শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব -২৯+৩০

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_29
#Writer_NOVA

—তুমি!

আমার চিৎকারে অপরপাশে থাকা ব্যক্তিটা কানে হাত দিয়ে বললো,
— চুপ কর নোভি। আমার কান গেলো।

আমি এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
— নূর আপি তুমি! তুমি তো অনেক বড় সারপ্রাইজ দিয়ে দিলা৷ কার সাথে এলে?

— তোর মামীর সাথে।

— মামী কোথায়?

— ভেতরে।

— তুমি আসবা তা কালকে বললা না কেন?

— এটাই তো সারপ্রাইজ।

— হুহ যাও কাট্টি তোমার সাথে। তুমি বলো নাই।

নূর আপি আমার কান টেনে ধরে বললো,
— তোর কাট্টি বের করতাছি।

— আহ্ নূর আপি ছাড়ো। ব্যাথা পাচ্ছি তো। তোমরা পইছো কি হুম?একজন রাগলে চুল টানে, আরেকজন কান। আমি কি লুটের মাল নাকি?

— কে আবার চুল টানে?

— কে হতে পারে বলো? তায়াং ভাইয়া ছাড়া কি অন্য কারো সাহস আছে?

— একদম ঠিক করে।

নূর আপি আমার কান ছেড়ে দিলো।আমি তন্বীর দিকে তাকিয়ে বললাম
—ঐ ছেমড়ির কি হইছে? পিঠে হাত দিয়ে বসে আছে কেন?

নূর আপি মিটমিট করে হেসে বললো,
— ওর পিঠেও একটা তাল ফালাইছি।

— আহারে বেচারীর মেরুদণ্ড বোধহয় ভেঙে ফেলছো।

কথাটা বলে আমরা দুজন একসাথে হো হো করে হেসে উঠলাম। তন্বী আমাদের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,

— হুম হাসো, হাসো।বেশি করে হাসো তোমরা। দিন আমারও আসবো। আর নূর আপি কেউ এমনে মারে?আমার পিঠ বাঁকা হয়ে গেছে।

নূর আপি তন্বীর সামনে গিয়ে বললো,
— কি বললি আবার বল? তোদের দুটোকে তো আরো জোরে মারা উচিত। তোদের কল দিয়ে পাওয়াই যায় না। কি বিজি মানুষ! অনলাইনে থাকলেও নো রিপ্লাই। এই জন্য আসতে চাইনি। মা জোর করে নিয়ে এলো।

তন্বী মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,
— আসছো কেন তাহলে চলে যাও।

— এখন তো তুই বললেও যাবো না। আমার আন্টির বাসায় আসছি তোকে বলে কি যাবো?

আমি দৌড়ে এসে দুজনকে হাত দিয়ে থামিয়ে বললাম,
— থামো, থামো। ঝগড়া করো না বাচ্চারা। ঝগড়া করা ভালো নয়।

নূর আপি দাঁত চেপে বললো,
— ঝগড়া করা ভালো না। তোর ভালো ছুটাইতাছি। তোরে তো আমি এখন বানামু।

— ধরতে পারলে তো বানাবে। আমি এখন দৌড়ে মামীর কাছে চলে যাবো।

আমি দাঁত কেলিয়ে দৌড় লাগালাম। নূর আপি অল্প একটু ধাওয়া করেছিলো। আমি তার আগেই ছুট। আমার দুই মামা। বড় মামার তিন মেয়ে। তাদের কোন ভাই নেই। নূর আপি বড় মামার ছোট মেয়ে। বড় দুই আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। বড় আপুর দুই ছেলে,
মেজো আপুর এক ছেলে। তারা তাদের শ্বশুর বাড়ি থাকে। নূর আপি এখনো অবিবাহিত। নূর আপির পুরো নাম আয়েশা খান। ডাকনাম নূর।পড়াশোনা শেষ করে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।ছোট মামার দুই মেয়ে। তারও কোন ছেলে নেই। আর আমারও ভাই নেই। সাধারণত দেখা যায় ভাগ্নিরা মামার পাগল হয়।কিন্তু আমরা উল্টো। আমি,ইভা, তায়াং ভাইয়া, তন্বী এই চারজন দুই মামীর পাগল। মামী বলতে আমরা অজ্ঞান। আমাদের দুই মামীর মতো মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি। তারাও ভাগ্নে-ভাগ্নী পেলে বাকিসব ভুলে যায়। আমার দেখা বেস্ট মামীদের মধ্যে আমার দুই মামী আছে। হয়তো ভাবছেন একটু বেশি বলছি। কিন্তু না আমি আরো কম বললাম। তাদের গুণগান সারাদিনও শেষ করতে পারবো না।

দৌড়ে গিয়ে খালামণির রুমে চলে গেলাম। বড় মামী সবেমাত্র বোরখা খুলে ফ্যানের নিচে বসেছে।আমি গিয়ে কুশালদি জিজ্ঞেস করলাম।

— আসসালামু আলাইকুম মামী। কেমন আছেন?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মামী। তুমি কেমন আছো?

