শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -১৭+১৮

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_17
#Writer_NOVA

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। আজ আমার সাথে হয়তো আকাশেরও মন খারাপ। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মুখ বেয়ে টপটপ করে নিচে পরছে।ইচ্ছে করেই ভিজছি।বৃষ্টির সাথে চোখের পানিগুলো মিশে যাচ্ছে। সকালে তাকে দেখার পর যখন কলেজের পেছন দিকে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠলাম। তখন সেখানেও মিনিট দশেক কেঁদে বাসায় চলে এসেছি। আমি আজ কলেজে থাকলে শেষ হয়ে যেতাম।যদি তার মুখোমুখি হয়ে যাই তাহলেই সমস্যা।বাসার আসার পর নামলো ঝুম বৃষ্টি। তায়াং ভাইয়া তার বন্ধুদের নিয়ে রুমে আড্ডা দিচ্ছে। বৃষ্টির কারণে দুপুরে আজ ইলিশ খিচুড়ি রান্না হবে।খালামণির হাতের ইলিশ খিচুড়ির কোন তুলনা হয় না।তাই আকাশে মেঘ জমলেই তায়াং ভাইয়ার আবদার সেদিন ইলিশ খিচুড়ি রাঁধতে হবে।বাসায় আসার পর থেকে ভীষণ খারাপ লাগছিলো।খালামণি কিংবা বাসার কেউ আমাকে দেখেনি।একবার তায়াং ভাইয়ার রুম অব্দি গিয়েছিলাম।পর্দা সরিয়ে দেখলাম অনেক মানুষ। তাই ভাইয়াকে না ডেকেই ছাদে চলে এলাম।ইচ্ছে হলো বৃষ্টিতে ভেজার সাথে কান্না করে মনটা হালকা করি।আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের মনের আর্জিগুলো জানালাম।

—আল্লাহ সবই তো ভুলে গিয়েছিলাম আমি।সব ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করেছি।তবুও কেন সে আমার কাছে চলে এলো।তাকে ছাড়া ভালোই তো ছিলাম।কেন অতীত মনে করাতে সে চলে এলো?আমাকে কি তুমি শান্তিতে বাঁচতে দিবে না। যে মানুষটা আমাকে জীবনের মাঝরাস্তায় এসে হাত ছেড়ে দিলো,এতো এতো স্বপ্ন দেখিয়ে সবকিছু নিজে ভেঙেচুরে, মিথ্যে অপবাদ দিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চলে গিয়েছিলো।তাকে কেন আমার চোখের সামনে আনলে? আমি কি সব ভুলে হাসি-খুশিতে জীবন পার করতে পারবো না? তুমি কি জানো না, তাকে নিজের চোখের সামনে দেখলে আমি আবারো আত্মহত্যার চেষ্টা করবো?একবার আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে ফিরেছি।

হাঁটু মুড়ে বসে দুই হাত ঢেকে বেশ কিছু সময় চিৎকার করে কাঁদলাম। হঠাৎ নিজের মনের ভেতর থেকে একটু সাহস উঁকি দিলো।দুই হাত সরিয়ে চোখ, মুখ শক্ত করে নিজের মনে বিরবির করে বললাম,

—কিন্তু আমি তো এখন সেই ভুল কখনো করবো না। আমি নিজের জীবনকে ভীষণ ভালোবাসি।আমাকে সব বাঁধা উপক্রম করতে হবে।একটুও ভেঙে পরবো না আমি।কেন ভেঙে পরবো?যে কিনা সবার কাছে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নিজে ভালো সেজেছিলো তার জন্য কাঁদবো? একটু কাঁদবো না।আমাকে শক্ত হতে হবে।হ্যাঁ,আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।তাকে ভুলে আমি যখন নতুন জীবন শুরু করতে পেরেছি তাহলে সে আবার আমার সামনে এলে আমি কেন দূর্বল হবো?একটুও হবো না। একটুও না।

