শুধু তুই ৩ পর্ব -১১+১২

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১১
#Tanisha Sultana

পড়ন্ত বিকেলে বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ে চুল ছেড়ে বসে আছে নিধি। নীল শাড়ি খোলা চুল চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে সে। ঘাসের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নিধির চুল গুলো। পুকুরের মাঝখানে শাপলা ফুলের দিকে নজর তার।
এই বাড়িতে এসেছে সকাল বেলা। আদি নিধিকে দিয়ে অফিসে চলে গেছে। নিধি জানেও না আদৌ আদি আর এখানে আসবে কি না? তবুও সেজেছে। যদি আদি এসে দেখে নিধিকে। যদি মনের কোথাও একটা জায়গা দেয় নিধিকে। সেই আশায়।
শাশুড়ী নিধির সাথে ভালো করে কথা বলে না। আদির মতোই গম্ভীর আর রাগী তিনি। পান থেকে চুন খসলেই মেজাজ দেখায়।

একটু পরেই মাগরিবের আজান দেবে। পশ্চিম আকাশের এক কোন লাল হয়ে গেছে। হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইছে।
“আমি কি খুব বড় ভুল করেছি? আমার কি ওনাকে ভালোবাসাটা উচিৎ হয় নি?
ভাবতে থাকে নিধি। কোনোদিনও কি আমার জীবনের মোরটা ঘুরবে না? আমি কি কখনোই ওনার ভালোবাসা পাবো না?

” তুমি এখানে কেনো?
কর্কশ গলায় পেছন থেকে বলে ওঠে আদি। নিধি চমকে ওঠে। চোখের কোনে পানি জমে ছিলো যেটা হাতের উল্টো পিঠে মুছে একটু হাসার চেষ্টা করে উঠে দাঁড়ায়। আদির দিকে তাকায়।
“তুমি যতই সেজেগুজে থাকো আমি তোমাকে সাথে করে নিচ্ছি না। ইভা বললো আর ওমনি সেজেগুজে রেডি হলে?
আদির কথার মানে নিধি বোঝে না।
আদি নিধির হাত ধরে টান দিয়ে নিধিকে কাছে নিয়ে আসে।
” কি পেয়েছো হ্যাঁ? যাচ্ছো না তুমি। কাঠকাঠ বলে দেয় আদি।
নিধি আদির হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। দুইপা পিছিয়ে আসে

“আমি যাবে। আপনার কি? সব সময় রাগ দেখালে আমি আপনাকে ভয় পাবো এমনটা ভাববেন না। আর আমার সাজার জন্য কোনো রিজন লাগে না। ইচ্ছে হলেই সাজি। পার্টিতে যাওয়ার জন্য এই সাজটা না।
বলে চলে যায় নিধি। ভেতরে চাপা একটা অভিমান হয়।
” ইডিয়েট একটা
আদি বিয়ে করেছে এটা অফিসের সবার কাছে বলে দিয়েছে ইভা। সবাই আদির বউ দেখতে চাইছে। এই জন্য আদি রেগে আছে। আজকে পার্টিতে বউ নিয়ে যেতে বলেছে আর ইভা বলেছে ও নিধিকে নিয়ে যাবে তাতে আরও রেগে গেছে আদি।

