শুধু তুই ৩ পর্ব -১৫+১৬

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৫
#Tanisha Sultana

নিধি সবেমাত্র রুমে এসেছে। বই ফোন বিছানায় রেখে আয়নায় দাঁত দেখছে। ঠোঁটের এক কোনে আমের রস লেগে গেছে। সেখানটায় বেশ জ্বলছে নিধির। একটু ক্রিম নিয়ে লাগায় সেখানে। তারপর সেই না বিছানায় বসতে যাবে তখনই হুরমুর করে আদি রুমে ঢুকে।
“তুমি আমার আম কেনো খেয়েছো? রাগে গিজগিজ করে বলে আদি।
নিধি ভ্রু কুচকে তাকায়।
” চুপ করে আছো কেনো? চোর। আমার আম চুরি করে খেয়ে নিয়েছো।
বাঘের মতো গর্জন করে বলে আদি।
“আমি কারো আম খাই নি। আমি চোর না।
আমি আমার শশুড় বাড়ির গাছ থেকে আম খেয়েছি। ত্যারাভাবে বলে নিধি।
” যে আম গুলো খেয়েছো সেগুলো আমার।
“কোথাও লেখা দেখি নি। লিখা দেখলেও খেতাম।
মুখটা ঘুরিয়ে বলে নিধি।
আদি নিধির হাত ধরে বলে।
” খুব সাহস তোমার। কেনো খেলে আম?
“বেশ করেছি খেয়েছি। আরও খাবে। ইসসসস কাঁচা মিঠা আম। কি যে মজা। এখনো মুখে লেগে আছে। দেখেন?
নিধি হা করে দেখায়।
আদি নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে। মুখটা নিধির মুখের দিকে এগিয়ে দেয়।
” আপনি মেবি দাঁত ব্রাশ করেন না? গল্প উপন্যাস সিনেমায় দেখি হিরোরা হিরোইনদের কাছে আসলে কেমন ফিদা হয়ে যায়। লজ্জা পায়। নার্ভাস হয়ে যায়। আর আমি সিগারেটের গন্ধে মূর্ছা যাই।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে নিধি।
আদি দাঁত কটমট করে নিধিকে ছেড়ে দেয়।
“ইডিয়েট
আদি বলে।
” আগে ভাবতাম আমিই একমাত্র মানুষ যে ইংরেজি পারে না। এবার দেখি আপনিও ইংরেজিতে কাঁচা। খালি ইডিয়েট স্টুপিট আর ননসেন্স ছাড়া কিছুই পারেন না।
নিধি বলে।
“আর একটা কথা বললে না
আদি রেগে নিধির দিকে তেরে এসে বলে
” আপনার সাথে কথা বলতে আমারও ইচ্ছে করে না। নিজেকে ছোট ছোট মনে হয়। আপনিই আসেন আগ বারিয়ে কথা বলতে।
ভেংচি কেটে বলে নিধি।
আদি মাথায় হাত দিয়ে খাটে বসে।
“আম খেয়েছি বলে দুঃখে আবার সুইসাইড করিয়েন না। আপনি চাইলে আমি বমি করে আম বের করে দিতে পারি। এখনও হজম হয় নি। আর আমি ভালো করে চিবিয়েও খায় নি।
আদির পাশে বসে বলে নিধি। আদি আগুন চোখে নিধির দিকে তাকায়। নিধি ঢোক গিলে এক দৌড় দেয়। দরজা ওবদি গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।আদির দিকে তাকিয়ে দুই হাত কানে দিয়ে ভেংচি কাটে আদিকে। তারপর দাঁত কেলিয়ে চলে যায়।
” ডিজগাস্টিং
আদি বিরবির করে বলে।

নিধি দৌড়াতে দৌড়াতে শাশুড়ীর সাথে ধাক্কা খায়। শাশুড়ী দাঁত কটমট করে তাকায় নিধির দিকে। নিধি একটা ঢোক গিলে কাচুমাচু হয়ে বলে
“সরি আন্টি। আমি খেয়াল করি নি।
” বাঁদরের মতো লাফাচ্ছিলে কেনো?
“আপনার ছেলে বাঘের মতো তাকিয়ে ছিলো তাই।
নিধির উওরে শাশুড়ী নরেনরে দাঁড়ায়।
” শাড়ি পড়ো। আমার শাশুড়ী এইসব জামা পছন্দ করে না।
“ঠিক আছে।

