শুধু তুই ৩ পর্ব -১৩+১৪

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৩
#Tanisha Sultana

চোখে মুখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আদি বসে আছে নিধির মুখোমুখি। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লালা হয়ে গেছে। চোখের পাপড়ি গুলো ভিজে গেছে। চোখ ফুলে গেছে। কাজল লেপ্টে গেছে চোখের চারপাশে। গোছালো চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। লিপস্টিক মুছে গেছে।
“মা সকালে দিয়ে আসবো তোকে।
হাই তুলে বলে আদির বাবা।
আদির মা চরম বিরক্তি হয়ে বসে আছে। জিসান নিধির পাশে বসে ঝিমচ্ছে।
নিধি সেই তখন থেকে জেদ ধরে আছে ও বাড়ি যাবে। কিছুতেই থাকবে না এখানে।
রাত একটা বেজে গেছে। এতো রাতে কি করে নিয়ে যাবে ওকে?
আদি চুপচাপ নিধির সামনাসামনি বসে আছে। এতোখন কিছুই বলে নি। বাবা এখানে আছেন। উনি কি বলে দেখার জন্য।
” আমি এখনই যাবো। থাকবোই না এখানে।
নিধি বাম হাতটা দিয়ে চোখ মুছে হেঁচকি তুলে বলে।
“ফাইন
যাও দরজা তো খোলাই আছে।
কপালে হাত ঘসতে ঘসতে বলে আদি।
নিধির রাগ বেরে যায়। সত্যিই তো দরজা খোলা আছে। ও তো একাই যেতে পারে। এখানে কেউ ওর আপন নয়। কেউ ভালোবাসে না ওকে। কেউ ভাবে না ওর জন্য।
কিসের আশায় বসে আছে? কেউ দিয়ে আসবে ওকে? এই আশায়?
নিধি ব্যাথা পাওয়া হাতটা ধরে আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়।
” নিধি এতো রাতে যেতে পারবে না। সকালেই তোমাকে দিয়ে আসবো আমি। প্রমিজ
শশুড় মশাই বলে।
নিধি ওনার কথার তোয়াক্কা না করে দরজার দিকে হাঁটা শুরু করে।
আদি কিছুটা চমকে যায়। নিধি সত্যি সত্যি চলে যাবে এটা ও ভাবতেও পারে নি। এই মেয়ে এতো জেদি কেনো?
আদির বাবা এগোচ্ছে না। কারণ ওনার বিশ্বাস আদি আটকে দেবে নিধিকে।
“এই মেয়ে শশুড়ের কথা শুনতে পাচ্ছো না?
কর্কশ গলায় বলে আদির মা। নিধি পেছন ফিরে তাকায় না।
জিসান এক লাফে উঠে বসে। এক দৌড়ে নিধির কাছে যায়। নিধির হাত ধরে
” চল আমি আর তুই এই বাড়ির উঠোনে বসে গল্প করি। তারপর সকাল বেলা তোকে দিয়ে আসবো। আমিও চায় না তুই এখানে থাক।
আদির দিকে তাকিয়ে বলে জিসান। নিধি জিসানের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে যায়। জিসান শক্ত করে ধরে।
“আমি তো তোর বেষ্টু। আমার কথা শুনবি না?
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে জিসান।
” জিসান তুই ঘুমতে যা। আর ড্রামা কুইন আমরা ঘুমবো এখন। সিনক্রিয়েট না করে রুমে যাও।
আদি উঠে দাঁড়িয়ে বলে।
জিসান আর নিধি আদির কথায় পাত্তা দেয় না।
আদি ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিধির হাতটা জিসানের হাত থেকে ছাড়িয়ে দেয়। আদি হাতটা শক্ত করে ধরে।
“মানুষ যে এতো ড্রামা কি করে করে? ওহহ গড
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে। নিধি হাত টেনে নিয়ে যেতে নেয়। নিধি হাঁটে না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কথা বলবেই না আদির সাথে। তাই কিছু বলছে না। নাহলে অনেক কিছু বলতো।
আদি নিধির দিকে তাকায়। বাবা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে চট করে কোলে তুলে নেয় নিধি। বাবা মা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তারাতাড়ি করে চলে যায়। জিসান ছিটি বাজাতে বাজাতে চলে যায়।
নিধি এখন আর চুপ থাকে না। বা হাত দিয়েই আদির বুকে কয়েকটা কিল দেয়৷ আদি কিছুই বলে না। রুমে নিয়ে যায় নিধিকে।
এখন শব্দ করে কাঁদছে নিধি। কেনো বকলো আদি ওকে?
আদি নিধিকে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। উঠে আসতে গিয়েও উঠে না। নিধির দুইপাশ দিয়ে বিছানায় হাত রেখে নিধির দিকে একটু ঝুকে। আপনাআপনি নিধির কান্না বন্ধ হয়ে চোখ বড়বড় হয়ে যায়।
” আমার ওমনটা করা ঠিক হয় নি। মাথা ঠিক ছিলো না।
ফিসফিস করে বলে আদি। আদির এইরকম ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা নিধির শ্বাস বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট।
আদি নিধির চোখে লেপ্টে থাকা কাজল হাত দিয়ে মুখে দেয়।
“ছোট ছোট বিষয়গুলোতে কখনোই চোখের পানি ফেলতে নেই। চোখের পানির মূল্য অনেক।
বলে কপালে লেপ্টে থাকা চুল সরিয়ে দিয়ে উঠে যায় আদি। কাবাড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। নিধি এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে। চোখের পলকই পড়ছে না।

