শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -১৯+২০

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_19
#Writer_NOVA

চোখ খুলতেই নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করলাম।সারা মাথা ভার হয়ে আছে। হাত নড়াবার শক্তিও নেই। তাকিয়ে দেখি হাতে ক্যানুলা লাগানো।স্যালাইন চলছে।শরীরটা প্রচুর দূর্বল।আমাকে নড়তে দেখে পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

—এখন কেমন লাগছে নোভা?

মলিন চোখে তাকিয়ে দেখি আম্মু শুকনো মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। স্মিত হেসে ক্ষীণ গলায় বললাম,

—একটু ভালো।তবে মাথাটা ভার হয়ে আছে। শরীরে শক্তি পাচ্ছি না।

—আল্লাহ ভরসা।সব ঠিক হয়ে যাবে।

—তোমরা কখন এলে?

—ভোর ছয়টার বাস ধরে ইভাকে নিয়ে চলে এলাম।

—আব্বু আসেনি?

—তোর আব্বু তো আমাদের আগে চলে এসেছে।

—ইভা,আব্বু কোথায়?

—বাইরে আছে।

—বাকি সবাই কোথায়?

—তোর খালামণি ও তন্বী একটু আগে বাসায় গেলো।সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে।

—তোমরা খেয়েছো?

—সকালে তো না খেয়ে চলে আসছি।নয়তো বাসে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো।এখানে আসার পর তোর আব্বু রুটি কলা কিনে আনছিলো।সেগুলো খেয়ে পানি খেয়েছি।

আম্মু মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।আমি আশেপাশে তাকিয়ে তায়াং ভাইয়া ও এনাজকে খুঁজতে লাগলাম।ঠোঁট দুটো কিছু সময় পরপর শুকিয়ে আসছে।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,

—তায়াং ভাইয়া কোথায়?

—তায়াং, তায়াং-এর বন্ধু বললো বাসা থেকে ফ্রেশ হয়ে আসবে বললো।গিয়েছে কিনা জানি না।

—তার বন্ধুও সাথে আছে?

— হ্যাঁ,ছেলেটা তো সেই রাত থেকে এখানেই।তায়াং-এর সাথে সবকিছু সামলাচ্ছে। ও নাকি তোকে কোলে করে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। তোর যা অবস্থা ছিলো তাতে বাসার সবাই ভয় পেয়ে গেছে। তুই অজ্ঞান হওয়ার পর সেই রাত বারোটায় দ্রুত হসপিটালে এনে ভর্তি করছে।তারপর থেকে সবকিছু তো ছেলে দুটোই সামলিয়ে নিচ্ছে।

—তুমি ছুটি নিয়ে আসছো?

—সকালে কিছু নলি নাই।নয়টার দিকে এখানে এসে তারপর হ্যাড স্যারকে সব বলে ছুটি নিলাম।ছুটি ছাড়া কি আমি থাকতে পারবো।রাতে যখন তায়াং তোর খবর দিলো তখন থেকে টেনশনে শেষ। আমি কতক্ষণে আসবো সেই চিন্তায় ছিলাম।

—আম্মু একটু পানি দিবা?বড্ড তেষ্টা পেয়েছে।

আম্মু বসা থেকে উঠে জলদী করে পানির বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে আমাকে খাইয়ে দিলো।গ্লাসটা যথাস্থানে রেখে আমার শরীরের চাদরটা আরেকটু টেনে দিলো।মাথায় হাত দিয়ে জ্বর চেক করে বললো,

—জ্বরটা ছেড়ে গেছে। ১০৪° ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ, এখন জ্বর নেই। ১২ ঘন্টার পর সজ্ঞানে আছিস তুই।

—ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছিলো?

—হুম, তোর শরীর দূর্বল।তাই ঘুম পারিয়ে রেখেছিলো।এটা দুই নাম্বার স্যালাইন চলছে।একটা শেষ হওয়ার পর এটা অর্ধেক হয়ে গেছে। কিছু খাবি?

—না,মুখ তিতা হয়ে আছে। কিছু ভালো লাগছে না।

চুপ করে চোখ দুটো বন্ধ করলাম।যেই আমি ঘুম পাগলী সেই আমার এখন আর শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।তাছাড়া বহু সময় ঘুমিয়েছি।এখন ঘুম বাবাজী আমার চোখে ধরাও দিবে না।মৃদুস্বরে আম্মুকে ডাকলাম,

—আম্মু!!

