শুধু তুই ৩ পর্ব -১০

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১০
#Tanisha Sultana

“আদি তোর বউটা কিন্তু বেশ মিষ্টি দেখতে।
বিছানায় আদির পাশে বসে বলে ইভা।
” মিষ্টি আমার পছন্দ না।
আদি ল্যপটপ অন করতে করতে বলে।
আদির বলা কথাটা নিধির মনের মধ্যে বিঁধে যায়। ইভার হাসি মুখটা কালো হয়ে যায়।
“একদিন এই মিষ্টিটাকে না দেখলে ছটফট করবি।মিলিয়ে নিস।
আদির পিঠ চাপকে বলে ইভা।
” তুইও মিলিয়ে নিস একদিন এই মিষ্টি থেকে আমি মুক্তি পাবো
আদি একরোখা ভাবে বলে। নিধির চোখে পানি টলমল করছে। ইভা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে
পশঙ্গ পাল্টাতে বলে ওঠে
“কাল তো পার্টি আছে। যাবি না কি?
” ইনভাইট যখন করেছে যেতেই হবে।
নিধি রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিধি বেরিয়ে যেতেই ইভা কটাহ্ম গলায় বলে
“এসব কি আদি? এমন করছিস কেনো? মেয়েটা হার্ট হলো
” তুই কি আজ এখানে থেকে যাবি? না কি চলে যাবি? যদি যাস তো এখনি যা
বিরক্তিকর সুরে বলে আদি।
“বিয়েটা কেনো করলি? দাঁতে দাঁত চেপে বলে ইভা।
” তোর আংকেল বললো
“তুই তো বলতে পারতিস করবে না।
” এই বিয়েটা না কি আমার জীবন পাল্টে দেবো। তো দেখি। তাছাড়াও ওই ইডিয়েটটাকে হাজারবার বলছি বিয়ে ভেঙে দিতে।
ঘাড়ে দুই হাত দিয়ে ঘাড় চারচারা করে বলে আদি।
“বিয়ে যখন করেছিস মেয়েটাকে সম্মান তো কর। এতোটুকু তো ও এক্সপেক্ট করতেই পারে।
” যথেষ্ট সম্মান করি আর কেয়ারও করি। এবার তোর লেকচার বন্ধ কর। আর যা। সকালে অনেক কাজ আছে আমার।
“কাল পার্টিতে তুই মেয়েটা না নিয়ে গেলেও আমি নিয়ে যাবো। আর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।
বলেই হনহনিয়ে চলে যায়।
” পাগল করে দেবে আমাকে সবাই
আদি জোরে শ্বাস নিয়ে দরজা বন্ধ করতে যায়। দরজা বন্ধ করে পেছন ঘুরতেই নিধির রুমের দিকে চোখ পড়ে। আলো জ্বলছে। জোরে জোরে বই পড়ার শব্দ আসছে।
“ইডিয়েট একটা। এতো শব্দ করে কেউ পড়ে? ডিসগ্রাাসটিং
আদি নিজের রুমে যেতে গিয়েও যায় না। নিধির রুমের সামনে আসে। দরজায় টুকা দেয়।
” শব্দ না করে পড়ো।
বলে আদি।
নিধি পড়ার শব্দে আদির কথা শোনেই না।
“স্টুপিট একটা
বিরবির করে বলতে বলতে আদি রুমে চলে যায়।
এবার একটা শান্তির ঘুম প্রয়োজন। সব চিন্তা ঝেড়ে আদি লাইটঅফ করে ঘুমিয়ে পড়ে।

নিধি রাত একটা পর্যন্ত বই পড়ে মুখের ওপর বই দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

