শুধু তুই ৩ পর্ব -০৭

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana

“এসব হচ্ছে টা কি আদি? মানে কি এসবের?
নিধি চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। একটা রুমে দৌড়ে চলে যায়।
আদি বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেয়।
” ওর নাম জুজু। সামনের এতিমখানায় থাকে। আমি মাঝেমধ্যে ওকে আমার কাছে এনে রাখি।
এক নাগারে বলে আদি।
আদির বাবা আড়ালে মুচকি হাসে। উনি ১০০% শিওর ছিলো আদি এরকম কোনো কাজ করবে না।
গলা ঝেড়ে বলে।
“আমি এখুনি যাবো। নিধির খেয়াল রেখো।
” ও কোনো যে ওকে চোখে চোখে রাখতে হবে।
বিরক্ত হয়ে বলে আদি।
“বাবা আমিও যাবো তোমার সাথে। জিসান বলে।
” ওকে চল
জিসান আর বাবা বেড়িয়ে যায়। আদি জুজুকে কোলে নিয়ে রুমে চলে আসে।
নিধি খাটে উপুর হয়ে শুয়ে কান্না করছে। বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করার ফলে চাপা কান্নার আওয়াজ আসছে।
“পাপা আমি এখানে আসাতে ও কাঁদছে তাই না? আমি আর আসবো না।
জুজু মন খারাপ করে বলে।
জুজুর কথাটা নিধির কানে চলে যায়। কান্নার আওয়াজ কমিয়ে দেয় নিধি।
” তোমার জন্য কান্না করছে না এটা ওর স্বভাব।
বেশ শক্ত কন্ঠে বলে আদি।
নিধি উঠে বসে। চোখের পানি মুছে। হাতের কাছে একটা রুমাল পায়। ওটা হাতে নেয়।
“একদম আমার রুমাল ইউজ করবা না। আদি জুজুকে নামাতে নামাতে বলে।
নিধি রুমাল দিয়ে নাক মুছে ফেলে। আদি আসতে আসতে নিধির নাম মোছা শেষ। আদি কটমট চোখে তাকায় নিধির দিকে।
” তুমি এটা দিয়ে নাক মুছলে? ইয়াক
চোখ মুখ কুচকে বলে আদি।
জানো কতো প্রিয় এটা আমার।
রাগী গলায় বলে আদি।
নিধি রুমালটা আদির মুছে ছুঁড়ে মেরে বলে
“বেশ করেছি
বলেই এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পাশের রুমটাতে গিয়ে দরজা লক করে দেয়।
আদির রাগ আকাশ ছুঁয়েছে।
” এতো বড় সাহস
জুজু ওদের কান্ঠে খিলখিল করে হাসে।

আদির বাসাটা মোটামুটি ভালোই বড়। দুইটা রুম একটা কিচেন আর একটা ড্রয়িং রুম। নিধি যে রুমে আছে সেই রুমের সামনে ছোট একটা বারান্দা আছে। একটা খাট ড্রেসিং টেবিল আর আলমারি ছাড়া আর কিছুই নেই রুমটাতে। নিধি খাটের মাঝখানে গোল হয়ে বসে কান্না করছে আর রুমটা দেখছে।
অতিরিক্ত কান্না করলে নিধির জ্বর চলে আসে।চোখ মুখ ফুলে গেছে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বেলকনিতে যায়। একটা গোলাপ গাছ আর দুইটা বেলি ফুল গাছের টব আছে বেলকনিতে। গোলাপ নিধির ভীষণ প্রিয়।
গাছ গুলো ছুঁয়ে দেয় নিধি।

আছরের আজান পরে গেছে। সেই এগারোটার সময় নিধি এই বাড়িতে এসেছে আর সাড়ে বারোটায় এই রুমে ঢুকেছে। এখন আর এখানে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
লাগেজ খুলে দেখে সেখানে সব পাতলা ছিছিলা শাড়ি। পড়লে সব দেখা যাবে। আর এক সাইডে দুটো টিশার্ট আর প্লাজু আছে। নিধি সেখান থেকে একটা পরে নেয়। শাড়ি পড়ে অব্ভস্ত্য না।