—হুম বল।

—একটু উঠে বসবো।এত শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। পিঠ ব্যাথা করছে।হাত-পা অবশ হয়ে আসছে।দেখো তো হাতে ক্যানুলা লাগিয়ে কিরকম ফুলিয়ে ফেলছে।হাতটা নাড়াতেও পারছি না। সে কি ব্যাথা।

—এই স্যালাইনে তুই টিকে আছিস।শরীর যা দূর্বল ছিলো।পুরো নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিলি।তোর কোন রেসপন্সই ছিলো না। সবাইকে যা ভয় দেখালি।

আম্মু আমাকে ধরে বসিয়ে দিলো।বালিশটাকে পিঠের নিচে দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় বসলাম।আম্মু কিছু সময় থেমে রাগী গলায় বললো,

—তুই অসুস্থ না হলে তোর পিঠ ফাটাতাম।

—কিনু🥺?

—বৃষ্টিতে ভিজেছিস কেন?ইচ্ছে করেই নিজের শরীরের এই অবস্থা করলি? আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেতো?

—কিছু তো হয়নি।তোমার মেয়েকে আল্লাহ না চাইলে এতো তাড়াতাড়ি নিবে না। আমি চলে গেলে তোমাদের জ্বালাবে কে?

দাঁত দেখিয়ে একটু হেসে আম্মুর মন জয় করতে চাইলাম।কিন্তু ফলাফল শূন্য। আমার দাঁত কেলানি দেখে আম্মু আরো রেগে গেল।রাগী গলায় বললো,

—একদম হাসবি না।আমাদের কাঁদতে কাঁদতে রাত পার হয়েছে আর সে এখন দাঁত বের করছে।হাসলে সত্যি মার খাবি।তুই সামান্য বৃষ্টিতে ভিজলে মাথাব্যথায় টিকতে পারিস না।মাথাব্যথা, মাথাব্যথা বলে চিল্লাস।তাহলে এত বৃষ্টিতে কেন ভিজতে গেলি আমাকে বল তো?

—আম্মু এই অবস্থায়ও আমাকে বকবে☹️?

—বকা তো কমই হসপিটাল না হলে মারতাম।

—তাহলে থেমে আছেন কেন খালামণি?লাগান দুইটা।ও যা করছে তা মার খাবার কাজই।আমি পর্যন্ত ওর অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেছি।মনে হয়েছিলো এই যাত্রায় ওকে বোধহয় হারালাম।ও কখনো বৃষ্টিতে ভিজে না।কাল মনে রং লাগছিলো তাই বৃষ্টিতে গোসল করছে।আমি হাতের কাছে থাকলে দুই-চারটা চটকনা মারতাম।আমাকে এনাজ বললো।ওকে ছাদে যেতে দেখে এনাজ দ্রুত ছাতা নিয়ে ওর পিছু পিছু গেছে। ও না গেলে আরো ভিজতো।ও একবার সুস্থ হোক।ওর চুল টেনে আমি যদি না ছিঁড়ি তাহলে আমার নাম তায়াং না।

তায়াং ভাইয়া কেবিনের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো।মুচকি হেসে ওর দিকে তাকালাম।আব্বু,ইভাও ভাইয়ার সাথে আছে।শুধু এনাজকে দেখলাম না।এদিক সেদিক তাকিয়ে তাকে খুজেও নিরাশ হলাম।আব্বু পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলো,

—এখন কেমন লাগছে মা?শরীর কি একটু ভালো লাগছে?

—আলহামদুলিল্লাহ, আগের থেকে অনেকটা ভালো।তুমি কেমন আছো আব্বু?

—এতক্ষণ ভালো ছিলাম না।কিন্তু আমার মা কে সুস্থ দেখে এখন ভালো আছি।কিছু খাবা?

—না আব্বু।ইচ্ছে করছে না।

—কিছু তো খেতে হবে।নয়তো ঔষধ খাবা কিভাবে?

—তুমি কিছু খাইছো?

—আমরা সবাই রুটি-কলা খেয়েছি।

—ভাত খাওনি কেন?

—হসপিটালে নিচ তলায় একটা হোটেল আছে। তায়াং বলছিলো খেয়ে আসতে।তোমার খালামণি মানা করলো।সে নিজে রান্না করে আনবে।তাই এতটুকু খাবারই আমাদের সম্বল।

আমি হাত দিয়ে বেডের পাশে দেখিয়ে আব্বুকে বললাম,

—এখানে বসো।

💖💖💖

আব্বু আমার পাশে বসলো।ইভা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিতেই ও মুখ ভেংচি কাটলো।ওর ভেংচি কাটার স্টাইল দেখে আমার আরো বেশি হাসি পেলো।ফিক করে হাসতেই তায়াং ভাইয়া হুংকার ছেড়ে বললো,

—এখন বত্রিশ পাটি দাঁত দেখানো হচ্ছে? আমাদের টেনশনে ফেলে অনেক আরামে ছিলি তাই না?তোর বৃষ্টিতে ভেজার উসুল আমি হারে হারে বের করবো।একবার শুধু তুই সুস্থ হো।তারপর দেখবি তোর ওপর কি ঝড় যায়।