আজকে আদির ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে যায়। সাতটার সময় ঘুম ভাঙে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে ঘড়ির দিকে তাকাতেই ধরফরিয়ে উঠে বসে।
“এতো বেলা হয়ে গেলো।
তারাহুরো করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। নয়টায় ইমপটেন্ট মিটিং আছে। সাড়ে আটটায় অফিসে পৌঁছাতে হবেই।
রান্না করতে হবে এখনো। আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিধির রুমের দিকে যায়।
আদি তো বাইরে থেকে কিনে খেতেও পারবে কিন্তু নিধি?
এখনো নিধির রুমের দরজা বন্ধ।
” এই দরজা খুলো। শুনছো?
দরজায় কড়া নারতে নারতে বলে আদি।
নিধি ওয়াশরুমে ছিলো তাই শুনতে পায় না।
আদি বিরক্তি নিয়ে রান্না ঘরে যায়। ভাতের চাল চুলায় বসিয়ে দিয়ে ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে। সাতটা পঁয়তাল্লিশ বাজে।
নিধি ফ্রেশ হয়ে বের হয়। রান্না ঘরে যেতেই আদি বলে ওঠে।
“তুমি ভাত রান্না আর ডিম ভাজি করতে পারো?
নিধি ছোট করে বলে
” হুমম
“গুড
তাহলে ভাতটা রান্না করে খেয়ে নিও। আমার ইমপটেন্ট মিটিং আছে। আমি গেলাম। দুপুরে খাবার আমি কিনে আনবো।
বলে আদি এক মিনিট দেরি না করে চলে যায়। নিধি আগে কখনো রান্না করে নি। ভাত কখন হয় কিভাবে বুঝতে হয় কিছুই জানে না? তবুও সাহস করে যায়্ কোনোরকমে ভাতটা নামিয়ে ডিম ভাজি করার জন্য তেল দেয়। তাতে ডিম দিতে যেতেই তেল এসে পড়ে নিধির হাতে। অনেকটা জায়গা পুরে যায়। নিধি দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সয্য করে নেয়।

না খেয়েই নিধি বেলকনিতে বসে আছে। এক হাতে বই। আরেক হাত রেলিং এর ওপর রাখা। যে হাতটা পুরে গেছে। আজ আর স্কুলে যায় নি। সারাদিন একা একা রুমে কি করবে? ভাবছে নিধি।
একদিক সেদিন চোখ ফেরাতেই দেখতে পায় বেলকনির বাম পাশে বেলি ফুলের টবের মধ্যে একটা পিস্তল রাখা৷ যায় ধরার অংশ টিস্যু দিয়ে মোরানো।
নিধি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে দুই পা পিছিয়ে যায়।
” এটা এখানে?
বেলকনির দরজা বন্ধ করে রুমে চলে যায় নিধি। এখনো বুকের মধ্যে ধুকধুক করছে।

