শুধু তুই ৩ পর্ব -০৪

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana

নিধিদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ির ভেতরে বসে রাগে গজগজ করছে আদি। মনে মনে হাজারটা কথা সাজাচ্ছে নিধিকে বলার জন্য। পাক্কা এক ঘন্টা যাবৎ আদি এভাবে বসে আছে। নিধির আসার নামই নেই। দুইবার ফোন দিয়েছে নিধিকে। নিধি জাস্ট ফোনটা রিসিভ করে বলছে “পাঁচ মিনিট ” নিধির এই পাঁচ মিনিটই শেষ হচ্ছে না। মনে মনে ভেবে নিয়েছে আদি নিধি আসলেই জোর একটা ধমক দেবে।

এসব ভাবতে ভাবতে আদির ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে ইডিয়েট নামটা লেখা। আদি বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে ফেলে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে নিধি বলে
“লাটসাহেব আপনি কি কালার শার্ট পড়েছেন?
নিধির এরকম উটকো প্রশ্ন আগুনে ঘি ঢালার মতো। এমনিতেই আদি রেগে আছে তারপর নিধি এতোখন বসিয়ে রেখেছে। সব মিলিয়ে আদি জোরে একটা ধমক দেওয়ার জন্য মুখ খুলে তখনই নিধি বলে
” ধমক দিয়েন না। আপনার ধমকে আমি ভয় পায় না। চট করে বলে ফেলুন আমি চলে আসি৷ না বললে আমি এখন যাবো দেখতে আপনি কি রংয়ের জামা পড়েছেন দেখে আবার রুমে আসবো তারপর আপনার সেম কালার ড্রেস আমি পড়বো দেন বের হবো। এখন বলুন আপনি কি করবেন? আরও এক ঘন্টা বসে থাকবেন না কি বলবেন? সিদ্ধান্ত আপনার।
“আদি এক হাতে মাথা চেপে ধরে।
“ব্লু
চোখটা বন্ধ করে বলে।
” ওকে
নিধি খট করে ফোনটা কেটে দেয়।

আরও আধঘন্টা পরে নিধি আচল ঠিক করতে করতে বের হয়। আদি গাড়ির ছিটে ঢেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। গাড়ির কাচে খটখট শব্দ শুনে চোখ খুলে।
এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিধি। আদি ভালো করে তাকাও না নিধির দিকে।
দরজা খুলে দেয় আদি। নিধি উঠে বসে। ইচ্ছে করেই সীট বেল্ট লাগায় না।
“আমার এতো ফালতু সময় নেই। কাজের মানুষ আমি। এভাবে বসিয়ে রাখার কোনো মানেই হয় না।
বিরক্তি নিয়ে বলে আদি।
নিধি তখন মেকাপের আয়না দেখে লিপস্টিক লাগাচ্ছিলো। আগেও লাগিয়ে ছিলো কিন্তু কম কম মনে হলো তাই আবার লাগাচ্ছে।
” কিছু বলছেন?
নিধি আদিকে জিজ্ঞেস করে
“স্টুপিট
বলে আদি গাড়ি চালানো শুরু করে।
“আপনাকে হট হট গ্রীষ্মকাল লাগছে। ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা চুমু খায়।
দুই হাত মুঠ করে বলে নিধি।
আদি কপালে দুটো ভাজ ফেলে। এক পলক তাকায় নিধির দিকে। কিন্তু কিছু বলে না।
” আমাকেও হট লাগছে বলুন? অবশ্য এটা আমি জানি। আরও বেশি সুইট লাগার জন্য বেশি করে লিপস্টিক লাগিয়েছি।
নিধি বলে।
“এই মেয়ে সত্যিই পাগল
আদি বিরবির করে বলে।
” কিছু বললেন? নিধি জিজ্ঞেস করে।
“চুপ করবে? না কি গাড়ি থেকে ফেলে দেবো। বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলে আদি।
নিধি ঠোঁটে আঙুল দেয়।
” খালি বকেন কেনো? বাচ্চা একটা মেয়ে আমি। যদি পিত্তি গলে মরে যাই না তাহলে আপনার নামে কম্পেলেন করবো। পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে আপনাকে। তখন আমি আপনাকে দেখতে যাবে।
নিধি আঙুল সরিয়ে বলে।
“ননসেন্স
” লাভ ইউ😘😘😘
“এভাবে ঠোঁট বাঁকালে কেনো?
আদি গাড়ি ব্রেক কষে জিজ্ঞেস করে।
” চুমু দিলাম। নিধি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করে বলে।
“হোয়াট? আদি অবাক হয়ে বলে।
” এটাকে বলে উড়ন্ত চুমু। বিয়ের আগে এভাবেই চুমু দিতে হয়। আর বিয়ের পরে ডিরেক্টলি।
“ওহহহ গড
দুই হাত মাথায় চেপে বলে আদি।
জোরে একটা শ্বাস নিয়ে আদি বলে
” আমি কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শুনবা।
“ওকে সোনা
নিধি বলে। আদির রাগ হয় তবুও কিছু বলে না।
“আমাকে বিয়ে করো না। বিয়েটা ভেঙে দাও
” কোন দুঃখে?
“আমি মানুষটা ভালো না। মারামারি করি। দুর্নীতি করি। মাফিয়া আমি। অনেক মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করি।
নিধি সাথে সাথে চেচিয়ে ওঠে
” ওয়াও এই টাইপের ছেলেদের আমার দারুণ লাগে। আমি তো ছোট থেকেই ভাবতাম ইসসস এমন যদি আমার বর হতো। আমার ইসসস টা এখন সত্যি হবে ভাবতেই নাচতে ইচ্ছে করছে।
আদি হতাশ হয়। এসবে কাজ হবে না ভালোই বুঝে গেছে আদি।
“আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসি। বাবার মুখের ওপর কথা বলার সাহস আমার নেই। তাই তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি বিয়েটা ভেঙে দাও।
শান্ত গলায় বলে আদি।
নিধি আদির দিকে একটু চেপে বসে।
” আমি আপনাকে ভালোবাসি। যে কোনো মূল্যে আপনাকে আমার চাই। বিয়েটা আমি ভাঙবো না। আমি আপনাকেই বিয়ে করবো আর আপনার বাচ্চার মা হবো।
আদির মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। নিধিকে গাড়ির দরজার সাথে চেপে ধরে। নিধির মুখের খুব কাছে আদির মুখটা। আজকেও প্রচন্ড সিগারেটের গন্ধ আদির মুখে। মনে হচ্ছে একটু আগেই খেয়েছে। নিধি শুনেছিলো সিগারেট খাওয়া ছেলেদের ঠোঁট কালো হয় কিন্তু আদির ঠোঁট লাল। এতো সিগারেট খায় তাও কালো হয় না কেন?

