তুই বরং তোর কাজ কর।

কিছু সময়ের মধ্যে কনসার্ট শুরু হয়ে গেলো।কয়েকটা পারফরমেন্সের পর এখন একটু বিরতি দিয়েছে।কিন্তু আমার প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। দুপুরে কিছু খাইনি।ভেবেছিলাম কনসার্টে আসার আগে খেয়ে নিবো।কিন্তু তাড়াহুড়োয় সব লন্ডভন্ড।পেটের ভেতর আমার ইঁদুরে ড্রাম পেটাচ্ছে।আমি তায়াং ভাইয়াকে জোরে চেচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

—ভাইয়া কনসার্ট শেষ হলে কি আমাদের বিরিয়ানি দিবে না?আমি কিন্তু বিরিয়ানি না নিয়ে বাসায় যাবো না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here