আদি দরজা সামনে এসে দেখে ভেতর থেকে লক করা।
“কি বেপার ইডিয়েট স্কুলে যায় নি?
ভেতরে ঢুকে নিজের রুমে চলে আসে আদি। নিধিকে বিছানায় কাচুমাচু হয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে আদি।
” কি হয়েছে?
বলে আদি। নিধি আদির কন্ঠ শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে এক দৌড়ে গিয়ে আদিকে জাপটে জড়িয়ে ধরে। আদি ভরকে যায়। আদির বুকের কাছে মুখ গুঁজে নিধি কাঁদছে। আর হাত দুটো আদির পিঠ আকড়ে ধরে আছে।
“বলবা তো কি হয়েছে?
আদি নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
এখন কেনো জানি মেয়েটাকে বিরক্ত লাগছে না। বুকের ভেতর শিতল অনুভব করছে আদি। মনে হচ্ছে কেউ জলন্ত উনুনে বরফ দিয়েছে।
নিধি আদির হাতটা নিধির পিঠে দিয়ে দেয়। আদি পিঠে হাত রাখে।
“শান্ত হও। আর বলো।
নিধির চোখের পানিতে আদির শার্টের কিছু অংশ ভিজে গেছে।
নিধি কেঁদেই যাচ্ছে। আদি আর কিছু বলে না। অপেক্ষা করে নিধি শান্ত হওয়ার।
কিছুখন কাঁদার পরে নিধি কান্না থামায়। আদির বুক থেকে মাথা উঠায়। এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে।
” সরি
অস্ফুরণ কন্ঠে বলে নিধি চলে যেতে নেয়।
আদি নিধির হাত ধরে আর নিধি আহহ করে ওঠে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে। আদি হকচকিয়ে গিয়ে নিধির হাত ছেড়ে দেয়।
“কি হয়েছে?
নিধির হাতটা আলতো করে ধরে সামনে আনে। হাতটা পুরে গেছে।
” আমারই বোঝা উচিৎ ছিলো বাচ্চা মেয়ে কি করে রান্না করবে? একবার বলতা আমি রান্না পারি না।
মাথায় হাত ঘসে বলে আদি। নিধি চুপ করে আছে। আদি নিধিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়। পাঁচ মিনিট পরে একটা মলম নিয়ে এসে নিধির সামনে হাঁটু মুরে বসে। এক হাতের ওপর নিধির পোরা হাতটা রাখে। আরেক হাতে মলম নিয়ে
খুব যত্ন সহকারে নিধির হাতে মলমটা লাগিয়ে দেয়।
“আআমি এখানে থাকবে না।
নিধি বলে।
আদি নিধির হাতে ফু দিয়ে বলে
” কারণ
“এখানে একা থাকতে ভয় করে।
ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে নিধি।
” এখানে বাঘ আছে না কি ভাল্লুক?
নিধি আর কিছু বলে না। আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে।
“জামাকাপড় প্যাক করে নাও।
আদির বলতে দেরি কিন্তু নিধির যেতে দেরি নেই৷ তারাহুরো করে জামাকাপড় গুছিয়ে নেয়। আদি ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় পাল্টে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নেয়।
নিধি আদির আগে আগে বের হয়। একদম গেটের কাছে এসে দাঁড়ায়। আদি পেছন পেছন ফোন দেখতে দেখতে আসছে।
আদি গাড়ি ডাইভ করা শুরু করে।
” এতো ভয় পেয়ে ছিলে কেনো? কিছু দেখেছো?
আদি বলে।
“আপনার বেলকনিতে পিস্তল ছিলো। আপনি যে গুন্ডা মাস্তান সে বিষয়ে আমি ১০০%নিশ্চিত৷ তারওপর আবার আমাকে পছন্দ করেন না। তাই চলে আসলাম। বলা তো যায় না যদি আমাকে মেরে গুম করে দেন।
এক নাগারে কথাগুলো বলে নিধি।
” আর কিছু দেখো নি? আদি বেশ উৎসাহ নিয়ে বলে।
“আর কি দেখবো?
নিধি পাল্টা প্রশ্ন করে।
নিধির উওর শুনে আদি জোরে শ্বাস নেয়। মনে হয় এতোখন দম আটকে ছিলো।
নিধি আদির মন পড়তে ব্যর্থ হয়ে বাইরের দিকে তাকায়।

আদিদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে। নিধি চটজলদি নেমে যায়।
” ইডিয়েট আস্তে যাও
নিধি লাফাতে লাফাতে যেতে গিয়ে বাড়ির সামনে জমে থাকা কাঁদায় পড়ে যায়। বেশ ব্যথা পায় কোমরে। পুরো শরীর কাদায় মাখামাখি।
আদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
“মানুষ হইবা না? বললাম আস্তে যেতে। স্টুপিট একটা
নিধি ঠোঁট উল্টে আদির দিকে তাকায়।
” একটু হেল্প করেন প্লিজ
নিধির হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলে।
“সিরিয়াসলি আমি তোমার এই কাদামাখা হাত ধরবো? পড়ছো একা উঠবাও একা
বলে আদি নিধির ব্যাগ আর নিজের ব্যাগ নিয়ে চলে যায়। নিধি দাঁত কটমট করে।
” এই কাঁদায় যদি আপনাকে না চুবিয়েছি তো আমার নামও নিধিরা নিধি নয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here