শুধু তুই ৩ পর্ব -০৯

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৯
#Tanisha Sultana

“আচ্ছা আপনার বাড়ি তো খুব দুরে না। তাহলে আপনি বাড়িতে না থেকে একা একা থাকেন কেনো? পরিবারের সাথেই তো থাকতে পারেন।
নিধি গাড়ির ছিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে।
আদি কোনো কথা বলে না। গাড়ি চালানো শুরু করে।
” আপনি সব সময় চুপচাপ কেনো থাকেন?
এখনো আদি কিছুই বলে না। এমন একটা ভাব ধরে যেনো নিধির কথা শুনতেই পায় নি।
নিধি মুখ বাঁকিয়ে চুপ হয়ে যায়।
“ভাব দেখো
যেনো হিরো আলমের ছোট ভাই
নিধি বিরবির করে বলে।
একটা হাইস্কুলের সামনে এসে আদি গাড়ি থামায়। স্কুলটি নিধি চেনে। এই স্কুলেই নিধি পরে।
” এখানে থামালেন কেনো? আমার তো বই নেই। আগে বাসা থেকে বই আনতে হবে।
নিধি বিরক্ত নিয়ে বলে।
আদি স্কুলের বাম পাশের পুকুর পাড়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিধি আদির দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়। সেই পিচ্চিটা একটা মহিলার সাথে। মহিলাটি পিচ্চিটাকে আদর করে খাইয়ে দিচ্ছে। নিধি ভ্রু কুচকে ফেলে। শশুড় মশাই বলেছিলো পিচ্চিটা এতিমখানায় থাকে। তাহলে এখানে আসলো কি করে? আর ওই মহিলাটি কে?
বেশ সুন্দর মহিলাটি। একটু কালো কিন্তু খুব মায়াবী মুখটা।
আদি চোখের দৃষ্টি ফেলছে না। নিধি আদিকে হালকা ধাক্কা দেয়। আদি হকচকিয়ে তাকায় নিধির দিকে। আদির দৃষ্টি দেখে নিধি ভরকে যায়। আদি চোখে নিধি কষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
“কি হয়েছে?
শান্ত গলায় বলে আদি।
” আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি কি নেমে একা চলে যাবো?
মাথা নিচু করে বলে নিধি। কষ্টে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। হতে পারে নিধি ছোট। কিন্তু এই ছোট্ট মেয়েটা এতোটুকু বুঝতে পারে।
আদি আরেকবার সেই দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে। কেমন উসকো খুশকো হয়ে গেছে আদি। চোখ মুখ বিধস্ত দেখাচ্ছে।
“জুজু তো এতিমখানায় থাকে। তাহলে এই মহিলা?
নিধি মিনমিনিয়ে বলে।
” ওর মা
আদি তাচ্ছিল্য হেসে বলে
কি কপাল বাবুটার বাবা মা পরিবার সব থাকতেও এতিমখানায় থাকতে হচ্ছে। অবহেলায় বড় হচ্ছে। যেখানে ওর রাজকন্যার মতো থাকার কথা।
নিধি আদির কথা ঠিক বুঝতে পারে না।
“কেনো থাকতে পারে না পরিবারের কাছে? নিধি প্রশ্ন করে।
” আমা
বলতে গিয়ে থেমে যায় আদি। নিধির দিকে এক পলক তাকায়।
“আমার পারসোনাল বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা আমার পছন্দ না। নেক্সট টাইম থেকে আর প্রশ্ন করবা না।
আদি ধমক দিয়ে বলে।
নিধি ভয় পায়। কাচুমাচু হয়ে বসে।
নিধিদের বাড়ির সামনে আদি গাড়ি থামায়। নিধি চট করে নেমে বাড়িতে ঢুকে যায়। আদির দিকে একবার তাকায়ও না। আদি গাড়ির কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।

” বড় ভাই আপনি এখানে?
গাড়ির কাচে টুকা দিয়ে কয়েকটা ছেলে বলে। আদি মাথা তুলে ওদের দিকে তাকায়। কাচ নামিয়ে দেয়।
“কাজে এসেছিলাম
” ওহহহ
ভাই কোনো পবলেম হলে আমাদের বলবেন কেমন?
“ঠিক আছে
ছেলেগুলো সালাম দিয়ে চলে যায়। আদি ডাইভ করে অফিসের দিকে যায়।

নিধিকে দেখে নিধির বাবা মা খুব খুশি হয়। নিধি গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে এসে বই প্যাক করছে।
” বাবা আমি এখানে থেকে যাই না
নিধি এই নিয়ে চারবার বললো।
“না রে মা। বিয়ের পরে মেয়েদের শশুড় বাড়ি থাকতে হয়।
মন খারাপ করে বলে নিধির বাবা।
আসলে তার চাকরিটা চলে গেছে। নতুন চাকরি খুঁজছে পাচ্ছে না। চাল কেনার মতো টাকাও তার কাছে নেই। মেয়েকে রেখে খাওয়াবে কি? তাই না করে দিচ্ছে।

নিধি নিজের জামাকাপড় গুছিয়ে বই ব্যাগে ঢুকিয়ে বাবা মার সাথে কথা না বলেই বেরিয়ে যায়।
নিধির মা কেঁদে ফেলে। নিধির বাবা সান্ত্বনা দেয়
” একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে”

কোচিং শেষে নিধি আর জিসান ফুলকাস্টলে বসে আছে। দুইজনের সামনেই ফুসকার প্লেট রাখা। নিধি খাচ্ছে না বলে জিসানও খাচ্ছে না

