শুধু তুই ৩ পর্ব -০৮

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৮
#Tanisha Sultana

বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে আদি। ঘুম আসছে না। মনে হচ্ছে নিধি ঠিক আছে তো?
ঘুমিয়ে গেছে? জ্বর কমেছে?
এতোসব প্রশ্ন নিয়ে আদি আর থাকতে পারলো না বিছানায়। লাইট অন করে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় নিধির রুমে। কোম্বল গায়ে মুরিয়ে ঘুমিয়ে আছে নিধি। আদি নিধির পাশে গিয়ে বসে। হাত বাড়িতে নিধির কপাল স্পর্শ করে। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।
“ওহহহ গড
আদি গ্লাসে পানি ঢেলে নিধিকে জলপট্টি দেই। হাত পায়ে তেল মালিশ করে। কপালে লেবু দেই। পাক্কা দুই ঘন্টা নিধির সেবা করার পরে নিধির কপাল ঠান্ডা হয়। শরীর ঘেমে যায়। আদি নিধির শরীর থেকে মোটা কোম্বল সরিয়ে পাতলা একটা কম্বল জড়িয়ে দিয়ে চলে যায়।

ঘড়ির কাটায় রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই। আদি এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়ে।

প্রতিদিনকার মতো ভোর চারটায় আদি ঘুম থেকে ওঠে।নামাজ পড়ে কিচেনে যায়। সকালে রান্না সেরে তবেই অফিসে যেতে হয়। অন্য মানুষের রান্না আদি খেতে পারে না। তাই কাজের লোক রাখে না। নিজেই রান্না করে খায়। জামাকাপড় ধোঁয়া ঘর মোছা সবই আদি একাই করে।

ঝালঝাল করে নুডলস রান্না করে। দুপুরে নিধি বাসায়ই থাকবে তাই দুপুরের জন্য ভাত আর ইলিশ মাছ রান্না করে রাখে।
রান্না সারতে সারতে সাড়ে সাতটা বেজে যায়। আদি জগিংয়ের জন্য বের হয়। জীম করে ফিট থাকার সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই আদির নেই।
নয়টায় নিধির ঘুম ভাঙে। ভীষন গরম লাগছে। গোছল করা দরকার। নিধি উঠে যায় ওয়াশরুমে।কল চাপে কিন্তু পানি পড়ে না।
নিধি জামাকাপড় নিয়ে পা টিপে আদির রুমে যায়। মুখে ব্রাশ হাতে জামাকাপড়। জামাকাপড় আদির খাটের ওপর নামিয়ে রাখে।
এদিক সেদিক উঁকি মেরে দেখে আদি নেই। নিধি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে। আদির টাওয়াল নিয়ে জামাকাপড় ছেড়ে সেটা পড়ে নেয়। তারপর নাচতে নাচতে গোছল করতে থাকে। সাথে
“বুক চিনচিন করে হায়
মন তোকে কাছে চায়”
এই গানটা গাইছে।

আদি জগিং করে টায়ার্ড হয়ে রুমে আসে। এবার গোছল সেরে অফিসে যাবে। হুরমুর করে ওয়াশরুম ঢুকে দরজা লক করে আদি। দরজা লক করার শব্দে চমকে তাকিয়ে আদিকে দেখে চিল্লিয়ে ওঠে নিধি। আদি চমকে যায়। পেছন তাকিয়ে নিধি টাওয়াল পরা দেখে। আদি তারাহুরো করে গিয়ে নিধির মুখ চেপে ধরে।
“স্টপ
কেউ শুনলে আমাকে গনোধলাই দেবে
আদি বলে। নিধি হা করে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। আদির এক হাত নিধির কোমরে আরেক হাত নিধির মুখে।
নিধি ইশারা করে মুখ ছাড়তে। আদি ছেড়ে দেয়। নিধির থেকে একটু দুরে সরে যায়। নিধি লজ্জা পায়।
” তুমি এখানে কেনো? আদি অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে রাগী কন্ঠে বলে।
“ডান্স করতে এসেছি। আসলে আর জায়গা পাচ্ছিলাম না তো। তাই এখানে আসলাম। নিধি মুখ বাঁকিয়ে বলে।
” ইডিয়েট
“সেম টু ইউ,
নিধি বিরবির করে বলে।
আদি আবার নিধির দিকে ঘুরে
” কি বললে? কপালে ভাজ ফেলে বলে আদি।
“বললাম আপনাকে দারুণ লাগছে। দুষ্টু হেসে বলে নিধি।
আদি চোখ পাকিয়ে তাকায়।
আদি নিধির দিকে তাকিয়ে আবারও চোখ ফিরিয়ে নেয়। নিধি গিয়ে আদির সামনে দাঁড়ায়।
” তাকিয়ে থাকেন।
আদির সামনে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বলে নিধি।
“তোমার লজ্জা না থাকলেও আমার আছে।
নিধি আদির গলায় জড়িয়ে ধরে।
” তাই
“বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আদি আঙুল উঠিয়ে বলে।
” সেটাই
কাল সারারাত সেবা করলেন কেনো? লজ্জা করলো না? একা একটা মেয়ের রুমে গিয়ে.
“জাস্ট মানবতা
নিধিকে থামিয়ে আদি বলে।
” বাট আমি যে আপনার চোখে অন্য কিছু দেখলাম
আদির পায়ের ওপর পা দিয়ে একটু উঁচু হয়ে বলে নিধি।
“চোখের ভাষা পড়ার বয়স তোমায় হয় নি।
নিধির হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে আদি।
নিধি আদির কলার ধরে আদিকে নিচু করে। আদির মুখটা নিধির মুখের কাছে চলে আসে।
” বয়সের দোষ দেবেন না। ছোট হতে পারি কিন্তু সব বুঝি। যা আপনিও বোঝেন না।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“বেশি পন্ডিত হলে যা হয় আর কি
আদি নিধির হাতটা ছাড়াতে ছাড়াতে বলে।
” বড় হও আগে
আর হ্যাঁ ভয় পাবে আমাকে।
বলে আদি চুল ছাড়তে ছাড়তে বলে বেরিয়ে যায় আদি। নিধি মুখটা কাঁদো কাঁদো করে।
“ধুর কি রোমান্টিক মোমেন্ট ছিলো।