শাশুড়ী রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। নিধি জিসানের রুমে যায়। জিসান গেমস খেলছিলো।
” দোস্ত
জিসান গেমস এ মগ্ম থেকেই বলে।
“বল
” আমার রুম থেকে আমার একটা ড্রেস এনে দিবি?
“তোর কি হাত নেই?
” আছে বাট আমার রুমে বাঘ আছে।
নিধি চমকে তাকায় নিধির দিকে।
“বাঘ?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
” তোর ভাই। আমাকে সামনে পেলে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। প্লিজ এনে দে।
“পাঁচ মিনিট পরে এনে দেবো।
আবার গেমস খেলায় মন দিয়ে বলে।
” নাহহহ এখনি
নিধির জোরাজুরিতে জিসান চলে যায়।

সন্ধার দিকে দাদিমা আর আদির দুইজন কাজিন চলে আসে। সৌরভ আর নিলা।
নিধি লাল রংয়ের একটা থ্রী পিছ পরেছে। দাদিমার পাশে বসে আছে। দাদিমা এটা ওটা অনেক প্রশ্ন করে। নিধি ভদ্র মেয়ের মতো সব গুলো প্রশ্নের উপর দেয়।

আদি বাড়িতে এসে মিনিট পাঁচেক পরেই বেরিয়ে যায়।
নিধি ইন্টারফিউ শেষ করে রুমে যেতে নেয় তখনই শশুড় মশাইয়ের সামনে পরে।
“নিধিমা
নিধি অভিমান করেছে শশুড়ের ওপর। কাল কেনো ওকে বাড়ি দিয়ে আসলো না? আদি অপমান করলো তাও কিছু বললো না। নিধি কথা বলে না।
” আমার ওপর রাগ করেছিস?
“আপনি আমার কে যে আপনার ওপর রাগ করবো? অভিমান নিয়ে বলে নিধি।
শশুড় মশাই একটু হাসে।
” তুই কেনো এখানে আদির ওপর ডিপেন্ড করে চলবি? একদম আদির সাহায্য নিবি না। তাই আমি ঠিক করেছি তুই আমাদের অফিসে জয়েন করবি।
“আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন আমি ক্লাস টেন এ পরি।
” তুই তো অফিসে কাজ করতে যাবি না। শুধু দেখবি কে কে কাজ করছে এগুলো।
আদি কি করছে না করছে এগুলোর ইনফরমেশন আমাকে দিবি।
“নিধি মাথা নারিয়ে চলে যায়। এটা ওর জন্য সুবর্ন সুযোগ। এতে করে ও বাবা মাকে সাহায্য করতে পারবে।

নিধি রুমে এসে বই নিয়ে বসে। পড়ায় মন বসছে না। একটু ফেসবুকে ঢুকে। আমের পিকে পাঁচশ লাইক পরেছে।
” এরকম লাইক হলে আমি প্রতিদিন আমের পিক আপলোড দেবো। নিধি মনে মনে বলে।
একটু ফেসবুক থেকে ঘুরেফিরে এসে বেলকনিতে গিয়ে পড়তে বসে।
পড়তে পড়তে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।

রাত এগারোটার দিকে আদি রুমে আসে। চারপাশে একবার ভালো করে তাকায়। কোথাও নিধি নেই।
“ইডিয়েটটা কোথায় গেলো?
মনে মনে বলে আদি ওয়াশরুমে যায়। চেন্জ করে ল্যাপটপ নিয়ে বেলকনিতে যায়। বেলকনিতে পা রাখতেই চোখ পরে নিধির দিকে।
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। কোলের ওপর বই বের করা। চাঁদের আলো এসে পড়েছি নিধির মুখে। মুখ মায়াবী লাগছে নিধিকে। একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় আদি। খুব আপন মনে হচ্ছে নিধিকে। খুব করে ইচ্ছে করছে নিধির ঘুমন্ত মুখেটাকে কাঁধে রাখার।
কিন্তু যে কাঁধে জুঁই মাথা রেখেছিলো সেই কাঁধে কি করে নিধির মাথাটা রাখবে?
একটু একটু করে নিধির দিকে এগিয়ে যায় আদি। হাঁটু মুরে নিধির পাশে বসে। নিধির মুখের ওপর পড়ে থাকা চুল গুলো অতি যত্ন সহকারে কানের পিঠে গুঁজে দেয়।
” মুখটা এতো মায়াবী কেনো? এই মুখটার দিকে তাকালে আমি আমার লহ্মের কথা ভুলে যাই। কিন্তু এটা তো হতে পারে না।
আদি নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে।
কিন্তু মন তা বুঝতে চাইছে না। খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে নিধির কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে। আদি নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে পারে না। নিধির কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর কিছুখন নিধির কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।
ধরফরিয়ে নিধির থেকে সরে আসে আদি।
মুখের সামনে মাছি তারানোর মতো হাত নারিয়ে আদি চোখ ফিরিয়ে নেয়। এদিক সেদিক চোখ ফেরায়।
তারপর নিধিকে কোলে তুলে নেয়। বিছানায় শুয়িয়ে দেয় নিধিকে।
কোমর ওবদি কোম্বল দিয়ে আদি বেলকনিতে চলে যায়।

ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে নিধির। খুব আলসী লাগছিলো উঠতে তবুও উঠে বসে। ওজু করে নামাজ আদায় করে নেয়।
বেলকনিতে যেতেই দেখে আদি বেলকনিতে ঘুমিয়ে আছে। আজও কোলের ওপর ল্যাপটপ।
“আমার জন্য উনি কষ্ট করে বেলকনিতে থাকে। আমি আজ থেকে অন্য রুমে থাকবো। আমার জন্য উনি কষ্ট করুক এটা আমি চায় না।
বিরবির করে বলে নিধি।

রুমে গিয়ে পড়তে বসে।
ঘড়ি টিং করতেই আদি ধরফরিয়ে ওঠে। ঘাড় ব্যাথা করছে। হাই তুলে রুমে আসে।
“বললেই হতো আমার সাথে রুম শেয়ার করতে অসুবিধা হচ্ছে। আমি অন্য রুমে গিয়ে থাকতাম। এভাবে বেলকনিতে ঘুমানোর কোনো দরকারই হতো না।
নিধি বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
আদি এক পলক নিধির দিকে তাকায়।
” বেশি বুঝো কেন?
“বেশি বুঝি নি তো। দেখলাম বেলকনিতে ঘুমিয়ে আছেন তাই বললাম।
” বেশি কথা না বলে পড়ায় মন দাও। আর আমাকে উদ্ধার করো।
বলেই আদি ওয়াশরুমে চলে যায়।
নিধি রুম থেকে চলে যায়।

শাশুড়ি একা একা রান্না করছিলো।
“আন্টি আমি হেল্প করবো?
” থাক। তুমি কিছু ছুঁলেই তোমার হাত পুরে যায় হাত মোচকে যায়। তোমার শশুড় মশাই আবার আমাকে বকা দেবে।
শাশুড়ী রুটি বেলতে বেলতে বলে।
নিধি কড়াইতে হাত দিয়ে বলে
“আপনি শিখিয়ে দেবেন। প্লিজ
শাশুড়ী আর নাকরতে পারে না।

রান্না শেষ করে নিধি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে খাবার টেবিলে আসে। আদি তখন খাচ্ছিলো। নিধি তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করে আসি বলে চলে যায়। কারো কথা শোনার জন্য দাঁড়ায় না।
আদি আড় চোখে নিধির যাওয়ার দিকে তাকায়।
শশুড় মশাই টাকা দিয়েছিলো। রিকশা করে নিধি বাবার বাড়িতে যায়। কতোদিন বাবা মাকে দেখা হয় না।
#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৬
#Tanisha Sultana

বাড়িতে এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে নিধি। আজ আর স্কুলে যাবে না। পুরো সময়টা মায়ের সাথে কাটাবে। বাবা নতুন চাকরি পেয়েছে। অফিসে গেছে। খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে মাকে আদির করা ব্যবহার গুলো। কিন্তু তবুও বলছে না নিধি।
আজ এবাড়িতেই থাকবে বলে ঠিক করেছে নিধি। ওই বাড়িতে ফেরার বিন্দু মাএ ইচ্ছে নিধির নেই।

আজ দুপুরেই আদি বাড়ি ফিরে আসে। অফিসে তেমন কাজ নেই৷ বাড়িতে এসেই দেখতে পায় সবাই এক জায়গায় বসে গল্প করছে। এসব আদির কোনো কালেই ভালো লাগে না। রুমে চলে যায়।
লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। আশ্চর্য বেপার হলো নিধিকে দেখতে পাচ্ছে না। কি হলো? মেয়েটা কোথায়? হয়ত আম ছিঁড়ে খাচ্ছে। আজ আদি ওকে হাতে নাতে ধরবে। আর ইচ্ছে মতো বকে দেবে।
রাগে গিজগিজ করতে করতে ছাঁদে যায়। নাহহহ নিধি নেই। বেশ অবাক হয় আদি। কোথায় গেলো?

