শুধু তুই ৩ পর্ব -০৬

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana

রাত তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো আদির জন্য নিধি। আদি আসলো না। রুম থেকে বেরিয়ে আশেপাশে হেঁটে খুঁজেছে আদিকে পায় নি। রুমে পায়চারি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ভীষণ কান্না পাচ্ছে নিধির। আদি এমনটা কেনো করলো? কেথায় গেছে?
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো নিধি।

ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বসে আছে আদি। পাশে বসে আছে আদির সব থেকে ভালো বন্ধু ইভা। এই একমাত্র মানুষ যার সাথে আদি মন খুলে কথা বলতে পারে। যাকে ভরসা করে।
“আমি অনেক বার বলেছিলাম ইডিয়েট টাকে আমাকে বিয়ে করো না। শুনলো না আমার কথা।
রাগে ফসফস করতে করতে বলে আদি।
” আদি মেয়েটা তোকে ভালোবাসে। তোমার জীবনে কেউ একজনকে প্রয়োজন ছিলো।
আদির কাঁধে হাত দিয়ে বলে ইভা।
“আমার জীবনে কাউকে প্রয়োজন নেই।
ঝাড়া মেরে ইভার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে আদি।
” আমি এখানে এভাবে বসে থাকতে পারবো না৷ মা চিন্তা করবে। তাছাড়া ইফাদ (ইভার বয়ফ্রেন্ড) রাগ করবে।
“হুমম তুই তো এখন ভালোবাসার মানুষ পেয়ে গেছিস। তোর সময় নেই। ঠিক আছে তুই যেতে পারিস।
আদি গাড়ি থেকে নেমে ইভার গাড়ির দরজা খুলে দেয়। তারপর ইভাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে টেনে বের করে ইভাকে গাড়ি থেকে।
” যেতে পারিস। আমার কাউকে চায় না। আমি একাই ঠিক আছি।
“আদি আমার কথাটা শোন
আদি ইভার কথা শোনে না গাড়ি স্টার দিয়ে চলে যায়।
রাত তিনটার সময় ইভা একা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। এতো কেয়ারলেস কেনো ছেলেটা? ভীষণ রাগ হয় আদির ওপর। ইভা ইফাদকে ফোন দেয়। ইফাদের বাড়ি পাশাপাশি হওয়াতে তারাতাড়িই ইফাদ চলে আসে।

আজানের শব্দে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে চারদিকে তাকিয়ে দেখে আদি আসে নি। মনটা বিষিয়ে যায়।
বিয়ের শাড়ি চেঞ্জ করে সুতি একটা শাড়ি পড়ে নেয়। নামাজ পড়ে সামনে এগিয়ে যায়। ছোট একটা বেলকনি আছে রুমটাতে। নিধি বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। ভোরের ফুরফুরে হাওয়া মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু নিধির মন ভালো হচ্ছে না। আদির এই অবহেলাটা ও নিতে পারছে না।
“তাহলে কি বিয়েটা করে ভুল করে ফেললো? ভালোবাসে তো। ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পেয়েছে এটাই তো অনেক। করুক না সে অবহেলা।
” তোমার অবহেলা গুলোকে ভালোবাসা মনে করে আমি বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবো”
উদাস ভঙ্গিতে বলে নিধি।

সাতটা বাজতেই নিধি মাথায় এক হাত ঘোমটা টেনে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। দুই তালা বাড়িটা। নিধি যে রুমে ছিলো সেই রুমটা দুই তালায়। নিধি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে।
“আদি বাড়ি ফিরেছিলো রাতে?
হঠাৎ করে কেউ প্রশ্নটা করে। নিধি চমকে তাকায়। আদির মা প্রশ্নটা করেছে।
নিধি কাচুমাচু হয়ে যায়।
” নাহহ
আস্তে করে বলে নিধি।
“আদি তোমাকে কখনোই মানবে না। যতই তোমার শশুড় মশাই তোমাকে অশ্বাস দিক ও মানবে না। ছোট মানুষ তুমি। পড়ালেখা করো। তোমার পড়ালেখার সব খরচ আমার। তোমার সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত। এটাকে আদির মন জয় করার মতো ফালতু কাজে নষ্ট করো না। লাভ হবে না।
শাশুড়ী মা গম্ভীর গলায় বলে।
নিধি মাথা নিচু করে আছে। কিছু বলে না।
” অনু তোমার সাহস হয় কি করে নিধিকে এসব বলার? আমার বউমা নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরি করবে সাথে আদির মন জয়ও করবে। এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
শশুড় মশাই এদিকে আসছিলো। ওনার কথা শুনে ফেলে। তাই ধমক দিয়ে বলে।
“তোমার ছেলে তো বাসর রাতেই বউকে ফেলে চলে গেছে।
তাচ্ছিল্য করে বলে অনু।
” তো?
“তো তুমি বুঝতে পারছো না?
” আমি দিয়ে আসবো নিধিকে আদির কাছে।
“তাতে কি লাভ হবে?
“সেটা আমি বুঝে নেবো। তুমি জিসানকে নিয়ে ভাবো। আদিকে নিয়ে ভাবার জন্য আমি তো আছিই।
অনু আর কিছু না বলে চলে যায়।
নিধি এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আদির বাবা নিধির মাথায় হাত রাখে।
” সব ঠিক হয়ে যাবে। কষ্ট পেতে পেতে ছেলেটা আমার পাথর হয়ে গেছে। এখন নিজের বাবাকেও বিশ্বাস করতে পারে না। যদিও আমি কিছু বললে না বলতে পারে না। মেনে নেয়।
নিধি কিছু বলে না।
“জামাকাপড় গুছিয়ে নে।আমি তোকে আদির কাছে দিয়ে আসবো।
” আমি যাবো না। চোখ শক্ত করে বলে নিধি।
“এর শোধ না হয় পরে নিয়ে নিস।
শশুড় চলে যায়। নিজের রুমে এসে কাঁদে। জিসান আসে নিধির রুমে।
” নিধি কাঁদছিস কেনো?
নিধি চোখ মুখে নেয়।
“আমি কি তোকে লাগেজে গোছাতে হেল্প করবো? জিসান বলে।
” লাগবে না।
নিধি লাগেজে জামাকাপড় গোছাতে যায় তখনই অনু বেগম একটা লাগেজ নিয়ে আসে নিধির রুমে।
“তোমার শশুড় মশাই তোমার জন্য এনেছে।
বলেই তিনি চলে যায়। নিধি শাড়িটা পাল্টে লাগেজ ধরে নিচে নামে। জিসান পেছন পেছন যায়।