সকাল বেলা হাতের ব্যাথা আর প্রচন্ড জ্বরে নিধি কাতরাচ্ছে। ঠকঠক করে কাঁপছে। মোটা মোটা দুটো কম্বলও ওর শীত কমাতে পারছে না।
আদি বেলকনিতে মাদুর পেতে ঘুমিয়েছিলো। ইচ্ছে করে না। অফিসের কিছু কাজ ছিলো সেগুলো করতে করতে কখন চোখ লেগে গেছিলো বুঝতেই পারে নি।
সূর্যের আলো চোখ মুখ আচড়ে পড়তেই আদি জেগে যায়। ল্যাপটপ নিয়ে মাদুর গুটিয়ে রুমে এসে দেখে নিধি কাঁপছে।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ও জানতো এমনটাই হবে। আলমারি থেকে আরেকটা কোম্বল এনে ওটাও নিধির গায়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে যায় আদি। ফ্রেশ হয়ে এসে কিচেনে যায়। মা রান্না করছে।
” আমাকে ছুপ বানিয়ে দাও
আদি এক পাশে দাঁড়িয়ে বলে।
মা আদির দিকে তাকায়।
“তুই তো ছুপ খাস না বাবু।
” ওই মেয়েটার জ্বর হয়েছে। ওর জন্য।
বলেই আদি চলে আসে।
মা সুপ বানাতে থাকে।
আদি রুমে এসে নিধিকে ডাকে। নিধির জ্বর কমে গেছে। ঘেমে নেয়ে একাকার। নিধির জ্বর এমনই এই আসে এই যায়। লাথি দিয়ে কোম্বল ফেলে দেয়। ঘুমের রেস এখনো কাটে নি। যে শাড়ি পড়ে পার্টিতে গেছিলো সেই শাড়িটাই এখনো পরে আছে। রাতে চেঞ্জ করে নি। ওভাবেই ঘুমিয়েছিলো।
“এই উঠো
আদি নিধির বা হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে বলে। নিধি নরেচরে ওঠে। ডান হাতে একটু ব্যাথা পায়। চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।
আদির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। নিধির এইরকম চাহনি আদিকে ঘায়েল করে দিচ্ছে। কেমন যেনো মেয়েটাকে ভালো লাগতে শুরু করেছে। আদি এদিক সেদিক চোখ ফেরায়।
” ফ্রেশ হয়ে ঔষুধ খেয়ে নিলে ভালো হয়।
বলেই আদি রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিধি উঠে বসে। রাতের থেকেও হাতটা এখন আরও বেশি ব্যাথা হয়েছে।

কোনোরকমে এক হাত দিয়ে ফ্রেশ হয় নিধি। শাড়ি পাল্টাতে পারছে না। তাই ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কারো হেল্প দরকার। কিন্তু কার কাছে হেল্প চাইবে এটাই ভাবছে।