আমিও মুখ ভেংচিয়ে তায়াং ভাইয়াকে আরেকটু রাগালাম।অনেকক্ষণ ধরে এনজিও সংস্থার কথা জিজ্ঞেস করার জন্য মনটা হাসফাস করছে।বেচারার সারা শরীর তো তেরটা বাজিয়ে দিয়েছিলাম।রাত থেকে নাকি এখানেই। তাহলে আমার সাথে দেখা করতে কেন আসছে না?কেন জানি তাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।কিন্তু আব্বু-আম্মুর সামনে তো তার কথা তায়াং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করতেও পারি না।পরলাম না মুসিবতে।পাশের এক মসজিদে জোহরের আজান হচ্ছে। সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছে। আজান শেষ হতেই আব্বু তায়াং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

— এই মসজিদের জামাত কয়টায়?

—১ টা ২০ -এ মনে হয়।নামাজে যাবেন?

—হুম,সেটা মিস আছে নাকি।

—তাহলে চলেন।আমিও বাসায় চলে যাই। আপনি নামাজে যান।

—নামাজ পরবে না?

—হ্যাঁ ওরবো তো খালু।কিন্তু জামা-কাপড় ভালো না।গতকাল রাত থেকে তো শরীরের ওপর ধকল কম যায়নি।জামা-কাপড়ের অবস্থাও খারাপ।বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাসার পাশে মসজিদে পরে নিবে।

আম্মু তায়াং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
—তোর সাথের বন্ধুকে যে দেখছি না তায়াং? ও কি চলে গেছে?

—হ্যাঁ, খালামণি।সেই রাত থেকে এখানে।আমি বললাম আমাদের বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে গোসল করে,খাবার খেয়ে নিস।জোর করে পাঠালাম।যেতে চাইছিলো না।

এনাজ চলে গেছে শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো। আমার সাথে একটু দেখা করে গেলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো। মনের ভেতর এক আকাশ পরিমাণ অভিমানের জন্ম নিলো।পরেরবার এলে একটুও কথা বলবো না। আমার সাথে দেখা না করে গেলে কেন সে? কথা নেই হুহ!

আব্বু তায়াং ভাইয়াকে বললো,
—চলো তাহলে যাই।নয়তো আমার জামাআতে মিস হয়ে যেতে পারে।

—খালু আপনি যান।এনাজ আবার আসবে।আম্মু,তন্বীর সাথে খাবার নিয়ে আসবে।ও আসলে আমি বাসায় যাবো।একজন ছেলে তো এখানে থাকতে হয়।সবাই একসাথে চলে গেলে পরে যদি কিছু দরকার হয় তখন খালামণি একা কি করবে? আপনি নামাজে যান।এনাজ এলে আমিও চলে যাবো।বাসা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে আসবো।

আব্বু চলে গেলো।এনাজ আবার আসবে কথাটা শুনেই আমার মনে লাড্ডু ফুটলো।কালো আঁধারে ঢেকে থাকা মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো।আম্মু বললো,

—তায়াং তুই কি এখানে আছিস?

—হ্যাঁ,এনাজ না আসা অব্দি আমি এখানেই আছি। কিন্তু কেন খালামণি?

— আমি একটু নামাজ পরতাম।

—আচ্ছা চলো তোমাকে নামাজঘর দেখিয়ে দিয়ে আসি।এখানে তো একটুখানি জায়গা। এতো ছোট কেবিনে নামাজ কি করে পরবে?

—কিন্তু ইভা এখানে একা থাকবে?

—ভেতর থেকে দরজা আটকে রাখবে।আর আমি তো শুধু যাবো আর আসবো।ততক্ষণ ইভা না হয় দরজা আটকে নোভার কাছে থাকলো।

—আচ্ছা চল তাহলে।

তায়াং ভাইয়া আম্মুকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।ইভা দরজা আটকে আমার সামনে এসে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরলো।এতক্ষণ অব্দি বেচারী অনেক কষ্ট কান্না আটকে রেখেছে। আমি ওর পিঠে হালকা চাপর মেরে বললাম,

—আরে ধূর পাগলী কাঁদছিস কেন? আমি তো ঠিক হয়ে গেছি।দেখ আমি আল্লাহর রহমতে কতটা সুস্থ আছি।

—আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বোইনে।তায়াং ভাউয়া যখন কল করে বললো তুমি অনেক অসুস্থ তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি, আম্মু পুরো পাগলের মতো অবস্থা। তুমি কেন বৃষ্টিতে ভিজতে গেছিলা?তোমার যদি কিছু হয়ে যেতে আমাদের কি হতো? সেবার তো মৃত্যুর মুখ থিকা আল্লাহ তোমারে ফিরায় দিলো।কিন্তু এবার কিছু হলে আম্মু-আব্বু, আমিতো পাগল হয়ে যেতাম।

আমি চুপ করে রইলাম।সবার কথার উত্তর আমার জানা থাকলেও আমি বলতে পারছি না।কি উত্তর দিবো সবাইকে? আমার কি বলার মতো কিছু আছে?
দরজায় ঠুকঠুক শব্দ হতেই ইভা আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। দ্রুত গতিতে চোখ মুছে দরজা খুলে দিলো।তায়াং ভাইয়া ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই তার মোবাইলে কল এলো।ইভাকে আমার দিকে খেয়াল রাখতে বলে দ্রুত পায়ে বাইরে চলে গেলো।ইভা আমাকে বললো,

—বোইনে,ওয়াসরুমে যাবো।তাছাড়া নামাজও তো পরতে হবে।

—তখন আম্মু গেলে তার সাথে গেলি না কেন?

—সবাই চলে গেলে তোমার কাছে থাকবো কে? তাই যায়নি।

—আচ্ছা, তায়াং ভাইয়া এসে নিক।ভাইয়ার সাথে যাস।

—আচ্ছা।

কিছু সময় পর এনাজ ও তায়াং ভাইয়া দুজনে টিফিন বাটি নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।এনাজের মুখ, চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে। সারারাত না ঘুমানোর কারণে বেচারাকে অনেকটা মলিন দেখাচ্ছে। আমি তার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম।ইভা তায়াং ভাইয়াকে বললো,

—ভাইয়া, ওয়াসরুমে যাবো।

—ওয়াসরুমে যাবি?

—হুম।

—চল আমার সাথে।

তায়াং ভাইয়া এনাজকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— এনাজ তুই একটু খেয়াল রাখিস।কেবিনেই থাকিস।কোথাও যাস না।

—আচ্ছা তোরা যা।আমি থাকতে তোর এতো টেনশন করতে হবে না।

—জানি তবুও ভাইয়ের কর্তব্য পালন করলাম।

কথাটা বলে ভাইয়া হাসতে হাসতে ইভাকে নিয়ে বাইরে চলে গেলো।পুরো কেবিনে আমি ও এনাজ ছাড়া অন্য কেউ নেই, এই কথাটা মনে হতেই বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করতে লাগলো। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে রইলাম।একটু নড়ছিও না।যার কারণে এনাজ হয়তো ভাবলো আমি ঘুমিয়ে আছি।নিঃশব্দে সে আমার মাথার কাছটায় বসে নিবিড় যত্নে চুলে হাত বুলাতে লাগলো।কিছু সময় পর সে আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াতেই আমি পুরো শর্কড।ফট করে চোখ দুটো খুলে ফেললাম।কিন্তু একি!!আমার গালে পানির ফোঁটা পরলো মনে হলো।তাহলে কি এনাজ কাঁদছে? আমি অসুস্থ বলে সে কান্না করছে? আচ্ছা সে কি আমায় ভালোবাসে? আমার মনে হয় বাসে।নয়তো আমার কষ্টে সে কেন কষ্ট পাবে?
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_20
#Writer_NOVA

—আরেকটু খেয়ে নে।নয়তো শরীর খারাপ করবে তো।সুস্থ হতে হলে ঠিকমতো খাবার খেতে হবে।মাত্র এক বাটি স্যুপ শেষ করতে পারবি না।আরেকবার নাক সিটকালে থাপ্পড় খাবি।তোর নাকে গন্ধ লাগে বলে ডিমও দেইনি।

গত দুই দিন ধরে আমার ওপর দিয়ে খাবারের অত্যাচার যাচ্ছে। একটা খেতে না চাইলে আরেকটা, সেটাও খেতে না চাইলে অন্যটা।আম্মু আমাকে বোধহয় খাইয়ে খাইয়ে আবারো অসুস্থ করে দিবে।দুদিন হসপিটালে থেকে আজই রিলিজ পেয়েছি। আব্বু গতকাল নবাবগঞ্জ তার কাজে ফিরে গেছে। কিন্তু আম্মু ছুটি নিয়ে রয়ে গেছে।বিকেলে চলে যাবে।আগামীকাল থেকে আবার স্কুলে গিয়ে ক্লাশ করাতে হবে।তাই যাওয়ার আগে আমাকে খাইয়ে খাইয়ে কুমড়ো পটাস বানানোর চিন্তায় আছে। তার সাথে যোগ দিয়েছে তায়াং ভাইয়া, তন্বী ও খালামণি।একটু আগে হসপিটাল থেকে সকালের খাবার খেয়ে বাসায় এসেছি। এসে বিছানায় বসতে না বসতেই আম্মু স্যুপ নিয়ে হাজির।এখন সেগুলো গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে আমাকে খাওয়াচ্ছে। আম্মু আরেক চামচ স্যুপ আমার দিকে বাড়িয়ে দিতেই আমি চোখ,কপাল,নাক কুঁচকে এক হাতে মুখ চেপে ধরে বললাম,