কথাগুলো বলে আবার কান্নায় ভেঙে পরলাম।বৃষ্টির বেগটা আগের থেকে বেড়ে গেছে। সারা শরীর ভিজে একাকার। চুল বেয়ে পানি পরছে।বৃষ্টির পানির সাথে আমার চোখের পানিও ধুয়ে যাচ্ছে। আমার যে এবার ৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে জ্বর আসবে তা আমি সিউর।আসুক,আমি ইচ্ছে করে জ্বরকে দাওয়াত করেছি।তাহলে কয়েকদিন কলেজে যেতে হবে না। আর সে যদি এই কয়েকদিন কলেজে আসে তাহলে তার সাথে আমার দেখা হবে না। ছাদের ফ্লোরে জমে থাকা পানির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এসব ভাবছিলাম। হঠাৎ আমার খেয়াল হলো আমার শরীরে বৃষ্টির পানি পরছে না। সামনে তাকিয়ে দেখলাম জমে থাকা পানিতে বৃষ্টি পরছে। কিন্তু আমার শরীরে বৃষ্টির পানি পরছে না। পেছন ঘুরে দেখলাম আমার মাথার ওপর ছাতা ধরে রাখা। তাকে পা থেকে মাথা অব্দি দেখার আগেই আমার চোখ পানিতে ঝাপসা হয়ে এলো।আমার মনে হলো আমি তায়াং ভাইয়াকে দেখলাম।দ্রুত উঠে তায়াং ভাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম।

—তায়াং ভাইয়া আমার অনেক খারাপ লাগছে।জানিস আজ ও আমাদের কলেজে এসেছিলো।ওকে দেখে আমার সারা পৃথিবী থমকে গিয়েছিল। আমি ওকে চোখের সামনে সহ্য করতে পারছিলাম না।তায়াং ভাইয়া আমার সাথে এমন কেন হলো রে?আমি তো ওকে সত্যি ভালোবেসে ছিলাম।তাহলে ও কেন আমায় ঠকালো?আমার সাথে এতো সুক্ষ্ম অভিনয় কেন করলো?তুই না সবসময় বলতি মেয়েরা অভিনয় করে।তাহলে আজ কেন আমি হেরে গেলাম।তবে কথাটা তুই ভুল বলিসনি।হ্যাঁ,মেয়েরা অভিনয় করে। যেমন আমি সব ভুলে হাসি-খুশি থাকার অভিনয় করি।সবাইকে মাতিয়ে রেখে দেখাই আমি ভালো আছি।এখনো মাঝরাতে চোখ বন্ধ করলে ওর কথা কানে এসে বারি খায়।নতুন কাউকে নিয়ে কল্পনা করতে চাইলেও ও এসে হাজির হয়।কেন তায়াং ভাইয়া তার উত্তর কি দিতে পারবি?তুই চুপ করে আছিস কেন?বল কিছু।আমাকে পুরোনো অতীত থেকে মুক্তি দে না রে ভাইয়া।আমি আর সহ্য করতে পারছি না।খুব কষ্ট হয় জানিস। আমি ভালো নেই তায়াং ভাইয়া। আমি ভালো থাকার অভিনয় করি।এখনো যে পুরোনো স্মৃতিগুলো তাড়া করে বেড়ায় আমায়।সেগুলো ভেতরটাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে শেষ করে দিলো আমায়।আমি মুক্তি চাই ভাইয়া।

বরফ যেমন সামান্য উষ্ণতা পেলে গলে যায়।তেমনি আমি শুধুমাত্র এই ভাইটার সংস্পর্শে এলে পুরো দূর্বল হয়ে যাই।প্রিয় মানুষ তো আমাদের অনেকেই হয়।কিন্তু জড়িয়ে ধরে কান্না করার মতো মানুষ কয়জন হয়? যাকে জড়িয়ে ধরলে সবকিছু ভুলে যাই আমরা।বৃষ্টির বেগ কমে এসেছে। তার সাথে আমার কান্নার বেগ কমে গেছে। এখন ফোপাচ্ছি।তায়াং ভাইয়া ঠায় ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ থেকে একটা শব্দও বের হয়নি।এমনকি সে আমায় জড়িয়েও ধরিনি।শুধু দু-একবার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়েছে। আমার ভেজা শরীর নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরার কারণে তার শার্টও ভিজে গেছে। হঠাৎ সে মৃদুস্বরে বলে উঠলো,

“হৃদয়হীন মানুষের জন্য কেঁদো না
সে তোমার দিকে ফিরেও তাকাবে না
একটা হৃদয়বান মানুষের জন্য কেঁদো
তাহলে দেখবে,তোমার কান্নার আগেই
সে তোমাকে কাছে টেনে নিবে”