— আলহামদুলিল্লাহ। পথে আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?

— না কোন অসুবিধা হয়নি। সকাল সকাল চলে আসছি। তাই যামেও পরতে হয়নি। গুলিস্তান থেকে একেবারে ডাইরেক্ট সিএনজি নিয়ে চলে এলাম।

— ও তাহলে সিএনজি দিয়ে আপনারা আসছেন। আমি ভাবলাম কোন ফ্ল্যাটে আবার মেহমান এলো।এখন দেখি আমাদের ফ্ল্যাটেই।

মামী খালামণিকে জিজ্ঞেস করলো,
— তানভীরের মা, তানভীর কোথায়?

খালামণি বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— একটু আগে বন্ধুগো নিয়া বের হয়ে গেলো। তার কত কাজ আছে না। এর একটা গতি করতে পারলে ওর আব্বুর আর আমার একটু শান্তি হইতো। সারাদিন টই টই করে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে, আড্ডা দিয়ে বেড়ায়।

আমি মুখ টিপে হেসে বললাম,
— খালামণি তায়াং ভাইয়া কাজ করেতো। এই যে টো টো কোম্পানির ম্যানেজার। সারাদিন টই টই করে ঘুরাও তো একটা কাজ। সেটা বা কয়জন পারে।

খালামণি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— হইছে আর ভাইয়ের গুণগান গাইতে হবে না। যা গিয়ে তোর মামীর জন্য এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে আয়। তন্বীকে বললাম কিন্তু ওর কোন খবর নেই।

— তন্বীর হয়তো মনে নেই। আমি নিয়ে আসতেছি।

আমি বের হয়ে দরজা পর্যন্ত আসতেই বড় মামী ডাকলো,
— নোভা শুনো।

— জ্বি মামী।

— এখন এতো তাড়াহুড়ো করতে হবে না। আমি তো আছি। কয়েকদিন থাকবো।তাই এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। তুমি আমার পাশে বসো। তোমার শরীর কেমন এখন?

— আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের দোয়ায়
আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

—গত সপ্তাহে তোমার কি অবস্থা গেলো। আমার শরীরও ভালো ছিলো না। নয়তো পরেরদিন চলে আসতাম। তখন আসতে পারিনি বলে এখন চলে এলাম। কালকের থেকে শরীরটা একটু ভালো। তাই নূররে বললাম চল তোর আন্টির বাসা থেকে ঘুরে আসি। কবের থেকে সবাইকে দেখি না। তাছাড়া আমার বড় ভাগ্নির কি অবস্থা গেলো একটু দেখাও করতে পারলাম না। কালকে রাতে হুট করে ঠিক করলাম আজকে এই বাসায় আসবো। তাই চলে এলাম।

— আমিও তো বলতেছি খালামণি তো কিছু বললোও না। আপনারা আগে থেকে জানায় আসলে তো খালামণি বলতোই। মামার শরীরটা কেমন?

— আছে আলহামদুলিল্লাহ। তোমার মামা তিনদিনের তাবলীগে গিয়েছে সেই সুযোগে আমরাও চলে এলাম।

— একদম ভালো করছেন। আপনি বসেন আমি আসতেছি। এতদূর থেকে যার্নি করে আসছেন। এখন একটু বিশ্রাম নেন। খালামণি তুমি একটু কিচেনে আসো। সকালে কি রান্না করবা হেল্প করে দিবোনি। আজ আর কলেজ যাবো না😁। বাসায় মেহমান রেখে কলেজ যেতে ইচ্ছে করছে না।

খালামণি বাহুতে আলতো করে চাপর মেরে বললো,
— এই তো পাইছে দুই বোন ছুতা। মামী আসছে সেই খুশিতে ভাগ্নীরা বাসাই থাকবে।

খালামণির কথা শুনে মামী মুচকি হাসলো। আমি দাঁত কেলিয়ে কিচেনের দিকে ছুটলাম। কি মজা আজ কলেজে যাবো না। ইউরেকা🥳।

💖💖💖

পরেরদিন সন্ধ্যায়……..