—আম্মু আর খাবো না। সরাও এগুলো।আমার বমি বমি লাগছে।তারপরেও যদি জোর করে খাওয়াও তাহলে পেটে যা আছে তাও বের হয়ে যাবে।

—বমি এলেও খাবি।সব যদি বের হয়ে যায় তাহলে আবার খাওয়াবো।তুই খাবার নিয়ে যে কতটা অনিয়ম করিস তা আমার থেকে ভালো অন্য কেউ জানে না। তোর খালামণিও বলেছে তুই খেতে চাস না।তায়াং বাসায় থাকলে ওর ভয়ে একটু খাস।আর ও না থাকলেই ফাঁকিবাজি দিস।

—আম্মু প্লিজ আর না।বমি আসবে।

—আসুক।বমি আসলে বমি করে দিবি।তবুও পুরোটা তোর খেতে হবে। খেয়ে ঔষধ খাবি।আমি তো আজ চলে যাবো।যাওয়ার আগে যতক্ষণ থাকবো ততক্ষণ তোকে খাওয়ার ওপরই রাখবো।

—গন্ধ আসছে।প্লিজ এখনকার মতো মাফ করো।

আম্মু কোন কথা শুনলো না।জোর করে পুরোটা স্যুপ খাইয়ে তবেই ছাড়লো।আমার এখন সত্যিই বমি বমি লাগছে।হসপিটালে দুইদিন থেকে আমার অবস্থা খারাপ। সারাক্ষণ শুয়ে, বসে থাকতে কার ভালো লাগে। আবার মোবাইলটাও ধরতে দেয় না।এমনি কি সময় কাটে বলুন তো।তাই চেচামেচি করে আজ রিলিজ নিয়ে চলে এসেছি। ডক্টর বলেছিলো আজকের দিনেও থাকতে।পাগল নাকি যে আজও থাকবো।আজকে থাকলে আমি সুস্থ হওয়ার বদলে আরো অসুস্থ হয়ে যেতাম।”ভালো লাগে না বাসায় চলো, ভালো লাগে না বাসায় চলো” বলে গান শুরু করেছিলাম।অবশেষে আমার গানে বিরক্ত হয়ে হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছে সবাই। গতকাল তায়াং ভাইয়ার অনেক বন্ধু এসেও দেখা করে গেছে। ইমরান হাশমি ভাইয়া, রায়হান ভাইয়া, শাহেদ ভাইয়া আরো অনেকে।প্রত্যেকে গাদা গাদা করে ফল নিয়ে এসেছে। এনাজও একগাদা ফল কিনে তার এক বন্ধুকে দিয়ে গতকাল হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।এখন আমাকে সেগুলো খাইয়ে গুলুমুলু বানিয়ে ফেলবে।কি কষ্ট করে ডায়েট করে ৩ কেজি কমেছিলাম।এবার বোধহয় ৯ কেজি বেড়ে যাবো।

—নে ধর এই ফলগুলো শেষ করতো।

ফলের কথা ভাবতে না ভাবতেই আম্মু এক প্লেট ভর্তি বাহারি ফল কেটে এনে মুখের সামনে হাজির।এখন আমার অবস্থা জ্ঞান হারাবো,হারাবো।শুকনো মুখে একবার আম্মুর দিকে তাকালাম আরেকবার প্লেটের দিকে।তখুনি রুমে তায়াং ভাইয়া ও তার বন্ধু তওহিদ ভাইয়ার প্রবেশ। তওহিদ ভাইয়া আম্মুকে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো।

—-আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোমাকে তো চিনলাম না।

—আন্টি আমি তওহিদ। তায়াং-এর বন্ধু।

—ওহ্ আচ্ছা। তা ভালো আছো?

— জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।

—একি দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো?

—বসছি আন্টি। আপনি ব্যস্ত হয়েন না।

তায়াং ভাইয়া আমার পাশে বসে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলো,

—কি হয়েছে খালামণি?