ছাঁদ থেকে আসার সময় রান্না ঘর মায়ের ঘর দেখে আসে সেখানেও নেই। হয়ত স্কুল থেকে ফেরে নি।

ঘুমিয়ে পড়ে আদি।
বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠে একটু হাঁটতে বের হয়।

নিধি ওর কাজিন রনির সাথে বের হইছে। আজ ইচ্ছে মতো ফুসকা খাবে্ রনি খাওয়াবে।
স্কুলের কাছেই ফুসকার দোকান। খুব মজা করে রনি আর নিধি ফুসকা খাচ্ছে। আদি দুর থেকে নিধিকে পেছন থেকে দেখে। মনে হচ্ছে ওটা নিধি। আবার মনে হচ্ছে নিধি না। শিওর হওয়ার জন্য এগিয়ে যায়। দেখে নিধি একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে ফুসকা খাচ্ছে। মাঝেমধ্যে আবার ছেলেটা নিধিকে ফুসকা খাইয়ে দিচ্ছে।
“এটা তোমার স্কুল
আদির মতো কন্ঠ পেয়ে নিধি পেছনে তাকায়। আদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনি এখানে?
নিধি দাঁড়িয়ে বলে।
” বাড়ি চলো
নিধির হাত মুঠো করে ধরে বলে আদি।
“খাওয়া শেষ করে যাক।
রনি বলে।
” দরকার নেই
মামা কতো হয়েছে? ফুসকা ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে আদি। বিল মিটিয়ে নিধির হাত ধরে হাঁটা শুরু করে। রনি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুটা হাঁটার পরে আদি বলে
“ছেলেটা কে?
” যেই হোক আপনাকে বলবো কেনো?
আদি আর কিছু বলে না।
“হাতটা ছেড়ে দেওয়া হোক
নিধি বলে।
আদি হাত না ছেড়ে আরও শক্ত করে ধরে। নিধি ভেংচি কাটে।

একদম রুমে এসে নিধির হাত ছাড়ে আদি। নিধি হাফ ছাড়ে।
” আমাকে না বলে কখনো কোথাও যাবে না।
“যাবো
” গেলে পা ভেঙে রেখে দেবো
” গোমড়ামুখো কোথাকার।
ভেংচি কেটো বলে নিধি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আদি ঠোঁট মেলে একটু হাসে।
শশুড় মশাইয়ের ফোন দিয়প কল করে মাকে জানিয়ে দেয় ও চলে এসেছে এবাড়িতে।
আজ রাতের রান্নাটা নিধি করবে বলে ঠিক করেছে। শাশুড়ীকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে। কোমরো ওড়না গুঁজে রান্না শুরু করে দেয় নিধি। আদি বেশি তেল মশলা দিয়ে রান্না খায় না। এটা নিধি জানে না।
গরুর মাংস আর রুটি রান্না করে নিধি।

খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে ফট করে পিক তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয় “প্রথমবার রান্না করলাম”

আদি রুমে বসে ফেসবুক দেখছিলো। তো নিধির সদ্য করা পোষ্টটা চোখে পড়ে।
“বাঁদরটা রান্না করেছে?

সবার খাওয়া শেষ হলে নিধি খেতে বসে। তখনই শাশুড়ী মা বলে
” তোমার আর আদির খাবার রুমে নিয়ে যাও। বরের সাথে খেতে হয়।
নিধি নিজের খাবার গুছিয়ে আদির খাবার বেরে রুমে নিয়ে যায়।
আদি ল্যাপটপে করাজ করছিলো নিঊি আদির সামনে খাবার নামিয়ে রেখে বিছানায় বসে নিজে খাওয়া শুরু করে।

প্রথমবার রান্না করলেও বেশ ভালো রান্না করেছে নিধি। নিজের খাবার খেয়ে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আদি এইরকম খাবার খায় না। কিন্তু নিধি নিজে একা একা রান্না করেছে বলে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না। গরুর মাংসতে আদি এলার্জি আছে। তবুও খাওয়া শুরু করে।