দুইদিন ধরে আমি ও তন্বী দুজনের কেউ কলেজে যাইনা। মামী, নূর আপি এসেছে সেই ছুতোয় কলেজ যাওয়া বন্ধ। গতকালও যাইনি। আজও নয়। তায়াং ভাইয়া দুদিন ধরে সকাল সকাল বের হয়ে যায়। বাসায় ফিরে রাত দশটার পর। এসে খেয়ে, ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরে। তাই আমাদের খোঁজ খবরও নেয় না। সেই সুযোগে আমরা কলেজ ফাঁকি দেই। মাগরীবের আজান হচ্ছে। আমরা তিন বোন মিলে লুডু খেলছি। নূর আপি, তন্বী মিলে আনার সব পাকনা গুটিগুলো খেয়ে কাঁচা করে দিয়েছে। তার মধ্যে একটা ছক্কাও উঠছে না যে আমি একটা গুটি উপরে উঠাবো সেই দুঃখে আমার এক গ্লাস পানিতে ডুবে মরতে ইচ্ছে করছে। খেলায় টানটান উত্তেজনা। তখন পাশের রুম থেকে খালামণি আমায় ডেকে বললো,

— নোভা, এই নোভা।

আমি এতোই খেলায় মগ্ন যে খালামণির কথা শুনতে পেয়েও উত্তর দিতে ভুলে গেছি। নূর আপি আমায় ধাক্কা মেরে বললো,

— এই নোভি, আন্টি তোকে ডাকে।

আমি চেচিয়ে উত্তর দিলাম,
— হ্যাঁ খালামণি বলো।

— তোর তায়াং ভাইয়ার রুমের জানালাগুলো একটু বন্ধ করে দে। আজান দিতেছে। ঐ রুমের জানালা, বারান্দার দরজা কিছুই আটকানো হয়নি। আর এখন খেলা বন্ধ কর। আজান দিছে ওযু করে নামাজ পরে নে। যদি খেলার তালে নামাজ কাযা করিস তাহলে তিনটারই খবর আছে।

— আচ্ছা খালামণি আমি বন্ধ করে দিতেছি।

খেলা ছেড়ে উঠে তায়াং ভাইয়ার রুমে গেলাম। দরজা,জানালা বন্ধ করে লাইট ধরিয়ে দিলাম। আসার সময় চোখ পরলো ছোট টেবিলের ওপর কালো একটা ডায়েরির দিকে।সেটা হাতে নিয়ে কপাল কুঁচকে তাকালাম। নিজের মনে বিরবির করে বললাম,

— এটা আবার কার? তায়াং ভাইয়াকে তো কখনো ডায়েরি লিখতে দেখি নি। যার মন চায় তার হোক বাবা। আমি অন্যের জিনিস ধরছি না। না বলে ধরাটা ঠিক হবে না।

উপরে বড় করে ইংরেজিতে তানভীর লেখা। এতে সিউর হলাম এই ডায়েরি আমার গুনধর ভাইয়ের।
ভীষণ কৌতুহল লাগছে ভেতরে কি লিখা আছে তা নিয়ে। কিন্তু অন্যের জিনিস না বলে ধরাটাও একটা অন্যায়। তাই ডায়েরিটা না খুলে যথাস্থানে রেখে দিলাম। টেবিলের সাইড কেটে যাওয়ার সময় তার পায়ার সাথে বারি খেয়ে ধপাস করে পরে গেলাম। ব্যালেন্স রাখতে টেবিলের ওপরের দিকটা ধরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ফলাফল জিরো। টাখনুতে বেশ ভালো ব্যাথা পেয়েছি। নিচে বসেই পা ধরে ডলতে লাগলাম। চিন চিন ব্যাথা করছে।তখুনি ধপ করে মাথার ওপর ডায়েরিটা পরলো।আউচ বলে মাথাও ধরলাম। ডায়েরিটা আমার কোলে মেলে পরেছে।