বিছানার ওপর বসে আদি খেয়াল করে নিধির শাড়ি বিছানায় পরে আছে।
” স্টুপিট শাড়িটাও নেয় নি। এখনি বলবে
“শুনছেন আমার শাড়িটা দিন তো”
আর পারি না। ওই লোকটা যে কি ঝামেলা দিয়ে গেলো আমাকে
বিরক্ত হয়ে বলে আদি।
শাঠিটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার নক করে।
“তোমার শাড়িটা
নিধি দরজা খুলে হাত বারিয়ে দেয়। আদি শাড়িটা দিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে আবারও ওই বন্ধ রুমের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টান দেয়।
পাঁচটা সিগারেট শেষ করার পরে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পায়। অর্ধেক খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে কাবাট থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। নিধি নিজের রুমে এসে জামাকাপড় বেলকনিতে মেলে দেয়।
প্রচন্ড খিধা পেয়েছে নিধি। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে খাবার ঢেকে রাখা। নুডলস দেখে তো নিধি জীভে পানি চলে আসে। তারাহুরো করে খেতে থাকে।
দুই মিনিটেই পুরো বাটি নুডলস শেষ করে ফেলে নিধি।

হালকা জাম কালারের একটা শাড়ি পরেছে নিধি। বেশ পাতলা শাড়িটা। হিন্দি সিনেমার হিরোইনরা যে টাইপের শাড়ি পড়ে ঠিক ওই রকম। নিধি স্কুলে যাবে। সামনেই টেস্ট পরিহ্মা।
চুল আচড়ে শাড়িতে পিন গেড়ে নেয়। তবুও পেট বেড়িয়ে যাচ্ছে।
বই খাতা কিছুই নেই। আদির ফ্লাট থেকে নিধিদের বাঠি খুব বেশি দুরে না। বাড়িতে গিয়ে স্কুল ড্রেস বই খাতা সব নিয়ে আসবে নিধি।
হালকা সাজুগুজু করে আদির রুমে যায়। আদি টিশার্ট ওপর শার্ট পড়ছে।
” আমাকে কিছু টাকা দিন। আমি বাসায় যাবো। ওখান থেকে স্কুল ড্রেস বই খাতা সব নিয়ে আবার স্কুলে যাবো।
আদি নিধির দিকে তাকায়। চোখটা আটকে যায় নিধির কোমরের কাছে। একটু কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
“আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।
আমি রিনরিনিয়ে বলে।
নিধি আদির কথাটা শুনে হা হয়ে যায়।
” কি বললেন?
“আমি ড্রপ করে দেবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি।
” আপনার কাছে টাকা নাই?
“নাহহহ নেই
বিরক্ত হয়ে বলে।
” তাই বলি আপনি কেনো লিফট দিতে চাইছেন। টাকা থাকলেন দিতেন না।
“ইডিয়েট
চলো
বলেই আদি হাঁটতে শুরু করে। নিধিও পেছন পেছন হাঁটে। কিছু একটা মনে করে আদি থেমে যায়। নিধিও থেমে যায়। নিধি ভ্রু কুচকে তাকায়।
” কি হলো
আদি নিজের শার্ট খুলে নিধিকে দেয়।
“এটা পরে নাও
নিধি কপালে ভাজ ফেলে বলে
” কেনো?
“বলছি তাই
” পড়বো না
“তাহলে বাসায় লক করে রেখে যাবো
বলেউ আদি ছুঁড়ে মারে শার্টটা নিধির দিকে।
” কতো কিউট লাগছে আমাকে।
আদি একবার তাকিয়ে হাঁটা শুরু করে। নিধি মুখ বাঁকিয়ে শার্ট পড়ে নেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here