কন্ঠ শুনে আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম।এটা তো তায়াং ভাইয়ার কন্ঠ নয়।অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে এনাজ ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি এতক্ষণ তাহলে তায়াং ভাইয়া ভেবে তাকেই জড়িয়ে ধরেছিলাম।মাঝে মাঝে তায়াং ভাইয়া ও এনাজ দুজনেই একরকম শার্ট-প্যান্ট পরে।তখন যদি ওদের কেউ ভালো মতো খেয়াল না করে তাহলে যময ভাই ভেবে ভুল করবে।একরকম ড্রেসে পেছন থেকে তো পুরো একিরকম মনে হয়।যদিও তাদের চেহারার মিল নেই। তবুও অনেকে খেয়াল না করে ভুলটা করে।আমিও আজ সেম ভুল করেছি।তারা দুজন আজও একি শার্ট-প্যান্ট পরেছে।আমি চেহারা না দেখে বডি দেখে তায়াং ভাইয়া ভেবে তাকে জড়িয়ে ধরেছি।তাছাড়া কতকিছু বলে দিয়েছি।আমি দ্রুত চোখ মুছে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলাম।পেছনে তাকানোর মতো অবস্থায় আমি নেই।

💖💖💖

বিকেলের পড়ন্ত আলোটা জানালা দিয়ে ঢুকে হাতছানি দিচ্ছে।দুপুরে কোনরকম খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।এখন উঠে ওয়াশরুম থেকে চোখ, মুখে পানি দিয়ে রুমে ঢুকলাম।চোখ আমার ফুলে লাল হয়ে আছে। আজ ইচ্ছে মতো কান্না করেছি। কান্না করা ও বৃষ্টিতে ভেজার দরুন মাথাব্যাথা উঠে গেছে।এখন শুধু জ্বর বাবাজীর আসার অপেক্ষা।কান্না করায় মনটা অনেক হালকা হয়েছে। সাথে মেজাজটাও অনেক ফুরফুরে।টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ডেসিং টেবিলের সামনে আসতেই চোখ পরলো লাল রঙা একটা কাগজের ওপর।যেটা কফির মগের সাথে চাপা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। যাতে উড়ে যেতে না পারে।আশেপাশে তাকিয়ে কারো অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না।কফির মগটা সরিয়ে কাগজটা হাতে নিলাম।

ডিয়ার মাই লাভ💘,
আমি কোনদিনই জানতে চাইবো না তোমার অতীতে কে ছিলা। ওসবে আমার মাথা ব্যাথা নেই।আমার কাছে তুমি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কুমারীত্ব পরীক্ষা করে দেখার জন্যে আমি বসে নেই।তোমার শরীরে কারো গন্ধ লেগে আছে কিনা, এটা শুকে দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা আমার নেই।শুধু তোমাকে বলবো, যদি তোমার কখনো খুব কাঁদতে ইচ্ছে হয়। প্লিজ আমাকে জড়িয়ে ধরে শার্ট ভিজিয়ে কেঁদো।তোমার চোখে কখনো রাজ্যের সব ঘুম নেমে আসে আমার বুকে মাথা রেখে একটু ঘুমিয়ো। ভরদুপুরে একাকীত্ব বোধ করলে আমায় একটু ডেকো।আমাকে ভালো-টালো না বাসলেও চলেবে। শুধু তুমি ভালো থেকো।তোমার অভিমানের পালা শেষ হলে আমাকে পাশে ডেকো।বেশি কিছু চাই না। শুধু তোমার পাশের বালিশে আমার একটু জায়গা দিয়ো। যেনো চোখ খুলে তোমার মায়া ভরা মুখটা দেখতে পারি।আর তোমার ঐ মায়াবী চোখ পাকানোটা উপভোগ করতে পারি।

তবে একটা কথা অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ এ অনেক গুলো অপশনের মধ্যে আমি একটা অপশন থাকবো এমন টা চাই না।আমি চাই তোমার জীবনে একটাই অপশন থাকবে আর সেটা শুধু মাত্র আমি।হ্যাঁ, শুধুই আমি।সব ভুলে আমাকে আপন করে নাও।
প্রমিজ করছি তোমার অতীত যতই বিষাক্ত হোক না কেন আমি কখনও মনে আসতেই দিবো না।

ইতি তোমার
ভালোবাসার কাঙাল

লেখাগুলো পড়তে গিয়ে আনমনেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। আমার এনাজকে ভীষণ সন্দেহ হচ্ছে। আমার মনে হয় এই চিরকুটগুলো এনাজই দিচ্ছে। কিন্তু প্রমাণ ছাড়াতো আন্দাজে ঢিল মারতে পারি না। এখন শুধু প্রমাণ পেয়ে হাতেনাতে ধরতে পারলেই হলো।চিরকুটটা আগেরগুলোর সাথে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খাটে বসে কফির মগে চুমুক দিলাম।