যখন ব্যালেন্স রাখতে চেয়েছিলাম তখন ডায়েরিটা টেবিলের কোণার দিকে ছিলো। হাত লেগে অল্প একটু বেজে ছিলো। আরেকবার নাড়া খেতেই আমার মাথার ওপর পরেছে। পৃথিবীর যতকিছু আছে সবকিছুর সাথে আমার খালি ধাক্কাই লাগে। আর আমি শুধু ব্যাথাই পাই। ডায়েরিটা দুই পার্টে পুরো খুলে আছে। সেদিকে চোখ যেতেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। এক পৃষ্ঠায় ছোট করে লিখা, “অনেক ভালোবাসি”। তার নিচে ছোট করে একটা নাম লেখা,যেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না দূর থেকে।এতটুকু দেখে অনেক বেশি কৌতুহল হলো। ডায়েরি হাতে নিয়ে নিচের নামটা পড়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। সবাই দাঁড়ানো থেকে বসে পরে আর আমি বসা থেকে দাড়িয়ে গেলাম। ব্যাথার কথাও ভুলে গেছি। নামটা দিকে আমি অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলাম।

মনে হচ্ছে কেউ দ্রুত পায়ে এই রুমের দিকেই আসছে। কিন্তু আমি ডায়েরি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মিনিট দুই পর বাইকের চাবি আঙুলের ডোগায় ঘুরাতে ঘুরাতে রুমে ঢুকলো তায়াং ভাইয়া। চাবিটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে আমার দিকে না তাকিয়ে বললো,

— কি রে শাঁকচুন্নি, তুই আমার রুমে কি করিস?

প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েই সে তার হাতের ব্যাসলাইট খুলতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। আমার কোন শব্দ না পেয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর ঝড়ের গতিতে এসে আমার থেকে ছোঁ মেরে ডায়েরি কেড়ে নিয়ে রেগে ঝাঁঝালো গলায় বললো,

— তুই এই ডায়েরি কার অনুমতি নিয়ে ধরছিস?

আমি ওর দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলাম।তারপর নিরবতা ভেঙে ওর দিকে দৃষ্টি রেখেই ছলছল চোখে বললাম,

— এতো ভালোবাসিস! তাহলে বলে দিলি না কেন?
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_30
#Writer_NOVA

— এতো ভালোবাসিস! তাহলে বলে দিলি না কেন?

আমার কথা শুনে ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো। তারপর ডায়েরিটা ওর টেবিলের ড্রয়ারে রেখে আমার সামনে এসে বললো,

—ঢংগী ঢং কম কর। এমন একটা ভাব নিতেছিস যেন তোর নাম লেখা ছিলো। আমাকে কনফিউশানে ফেলার ধান্দায় আছো? তা হচ্ছে না।

ওর কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে উঠলাম। ধূর, বাঁদরটায় আমার চালাকি ধরে ফেলছে। কোথায় ওকে কনফিউশানে ফেলার জন্য আমি ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। যাতে ও চিন্তায় পরে যায় যে ওর ডায়েরিতে আমি আমার নাম দেখেছি। তা আর হলো কোথায়? আমার শয়তানি বুদ্ধিতে এক বালতি পানি ঢেলে সব বরবাদ করে দিলো। আমি দুই হাত কোমড়ে রেখে ওর সামনে পথ আটকে দাঁড়িয়ে বললাম,

— হ্যাঁ রে ভাইয়া এসব কবের থেকে?

— কোন সব?

— এই যে তুই নূর আপিকে এতো এতো ভালোবাসিস।

তায়াং ভাইয়া আমার মুখ আটকে এদিক সেদিক তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,
— এই চুপ। কেউ শুনে ফেলবে। জানিস না দেয়ালেরও কান আছে।

আমি ওর হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে কঠিন গলায় বললাম,
— তলে তলে টেম্পু না ধূর ট্রেন হবে। তলে তলে ট্রেন চালিয়েছিস আর আমাকে কিছু বললিও না। এত খারাপ কেন রে তুই? আমি আমার সব কথা তোকে বলি। আর তুই এতবড় বিষয়টা আমার কাছ থেকে লুকালি। তোর সাথে কথা নেই আমার। আমি এখুনি গিয়ে সবাইকে সব বলে দিবো।

তায়াং ভাইয়া একবার দরজার ওপর পাশে উঁকি দিয়ে আমার সামনে এসে আমার হাত দুটি ওর দুই হাতের মুঠে নিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো,

—দেখ বোন আমি যে নূর কে ভালোবাসি তা কাউকে বলিস না প্লিজ। তোর হাত দুটি ধরি আমি। ও কি পাঁজি তাতো তুই জানিস। ওকে আমার ভয় করে। মাঝে মাস রণচণ্ডী রূপ ধারণ করে।