আদি রুমে পায়চারি করছে। নিধি বের হলে ও গোছল করবে। অফিস আছে। কিন্তু নিধিই তো বের হচ্ছে না।
“আর কতোখন?
দরজায় টোকা দিয়ে বলে আদি।
নিধি শাড়িটা কোনরকমে পেচিয়ে বেরিয়ে আসে। আজ আর চেঞ্জ করা হবে না।
নিধিকে এভাবে বের হতে দেখে আদি ভ্রু কুচকে তাকায়।
” তা এই শাড়িটা আর কতোদিন পরে থাকবে বলে ঠিক করেছো?
আদি বলে।
নিধি উওর না দিয়ে খাটে গিয়ে বসে। একেতে জ্বরের জন্য মুখ তেঁতো লাগছে। তারপর পেটে প্রচন্ড খিধে। তারওপর এই শাড়িটা। সব মিলিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।
“কথা কানে যাচ্ছে না? সিরিয়াসলি
তোমাকে একটা ধমক দেওয়াতে এতো ড্রামা দেখতে হবে জানলে ধমকই দিতাম না। ইডিয়েট একটা।
নিধি চোয়াল শক্ত করে দাঁত কটমট করে তাকায় আদির দিকে।
” আমাকে চোখ রাঙাচ্ছো? আদি এগিয়ে এসে বলে।
হেল্প করবে আমি?
নিধি মুখ ফিরিয়ে নেয়।
“হেল্প করবো না কি? কিছুটা চেচিয়ে বলে আদি।
নিধি চোখ মুখ কুঁচকে। আদিকে জাস্ট অসয্য লাগছে।
” ওঠো
নিধির দিকে হাত বারিয়ে বলে আদি।
নিধি তাকায়ও না ওই দিকে।
“বড্ড বার বেরেছো তুমি? ঠাটিয়ে একটা চর দিলে ঠিক হয়ে যাবা।
নিধি দাঁত কটমট করে উঠে দাঁড়ায়। রুম থেকে বেরিয়ে যেতো নেয়।
” এই মেয়ে কোথাও যাবে না। বড়দের কথা শুনতে হয়। জানো না তুমি?
নিধি দাঁড়িয়ে যায়। আদি কাবাড থেকে নিধির জন্য নীল রংয়ের একটা থ্রী পিছ বের করে আনে।
“এসো চেঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি
আদি থ্রী পিছের ভাজ খুলতে খুলতে বলে। নিধি কপালে দুটো ভাজ ফেলে তাকায় আদির দিকে। আদি কি করে ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেবে আদি?
” কথা কানে যাচ্ছে না? এদিকে এসো
তারা দিয়ে বলে আদি।
“আর হ্যাঁ দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসো
আদির কথায় নিধি চমকে ওঠে। এক হাত দিয়ে শাড়ি মুঠো করে ধরে।
” আমার কাছে না অফুরন্ত সময় নেই। ভীষণ বিজি মানুষ আমি। তোমার পেছনে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই নেই আমার। সো কুইক
নিধির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে আদি।
“এবার কি হবে? উনি কি করে? ছি ছি ছি এবার কি করবো আমি?
নিধি ঢোক গিলে মনে মনে বলে।
আদি নিধির শাড়িতে হাত দেয়। কাঁধের কাছের পিনটা খুলে দেয়। পেটে ঢেকে রাখা পিনটাও খুলে দেয়। নিধি চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আদি নিধির উন্মুক্ত পেটের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে।
#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৪
#Tanisha Sultana