আদির রুমের বেলকনির দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে বই হাতে বসে আছে নিধি। দরজা বন্ধ করে দিয়েছে যাতে আদি এখানে আসতে না পারে।
আদি রুমে এসে অফিসের ব্যাগটা নামায়। ড্রেস চেঞ্জ না করেই খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে।
ক্লান্ত লাগছে ভীষণ।
চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেয়। কোথাও নিধি নেই। বেলকনির দিকে তাকাতেই দেখে বেলকনির দরজা বন্ধ। তারমানে ওখানেই আছে।
” বাবু
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে আদির মা।
আদি বিরক্তিতে চোখ কুচকায়।
“ভেতরে আসবো? সংকোচ বোধ করে বলে উনি।
আদি চোখ বন্ধ রেখেই ” হুম” বলে।
উনি খুশি হয়ে ভেতরে ঢুকে। আদির পাশে বসে।
“বাবু মাকে হ্মমা করে দেওয়া যায় না?
অনুনয়ের সুরে বলে।
” আমি তো জেনে শুনে করি নি বল। জুঁই মেয়েটা সত্যিই খুব খারা
ওনার কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি উঠে বসে। চোখে মুখে আগুন ঝড়ছে।
“আপনি আপনার ওপর রেগে নেই।
উণি একটু হাসে।
” তুই এখন থেকে এখানেই থাকবি তো বল?
“হুমমম
বলে আদি ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। আদির মা ভীষণ খুশি হয়। এবার হয়ত ওনার ছেলে আবার আগের মতো হাসিখুশি হয়ে যাবে।

হুরমুর করে ইভা আদির রুমে ঢুকে।
” নিধি আদি কোথায় তোরা?
ইভার গলা পেয়ে নিধি বেলকনির দরজা খুলে রুমে আসে। আদি ওয়াশরুমে।
ইভা নিধিকে দেখে খুশিতে গদগদ করতে করতে নিধির কাছে যায়।
“নিধি তারাতাড়ি রেডি হও। যেতে হবে তো। কতো বড় অনুষ্ঠান। আমাকে কেমন দেখাচ্ছে? পাক্কা তিন ঘন্টা ধরে সেজেছি।
নিধি হেসে ফেলে। নিধির ইভাকে বেশ লাগে। কতো মিশুক।
” খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
“এবার তেমাকেও সুন্দর করে সাজাতে হবে।
” আপু আমি যাবো না।
“কেনো এক্সকিউজ নয়।
ইভা এক প্রকার জোর করে নিধিকে কালো জর্জেট একটা শাড়ি পড়িয়ে দেয়। একদম পাতলা শাড়িটা। ব্লাউজের পেছনে জাস্ট দুইটা ফিতা দেওয়া। যার ফলে পুরো পিঠটাই বের হয়ে আছে।
ইভা নিধিকে আয়নার সামনে বসিয়ে সাজাচ্ছে।
” আপু শাড়িটা চেঞ্জ করি। সবই তো দেখা যাচ্ছে।
মিনমিনিয়ে বলে নিধি
“পার্টিতে সবাই এরকম শাড়িই পড়ে।

আদি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এক পলক তাকায় ওদের দিকে।নিধির দিকে ভালো করে তাকায় নি।
আদি সাদা শার্ট আর কালো ব্লেজার নিয়ে রুমে থেকে চলে যায়।
ইভা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় নিধিকে।
” আদি আজ তোমার থেকে চোখই ফেরাতে পারবে না।
বলেই হেসে ফেলে ইভা।নিধিও একটু হাসে।

আদি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা নিধি আর ইভা আসার। ইভা সাজারটা কথা বলছে্ আর নিধি শুনছে। কথা শুনতে শুনতে আদির গাড়ির কাছে চলে আসে। আদি এবার নিধির দিকে তাকায়৷ চোখ আটকে যায় আদির। পিচ্চি মেয়েটাকে আজকে বড় বড় লাগছে। কালো শাড়িতে বেশ মানিয়েছে। পেটের দিকে চোখ পড়তেই আদির গলা শুকিয়ে আসে।সাথে বেশ রাগ হয়। ইভা আর নিধি পেছনে বসে পড়ে। আদি রাগে ফুসতে ফুসতে ডাইভিং সিটে বসে ডাইভ করতে থাকে।
“ইভা ওকে এরকম শাড়ি কেনো পড়িয়েছিস?
রাগী কন্ঠে বলে আদি।
” তোর পবলেম কি?
“ইডিয়েট একটা। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা চর মারি। গাড়ির আয়না দিয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে বলে আদি। নিধি ভেংচি কাটে। যাতে আদির রাগ আরও বেরে যায়।