—দেখ না ফলগুলো কেটে এনেছি বলে আমার দিকে কিভাবে তাকাচ্ছে।আমি ওর সুস্থতার জন্য মরিয়া হয়ে যাচ্ছি। আর ও আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। কত কষ্ট করে এক বাটি স্যুপ খাইয়ে দিলাম।এখন আবার তোর আম্মু ফলগুলো কেটে দিয়ে বললো ওকে খাওয়াতে।আমি তাই নিয়ে এলাম।

—ও ভালো কথার মানুষ নয়। ওকে ভালো করে কিছু বললে কখনো কোনকিছু করবে না। ধমক আর মারের ওপর রাখবেন তাহলে দেখবেন নোভা ঠিক।

আমি নাক কুঁচকে হাসের মতো ঠোঁট করে বিরক্তি মাখা চাহনিতে তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকালাম।যার মানে হলো, “দিন তোর একা যাবে না,আমারও দিন আসবে।তখন সবকিছু উসুল করবো।” তওহিদ ভাইয়ার হাতেও মনে হচ্ছে ফলের স্তুপ। ভাইয়া তার হাতের ফলগুলো আম্মুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমার সামনের চেয়ারে বসলো।আম্মু কিছুটা,ইতস্তত হয়ে তওহিদ ভাইয়াকে বললো,

—এসবের কি দরকার ছিলো?ও তো কিছু খেতেই চায় না।ওর খাবার খেতে যা কষ্ট লাগে।

—বোন অসুস্থ। ভাই ওকে দেখতে আসবো আর কিছু আনবো না তা কি মানায় বলুন?অসুস্থ বোনের জন্য তো কিছু নিয়ে আসতেই হয়।

—এখন এসব ফলমূল আর রোগের হাত থেকে বাঁচায় না।বরং এগুলো খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়।ফল ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ ফরমালিন মেশায় তাতে সুস্থ হওয়ার বদলে অসুস্থ মানুষ আরো অসুস্থ হয়ে যায়।টাকা দিয়ে এই বিষ না খাওয়ায় ভালো।

—তা ভুল বলেননি আন্টি।

তওহিদ ভাইয়া আম্মুর সাথে একমত প্রকাশ করে আমার দিকে তাকালো। তারপর বললো,

—কেমন আছো নোভা?

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

—আলহামদুলিল্লাহ। সরি তোমাকে হসপিটালে দেখতে যেতে পারিনি।আর্জেন্ট কাজ পরে গিয়েছিলো।সেটা সামলাতে গিয়ে দুই দিন পার।তাই ভাবলাম তোমায় বাসায় আনলে তারপর দেখে যাবো।

আম্মু তায়াং ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—তায়াং দেখিস তোর উড়নচণ্ডী বোনটাকে একটু ফলগুলো খাইয়ে দিস।আমি বরং তওহীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করি।তুই ওকে জোর করে একটু খাইয়ে দিস।

তওহিদ ভাইয়া বললো,
—আন্টি ব্যস্ত হবেন না।আমি আছি তো।চলে তো যাচ্ছি না।

—কোন কথা শুনছি না। তোমরা কথা বলো আমি আসছি।

আম্মু ফলের প্যাকেটগুলো নিয়ে কিচেনে চলে গেল।ইভা খালামণিকে রান্নায় সাহায্য করছে।তন্বী কলেজে গেছে। ওর আসার সময়ও হয়ে গেছে। ঘড়ির কাটা দুপুর বারোটা পেরিয়ে একটার দিকে এগুচ্ছে। আর তায়াং ভাইয়া জোর করে আমার ওপর ফল খাওয়ানোর অত্যাচার চালাচ্ছে। কিছু বলতেও পারছি না। খাবো না বলে একটু মুখটাকে বাঁকা করেছিলাম।তারপর যে একটা রামধমক দিয়েছে তাতে আমার হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছিলো।তাই চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছি।

💖💖💖

তওহিদ ভাইয়ার মোবাইলে একটা কল আসতেই সে মোবাইল নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তায়াং ভাইয়া বা-হাতে মোবাইল গুতাচ্ছে আর ডান হাতে আমাকে ফল খাইয়ে দিচ্ছে। এনাজকে গত দুদিন ধরে আমার ধারের কাছেও দেখি না।এমনকি আজও এলো না।সেদিন কপালে তার ঠোঁটের পরশ পেতেই আমি দ্রুত চোখ বন্ধ করে খিঁচে শুয়ে ছিলাম।যাতে সে বুঝতে না পারে আমি জাগ্রত। প্ল্যানে সাকসেসফুলও হয়েছিলাম।এনাজ ধরতে পারেনি যে আমি জেগে আছি।যদি সে জানতো আমি জেগে আছি তাহলে দুজনেই লজ্জার মুখে পরতাম।তাই এটাই ভালো হয়েছে কেউ লজ্জা পাইনি।কিছুটা ভয়ে ভয়ে তায়াং ভাইয়াকে এনাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম।

—তায়াং ভাইয়া।

—হুম বল।

—এনজিও সংস্থা কোথায়রে?গতকাল থেকে দেখি না যে? কোথাও গিয়েছে নাকি?