—নোভাপু, এই ঔষধ দুটো খেয়ে নাও।তায়াং ভাইয়া পাঠিয়েছে। তুমি না খেলে বলেছে বকবে।

তন্বী এক গ্লাস পানি ও দুটো টেবলেট নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকলো।বাইরে এখনো বৃষ্টি নেই। তবে আকাশ গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করছে।সাথে ঠান্ডা বাতাস বইছে। আমার প্রচুর শীত করছে।কফিটা জলদী শেষ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে জুবুথুবু হয়ে বসলাম।তন্বী আমার দিকে ঔষধগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

—জলদী খেয়ে নাও।নয়তো আমাকে বকবে।বৃষ্টিতে আজ অনেক ভিজছো।পাক্কা জ্বর আসবে।

—এতবড় টেবলেট আমার গলা দিয়ে নামবে না।তুই জানিস না আমি টেবলেট খেতে পারি না।গলায় বেজে থাকে।আমি খাবো না, সর।

—খেতে না চাইলে জোর করে খাইয়ে দেওয়ার হুকুম আছে। নয়তো আমাকে বকে উদ্ধার করে ফেলবে।

—তায়াং ভাইয়া কোথায়?

—দুপুরে একবার এসে তোমাকে দেখে গেছে। তুমি তখন ঘুমাচ্ছিলে।তাই ডাক দেয়নি।নাও ঔষধগুলো খেয়ে নাও।

—আমি খাবো না। প্লিজ তন্বী জোর করিস না।

—কোন কথা শুনছি না।

তন্বী জোর করে ঔষধ দুটো খাইয়ে দিলো।আমি আরো দুই গ্লাস পানি ঢকঢক করে শেষ করলাম।তারপরেও মনে হচ্ছে গলায় ঔষধ বেজে আছে। কাঁথা মুড়ি দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ঠান্ডা বাতাস ততটা গায়ে না লাগলেও শীত করছে।পাশের বারান্দার দিকে তাকিয়ে তন্বীকে জিজ্ঞেস করলাম,

—ইফাত,সিফাত কোথায় রে? কয়েকদিন ধরে ওদের দুজনকে যে দেখছি না।আমার ভালুপাসা ও ছোট দেবরটাকে আজকাল দেখি না।

—ইস, কত ভালুপাসা। একদম বাইয়া চাইয়া পরতাছে।তা তুমি কি তোমার ভালুপাসাটাকে মিস করছো নাকি?

—আরে ধূর,যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে।

—ওরা দুজন ওদের নানাবাড়ি গিয়েছিল। আজ সকালে তো ফিরেও এসেছে।

তন্বীর কথা শেষ হতেই ইফাতদের বারান্দার দরজাটা খট করে খুলে গেলো।এদিক সেদিক তাকিয়ে পা টিপে টিপে ইফাত আমাদের বারান্দার রেলিঙের সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি চোখ ছোট ছোট করে ওর কার্যকালাপ পর্যবেক্ষণ করছি।হুট করে আমাকে দেখে চমকে উঠলো। আমি কাঁথা মুড়ি দেয়া ছিলাম বলে বেচারা বোধহয় আমাকে খেয়াল করতে পারেনি।

—বউ তুমি 😍।

—পিচ্চি আমাকে বউ বলে ডাকবি না।আমি তোর বড় বোন।আরেকবার বউ বললে থাপড়াইয়া তোরে অজ্ঞান করমু।তারপর তোর কিডনি বেঁচে দিবো।

—পারবা না তুমিও তো আমারে ভালোবাসো।এই যে আমার জন্য বারান্দার দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাছো।

—তোর ভালুপাসা ছুটাইতাছি।বারান্দায় দেখে সাহস বেড়ে গেছে। দাড়া আমি আসতেছি।

—এই নাও এটা তোমার।

সেদিনের মতো করে ছোট একটা কাগজ মুড়িয়ে ছুঁড়ে মেরে রুমের ভেতর দৌড় দিলো।যাওয়ার আগে ঠোঁট দুটো চোখা করে আমাকে কিসি দেখালো।সাথে দুই চোখ মেরে দিলো। এক চোখ মারতে পারে না বেচারা।এক চোখ মারতে গেলে ওর দুই চোখ বন্ধ হয়ে যায়।আমার চোখ দুটো এখন শুধু কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মুড়ানো কাগজটা খুললাম।আজও একশ একটা বানান ভুল হওয়া চিঠি দিয়েছে।