“আমার শাড়িটা ছেড়ে দেওয়া হোক। আমি একাই পারবো।
নিধি জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে মিনমিনিয়ে বলে।
আদি নিধির পেটের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। নিধির কথা ওর কান ওবদি যায় না।
নিধি দুপা পিছিয়ে যায়। আদির হাতে ছিলো নিধির কুচি গুলো। নিধি সরে যাওয়াতে সব কুচি খুলে যায়। নিধি আদি দুজনই হকচকিয়ে যায়।
আদি উঠে দাঁড়ায়।
” স্টুপিট কোনো কান্ডবঙ্গান নেই তোমার? ইডিয়েট
নিধি চুপচাপ চোয়াল শক্ত করে। এই লোকটার সাথে কথা বলতেও কেমন লাগে নিধির। মানুষ এতোটা জঘন্য কি করে হয়।
আদি এগিয়ে এসে নিধির ব্লাউজের ফিতায় হাত দেয়।
“বললাম তো আমি পারবো
বেশ জোরে বলে নিধি।
” তো এতোখন করো নি কেনো? আদি পাল্টা প্রশ্ন করে।
“এই গোমড়া মুখোর সাথে কথা বলাই বেকার।
বিরবির করে বলে নিধি।
আর তখনই ইভা আসে
“নিধি গুড মর্ন
বলতে বলতে থেমে যায় ইভা। সাথে সাথে চোখ ঢেকে ফেলে।
” আমি কিছু দেখি নি। সত্যি। ইভা বলে
নিধি ছিটকে দুরে সরে যায়। আদি কিছুটা বিরক্ত হয়।
” তুই এখন
আদি জিজ্ঞেস করে
“সরি সরি ভেরি সরি
তোদের রোমান্টিক মোমেন্ট চলে আসলাম।
ইভা চোখ ঢেকে রেখেই বলে। নিধি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। এক হাত দিয়ে শাড়ি ঠিক করার চেষ্টা করছে।
” কি করতে এসেছিস বল? আদি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে।
ইভা আদির দিকে তাকায়।
“নিধিকে দেখতে আসছিলাম
আদি কিছু বলে না।
” ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। তোদের কাজ শেষ হলে আসবো। ঠোঁট চিপে হেসে বলে ইভা। বেরিয়ে যেতে নেয়।
“আআআপু
নিধি কিছুটা জোরেই বলে। ইভা দাঁড়িয়ে যায়।
” কিছু বলবে?
ইভা হাসি মুখে বলে।
“একটু হেল্প করবা?
” হুমম বলো
“আমি চাইছি তুমি আর আমি ছাড় এখানে আর কেউ থাকলে সে এখান থেকে চলে যাক।
নিধি কর্কশ গলায় বলে। ইভা ভ্রু কুচকে তাকায় নিধির দিকে।
” ইডিয়েট
দাঁত কটমট করে নিধির দিকে তাকিয়ে আদি রুম থেকে চলে যায়।
“আপু আমাকে একটু চেঞ্জ করিয়ে দেবে? অনুরোধের সুরে বলে নিধি
” বরকে এভাবে বললে কেনো? কোমরে হাত দিয়ে বলে ইভা।
“যে যেমন তার সাথে তেমনই বিহেব করতে হয়।
ইভা ফিক করে হেসে ফেলে।
” ঠিক বলেছো।
ইভানিধিকে চেঞ্জ করিয়ে দেয়। নিধির সাথে কিছুখন কথা বলে চলে যায়।
প্রচন্ড খিধেয় পেট ধরে বসে আছে নিধি। কেউ এদিকে আসছেও না। এখানে যে একটা মানুষ আছে তা হয়ত সবাই ভুলেই গেছে।
শশুড় মশাই আর জিসান বলেছিলো সকালে আমাকে বাড়ি দিয়ে আসবে এখন ওদেরও খোঁজ নেই। নিধির এবার কান্না পাচ্ছে। এই বিয়েটা না হলেই ভালো হতো।