দরজা খুলে বাইরে বের হতেই দেখে টম লেজ নাড়াচ্ছে আর নিধির দিকে তাকিয়ে আছে।
নিধি চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয়। কোথাও আদি নেই। নিধি টমের কাছে যায়।
“টম লাটসাহেব কই?
টম ঢেউ ঢেউ করে।
” জানিস না?
নিধি সোফায় বসে টমের দিকে ঝুঁকে বলে।
টম আবার ঢেউ ঢেউ করে।
“জানবিই কি করে? হিটলার তো, লাটসাহেব একটা। সব সময় মুখটাকে এমন করে রাখে যেনো কেউ আর মুখে নীম পাতা ছিটিয়ে দিয়েছে।
নিধি বলে।
রান্না ঘর থেকে ঢনঢন শব্দ আসছে।
নিধি উঠে সেদিকে যায়। দেখে আদি কিছু একটা করছে। নিধি এগিয়ে যায়। আদি রুটি বানাচ্ছে। নিধি গিয়ে আদির সামনে টুল টেনে বসে। আদি একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার রুটি বেলায় মন দেয়।
” ওই
নিধি নেকা স্বরে বলে।
আদি এক পলক তাকায়।
“অনেক ভেবে দেখলাম বুঝলেন? আপনার বউ নিশ্চয় মারা গেছে বা অন্য কারো সাথে চলে গেছে। এখন মেয়েটা আপনার রুয়ে গেছে। রাইট?
আমার এতে কোনো সমস্যা নেই। সুন্দরী ছেলেরা একটা বিয়ে করবে এটা বেমানান। চার পাঁচটা করবে। আপনার মেয়ে আমার মেয়ে। পবলেম নাই।
নিধি হেসে বলে।
আদি কিছুই বলে না।
” আচ্ছা আপনি নিরামিষ কেনো? আমি এতোখনে শিওর হলাম আপনার আগের বউ কেনো মারা গেছে বা চলে গেছে।
আপনি তো বিশ্ব বিখ্যাত নিরামিষ। এরকম নিরামিষের সাথে সে থাকতে পারে নি। আরে বস একটু আমিষ হও। সিনেমার হিরোদের মতো।
চোখ টিপে বলে নিধি। আদি এখনও কিছু বলে না

“আপনি মুভি টুভি কিছু দেখেন না? একটু মুভি দেখুন। কি স্টাইলে প্রপোজ করে আরও কতো কিছু। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি হিন্দি সিনেমার হিরোদের মতো হবেন। কিন্তু কপাল আমার। চেহারা মাশাআল্লাহ হিরোদের মতো কিন্তু নিরামিষ। দুঃখ
আদি রাগী দৃষ্টিতে তাকায় নিধির দিকে।
” একটু রোমান্টিক ভাবে তাকান। এমন ভাবে তাকাচ্ছেন যেনো আমাতে আপনার এলার্জি আছে।
নিধি বিরক্ত হয়ে বলে।
” ডোন্ট ডিস্টার্ব। আমি কাজ করছু
আদি চোখ বন্ধ করে স্বাভাবিক ভাবেই বলে।
‘কই ডিস্টার্ব করছি। এখনো তো কথা বলা শুরুই করলাম না আর আপনি আগেই ডিস্টার্ব হচ্ছে? কি আপনি? অবাক হয়ে বলে নিধি।
আদি আটা গুলো মুঠ করে ধরে।
“বাই দ্যা ওয়ে আপনার আর আমার মেয়ে কই?