নিধি আর আদি আগে যে বিল্ডিং এ থাকতো সেই বিল্ডিং এর সামনে এসে গাড়ি থামায় আদি। পুরো বিল্ডিংটাই লাল নীল মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। ওরা নেমে পড়ে।
ইভা আগে আগে চলে যায়। নিধি শাড়ি নিয়ে হাঁটতে পারছে না। তারওপর পাহাড় সমান উঁচু জুতো পড়েছে।
আদি পেছনে তাকিয়ে পিছিয়ে আসে।
” হাত ধরো
নিধির দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বলে। নিধি খুশি হয়ে হাতটা জড়িয়ে ধরে।
“আজ শাড়ি পড়েছি উঁচু জুতো পড়েছি। তাই আপনি ৭০% ইমপ্রেস হয়ে গেছেন। আমাকে বড় বড় দেখাচ্ছে তাই আপনি আস্তে আস্তে ফ্রী হচ্ছেন। এতেদিন পিচ্চি দেখাতো তাই ইগনোর করতেন। তাই না?
নিধি বলে।
” রং
এখানে উস্টা খেয়ে পড়ে একটা সিনক্রিয়েট করতে তাই হাত ধরেছি। এটাতে ভালোবাসা টালোবাসা নাই।
“ছোট দেখতে পারি। কিন্তু আমার মধ্যে ভালোবাসাটা বড়দের মতো আছেই। বড়দের থেকেও বেশি ভালো বুঝি আমি ভালোবাসা সম্পর্কে।
” তা তো বুঝবেই। কটা না তুমি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি।
“কটা না। নিরামিষ আদির বউ
এক গাল হেসে বলে নিধি। আদি কিছু বলার জন্য হা করে কিন্তু নিধির হাসি দেখে বলতে পারে না। হাঁটতে ধরে হাঁটতে থাকে।

” আদি এই মেয়েটা কে? তুমি এর হাত কেনো ধরেছো?
হাঁটু ওবদি ড্রেস পড়া সুন্দর একটা মেয়ে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে। আদি সাথে সাথে নিধির হাতটা ছেড়ে দেয়।
“কে ও? হাত ধরে কেনো ঘুরছো?
চোয়াল শক্ত করে বলে মেয়েটা।
” জুঁই তুমি এখানে? “এখানে না আসলে তো জানতেই পারতাম না আদিল চৌধুরী হাঁটুর বয়সী একটা মেয়ের হাত ধরে ঘুরছে। ছি লজ্জা থাকা উচিৎ।
মেয়েটা তেঁতে উঠে বলে।
নিধি এবার আর চুপ থাকতে পারে না।
“এই যে বাঁদরের রানী আমার বরকে এভাবে বলছেন কেনো? ও আমার বর হয়। আর বর তে বউয়ের হাত ধরতেই পারে। তাতে আপনার কোথায় ফোসকা পড়ছে হুম?
নিধি কোমরে হাত দিয়ে বলে।
” এই মেয়েটা তোমার বউ? মেয়েটা অবাক হয়ে বলে।
“তোমার চয়েস এখন এতোটা নিচে নেমে গেছে। ওহহহ গড
লাস্ট মুহুর্তে একটা পিচ্চি। আদি এই দিনটাও দেখতে হলো।
মেয়েটা তাচ্ছিল্য করে বলে।#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১২
#Tanisha Sultana