বউ,
এই কয়টা দিন তুমারে আমি অনেক মিস করছি যানো।আমি নানাবাড়ি থাকলেও আমার মনটা ছিল তুমার কাছে।ঘুমানোর লিগা চোখ বন্ধ করলেই তুমার মুখটা ভাইসা উঠতো।যার কারনে আমি ঘুমাইতে পারতাম না। তুমি যানো আমি বাসায় আসার লিগা প্রতেকদিন কানতাম। সুধু তুমারে দেখার জন্য। তুমারে ছাড়া আমার দিনগুলো যাইতাছিলো না।বাসায় থাকলে তো লুকাইয়া তুমারে যা এট্টু দেখতাম।কিন্ত নানাবাড়িতে তুমারে দেখি না।তাই আমার মন অনেক খারাপ লাগতো।আজকে বাসায় আইসা তুমারে দেখার পর আমার সবকিছু ভালো লাগা শুরু করছে।আমি তুমারে সত্য অনেক ভালবাসি।কিন্ত তুমি বুঝো না।

ইতি তুমার
ইফাত

আহা, কি ভালুপাসা!! সবাই এখন আমাকে চিঠি দিতে ব্যস্ত।একজনকে তো হাতেনাতে ধরতে পারতেছি না।আরেকজন আমার বিরহে পাগল হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এটা সত্যি আমি চিঠি পড়ে আমি এখন কোমায় আছি।কোমা ফিরে আসলে বাকিগুলো বলবোনি।

কিন্তু রাতে……
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_18
#Writer_NOVA

কিন্তু রাতে কাপুনি দিয়ে যে জ্বর এলো তাতো সবাই ভয় পেয়ে গেলো।তায়াং ভাইয়া তো পাগলপ্রায়। রাতে গিয়েই ফার্মেসী থেকে ঔষধ নিয়ে এসেছে। তারপরেও আমার জ্বর কমার নাম নেই।সাথে বমি ও মাথা ঘুরানো তো আছেই। খালামণি,তন্বী সবার ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে। দুটো কম্বল মুড়ি দিয়ে ঠকঠক করে কাঁপছি। আশেপাশের কোন দিকে হুশ নেই।তিনবার বমি করা হয়ে গেছে। শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। ভাইয়া জোর করে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছিলো।সেগুলো বমি করে ফেলে দিয়েছি।এখন যে আমাকে নিয়ে তারা ঢেঢ় টেনশনে আছে তা আমি জানি।

সময় এখন প্রায় রাত বারোটার কাছাকাছি। বোধশক্তি একটু একটু করে ফিরে আসছে।আমার মনে হচ্ছে আমার শিয়রের পাশে বসে কেউ নিবিড় যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সেই পরশে কয়েকবার নড়েচড়ে উঠেছি।কিন্তু চোখ মেলে তাকানোর জো নেই। কপালে হাত রেখে সে জ্বরের তাপমাত্রা চেক করলো।দেয়ালে থাকা ঘড়িটা টিকটিক করে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। আমার কানে সেই শব্দটা বারি খাচ্ছে। যা খুবই বিরক্তিকর ও একঘেয়ে।তাতে আমি বেশ কয়েকবার চোখ বুজে মাথা নাড়িয়ে আমার বিরক্তি প্রকাশ করতেই সে ব্যস্ত হয়ে গেলো।আমার এক হাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,

—তোমার কি অনেক খারাপ লাগছে টিডি পোকা?বমি করবে আবার?কি হয়েছে বলো আমায়? খারাপ লাগছে অনেক?

বড় করে এক নিশ্বাস ছেড়ে না চাইতেও চোখ খুললাম।মলিন চোখে পাশ ফিরে তার দিকে তাকালাম।এনজিও সংস্থার চোখেও আমি অসহায়ত্ব দেখতে পেলাম।কিরকম নিস্বার্থভাবে সে আকুতি প্রকাশ পাচ্ছে। যার মধ্যে নেই কোন অভিনয় কিংবা লোক দেখানো।আমি কোনরকম দম ছেড়ে তাকে বললাম,

—আমি উঠবো।

—কোন উঠাউঠি নেই। চুপচাপ শুয়ে থাকো।কোনকিছু লাগলে আমায় বলো।

মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম কিছু লাগবে না। তার পরনে কোর্ট-প্যান্ট দেখে কিছুটা অবাক হলাম।আমার জানামতে উনি বেকার।কোন কাজ করেন না।উনি ও তায়াং ভাইয়া দুজনে মিলে পার্টনারশিপে একটা ব্যবসা শুরু করবে বলে শুনছি।তাই তাকে ফর্মাল গেটআপে দেখে অবাক হওয়ারি কথা।কিন্তু এসব কথা জিজ্ঞেস করতে একটুও ইচ্ছে করছে না।আমি ক্ষীণ গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

—বাকি সবাই কোথায়?