খাওয়া শেষ করে নিধি পড়তে বসে।
“শোনো
আদি নিধির পাশে বসে বলে।
” বলুন
বইয়ের দিকে নজর দিয়ে বলে নিধি।
“আমাকে কাল চিটাগাং যেতে হবে।
” তো
“তুমি যাবে আমার সাথে।
” নাহহহহ
“তোমার কাছে জানতে চায় নি। যা বলছি শোনো
নিধি মুখ বাঁকিয়ে তাকায় আদির দিকে।
” তোমার এক্সামের তিন মাস বাঁকি আছি। আমি তোমাকে প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে পড়াবো। চলবে?
“নাহহহহ চলবে না। আমি যাবো না।
” অতিরিক্ত কথা বলা আমার পছন্দ না।
আদি রাগ দেখিয়ে ব্যাগ প্যাকিং শুরু করে দেয়।
ব্যাগ গোছানো শেষ করে দেখে নিধি বইতে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে। আদি নিধির থেকে বই সরিয়ে নেয়। বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বই গুলো গুঁছিয়ে টেবিলে রাখে। নিধিকে ঠিকভাবে শুয়িয়ে দিয়ে আদিও নিধির পাশে শুয়ে পড়ে। অফিসের অনেক কাজ বাকি আছে। কিন্তু আদির কোনো কাজ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আজ নিধিকে অন্য ছেলের সাথে দেখে আদির কিছুটা খারাপ লেগেছে। বাড়ন্ত বয়স। ভুল করার বয়স এটা। নিধি একবার ভুল করে আদিকপ বিয়ে করে ফেলেছে। এবার যদি আদির থেকে অবহেলা পেয়ে অন্য কাউকে খুঁজে নেয়? নিধি তো আদির বিয়ে করা বউ। আদির উচিৎ নিধিকে সময় দেওয়া।
আদি নিধির মুখের দিকে একটু ঝুঁকে।
“এবার আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করে নেবো। এভাবে আর কতো দিন? তুমি যে মেয়ে নতুন খুঁজে নিতে তোমার দুই দিনও লাগবে না। খুব তো বড় গলায় বলেছিলে ভালোবাসি। এখন কোথায় গেলো ভালোবাসা? অন্য ছেলের সাথে ভালোই তো ফুসকা খাচ্ছিলে। চাপা বাজ একটা।
বিরবির করে বলে আদি।
নিধি একটু নরেচরে আদির পেটের ওপর পা দেয়।
” ইডিয়েট একটা

খুব সকালে আদি নিধির থেকে সরে আছে। মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে নিধির দিকে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে।

ইচ্ছে না থাকলে নিধিকে আদির সাথে যেতে হয়। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে পরে। আদি নিধিকে বোরকা পড়িয়েছে। এতো গরমের মধ্যে বোরকা পরে নিধির অবস্থা শেষ। বাসের পেছনের ছিটে বসে আছে ওরা। মারাক্তক গরম আজ। কাঁঠ ফাঁটা রোদ্দুর।
রাস্তার মাঝখানে বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাস বোঝাই যাএী তবুও বাসের কন্টাক্টার ডেকেই যাচ্ছে। নিধির বেশ বিরক্ত লাগছে। শুধু চোখের ওপরে একটুখানি কপাল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না নিধি।
আদির পরনে সাদা শার্ট ভিজে শার্টের নিচের গেঞ্জি দেখা যাচ্ছে।
নিধি এবার অধর্য হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
“কি হলো
আদি জিজ্ঞেস করে।
” এই যে কন্টাক্টার মামা এদিকে
“কি কন
” দুই মিনিটের মধ্যে যদি বাস না ছাড়েন তাহলে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো। আর ডাইভারকে আমার ছিটে বসিয়ে আমি ডাইভ করবো। বলে দিলাম
রেগে চেঁচিয়ে বলে।
“আপা আর একটু পরেই যামু
” কেমন মানুষ আপনারা? পা ফেলার জায়গা নেই তবুও লোক ডেকেই যাচ্ছেন।
” শোনেন যারা দাঁড়িয়ে যাবেন তারা কেউ দাঁড়িয়ে যাবেন না। ওনার কাছে ছিট চান। যদি না দিতে পারে তাহলে
সবাই নিধির কথায় সায় দেয়।
কন্টাক্টার ডাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে।
নিধি বসে পড়ে।
“বেশি কথা বলো কেনো তুমি? আদি রেগেমেগে বলে
নিধি আদির হাতে একটা খাতা ধরিয়ে দিয়ে বলে।
” বাতাস দেন
আদি নিধিকে বাতাস দিতে থাকে।
“একদম অতিরিক্ত কথা বলবা না। অচেনা কারো সাথে কথা বলবা না। চিটাগাং গিয়ে সারাক্ষণ রুমের মধ্যে থাকবা।
আদি বলতে থাকে। নিধি বাসের জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমতে থাকে। আদির এরকম বোরিং কথা শুনলে নিধির শুধু ঘুম পায়।
আদি নিধির মাথাটা নিজের কাঁধে রাখে। বাসের জানালা খুলে দেয়। আর শো শো করে বাতাস আসতে শুরু করে। নিধি আদির শার্ট মুঠো করে ধরে পরম শান্তিতে ঘুমতে থাকে।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here