ওর কথা শুনে আমার পেট ফেটে হাসি আসছে। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ভাইয়া বাঘ থাকলেও নূর আপির সামনে বেশিরভাগ সময় ওকে বিড়াল রূপেই দেখা যায়। আসলেই ও নূর আপিকে ভয় পায় নাকি ভয় পাওয়ার ভান করে তা আমি জানি না। বহু আগে আমার একবার তায়াং ভাইয়ার মতিগতি ভালো ঠেকেনি। নূর আপির সামনে যেই তায়াং-কে দেখা যায় সেই তায়াং-এর সাথে বাস্তবের একফোঁটাও মিল নেই। তাই আমি সন্দেহ করেছিলাম। তদন্তেও নেমেছিলাম। কিন্তু উপযুক্ত তথ্য প্রামাণের ভিত্তিতে আমাকে পিছিয়ে যেতে হয়। ভাইয়া এখনো আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। একটু আগের রাগী তায়াং-এর সাথে এখনকার তায়াং আকাশ-পাতাল তফাৎ। আমি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম,

— হাত ছাড়। এতো করে যখন অনুরোধ করছিস তাহলে কিছু বলবো না। তবে তোকে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

— কি প্রশ্ন?

— তুই যে নূর আপিকে ভালোবাসিস তা কি আপি জানে? একদম সত্যি বলবি।

— আমার কয়েকটা বন্ধু ছাড়া আর কেউ জানে না। এমন কি আম্মু-আব্বুও ওর বিষয়ে জানে না।

— নূর আপিকে তাহলে বলিস না কেন যে তুই ওকে ভালোবাসিস?

— আমার ভয় করে। ও যদি আমায় ভুল বুঝে। তবে ওর হাব-ভাবে মনে হয় ও বুঝতে পেরেছে আমি ওকে পছন্দ করি।

— মেয়েরা আগের থেকে এসব টের পেয়ে যায়। তা কবের থেকে ভালোবাসিস?

ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে খাটের ওপর বসলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

— সেই ছোটবেলা থেকে।

— কি! ওরে বাটপার, সেই ছোটবেলা থেকে পছন্দ করিস তা আমাকে, আপিকে, কাউকে বলিস নি। দাঁড়া তুই আজকে।

আমি এগিয়ে গিয়ে ওর চুলগুলো মুঠ করে ধরে ইচ্ছে মতো টানলাম৷ ইচ্ছে করছে ওকে আলুভর্তা করি। সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসে অথচ আমাকে একটুও বলেনি। আমি ওর চুল ছেড়ে ঠোট উল্টে,দুই হাত গুঁজে ওর পাশে দাড়ালাম।তায়াং ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,

— চুলগুলো আরেকটু টেনে দে। ভালোই লাগছিলো।

বেহায়াটা বলে কি? আমি ব্যাথা পাওয়ার জন্য চুল টেনেছি। আর তার নাকি ভালো লাগছিলো। রেগে বললাম,

— এখুনি আমি নূর আপিকে সব বলে দিবো।

রুম থেকে বের হতে নিলেই তায়াং ভাইয়া হাত ধরে আটকে ফেললো। মিষ্টি কন্ঠে বললো,
— এমন করিস না বোন। আমি আগে ব্যবসাটা শুরু করি। তারপর সবাইকে সব বলে দিস।

— আচ্ছা কিছু বলবো না। এর জন্য তোকে বেশি না পাচশত টাকা দিতে হবে৷ দে টাকা দে।

আমি ডান হাত ওর দিকে বারিয়ে দিলাম। ভাইয়া হাত মুচড়ে ধরে বললো,
— দূর্বলতার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে? কিসের টাকা দিবো তোকে?

— আমার মুখ বন্ধ করার জন্য।

—তুই ঘুষ নিবি আমার থেকে?

— একটুও না। আমি এত কষ্ট করে তোর গোপনীয় কথাগুলো আমার পেটে জমা রাখবো। সেগুলোর জন্য একটা পারিশ্রমিক আছে না। সেটাই নিবো। তোর ঐ কথাগুলো আমার পেটে খোঁচাবে, মুখ ফসকে বের হতে চাইবে। সেগুলো আটকে রাখার জন্য এই টাকা। বেশি তিড়িংবিড়িং করবি এখুনি বলে দিবো। আরেকটা কথা বললে আরো পাঁচশত টাকা বাড়বে।

— ব্লাকমেইল করছিস। সমস্যা নেই করতে থাক। এই দিন, দিন না পাগলী। আমারও দিন আসবে। তুই রওনকের থেকেও টাকা মেরেছিস। তুই এই জীবনে ভালো হবি না।

— এই খবর তোর কানেও এসেছে। যাকগে তাতে আমার কি? ঐ রওনক বেটা বেশি বাড়ছিলো তাই ওকে ছেঁটে কমিয়ে দিয়েছি। তুইও যদি বাড়িস তাহলে টাকার অঙ্কও বাড়বে।