“কি রে এমন মুখ ভার করে আছিস কেনো?
নিধি গাল থেকে হাত নামিয়ে বলে
” তোর ভাই তোদের সাথে থাকে না কেনো?
“বলতে পারবো না রে।
খা
নিধি একটা ফুসকা মুখে নেয়।
” আমার না তোর ভাইয়ের সাথে থাকতে ইচ্ছে হয় না রে?
“কেনো?
” সব সময় আমাকে হার্ট করে। আমি ভেবে নিয়েছি আর ওনাকে ডিস্টার্ব করবো না। ভালোবাসিও বলবো না। থাকুক উনি ওনার মতো৷ আমি আমার মতো।
“হুুম ঠিক বলেছিস। আমিও এখন আর ভাইয়ার সাথে কথা বলি না। খালি ধমক দেয়।

বিকেলের দিকে নিধি বাসায় যায়। লিফটে উঠে দেয়াল পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ায়।
দরজার সামনে এসে থমকে যায় নিধি। দরজা তালা মারা। পাসওয়ার্ড সিস্টেম। পাসওয়ার্ড দিয়ে ফিঙ্গার দিলে খুলে যাবে আবার তালাও দেওয়া।
” এবার?
নিধির ফোনে চার্জ নেই বন্ধ হয়ে গেছে। চার্জ থাকলেও বা কি আদিতো নতুন সীম নিয়েছে যার নাম্বার নিধির কাছে নেই।
ভীষণ ক্লান্ত লাগছে নিধির।
ব্যাগ রেখে ব্যাগের ওপর মাথা রেখে দরজার সামনেই শুয়ে পড়ে।

রাত দশটার দিকে আদি বাসায় ফেরে। অফিস বিকেল পাঁচটায় ছুটে হয়ে যায়। ইচ্ছে করেই আদি এমন রাত করেছে। দরজার সামনে নিধিকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকতে দেখে আদির খারাপ লাগে। এটলিস্ট চাবিটা তো দিয়ে যেতে পারতাম।
দরজা খুলে কয়েকবার ডাকে নিধিকে। নিধির কোনো সারাশব্দ নেই। আদি কোলে তুলে নেয় নিধিকে। নিধির রুমে ছিটকানি লাগানো আর নিধিকে কোলে নিয়ে ছিটকেনি খোলা সম্ভব না তাই নিজের রুমে নিয়ে যায়। বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে জুতো খুলে দেয়।
জোরে শ্বাস নেয় আদি। আবার গিয়ে দরজার সামনে থেকে নিধির ব্যাগ নিয়ে আসে।
এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে নিধির পাশে বসে।নিধির মুখের দিকে আদির চোখ পড়ে। মুখটা শুকিয়ে গেছে।
“কি বেপার খায় নি না কি? বাবার বাড়িতে গেলো খায় নি কেনো?
নিজের মনে প্রশ্ন করে আদি।

প্রচন্ড গরম পরেছে। আদি গোছল করে চুল মুছতে মুছতে রান্না ঘরে চলে যায়। ফ্রিজে রাখা খাবার গরম করে টেবিলে রেখে যায় নিধিকে ডাকতে।

নিধির ততোখনে ঘুম ভেঙে গেছে। নিজেকে বিছানায় দেখে আর বুঝতে বাকি নেই আদিই এনেছে এখানে। ব্যাগপএ নিয়ে নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়াতেই দেখতে পায় আদি এসেছে রুমে। নিধি কিছু না বলে চলে যায়। আদিও কিছু বলে না।

ফ্রেশ হয়ে টেবিলে রাখা খাবারটা খেয়ে নেয় নিধি। খুধা একদম সয্য করতে পারে না ও। নিধিকে খেতে দেখে আদিও খাবার খেতে বসে।
” স্টুপিট চাবির কথা মনে করবা না।
আদি খেতে খেতে বলে।
নিধি তখন হাত ধুচ্ছিল।
“লাটসাহেব যদি ধমক দেয় তাই বলি নি।
বলেই নিধি রুমে চলে যায়। ফোনটা চার্জে বসিয়ে পড়তে বসে।
তখন কলিং বেল বাজে।
” এতো রাতে কে এলো?
নিধি মনে মনে বলে।
আদি রুমে শুয়েছিলো। কলিং বেলের আওয়াজে এগিয়ে আসে।
বিরক্তি নিয়ে দরজাটা খুলে।
“তুই
আদি কিছুটা অবাক হয়ে বলে।
নিধি রুম থেকে বেরিয়ে আসে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে নিধি ভ্রু কুচকে ফেলে।
” ওনার গার্লফ্রেন্ড কতো গুলো? তখন দেখলাম একটা এখন আরেকটা।
নিধি বিরবির করে বলে।
ইভা আদিকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে।
“তোর এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম দেখে যাই তোর বউ কে
খুশি খুশি হয়ে বলে ইভা।
আদি দরজা বন্ধ করে দিয়ে দুই হাত গুঁজে বলে
” কয়টা বাজে জানিস?
“সবে এগারোটা। বেশি বাজে না। ছাড় এসব বউ কই তোর?
” জানি না
বলে আদি রুমে চলে যায়। ইভার চোখ পড়ে নিধির দিকে। এক গাল হেসে নিধির দিকে এগিয়ে যায়।
“নিধি রাইট?
নিধি হালকা হেসে মাথা নারায়।
” তোমার নামটা যেমন কিউট তুমিও তেমন কিউট।
নিধি কি বলবে বুঝতে পারছে না।
“আচ্ছা চলো
ইভা নিধির হাত ধরে টেনে আদির রুমে নিয়ে যায়। নিধিকে না করার সুযোগ দেয় না।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here