ভাইয়া মোবাইলের থেকে মুখ উঠিয়ে বিস্মিত চোখে বললো,
—হঠাৎ ওর খোঁজ খবর নিচ্ছিস যে?

—এমনি জিজ্ঞেস করলাম। কেন জিজ্ঞেস করতে পারি না?

—তুই তো আমার কোন বন্ধুর কথা জিজ্ঞেস করিস না।তাই বললাম।

—যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে।

—গতকালও তো এসেছিলো।রাতে হসপিটালে ছিলো।

—বলিস কি😮? কিন্তু আমি দেখি দেখলাম না।

—একবার না দুইবার তোর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু মহারাণী আপনি ঘুমে ছিলেন।

—ওহ্। আজ আসবে না?

—কেন আসবে?

—এমনি জিজ্ঞেস করছি।

—বললো তো দুপুরে আসবে।সকালে ওর একটা ইন্টারভিউ আছে। তাই সকালে আসতে পারেনি।

—আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা জিজ্ঞেস করি।কিছু মনে করিস না।

—ওকে।

—এনজিও সংস্থার পরিবারে কে কে আছে রে? ওর বাবা-মায়ের কথাও তো কখনো কিছু বলে না।

—ছোট ভাই এনাম ছাড়া ওর আর কেউ নেই।

—মানে?

—ওর বাবা-মা মারা গেছে।

কথাটা শুনে অলরেডি আমার মুখটা হা হয়ে গেলো।তার বাবা-মা নেই শুনে অনেক খারাপ লাগলো।ভাইয়াকে তার বাবা-মা মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞেস করলাম,

—কিভাবে মারা গেছে?

—এনাজের বয়স যখন ৮ বছর তখন ওর আব্বু লিভার ক্যান্সারে মারা যায়। তারপর ওর বয়স যখন ১৫ তে পরলো তখন হঠাৎ করে একদিন ওর আম্মু ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক করে ওদেরকে একা করে পরপারে চলে গেলেন।তারপর থেকে জীবনযুদ্ধে একাই ভাইকে নিয়ে এতদূর এসেছে।

— ও তো কোন কাজ করে না।আমার জানামতে সে বেকার।তাহলে ওদের দুই ভাইয়ের চলে কি করে?

—বহু আগে গ্রামে ওদের ভিটেমাটি বিক্রি করে এই শহরে ছোট্ট একটা দুই রুমের ফ্ল্যাট ও একটা দোকান কিনেছিলো।সেই ফ্ল্যাটে থাকে।আর দোকানটাকে ভাড়া দিয়েছে। সেই দোকান থেকে যা ভাড়া আসে তা দিয়ে দুই ভাইয়ের আলহামদুলিল্লাহ ভালো চলে যায়।এখন এনাজ চাইছে ব্যবসা শুরু করতে।তার সাথে একটা জব করতে।এনামকে দেশের বাইরে পাঠাবে হাই স্টাডির জন্য। তার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন।গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউ দিয়েছে। কিন্তু রেজাল্ট ভালো আসছে না।তাই প্রচুর মানসিক চাপে আছে।

— ওহ আচ্ছা।

—তা হঠাৎ এনাজের বিষয় এতো কৌতুহল কেন?

—আশ্চর্য, তুই যে কি বলিস না ভাইয়া! একটা মানুষের বিষয় আমি জানতে চাইতে পারি।তার জন্য এত সন্দেহের চোখে দেখার মতো কিছু হয়নি।

ভাইয়া আর আমি এসব নিয়ে কথা বলছিলাম।হঠাৎ বাইরে কিছু একটা পরার শব্দ পেতেই আমি ও ভাইয়া একসাথে জিজ্ঞেস করলাম,

—কি হয়েছে?

ভাইয়া মোবাইল পকেটে রেখে প্লেটটা বিছানার ওপর রেখে বাইরে চলে গেলো।যাওয়ার আগে আমাকে বিছানা থেকে নামতে নিষেধ করে গেছে। কিছু সময় পর হাসতে হাসতে মাথা ধরে রুমের ভেতর শারমিন ঢুকলো।কপালের কাছটায় ডলতে ডলতে আমার পাশে বসলো।আমি বিস্মিত চোখে বললাম,

— কিরে শারু তুই!!

—হ্যাঁ আমি।ও আল্লাহ গো আমার কপালটা জ্বলে গেল।ঐটা কি মাথা ছিল নাকি লোহা।

—কি হয়েছে? আমাকে কি বলবি?