—ভালো হয়ে যা নোভা, ভালো হয়ে যা। ভালো হতে টাকা লাগে না।

—অবশ্যই ভালো হতে টাকা লাগে। এই যে তুই এখন টাকা দিবি তাহলে আমি ভালো হয়ে যাবো। কাউকে কিছু বলবো না। কিন্তু তুই টাকা না দিলে আমি খারাপ হয়ে সবাইকে সব কিছু বলে দিবো।

ভাইয়া আমার দিকে একটা খাইয়া ফালামু লুক দিয়ে আমার দুই হাত ছেড়ে ওর পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলো।সেখান থেকে পাঁচশত টাকার একটা নোট আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।আমি ছো মেরে সেটাকে নিয়ে মুখ টিপে হাসলাম। তারপর তায়াং ভাইয়াকে হাত নাড়িয়ে বায় বলে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলাম। একবার পেছনে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আমার দিকে রাগী ফেস করে তাকিয়ে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— যদি এসব কথা কোনভাবে লিক হয় তাহলে সবার আগে আমি তোকে ধরবো।

আমি মুখ ভেংচে বললাম,
— নোভা কথা দিয়ে কথা রাখতে জানে। তাই আমার দিক থেকে নিশ্চিন্তে থাক। তবে মাঝে মাঝে একটু আধটু ব্লাকমেইল করবো। তার জন্য প্রস্তুত থাকিস।

কথাগুলো বলে এক মিনিটও দাড়ালাম না। দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত কপালে শনি আছে। নামাজটা কাযা হয়ে গেলো কিনা কে জানে। দ্রুত রুমে ঢুকলাম। রুমে ঢোকার আগে টাকাটা লুকিয়ে ফেললাম। নয়তো এটা হাইজেক হতে পারে।

💖💖💖

পরেরদিন……

দুপুরের প্রখর রোদে কলেজ থেকে ফিরে সোফায় চিৎপটাং হয়ে পরে আছি। ওড়না,জুতা,ব্যাগ একেকটা একেক দেশে পরে আছে।দুদিন কলেজে না যাওয়ায় আজও যেতে চাইনি। কিন্তু তায়াং ভাইয়ার এক রামধমক খেয়ে দুই বোন সুন্দর করে রেডি হয়ে কলেজের দিকে দৌড়িয়েছি। আগামীকাল মহালয়ার বন্ধ। সামনেই দূর্গা পুজো। পুজোর বন্ধে গ্রামে যাবো। ছুটি কাটাতে নয় চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে। আম্মু সকালে কল করেছিলো। আজ সকাল ৯টায় ভাইয়া ফ্লাইট থেকে নেমেছে। সপ্তাহ ঘুরতেই বিয়ে। বাসায় কাজের হুলস্থুল পরে গেছে। কতদিন পর গ্রামে যাবো।ভাইয়ার বিয়েতে কি মজা হবে! সেগুলো ভাবতে গেলেই চোখের ঘুম হারাম। হলুদে কি পরবে, বিয়েতে কিরকম মেকআপ নিবো, বৌভাতে কোন সাজটা ভালো হবে সেসব নিয়ে আমি ও তন্বী খুব এক্সাইটেড। আজ বাসার যাওয়ার সময় বড় চাচ্চু বাসায় এসে খালামণি,মামীকে পরিবারবর্গ দাওয়াত করে গেছে। আমরা কলেজে ছিলাম বলে কিছুই জানি না। উনি বেশি সময় থাকেনি। নয়তো তার সাথে দেখা হতো।

মামী ও খালামণি কিচেনে রান্না করছে। আজ বাসায় ভালো-মন্দ রান্না হচ্ছে। পোলাও,মাংসের ঘ্রাণে সারা ফ্ল্যাট মৌ মৌ করছে। এখন ইলিশ মাছ ভাজছে। তার ঘ্রাণ নাকে বারি খেতেই পেটের ভেতর ইঁদুরে ডুগডুগি বাজানো শুরু করলো। তায়াং ভাইয়া আজ সারাদিন বাসায়। নিশ্চয়ই এখন নামাজ পরতে গেছে। নূর আপির সামনে নিজেকে একটু ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে তো। কিচেন থেকে মামী এসে আমাকে বললো,

— মামী যাও গোসল করে নেও। শরীর ভালো লাগবে। কি রোদ উঠছে আজকে। আমি একটু ছাদে তানভীরের জামা-কাপড় মেলতে গিয়েছিলাম। রোদে দাঁড়ায় থাকতে পারি না। মাথা ঘূর্ণি দিচ্ছিলো। লেবুর শরবত বানায় দিবো? খাইবা?

