শুধু তুই ৩ পর্ব -০৫

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana

আদি গাড়ি থামিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। এই মেয়েকে আদি বোঝাতেই পারছে না। আদি যা বলছে সেটাকেই অন্য কথা দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কি দিয়ে গড়া এই মেয়েটা?
“এভাবে তাকিয়েন না প্লিজ। আমার প্রেম প্রেম পায়। নিধি লাজুক হাসি দিয়ে বলে।
” এই মেয়ে বয়স কতো তোমার? তুমি প্রেম বুঝো? জাস্ট একটা বয়সের প্রভাব এটা। কিছুদিন পরে কেটে যাবে।
রেগে ধমক দিয়ে বলে আদি।
“তাই তো তারাতাড়ি বিয়েটা করে ফেলছি। যদি বয়স বাড়ার সাথে আপনাকে ভুলে যাই।
আদি মাথায় হাত দেয়।
” এবার চলুন আমরা শপিং করবো।
নিধি আচল ঠিক করে বলে।
আদি কিছু একটা ভেবে জিসানকে ফোন দেয়।
“তারাতাড়ি তৃপ্তি প্লাজারের সামনে আয়৷ আমি পাগল হয়ে গেলাম।
আদি ফোন পকেটে রেখে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নিধিও আদির পেছন পেঋন এসে আদির থেকে এক ইঞ্চি দুরে দাঁড়ায়।
আদির সাথে হাইট মাপে। আদির কাঁধের থেকে আধ হাত নিচে নিধির মাথা পরে। হাত উঁচু করে কিন্তু আদির মাথার নাগাল পায় না।
এতো লাম্বা কেনো?
” বলছিলাম কি আপনার ওয়েট কতো?
নিধি আদির সাথে চিপে দাঁড়িয়ে বলে।
আদি একটু সরে দাঁড়ায়।
“তুমি ঢলাঢলি করে অন্য ছেলেদের ইমপ্রেস করতে পারবে বাট আমাকে না।
আঙুল তুলে বলে।
” আপনাকেও ইমপ্রেস করে ফেলবো। জাস্ট ওয়েট বস
ভাব দেখিয়ে বলে নিধি।
“ইডিয়েট
” বললেন না তো?
“কি?
” ওয়েট কতো?
“বলার প্রয়োজন মনে করছি না
আদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
” শুনেন আপনি নিজেকে ঠিক যতটা স্মার্ট ভাবেন আপনি ঠিক ততোটা স্মার্ট না। কি দেখে যে ক্রাশ খাইছিলাম। লাট সাহেব একটা। নীম পাতা, জন্মের সময় মুখে চিনির বদলে করলার রস দিয়েছিলো তাই এই অবস….
নিধি কথা বলেই যাচ্ছে। আদি চোখ গরম করে তাকাতেই নিধি চুপসে যায়।
“কি ঝামেলা। আদি বিরবির করে বলে।