—উনারা মাত্র খেতে গেলো।কেউ যেতে চায়নি।আমিই জোর করে পাঠিয়েছি।তাদের বললাম আমি তোমার পাশে বসছি তারা যেনো খাবার খেতে যায়।জানি কারো গলা দিয়ে খাবার নামবে না তবুও যতটুকু খেতে পারে।তোমার কিছু লাগলে আমাকে বলতে পারো।

—কিছু লাগবে না।

—শরীর এখন কেমন লাগছে?

— ভালো না।সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।আর মাথাটা ঘুরছে।

—কি দরকার ছিলো বৃষ্টিতে ভেজার?তুমি ইচ্ছে করে অসুখকে দাওয়াত করে আনলে।

আমি মলিন হেসে তার দিকে তাকালাম।আজও তার অগোছালো চুলগুলো চোখের একপাশে পরে আছে। খুব ইচ্ছে করছিলো সেগুলো সরিয়ে দিতে।কিন্তু সেটা করার নূন্যতম শক্তিটুকুও আমার শরীরে এখন নেই।থাকলে অবশ্যই ইচ্ছেটা আজ পূরণ করতাম। তাকে খুব অগোছালো ও এলেমেলো লাগছিলো।চোখের মধ্যে একরাশ আকুতি।মনে হচ্ছে কিছু বলতে চাইছে।কিন্তু হাজারো জড়তার ভিড়ে বলে উঠতে পারছে না।আমি চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।আমার হাতটা এখনো তার হাতের মুঠোয় বন্দী।আমি ফট করে চোখ খুলে সেদিকে তাকালাম।সে ইতস্তত হয়ে আমার হাতটা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বিব্রত গলায় বললো,

—কিছু লাগলে আমায় বলো।আমি এখানেই আছি।

আমি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিলাম।উদ্দেশ্য ছিলো উত্তরটা মুখে দিবো।কিন্তু তা আর বলতে পারলাম না। কারণ সে আমার দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো ক্ষমতা আমার এখনো হয়নি।দ্রুত চোখ নামিয়ে মাথা নাড়ালাম। সে আমার থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে পাশের চেয়ারে বসলো।তবে খুব বেশি দুরত্বেও নয়।আমি আরো ভালো করে কম্বলগুলোকে জড়িয়ে জুবুথুবু হয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো করে শুয়ে রইলাম।শুধু মুখটা একটু বের করে রাখলাম। যাতে নিঃশ্বাস নিতে পারি।এনাজ মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। মিনিটে মিনিটে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে আমি কি করছি?অনেকক্ষণ ধরে একটা প্রশ্ন আমার পেটে ঘুরপাক খাচ্ছে। ভেবেছিলাম প্রশ্নটা করবো না। কিন্তু না করেও থাকতে পারছি না। তাই ভনিতা না করে কম্বলের থেকে কচ্ছপের মতো করে মাথা বের করে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।

—আপনি কোর্ট-প্যান্ট পরে কোথায় গিয়েছিলেন?

—পৌরসভায় কিছু কাজ ছিলো।সেগুলো কমপ্লিট করতে।

পৌর সভার কাজের সাথে কোর্ট-প্যান্টের কি সম্পর্ক তা আমি বুঝলাম না।লাইটের আলোটা চোখে বিঁধছে। তাই কম্বলটাকে টেনে চোখের উপর দিয়ে দিলাম।বেশ কিছু সময় পর এনাজ আমার সামনে বসে আবারো এক হাত তার দুই মুঠোর মধ্যে নিয়ে নিচু গলায় আমাকে ডাকলো।

— টিডি পোকা , এই টিডি পোকা ।

—হু

—কিছু খাবে?

—উহু।

—না খেলে তো আরো বেশি খারাপ লাগবে।উঠে অল্প একটু কিছু খেয়ে নাও।আমি খাইয়ে দেই?