— না মামী লাগবে না। রোদে আজকে তার প্রকোপ দেখাচ্ছে। একটা রিকশাও পাইনি। হেঁটে আসতে আসতে কাহিল হয়ে গেছি। এখন যে উঠে রুমে যাবো সেই শক্তি পাচ্ছি না। শরীর পুরো দূর্বল হয়ে গেছে। তন্বী গোসলে ঢুকছে। ও বের হলে তারপর যাবে।

— আচ্ছা তাইলে তনিমা বের হওয়ার পর সাথে সাথে গোসলে চলে যেয়ো। বেশি দেরী কইরো না। গোসল করলে শরীরটা ভালো লাগবে।

— হুম তন্বী বের হলেই ঢুকবো। কিন্তু এই মাইয়ার বের হতে দেরী আছে। ও ওয়াশরুমে ঢুকলে বের হতে চায় না। আল্লাহ জানে কি করে!

মামী মুচকি হেসে দুষ্টুমী করে বললো,
— ঠান্ডা পানি পেয়ে বোধহয় ঘুমায় যায়।

— তাই হবে মামী৷ নয়তো এত সময় লাগে? এত সময় থাকতে তো নিজের কাছেও বিরক্ত লাগে। দুই ঘন্টা এরে দরজা ঠুকঠুক করে তারপর বের করতে হয়। রান্না কি শেষ?

— হ্যাঁ সব প্রায় শেষ। এখন শুধু পোলাও আর মাছ ভাজা হলে সব শেষ হয়ে যাবে।

হঠাৎ আমার খেয়াল হলো এনাজ তো আজকে আসবে। যেদিন এ বাসায় ভালো কিছু রান্না হয় সেদিন খালামণি, তায়াং ভাইয়া কল করে এনাজকে নিয়ে আসে। খালামণি প্রায় সময় বলে এনাজকে এখানে এসে খাবার খেতে। কিন্তু তার নাকি লজ্জা করে। আমি মামীকে জিজ্ঞেস করলাম,

— মামী!

— হুম বলো।

— তায়াং ভাইয়ার কোন বন্ধু আসছে?

খালামণি খুন্তি হাতে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

— এনাজের কথা জিজ্ঞেস করছিস?

— হ্যাঁ। তাকে আসতে বলো নাই?

— আমি তো সেই সকালে কল করে বলে দিছি। কিন্তু আসতে চাইছিলো না। আমি বলছি আজকে তুই না আসলে তোর সাথে আমার কোন কথা নেই। তায়াংও ওর সাথে রাগারাগি করছে। কেন ও আসবে না তার জন্য। আমাদের দুজনের বকা খেয়ে তারপর রাজী হইছে। বলছে নামাজ পরে আসবো।

মামী খালামণিকে জিজ্ঞেস করলো,
— কার কথা বলো তানভীরের মা?

খালামণি মামীকে বললো,
— ঐ যে তায়াং-এর বন্ধু।ছেলেটা একা থাকে কি খায় না খায় কিছু জানি না। মাঝে মাঝে এই বাসায় এসে খেতে বললেও লজ্জা পায়। বলে মানুষ কি বলবে? দেখ তো ছেলের কথা। মানুষের কথায় আমাদের কিছু আসে-যায়? খাওয়া,ঘুমের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে যায়। দেখভালেরও একটা মানুষ নেই। ওর ছোট ভাই পড়াশোনার সুবাদে হোস্টেলে থাকে। বাসায় ও একা একটা ছেলে। ইচ্ছে হলে খায়, না হলে নাই। কত করে বলি এবার একটা বিয়ে কর। কিংবা আমরা মেয়ে দেখি। বলে চাকরী পেলেই বিয়ে করে ফেলবে। তার আগে নয়। ছেলেটাকে নিয়ে বড্ড চিন্তা হয় আমার। বাবা-মা ছাড়া এতিম ছেলে। ছোট ভাইকে নিয়ে তার বেঁচে থাকা। তবে অন্যসব ছেলের থেকে অন্যরকম। এতদিনে অন্য ছেলেরা থাকলে বাজে সঙ্গে খারাপ কাজে যুক্ত হয়ে যেতো। কিন্তু এনাজ এসব থেকে বহু দূরে। এনাজ ভালো বলেই তায়াং-কে ওর সাথে সবসময় মিশতে দেই। ওমন সোনার টুকরো ছেলের সংস্পর্শে আমার ছেলে কখনো খারাপ হবে না। এতটুকু চোখ বন্ধ করে বলতে পারি।

খালামণির কথাগুলো শুনে এনাজের জন্য আরেক ধাপ ভালো লাগা বেরে গেলো।আমি উৎসুক চোখে খালামণিকে প্রশ্ন করি,
— খালামণি এনাম ভাইয়া কিসে পড়ে?