আদি চলে যেতে নেয়। নিধি হাত টান দিয়ে ধরে
” চলে যাচ্ছেন কেনো?
আদি হাতের আটা নিধির মাথায় ঢেলে দেয়। নিধি এখন সাদা ভুত হয়ে গেছে।
“এবার এসো একটু আমিষ হই। নিরামিষ বর তো তোমার ভালো লাগছে না। রাইট বেবি?
নিধির খুব কাছে এসে বলে আদি। আদি ভাবে এটার জন্য নিধি রেগে চলে যাবে।
নিধি টাসকি খায়। কি থেকে কি হয়ে গেলো।
নিধির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। নিধি মাথাটা ঝাড়ি দেয়। আর সব ময়দা আদির মুখে গিয়ে লাগে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে আদি।
নিধি আদির গলার দুই পাশ দিয়ে হাত দিয়ে মুখটা ঠিক আদির নাকের কাছাকাছি নিয়ে বলে
“এবার ঠিক আছে।
” ইডিয়েট
আদি হাত দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে।
“আপনারই বউ
আদি নিধির হাতটা ঝাড়ি মেরে সরিয়ে নেয়।
” একদম আমার কাছাকাছি ঘেসবা না।
নিধি আদিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদির পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বলে
“ঠিক আছে ঘেসবো না। খালি একটু একটু ঘেসবো।
” দেখো
আদি নিধির হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে।
“দেখান
নিধি বাঁকা হেসে বলে।
” ননসেন্স
আদি নিধিকে ছাড়িয়ে দেয়।
“তুমি যে গুলো করছো এটাকে কি বলে জানো? বাঁদরামি। আর এই বাঁদরামি আমার একদম পছন্দ না। আমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলবে। আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমাকে ভয় পাবে। তোমাকে আমার একটুও পছন্দ না। আর অপছন্দের মানুষ অলওয়েজ আমার সাথে চিপকে থাকুক এটাকে আমার বিরক্ত লাগে। আশা করি বুঝতে পেরেছো?
আঙুল তুলে বলে আদি।
আদি আবারও বলে
” তোমার আর আমার বয়সের তফাৎ টা ১৬ বছরের। আমার সাথে তোমার যায় না। এটা তোমাকে আমি হারাজবার বোঝাতে চেয়েছি তুমি বুঝোনি। যদি বুঝতে তাহলে তোমাকে আর আমাকে এই দিনটা দেখতে হতো না। এরপর তোমার সাথে যা হবে তার জন্য দায়ী থাকবে শুধু তুমি। এবার আসতে পারো।আর হ্যাঁ আমার চোখের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করবা না। বিরক্ত লাগে।
নিধি মাথা নিচু করে নেয়। আদির কথা গুলোতে বেশ আঘাত পায়।
চোখের কোনে পানি চিকচিক করে।
আদির দিকে তাকিয়ে মুচকি একটু হাসি দিয়ে নিধি চলে যায়। আদি নিজের কাজে মন দেয়।

রাত নয়টা বাজে। আদি খেতে বসেছে। তারাতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ে আদি। কারণ খুব ভোরে উঠতে হয়। নিধি সেই রুমে ঢুকেছে আর বের হয় নি। আদি খাওয়ার সময় একবার তাকায় নিধির রুমের দিকে। নিজের খাওয়া শেষ করে নিধির জন্য খাবার বেরে এটো প্লেট মেজে রুমে চলে যায় আদি। মন চাইছিলো নিধিকে ডেকে বলতে খাবার খেয়ে যাও। কিন্তু কোনো কারণে বলে নি।

নিজের রুমে জানালার কাছে বসে সিগারেট টানছে আদি। দৃষ্টি সামনের ব্রিডিংএর অন্ধকার রুমের দিকে।

“যে কখনো দেখেনি তোমার হ্মত
শোনেনি তোমার গল্প
তাকে একটা আকাশ দিলেও বলবে
এখানে তারা কেনো এতো অল্প?
আদি তাচ্ছিল্য হেসে বলে।

জ্বরে ঠকঠক করে কাঁপছে নিধি। কান্না করলেই নিধির জ্বর চলে আসে। এই রুমটাতে একটা কোম্বলও নেই। লাগেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে সেটই পেঁচিয়ে শুয়ে আছে নিধি। গোঙ্গানির শ্বদ হচ্ছে।
আদি পানি নেওয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়েছিলো। নিধির রুম থেকে গোঙানির শব্দ পেয়ে সেদিকে যায়। নিধিকে কাঁপতে দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিজের রুম থেকে একটা কোম্বল এনে নিধির বিছানায় ছুঁড়ে মেরো চলে যায় আদি।
নিধি কোম্বল গায়ে পেঁচিয়ে নেয়। চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি গড়াতে থাকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here