আদি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। নিধি আদির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। নিধি হাত দুটো মুঠো করে আছে।
“আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে?
নিধি আদির দিকে একটু ঝুঁকে বলে।
” ঠিক আছি
চুল টেনে বলে আদি।
ইভা আসে
“নিধি আমার উনি এসেছে বুঝলে। তুমি আদির সাথে থাকো। আমি ওর সাথে একটু আড্ডা দেই। কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকো।
নিধি মাথা নেরে সম্মতি দেয়।
নিধির বোরিং লাগছে। এরকম একটা পার্টিতে এসে চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েরা কি সুন্দর বফ হাজবেন্ডের সাথে ডান্স করছে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে।
নিধি আদির পাশে বসে। আদির চুলে হাত দেয়। আদি নিধির দিকে এক পলক তাকায়
” কি?
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“কিছু না
নিধি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে।
” ইডিয়েট তুমি? ইভা বললো আর এটকম একটা শাড়ি পড়ে নিলে। চারপাশে তাকিয়ে দেখো সবাই কিরকম তাকিয়ে আছে। কেউ বাজে কমেন্ট করলে বুঝো? কেমন?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি। নিধি শাড়ির আচলটা টেনে নেয়।
“জুস খাবেন? ভালো লাগবে। এনে দেই।
” নো নিড
কপাল ঘসতে ঘসতে বলে আদি।
“বাট আমার তো আপনাকে প্রয়োজন।
বিরবির করে বলে নিধি।
” কিছু বললে? আদি জিজ্ঞেস করে।
“নাহহহ তো। মেকি হেসে বলে নিধি।

জুঁই আর জুঁইয়ের কিছু ফ্রেন্ডরা হাসাহাসি করছে। আদি নিধির দিকে এগিয়ে আসে।
“দেশে কি মেয়ের অভাব পড়ছিলো না কি মিস্টার আদি? একটা মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে নিলেন।
একটামেয়ে বলে।
” না কি জুঁইয়ের শোকে এমনটা করলেন?
বলেই আবার হাসা শুরু করে। জুঁইও হাসছে।
“তবে তোর বউটা কিন্তু জোশ। কি ফিগার। জাস্ট ফাটাফাটি।
একটা ছেলে বলে।
আদি ছেলেটার দিকে তাকায়। কিন্তু কিছু বলে না।
জুঁই আদির মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।
আদিও দাঁড়ায়।
” তো মিস্টার আদি তুমি না বলতে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাতেই শুরু তোমাতেই শেষ। মারাক্তক ভালোবাসেন। সারাজীবন ওয়েট আমার জন্য। প্রমিজও করেছো। এখন কোথায় গেলো তোমার সেই প্রমিজ। সেই ভালোবাসা নামক নেকামি। যখনই বাচ্চা একটা মেয়ে পেয়ে গেলে বিয়ে করে নিলে। লজ্জা থাকা উচিৎ। রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে জুঁই। নিধি চোয়াল শক্ত করে।
“মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছো।
নিধি এবার আর চুপ থাকতে পারলো না।
” আপু আপনার বাবা কি ১২ বছরের বিয়ে করেছিলো? বা আপনার ভাই বা রিলেটিভ কেউ কি ১২-১৩-১৪ বছরে বিয়ে করেছে?
আমার বাবা আমার থেকে সাতাইশ বছরের বড়। আমার শশুড় মশাইও সেম। আপনাদের বাবা মেবি আপনাদের থেকে ১২ বছরের বড়।
নিধির কথায় জুঁই চোয়াল শক্ত করে।
“সাট আপ
ধমক দিয়ে বলে।
” ইউ সাট আপ।
পিচ্চি হতে পারি কিন্তু আপনাদের মতো মাথা মোটা না। বুঝে শুনে কথা বলতে পারি। বিয়েটা কখনো সমানে সমানে হয় না। ছেলেরা মেয়েদের থেকে বড় হয়। আপনার মা মেবি আপনার বাবার থেকে বড় তাই আপনি এটা জানেন না।
জুঁই রাগে গিজগিজ করে তাকায়।
“আদি তোমার বউয়ের সাহস হয় কি করে আমার সাথে এভাবে কথা বলার? আদির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে জুঁই।
” নিধি হচ্ছে টা কি? আদি উঠে দাঁড়িয়ে নিধির হাত ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“তোমার বউকে বলে দিও আমার সাথে কেউ মাথা উঁচু করে কথা বলে না। তুমিও না। জুঁই বলে।