—উহু।

—অল্প করে খেয়ে নিবে।না খেয়ে থাকলে আরো বেশি খারাপ লাগবে।

—বমি করতে করতে মুখ তিতা হয়ে গেছে। এখন কিছু ভালো লাগবে না।আমাকে খাওয়ার জন্য জোর করেন না প্লিজ।

—ভালো লাগছে না বলেই তো খেতে বলছি।

—প্লিজ কথা বলেন না।আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।একটু চুপ করে থাকুন।

এনাজ চুপ হয়ে গেলো।আর জোর করলো না। হাত ছেড়ে পূর্বের জায়গায় গিয়ে চুপটি করে বসলো।মাথা ঘুরানোর ফলে শরীর প্রচুর দূর্বল লাগছে।কিরকম জানি বমি বমিও লাগছে।একটু পানি খেয়েছিলাম।সেগুলো বোধহয় বের হয়ে যাবে।

💖💖💖

— নোভা কি এখনো ঘুমে?নাকি উঠে গেছে?

খালামণি রুমে ঢুকেই এনাজের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো।তাকিয়ে দেখার মতো শক্তিও পাচ্ছি না। কিন্তু দুই কানে সবই শুনতে পাচ্ছি। এনাজ বললো,

—একটু আগে উঠেছিলো।উঠে বসতে চাইলে আমি মানা করেছি।কত করে বললাম কিছু খেয়ে নাও শরীর ভালো লাগবে।শুনলোই না।বলে তার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।আমাকে কথা বলতে নিষেধ করেছে।ওর নাকি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই চুপচাপ ওর পাশে বসে আছি।

— তুমি কি কিছু খেয়েছো এনাজ?

—হ্যাঁ,আন্টি নয়টার দিকে বন্ধুদের সাথে খাওয়া হয়ে গেছে। তায়াং খেয়েছে?

—তায়াং-কে একটা দানাও মুখে দেওয়াতে পারলাম না।ওর কিছু ভালো লাগছে না বলে খাবেও না।পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে ছেলেটা পাগল হয়ে যায়।তখন ওকে দেখে আমারই ভয় করে।এই বুঝি ছেলেটাও অসুখে পরলো।

—নোভার আম্মু-আব্বুকে খবর দিয়েছেন?

—প্রথমে ভেবেছিলাম ঔষধ খাওয়ালে আল্লাহর রহমতে জ্বরটা ছেড়ে যাবে।তাই ওর আম্মু-আব্বুকে জানাতে চাইনি। সারারাত টেনশন করবে।কিন্তু ঔষধ খাইয়ে তো রাখতে পারছি না। বমি করে ফেলে দিচ্ছে। শরীর অবস্থাও বেশি ভালো না।কল করে তায়াং ওর অসুস্থতার কথা জানিয়ে দিলো।এখন তো তারা টেনশনে শেষ। এতরাতে আসতেও পারবে না। কলের ওপর কল করছে।

—তারা কি আসবে না?

—ভোরের আলো ফুটতেই ওর আম্মু গ্রাম থেকে রওনা দিবে।ওর আব্বু নবাবগঞ্জ আছে। সেখান থেকে চলে আসবে।এখন আল্লাহ আল্লাহ করে মেয়েটা সুস্থ হলেই চলে।

—আল্লাহ ভরসা।ইনশাআল্লাহ নোভা সুস্থ হয়ে যাবে।তন্বী, তায়াং কোথায়?

—ভাইয়া এক ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।ড্রয়িংরুমেই আছে।

—আচ্ছা আমি সেদিকে যাচ্ছি। আন্টি আপনারা একটু ওর খেয়াল রেখেন।

সবাই কতটা ব্যস্ত আমাকে নিয়ে।কিন্তু আমার অসুস্থতার কারণে আমারি কোন আফসোস নেই। ইচ্ছে করেই তো ডেকে আনলাম।তবে এতোটা খারাপ অবস্থা হবে তা ভাবিনি।আব্বু খবর পেয়ে নিশ্চয়ই তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে গেছে। আর আম্মুর চোখ দুটো তো ভুলেও আজ বন্ধ হবে না। আমার ছোট বোন ইভাও হয়তো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরবে।তন্বী,খালামণিও চিন্তা করতে করতে আমার পাশে এক সময় চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাবে।কিন্তু তায়াং ভাইয়া এক মিনিটের জন্যও চোখ বন্ধ করবে না।তা আমার জানা আছে। সেবার যখন আত্মহত্যা করে ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেলাম।তখন তায়াং ভাইয়া টানা তিনদিন নির্ঘুম কাটিয়েছে। আমি হসপিটালে থাকাকালীন সকল ফর্মালিটি ও পূরণ করেছে। গ্রামে থাকলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারি বলে তার কাছে নিয়ে এলো।আমাকে সুস্থ করে আবার স্বাভাবিক করতে পুরোদমে ভাইয়াই সাহায্য করেছে। কখনও অতীত নিয়ে একটা কথাও বলেনি।কিংবা সবার মতো শাসন করেনি,
ধমকায়নি।শুধু হাত দুটো ধরে বলেছিলো,”তোর মতো স্ট্রং মেয়েকে দিয়ে এমনটা আশা করিনি।পরেরবার যদি এমন কিছু করার চিন্তা করিস তাহলে নিজের পরিবারের কথাটা একটু ভাবিস।”ওপর দিয়ে ও যতটা কঠিন দেখাক, ভেতরে এর থেকে বেশি নরম।আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া, আমাকে এরকম একটা বড় ভাই দেওয়ার জন্য।