“কি চাও তুমি? কেনো বুঝতে চাইছো না। আই হেট ইউ
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি। আদির একটা হাত অজান্তেই নিধির পেটের ওপর পরে গেছে আরেক হাত গাড়ির কাচে।
” আই লাভ ইউ। জানেন আজ আসার আগে দুইবার ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করে এসেছি। যাতে আপনি আমার কাছে চলে আসেন। আপনি কাছে আসলো না (বুকের বা পাশে আদির হাতটা দিয়ে) এইটায় কেমন ধুকবুক করে। আলাদা একরকম অনুভূতি হয়।
আদি নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়। এদিক সেদিক চোখ ঘোরায়। নিধির কাছ থেকে চলে আসতে নিলে নিধি কলার চেপে ধরে।
“আমার কাছে চলে আসবেন নিজের ইচ্ছেয় কিন্তু যাবেন আমার ইচ্ছায়। বুঝলেন লাটসাহেব।
আদির দুই গালে হাত দিয়ে বলে নিধি।
আদি কি বলবে বুঝতে পারছে না।
” বলুন আমায় কেমন লাগছে?
আদি চোখ ছোটছোট করে তাকায়।
“কিহহহহ?
” আমি এতো সুন্দর করে সাজুগুজু করেছি আমাকে কেমন লাগছে?
না বললে কলার ছিঁড়ে ফেলবো কিন্তু ছাড়বো না।
“ভালোই আদি না তাকিয়েই বলে।
” আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলুন।
“এই তুমি কিন্তু
আদির কথা শেষ হওয়ার আগেই নিধি আদির কপালে চুমু দিয়ে বসে। আদি চমকে যায়। এটা কখনোই ভাবে নি।
” তুমি কিন্তু
কপাট রাগ দেখিয়ে বলতে যায় আদি। নিধি থামিয়ে দিয়ে বলে
“এর থেকে বেশি কিছু হয়ে যাক তার আগে বলুন কেমন লাগছে। ঘোর লাগা কন্ঠে বলে নিধি।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিধির দিকে তাকায়। মাথা থেকে গলা ওবদি দেখে বলে
” ভালো। এবার ছাড়ো।
“আই লাভ ইউ
বলেই নিধি ছেড়ে দেয় আদির কলার। আদি নিজের ছিটে গিয়ে বসে।
এই মেয়েটাকে আদি থামাতে পারছে না। কিছু একটা আছে এই মেয়ের মধ্যে যেটা আদিকে কঠোর হতে দিচ্ছে না। কি করবে এবার আদি? বিয়েটা করতেই হবে? পালানোর সব রাস্তা বন্ধ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here