গাড়ি ডাইভ করছে শশুড় মশাই জিসান আর নিধি পেছনে বসে আছে।
দুই ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যায় একটা দশতালা বিল্ডিং এর সামনে। গাড়ি থামতেই নিধি নেমে পরে। বমি বমি পাচ্ছে।
” চলে এসেছিস তোর একমাত্র বরের জেলখানায়।
নিধিকে বলে জিসান।
নিধি একবার জিসানের দিকে চোখ কটমট করে তাকায়।
“বাবা তুমি যদি ভেবে থাকো আমি এখানে ওদের সাথে থাকবো তা হবে না
জিসান বাবাকে বলে।
” তুই এখানে থাকলে আমি তোকে একটা আই ফোন গিফট করবো।
শশুড় মশাই বলে।
“আমার তো এখানে থাকতে খুব ইচ্ছে করে। তারওপর আবার নিধি আছে। থাকবো আমি এখানে।
এক গাল হেসে বলে জিসান।
শশুড় মশাই মুচকি হাসে।

ওরা লিফটে চড়ে নয় তালায় উঠে পরে।আদির রুমের সামনে টমকে বসে থাকতে দেখে।
শশুড় মশাই দুইবার কলিং বেল বাজাতেই আদি দরজা খুলে দেয়।
” কে?
সামনে তাকিয়ে বাবাকে দেখে আদি বেশ খানিকটা চমকে ওঠে। কিন্তু বাইরে প্রকাশ করে না।
“আপনি?
দরজা থেকে সরে গিয়ে বলে।
বাবা নিধির হাত ধরে ভেতরে ঢোকে। নিধি মাথা নিচু করে আছে।
জিসান মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে ভেতরে ঢুকে।
” বুঝলাম না। সবাই মিলে এখানে?
আদি বলে ওঠে।
“কেনো এখানে এসেছি তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারছো না?
বাবা বলে ওঠে।
” তোর বউকে তোর কাছে দিতে এলাম। জিসান বলে।
“আমি কাজ করি। বসে বসে খায় না। এই ইডিয়েট এখানে থাকলে সারাক্ষণ বকবক করে মাথা খাবে। আমি কাজ করতে পারবো না। সো
আদিকে থামিয়ে বাবা বলে ওঠে
” এই ইডিয়েটের বকবকই তোমার সয্য করতে হবে।
চেচিয়ে বলে ওঠে উনি। নিধি ভয় পেয়ে যায়। আদি চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
“আপনি সব সময় আপনার সব ডিসিশন আমার ওপর চাপিয়ে দেন। এটাই আমার অপছন্দ।
রাগে গজগজ করে বলে আদি।
” পাপা কে এসেছে
চার বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে কোথা থেকে দৌড়ে এসে আদির পা জড়িয়ে ধরে বলে।
জিসান বাবা আর নিধি চমকে ওঠে। আদি ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
নিধির হাত পা কাঁপছে।
“তাহলে কি আদি বিবাহিত? তার জন্যই বিয়ে করতে না করছিলো?
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে নিধির।
” আদি এসব কি?
চিৎকার করে বলে আদির বাবা।
পিচ্চিটা ভয় পেয়ে আদির পেছনে লুকায়। নিধি ঠাস করে বসে পরে।
“এটা হতে পারে না। আপনি বিবাহিত হতে পারেন না। আপনি আমার স্বামী। আমিই আপনার প্রথম স্ত্রী।
কাঁদতে কাঁদতে বলে নিধি। হেঁচকি উঠে গেছে।
আদি বেশ বিরক্ত হয়। বাচ্চা মেয়ে নিধির কাছে হাঁটু মুরে বসে
” তুমি কাঁদছো কেনো? পাপা তো তোমায় কবে নি?
মেয়েটা প্রশ্ন করে

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here