— এবার বিবিএ ফাইনাল ইয়ারে। পড়াশোনার অনেক চাপ। বাসার থেকে আসতো-যেতে সমস্যা বলে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে।

— ওহ এই জন্য তাকে দেখি না।

— এনাম বেশি একটা আসে না। পড়াশোনা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। শুনছি পরীক্ষা দেওয়ার পর ওকে হাই স্টাডির জন্য বিদেশে পাঠাবে এনাজ। তার জন্য এনাজ নিজের চাকরী খুঁজছে।তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমার মাছ না পুড়ে যায়। আমি গেলাম। ভাবী গিয়ে গোসল করে নামাজ পরে ফেলেন।

খালামণি কিচেনের দিকে ছুটলো। মামী রুমে চলে গেলো। আমি সোফার পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। মাথার ওপর বনবন করে পাখা ঘুরছে। আর মাথার ভেতর এনাজের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ কোলিং বেল বেজে উঠলো। নিশ্চয়ই তায়াং ভাইয়া চলে এসেছে।আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। সামনের মানুষটাকে দেখে মনের অজান্তে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এনজিও সংস্থার পরনে আজ হালকা আকাশি রঙের পাঞ্জাবী ও কালো প্যান্ট। পাঞ্জাবীর গলাটা শার্টের কলারের মতো।চুলগুলো সম্ভবত কাটিয়ে এসেছে। দাড়িতেও হালকা কার্ট দেওয়া। তাকে যে কতটা ভালো লাগছে তা বলার মতো নয়। আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। এরকম জামাই সেজে এসেছে কেন? আমাকে ঘায়েল করতে নাকি অন্য কোন কারণে?

— এই যে মিস টিডি পোকা, ভেতরে কি ঢুকতে দিবেন?

—হুম!

আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
— তাহলে সরে দাঁড়াও।

তার তুড়ির শব্দে আমার ধ্যান ভাঙলো।আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে বললাম,
— আপনি এমন জামাই সেজে এসেছেন কেন?

— খালা শাশুড়ীর বাসায় এলে তো একটু জামাই সাজ দিয়ে আসতেই হয়। তাছাড়া এখানে তো আমার হবু বউও আছে। তাকে দেখাতে এত সাজ।

— ওহ আচ্ছা।

আনমনে তার কথায় সম্মতি দিয়ে দিলাম। যখন খেয়াল হলো তখন চোখ দুটো রসগোল্লা। কি বললো সে? ততক্ষণে সে আমাকে সাইড কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। আমি এগিয়ে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

— এই এই আপনি কি বললেন?

উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত দৃষ্টি নিচের দিকে করে বললো,
— যা বলার তাতে বলেছিই।

— আরেকবার বলুন তো।

— একটুও না। এক কথা দুইবার বলতে ভালো লাগে না।

— আপনাকে বলতে হবে।

— আমি বলবো না।

— না বলতে হবে।

এনাজ আমার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ এনে বললো,
— তা টিডি পোকা তোমার ওড়না কোথায়?

তার কথায় আমার হুশ ফিরলো। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি ওড়না নেই। কোলিং বেলের শব্দ শুনে ওড়না না নিয়েই চলে গেছি। আমার এখন ইচ্ছে করছে মাটির নিচে ঢুকে যাই। ইস, সে কি ভাবলো! আর আমি এই অবস্থায় তার সামনে দাড়িয়ে ছিলাম।আল্লাহ উঠায় নাও।এর জন্য পাতলা জর্জেটের ওড়নাগুলো আমার নিতে ইচ্ছে হয় না।আমি আর এখানে নেই।আমি সোফা থেকে ওড়না উঠিয়ে রুমের দিকে দিলাম দৌড়। ছিঃ কি লজ্জা!এই কথা মনে থাকলে এ জীবনে জর্জেটের ওড়না আর নিবো না। এতোটা কেয়ারলেস কি করে হলাম আমি🤧? আপাতত আমি এনজিও সংস্থার মুখোমুখি আর হচ্ছি না।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here