—আর বলিস না।তোর রুমে ঢুকতে গিয়ে একটা দামড়া ছেমরার মাথার সাথে ডুশ খেলাম।বেচারা উবু হয়ে প্যান্টের নিচটা ঠিক করতে গেছিলো।আর তখনই আমি ফ্লোরে পিছল কেটে বেচারার মাথার সাথে ডুশ খেলাম।আমার কপালটা জ্বলে যাচ্ছে। পানি কই? পানি দে আমারে।

—টেবিলের জগে পানি আছে।

শারমিন উঠে জগের থেকে কিছুটা পানি নিয়ে ওর কপালে ডলতে লাগলো।আমার এতক্ষণ তওহিদ ভাইয়ার কথা মনে ছিলো না।হঠাৎ মনে হতেই জিজ্ঞেস করলাম,

— যেই ছেলেটার সাথে ধাক্কা খেয়ে কপাল ফুলিয়েছিস সে কি লেমন কালার টি-শার্ট পরেছে।

—হুম লেমন কালার টি-শার্ট আর গ্রে কালার প্যান্ট।

—ওহ আমি ঠিক ধরেছি।তুই তওহিদ ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেয়েছিস।তা চোখ কোথায় রেখে হাঁটিস?

—আমি কি খেয়াল করছি নাকি?উহ, আমার কপাল।

—ভালো করে ডলতে থাক।বরফ ধরবি?

—না থাক।আগে বল তুই কেমন আছিস?

—এতক্ষণ পর?

—তাও শুকরিয়া আদায় কর যে জিজ্ঞেস করছি।

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা তুই কার সাথে এলি?

—তন্বীর সাথে। তোর যে এই অবস্থা তা আমি গতকাল তন্বীর থেকে জানছি।তোর মোবাইলে কল দিয়েছি।কিন্তু কল ঢুকেনি।

—ওফস সরি।মোবাইলে এরোপ্লেন মোড অন করা ছিলো।

—তোর মোবাইল এরোপ্লেন মোডই অন থাকবে।আমি এদিকে চিন্তায় শেষ।হসপিটালে তো যেতে পারি নাই।তাই আজকে চলে এলাম।

—ভালো করেছিস।নে আবার গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে আয়।

—আচ্ছা।

শারমিন ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।দুপুরে সবাই একসাথে খাবার খেলো।আমার তো রুম থেকে বের হওয়া নিষেধ। তাই আমি রুমেই বসে ছিলাম।আম্মু একটু আগে খাইয়ে দিয়ে গেছে। শারমিনকে জোর করে রেখে দিয়েছি। দুপুরে না খেয়ে ওকে কেউ যেতেই দিবো না। বিকেলে অব্দি রাখার জন্য ওর আম্মুকে কল দিয়ে পারমিশন নিয়ে নিছি।শারমিন আসার পর থেকে তওহিদ ভাইয়ার হাব-ভাব আমার ভালো ঠেকছে না। সে শারমিনের আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে।আর আমার বন্ধবী তো পুরো আমার কার্বন কপি।এসব দেখেও না দেখার ভান করে আছে।একদমি পাত্তা দিচ্ছে না বেচারাকে। হাই পাওয়ারের এন্টিবায়োটিক খাওয়ার দরুন আমার শুধু ঘুম পায়।দুপুরের ঔষধ খাওয়ার পর টেনেও চোখ মেলতে পারছিলাম না।ইচ্ছে ছিলো এনাজ এলে ওকে এক নজর দেখবো।কিন্তু ঘুম বাবাজী তা হতে দিলো না। কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

হঠাৎ ঘুমের ঘোরে কানের কাছে কারো উষ্ণ নিঃশ্বাস পেতেই বেশ কয়েকবার নড়েচড়ে উঠলাম।কিন্তু ঔষধের কার্যকরিতার কারণে চোখ মেলে তাকাতে পারছিলাম না।সে আলতো করে তার ঠোঁট জোড়া আমার কানে ছুঁয়ে মৃদুস্বরে ডাকলো,

—টিডি পোকা!

তার মানে হলো উনি এনাজ।আমার ঘুম ভেঙে গেলো ঠিক কিন্তু চোখ খুললাম না।চোখ, মুখ খিঁচে কাঁথা মুঠ করে ধরে ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলাম।
তখুনি আম্মুর কন্ঠ পেলাম,

—নোভা আমরা আরেকটু পর চলে যাবো।আর কত ঘুমাবি?একটু উঠ।

মনে হচ্ছে আম্মু কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে।কিন্তু এনাজের সরার নাম নেই। সে এখনো আমার কানে তার অধর যুগল ছুঁয়ে বসে আছে। তারপর যে অঘটন ঘটলো তার জন্য আমি কিংবা এনাজ কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।

#চলবে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here