সুপের বাটিটা হাতে নিয়ে আদি রুমে ঢুকে। নিধির পাশেউ বাটিটা নামায়।
“ইচ্ছে হলে খেয়ে নিও
বলেই আদি চলে যায়। নিধি বাটিটা ফেলে দেয়।
” ও কি কুকুর বেড়াল না কি? ইচ্ছে হলে খেয়ে নিও বলা হচ্ছে।
চোখ দুলো লালা হয়ে আছে নিধির। চোখে পানি টলমল করছে।
কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে আবারও আদি রুমে আসে।
ফ্লোরে বাটিটা পরে থাকতে দেখে রেগে যায়।
“এটা কি করলে তুমি?
রাগে গজগজ করতে করতে বলে আদি।
নিধি উওর না দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। এখন থেকে চলে যাবে এখন। এই লোকটার কাছে থাকতে নিধির বাঁধে। মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করে না।
আদি নিধির হাত ধরে।
” ভেবেছিলাম খাওয়ার পরে তোমাকে তোমার বাড়িতে দিয়ে আসবো। কিন্তু এখন আর এটা হচ্ছে না। তোমার আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না।
নিধিকে আদি মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বলে।
নিধি চুপচাপ শুনে। আদির সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই তাই কিছু বলে না। নাহলে নিধিও কথা শোনাতে পারে।
“শুনতে পাওনি কি বললাম?
নিধির দুই কাঁধে হাত রেখে বলে আদি।
নিধি দুই পা পিছিয়ে যায়।
” এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? কথা বলো?
নিধি আদিকে পেছনে ফিরে দাঁড়ায়। ধপ করে রাগ বেরো যায় আদির।
“কথা বলতে বলছি তোমায়।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি। নিধি আগের মতোই থাকে।
আদি রাগে গিজগিজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। খাবার টেবিলে সবাই আদি আর নিধির জন্য অপেক্ষা করছিলো। আদি কারো সাথে কথা না বলে প্লেটে ভাত বেরে আবার হনহনিয়ে চলে যায়।
নিধি ওভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আদি প্লেটটা বিছানায় নামিয়ে নিধিকে টেনে বসায়।
” খাও
নিধির মুখের সামনে ভাত ধরে বলে।
নিধি মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।
“খেতে বলছি
আবারও মুখের কাছে ভাত নিয়ে বলে আদি। নিধি এবারও নেয় না।
” খেতে তো তোমাকে হবেই
আদি নিধির মুখ চেপে ধরে ভাত মুখে দিয়ে দেয়। নিধি উপায় না পেয়ে গিলে ফেলে।
এভাবে সব গুলো ভাত খায়িয়ে দেয় আদি।
“আমার সামনে একদম এটিটিউট দেখাবা না।
বলে আদি প্লেট নিয়ে চলে যায়।
নিধি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ব্যাগ গুছায়। স্কুলে যেতে হবে।

আদি না খেয়েই অফিসে চলে যায়। নিধিকে খাওয়াতে গিয়ে নিজে খাওয়ার সময় পায় নি। অফিসের কাজের ভীষণ চাপ।

শাশুড়ী কাঠকাঠ গলায় বলে দেয় নিধি যেনো স্কুলে না যায়। গ্রাম থেকে আদির দাদিমা আর কাকাতো ভাই বোনেরা আসবে। নিধি আদির মায়ের সাথে রান্নায় হেল্প করতে গেছিলো কিন্তু উনি হাত লাগাতে দেয় নি।
জিসান স্কুলে গেছে। পুরো বাড়িটায় ফাঁকা ফাঁকা। নিধি ছাঁদে যায়। হাতের ব্যাথাটা বেশ খানিকটা কমেছে।

এই প্রথমবার নিধি আদিদের বাড়ির ছাদে এসেছে। বেশ কড়া রোদ এখনো। দুপুর গড়িয়ে সবে। ছাঁদের বা পাশে একটা আমগাছ দেখতে পায় নিধি। গাছটা একদম মাটি থেকে ছাঁদে উঠেছে। এক তালা বাড়ি এটা। অনেক অনেক আম আছে গাছে। কাচা আম। দেখেই নিধির জিভে পানি চলে আসে।
লঙ্কা গুড়োর সাথে লবন মিশিয়ে কাঁচা আম উফফফ। ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে নিধির।
এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে। শাশুড়ীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কাগজে মুরিয়ে লবন আর লঙ্কা গুড়ো নিয়ে আবার ছাঁদে যায়। সাথে একটা বই আর মোবাইলও নিয়ে যায়।

আম গাছটায় কয়েকটা আম বাঁধা। বাঁধা আম গুলো অনেক বড়বড়। নিধি আম গুলোর পিক তুলে। তারপর কিভাবে ছিড়ছে তারও পিক তুলে। ছাঁদের একপাশে বসে। আম খেতে থাকে। আর পিক গুলো ফেসবুকে পোস্ট দেয়।
চারটা আম খায় নিধি। দাঁত টকে গেছে। এবার আরাম করে গান শুনবে আর পড়বে।

আদি অফিসের কাজ শেষ করে একটু রিলাক্স করছে। কিছুদিন ফেসবুকে যাওয়া হয় না। ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকতেই দেখতে পায় নিধির আম খাওয়ার দৃশ্য। কয়েকদিন হলো নিধির রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছে।
আম গাছের বড়বড় আম গুলো আদিই বেধে রেখেছিলো আরও বড় হবে তাই।
সেই আদির প্রিয় আম গাছ থেকে আম ছিড়েছে। আদির প্রচন্ড রাগ হয়।
“খাওয়াচ্ছি তোমার আমি আম
বলেই আদি অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here