জিসানের আসার নামই নেই। আদি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বোর হচ্ছে। নিধি চুপ থাকতে থাকতে বোর হচ্ছে। পেটের মধ্যে কথা গুলো গড়গড় করছে। দুটো ছেলে এসে আদিকে বড় ভাই বলে সালাম দেয়। আদি সালামের জবাব দেয়।
” ভাই ইনি কে?
একটা ছেলে জিজ্ঞেস করে। আসলে ওরা কেউ কখনো আদিকে কোনো মেয়ের সাথে দেখে নি। সবাই জানে মেয়েতে আদির এলার্জি। কিন্তু আজকে একটা পিচ্চি মেয়ের সাথে দেখে বেশ অবাক হয়। তাই জিজ্ঞেস করে।
“আমি?
নিধি খুশিতে গদগদ হয়ে এগিয়ে আসে। আদির হাতটা মুঠো করে ধরে বলে
“আমি হলাম ওনার অর্ধেক বউ। মানে বিয়ে ঠিক হয়েছে কাল গায়ে হলুদ পৌরসু বিয়ে। তো আমি তোমাদের বড় ভাবি। সালাম দাও
ভাব দেখিয়ে বলে। আদি ঝারা দিয়ে নিধির হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। ছেলে দুটো নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নিধি কিছুটা অপমানবোধ করে।
” আসলে হয়েছে কি গাড়িতে আমি ওনাকে কি
আদি কাশি দিয়ে নিধির মুখ চেপে ধরে। ছেলে দুটো ভ্রু কুচকে তাকায়।
“তোমরা যাও। আমি পরে কথা বলে নেবো তোমাদের সাথে।
ছেলে দুটো একবার ভালো করে নিধির দিকে তাকিয়ে চলে যায়। আদি নিধির মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। নিধি জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
” কি বলছিলে তুমি? পাগল তুমি? ইডিয়েট একটা। তোমাকে আমার জাস্ট সয্য হয় না। তোমার মুখটা দেখলেই আমার রাগ হয়।
জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে আদি।
নিধি কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এরই মধ্যে জিসান চলে আসে।
“এতোখন লাগলো তোর? একটা কাজও ঠিক করে করতে পারিস না। এই মেয়েটাকে ভালো করে বোঝা। ও যেনো ওর এই মুখটা আমাকে আর না দেখায়। জাস্ট অসয্য লাগে। স্টুপিট
বলে আদি চলে যায়।
নিধির মন খারাপ হয়ে যায়। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের কোনে পানি চলে আসে। আঙুল দিয়ে আচল পেঁচাতে থাকে।
” নিধি আসলে আমার ভাইটা এমনই। সব সময় রেগে থাকে। আমাদের সাথেই ভালো করে কথা বলে না। ভেরি সরি
নিধি চোখের পানি মুখে হনহনিয়ে চলে যায়। জিসানের খুব খারাপ লাগে।

আজ নিধি আর আদির গায়ে হলুদ। নিধি মন খারাপ করে বসে ফোন দেখছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। জিসান অনেকবার ফোন দিয়েছে কিন্তু নিধি রিসিভ করে নি। বাবা মায়ের সাথেও তেমন কথা বলে নি।

নিধিকে সাজাতে পার্লার থেকে বিউটি শেয়ান এসেছে।
নিধির ইচ্ছে না থাকলেও সাজছে যায়।
কিছু একটা ভেবে নিধি হলুদের সাজে কিছু পিক তুলে আদিকে সেন্ড করে। আদি নিধির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে নি। তবুও নিধি অনেক অনেক মেসেজ দিয়ে ভরে রেখেছে। নিধির কেনো জানি মনে হচ্ছিলো আদি আজকে ওর রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করবে আর ওর পিক গুলো দেখবে।
ফোনটা রেখে নিধি যায়। সবাই নিধিকে হলুদ ছোঁয়ায়। জিসান এসেছে নিধিকে হলুদ দিতে। একদম ভুল বানিয়ে দেয় নিধিকে৷ নিধিও কম যায় না জিসানকেও হলুদ লাগিয়ে দেয়।

রাতের বেলায় নিধি ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ডাটা অন করতেই দেখতে পায় আদিল চৌধুরী এক্সেপ্ট করে রিকোয়েস্ট। আর নিধির একটা পিক এ লাভ দিয়েছে। নিধির খুশি আর দেখে কে। খুশিতে গদগদ হয়ে লাফাতে থাকে।

আজকে আদি নিধির বিয়ে। এক ঘন্টা যাবৎ বউ সেজে বসে আছে নিধি।একটু আগে কাজি এসে সাইন নিয়ে গেছে সাথে কবুলও বলেছে।
বিয়েটা হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আদির দেখা মেলে নি। বউ সাজে নিধিকে মারাক্তক লাগছে।
অবশেষে আদিকে নিয়ে আসা হয় নিধির কাছে। আদির চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। তা দেখে নিধির মনটা একটু খারাপ হয়। উনি সারাজীবন আমাকে বিরক্তই মনে করবে?