—নোভা, এই নোভা,নোভারে।অনেক বেশি খারাপ লাগছে বোন?মাথায় কি পানি দিবো?

চোখ দুটো সবেমাত্র একটু লেগেই এসেছিলো। তায়াং ভাইয়ার ডাকে তাও ভেস্তে গেলো।বিরক্তমুখে কম্বল মুড়ি দিয়ে অন্যপাশে ঘুরে গেলাম।

—উঠে অল্প একটু খেয়ে নে।ঔষধ খেতে হবে তো।

—খাবো না।ডিস্টার্ব করিস না।

—অল্প একটু খেয়ে ঔষধটা খেয়ে নে।তারপর ঘুমাস।তোকে আমরা কেউ ডিস্টার্ব করবো না।

তন্বীও ভাইয়ার সাথে গলা মেলালো,
—নোভাপু একটু কষ্ট করে খেয়ে নাও।বেশি খেতে হবে না। দুই লোকমা খাও।যাতে ঔষধ খেতে পারো।

—নোভা উঠ।আমি খাইয়ে দিবো তোকে।মাত্র দুই লোকমা।একটুও বেশি নয়।

—টিডি পোকা, সবাই যখন বলছে তাহলে একটু খেয়ে নাও।না খেলে সুস্থ হবে কি করে?

সবার জোড়াজুড়িতে উঠে বসলাম।তায়াং ভাইয়া ভাতের প্লেট নিয়ে আমার পাশে বসে আছে। এনাজ ডানে বসেছে আর ভাইয়া বামে।তন্বী দূরের চেয়ারে বসে ঘুমে ঢুলছে।তবুও চোখ টেনে জেগে থাকার চেষ্টা করছে।আমি নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,

—খালামণি কোথায়?

তায়াং ভাইয়া উত্তর দেওয়ার আগেই এনাজ বললো,
—আন্টি তোমার আম্মুর সাথে কলে কথা বলছে।তোমার আম্মু তো পারলে এখুনি চলে আসে।

তায়াং ভাইয়া ভাত মাখিয়ে মুখের সামনে ধরে বললো,
—নে হা কর।

আমি ভাইয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
—ভাইয়া আমার একটুও খেতে ইচ্ছে করছে না। বমি বমি লাগছে। সামনে থেকে এসব সরা।

চেয়েছিলাম সবার জোড়াজুড়িতে একটু খেয়ে নিবো।কিন্তু নাকে মাছের গন্ধ পেতেই ভেতর থেকে সবকিছু উল্টেপাল্টে আসতে লাগলো।আমি দ্রুত তায়াং
ভাইয়ার হাত এক হাতে সরিয়ে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরলাম।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।পেটে যতটুকু ছিলো তা সব বের হয়ে গেলো।বমি করতে করতে অস্থির হয়ে গেছি।মাথা প্রচন্ড ঘুরছে।শরীর অনেক দূর্বল লাগছে।তবুও হালকা মাথা উঠিয়ে দেখতে পেলাম, এনাজের ওপরই বমি করে বেচারার কোর্ট-প্যান্ট ভাসিয়ে দিয়েছি।অপরাধী চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম তায়াং ভাইয়ার মতো সেও আমাকে নিয়ে ব্যস্ত আছে। তার নতুন কোর্ট-প্যান্টের যে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি তাতেও তার ভ্রক্ষেপ নেই। ধীরে ধীরে মনে হচ্ছে শরীরের শক্তিগুলো নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছে। চোখে, মুখে অন্ধকার দেখছি।জ্ঞান হারানোর আগে শুধু এতটুকু মনে আছে যে হালকার ওপর মাথাটা এনাজের কাঁধে হেলিয়ে দিলাম।তারপর,তারপর কিছু জানি না।

চোখ খুলতেই………

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here