নিধি আহত দৃষ্টিতে তাকায় আদির দিকে।
“আপনি দেখতে পাচ্ছেন না কি হচ্ছে? ওরা কিভাবে বলছে। ইনসাল্ট করছে আমাকে। শুনছেন না?
নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি ধমকে বলে ওঠে
” মুখে মুখে তর্ক করলে এক চর দেবে।
পুরো রুমটা কেঁপে ওঠে।নিধি ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।
ইভা দৌড়ে আসে।
“আদি ওকে বকছিস কেনো?
আদি কিছু বলে না।জুঁই তৃপ্তির হাসি হাসে। ইভা নিধিকে শান্তনা দিতে যায়।
” আমার সান্ত্বনার দরজার থেকে সাপোর্টের দরকার।
“আপনি আমাকে বকলেন? আই হেট ইউ। আর কখনো কথা বলবো না আপনার সাথে। একটু ভালোবাসি বলে পিছু পিছু ঘুরি বলে সব সময় বকা দেন। কখনো কথা বলবো না।
বলেই নিধি দৌড়ে বেরিয়ে যায়। ইভা নিধির পেছন পেছন যায়।
জুঁই আদির সামনে এসে দাঁড়ায়।
“ভালোই। প্রেম করলে সুন্দরী শিহ্মিত স্মার্ট মেয়ের সাথে। আর বিয়ে করলে অশিক্ষিত পিচ্চিকে। বাহহ তাও আবার নেকামিতে সেরা। তাচ্ছিল্য করে বলে জুঁই।
” তোমাকে এখনও খুব ভালোবাসি তাই তোমার অপছন্দের সব কিছু আমি সরিয়ে দেই। কিন্তু যেদিন তুমি আমার মন থেকে বেরিয়ে যাবে সেদিনই শুরু হবে তোমার দুঃখের দিন।
তোমাকে বারবার বলছি কাউকে এতোটাও আঘাত দিও না যাতে সে মন থেকে তোমাকে অভিশাপ দেয়।
আঙুল তুলে বলে আদি।
আদিও বেরিয়ে আসে।

নিধি ফাঁকা রাস্তায় দৌড়াচ্ছে। জুতো খুলে ফেলে দিছে। শব্দ করে কান্না করছে। রাত দশটা বেজে গেছে। রাস্তা ঘাটে গাড়ি নেই বললেই চলে। দোকানপাট গুলো খোলা আছে এখনো।
কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তাও জানে না নিধি। শুধু এটুকু জানে ও এখানে থাকবে না। ওকে অপমান করা হয়েছে। নিধি ছোট হলেও মান অপমান বোধটা ওর খুব বেশি। ওকে সামান্য কিছু বললেও ওর কষ্ট হয়। কারো কথা সয্য হয় না নিধির। ও যাকে ভালোবাসে তার থেকে অবহেলা মেনে নিতে পারে না। তবুও আদির অবহেলা মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু সবার সামনে বকা দেওয়াটা মেনে নিতে পারছে না।

ইভা কিছুটা দৌড়ে আসছিলো নিধির পেছনে দাঁড়িয়ে গেছে। আদি গাড়িতে গিয়ে বসে। ইভা আদির দিকে আসে।
“আদি কি করলি তুই এটা?
নিধি তো ভুল কিছু বলে নি।
আদি গাড়ির ছিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে।
” আমাকে একটু একা ছেড়ে দে।
“নিধি কোথায় গেছে জানি না। ইভা বলে ওঠে।
আদি ধপ করে চোখ খুলে।
” মানে?
“দৌড়াতে দৌড়া এই রাস্তা দিয়ে চলে গেছে।
” ইডিয়েট
আদি চোখ মুখ কুঁচকে বলে। গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে চলে যায়।