আদি এক নজর তাকায় নিধির দিকে। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু নিধি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। এই মানুষটা এখন থেকে নিধির স্বামী। সারাজীবনের জন্য বাঁধা পড়ে গেছে এই লোকটার সাথে। এখন থেকে নিধির একটাই দায়িত্ব এই গোমড়া মুখো লাটসাহেবকে হাসিখুশি বানানো।

নিধি হাত দিয়ে আদির বুকে গুঁতো দিয়ে একটু হেসে বলে
“বলছিলাম না বিয়েটা করতো করে ফেলছি। এক বংছি বছর ঘুরতে ঘুরতে বাবুর আম্মু হবো
আদি কটমট চোখে তাকায় নিধির দিকে।
” এরকম ভালোবাসি ভালোবাসি দৃষ্টিতে তাকাও কেনো বাবু? প্রেম প্রেম পায় না কি?
“তোমাকে থাপ্পড়াইতে মন চায়। ইডিয়েট
” আর কি মন চায় জানেন?
“জানি
” এই না হলো আমার বাবুটা আমার মনের কথা বলার আগেই বুঝে যায়।
আদির গাল টেনে বলে নিধি। রুমে উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে ফেলে। আদি মাথা নিচু করে। নিধি লজ্জা পায় একটু খানি।

বিদায়ের সময় নিধি একটু খানি কেঁদে ফেলে। নিধির বাবা মা অনেক কাঁদে। তার ছোট মেয়েটাকেই বিয়ে দিয়ে দিলো। নিধিদের অবস্থা তেমন ভালো না। একটা দোকানের কর্মচারী নিধির বাবা। মেয়েকে খুব আদরে বড় করেছেন। নিধির বাবারা তিন ভাই। নিধির চাচাদের অবস্থা ভালো। ওনারা নিধিকে খুব আদর করে। খুব বড়লোক ঘর থেকে নিধির সমন্ধ এসেছে আর নিধি ছেলেটাকে পছন্দ করে বলে বাবা আর না করে না।

আদির রুমটা একদম সাদামাটা ভাবেই আছে। আদি সাজাতে না করেছে। আদি বলে দিয়েছে ওর রুমে একটা ফুলের পাপড়ি থাকলেও ও চলে যাবে বাড়ি থেকে।
নিধিকে আদির চাচাতো বোন আর জিসান এনে আদির রুমে দিয়ে গেছে। নিধি ঘুরে ঘুরে দেখছে। অনেক বড় বাড়ি আদিদের। দুই তালা বাড়ি কিন্তু চারপাশটা অনেক বড়। আদির রুমটাও অনেক বড়। কিন্তু রুমে একটা খাট ড্রেসিং টেবিল আর একটা আলমারি ছাড়া কিছুই নেই। দেয়ালটা কালো রং করা।
নিধি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিরামিষ জামাই বিয়ে করলেই এটাই হয়।
এরই মধ্যে দরজায় খট করে শব্দ হয়।
নিধি কোমরে হাত দিয়ে বলে
“সমস্যা কি আপনার? এটা কি ফুলসজ্জার ঘর। এই ঘরে ফুলসজ্জা হয়। এখানে তো একটা গোলাপের পাপড়িও নেই। এতো নিরামষ হলে চলে। আমারই মনে হয় কপাল পুড়লে
এক নাগারে কথা গুলো বলে সামনে তাকায় নিধি। সামনের মানুষটাকে দেখে নিধি ঢোক গিলে
“শশুড় মশাই আপনি
আদির বাবা একটু হেসে নিধির কাছে আসে। নিধির মাথায় হাত বুলায়। নিধি একটু হাসার চেষ্টা করে।
” আমার এই নিরামিষ গোমড়ামুখো ছেলেটাকে পাল্টে দে তো মা
“আমি কি পারবো?
” খুব পারবি। আর তোদের জন্য আমি আমার রুমটা সাজিয়েছি। আদিকে না জানিয়ে। তুই ওই রুমে চলে যা। আমি আদিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
নিধির বেশ লজ্জা লজ্জা লাগছে। তবুও লজ্জাকে এক পাশে রেখে বলে
“তুমি খুুব ভালো শশুড় মশাই।
” তুইও খুব মিষ্টি বউমা

নিধি শশুরের রুমে চলে যায়।

চলেবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here