নিধি দৌড়াতে দৌড়াতে আদির বাবার গাড়ির সামনে গিয়ে পড়ে। হাতে বেশ ব্যাথা পায়। আদির বাবা তারাহুরো করে বেরিয়ে আসে।
“নিধিমা তুমি এখানে?
বিচলিত হয়ে নিধির পাশে বসে বলে। নিঅি হাত ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
” হাতে ব্যাথা পেয়েছিস? দেখা আমাকে
আদির বাবা নিধিকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আদি পুরো রাস্তা খুঁজে নিধিকে পায় না। ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
“কোথায় গেলো ও? কিছু হয় নি তো ওর? মনে মনে ভাবে আদি।
আদির ফোনটা বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে। জিসান নামটা স্কিনে ভেসে ওঠে। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে নেয়।
” বল
“নিধি হাসপাতালে
” কি হয়েছে?
“জানি না। চলে আয়।
আদি আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

হাতের ব্যাথাটা বেশ গাড় ছিলো। ভাঙে নি। কিন্তু মোচকে গেছে। নিধি এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। চোখ মুখ ফুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। নিধির পাশে আদির বাবা মা আর জিসান বসে আছে। এক ঘন্টা যাবৎ কান্নার কারণ জানতে চাইছে কিন্তু নিধি বলছেই না।
” আআমি বাবার কাছে যাবো।
হেঁচকি তুলে বলে নিধি।
“ঠিক আছে যাবি। কিন্তু বলবি তো কি হয়েছে?
আদির বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে। নিধি বলে না।

একটু পরেই আদি চলে আসে।
” তোমরা যাও আমি ওকে নিয়ে আসছি।
আদি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
আদিকে দেখে নিধি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“পারবা তো?
বাবা জিজ্ঞেস করে।
” হুমম
ওরা চলে যায়। আদি নিধির পাশে গিয়ে বসে।
“ইডিয়েট স্টুপিট ওভাবে দৌড়ে আসছিলা কেনো? চোখে দেখো না তুমি? প্রতিবন্ধী না কি তুমি?
ধমক দিয়ে বলে আদি।
নিধি নিজে নিজে নামতে যায়। শাড়িতে বেঁধে আবার পরে যেতে নেয়। আদি ধরে ফেলে।
” এই মেয়ে কি তুমি হ্যাঁ
মারাক্তক বিরক্ত হয়ে বলে আদি। নিধি আদির হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। ব্যাথা পাওয়া হাতটা উঁচু করতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে নিধি। তবুও হাঁটতে থাকে।
“এটা কে হ্যাঁ
আদিও নিধির পেছনে পেছনে যায়। নিধি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। রাত এগারোটা বেজে গেছে। রাস্তা ঘাট শূন্য। আদি গাড়িতে বসে গাড়িটা নিধির সামনে নিয়ে আসে।
দরজা খুলে দেয়।
” বসো
নিধি না বসে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে।
“আমাকে পাগল করে দেবো।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নামে। নিধির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” ভালো ভাবে কথা বলছি কানে যাচ্ছে না?
কোমরে হাত দিয়ে বলে। নিধি পাত্তা না দিয়ে যেতে নেয়। আদির এবার বিরক্তির চরম শিখরে পৌঁছে যায়। আচমকা নিধিকে কোলে তুলে নেয়। নিধি চমকায় তবুও কিছু বলে না। নিধি গাড়িতে বসিয়ে নিজেও উঠে বসে। নিধি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।

আদি হঠাৎ নিধির কাছে চলে যায়। গাড়ির সিটের দুই পাশে হাত রেখে নিধির মুখের দিকে মুখটা এগিয়ে নেয়। নিধি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। আদি এক পলক তাকায় সেদিকে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। যার পুরো বাতাসটা নিধির চোখে মুখে আচড়ে পড়ে। মোচকানো হাতটা দিয়ে শাড়ি মুঠো করে ধরতে গেলে আবারও ব্যাথা পায়। “আহহহহ” করে ওঠে।
আদি সেদিকে তাকায়
“ইডিয়েট
পিচ্চি

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here